গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ৩২
#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৩২
শাহাদ একমনে গাড়ি চালাচ্ছে পাশে চুপচাপ বসে আছে কুহু। মাঝে মাঝে আড়চোখে শাহাদকে দেখছে। শাহাদ সেই যে চৌধুরী বাড়ি থেকে বের হয়ে মুখে কুলুপ এটেছে এখন পর্যন্ত একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। কুহু যে কথা বলতে চায় নি তা না।কিন্তু যতবারই কথা বলতে গেছে ততবারই শাহাদের মুখভঙ্গি দেখে বলতে সাহস পায় নি। এরকম শান্ত শিষ্ট রোবটের মতো বসে থাকলে কথা বলা যায়?এর চেয়ে কুহুর উপর একটু রাগ দেখাক,একটু বকাবকি করুক।তবেই না একটু মন খুলে কথা বলা যায়। কুহু একটা লম্বা শ্বাস ফেললো।হাত কচলে মনে মনে কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হলো। হালকা গলা ঝেড়ে নরম কন্ঠে বললো-
" লং ড্রাইভে যাওয়ার কথা ছিলো অথচ কিছুই হলো না। কোথা থেকে কয়েকটা ছেলে এসে বাগড়া দিয়ে দিলো।"
কথা শেষ করে উত্তরের আশায় শাহাদের দিকে তাকালো। শাহাদ টু শব্দও করলো না,তার মুখভঙ্গিও বদলালো না। আগের মতোই স্থির হয়ে বসে গাড়ি চালাচ্ছে। কুহু আশাহত হলো তবে থেমে গেলো না।ইনিয়ে বিনিয়ে বললো-
"বাড়িতে সবাই হয়তো খুব চিন্তা করছে। মা বাবা জেনে গেছে কিনা কে জানে?"
এবারেও শাহাদ কোনো শব্দ করলো না,কুহুর দিকে তাকালো না পর্যন্ত। কুহুর চোখেমুখে অভিমান এসে ভর করলো। অভিমানে চোখে পানি চলে এলো। চোখের পানি শাহাদকে দেখাবে না বলে মুখ ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। এত বড় ঘটনা ঘটলো, কত বড় বিপদ গেলো এখন কি দুটো ভালো কথা বলা যায় না? থম মেরে বসে থাকার মানে কি?এখানে কি কুহুর দোষ ছিলো? কুহুর ঠোঁট ভেঙে আসতে চাচ্ছে।চোখের কোনা কানায় কানায় পূর্ন। দুটো পলক পড়তেও এক দু ফোটা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। কুহু অতি সাবধানে সেই চোখের পানি তৎক্ষনাৎ মুছে নিলো।
কুহুর নাক টানার শব্দ শাহাদ একবার শুনতে পেয়েছে। গাড়ি চালানোর ফাঁকে আড়চোখে একবার দেখেছে তার "অঘটনঘটনপটিয়সী" স্ত্রীকে। কিন্তু কিছু বলে নি। এখন আর কিছু বলতে চায় না,ঠিকঠাকভাবে কুহুকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চায়। এমন এমন সব কান্ড ঘটছে যে শাহাদ এখনো ভয়ে আছে। বাড়ি যাওয়ার পথে মাঝরাস্তায় কিছু হলেও সে অবাক হবে না। তাই সে যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি পৌছাতে চায়।এরপর কুহুর বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ। পারলে কুহুর জন্য ২৪ ঘন্টা বড়িগার্ডের ব্যবস্থা করবে।
খান বাড়ির পরিবেশ থমথমে। মহিলারা সবাই একজন আরেকজনকে ধরে বসে আছে।বাড়ির পুরুষরা সদর দরজার কাছে পায়চারি করছে। শাহাদ কখন কুহুকে নিয়ে ফিরবে তার অপেক্ষা করছে সবাই। কুহুর মা শিরিনা বেগম এখনো কাঁদছেন। তাকে ধরে বসে আছে রেজিয়া সুলতানা। পাশেই জয়া বেগম। তার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে রিদি। রাফা অন্য এক সোফায় কুলসুমা বেগমের কাধে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। কান্না করার কারনে জ্বলছে তার চোখ।তার পাশে বসে ওড়না মুখে চেপে কান্নাভেজা চোখে তাকিয়ে আছে মালা।কুলসুমা বেগম মলিন মুখে বসে আছেন। তার হাতে তসবি। তিনি হালকা ঠোঁট নেড়ে জিকির করছেন।আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানাচ্ছেন। কুহু কিডন্যাপ হওয়ার খবর শুনেই তিনি জায়নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন আল্লাহর সাহায্য চাইতে। কুহুকে পাওয়া গেছে খবর পেয়েই তারপর জায়নামাজ থেকে উঠেছেন।
বাড়ির পুরুষরা সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে, কেউ কেউ পায়চারি করছে। দরজা খুলে রাখা হয়েছে।সবার দৃষ্টি গেটের দিকে। মোয়াজ্জেম হোসেন চাতক পাখির মতো গেটের দিকে তাকিয়ে আছেন। মেয়ের জন্য বুকটা হু হু করছে। একটা মাত্র আদরের মেয়ে সেই মেয়ে কিনা এত বড় বিপদে পড়লো!!বাবা হয়ে সেই মেয়েকে উদ্ধার যে করবেন তার ক্ষমতাটুকুও তার নেই৷ আশফাক খান অপরাধী দৃষ্টিতে মোয়াজ্জেম সাহেবের দিকে তাকালেন। পায়চারী থামিয়ে বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে বললেন-
"আয়, একটু বস।চিন্তা করিস না।ওরা চলে আসবে।"
মোয়াজ্জেম হোসেন দুদিকে মাথা নেড়ে বললেন-
"না, ওরা না আসা অব্দি আমি বসতে পারব না। মেয়েটা কি অবস্থায় আছে আল্লাহ জানে।'
আশফাক খানের অপরাধবোধ আরো বেড়ে গেলো। সাধারন পরিবারের একটা মেয়ে তার পরিবারে এসে এই বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। নির্দোষ মেয়েটি যে খান পরিবারের কারনেই এই বিপদে পড়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আব্দুল গাফফার খান মোয়াজ্জেম সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
" তুমি আমার ছেলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু।তাই বন্ধুত্ব দৃড় করতেই তোমার মেয়ের সাথে এই বাড়ির ছেলের বিয়ে দিয়েছে সে। আজকের এই ঘটনার জন্য এই বাড়ির একজন হয়ে আমি তোমার কাছে মাফ চাই বাবা। যাই ঘটুক না কেন তোমার মেয়ের বিন্দু মাত্র সম্মান কমবে না এই বাড়িতে।"
মোয়াজ্জেম সাহেব আব্দুল গাফফারের হাত ধরে কেঁদে দিলেন। আশফাক খান প্রিয় বন্ধুর কাঁধ পেচিয়ে ধরে ভরসা দিলো। সদর দরজার বাইরে থেকে বাবাকে কাঁদতে দেখে যিয়াদের চোখেও পানি চলে এলো। শার্টের হাত দিয়ে পানি মুছে দৃষ্টি দিলো গেটের দিকে। বোনের আসার অপেক্ষা করছে সে। এক-দু ঘন্টা আগেও এরকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তা চিন্তাতেও আসে নি।রাতের খাবার শেষ করে পড়ায় মশগুল ছিলো সে।তখনি নিচ থেকে তার মায়ের আর্তনাদ ভেসে আসলো। কুহুর নাম ধরে চিৎকার করছেন তিনি।পরপর ভেসে আসলো বাবার উত্তেজিত কন্ঠ।যিয়াদ তৎক্ষনাৎ দৌড়ে নিচে এসে দেখলো শিরিনা বেগম সোফায় বসে কাঁদছেন তাকে ধরে রেখেছে জয়া বেগম।আর তার বাবা উত্তেজিত হয়ে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছেন কিন্তু তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে শাহাদের চাচা এমদাদ খান।আস্তে আস্তে যিয়াদের সবটাই বোধগম্য হলো।কুহু কিডন্যাপ হয়েছে। আর তার খবর নিয়েই এসেছেন এমদাদ খান আর জয়া বেগম,সাথে এসেছে একগাদা গার্ড।
গাড়িতে বসে লুকিয়ে যিয়াদ অনেক কেঁদেছে। ক্রাইম শো গুলোতে এরকম কিডন্যাপিং কেস অনেক দেখেছে। ম্যাক্সিমাম কেসগুলোতেই শেষ পরিনতি হয় মৃত্যু।প্রিয় বোনের ক্ষেত্রে এমন কিছু ভেবে তার বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিলো। খান বাড়িতে এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বাবার সাথে সেও যাবে কুহুকে খুজতে। তখন তাদেরকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আটকে দেয়া হলো।এর পরেই কুহুকে পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যিয়াদের সমস্ত রাগ পড়েছে এই খান বাড়ির উপর।তার বোন তো কারো ক্ষতি করেনি তাকে কেন কেউ কিডন্যাপ করবে। বরং খান বাড়ির বউ হওয়ার জন্যই তার বোনকে আজ এই বিভীষিকাময় অবস্থার সম্মুখীন হতে হলো।
বেশ কিছুক্ষন পর খান বাড়ির বিশাল গেট দিয়ে কয়েকটা গাড়ি প্রবেশ করলো। সবাই সচেতন হলো গাড়ির শব্দে।পুরুষরা সবাই ছুটে বাইরে এলেন। মহিলারাও চলে আসলো তাদের পিছু পিছু। গাড়ি গুলো থেকে গার্ড বের হয়ে পজিশন নিয়ে দাঁড়ালো। দুটো গার্ড গিয়ে শাহাদ এর গাড়ির দরজা খুলে দিলো।শাহাদ বের হয়ে কুহুর দিকের দরজাটা খুলে কুহুকে ধরে বের করলো। বের হওয়ার সময় কুহু অভিমানী দৃষ্টিতে শাহাদের দিকে তাকালো। চোখাচোখি হলো শাহাদের শান্ত চোখের সাথে। শাহাদ কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে কুহুকে ধরে সদর দরজার দিকে আগালো। সবার দিকে তাকিয়ে কুহু নিজের বাবা মাকে দেখে চিন্তায় পড়লো।তার মানে তার বাবা মা জেনে গেছে।নিশ্চয়ই খুব চিন্তা করেছে। মাকে কান্নারত অবস্থায় দেখে কুহু "মা" বলে ডেকে উঠলো।শিরিনা বেগম হাউমাউ করে কেঁদে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।
ড্রয়িং রুমে কুহুকে ঘিরে বসে আছে বাড়ির মহিলারা। বাড়ির পুরুষরা একটু দূরে বসে আলোচনায় ব্যস্ত।শাহাদও রয়েছে সেখানে।ঘটনার আদি থেকে অন্ত সব কিছু বর্ননা করছে সে। আশফাক খান রাগে গর্জে উঠলেন-
"এর পিছনে অবশ্যই হিশামের হাত আছে। নয়ত অল্প বয়সী একটা ছেলের একা এত বড় কাজ করার সাহস হবে না। হিশাম এর উপযুক্ত শাস্তি পাবে।"
শাহাদ মাথা নেড়ে বললো-
"না বাবা,হিশাম ভাই এর এখানে হাত নেই। হাসিব ছেলেটার বয়স অল্প। কোনো কিছু চিন্তা না করেই আবেগের বশে এই কাজ করেছে। হিশাম ভাই কখনো নারীদের অসম্মান করবে না।"
হিশামের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় শাহাদের উপর বিরক্ত হলেন আশফাক খান। ছেলেকে থামিয়ে দিয়ে বললেন-
"সে যাই হোক।খান বাড়ির বউ কে অসম্মান করার শাস্তি পেতে হবে ওদেরকে। ব্যাপারটা ছড়িয়ে যাবে তাই আমি থানা পুলিশ করলাম না।কিন্তু আমি কোনোমতেই ছেড়ে দিব না।"
শাহাদ আর কথা বাড়াতে চাইলো না। অনুমতি নিয়ে উঠে পড়লো আলোচনা ছেড়ে। সিড়ি দিয়ে উঠে ঘরে যাওয়ার আগে আড়চোখে একবার মহিলাদের মাঝখানে বসা কুহুকে দেখলো। কুহুর মুখ থেকে ভয়ের ছাপ দূর হয়েছে। মা বাবাকে কাছে পেয়ে এখন বেশ আনন্দেই আছে সে।
কুহুর এক পাশে বসেছে শিরিনা বেগম আরেক পাশে রেজিয়া সুলতানা। যিয়াদ বসেছে কাছাকাছি আরেকটা সোফায়।সবাই কুহুকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। শিরিনা বেগম মেয়ের কোনো ক্ষতি হলো কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হলেন। সবার সাথে কথা শেষ করে কুহু তার মা কে নিয়ে ঘরে এলো। ঘরে এসে শাহাদকে খুজলো। স্টাডিরুমের দরজা হালকা ফাঁক হয়ে আছে দেখে বুঝতে পারলো শাহাদ এখন স্টাডি রুমে। শিরিনা বেগম বললেন-
"যা হাত মুখ টা ধুয়ে আয়। এভাবে ঘুমাতে পারবি না।"
কুহু হতাশ কন্ঠে বললো-
"শুধু হাত মুখ ধুয়ে আসলে হবে না মা,গোসলই করতে হবে।দেখো কি কাদা লেগেছে পায়ে।"
"অসময়ে গোসল করলে জ্বর আসবে তো।"
"আসবে না৷ তুমি বসো।আমি চট করে গোসল করে আসি।"
কুহু জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। যতক্ষন কুহু গোসল করলো শিরিনা বেগম ওয়াশরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন। মাঝে মাঝে কোনো সাড়া শব্দ না পেলেই চিন্তিত হয়ে কুহুকে ডাকলেন।কুহু বিরক্ত হয়ে তাকে বিছানায় বসতে বললেও তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। সদ্য বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া মেয়েকে একা একা ছেড়ে দিবেন কি করে? কুহু বের হয়ে আসলে তাকে বিছানায় বসিয়ে আদর করে চুল মুছিয়ে দিলেন। অনেক দিন পর মায়ের আদর পেয়ে কুহু গলে গেলো। মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো-
"তোমাদের খুব মিস করি মা।"
শিরিনা বেগমের বুকের ভেতরটা মেয়ের জন্য কেঁপে উঠলো।শ্বাস ছেড়ে কুহুর চুল মুছিয়ে দিয়ে বললেন-
"সংসার করতে এসে এসব বললে চলবে না।স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ির সবার মন জুগিয়ে চলতে হবে।বুঝেছো?"
কুহু মাথা নেড়ে সায় জানালো। শিরিনা বেগম কুহুকে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে বলে চলে গেলেন। কুহু নিশব্দে স্টাডি রুমের দরজা খুলে ভিতরে উঁকি দিলো।বিশাল টেবিলের অপর প্রান্তে ফোমের চেয়ারে গা ডুবিয়ে বসে আছে শাহাদ। চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।কুহু দেখলো তার পড়নে টি শার্ট ট্রাউজার। নিশ্চয়ই আগে ভাগেই গোসল সেরে নিয়েছে।কুহুর একবার ডাক দিতে ইচ্ছে হলো শাহাদকে কিন্তু দিলো না। শাহাদের করা আচরনে এখনো তার মনে অভিমান জমে আছে। তাই ডাক না দিয়েই মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে নিলেই শাহাদ বলে উঠলো-
"উঁকি মেরে আবার চলে যাচ্ছো কেন?"
কুহু চমকে ফিরে তাকালো। দেখলো শাহাদ চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। ইশারা দিয়ে কুহুকে ডাকলো। কুহু "যাবে না যাবে না" করেও অভিমানী মুখ করে পায়ে পায়ে এগিয়ে চললো শাহাদের দিকে। হাতের আঙুলে ওড়না পেচিয়ে অন্য দিকে মুখ করে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো।শাহাদ বললো-
"আরেকটু কাছে আসো।"
কুহু চোখেমুখে অনীহা ফুটিয়ে আরেকটু কাছাকাছি গেলো।এইবার শাহাদ সোজা হয়ে বসে হ্যাচকা টান দিয়ে কুহুকে নিজের কাছে টেনে নিলো। নিজের কোলে বসালো। কুহু চমকে গিয়ে শাহাদের গলা জড়িয়ে ধরলো। শাহাদ কুহুর অর্ধ ভেজা চুলে আঙুল ছুইয়ে বললো -
"গোসল করেছো?"
"হ্যা।"
"হুম।গুড।"
শাহাদ বসা থেকে কুহুকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো৷ পা বাড়ালো বেডরুমের দিকে। কুহুকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে লাইট নিভিয়ে দিলো।তারপর কুহুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।কুহু শাহাদের বুকে নাক ঘষে বললো-
"আমার উপর রাগ করেছেন?"
" না।ভয় পেয়েছিলাম খুব।আতংকগ্রস্ত ছিলাম। এমন বোকা মেয়ে বিয়ে করেছি তা কি আর জানতাম!"
"আর আমিও যে এমন ধীর গতির মানুষকে বিয়ে করেছি তা কি আর জানতাম! খুঁজে বের করতেই কত সময় লাগিয়ে দিলো।"
শাহাদ চোখ খুলে কুহুর দিকে তাকালো। মৃদু হেসে কুহুর গাল টেনে বললো-
" যে মেয়ে নিজে থেকে কিডন্যাপারদের গাড়িতে গিয়ে চড়ে বসে তার সাথে কথা বলে পারব না। সাংঘাতিক মেয়ে তুমি!!"
কুহু ঠোঁট ফুলিয়ে তাকালো শাহাদের দিকে। শাহাদ গভীর চুম্বন করলো কুহুর কপালে। কুহু জড়ানো কন্ঠে বললো-
"ঘুমাবেন না?"
"আর দু এক ঘন্টা পরেই ভোর হবে। এই সময়টা তোমাকে ঘুমাতে দিব না।"
কুহু দুদিকে প্রবল মাথা নেড়ে নিশব্দে "না" বুঝালো।শাহাদ তা কেয়ার করলো না। দুষ্টু হেসে কুহুকে জাগিয়ে রাখার কার্যক্রম শুরু করে দিলো।"
---------------
তৃপ্তি চিন্তিত মুখে বিছানায় বসে আছে। বিছানার উপর রিশাম ঘুমুচ্ছে। এত গন্ডগোলেও যে ছেলেটির ঘুম ভাংগে নি এটাই আশ্চর্যের বিষয়।ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বারান্দার দিকে তাকালো। সেখানে ইজি চেয়ারে হিশাম চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে বসে আছে। তৃপ্তি কয়েকবার ডেকেছে প্রতিবারই হিশাম ঘরে আসতে নাকচ করেছে। ভোর হতে আর দেরি নেই। এখনো যদি ঘরে এসে একটু বিশ্রাম না নেয় তবে অসুস্থ হতে পারে হিশাম।তৃপ্তি তাই বারান্দার দরজায় দাঁড়িয়ে বললো-
"ঘরে এসে ঘুমাও।নয়ত শরীর খারাপ হবে।"
হিশাম চোখ খুলে তাকালো। নির্ঘুম থাকার কারনেই কিনা চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। হিশাম চেয়ার থেকে উঠে রেলিঙের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি দিলো বাইরে রাতের আকাশের দিকে।তৃপ্তি পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রেখে বলল-
"আমি জানি তোমার ভেতর কি চলছে।কিন্তু যা হয়েছে তা আর বদলাবে না, তাই ভুলে যাও।"
"আমার ভাই হয়ে হাসিব একটা নির্দোষ মেয়ের উপর কিভাবে অন্যায় করতে পারলো? ওর কি বিবেক বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে?"
"অন্যায় তো তুমিও করেছো।শাহাদকে বিনা দোষে চড় মেরে অন্যায় করো নি?"
হিশাম অপরাধী দৃষ্টিতে তৃপ্তির দিকে তাকালো।স্বীকার করতে চাইলো যে সে অন্যায় করেছে।কিন্তু পরক্ষনেই চোখের দৃষ্টি কঠিন হয়ে গেলো। গম্ভীর কন্ঠে বললো-
"শাহাদ আমার বাবার খু*নি। ও নির্দোষ না। আমি যা করেছি ঠিক করেছি।"
তৃপ্তি হতাশ কন্ঠে বললো-
"আর কতদিন বিদ্দ্বেশ পুশে রাখবে মনে।দেখলে তো তোমাদের প্রতিশোধপরায়নতার জন্য হাসিব কত বড় অন্যায় করেছে। তুমি এমন করলে ও তো আরো বেপরোয়া হবে।এসব শিখবে তোমার কাছ থেকে।"
হিশাম অন্য দিকে তাকিয়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো।তার মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব সব মিলিমিশে একাকার। আজকের ঘটনা অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। তৃপ্তি নরম কন্ঠে বললো-
"প্লিজ এসব থেকে ফিরে এসো। আমাদের ছেলেটার কথা একবার ভাবো। ও এসবের মাঝে বড় হলে হিংসা-বিদ্বেষ শিখে বড় হবে। মানুষের প্রতি কোনো সম্মান........"
তৃপ্তির কথা শেষ হওয়ার আগেই হিশাম ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকে রিশামের পাশে শুয়ে পড়লো।আলতো করে জড়িয়ে ধরলো রিশামকে। হিশামের ব্যবহারে তৃপ্তি হতাশ হলো না। সে জানে হিশামের নরম মন এখন প্রতিশোধের নেশায় ঢেকে আছে,এই নেশা কাটাতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
চলবে
No comments