গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ৩১
#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৩১
শাহাদ আর হিশাম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেই দুজনের চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে আছে। দুজনের দৃষ্টিই কঠিন। হিশামের দৃষ্টিতে কিছুটা আক্রোশ রয়েছে।তৃপ্তি আর কুহু দরজায় দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। দুজনেরই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। তৃপ্তি আস্তে করে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে কুহুর হাত ধরে দূরে সরে এলো দরজা থেকে। একবার কুহুর দিকে তাকালো। শাহাদ এখানে আসার কারন কি? ও কি জানে কুহু এখানে? জানলেও এত লোকজন নিয়ে এসেছে কেন?
হিশাম আক্রোশ নিয়ে শাহাদের শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাথার ভেতর রাগের আগুন যেন ফুলে ফেপে উঠছে। ইচ্ছে হচ্ছে শাহাদকে এক্ষুনি জ্বালিয়ে দিতে। সে শাহাদের চোখে চোখ রেখে বলল-
" এইভাবে আমার বাড়িতে ঢুকার কারন কি?"
শাহাদ আর এক পা এগিয়ে হিশামের কাছাকাছি এলো। চোয়াল শক্ত করে বললো-
" আগে বাড়িতে ঢুকি তারপর বুঝাচ্ছি কেন এসেছি।"
শাহাদ বড় বড় পা ফেলে বাড়ির সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। জোরে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুললো।কাঠের দরজা দেয়ালে লেগে বিকট শব্দ হলো।কুহু তৃপ্তি দুজনেই চমকে গেলো সেই শব্দে। একজন আরেকজনকে আরো চেপে ধরলো। দুজনেই ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে দেখলো শাহাদ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এসে ঘরে ঢুকেছে। শাহাদ ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকালো। তার দৃষ্টি একবার দুতলা ঘুরে কুহু আর তৃপ্তির উপর পড়লো। কুহুকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শাহাদ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। বিস্ময় আর অবিশ্বাস নিয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখে কুহুকে পাওয়ার আনন্দ আর কন্ঠে বিস্ময় নিয়ে উচ্চারন করলো -
"কুহু!!"
কুহু শাহাদের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিলো। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। শাহাদের দিকে ছুটে যেতে উদ্ধত হলো। শাহাদও অস্থির হয়ে কুহুর দিকে ছুটে আসতে চাইলো কিন্তু বাধ সাধলো হিশাম। সে দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। শাহাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
"এটা ভদ্রলোকের বাড়ি। এখানে অভদ্রের মতো ঢুকার সাহস হলো কি করে? এক্ষনি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে না গেলে আমি পুলিশ ডাকব।"
হিশামের দিকে তাকিয়ে শাহাদের দৃষ্টি পুনরায় কঠিন হয়ে গেলো। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললো-
"অভদ্র আমি না, অভদ্র তোমার ভাই।"
তারপর ভিতরে নিয়ে আসা গার্ডদের সাথে দাঁড়ানো রাফি, লিমন আর শিহাবের দিকে আঙুল তাক করে বলল-
"তোমার ভাই এদেরকে সাথে নিয়ে একটা মেয়েকে কিডনাপ করেছে। আমি সেটারই বিচার করতে এসেছি। তোমার ভাইয়ের বিচার করতে এসেছি আমি।"
মঞ্জুরা বেগম শব্দ শুনে ঘরের বাইরে বের হয়ে এসেছেন।শব্দের উৎস খুজে ড্রয়িং রুমের কাছাকাছি আসতেই শাহাদকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। কোমড়ের ব্যথা থাকা সত্ত্বেও দ্রুত পা টেনে এগিয়ে আসলেন ড্রয়িং রুমে। শাহাদের শেষের কথাটা শুনতে পেয়ে বললেন-
"আমার ছেলের বিচার করার অধিকার তোকে কে দিয়েছে? তুই নিজেই তো একটা খু*নি।তোর বিচার কে করবে?"
শাহাদ মঞ্জুরা বেগমের দিকে তাকালো। বৃদ্ধ মহিলা হেটে এসে হিশামের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছেন।ঘৃণাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাহাদের দিকে। শাহাদ চোখ সরিয়ে তৃপ্তির হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা কুহুর দিকে তাকালো। দুজনেরই চোখাচোখি হলো।কুহু অবাক চোখে শাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। শাহাদ কুহুর দিকে তাকিয়ে বিব্রত অনুভব করলো। দৃষ্টি সরিয়ে মঞ্জুরা বেগমের দিকে তাকালো। মহিলা এখনো রাগে ফুসছে। শাহাদকে আরো কিছু বলবে তার আগেই হিশাম বললো-
" আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে? চৌধুরী বাড়ির ছেলের নামে কুৎসা রটানো হচ্ছে? আমি সহ্য করব না এসব।"
"তাহলে তোমার ভাইকে ডাকো। সে এসে বলুক যে এসব মিথ্যে।"
হিশাম রাগী চোখে কিছুক্ষন শাহাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর দুতালার দিকে তাকিয়ে গলা ছেড়ে হাসিবকে ডাকলো। হাসিব ঘরের ভেতর থেকে সেই ডাক স্পষ্ট শুনতে পেলো। প্রচন্ড ভয়ে সে খাটের কোনায় গিয়ে জড়সড় হয়ে বসে রইলো। হিশামের সামনে দাঁড়ানোর সাহস তার নেই। সে নিচে গেলেই তো সব ফাঁস হয়ে যাবে।
হিশাম কয়েকবার ডেকেও যখন হাসিবের সাড়া পেলো না তখন মঞ্জুরা বেগম বললো-
"সারাদিন পড়াশোনা করে ছেলেটা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।ওকে ডাকিস না।একটা খু*নির কথায় কিছু যায় আসে না।ওকে এই বাড়ি থেকে বের কর।"
শাহাদ নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে আবার খুললো।নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে মঞ্জুরা বেগমের দিকে তাকিয়ে বিনীত কন্ঠে বললো-
"আপনি আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। দয়া করে নিজের সম্মানের জায়গাটুকু রাখুন।"
মঞ্জুরা বেগম ক্ষেপে গেলেন। চোখ মুখ খিচিয়ে শাহাদকে কিছু বলার জন্য তৈরি হলেন।এর মাঝে হিশাম বললো-
"মা থামো,আমি দেখছি।"
তারপর বড় বড় পা ফেলে সিড়ি বেয়ে দুতলায় চলে গেলো হাসিবকে নিয়ে আসতে। শাহাদ হিশামের যাওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে কুহুর দিকে দৃষ্টি ফিরালো।দ্রুত কুহুর কাছে এসে কুহুকে ধরলো।এক হাত গালে রেখে বললো-
"তুমি ঠিক আছো? কোথাও আ*ঘাত পেয়েছো?"
কুহু গালে রাখা শাহাদের হাতের উপর নিজের হাত রেখে মাথা নেড়ে না করলো,সে ব্যথা পায় নি।শাহাদ পা থেকে মাথা পর্যন্ত কুহুকে পর্যবেক্ষন করলো।তমালের দিকে তাকিয়ে বলল-
"বাড়িতে জানিয়ে দে,কুহুকে পাওয়া গেছে।"
কোথা থেকে মঞ্জুরা বেগম এসে শাহাদকে টান দিয়ে কুহুর কাছ থেকে সরিয়ে দিলো।চেচিয়ে বললো-
"এই ছেলে আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে ধরাধরি করছিস কেন? আর এই মেয়ে তুমি কে?"
তারপর তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
"এই মেয়েকে আমার বাড়িতে কে ঢুকতে দিয়েছে? কোথা থেকে ধরে এনেছো ওকে?এই মেয়ে বের হও এই বাড়ি থেকে।"
শাহাদ চোখ বন্ধ করে কোমড়ে এক হাত দিয়ে আরেক হাতে কপাল চেপে ধরলো।লম্বা শ্বাস ফেলে মঞ্জুরা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো-
"ওর সাথে এভাবে কথা বলবেন না, ও আমার স্ত্রী।"
মঞ্জুরা বেগমের মুখটা হা হয়ে গেলো। চোখ বড় বড় করে শাহাদ আর কুহুর দিকে কয়েকবার তাকালো। ততক্ষনে হিশাম হাসিবকে সাথে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নেমে এসেছে।মঞ্জুরা বেগম তাড়াতাড়ি হিশামের কাছে গিয়ে বললো-
"দেখ আমাদের বাড়িতে কি কান্ড ঘটেছে। খু*নি পরিবারের সবাই এসে একজোট হয়েছে।আর তাদেরকে মদদ দিচ্ছে তোর বউ।"
হিশাম তার মায়ের কথা বুঝলো না, খুব বিরক্ত হলো। মঞ্জুরা বেগমকে পাত্তা না দিয়ে শাহাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
"এই যে আমার ভাই। ও যে কাউকে কিডনাপ করে নি তার প্রমান নিজেই দিবে।"
শাহাদ হাসিবের সামনে দাঁড়ালো। শীতল স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসিবকে ভালো করে দেখলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাসিবের তিন বন্ধুর দিকে তাকালো। হাসিবের দিকে তর্জনি উঁচিয়ে তা নাড়িয়ে ইশারায় তিনজনের কাছে জানতে চাইলো এই-ই কিনা? তিনজনই নীরবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। শাহাদ ফিরে তাকালো হাসিবের দিকে। প্রশ্ন করলো-
"আমার স্ত্রীকে কিডন্যাপ করার কারন কি?"
হিশাম ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো-
"স্ত্রী মানে?"
হাসিব মাথা নত করে আছে। সে এখানে আসতে চায় নি। হিশাম যখন নিজে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লো তখন সে বারান্দা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিশামের ডাক অগ্রাহ্য করতে পারে নি। মাথা নীচু করে নেমে এসেছে। শাহাদের কথায় এইবার সে মাথা তুললো। শাহাদের চোখের দিকে তাকালো। শান্ত স্থির চোখে শাহাদ তাকিয়ে আছে। এমন শান্ত যেন মনে হচ্ছে গুনে গুনে চোখের পলক ফেলছে। হাসিব চোখ সরিয়ে নিলো। উত্তর দিলো-
"আমি কিডন্যাপ করি নি।"
"কিন্তু তোমার বন্ধুরা তো অন্য কথা বলছে। এই কিডন্যাপের পুরো প্ল্যানটা তুমি সাজিয়েছো সেই সাথে তাদেরকেও যুক্ত করেছো এই ঘটনায়। চারজন ছেলে মিলে একটা নির্দোষ মেয়েকে কিডন্যাপ করতে লজ্জা করেনি? চৌধুরী বংশের ছেলেদের এত অধপতন কেন?"
একে তো প্ল্যান সাকসেসফুল হয় নি তার উপর শাহাদ বাড়িতে এসে অপমান করছে। হাসিবের গায়ে লাগলো খুব। মুখ তুলে শাহাদের দিকে তাকিয়ে জেদ দেখিয়ে কন্ঠ গরম করে বলল-
"বলেছি তো আমি কিডন্যাপ করি নি।আপনার স্ত্রী নিজেই হয়তো ছেলেদের সাথে কোথাও চলে গিয়েছিলো। সেটা ঢাকতে কিডন্যাপের নাটক....... "
হাসিব কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই শাহাদ এক হাতে হাসিবের কলার ধরে টেনে এনে আরেক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ঘুষি মা*রতে উদ্যত হলো। কিন্তু সাথে সাথেই থেমে গেলো। একটু দূরে দাঁড়ানো কুহুর দিকে তাকালো তারপর তাকালো হাসিবের দিকে। হাসিবের বয়স সবে ২০ হবে বোধ হয়। বয়সে ছোট একটা ছেলের গায়ে হাত তুলতে বাঁধ সাধলো শাহাদের। তাছাড়া নিজের স্ত্রীসহ অন্যান্য মহিলাদের উপস্থিতিতে সে কোনোরুপ দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না।সে হাত নামিয়ে নিবে এমন সময় হিশাম আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে শাহাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। শাহাদ ছিটকে সরে গেল হাসিবের কাছ থেকে। সাথে সাথেই হিশাম প্রবল বেগে শাহাদকে ঘুষি মা*রলো। শাহাদ আঘাত পেয়ে কাত হয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে গেলো।
কুহু চিৎকার দিয়ে মুখে হাত চেপে ধরলো, ছুটে যেতে চাইলো শাহাদের কাছে। কিন্তু তৃপ্তি শক্ত করে ধরে ফেললো কুহুকে। দুটো গার্ড দৌড়ে এসে শাহাদ আর হিশামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলো হিশামকে আটকাতে। বাকি গার্ডগুলো পজিশন নিয়ে কোমড় থেকে রিভ*লবার বের করে তাক করলো হিশামের দিকে।তমাল ছুটে এসে শাহাদকে ধরলো। শাহাদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে ঠোঁট ঘষে দেখলো আঙুলে র*ক্ত লেগে আছে, অর্থাৎ ঠোঁট কেটে গেছে৷ শাহাদ হাত উঁচিয়ে সবাইকে ব*ন্দুক নামিয়ে নিতে ইশারা করলো। শাহাদের ইশারা পেয়ে গার্ড দুটোও সরে গেলো। শাহাদ হাতের উলটো পিঠ দিয়ে ঠোঁটের র*ক্ত মুছতে মুছতে হিশামকে বললো-
"ভার্সিটিতে পড়াকালীন তুমি আমার সিনিয়র ছিলে। দুজন দুইদলে রাজনীতি করলেও তোমার ন্যায় নীতি নিয়ে আমরা বিরোধী দলীয়রাও প্রশংসা করতাম। তুমি আমার মতো অনেক জুনিয়রের আইডল ছিলে। তোমার সাথে একটা মিটিং -মিছিলে থাকার জন্য ছাত্ররা ক্লাস মিস দিত। সেই তুমি, কোথায় ছুড়ে ফেললে তোমার ন্যায় নীতি? কোথায় গেলো সেই নীতিবান হিশাম চৌধুরী?"
হিশাম মুখ শক্ত করে অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেই হাতে শাহাদকে আঘাত করেছে তা এখনো মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা। শাহাদের কথাগুলো তার কানে ছুড়ির মতো আঘাত করছে। মঞ্জুরা বেগম চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। হিশামের হাতে শাহাদকে মা*র খেতে দেখে তার গায়ের জ্বালা মিটেছে। অনেক খুশি হয়েছেন তিনি। তিনি এসে হাসিবকে ধরে কাঁধে হাত বুলিয়ে শাহাদকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
"আর তোর নীতি কোথায়? এরকম বাচ্চা একটা ছেলেকে মা*রতে গিয়েছিলি কোন নীতিতে?"
হিশাম কড়া গলায় বললো-
"মা থামো।"
তারপর হাসিবের দিকে তাকিয়ে বলল-
"কি করেছিস তুই? সব বল আমাকে?"
হাসিব ঘাবড়ে গেলো। শুকনো ঢোক গিললো। তার করা একটা ভুলের কারনে যে এত বড় কান্ড ঘটে যাবে সে স্বপ্নেও ভাবে নি। আর কোনো উপায় না দেখে সোজা হিশামের পা ধরে বসে পড়লো।ধরা গলায় বলল-
"আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাইয়া।আমি জোঁকের বশে ভুল করে ফেলেছি।"
হিশাম সব শুনলো। প্রত্যেকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা একে একে জোড়া লাগলো। শাহাদকে শিক্ষা দিতে হাসিব তার বন্ধুদের নিয়ে কুহুকে কিডন্যাপ করতে গিয়েছিলো।সেখানে কুহু ভুল করে গাড়িতে উঠে নিজে নিজেই কিডন্যাপ হয়ে গিয়েছিলো।তারপর ওদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে এই বাড়িতে এসেই আশ্রয় নিয়েছে। হাসিব ঘাড় ঘুরিয়ে তৃপ্তির সাথে ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে থাকা কুহুর দিকে তাকালো। মেয়েটা কান্না করছে,ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে দেখছে সব।
সব শুনে মঞ্জুরা বেগম আহত কন্ঠে বললেন-
" কি বলছিস এসব বাবা? ওই খু*নিটাকে ভয় পেয়ে এসব বলছিস?আমার দুধের ছেলেটাকে ভয় দেখিয়ে......."
মঞ্জুরা বেগমের কথা শেষ হওয়ার আগেই হিশাম হেচকা টান দিয়ে হাসিবকে বসা থেকে দাঁড় করালো।হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো কুহুর সামনে।কুহুর দিকে তাকিয়ে কন্ঠস্বর নরম করে অপরাধী হয়ে বললো-
" আজকের এই অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য আমি তোমার কাছে লজ্জিত বোন।আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।বড় ভাই হিসেবে আমাকে ক্ষমা করে দাও।"
কুহু বিচলিত হলো। একটু আগে যেই লোক তার স্বামীকে আ*ঘাত করেছে সেই লোকই আবার তাকে বোন ডেকে ক্ষমা চাইছে। সব কিছুই তার কাছে এলোমেলো লাগছে। হিশাম হাসিবকে বললো-
"ওর পা ধরে ক্ষমা চা।সাথে তোর বন্ধুদেরকেও ক্ষমা চাইতে বল।"
"ভাইয়া,প্লিজ আমি ....."
"চুপ।একদম চুপ।"
হিশামের প্রকান্ড ধমকে হাসিবসহ উপস্থিত সবাই কেঁপে উঠলো। হাসিবের বাকি বন্ধুরা নিজে থেকেই এগিয়ে এসে হাসিবের পাশে দাঁড়ালো। তিনজনই কুহুর দিকে অপরাধী চোখে তাকালো একবার। এখানে এসে কুহুকে দেখে তিনজনই বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিলো। কুহু যে পালিয়ে এখানে চলে এসেছে তা কখনো তারা ভাবে নি।
হিশাম আদেশের সুরে বললো-
"ওর পা ধরে ক্ষমা চাও সবাই।"
হাসিব ছাড়া বাকি তিনজন ভয়ে কুহুর পা ধরতে উদ্যত হলো।কুহু সরে গিয়ে বললো-
"না না।এসব লাগবে না।"
শিহাব হাহাকার করে বলল-
"আপু,দোহাই লাগে পা দুটো দিন।নয়তো আমাদের পাগুলো কাটা যাবে।"
শাহাদ কুহুর কাছে এসে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো-
"তোমাদের সবার গার্ডিয়ান ডাকিয়ে তোমাদের কৃতকর্মের কথা জানানো হবে। এরপরেও যদি না শোধরাও তখন রি*ভলবারের গু*লিগুলো মাটিতে না লেগে তোমাদের শরীরে লাগবে।"
তিনজনই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো, ভয়ে তাদের প্যান্ট ভিজে যাওয়ার অবস্থা। শাহাদ একবার হাসিবের দিকে তাকালো।হাসিব নিচের দিকে তাকিয়ে মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝাই যাচ্ছে সে তার ব্যর্থতা মেনে নিতে পারছে না। শাহাদ চোখ সরিয়ে তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো-
"আমার স্ত্রীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কোনোদিন যদি আমাকে প্রয়োজন হয় তবে যোগাযোগ করবেন।"
হিশামের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে কুহুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো শাহাদ। হিশাম অন্যদিকে মুখ করে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর বড় বড় পা ফেলে সিড়ি বেয়ে ঘরে চলে গেলো। মঞ্জুরা বেগম হায় হুতাশ করে এগিয়ে এসে তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলল-
" তোমার জন্য সব হয়েছে। তুমি ওই মেয়েকে আশ্রয় না দিলে এটা হতো না। দুই ভাইএর মাঝে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিয়ে নিশ্চয়ই খুশি হয়েছো তুমি!!সর্বনাশা মেয়ে!"
তৃপ্তি ঘৃণাপূর্ণ দৃষ্টিতে শ্বাশুড়ির দিকে তাকালো। মানুষের মনে যে এত বিদ্বেষ থাকতে পারে এই মহিলাই তার প্রমান।তৃপ্তি শ্বাশুড়িকে উপেক্ষা করে সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগলো।এই মুহুর্তে হিশামের সাথে থাকাটা জরুরি। মঞ্জুরা বেগম আরো তেতে উঠলেন। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন তৃপ্তির যাওয়ার দিকে।দৃষ্টি সরিয়ে হাসিবের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বললেন-
"বাবা আমার, আমি জানি তোর দোষ নেই।ওই খু*নি আর ওর বউ মিলে সব করেছে।"
হাসিব মায়ের কথায় সাড়া দিলো না।চোখ মুখ শক্ত করে মুখ ফিরিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো।ছেলের এহেন কাজে মঞ্জুরা বেগম কষ্ট পেলেন। মুখে আঁচল চেপে কান্না কান্না ভাব নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চললেন।যাওয়ার সময় আড়াল থেকে তাকিয়ে থাকা কাজের লোকদের উদ্দেশ্য করে কিছু চেচামেচি করলেন,ধমকালেন।
এতকিছুর মাঝে রাফি, লিমন আর শিহাব দর্শকের ভূমিকা পালন করলো। খালি ড্রয়িং রুমে তিনজনই আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
-----------
আনিশা কান থেকে ফোন নামিয়ে বড় করে শ্বাস ফেললো।পাশে বসে থাকা রাহাত আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
"কি বললো ওরা?পেয়েছে কুহুকে?"
আনিশা রাহাতের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো অর্থাৎ কুহুকে পাওয়া গেছে। রাহাত মৃদু হেসে আনিশার গালের পানি মুছে দিয়ে বলল-
"দেখেছো বলেছিলাম না পেয়ে যাবে।"
সামনের সোফায় বসা সাহারা বেগম বললেন-
" তোরা এবার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়। এত দুশ্চিন্তার পর আনিশাকে অনেক ক্লান্ত লাগছে।"
রাহাত আনিশাকে বললো-
"তুমি ঘরে যাও আমি আসছি।"
আনিশা ঘরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো। দুপা যেতেই ওর মাথাটা ঘুরে গেলো। মাথায় হাত দিয়ে পড়ে যেতে নিলেই রাহাত উঠে দাঁড়িয়ে ধরে ফেললো আনিশাকে।রাহাতের বুকে আনিশা জ্ঞান হারালো। রাহাত অস্থির হয়ে আনিশাকে ঝাঁকাতে লাগলো। সাহারা বেগম অস্থির হয়ে ছুটে আসলেন আনিশার দিকে।
চলবে
No comments