গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ৩৯

 #টক_ঝাল_মিষ্টি 

#তামান্না_আঁখি 

#পর্ব-৩৯


চোখের পলকে শাহাদ ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়লো নদীতে। তার পিছনে দৌড়ে আসা দলের ছেলেগুলো বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো। তারপর দৌড়ে গিয়ে রেলিং ধরে ঝুঁকে পড়ে নদীর দিকে তাকিয়ে রইলো শাহাদকে দেখার জন্য। শাহাদের সাদা পাঞ্জাবিটা শুধু এক ঝলকের জন্য দেখা গেলো এর পরেই নদীর ঘোলা পানিতে তলিয়ে গেলো। 


 পানিতে পড়ার পর কিছু সময় শাহাদ চোখে চারপাশ ঘোলা দেখলো।আস্তে আস্তে কিছুটা চোখ সয়ে গেলে দেখতে পেলো কালো সেডানটাকে।দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া সেডানটা আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছে।গাড়ির ভাঙা অংশগুলো দিয়ে পানি ঢুকছে।। শাহাদ পানি কেটে সেডানটার কাছে গেলো।গাড়ির দরজা খুলতে পারলো না। সময় নষ্ট না করে গাড়ির আধভাঙা জানালার কাচে ঘুষি মারলো। একের পর এক ঘুষি মারতেই থাকলো। পানির নিচের ঘুষি জোড়ালো হলো না তেমন।হাতের চামড়া ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসলো। সেডানটা আরো তলিয়ে যাচ্ছে ওদিকে শাহাদের দম ফুরিয়ে আসছে।অক্সিজেনের জন্য ফুসফুসটা হাসফাস করছে। শাহাদ সেডানটা ছেড়ে দিয়ে দ্রুত পানির উপর উঠে আসলো। পানি থেকে মুখ বের করে লম্বা করে শ্বাস টানলো। ব্রিজের উপর থাকা ছেলেগুলোকে লক্ষ্য করে বললো-

"এম্বুল্যান্স....., এম্বুল্যান্স খবর দে।"


তারপর আবারো ডুব দিলো পানিতে। দ্রুত পানিকেটে আবারো উপস্থিত হলো সেডানটার কাছে।ততক্ষনে সেডানটা নদীর তলদেশের মাটিতে গিয়ে ঠেকেছে। শাহাদ শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে একের পর এক ঘুষি দিলো জানালায়।গাড়ির কাচের ফাটল লক্ষ্য করে সে দু পা একসাথে করে কিক দিলো গাড়ির কাচে।গাড়ির কাচ ফেটে গেলো। ভাঙা কাচ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকতে লাগলো ভিতরে। আরে দু একটা লাথি দিতেই কাচ টা পুরোটা খুলে গেলো।ততক্ষণে পুরো সেডানটা পানি দিয়ে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।জানালায় হাত ঢুকের গাড়ির দরজা আনলক করে ড্রাইভিং সিটে বসা হিশামকে এক টানে গাড়ি থেকে বের করলো। এরপর তাকে ধরে টেনে নিয়ে চললো পানির উপরে।


শাহাদ যখন হিশামকে নিয়ে পানির উপরে ভাসলো তখন দলের ছেলেরাও পানিতে নেমে পড়েছে। শাহাদ আর হিশামকে দেখে তারা দুজনকে এসে ধরে নদীর পাড়ে নিয়ে গেলো।শাহাদ কতক্ষণ কাশলো। পানি বের হলো মুখ দিয়ে। বড় বড় দম ফেলে সে অস্থির হয়ে নদীর পাড়ে মাটিতে শুইয়ে রাখা হিশামের কাছে আসলো। হিশামের রক্তে মাটি লাল হয়ে গেছে। হিশামের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। সিটবেল্ট বাঁধা না থাকায় গাড়ির উইন্ডশিল্ডের সাথে আঘাত লেগে বড় এক কাচের টুকরো ঢুকে গেছে তার মাথায়। শাহাদের চোখে পানি এসে জমলো।রাগে দুক্ষে চিৎকার করে উঠলো।হিশামের কাঁধ ঝাকিয়ে চিৎকার করে বলল- 


"কেন করতে গেলে এমন? কেন? আমাকে কেন জানালে না?"


শাহাদ ক্রোধে গর্জন করতে করতে মাটিতে আঘাত করতে লাগলো। দলের ছেলেগুলো এসে তাকে ধরে থামালো।শাহাদ ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিলো।তারপর হিশামকে এক টান কাঁধে তুলে তার গাড়ি উদ্দেশ্য করে ছুটে চললো। শাহাদের পিঠের ভেজা পাঞ্জাবি বেয়ে হিশামের তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়লো। শাহাদক হিশামকে নিয়ে তার গাড়িতে রেখে এইবার ব্রিজের দিকে তাকালো। আশফাক খান আহত হয়েছেন।তার কপালে রুমাল চেপে ধরে আছে একজন গার্ড। শাহাদকে দেখে তিনি হাত বাড়ালেন। কিন্তু শাহাদ তার কাছে গেলো না। দলের কয়েকটা ছেলেটা তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে সে গাড়িতে চড়ে বসলো। গাড়ি ঘুরিয়ে দিলো হাসপাতালের দিকে।এম্বুল্যান্স এর জন্য অপেক্ষা করলে হিশাম বাঁচবে না।দলের বাকি ছেলেগুলো গাড়ি নিয়ে শাহাদের গাড়ির আগে আগে চললো রাস্তা ক্লিয়ার করার জন্য। যাতে রাস্তায় শাহাদ কোনো জ্যাম না পায়।


-------


মঞ্জুরা বেগম তসবিহ হাতে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছেন। তৃপ্তি রিশামকে খাওয়াচ্ছে।এমন সময় হাসিব  নেশাগ্রস্তদের মতো টলতে টলতে সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো। মঞ্জুরা বেগম অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো- 

"কি হয়েছে? হল থেকে চলে এসেছিস নাকি? তোর ভাই জানলে...."


মঞ্জুরা বেগমের কথা শেষ হওয়ার আগেই হাসিব হাঁটু ভেঙে মাটিতে পড়ে গেলো। তৃপ্তি অবাক হয়ে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলো- 

"কি হয়েছে হাসিব? তোমার ভাইয়া কি আবার তোমাকে কিছু বলেছে?'


হাসিব তার অশ্রুসিক্ত লাল চোখ নিয়ে তৃপ্তির দিকে তাকালো। এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে। নিষ্প্রাণ গলায় বলল- 

" ভাইয়া আর কখনো আমাকে কিছু বলবে না ভাবি।"


তৃপ্তির মনটা কেমন জানি করে উঠলো।শরীর যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো। মঞ্জুরা বেগমও সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। ছোট ছেলের কথায় বিভিন্ন কুচিন্তা এসেছে তার মনে। তৃপ্তি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো- 


"কেন বলবে না? তোমাদের কি মতের মিল হয়ে গেছে? তোমার ভাইয়া কোথায় এখন?"


হাসিব হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। দুহাত ফ্লোরে রেখে তার উপর মাথা দিয়ে কাঁদছে সে। তৃপ্তি দু পায়ে শক্তি পেলো না। সে ফ্লোরে বসে পড়লো।হাসিব কিছু না বললেও সে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। মঞ্জুরা বেগম তৃপ্তি আর হাসিবকে দেখে কম্পমান গলায় বললেন-

"তোমাদের কি হয়েছে? এমন করো কেন? আমার হিশাম কোথায়? আমার হিশামকে কেউ আসতে বলো। ও তৃপ্তি, হিশামকে কল দাও।"


মঞ্জুরা বেগম কাঁপতে কাঁপতে সদর দরজার দিকে দৌড় দিলেন। হাসিব মাটি থেকে উঠে উনাকে ধরে ফেললো। আহাজারি করে বললো-

"কোথায় যাচ্ছ মা? তোমার ছেলে যে আর আসবে না। তোমার ছেলেকে ওরা মে*রে ফেলেছে।"


মঞ্জুরা বেগম স্তব্ধ হয়ে তাকালেন হাসিবের দিকে। ঠান্ডা গলায় বললেন-

"কি বলছিস? আমার হিশামকে মে*রে ফেলেছে? আমার সাত রাজার ধনকে মে*রে ফেলেছে?"


মঞ্জুরা বেগম টলতে টলতে তৃপ্তির কাছে গিয়ে বসলেন। তৃপ্তির কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো-


" ও তৃপ্তি, শুনেছো কি বললো? আমার হিশামকে নাকি মে*রে ফেলেছে?"


তৃপ্তি মঞ্জুরা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন। তারপর মঞ্জুরা বেগমকে জড়িয়ে ধরে গলা ছেড়ে কাঁদতে লাগলো। মঞ্জুরা বেগম বিলাপ করে বললেন- 


"তোমরা কাঁদছো কেন? আমার হিশামের কিছু হয় নি? আমার হিশাম...আমার ছেলে।"


--------------


শাহাদ হাসপাতালের  করিডোরে একা একটা চেয়ারে বসে আছে। দুহাত হাঁটুতে ঠেকিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে শান্ত মুখে বসে আছে। তমাল দৌড়ে এসে শাহাদের কাছে দাঁড়ালো। সে নির্বাচন অফিসে ছিলো। শাহাদদের জন্য অপেক্ষা করছিলো সেখানে থেকে।এক্সিডেন্টের কথা শুনেই সে ছুটে এসেছে। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে প্রশ্ন করলো- 

"ভাই, এসব কিভাবে হলো?"


শাহাদ গম্ভীর অথচ শান্ত কন্ঠে বললো- 

"তমাল, আন্ডারওয়ার্ল্ড এর সব ইনফরমেশন নিয়ে আয়। আসিফকে ডাক।"


" ঠিক আছে ভাই।কিন্তু হিশাম চৌধুরী কিভাবে এসবে জড়ালো। স্যারকে ট্রাক চাপা দেয়ার অর্ডার কে দিলো?"


শাহাদ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ডান হাতে কাচ ঢুকে ক্ষতবিক্ষত হয় আছে। তমাল শাহাদের হাতের অবস্থা দেখে শিউরে উঠলো কিন্তু শাহাদকে কিছু বলতে সাহস পেলো না। কিছুক্ষন পর ভয়ে ভয়ে বললো- 

"ভাই, হিশাম চৌধুরী কি তাহলে......"


শাহাদ ক্রোধে গর্জন করে উঠলো-

"মনসুর আলীকে আমার চাই।ওকে ধরে নিয়ে আয়।"


তমাল সামনের দিকে তাকিয়ে বলল- 

"ভাই ধরে আনতে হবে না.ও নিজেই আসছে।'


শাহাদ বাম দিকে তাকিয়ে দেখলো মনসুর আলী দলবল নিয়ে আসছে এদিকে।তার এক পাশে নাইমুর।ওরা এসে শাহাদের কাছে দাঁড়ালো।শাহাদ উঠলো না।ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আগের মতো বসে রইলো।মনসুর আলী কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো- 


" দেখো বাবা আমাদের কত বড় সর্বনাশ হয়ে গেলো। যাকে ঘিরে আমরা দাঁড়িয়ে আছি সেই-ই কিনা এভাবে ভেঙে পড়লো। কে আমাদের এত বড় সর্বনাশ করলো!"


মনসুর আলী পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছলেন। দুঃখ নিয়ে শ্বাস ফেলে বললেন-


"শুনলাম ওখানে নাকি তোমার বাবাও ছিলো। ঘটনা ঠিক বুঝলাম না। ট্রাকটা শুধু হিশামকেই ধাক্কা দিলো কেন? বেচারার তো তুমি ছাড়া কোনো শত্রু নেই। তবে কি..."


শাহাদ উঠে দাঁড়ালো। মনসুর আলীর চোখে চোখ রেখে মনসুর আলীর দিকে এগিয়ে আসলো। চোয়াল শক্ত করে বলল- 

"আমি ভালোমানুষি দেখাই বলে কি আমাকে ভালোমানুষ ভেবেছেন? আমি রাজনৈতিক পরিবারের

ছেলে। ভালোমানুষি আর শয়*তানি দুটোই আমার র*ক্তে আছে।"


মনসুর আলী আমতা আমতা করে নাইমুরের দিকে তাকালো। নাইমুরের তেমন কিছু যায় আসলো না সে হাসি হাসি মুখে শাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে।নাইমুরের কাছে কোনোরূপ সাহায্য না পেয়ে মনসুর আলী শাহাদের দিকে তাকিয়ে বললো-


"ভালো ঘরের ছেলে তো ভালো হবেই। আমার বিশ্বাস তুমি এই কাচা কাজ করো নি। বাবার মতো ছেলেকেও তো আর মে*রে ফেলতে পারো না। এক ভুল কি দুইবার করবে নাকি তুমি?"


শাহাদ চোখে রক্ত জমে গেলো এমন কথা শুনে। মনসুর আলীর মুখে ঘুষি মা*রার জন্য হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো। তখনি আশফাক খানের গলা শোনা গেলো-


"শাহাদ।"


শাহাদ ফিরে তাকালো তার বাবার দিকে।সে একটু আগেই তার বাবাকে ট্রিটমেন্ট করা অবস্থায় দেখে এসেছে। তার হাতে আর কপালে ব্যান্ডেজ।গলার সাথে বেল্ট দিয়ে হাত ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সাথে গার্ডগুলোরও সবার হাত মুখে ব্যান্ডেজ। আশফাক খান এগিয়ে আসলেন। মনসুর আলী তাকে দেখে হাসলো। আশফাক খান তাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে শাহাদের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলল- 

"বাড়িতে যাও। তোমার মা হয়তো চিন্তা করছে।"


শাহাদ চোয়াল শক্ত লরে নিচ দিকে তাকিয়ে আছে। আশফাক খান আবারো বল্লেন-

"কি বলছি শুনতে পাচ্ছ না? তমাল ওকে নিয়ে বাড়িতে যা।"


নাইমুর কটাক্ষ করে বলল- 

"শাহাদ সাহেব বাড়িতে যান। বাড়িতে তো আপনার বউ আছে। এসব রিস্কের কাজ করার আগে বউ এর কথা তো চিন্তা করবেন নাকি। অল্প বয়সে বেচারীকে কেন স্বামীসোহাগ থেকে বঞ্চিত করছেন?"


শাহাদ র*ক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো নাইমুরের দিকে।। নাইমুর বিনিময়ে মধুর হাসি দিলো। আশফাক খান করিডোর কাঁপিয়ে ধমকে উঠে বললেন-


"এই ছেলে তোমার এত বড় সাহস আমার বাড়ির বউ কে নিয়ে কথা বলো!"


 নাইমুর আশাহত হয়ে বললো-

"আরে স্যার,আমি তো ভালোর জন্যই বললাম।"


শাহাদ তার বাবার দিকে তাকালো। আশফাক খানও তাকালো ছেলের চোখের দিকে। ছেলের চোখের দৃষ্টির অর্থ হচ্ছে আশফাক খান যদি অনুমতি দেয় তবে সে এখানেই এই ছেলেকে পুতে ফেলবে। আশফাক খান হাসপাতালে ঝামেলা চাইলেন না।তিনি যত দ্রুত সম্ভব শাহাদকে এখান থেকে বের করে দিতে চান।তিনি তমালের দিকে তাকিয়ে বললেন-

"নিয়ে যা ওকে।"


তমাল অনুরোধ করলো শাহাদকে এখান থেকে চলে আসার জন্য।শাহাদ র*চক্ষু দিয়ে একবার নাইমুরের দিকে তাকালো। তারপর চলে আসলো করিডোর ছেড়ে।


খান বাড়িতে অলরেডি এক্সিডেন্টের খবর পৌছে গিয়েছিলো। কিন্তু কুহু এসব বিষয়ে কিছুই জানতো না। ফ্রাকচার হওয়া পা নিয়ে তাকে সারাক্ষণ ঘরেই থাকতে হতো। বাড়িতে যখন এক্সিডেন্টের খবর এলো তখন কেউই কুহুকে কিছু জানালো না। রেজিয়া সুলতানা তৎক্ষনাৎ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। কুলসুমা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়লেন এক্সিডেন্টের কথা শুনে। জয়া বেগম তার সাথে রয়ে গেলো।তারা কেউই কুহুকে এ ব্যাপারে কিছুই জানালো না। 


শাহাদ যখন দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো তখন কুহু বিছানায় বসে আইসক্রিম খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। আচমকা শাহাদকে ঘরে ঢুকতে দেখে চমকে গেলো। শাহাদ এক নজর কুহুর দিকে তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে স্টাডি রুমের দরজা খুলে সেখানে ঢুকে গেলো। কুহু পুরো ব্যাপারটায় হা হয়ে গেলো। শাহাদের পাঞ্জাবিতে কি র*ক্ত দেখলো সে? নাকি এটা চোখের ভুল? পরক্ষনেই স্টাডিরুম দেখে পুরষালি গলার চিৎকার ভেসে আসলো।সাথে কাচ ভাংগার শব্দ। কুহু বড় বড় চোখ করে তাকালো স্টাডিরুমের দরজার দিকে। তার বুকের ভেতরে ভয় এসে বাসা বাঁধলো। বিছানা থেকে নেমে পা টেনে টেনে স্টাডিরুমের দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করলো। দেখলো শাহাদ তার বিশাল টেবিলের উপর থেকে সব কিছু ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তার পিছনটা র*ক্ত ভেজা। কুহু আতকে উঠলো। উত্তেজিত শাহাদের চোখে পানি দেখতে পেলো।শাহাদ এক লাথি দিয়ে ভারী কাঠের টেবিলটাকে দূরে সরিয়ে দিলো। কুহু তার ফ্রাকচার হওয়া পা নিয়ে কোনোমতে ছুটে গিয়ে শাহাদকে জড়িয়ে ধরলো। উত্তেজিত শাহাদ টাল সামলাতে না পেরে কুহুকে নিয়ে বিশাল ফোমের চেয়ারটাতে বসে পড়লো।চেয়ারটা দুজনের ধাক্কায় চলতে চলতে পিছনের দেয়ালে গিয়ে ঠেকলো। কুহু ভয়ার্ত কন্ঠে ফিসফিস করে বলল- 

"প্লিজ শান্ত হোন, আমার ভয় করছে।"


কষ্টে জর্জরিত শাহাদ কুহুকে দুহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কুহুর চুলে মুখ গুজে হঠাৎ হু হু করে কেঁদে দিলো। বললো-

"চারপাশের সবাই এত খারাপ কেন কুহু? সবাই শুধু আঘাত করতে চায়।"


কুহু শাহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এত দিন দেখে আসা শান্তশিষ্ট ধৈর্যশীল মানুষটারও যে এরকম বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা সে নতুন করে আবিষ্কার করলো।পুরুষ মানুষ নাকি একমাত্র ভালোবাসার মানূষের কাছেই চোখের পানি লুকায় না।এই দিক থেকে কুহু নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করলো। কি হয়েছে সে জানে না, তবে যাই ঘটে থাকুক না কেন শাহাদের হাত সে কোনোদিন ছাড়বে না।


চলবে

0 Comments:

Post a Comment