গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ২৮

 #টক_ঝাল_মিষ্টি 

#তামান্না_আঁখি 

#পর্ব-২৮


পরপর দু এক দিন কুহু আর ভার্সিটি গেলো না।তনয়া কল করে অনেক অনুনয় করেও তাকে নেওয়াতে পারলো না। সে বাড়িতেই থাকলো। বাড়ির সবার সাথে আড্ডা ছেড়ে তার ভার্সিটিতে যাওয়া লস প্রজেক্ট মনে হলো। তাছাড়া টানা কদিন ভার্সিটিতে গিয়ে চেহারার উজ্জ্বলতায় ভাটা পড়েছে।এই কদিন সে শুধু রূপচর্চা করে কাটাবে।কুহুর সেই পরিকল্পনার ব্যাঘাত ঘটলো না।অলস দুপুরে সে মালাকে নিয়ে ছাদে আসলো। ছাদে আগে থেকেই বড় ছাতার নিচে পাটিয়ে বিছানো আছে। দু একটা কুশন পাটির উপর পড়ে আছে। প্রায় দুপুরেই বাড়ির মহিলারা এখানে বসে একটু অলস সময় কাটায়।কুহু পাটিতে বসে কুশনে হেলান দিলো।এক হাত মেলে দিলো মালার দিকে।আজ সে দুহাতে মেহেদী পড়বে।


সকালে বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর শাহাদ বাড়ি ফিরে এলো। কুহুকে খুজতে গিয়ে জানতে পারলো কুহু ছাদে। ছাদে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলো ছাতার নিচে পাটি বিছিয়ে কুহু দুহাত ভর্তি মেহেদী দিয়ে বসে আছে। হাত দুটো খুব সাবধানে রেখেছে যাতে মেহেদী কোথাও লেগে না যায়। একটা পা বাড়িয়ে দিয়ে রেখেছে মালার দিকে।মালা খুব মন দিয়ে সেই পায়ে আলতা দিচ্ছে। পাশেই বসে আছে রিদি। সে মনোযোগ দিয়ে আলতা দেয়া দেখছে। শাহাদ বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে রইলো তার বউ এর সাজগোজ করার দিকে। মনে পড়লো গত রাতের কথা৷ গত রাতে শাহাদ যখন কুহুকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে শুয়েছিলো কুহু তখন একা একাই বক বক করছিলো।আজ যে সে মেহেদী আর আলতা দিয়ে সাজবে তা-ই বলছিলো। শাহাদ তখন কুহুকে জড়িয়ে ধরে কুহুর উষ্ণতায় ঘুমের দেশে পাড়ি জমাতে ব্যস্ত। তাই ঘুম ঘুম অবস্থায় সে সব কথা শুনতে পায় নি।


শাহাদ দরজায় দাঁড়িয়ে অল্প একটু কাশলো। তিন রমনীরই চোখ ঘুরে গেলো তার দিকে। মালা আর রিদি দুজনেই সোজা হয়ে বসলো।শাহাদকে এদিকেই আসতে দেখে মালা আলতার বাটি রেখে রিদির হাত ধরে ছাদ থেকে চলে গেলো। কুহু ফিসফিস করে যেতে না করলেও মালা দুষ্টু হেসে রিদিকে নিয়ে চলে গেলো। শাহাদ কাছে এসে একটা বেতের ছোট মোড়া টেনে কুহুর সামনে বসলো। মাথা একবার ডানে আরেকবার বামে হেলিয়ে কুহুর মেহেদী আর আলতা দেয়া দেখলো।এক পায়ে দেয়া হয়েছে আলতা আরেক পা এখনো বাকি। শাহাদ ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন কুহুর পা আর আলতার বাটিটা দেখলো।তারপর কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো-


"আমি আলতা দিয়ে দেই?"


কুহু চোখ পিটপিট করে শাহাদের মুখের দিকে তাকালো।শাহাদ কুহুর সম্মতির অপেক্ষায় আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।কুহু দোনামোনা করে বলল- 


"আপনি আগে কখনো কাউকে আলতা দিয়ে দিয়েছেন?"


"না।"


" তাহলে?"


শাহাদ কিছুটা ইতস্তত অনুভব করলো। শান্ত মুখশ্রীতে অস্বস্তি ভাব দেখা গেলো। কিছু একটা ভেবে চোখেমুখে দুষ্টু ভাব এনে মৃদু হেসে বলল- 


" বউ এর এত সুন্দর পা দেখে আলতা দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না যে।"


শাহাদের কথা শুনে কুহুর ঠোঁট দুটো হালকা ফাঁক হয়ে গেলো। একটা লজ্জামিশ্রিত হাসি ছড়িয়ে পড়লো মুখে। বললো-

"ঠিক আছে দিয়ে দেন।"


শাহাদ কুহুর সম্মতি পেয়ে আলতার বাটি হাতে নিল। বাটিতে একটা কাঠি ডুবানো।কাঠির মাথায় তুলা প্যাচানো। সেই তুলাসহ কাঠি আলতায় ডুবিয়ে আলতা দেয়া হয়। শাহাদ আলতার বাটি থেকে কাঠিটা তুললো আলতা দেয়ার জন্য। সাথে সাথে কাঠি থেকে আলতা গড়িয়ে পড়লো পাটিতে। কুহু শাহাদকে বুঝিয়ে দিলো কাঠিটা আলতা থেকে তুলে বাটিতে তুলাটা চেপে চেপে কিছুটা আলতা ঝড়িয়ে নিতে হয়। শাহাদ কুহুর কথা মোতাবেক তাই করলো। অন্য পায়ের নকশা টা দেখে দেখে আলতা দেয়া শুরু করলো। মোড়ায় বসে আলতা দেয়াটা তেমন সুবিধার হচ্ছে না বিধায় পাটিতে আসন করে বসলো। বাম হাতে কুহুর পা আলতো করে ধরে আলতা দিতে লাগলো।আলতা দেয়ার সময় কুহুর পায়ের এদিক ওদিক আলতা গড়িয়ে পড়লো। শাহাদ তাতে বিচলিত অনুভব করলো না।তার প্রধান কাজ হচ্ছে অন্য পা টার মতো এই পায়েও একই নকশা ফুটিয়ে তোলা।


কুহু মুগ্ধ চোখে শাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। শান্ত শিষ্ট ছেলেটা খুব সাবধানে আলতা আঁকছে তার পায়ে। কে বলবে এই ছেলে একটা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেয়। শাহাদ কোনো এক ভাবে আলতা দিয়ে শেষ করলো। পা টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো। অন্য পায়ে আঁকা আলতার সাথে নিজের দেয়া আলতার নকশা  মিলালো। একরকম হয় নি কিন্তু কাছাকাছি হয়েছে।সে পকেট থেকে রুমাল বের করে নকশা থেকে গড়িয়ে পড়া আলতা মুছে দিতে লাগলো।মুছে দেয়ার সময় ঝুঁকে পড়লো কুহুর পায়ের উপর।। কুহুর কেন জানি খুব হাসি পেলো এটা দেখে।শাহাদ কে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে এই কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আর নেই। মুছে দিয়ে শাহাদ কুহুর পা পাটিতে রেখে হাঁফ ছেড়ে বললো- 


"শেষ।"


তারপর প্রশংসার আশায় কুহুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো- 

"কেমন হয়েছে?"


কুহু পা টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বললো-

"সুন্দর হয়েছে।"


"এমন আলতা রাঙা পায়ে নুপুর থাকলে মানাতো।"


"আমার নুপুর নেই।"


শাহাদ কিছুক্ষন কুহুর দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর উঠে দাঁড়ালো। বললো-


"আজ সন্ধ্যায় একটা পার্টি আছে। আমরা পুরো ফ্যামিলি যাচ্ছি রেডি হয়ে থেকো।"


তারপর বেরিয়ে গেলো ছাদ থেকে। সন্ধ্যার আগে আগে শাহাদ দুটো বড় সাইজের বক্স হাতে করে বাড়ি ফিরলো। ঘরে ঢুকে দেখলো কুহু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজগোজ করছে। শাহাদ গিয়ে কুহুকে আয়নার সামনে রাখা টুলে বসিয়ে দিলো। বক্স দুটো ড্রেসিং টেবিলের উপর খুলে রেখে বলল- 


"দেখো কোনটা পছন্দ হয়।"


দুটো বক্স ভর্তি বিভিন্ন ডিজাইনের রূপার নূপুর। এত নূপুর একসাথে দেখে কুহু বিস্ময় নিয়ে তাকালো শাহাদের দিকে। শাহাদ ইশারা করে নূপুর বাছাই করতে বললো। কুহু অনেক্ষন তাকিয়ে থেকেও কোনোভাবেই পছন্দ করতে পারলো না। অসহায় কন্ঠে বললো- 

"আপনি একটু পছন্দ করে দিন না।"


কুহুর বলার সাথে সাথে শাহাদ পকেট থেকে এক জোড়া নূপুর বের করে কুহুর পায়ের কাছে বসে পড়লো। এক হাঁটু মাটিতে রেখে বসলো।আরেক হাঁটুতে কুহুর পা রেখে দুপায়েই নূপুর পড়িয়ে দিলো।কুহুর পায়ের আলতা উঠে গেছে অনেক আগেই। হালকা ছাপ রয়ে গেছে কেবল।শাহাদ নূপুর পড়িয়ে আলতো করে চুমু খেলো পায়ের পাতায়।কুহু কেঁপে উঠলো শাহাদের এমন কান্ডে। শাহাদ কাজ শেষ করে কিছু হয় নি এমন ভাবে উঠে পড়লো।কুহুকে বললো-


"তাড়াতাড়ি জামা কাপড় দাও, রেডি হতে হবে।"


কুহু আলমারি থেকে শাহাদের পোশাক বের করে এনে বললো- 

"নিজেই যদি পছন্দ করে পড়িয়ে দিবেন তবে আমাকে পছন্দ কর‍তে দিলেন কেন?"


"যদি তোমার নিজের কোনো পছন্দ থাকে তাই। আমার পছন্দ করা নূপুরটার এক পিস বক্সেও ছিলো।"


শাহাদ দ্রুত রেডি হলো। বের হওয়ার আগে কুহুর গালে চুমু দিয়ে বলল- 

"মাই বিউটিফুল ওয়াইফ,তোমাকে অপরূপ লাগছে। "


কুহুর দেহ মন জুড়ে আনন্দের শিহরন বয়ে গেলো। ইদানীং শাহাদের কাছ থেকে পাওয়া এই ছোট ছোট স্মৃতিগুলো তার কাছে অমূল্য মনে হয়। নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয়। এতদিন শাহাদের প্রতি থাকা সমস্ত রাগ অভিমান সব উবে যায়। 


খান পরিবারের গাড়ি এসে থামলো শহরের সব থেকে অভিজাত পার্টি সেন্টারের সামনে। এখানে আজ স্থানীয় থানার ওসির ছেলের বউ ভাত হচ্ছে। সেখানেই সবার দাওয়াত ছিলো। শুধু যে দাওয়াতে এসেছে তা না। সামনে নির্বাচনকে মাথায় রেখে রাজনৈতিক কারনেও এসেছে খান পরিবার। কেননা আজকের প্রোগ্রামে সব বড় বড় রাঘব বোয়ালদের সমাগম হবে। যাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। শাহাদ কুহুকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। আশফাক খান নামলো রেজিয়া সুলতানাকে নিয়ে পাশের গাড়ি থেকে।আব্দুর গাফফার খান আর এমদাদ খান নামলো অন্য গাড়ি থেকে। জয়া বেগম আসতে পারেননি। কারন কুলসুমা বেগমের কোমড়ে ব্যথা। তাই জয়া বেগম রেজিয়া সুলতানাকে যেতে বলে নিজেই থেকে গেছেন বাড়িতে।  আশেপাশে গার্ড নিয়ে খান পরিবারের সবাই পার্টি  সেন্টারে প্রবেশ করলো। ওসি সাহেব এগিয়ে এসে তাদের অভ্যর্থনা জানালেন। আশফাক খান নতুন সদস্য কুহুর সাথে আস্তে আস্তে সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন। 


কুহু দেখলো আশেপাশে অনেক সুন্দরী দূর থেকে বাঁকা চোখে তাকে আর শাহাদকে দেখছে। কুহুর ভেংচি কাটতে ইচ্ছা হলো ওদেরকে। বলতে ইচ্ছা হলো "দূর থেকে দেখেই স্বাদ মিটিয়ে নে, এই লোক এখন আমার দখলে"। শাহাদের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মৃদু হেসে কথা বলছে। তার পড়নে বরাবরের মতোই সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা।আজ পাঞ্জাবির উপর কালো কটি পড়েছে। বেশ সুদর্শন লাগছে। কুহুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শাহাদ ভ্রু উচিয়ে জানতে চাইলো " কি?"।কুহু হেসে দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো "কিছুনা"।


পার্টিতে খান পরিবারের পুরুষরা অন্যান্য হাই ক্লাস লোকদের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত।আলোচনার বিষয় বস্তু ঘুরে ফিরে নির্বাচনে এসেই থামছে। রেজিয়া সুলতানা কুহুকে নিয়ে মহিলাদের আড্ডায় যোগ দিলেন। কুহু বোরিং ফিল করলো মহিলাদের এসব গয়নাগাটি নিয়ে কথাবার্তায়।সে স্টেজে তাকিয়ে বর বউ এর দিকে তাকালো। দুজনেই হাসিমুখে বসে আছে। গেস্টরা একজন একজন করে আসছে আর ছবি তুলছে তাদের সাথে। চোখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকাতেই শাহাদের চোখে চোখ পড়লো।শাহাদ অন্য প্রান্তে পুরুষদের মাঝে বসে আছে।সেখান থেকে স্থির চোখে কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে। কুহু তাকাতেই ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেজ করলো-


" বোরিং লাগছে?"


"হুম।"


"লং ড্রাইভে যাবে?"


"হ্যা হ্যা যাব।"


শাহাদ ফোন থেকে চোখ তুলে কুহুর দিকে তাকালো।কুহুর হাসি হাসি উজ্জ্বল মুখ দেখতে পেলো।মেসেজ করলো-

"আগে খেয়ে নাও,তারপর।"


শাহাদের সাথে লং ড্রাইভে যাওয়ার উত্তেজনায় কুহু ঠিকমতো খেতেও পারলো না। সে রেজিয়া সুলতানার সাথে মহিলাদের এদিকটায় খেতে বসেছে।শাহাদ বসেছে পুরুষদের সাথে। রেজিয়া সুলতানা পাশে বসে কত কি তুলে দিলো তার পাতে সে সব শেষ করলো না।তাড়াতাড়ি করে কোনোমতে খেয়েই লেডিস ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দিলো।পিছন থেকে রেজিয়া সুলতানা ডাকলেও শুনলো না।ওয়াশরুমে এসে নিজেকে ঠিকঠাক করলো। একটু লিপ্সটিক দিলো। ভারী কাজের সালোয়ার কামিজ পড়েছে সে,ওড়না এক পাশে রেখে চুল ছেড়ে দিয়েছে। ওড়নাটা আরেকটু ঠিকঠাক করে শাহাদকে মেসেজ করলো- 


"লং ড্রাইভে যাব না?"


অপাশ থেকে কিছুক্ষন পর মেসেজ আসলো-

"হুম যাব।খাওয়া শেষ করে পার্কিং লটে এসো। আমি গাড়িতে থাকব।"


কুহু উত্তেজনায় কাঁপতে লাগলো।এই প্রথম শাহাদের সাথে লং ড্রাইভে যাচ্ছে।কোথায় নিয়ে যাবে শাহাদ তাকে?বিয়ের আগে স্বামীর সাথে লং ড্রাইভে যাওয়ার কত স্বপ্ন দেখেছে, তা আজ সত্যি হবে। খুশির চোটে তনয়াকে কল করে জানালো। তনয়া অপাশ থেকে বললো-


"গায়ে বেশি করে পারফিউম মেখে যা। ছেলেরা বউ এর গায়ে মিষ্টি গন্ধ পছন্দ করে।"


কুহু তনয়ার কথা মতো হ্যান্ডব্যাগ থেকে পারফিউম বের করে গায়ে পারফিউম দিলো। নাক টেনে পারফিউমের গন্ধ নিলো। হুম্মম্ম!সুন্দর গন্ধ!! শাহাদ নিশ্চয়ই পছন্দ করবে। ওয়াশরুমের আয়নায় নিজেকে আরেকটু দেখে নিয়ে ব্যাগ হাতে করে পার্কিং এরিয়ার দিকে চললো। পার্টি সেন্টারটার বাইরে সামনের দিকে মোটামুটি বড় এরিয়া নিয়ে পার্কিং লট। অনেক গাড়ি সেখানে সারি সারি করে পার্ক করে রাখা। 

পার্কিং এরিয়ার একদম কিনারে কালো রঙের গাড়িটা লাইট জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুহু চিনতে পারলো গাড়িটাকে।এটা শাহাদের গাড়ি।এই গাড়ি করেই ওরা আজ এসেছে।কুহু এক্সাইটেড হয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে চললো গাড়িটার দিকে। গাড়িটার কালো কাচ তুলে রাখা কিন্তু হেডলাইট জ্বালানো।কুহু গাড়ির কাছে এসে প্যাসেঞ্জার সিটের দরজা খুলতে নিলে দরজা লক করা পেলো। গাড়ির কাচে কয়েকবার টোকা দিলো।কিন্তু দরজা আনলক হলো না।কুহু বিরক্ত হয়ে পিছনের দরজা টান দিলে খুলে গেলো। দরজা খুলে গাড়িতে উঠে বসতে বসতে বললো -


"এভাবে গাডি লক করে বসে আছেন কেন?আমি যে নক করেছি শুনেন নি?"


 এই কথা বলে সামনে তাকিয়ে কুহু অবাক হয়ে গেলো। সামনের ড্রাইভিং সিটে বসে একটা ছেলে ওর দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। কুহু প্রশ্ন করলো- 


"কে আপনি?"


ছেলেটা ওর প্রশ্নের জবাব দিলো না।আরো তিনটা ছেলে একই সাথে দরজা খুলে গাড়িতে উঠে বসলো।একজন সামনের প্যাসেঞ্জার সিটে বাকি দুজন কুহুর দুপাশে। কুহু চমকে গিয়ে বড় বড় চোখ নিয়ে সবার দিকে তাকালো। সবাই নিজ নিজ জায়গায় বসে কুহুর দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে যেন তারা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখছে। কুহু চট করে বুঝে ফেললো কি হতে যাচ্ছে।বিপদ টের পেয়ে তার হাত কেমন যেন অসাড় হয়ে আসতে চাইলো। সে ডান পাশের ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে বললো-


"সরুন আমাকে যেতে দিন।"


কিন্তু ছেলেটা সরলো না,বরং দরজা আগলে বসলো। সামনের সিটে বসা ছেলেটা কুহুর বাম পাশে বসা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল- 


"বসে না থেকে মেয়েটাকে অজ্ঞান কর।"


অজ্ঞান করার কথা শুনে কুহুর বুকের ভেতরটা ধড়াস করে উঠলো। ভয়ে চিৎকার করে উঠলো।আতংকিত হয়ে গাড়ি থেকে বের হতে চাইলো। কিন্তু দুইপাশে দুজন বসে থাকায় বের হতে পারলো না।তার বাম পাশের ছেলেটা একটা ছোট শিশি আর একটা রুমাল বের করলো। কুহু আতংক নিয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো।ভয়ে তার দম বন্ধ হয়ে আসতে চাচ্ছে,মস্তিষ্ক অচল হয়ে যেতে চাচ্ছে। ছেলেটা শিশিটা উপুড় করে ধরলো রুমালে। তারপর রুমালটা কুহুর দিকে এগিয়ে আনার প্রস্তুতি নিলো। কুহু ভয়ে আতংকে চিৎকার করে জ্ঞান হারালো।


রুমাল হাতে ছেলেটা হতভম্ব হয়ে বাকি তিনজনের দিকে তাকালো। বাকি ছেলেরাও হা হয়ে গেলো এমন কান্ডে। ড্রাইভিং সিটে থাকা ছেলেটা বললো-

"এ দেখি নিজে নিজে অজ্ঞান হয়ে গেছে।"


প্যাসেঞ্জার সিটের ছেলেটা বললো- 

"ভাই তাড়াতাড়ি গাড়িটা স্টার্ট দে। গাড়ি অন্তত নিজে নিজে স্টার্ট হবে না। শাহাদ খান জানতে পারলে এখানেই গু*লি করে মা*রবে।"


ছেলেগুলো নিজের সম্বিত ফিরে পেলো। তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দ্রুতবেগে গাড়ি চালিয়ে কুহুকে নিয়ে পালিয়ে গেলো।


----------------


খান পরিবারের সবাই থমথমে মুখে এদিক ওদিক ছুটছে। সবাই খুজছে কুহুকে। পার্টি থেকে কুহুর এভাবে গায়েব হয়ে যাওয়ার কারন তারা কেউই বুঝতে পারছে না। আশফাক খান সাথে আসা সব গার্ডকে এলার্ট করে দিলেন। সবাইকে সব জায়গায় খোজার আদেশ দিলেন।সাথে এটাও বলে দিলেন কেউ যেন কুহুর গায়েব হওয়া বুঝতে না পারে।এতে খান পরিবারের সাথে সাথে কুহুর নামেও কুৎসা রটনা হতে পারে। তাই ভিতরে ভিতরে চিন্তা থাকলেও বাইরে সবাই স্বাভাবিক থেকে এদিক ওদিক খুজতে লাগলো।পার্টিয়ে আসা কাউকে বুঝতে দিলো না কিছু। 


শাহাদ পুরো পার্টি সেন্টার কয়েকবার চক্কর দিয়েছে তাও কোথাও কুহুকে পায় নি। সে চিন্তিত মুখে পার্টি সেন্টারের সামনে এসে দাঁড়ালো।বাইরে দিয়ে শান্ত দেখা গেলেও ভেতরে তার সব এলোমেলো হয়ে গেছে।তার বুকের ভেতরটা কেমন জানি করছে। তুফান বয়ে যাচ্ছে সেখানে।বিভিন্ন খারাপ চিন্তা মনে আসছে। শত্রুরা তাকে কিছু করতে না পেরে কুহুর উপর শোধ তুলবে না তো? শাহাদ চোখ বন্ধ করে মন থেকে এমন চিন্তা দূর করার চেষ্টা করলো। তমাল তার দলবল নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে শাহাদের কাছে এসে বললো- 


"ভাই, পিছনের দিকটা দেখে এসেছি।কেউ নেই।"


শাহাদ স্থির দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো।হিসাব মিলাতে থাকলো সবকিছুর। একটা গার্ড ল্যাপটপ সাথে নিয়ে এসে বললো- 


"স্যার এই সিসিটিভি ফুটেজটা দেখুন। পার্কিং এরিয়ার  সাম্নের একটা বিল্ডিং এর ফুটেজ এটা।আমরা সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে গিয়ে পেয়েছি।"


শাহাদ ফুটেজটা দেখলো। ফুটেজে কুহুকে দেখা যাচ্ছে। সে নিজে নিজে একটা গাড়িতে গিয়ে উঠে বসেছে। শাহাদ ক্লান্ত অনুভব করলো। ঘামতে থাকলো তার শরীর। পড়নের কটিটা এক টানে খুলে ফেলে ছুড়ে ফেললো মাটিতে। তারপর পাশে থাকা একটা প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে বসে পড়লো।  দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। তমাল ল্যাপটপ টা নিয়ে ফুটেজটা দেখে বললো- 


"ভাই ফুটেজ দেখে যা বুঝলাম ভাবি নিজে নিজে কিডন্যাপ হয়ে গেছে।"


শাহাদ গম্ভীর কন্ঠে বললো- 

"একটু পানি দে।"


তমাল ল্যাপটপ গার্ডের হাতে ধরিয়ে দিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে পানি আনতে ছুটলো।


চলবে

0 Comments:

Post a Comment