1t/Banner 728x90

গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ৩০

 #টক_ঝাল_মিষ্টি 

#তামান্না_আঁখি 

#পর্ব-৩০


অন্ধকার রাস্তার বুক চিড়ে শাহাদের গাড়ির হেডলাইট দেখা যাচ্ছে। একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার দিকে যাচ্ছে ওরা। ওখানে বেশিরভাগ ইটভাটা।কুহুকে কিডনাপ করা গাড়িটা যে রাস্তা থেকে উধাও হয়ে গেছে রাস্তাটা অনেকগুলো রাস্তায় ভাগ হয়ে এদিক সেদিক চলে গেছে।তার মাঝে একটা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে শাহাদ। আশেপাশে সব এলাকায় লোকজন নামিয়ে দেয়া হয়েছে। সবাই খুঁজছে গাড়িটাকে।গাড়িটা সেম শাহাদের গাড়িটার মতো। সেজন্যই কুহু ভুল করে উঠে পড়েছে। গাড়িটায় কোনো নাম্বারপ্লেট না থাকায় গাড়িটাকে সনাক্ত করা যাচ্ছে না। জিপিএস দিয়ে ট্র‍্যাক করাও সম্ভব হচ্ছে না। 

শাহাদ প্যাসেঞ্জার সিটে স্থির হয়ে বসে আছে। এক হাত গাড়ির জানালায় ঠেকিয়ে ঠোঁটের উপর রেখে শান্ত চোখে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়ি চালাতে চালাতে তমাল একবার আড়চোখে শাহাদের দিকে তাকালো।শাহাদকে এভাবে দেখে তমাল বেশ বুঝতে পারলো শাহাদের ভেতরে কি চলছে। এই মুহূর্তে কিডনাপার কাউকে হাতের কাছে পেলে শাহাদ যে ওদের মাঝখান থেকে ছিড়ে ফেলবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই তমালের। উপর থেকে শান্তশিষ্ট ভদ্র মনে হলেও ভিতরে যে শাহাদ কতটা ভয়ংকর হতে পারে প্রয়োজনে তা তমাল জানে। তমাল একটা ছোট ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে রাস্তার দিকে তাকালো। আজ যদি কুহুকে না পাওয়া যায় তাহলে কাল সকাল হতে হতে শাহাদ ত্রাস সৃষ্টি করবে শহরে। 


ক্রিং ক্রিং করে তমালের ফোনটা বেজে উঠলে।স্টিয়ারিং এ নিয়ন্ত্রন রেখে তমাল ফোন টা বের করলো।একটা গার্ড কল করেছে।নিশ্চয়ই শাহাদকে কল করতে সাহস পাচ্ছে না।তমাল কল রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে কথা শুনে ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে দিলো। তমাল গাড়ি থামিয়ে দিতেই শাহাদের পিছনে আসা গার্ড ভর্তি গাড়িটাও থেমে গেলো। শাহাদ ভ্রু কুচকে তাকালো তমালের দিকে।তমাল ফোন নামিয়ে বললো-


"ভাই গাড়িটা পাওয়া গেছে।"


শাহাদ সোজা হয়ে বসলো। কিছু না বলে গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে পড়লো। গাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে তমালকে বললো-


"বের হ।ওখানে গিয়ে বস।"


তমাল বিস্মিত হয়ে নেমে পড়লো। ঘুরে গিয়ে প্যাসেঞ্জার সিটে বসলো। শাহাদ ড্রাইভিং সিটে বসে বিপজ্জনকভাবে গাড়িটা ইউ টার্ন করলো। তারপর সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি টান দিলো। তমাল সিটের সাথে একপ্রকার সেঁটে গেলো। তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে সিট বেল্ট বাধলো।শাহাদ যে কিনা কখনো কোনো রুলস ব্রেক করে না সে নিজেই সিটবেল্ট না বেঁধেই, কোনো প্রকার ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনেই সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। পিছনে গার্ডদের গাড়িটাও শাহাদের গাড়িটার সাথে তাল মিলাতে হিমশিম খাচ্ছে। 


তমালের বলা লোকশনে শাহাদ গাড়ি এনে থামালো। গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে এসে দেখতে পেলো সেখানে অলরেডি অনেক গার্ড আর গাড়ি রয়েছে। শাহাদকে নামতে দেখে একটা গার্ড এগিয়ে এসে বললো- 


"স্যার,গাড়িটাকে আমরা এখান কিছুটা দূরে একটা ঝোঁপের কাছে পেয়েছি। ছেলেরা গাড়িটাকে ধাক্কা দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে।শাহাদ গাড়িটার দিকে একবার তাকালো। জিজ্ঞেস করলো- 


" ছেলেগুলো?"


"স্যার তিনজনকে এই লাকড়ির গুদামটায় পেয়েছি।আর একজন নেই।আর ম্যাম কোথায় আছে ওরা বলছে না।"


শাহাদ গার্ডটাকে ইশারা করলো ওকে ছেলেগুলোর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। গার্ডটার পিছু পিছু যাওয়ার সময় হাত বাড়ালো তমালের দিকে। তমাল যেতে যেতে শাহাদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে কোমড়ে গুঁজে রাখা রি*ভলবারটা শাহাদের হাতে দিলো। শাহাদ রিভ*লবারটা লোড করতে করতে সামনের ক্ষেতটা পেরিয়ে লাকড়ির ঘরটায় চলে এলো। লাকড়ির ঘরটা এমনিতে অন্ধকার।গার্ডদের লাইটের আলোতে এখন কিছুটা আলোকিত হয়েছে৷ ঘরের মাঝখানে মাটিতে তিনটা ছেলে বসে আছে।তিনজনেরই চোখমুখে অসহায়ের ছাপ,একজন তো প্রায় কেঁদেই দিবে এমন অবস্থা। শাহাদ তিনজনের দিকেই একবার দেখলো ভালো করে। হেঁটে গিয়ে ঘরের পাশে রাখা চৌকিটায় বসলো। মাটির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল- 


"কুহু কোথায় আছে বলে দাও আমি তোমাদের কিছু করব না।"


তিনজন ই নড়ে চড়ে বসলো। গার্ডদের হাতে অলরেডি তারা কয়েক দফায় চড় থাপ্পড় খেয়ে ফেলেছে। ওরাও জানতে চেয়েছিলো কুহু কোথায় আছে কিন্তু কেউ কিছু বলে নি। এই মুখ না খোলার আইডিয়াটা লিমনের। কুহু পালিয়ে যাওয়ার পর রাফি লিমন দুজনেই কাঁদায় মাখানো জামাকাপড় নিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে কুহুকে খুঁজেছিলো কিন্তু কোথাও না পেয়ে ফিরে এসেছিলো লাকড়ি ঘরে।সেখানে কপালের ব্যথায় কাতরাচ্ছিলো শিহাব।র*ক্ত দেখে তার অবস্থা তখন এম্নিতেই মরো মরো। রাফি আর লিমন একটা ছেড়া গামছা দিয়ে কপাল বেঁধে দেয়ার পর হঠাৎ আবিষ্কার করলো কতগুলো লোক তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। বুদ্ধিমান লিমন বুঝে ফেলে অন্য দুজনকে ফিসফিস করে বলেছিলো-

"মেয়েটা কোথায় আছে কি হয়েছে কিছু বলিস না। না বলা পর্যন্ত ওরা আমাদের কিছু করবে না।"


সেই থেকে তিনজন মুখে কুলুপ এঁটে আছে। গার্ডরা বন্দুকের ভয় দেখালেও মুখ খুলে নি। শাহাদ উত্তর না পেয়ে মুখ তুলে তাকালো। তিনজনের কেউই শাহাদের দিকে তাকালো না। তারা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। শাহাদ আবারো বললো-


"কুহু কোথায়?"


শাহাদের কন্ঠ কঠিন শোনালো। লিমন ঢোক গিলে বললো-

"আমরা জানিনা,জানলেও বলব না।"


শাহাদ রি*ভলবার তাক করলো তিনজনের দিকে।শাহাদকে রিভ*লবার তাক করতে দেখে শিহাব ভয়ে চিৎকার দিলো। শাহাদ ট্রিগার টিপে তিনজনের পায়ের কাছে গু*লি করলো। এবার তিনজনই চিৎকার করে উঠলো ভয়ে। একজন আরেকজনকে ধরে কাঁপতে লাগলো।তমাল এগিয়ে এসে শাহাদের হাত ধরে রি*ভলবারটা নামিয়ে তিনজনকে লক্ষ্য করে বললো- 


" এই শা*লারা তোরা কি বুঝতে পারছিস না তোদের অবস্থা? ম*রতে চাস নাকি?"


শিহাব কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো-

"দয়া করে আমাদের কিছু করবেন না।আমরা আসলেই জানি না ওই আপু কোথায়।"


তমাল বিরক্ত হয়ে তেড়ে গিয়ে শিহাবকে চড় মারতে চাইলো। শাহাদ তাকে আটকে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললো-

" জানো না মানে।তোমরাই তো ওকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছো।"


রাফি উত্তর দিলো- 

"নিয়ে এসেছিলাম।কিন্তু ওই মেয়ে পালিয়ে গেছেন।"


তমাল ধমকে বললো-

"ফাযলামি করার জায়গা পাস না। তোরা তিনজন ছেলে থাকতে ওরকম বোকাসোকা একটা মেয়ে একাই পালিয়ে গেছে? তোরাই কোথাও লুকিয়েছিস ভাবিকে।"


শিহাব প্রতিবাদ করে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো- 


"কিসের বোকাসোকা! এই যে দেখুন যাওয়ার আগে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়ে গেছে।এদের দুজনকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলেছে। এই মেয়ে বোকাসোকা না,এই মেয়ে স*ন্ত্রাস।"


শিহাবের কথা শুনে তমাল শাহাদের দিকে তাকালো। শাহাদ চিন্তিত মুখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তিনজনের দিকে। আসলেই কি কুহু পালিয়ে গেছে? যদি গিয়েও থাকে তবে কোথায় গেছে?


-----------


হাসিব স্তব্ধ হয়ে দরজায় দাঁড়ানো কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে। কুহু চিৎকার করে মুখে হাত দিয়ে ভয়ার্ত চোখে  তাকিয়ে আছে। হাসিবের মুখ থেকে চিৎাকার টুকুও বের হচ্ছে না। সে শকে চলে গেছে। কুহুকে অচেতন অবস্থায় রেখে এসেছে বেশিক্ষন হয় নি,সাথে আবার তিনজন বন্ধুকেও পাহাড়ায় রেখেছে। আর এর মধ্যেই কুহু এখানে আসলো কিভাবে?তাও আবার তার নিজের বাড়িতে।

 মেয়েলি চিৎকার শুনে তৃপ্তি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলো। সদর দরজায় একটা সুন্দরমতো মেয়েকে দেখতে পেয়ে অবাকই হলো। এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো- 


"কে তুমি?"


কুহু চোখ সরিয়ে তৃপ্তির দিকে তাকালো। তৃপ্তিকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে তৃপ্তির কাছে চলে আসলো। তৃপ্তির দুহাত ধরে বলল-

"আমাকে বাঁচান, আমি..... আমাকে.....ওই ছেলেটা..."


কুহু থেমে থেমে কথা বলার সময় আঙুল উঁচিয়ে হাসিবের দিকে তাক করলো। তার শরীর রীতিমতো কাঁপছে।এক বিপদ থেকে ছাড়া পেয়ে সেই আবার নতুন বিপদে পড়েছে। আতংকে দম বন্ধ হয়ার জোগাড়। তৃপ্তি কুহুর কথা কিছু বুঝতে পারলো না। শুধু হাসিবের দিকে বাড়িয়ে রাখা কুহুর কম্পমান হাতটা লক্ষ্য করে বললো- 


"ও আমার দেবর। এই বাড়ির ছেলে। তুমি ওকে ভয় পাচ্ছ কেন?"


তারপর হাসিবকে উদ্দেশ্য করে বলল- 

"তুমি বাড়ির ভেতর মাস্ক পড়ে আছো কেন?"


কুহু হাত নামিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো তৃপ্তির দিকে।ঘুরেফিরে সে কিডনাপারের বাড়িতে এসে ঠায় নিয়েছে। নিজেই নিজের কাজে হতবাক।

তৃপ্তি কুহুকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখলো।এলোমেলো হয়ে থাকা কুহুকে প্রশ্ন করলো- 


"তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে? কি হয়েছে আমাকে বল।"


কুহু একবার হাসিবের দিকে আরেকবার তৃপ্তির দিকে তাকালো। মনে মনে চিন্তা করলো দেবর কিডনাপ করেছে এই ব্যাপারটা হয়তোবা এই মহিলা এখনো জানে না।জানলে যদি দেবর ভাবি মিলে তাকে গুম করে দেয় তাই কুহু মিথ্যা বললো-


"আমি আসলে হারিয়ে গেছি। এই এলাকায় কখনো আসি নি, তাই বুঝতে পারছি না কোন দিকে যাব।"


হাসিব কুহুর কথা শোনার সাথে সাথে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। কুহু হাসিবকে চলে যেতে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেললো। তৃপ্তিকে বললো-


"আমার মোবাইল ফোন আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমার স্বামীকে কল করতে হবে। আপনার মোবাইলটা একটু দিন।"


"তুমি আগে বসো। পানি খাও,একটু শান্ত হও।"


তৃপ্তি খেয়াল করে কুহুর মুখের দিকে তাকালো। বিস্ময় চেপে রেখে প্রশ্ন করলো- 

"তুমি কি শাহাদ খানের বউ?"


কুহু মাথা নেড়ে বললো- 

"হ্যা, আমার নাম কুহু।কিন্তু আপনি আমাকে কি করে চিনেন?"


তৃপ্তি আতকে উঠলো, না চাইতেও তার মুখের উপর হাত চলে গেলো। শাহাদ খানের বিয়ের খবর সব নিউজ চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছিলো।সেখানে বউ এর ছবিও ছিলো।এছাড়া ফেসবুকেও অনেকদিন শাহাদ খান আর কুহুর ছবি নিয়ে প্রচুর পোস্ট হয়েছে। কুহুকে বউ সাজে দেখছিলো সব জায়গায় এই জন্য প্রথম দফায় চিনতে পারে নি। তৃপ্তি সচেতন হলো, আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কোথাও তার শ্বাশুড়ি মা আছে কিনা। মঞ্জুরা বেগম যদি জানতে পারে শাহাদ খানের বউ এই বাড়িতে আশ্রয়ের খোজে এসেছে তাহলে হয়তো এই মেয়েটির কপালে খুব খারাপ কিছু জুটবে। তৃপ্তি কুহুকে টেনে নিয়ে রান্নাঘরে চলে এলো। ফিসফিস করে বললো- 


"তুমি এখন যেই বাড়িতে আছো তা তোমার শ্বশুর বাড়ির জাত শত্রু। এই বাড়ির লোকজন মনে করে শাহাদ খান আমার শ্বশুড় কে খু*ন করেছে।তাই তারা যেকোনো মূল্যে প্রতিশোধ নিতে চায়। তাই তুমি ভুলেও নিজের পরিচয় প্রকাশ করোনা এখানে।"


কুহু আরেকটা ধাক্কা খেলো তৃপ্তির কথা শুনে। খান বাড়ির জাত শত্রুর বাড়িতে উঠেছে সে?শাহাদ খু*ন করেছে? সেই খু*নের প্রতিশোধ নিতে চায় এরা? আবার এই বাড়ির ছেলেই তাকে কিডন্যাপ করেছে?এতসব চিন্তা করে কুহু মাথা ঘুরে পড়ে নিতে নিলো।তৃপ্তি তাড়াতাড়ি তাকে ধরে ফেললো। চেয়ার টেনে বসিয়ে পানি দিলো।কুহু পুরোটা পানি শেষ করলো। তৃপ্তি কুহুর দুহাত ধরে অনুরোধ করে বললো-


"বোন, আমাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারো।কেউ জানার আগেই আমি তোমাকে এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি।তুমি চলে যাও কিন্তু শাহাদ খানকে এখানে ডেকে এনো না। যুদ্ধ বেঁধে যাবে।"


কুহু উদভ্রান্তের মতো তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। তার মাথার ভিতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তৃপ্তি যেসব বলছে সেসব যদি সত্যি হয় তবে সে নিজে শুধু ঝামেলায় পড়েনি বরং সে আরো ঝামেলা সৃষ্টি করেছে।


হাসিব ঘরে এসে মুখের মাস্ক টা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে ফেললো,হাতের ফোনটা ছুড়ে ফেললো বিছানায়।তারপর দুহাতে চুল টেনে ধরলো।কুহু এই বাড়িতে কি করে চলে আসলো এটাই সে চিন্তা করে কূল পাচ্ছে না। বিছানা থেকে ফোনটা তুলে নিয়ে একে একে লিমন রাফি শিহাবকে কল দিলো। কিন্তু কেউই কল রিসিভ করলো না।হাসিব পুনরায় ফোনটা ছুড়ে ফেললো। চিন্তিত মুখে ঘরজুড়ে পায়চারি করতে লাগলো। কিডনাপের ব্যাপারটা হিশাম জেনে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। সে তো  গোপনে কুহুকে কিডনাপ করে খান পরিবারের সম্মান নষ্ট করতে চেয়েছিলো। পরবর্তীতে সাকসেসফুল হলে হিশামকে জানাবে ভেবেছিলো। কিন্তু এখন তো সব প্ল্যান বানচাল হয়ে গেলো। এই অবস্থায় হিশাম জানতে পারলে ওর আর রক্ষে থাকবে না। এই বাড়িতেও আর থাকা হবে না, চলে যেতে হবে হলে। আর শাহাদ খান যদি জেনে যায় তবে তো ঘটনা আরো প্যাচ লেগে যাবে। 


হাসিব ঢক ঢক করে পুরো এক গ্লাস পানি শেষ করলো। বিছানায় বসে দুহাতে মুখ ঘষলো। বাকি তিনবন্ধুর কি হয়েছে, কিভাবে কুহু ছাড়া পেয়েছে, এই বাড়িতেই বা কিভাবে এসেছে সব ভেবে মাথার চুল ছিড়ার অবস্থা হয়েছে তার। কুহু পালিয়ে গিয়েছিলো ভালো কথা।।কিন্তু এই বাড়িতেই কেন আসলো? এখন তো সে বাড়ির মানুষের সামনে কুহুকে কিছু করতেও পারবে না। কুহু তো তাকে অলরেডি চিনেই ফেলেছে। মুখ না দেখলেও জেনে ফেলেছে সে এই বাড়ির ছেলে।হাসিব ঘামতে লাগলো। সবকিছু এমন হাতের বাইরে চলে যাবে তা সে ভাবে নি।এখন এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনো সুযোগও সে দেখছে না।


-----------


কুহুকে একটু সময় দিলো তৃপ্তি। কুহু এখনো চেয়ারে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বসে আছে। তৃপ্তি বাড়ির ভিতরে উঁকি দিলো। মঞ্জুরা বেগম রাতের খাবার খেয়ে ঘরে বসে তসবিহ পড়ছেন,উনি এখন এখানে আসবেন না। কিন্তু সমস্যা হলো বাড়ির কাজের লোকগুলোর কেউ যদি গিয়ে কুহুর আসার খবরটা দিয়ে দেয় তবেই উনি তদন্ত করতে চলে আসবেন। তাই তৃপ্তি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কুহুকে বাড়ির বাইরে বের দিতে চাচ্ছে। তৃপ্তি কুহুর কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বললো-


"কুহু, এখন তোমার যাওয়া উচিত। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডানপাশের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই একটা শপ পাবে। ওখান থেকে শাহাদকে কল করে নিও। এই এলাকা অনেক সেফ, কোনো বিপদ হবে না তোমার।"


তৃপ্তির কথা শুনে কুহু আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শাহাদকে খবর দেয়া উচিত।শাহাদ নিশ্চয়ই খুব চিন্তা করছে। কুহু রাজি হলো তৃপ্তির কথায়। তৃপ্তি কুহুকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এলো। বাড়ির কাজের লোকগুলো আপাতত নিজেদের ঘরে আছে,তাই ড্রয়িং রুমটা ফাঁকা ই পড়ে আছে। তৃপ্তি কুহুকে নিয়ে সদর দরজায় এলো। আস্তে করে দরজার লক খুললো। লক খুলে দরজা ফাঁক করতেই তৃপ্তি থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। হিশাম তার সেক্রেটারিকে সাথে নিয়ে দুটো সিড়ি পেরিয়ে সদর দরজার সামনে এসে উঠে দাঁড়িয়েছে। দরজার দিকে তাকিয়ে তৃপ্তিকে দেখে হাসলো। তৃপ্তির পাশে কুহুকে দেখে আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করতে চাইলো মেয়েটি কে কিন্তু বিকট গাড়ির চাকার শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ড্রাইভওয়ের দিকে।সেখানে কয়েকটা গাড়ি দ্রুত গতিতে এসে ঢুকছে। হিশামের ভ্রু কুচকে গেলো। কার এত বড় সাহস যে চৌধুরী বাড়িতে এভাবে ঢুকে?


গাড়িগুলো থামতেই সামনের কালো প্রাইভেট কারের দরজা খুলে নেমে এলো শাহাদ।আস্তে আস্তে সবগুলো গাড়ির দরজা খুলে গার্ডসহ দলের কিছু ছেলে নেমে এলো।শাহাদ সোজা এগিয়ে আসতে থাকলো হিশামের দিকে।তার পিছু পিছু আসছে সবাই। গার্ডরা রাফি,লিমন আর শিহাবকে ধরে নিয়ে এসেছে তাদের সাথে।


হিশাম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শাহাদের দিকে৷শাহাদ খান যে তার বাড়িতে এভাবে লোকবল নিয়ে আসতে পারে তা তার ধারনার উর্ধ্বে। দরজায় দাঁড়ানো তৃপ্তি আর কুহু হিশামকে দেখে যতটা না চমকালো তার চেয়ে বেশি ভয় পেলো শাহাদকে এই মুহুর্তে এখানে দেখে।দুজন দুজনের হাত খামছে ধরে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে।


 দুতলার বারান্দা থেকে হাসিব উঁকি মেরে সব দেখলো। শাহাদের সাথে তিন বন্ধুকে দেখে যা বুঝার বুঝে ফেললো। শাহাদ আর হিশামকে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার ঘাম ছুটে গেলো।তাড়াতাড়ি বারান্দা থেকে সরে এসে ঘরের দরজা লাগিয়ে চুপচাপ ঘরের ভেতর বসে রইলো।


চলবে


[দেরিতে গল্প দেয়ার জন্য অনেকেই আমার উপর ক্ষিপ্ত। আমি যথেষ্ট চেষ্টা করি নিয়মিত দেয়ার কিন্তু হয়ে উঠে না। নিজের পড়াশোনা আছে তার উপর রমজান মাস। ইবাদত নিয়ে ব্যস্ততার কারনেও দিতে পারি নি।আশা করব সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।🥰❤️]

No comments

Powered by Blogger.