গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ১৭

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত 

#আয়ান_মাহমুদ 

|১৭|


আজ ছিল তুর্যের জন্মদিন, কিন্তু ক্যাম্পাসের অন্যান্য দিনগুলোর মতোই সে আজ কোনো উত্সাহ কিংবা দোলাচলে ছিল না। তন্নী জানত, তুর্য সবসময়ই সাদাসিধে জীবন কাটাতে পছন্দ করে, তার কোনো বড় ধরণের উদযাপন বা পার্টি নিয়ে আগ্রহ নেই। তবে, তার জন্য আজ কিছু বিশেষ করা ছিল—যে বিশেষ মুহূর্তটায় তন্নী তার অনুভূতি প্রকাশ করতে চায়।


তন্নী আজ বিশেষভাবে তুর্যের জন্য একটি উপহার নিয়ে এসেছিল। এটি ছিল একটি ছোট্ট কাঠের বাক্স, যার মধ্যে ছিল একটি হাতের তৈরি প্রাচীন মুদ্রা এবং কিছু অদেখা ছোট স্মৃতিচিহ্ন। তন্নী জানত, তুর্যকে ভালোবাসার প্রকাশের জন্য অনেক কিছু বলা বা বড় উপহার দেয়ার চেয়ে কিছু ছোট্ট, মর্মস্পর্শী বিষয়ই বেশি প্রভাব ফেলবে। এটি তার অনুভূতির প্রতিফলন ছিল, যা সে বলতেও পারত না, কিন্তু এই ছোট্ট উপহারটি তুর্যকে বলবে কীভাবে সে তার কাছাকাছি চলে এসেছে।


তুর্য রুমে বসে ছিল, তার ডেস্কের পাশে একটি বই ছিল, চোখে একটু ক্লান্তি ছিল। তন্নী দরজা খুলে সোজা তার কাছে চলে এল। তার হাতে ছোট্ট বাক্সটি ছিল। তুর্য মাথা তুলতে গিয়ে হেসে বলল, "তন্নী, কি ব্যাপার? কোনো অজানা পরিকল্পনা শুরু করেছো?"


তন্নী স্রেফ মৃদু হাসল, "না, কিছু বড় নয়। তবে, এটা তোমার জন্য।"


তুর্য বাক্সটি নিয়ে খুলতে শুরু করল। প্রথমেই তার চোখে কোনো চিন্তা ছিল না, তবে যখন সে মুদ্রাটি দেখল, তার চোখে একটা আলাদা চমক দেখা দিল। তন্নী সেটা দেখল, কিন্তু কিছু বলল না। তার দৃষ্টি তুর্যের দিকে। তুর্য বাক্সটি হাতে নিয়ে কিছুটা নীরব হয়ে গেল। কিছু মুহূর্ত পর সে বলল, "তন্নী... এটা কি তুমি নিজে তৈরি করেছ?"


"হ্যাঁ," তন্নী কিছুটা অস্থির হয়ে বলল, "আমার কাছে এটা ছিল কিছু বিশেষ মনে রাখার মতো।"


তুর্য কিছু সময় নীরব থাকল, তারপর মৃদু কণ্ঠে বলল, "তন্নী, তুমি জানো না, এটাই সবচেয়ে মূল্যবান উপহার যা আমি কখনো পেয়েছি।"


তন্নী তুর্যের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল, বুঝতে পারছিল—এটা শুধু একটি উপহার ছিল না, এর মধ্যে অনেক কিছু লুকানো ছিল। তুর্য তার প্রতি গভীর অনুভূতি অনুভব করছিল, যা সে কখনো সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারেনি।


"তুর্য," তন্নী কণ্ঠটি কিছুটা নিচু করে বলল, "আমি জানি তুমি অনেক কিছু ভাবছো, তবে তুমি কখনো সেটা বাইরে বের করে বলো না। কিন্তু আমি জানি, তুমি কীভাবে সব কিছু অনুভব করো।"


তুর্য সেসময় উঠে দাঁড়িয়ে, তার হাতের বাক্সটি একপাশে রেখে তন্নীর দিকে এগিয়ে গেল। তার চোখে একটা গভীর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, এক ধরনের নিরবতা, যা আজ তাকে পেয়ে গেল। "তন্নী, আমি... আমি জানি আমি কখনোই যথেষ্ট ভালো ছিলাম না, তবে তুমি যে উপহারটি দিলে, তা আমি কখনো ভুলব না।"


তন্নী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "তুমি কখনোই ভুল কিছু করোনি, তুর্য। আমরা সবাই নিজের মতো করে চেষ্টা করি।"


তুর্য এক পা এগিয়ে এসে তন্নীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, "তুমিই তো আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।" তারপর তন্নীর চোখে চোখ রেখে বলে, "তন্নী, আজকের দিনটা, আমি তোমার কাছ থেকে যা পেয়েছি, সেটা অনেক বেশি।"


তন্নী তার চোখে এক মুহূর্তের জন্য কিছুটা আশ্চর্য দেখল, কিন্তু তারপর তার মুখে এক মৃদু হাসি ফুটল। "এটাই তো, তুর্য। ছোট, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"


তন্নী জানত, তুর্য কখনোই বড় উৎসবের মধ্যে রঙিনভাবে যেত না, তবে তার জন্য এই মুহূর্তই যথেষ্ট ছিল। একটি সাদামাটা, স্নেহপূর্ণ উপহার যা তার মাঝে গভীর অনুভূতি গড়ে তুলে।


এদিন তুর্য তন্নীর কাছ থেকে তার জীবনের সবচেয়ে নিঃস্বার্থ উপহার পেয়েছিল। তন্নী জানত, তার সামান্য উপহার শুধু একটা বস্তু নয়, বরং তাদের সম্পর্কের আরও একটি সূক্ষ্ম দিক উন্মোচন করতে সাহায্য করবে। তুর্য যখন তার চোখে ভালোবাসার দীপ্তি দেখল, তন্নী বুঝতে পারল, একে অপরকে বুঝে নিতে একটু সময় লাগবে, কিন্তু তারা একে অপরের পাশে থাকলে, তাদের সম্পর্ক একদিন সম্পূর্ণতা পাবে।


---

0 Comments:

Post a Comment