#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব -২৯
শাহাদ চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। তার সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস তেমন নেই। কিন্তু আজ এমন এক পরিস্থিতিতে এসে পড়েছে যে শরীরে নিকোটিনের চাহিদা তৈরি হয়েছে। সময়ের সাথে পাল্লা দয়ে সেই চাহিদা তরতর করে বাড়ছে। তার পিছনে কয়েকটা গাড়ি। গাড়িতে গার্ড থেকে শুরু করে দলের অনেক ছেলেও রয়েছে। সবাই ব্যস্ত হয়ে এদিক ওদিক ছুটছে।সাইবার এক্সপার্টদের কুহুর ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করতে কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। গার্ড কয়েকজন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে গাড়িটা কোথায় গিয়েছে তা দেখছে৷ ক্রিং ক্রিং করে শাহাদের ফোন বেজে উঠলো। অর্ধেক খাওয়া সিগারেট ফেলে দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে ভেসে এলো আশফাক খানের অস্থির গলা-
"শাহাদ যে কোনো মূল্যে কুহুকে অক্ষত অবস্থায় খুঁজে বের কর।মেয়েটার কিছু হলে আমার বন্ধুর সামনে মুখ দেখাতে পারব না।"
শাহাদ মৃদু স্বরে বলল-
"আচ্ছা বাবা।"
কল কেটে দিয়ে শাহাদ কঠিন মুখে দূরে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো। না, কেউ টাকার জন্য কিডন্যাপ করেনি কুহুকে। টাকার জন্য কিডন্যাপ করলে এতক্ষনে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করতো। করেছে অন্য কারনে। শাহাদের সাথে শত্রুতা করে কিডন্যাপ করেছে। কুহু খান বাড়ির ছেলে শাহাদ খানের বউ হওয়ার অপরাধে কিডন্যাপ হয়েছে। এখন কি ওরা শাহাদ এর উপর শোধ তুলতে কুহুকে কষ্ট দিবে? কি করবে কুহুর সাথে? খুব খারাপ কিছু করবে কি?শাহাদের চোখ টলমল করে উঠলো।দাঁতের সাথে দাঁত লেগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।প্রচন্ড আক্রোশে চিৎকার করে ফোনটা আছাড় মারলো রাস্তায়। শাহাদের চিৎকার আর ফোন ভাঙার শব্দে সবাই চমকে শাহাদের দিকে তাকালো।
শাহাদ কপালে এক হাত রেখে বড় বড় শ্বাস ফেলছে। টলমল লাল চোখ তার,রাগে চোখ মুখ কঠিন হয়ে গিয়েছে। ভেতরে ভেতরে পুরো দুনিয়া জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে । তার গায়ে হাত দিক সে মেনে নিবে কিন্তু তার বউ এর গায়ে কেন হাত দিবে? তাহলে তো শান্ত শিষ্ট জেন্টেলম্যান এর ইমেজ বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে তার পক্ষে। শাহাদ রাস্তায় দুপা রেখে তার গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিটে বসলো। আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে হুংকার ছাড়লো-
"তমাল।"
তমাল একটা মাইক্রোবাসের পাশে দাঁড়িয়েছিলো।মাইক্রোবাসের ভিতরে ল্যাপটপে সিসিটিভি ফুটেজগুলো চেক করা হচ্ছে।শাহাদের ডাক পেয়ে দৌড়ে আসলো।
"জী ভাই।"
" এই বিষয়ে কোনো খবর যেন লিক না হয়। যারা যারা আজ সাথে আছে তাদের মাঝে কেউ যদি খবর লিক করে সবাইকে জানে মে*রে ফেলব।"
"না ভাই, কেউ কিছু বলবে না।"
"কুহুর ফোন ট্র্যাক হয়েছে।"
তমাল ভয়ে ভয়ে বললো-
"না ভাই।ভাবির ফোন সুইচ অফ করে দিয়েছে কিডনাপাররা।"
শাহাদ লম্বা করে সিগারেটে টান দিলো। ব্রেইন এত অস্থির হয়ে আছে যে কিছু ভাবতেও পারছে না ঠিক মতো। কই যাবে? কি করলে কুহুকে পাবে? এসব ভেবে বুকের ভেতরটা জ্বলছে। একটা গার্ড দৌড়ে এলো।শাহাদকে উদ্দেশ্য করে বলল-
"স্যার গাড়িটাকে ট্রেস করা গেছে।কিন্তু এরপর আর গাড়িটাকে কোথাও পাই নি।কারন ওই রাস্তাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই।"
"ছেলেগুলোকে ট্রেস করা গেছে?"
"চেষ্টা চলছে স্যার।সবারই মুখে মাস্ক ছিলো।তবে ধারনা করা হচ্ছে সবাই ভার্সিটি পড়ুয়াই হবে।"
"গাড়িটা যে রাস্তায় শেষবার দেখা গেছে সেই রাস্তাটা যত দিকে গেছে সব দিকে গাড়ি পাঠাও।সব তন্ন তন্ন করে খুঁজবে, কিছু যেন বাদ না যায়।"
শাহাদের কথা শুনে গার্ডটা চলে গেলো। শাহাদ হাতের সিগারেটটা ফেলে দিলো।। গাড়িতে পা তুলে দরজা লাগিয়ে বললো -
"তমাল গাড়ি স্টার্ট দে।"
সব কটা গাড়ি চারদিকে রওয়ানা করলো। শাহাদের গাড়ির পিছনে আরেকটা মাইক্রো সাথে চললো। প্যাসেঞ্জার সিটে বসে শাহাদ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলো যেন কুহু অক্ষত থাকে। পার্টি সেন্টারে কেন সে কুহুকে চোখে চোখে রাখলো না তার জন্য নিজেকে ধিক্কার দিলো। কিন্তু এত এত মানুষ এতগুলো গার্ড থাকা স্বত্তেও কুহুর বিপদ হতে পারে তা- ই বা কে জানতো। শাহাদ রাস্তার দিকে চোখ রেখে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। যদি মেসেজ দেয়ার সাথে সাথেই পার্কিং লটে চলে যেত সে তবে এটা ঘটতো না।কিন্তু সে তো ভেবেছিল কুহু বোধহয় এখনো খাচ্ছে। কুহু যে এত তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে সাথে সাথেই পার্কিং এ চলে যাবে তা ধারনাতেও ছিল না শাহাদের।
-------------
কাঠ আর লাকড়ি বোঝাই টিনের ছাউনি দেয়া একটা ঘরের সামনে চারজন ছেলে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবারই মুখে চিন্তার ছাপ। রাফি জিজ্ঞেস করলো-
"তোরা শিউর যে ওই জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না?"
লিমন বললো-
"হ্যা শিউর, আমি নিজে চেক করেছিলাম সিকিউরিটি রুমে গিয়ে।"
শিহাব চোখ মুখ কালো করে বলল-
"আমার খুব ভয় করছে। কেন যে আমি তোদের সাথে যোগ দিলাম।শাহাদ খান জানলে না জানি কি শাস্তি দিবে।"
লিমন ধমক দিয়ে বলল-
"চুপ ভীতুর ডিম। তোকে দলে নেয়াটাই ভুল হয়েছে। হাসিবের জোরাজুরিতেই তোকে দলে নিয়েছিলাম নয়তো কখনোই নিতাম না।"
হাসিব চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওদের তর্ক শুনছে। সে শিহাবকে দলে নিয়েছিলো কারন শিহাব ভালো গাড়ি চালাতে পারে। কদিন আগে হাসিব যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলো সামাজিকভাবে শাহাদকে হেয় করতে তার স্ত্রীকে কিডন্যাপ করবে তখন সেটা বিশ্বস্ত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলো। তাদেরকে রাজনীতি করে ক্যারিয়ার গড়ার লোভ দেখালো। সবে ভার্সিটিতে পদার্পণ করা ছেলেগুলোর চোখ তখন চকচক করে উঠলো আসন্ন ভবিষ্যতের সফলকামের ভাবনায়। তিনজনই তখন হাসিবের সাথে এক হয়ে লেগে পড়লো প্ল্যান সাজানোতে।
প্রথমেই তারা কুহুর বায়োডাটা সংগ্রহ করলো। অবাক হলো যখন দেখলো কুহু তাদেরই ভার্সিটির সিনিয়র।তারপর তারা নিয়ম করে কুহুকে ফলো করতে লাগলো। কবে এবং কিভাবে কিডন্যাপ করলে সেটা লোক জানাজানি হবে তার সুযোগ খুজতে লাগলো। তারপর হাসিব জানতে পারলো স্থানীয় ওসির ছেলের বউ ভাতে হিশামকে দাওয়াত করা হয়েছে কিন্তু সেখানে শাহাদ খান সপরিবারে থাকবে এই কারনে হিশাম দাওয়াত ক্যান্সেল করেছে তখন সে এটাকে সুবর্ন সুযোগ হিসেবে বেছে নিলো। এরকম সামাজিক পার্টি থেকে হঠাৎ করে একটা মেয়ে গায়েব হয়ে গেলে অবশ্যই সেটা আলোড়ন সৃষ্টি করবেই।তাই বন্ধুদেরকে নিয়ে তখনই প্ল্যান সাজিয়ে ফেললো। কোথায় সিসিটিভি ক্যামেরা নেই তা জেনে নিয়ে সেখানে গাড়ি পার্ক করে গাড়িতে শিহাবকে বসিয়ে রেখে বাকি তিনজন জায়গাটা পরখ করতে বের হয়েছিলো। চারজনেরই মুখে ছিলো কালো মাস্ক।কিন্তু যখন দেখলো কুহু নিজে এসে গাড়িতে উঠে বসেছে তখন তাদের বিস্ময়ের সীমা রইলো না।
রাফি একবার লাকড়ির ঘরের দিকে তাকালো। ঘরটার একপাশে টিনের দেয়াল দেয়া। বাকি তিন পাশ খোলা। ঘরের সামনে সারি করে লাকড়ি টাল করে রাখা। ঘরের ভিতরেও লাকড়ি আছে। আছে লাকড়ি কাটার যন্ত্র।ঘরের এক পাশে দেয়ালের সাথে লাগানো একটা কাঠের চৌকি।সেখানে তেল চিটচিটে তোষক আর বালিশ।তার উপরেই কুহুকে শুইয়ে রাখা হয়েছে।রাফি ভয়ে ভয়ে বললো-
"মেয়েটা উঠে যাবে না তো।আর কতক্ষন অজ্ঞান হয়ে থাকবে?"
লিমন বললো-
"উঠার তো কথাই। আমি জীবনে এমন কেস দেখি নি।মেয়ে নিজে নিজে কিডন্যাপারের গাড়িতে উঠে বসে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কিডন্যাপারদের কিছুই করতে হয় নি। এত কষ্ট করে প্ল্যান করলাম সেই প্ল্যানের কিছুই হলো না।ধুর এভাবে মজা পাওয়া যায় নাকি।"
রাফি সমর্থন করে বলল-
"জীবনের প্রথম কিডন্যাপটা ফেইলড হলো!"
শিহাব বললো-
"আমি তো ভয়ে গাড়ির সব দরজা বন্ধ করে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখি এই মেয়ে জানালায় নক করছে। আমি তো প্রথম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তারপর ভ্যাবাচেকা খেয়ে গাড়ির সব দরজা আনলক করে দিলাম।তখন মেয়ে পিছনের দরজা খুলে উঠে বসলো।"
হাসিব সবাইকে থামিয়ে বললো-
"থাম তোরা।এতক্ষনে বোধ হয় চারদিকে লোক জানাজানি হয়ে গেছে।আর কিছুক্ষন যাওয়ার পর গাড়িসহ ওকে খান বাড়ির কাছাকাছি রেখে আসব।"
রাফি চিল চিৎকার করে বলল-
"গাড়িসহ রেখে আসবি মানে!! আমার মামা এই গাড়িটা বিদেশ থেকে কিনে পাঠিয়েছে। এখনো নাম্বার প্লেট লাগাইনি পর্যন্ত।একদম নতুন।"
হাসিব জোরপূর্বক হেসে বলল-
"সেজন্যই রেখে আসব। আমি খবর নেয়ার জন্য বাড়িতে যাচ্ছি।তোরা জায়গাটা পাহারা দে।"
এইটা বলেই হাসিব তার বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো।যাতে কেউ লোকেশন ট্র্যাক করতে না পারে তাই কেউই মোবাইল সাথে আনে নি।হাসিব তাই বাড়িতে গিয়ে কি হচ্ছে তার খোজ খবর নিবে।এই জায়গাটা তার বাড়ির কাছেই। আশেপাশে অনেক খালি প্লট।সন্ধ্যার পরই নীরব থাকে।এজন্যই সে এই জায়গাটা পছন্দ করেছে।
রাফি মাথায় হাত দিয়ে হায় হায় করে উঠলো। সরল মনে তার ব্র্যান্ড নিউ নতুন গাড়িটা দিয়েছিলো হাসিবকে। আশা ছিলো হাসিবের হাত ধরে রাজনীতিতে নাম লিখাবে।তরুন নেতা হয়ে হাজারো মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ হবে,ফেসবুকে ফলোয়ার হবে। কিন্তু মাঝখান থেকে গাড়িটা খসে গেলো।
---------
কুহু চোখ পিটপিট করে তাকালো। প্রথম দফায় সে চারদিক অন্ধকার দেখলো। তারপর অন্ধকার সয়ে আসতেই চারপাশ কিছুটা দৃষ্টিগোচর হলো। আস্তে আস্তে উঠে বসলো। বড় বড় চোখ করে চারপাশে মাথা ঘুরাতে লাগলো। সে কোথায় আছে,কেন আছে কিছুই বুঝতে পারলো না। এদিক ওদিক তাকালো। অল্প দূরের রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের আলোতে একটা খোলা ঘরের মতো নজরে পড়লো। দূরে জ্বলতে থাকা অনেক আলো দেখতে পেলো। খানিক পরেই যখন আস্তে আস্তে সব মনে পড়লো তখন লাফিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। কানে এলো কয়েকটা ছেলের কন্ঠ। নীচু কন্ঠে কিসব বলাবলি করছে।এরাই কিডনাপার। কুহু জেগে গেছে দেখতে পেলে নিশ্চয়ই আক্রমণ করতে আসবে।তাই এখনি পালাতে হবে।
কুহু আতংকগ্রস্ত হয়ে কিছু বিবেচনা না করেই আধো অন্ধকারেই রাস্তার ল্যাম্পপোস্টটা লক্ষ্য করে দৌড় দিলো। মাটিতে পড়ে থাকা লাকড়ির সাথে হোচট খেয়ে ঘরের ভিতর থাকা উঁচু করে রাখা লাকড়িগুলোর উপর পড়লো।ধাক্কা খেয়ে সমস্ত লাকড়ি গডিয়ে পড়লো মাটিতে। শব্দ পেয়ে তিনজন ঘরের ভিতর দৌড়ে এলো। কুহুকে ভয়ার্ত চোখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লিমন শিহাবকে বললো-
"তোকে না বলেছিলাম ওকে বেঁধে রাখতে।"
শিহাব আমতা আমতা করে বলল-
"ধরাধরি করে নিয়ে এসে খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম।তাই মনে ছিলো না।"
লিমন কিড়মিড়িয়ে বললো-
"বোকার দল!! তোদের সাথে যোগ দেয়াই ভুল হয়েছে।"
রাফি চিৎকার করে বলল-
"তর্ক না করে মেয়েটাকে ধর।"
তিনজনই ফাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে কুহুকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করলো।কুহু ততক্ষনে মাটি থেকে একটা লাকড়ি তুলে নিয়েছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোতে তিনজনের চেহারা অল্প দেখা যাচ্ছে।কুহু লাকড়িটা ওদের দিকে তাক করে বলল-
"আমার কাছে আসলে আমি কিন্ত মাথা ফাটিয়ে ফেলব।"
শিহাব বিনীত কন্ঠে বললো-
"দেখুন আপু আমরা অনেক ভালো ছেলে।আমরা কিছুই করব না।আপনি মাথা ফাটাবেন না, প্লিজ!র*ক্তে আমার ফোবিয়া আছে।"
রাফি আর লিমন দুজনেই হতাশ হলো। শিহাবকে ধমকে বললো-
"চুপ কর,ওকে ধর।"
প্রথমেই এগিয়ে আসলো লিমন। তার দেখাদেখি বাকি দুজনও এগিয়ে আসলো। কুহু নিজেকে বাঁচাতে চিৎকার করে হাত উপরে তুলে আঘাত করলো ওদের উপর। রাফি আর লিমন তড়িৎ সরে গেলো।আঘাত পড়লো শিহাবের উপর।শিহাব মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে বললো-
"একি করলেন আপু!আমার মাথা ফাটিয়ে দিলেন। "
কুহু নিজের কাজে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলো। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো শিহাবের দিকে।রাফি আর লিমন দুজনেই শিহাবকে ধরতে গেলো পরক্ষনেই দাঁড়িয়ে পড়লো কুহুকে ধরার জন্য।কুহু লাকড়িটা ওদের দিকে ছুড়ে মেরে ঘুরে দৌড় দিলো রাস্তার দিকে। লাকড়ি ঘরটা রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে। সামনের ছোটখাট একটা ক্ষেত পেরিয়ে রাস্তায় গিয়ে উঠতে হয়।রাস্তাটা একটু উঁচু জায়গাটা থেকে।
কুহু উর্ধ্বশ্বাসে রাস্তা লক্ষ্য করে দৌড়াচ্ছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোতে পুরো জায়গাটা আলোছায়ারর সৃষ্টি করেছে।কুহু চিৎকার করতে করতে এঁকেবেঁকে দৌড়াচ্ছে।পিছনে দৌড়াচ্ছে রাফি আর লিমনও।কুহুর দৌড় ততটা জোরে হচ্ছে না। একে তো ভয়ে আছে তার উপর আবার মেয়ে মানুষ।দৌড়ঝাপের অভ্যাস নেই তেমন।আরেকটু গেলেই ওরা কুহুকে ধরে ফেলবে।রাস্তা থেকে অল্প দূরত্বে গিয়ে কুহু হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলো।পিছন ফিরে তাকালো ওদের দিকে।ওরা দুজনেই অবাক হলো।দৌড়ের গতি কমিয়ে ভ্রু কুচকে কুহুর সামনে এসে দাঁড়ালো।ওরা এসে দাড়াতেই আচমকা কুহু দুহাতে দুজনের বাহু ধরে বামপাশের দিকে ধাক্কা দিলো।
রাফি আর লিমন আবিষ্কার করলো ওদের পায়ের নিচে মাটি নেই।দুজনেই একজন আরেকজনকে ধরে "এই এই" করতে করতে পাশের ডোবায় পড়লো। কাদা পানিতে মাখামাখি হয়ে দুজন যখন উঠে দাঁড়ালো তখন কুহু কোথাও নেই,উধাও হয়ে গেছে। তাকিয়ে দেখলো দুজনেই হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার পাশে এই নিচু জায়গাটা থেকে হয়ত কখনো মাটি তোলা হয়েছে সেই গর্তটাই বৃষ্টির পানিতে ডোবার রূপ নিয়েছে।দুজেনেই হতভম্ব হয়ে কাদাপানিতে মাখামাখি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
---------------
কুহু হাঁপাতে হাঁপাতে একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।এই এলাকাটায় বাড়িঘরের সংখ্যা তেমন নেই।এদিক ওদিক ছড়ানো ছিটানো বড় জায়গা নিয়ে অভিজাত বাড়ি। আর বেশিরভাগই প্লট, এখনো বিক্রি হয় নি।অনেক্ষন দৌড়ে এসে এই বাড়িটাকেই আশ্রয় নেয়ার জন্য বেছে নিলো কুহু।পথে আরো দু একটা বাড়ি পেয়েছে কিন্তু ওগুলোর গেট বন্ধ পেয়েছে। এই বাড়িটার বিশাল লোহার গেট হালকা খোলা।কুহু গেট ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়লো।দারোয়ান গেটের পাশের ছোট্ট ঘরটায় বসে ঝিমুচ্ছে তাই কুহুকে দেখতে পেলো না।কুহু বাগান পেরিয়ে দৌড়ে সদর দরজায় গিয়ে কড়া নাড়লো।দরজা খুলে দিলো একটা কাজের লোক।কুহু কাজের লোকটাকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।তারপর ভিতরে ড্রয়িং রুমের সোফার দিকে তাকিয়ে আতকে উঠলো। ছোট একটা চিৎকার দিয়ে মুখে হাত চেপে।ধরলো।
হাসিব সোফায় বসে ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলো।এতটাই তাড়াহুড়োয় ছিলো যে নিজের ঘরে যাওয়ার সময় পায় নি,এমনকি মুখের কালো মাস্কটাও খুলে নি।মোবাইল ফোনে খান বাড়ির পুত্রবধূর নিখোঁজ হওয়ার কোনো নিউজ পাবলিশ হয়েছে কিনা দেখছিলো। কিন্তু কোথাও কোনো নিউজ নেই।চরম বিরক্তিতে তার কপাল কুচকে এসেছে। এমন বিরক্তই যে দরজার কড়া নাড়ার শব্দেও সে মুখ তুলে চাইলো না।আচমকা মেয়েলি চিৎকারে সে মুখ তুলে চাইলো।দরজায় কুহুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার মুখ হা হয়ে গেলো।তার বিস্ময় সমস্ত সীমা-পরিসীমা অতিক্রম করলো।
চলবে
0 Comments:
Post a Comment