#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-২৪
হাসিব জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে আছে।ঝুম বৃষ্টি নেমেছে বাইরে। বৃষ্টির বর্ষনে বাইরের সবকিছু ধোয়াশা লাগছে। হাসিবের ঘোর কাটানোর জন্য চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসে থাকা মোশাররফ আলী গলা ঝাড়লেন।হাসিব ঘাড় ঘুরিয়ে মোশাররফ আলীর দিকে তাকালো। সে পার্টি অফিসে এসেছিলো তার ভাইয়ের কাছে। এসে দেখলো হিশাম নেই তাই চলে যেতে চেয়েছিলো। তখনি নামলো ঝুম বৃষ্টি। বাইক নিয়ে এসেছে বিধায় তাকে থেকে যেতে হলো অফিসে। আর তখন থেকেই মোশাররফ আলী তাকে বসিয়ে রেখেছে এখানে। মোশাররফ আলী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন -
"রাজনীতিতে যদি তুমি আসতে চাও তাহলে প্রথমে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে লজ্জা শরম ত্যাগ করা।বুঝেছো?"
"কেন?লজ্জা শরমের সাথে রাজনীতির কি সম্পর্ক? "
"সম্পর্ক আছে। রাজনীতিতে আসলেই বুঝতে পারবা। আসতে চাও নাকি?"
"চাই।"
" হিশাম বোধহয় চায় না তুমি রাজনীতিতে আসো। "
হাসিব চুপ করে রইলো, উত্তর দিল না।মোশাররফ আলী চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে একটু এগিয়ে বসলো। বললো-
" তুমি রাজনীতিতে এলে বরং ভালোই হয়।হিশাম আর তখন একা থাকবে না। তখন শাহাদ খানের বিরুদ্ধে হিশাম আরো শক্তি পাবে।"
হাসিবের ভ্রু কুচকে গেলো। হিশাম যে এখনো শাহাদের পিছনে লেগে আছে এটা সে জানতো না।মোশাররফ আলী একটু হেসে বললেন-
"এমনি এমনি তো আর রাজনীতিতে টিকতে পারবা না। রাজনীতিতে টিকতে হলে নিজের জায়গা নিজেকে করতে হয়।দেখো নি শাহাদ খান কিভাবে তার বাবাকে টপকে জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে ফেলেছে। তুমিও তাই করো,অন্তত হিশামের জন্য করো।বেচারা আর কত একা একা লড়বে।"
হাসিব চিন্তিত হলো।মোশাররফ আলীর কথা তার ঠিক মনে হলো।আসলেই তো হিশাম একা একা আর কত লড়বে? রাত দিন এসব নিয়েই থাকে। ঠিকমতো খাওয়া ঘুম নেই। হাসিব ভাবলো ও নিজে রাজনীতিতে আসলে হয়ত হিশামের অর্ধেক কাজ কমে যাবে।সে জিজ্ঞেস করলো-
"কি করতে হবে আমাকে?"
"হিশামের শত্রুদেরকে শেষ করো।আর হিশামের শত্রু কে তা তো জানোই।"
"শেষ করব মানে?"
"আহ হা হা..ভুল বুঝো না। খু*ন খারাবির কথা বলি নি।শত্রুদের বিভিন্নভাবে ক্ষতি করা যায়।এই ধরো তাদের প্রিয় কোনো জিনিস একটু ছুয়ে দিলে, একটু মচকে দিলে। তাহলে ওরা একটু ভেঙে পড়বে, মনোবল হারিয়ে ফেলবে।জানোই তো সামনে নির্বাচন। "
হাসিব কিছুক্ষনের জন্য মোয়াজ্জেম আলীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। রাজনীতিতে ঢুকতে হলে হিশামের শত্রুদের ক্ষতি করতে হবে? হাসিব দ্বিধা নিয়ে বললো-
"এটা তো অন্যায়। অকারণে কারো ক্ষতি কেন আমি করতে যাব? রাজনীতি করতে চাই, গুন্ডামি না।"
মোয়াজ্জেম আলী গলা ফাটিয়ে হাসলেন।বললেন-
"আগেই বলেছি রাজনীতি করতে হলে এসব নীতি নৈতিকতা বাদ দিতে হবে।তোমার ভাইও কিন্তু শাহাদকে খু*ন করতে লোক পাঠিয়েছিলো।শুধু তাই না আন্ডারওয়ার্ল্ড এর সবচেয়ে বড় মাফিয়ার সাথে তোমার ভাই হাত মিলিয়েছে।"
হাসিব চমকে গেলো। হিশাম এতদূর চলে গেছে? প্রতিশোধের নেশায় কি ওর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে? মোয়াজ্জেম আলী আফসোস করে বললেন-
"ভেবেছিলাম তুমি হিশামকে সাহায্য করবে কিন্তু তুমি মনে হয় তা পারবে না। হিশামের জন্য খারাপ লাগে।একা একা ছেলেটা আর কত করবে!!"
মোয়াজ্জেম আলী দুঃখী মুখ করে গালে হাত দিয়ে বসে রইলেন। হাসিব অন্যমনস্ক হয়ে গেলো। তার মনে মোয়াজ্জেম আলীর কথাগুলো প্রভাব ফেলেছে। সে নিজের মনকে বুঝালো রাজনীতিতে এত নীতি চলে না।এখানে নিজেদের লাভের জন্য নীতিহীন কাজ করা দোষের না।
------------
বউ এর সাথে রোমান্স করার সাধ শাহাদের মিটে গেছে। সে আপাতত রোমান্সের চিন্তা বাদ দিয়ে কুহুর অসুস্থতার খোঁজ খবর রাখলো। কোমড়ের আঘাত এত জোরালো না হওয়ায় এক রাতেই সেরে গেলো। পরের দিন সকালেই কুহু আগের মতো হাটাচলা করতে লাগলো। শাহাদ সকালে ঘুম থেকে উঠেই কাজে ফিরার সিদ্ধান্ত নিলো। গোসল সেরে পাঞ্জাবি পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়ি পড়তে পড়তে কুহুকে উদ্দেশ্য করে বলল-
"ভার্সিটির কি খবর তোমার? "
কুহু জবাব দিলো-
"বিয়ের ব্যস্ততায় যেতে পারি নি এতদিন।"
"তাহলে এখন থেকে যাওয়া শুরু কর। চাইলে তুমি মাঝে মাঝে গিয়ে ক্লাস করতে পার কিংবা শুধু পরিক্ষাগুলোও এটেন্ড করতে পারো।তোমার যেটা ভালো লাগে। আমি প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে নিব।"
"প্রিন্সিপাল মানবে?যদি আমাকে ডেকে কথা শুনায়। "
শাহাদ চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে কুহুর দিকে ফিরে বললো-
"শাহাদ খানের বউকে কথা শুনাবে এমন কেউ নেই।"
"অন্য কেউ না শুনাক শাহাদ খান তো অন্তত কিছু কথা শুনাতে পারে। "
শাহাদ বোকার মতো প্রশ্ন করলো-
"কি কথা?"
কুহু বসা থেকে লাফ দিয়ে উঠে গেলো।উত্তপ্ত কন্ঠে বললো-
"নিম পাতার তিতা, মি.তিতা খান।"
বলেই ধুপ ধাপ শব্দ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। শাহাদ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো। কুহুর হঠাৎ এমন রাগের কারন বুঝলো না।সে তো ভালো কথাই বলছিলো।কত সুন্দর করে কথা বললো আর তাকে কিনা তিতা খান নামে ডেকে গেলো? নারী জাতির মন বুঝা দায়।
খাবার টেবিলেও কুহু শাহাদের সাথে রাগ করে থাকলো।খাবার সার্ভ করার সময় একবার কুহুর শাহাদের সাথে চোখাচোখি হলো। আর তাতেই কুহু এমন দুটো মুখ ভেংচি দিলো তাতে শাহাদের মনে হলো কুহুর মুখটা না খুলে পড়ে যায়।এমনভাবে কেউ যে মুখ ভেংচি দিতে পারে তা তার জানা ছিলো না।সে কিছুক্ষনের জন্য খাওয়া থামিয়ে বসে ছিলো। আশফাক খান ছেলের দিকে তাকিয়ে বল্লেন-
"তুমি কি বের হচ্ছ কোথাও?"
শাহাদ কুহুর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে বলল-
"জী বাবা, পার্টি অফিসে যাব।"
আশফাক খান একবার স্ত্রীর দিকে তাকালেন। গত রাতে রেজিয়া সুলতানা আশফাক খানকে সব বুঝিয়ে বলেছেন। শাহাদকে কয়েকটা দিন কুহুর সাথে সময় কাটাতে দেয়ার কথা বলেছেন।আশফাক খান সে কথা ভেবে বললেন-
"এখন পার্টি অফিসে তেমন কাজ নেই।তোমার না গেলেও চলবে। বাড়িতে থেকে কয়েকটা দিন রেস্ট নাও।"
শাহাদ মনে মনে বললো-
"বাড়িতে থেকে আর নিম পাতার তিতা হতে চাই না।"
মুখে বললো-
"সামনের নির্বাচন নিয়ে কিছু প্ল্যান আছে বাবা, তাই যেতে হবে।আমি না গেলে ছেলেরা কেউ কাজ করবে না।"
আশফাক খান ছেলের কথায় বেজায় খুশি হলেন। এরকম ছেলেরাই তো জীবনে উন্নতি করে।রাজনীতির মাঠে এত ঘর পাগল হলে চলে না। শাহাদ একবার মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা কুহুর দিকে তাকালো। আবারো সেই একই জিনিস।কুহু মুখ ভেংচি দিলো।দুই দুইবার মুখ ভেংচি দেখে শাহাদ আর বউ এর দিকে তাকালো না। নীরবে খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
পার্টি অফিসে শাহাদ জমে থাকা সব কাজ করলো। আশফাক খান দুটো মিটিং করলো দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে।মিটিং এ মোয়াজ্জেম আলীর ব্যাপারে দলের সবার সিদ্ধান্ত এক রকম থাকলো। সবাই তার বহিষ্কারের ব্যাপারে সহমত পোষন করলো। শাহাদের সিদ্ধান্তের জন্য তার প্রশংসা করলো। দুটো মিটিং করেই আশফাক খান নেতাকর্মীদের নিয়ে বেরিয়ে গেলেন অন্য কাজে। শাহাদ আসন্ন নির্বাচনের প্ল্যান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
---------
কুহু প্রায় অনেক্ষন তার মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বললো। বাসার সবার খবর নিলো। মায়ের সাথে ফোন শেষ করে কি ভেবে তনয়াকে কল দিলো। তনয়া কল ধরেই অভিযোগ করে বললো-
"রসগোল্লা পেয়ে বান্ধবীকে ভুলে গেলি? এই ছিলো তোর মনে?"
কুহু নাক টেনে কান্নার অভিনয় করে বললো-
"আর রসগোল্লা! নিমপাতার রসে জীবন টুইটুম্বুর তাই তোকে মনে করতে পারি নি।"
তনয়া "কি হয়েছে" জানতে চাইলে কুহু তার দুঃখের কথা খুলে বললো।তনয়া খুব মর্মাহত হলো এমন খবরে। বিয়ের আগে দুই বান্ধবী মিলে স্বামী নিয়ে কি কি করবে সেসব আলোচনা করতো। দুজনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থাকতো একজন অতি রোমান্টিক স্বামী, যে কিনা রোমান্সের ঠ্যালায় আকাশের চাঁদ আনতে রওয়ানা দিতেও দ্বিধা করবে না। অথচ শেষে কিনা কুহুর এ অবস্থা? বান্ধবীর এমন অবস্থা তনয়া কিছুতেই মেনে নিলো না।কুহুকে স্বান্তনা দিয়ে বলল-
"মিষ্টি দিয়ে নিম পাতার তিতা সব ভ্যানিশ করে দে। যা,মিষ্টি করে এক পাতিল পায়েশ রান্না কর,তারপর সেজেগুজে পায়েশের বাটি হাতে নিয়ে স্বামীর জন্য বসে থাক।"
তনয়ার আইডিয়া পছন্দ হলো কুহুর। সে তনয়াকে ধন্যবাদ দিয়ে তৎক্ষনাৎ নিচে নেমে এলো। কিচেনে গিয়ে দেখলো রেজিয়া সুলতানা আর জয়া বেগম দুপুরের রান্না করছে।আশেপাশে কুলসুমা বেগম নেই। এই সুযোগে কুহু রেজিয়া সুলতানার কাছে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলল-
"মা, আমি একটু পায়েশ রান্না করতে চাই।"
রেজিয়া সুলতানা প্রথমে অবাক হলেন। জিজ্ঞেস করলেন-
"শাহাদের জন্য?"
কুহু উপর নীচ মাথা নাড়িয়ে বললো-
"জী।"
পরক্ষনেই আবার বললো-
"না মানে,বাড়ির সবার জন্যই করতে চাই।"
কুহুর কথায় জয়া বেগম হেসে ফেললেন।হাসলেন রেজিয়া সুলতানাও।বললেন-
"ঠিক আছে, এসো।আমি তোমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।"
কুহু রেজিয়া সুলতানার নির্দেশনা মেনে রান্নায় লেগে পড়লো। নিজ হাতেই সমস্ত কিছু করলো। রেজিয়া সুলতানা হালকা পাতলা হেল্প করলেন কুহুকে। ছেলের বউ এর এমন তৎপরতায় উনি খুশি হলেন। কুহুকে নিজের মতো করে রান্না করতে দিলেন। তবে নজর রাখলেন কুহুর যেন কোনো ভুল না হয় রান্নায়। এই খবর কুলসুমা বেগমের কানেও গেলো। অন্য সময় দুপুরের রান্নার সময় তিনি রান্নার তদারকি করার জন্য রান্না ঘরে আসলেও এখন আর আসলেন না। কুহু যে তাঁকে কিছুটা ভয় পায় তা তিনি বুঝতে পারেন। তাই তিনি কুহুকে ভড়কে দিতে চান না।
শাহাদকে দুপুরে খাওয়ার জন্য বাড়ি আসতে হলো। তার আসার ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু রেজিয়া সুলতানার এক নাগাড়ে ফোনের কারনে তাকে সব কাজ ফেলে আসতে হলো। বাড়ি ঢুকে ড্রয়িংরুম ক্রস করার সময় সোফায় বসা রাফা তাকে দেখে উল্লাস করে বলে উঠলো-
"ভাইয়া এসেছো? তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।"
"কি সারপ্রাইজ? "
রাফা হাতের বাটি থেকে এক চামচ পায়েস মুখে দিয়ে বলল-
"ভাবিমনি তোমার জন্য স্পেশাল পায়েশ রান্না করেছে।ভীষণ টেস্ট হয়েছে।"
বলেই আরো এক চামচ মুখে দিলো। শাহাদের চোখেমুখে একটা হাসি ছড়িয়ে পড়লো। কুহুর এমন কান্ডে সে কিছুটা লজ্জাও পেলো। মেয়েটা একটা পাগল।বাড়ির সবার সামনে এভাবে কেউ স্পেশাল পায়েস রান্না করে খাওয়ায়? কেমন একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতি!! শাহাদ মুখের হাসি গোপন করে চোখেমুখে গাম্ভীর্য আনলো,হালকা গলা ঝেড়ে সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলো। কুহুর হাতের পায়েস খাওয়ার জন্য এক প্রকার অস্থিরতা অনুভব করছে সে। মনে মনে ঠিক করে ফেললো ঘরে গিয়ে গোসল সেরেই সে নিচে খেতে চলে আসবে। সরাসরি তো আর পায়েশ চাইতে পারবে না, খেতে এলে নিশ্চয়ই দিবে। কিন্তু সবাই যেভাবে খাচ্ছে তার জন্য কম পড়বে না তো?
ঘরে ঢুকে সে কুহুকে কোথাও পেলো না। ঘড়ি খুলে সোফার কাছে যেতেই সে টেবিলের উপর পায়েসের বাটি দেখতে পেলো। মৃদু হাসলো শাহাদ। মেয়েটা পায়েশসুদ্ধ বাটি এনে তার জন্য সাজিয়ে রেখে দিয়েছে। শাহাদ ডান হাতের গোটানো পাঞ্জাবির হাতাটা আরেকটু গুটিয়ে নিয়ে সোফায় বসলো। স্বচ্ছ কাচের বাটিটা হাতে নিলো।কুহু বাটিতে একটা লাল প্লাস্টিকের চামচ দিয়ে রেখেছে। বোকা মেয়ে!! পায়েশের বাটিতে কেউ প্লাস্টিকের চামচ দেয়?
শাহাদ এক চামচ পায়েশ মুখে নিলো। তারপর আরেক চামচ দিলো মুখে। প্রথম চামচে কিছু বুঝতে না পারলেও এখন কেমন জানি লাগছে পায়েসটা। মিষ্টির পরিমান ঠিকই আছে কিন্তু সাথে একটা তিতকুটে স্বাদও পাচ্ছে।শাহাদের ভ্রু কুচকে গেলো। পায়েশটা গিলতে গিলতে সে বাটির পায়েশটার দিকে তাকালো।পায়েশটা দেখতে অন্যরকম,খাওয়ার আগে খেয়াল করে নি সে। কুহুকে কি পায়েশে এক্সট্রা কিছু দিয়েছে? শাহাদ বাটির পায়েশটা নেড়েচেড়ে দেখলো।কই, কাজু-কিসমিস কিছুই তো নজরে পড়ছে না। শুধু গোটা গোটা কিসব দেখা যাচ্ছে।
কুহু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে শাহাদকে বাটি হাতে নিয়ে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলো-
"এটা হাতে নিয়ে বসে আছেন কেন?"
শাহাদ নজর সরিয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
"পায়েশে কিছু দিয়েছো নাকি?টেস্টটা এমন কেন?"
কুহু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো-
"এটা তো পায়েশ না,আমার ফেসপ্যাক।"
শাহাদ কয়েকবার চোখের পাতা ফেললো। জিজ্ঞেস করলো-
"ফেসপ্যাক কি?"
"রূপচর্চার জিনিস, মুখে দেয়।"
অতি আশ্চর্য হয়ে শাহাদের চোখমুখ পালটে গেলো। হাতে থাকা জিনিসটার দিকে আরেকবার তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
"কি কি দিয়েছো এটাতে?"
"কাচা দুধ,কলা,মধু আর একটু অলিভ অয়েল।"
শাহাদ বাটিটা টেবিলে ঠাস করে রেখে দিলো। মুখের কাছে হাত মুষ্টি করে এনে একটু কাশলো। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো বাটিটার দিকে। কুহু যা বুঝার বুঝে গেছে। সে মিনমিন করে বললো -
"আপনি কি পায়েশ ভেবে এটা খেয়ে ফেলেছেন?"
শাহাদ প্রশ্ন শুনে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। নিজেকে শান্ত রেখে একবার কুহুর দিকে তাকালো। কুহু দুহাত নেড়ে আশ্বস্ত করে বলল-
"ভয় নেই, পেট খারাপ হবে না।আমি সব খাঁটি জিনিস দিয়েছি এতে।রূপচর্চার বিষয়ে আমি কোনো আপোষ করি না।"
শাহাদ হাসবে না কাঁদবে বুঝে পেলো না। এমন রূপচর্চা সচেতন বউ আর কারো না হোক। এমন বউ থাকলে ফেসপ্যাক সহ আরো না জানি কি কি পেটে যাবে তার ঠিক নেই। কুহু আবারো বললো-
"আমি কি আপনার জন্য এক বাটি পায়েশ এনে দিব?"
শাহাদ মাথা নেড়ে বললো-
"না না লাগবে না।আমি নিজ চোখে পাতিল থেকে পায়েশ বাটিতে নিতে দেখব তারপরেই খাব,এর আগে না।
বলেই স্টাডিরুমের দরজা খুলে স্টাডিরুমে ঢুকে গেলো।কুহু মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।তনয়ার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পায়েশ রান্না করলো। তারপর ঘরে এসে ভাবলো একটু রূপচর্চা করে সেজেগুজে শাহাদের সামনে যাবে। তাই গুগল ঘেটে যত উপাদান পেয়েছে সব একসাথে করে ফেসপ্যাক বানিয়ে রেখেছিলো মুখে মাখবে বলে। মুখ ধুয়ে এসে দেখে শাহাদ ফেসপ্যাক খেয়ে ফেলেছে। এত কাঠখড় পুড়িয়ে চুলার সামনে দাঁড়িয়ে স্বামীর জন্য পায়েস রান্না করলো,অথচ স্বামী কিনা ফেসপ্যাক খেয়ে বসে আছে? হায়রে কপাল!!
চলবে
[এত লম্বা গ্যাপ দেয়ার জন্য দুঃখিত। এক এ তো পরিক্ষা ছিলো তার উপর হঠাৎ জ্বর উঠে আমার অবস্থা নাজেহাল। পড়াশোনা, অসুস্থতা সব মিলিয়ে গল্প লিখাটা সম্ভব ছিলো না।এখন থেকে রেগুলার পাবেন ইন শা আল্লাহ❤️]
0 Comments:
Post a Comment