গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ৩৭

 #তামান্না_আঁখি 

#টক_ঝাল_মিষ্টি 

#পর্ব-৩৭


কুহু দরজার আড়াল থেকে দম বন্ধ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।পুলিশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে শাহাদ। তবে কি পুলিশ শাহাদকে ধরে নিয়ে যাবে? শাহাদকে নিয়ে জেলে ভরবে? কুহুর বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। নিজের স্বামীকে হাতকড়া পড়া অবস্থায় দেখে সহ্য করবে কিভাবে সে? শাহাদ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিছন ফিরে না তাকিয়েও সে বুঝতে পারছে যে কুহু আড়াল থেকে সব দেখছে। স্ত্রীর চোখের সামনে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাচ্ছে এর চেয়ে লজ্জার কি থাকতে পারে একজন স্বামীর জন্য!! কুহু কি আর কোনোদিন তাকে বিশ্বাস করবে? আর কোনো দিন সম্মানের চোখে দেখবে? শাহাদের আত্নবিশ্বাসের পাহাড় ধ্বসে পড়লো। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করলো। ইন্সপেক্টর এরেস্ট করার অর্ডার করতেই শাহাদের পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠলো। কন্সটেবলটাকে এরেস্ট করার জন্য এগিয়ে আসতে দেখে কুহু দরজা ধরে বসে পড়লো। গাফফার খান টলে উঠলেন। তার হাত থেকে লাঠি পড়ে গেলো।দলের কয়েকজন ছেলে তাড়াতাড়ি তাকে ধরলো। শাহাদ তার কাছে যেতে চাইলে ইন্সপেক্টর আটকে দিয়ে বলল- 


"নো মি.শাহাদ, আপনি এখন কোথাও যেতে পারবেন না।আপনাকে আমার সাথে থানায় যেতে হবে।"


আশফাক খান তাড়াতাড়ি আব্দুল গাফফার খানকে আউটহাউজে পাঠিয়ে দিলেন।প্রিয় দাদাজানের এমন অবস্থা দেখে শাহাদের চোখ ভিজে উঠেছে। আজ তার কান্ডজ্ঞানহীনতার জন্য খান পরিবারের এই অবস্থা। আশফাক খান রেগে গিয়ে গর্জন করে উঠলেন-

"ইন্সপেক্টর এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এসব নিয়ে আমার সাথে আপনার আলোচনা হবে। আমার ছেলেকে এসবে টানবেন না।"


"স্যরি স্যার, আমাদের কাজ শেষ করেই যাব আমরা।"


এই মুহূর্তে ইন্সপেক্টরের ফোনে একটা কল আসলো। ফোন কানে ধরার কিছুক্ষন পর তার চেহারা বদলে গেলো। নিচু স্বরে তিনি বললেন-

"আপনি শিউর?"


ওপাশ থেকে উত্তর শুনে ফোন কেটে দিলো ইন্সপেক্টর। তারপর শাহাদের দিকে তাকিয়ে বলল- 


"ইউ আর লাকি মি. শাহাদ। আপনার কেস উইথ ড্র করা হয়েছে।"


তারপর আশফাক খানের দিকে তাকিয়ে বললো-

"আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ স্যার।"


ইন্সপেক্টর চলে গেলেন।শাহাদ বিস্ময় নিয়ে আশফাক খানের দিকে তাকালো। আশফাক খান গম্ভীরমুখে শাহাদের দিকে তাকিয়ে বললেন-

"আমার ছেলেকে আমি বেচে থাকতে জেলে যেতে দিব না।"


শাহাদ বুকে আটকে থাকা শ্বাসটা সন্তর্পনে বের করে দিলো।কি ভেবে একবার পিছন ফিরে সদর দরজার দিকে তাকালো। কুহুকে এভাবে অসহায়ের মতো বসে থাকতে দেখে তার হৃদয় টা কেঁপে উঠলো। কুহুকে স্বাভাবিক করার জন্য হাসলো সে।ইশারায় বুঝালো "সব ঠিক আছে" তারপর আশফাক খানের পিছু পিছু আউটহাউজের দিকে চললো। সেখানে গাফফার খানের অবস্থা দেখা প্রয়োজন। 


শ্বাশুড়িকে ঘরে রেখে রেজিয়া সুলতানা ড্রয়িং রুমে এসে কুহুকে সদর দরজায় মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকতে দেখে অবাক হলেন।তিনি ছুটে এসে কুহুর কাছে বসে জিজ্ঞেস করলেন -

"কি হয়েছে কুহু?"


রেজিয়ে সুলতানাকে দেখে কুহু "মা" উচ্চারণ করে হুহু করে কেঁদে উঠলো। রেজিয়া সুলতানার কোনো প্রশ্নের উত্তরই সে দিতে পারলো না। কেবল কাঁদলো।


তমাল হাতের রিভ*বারটা দিয়ে হানিফের মাথায় একটা গুতো দিলো। তারপর সরিয়ে নিয়ে চেয়ার টেনে হানিফের সামনে বসলো। তার কপালে আর হাতে ব্যান্ডেজ। ফ্লোরে থুথু ফেলে বললো-

"থানায় গিয়ে আরেকটা কেস করে আসবি সেখানে তোর ভাইকে মা*রার আসামি হিসেবে আমার নাম দিবি। মনে থাকবে?"


হানিফ রক্ত লাল চোখে তমালের দিকে তাকিয়ে আছে।থানায় কেস করে আসার পথে তমাল তার দলবল নিয়ে হানিফকে তুলে এনেছে। তমাল কোনো উত্তর না পেয়ে রি*ভলবার দিয়ে হানিফের মাথায় আরেকটা গুতো দিয়ে বলল- 

"বল মনে থাকবে কিনা?"


হানিফ রাগে গজগজ করে বলল- 

"তমাইল্যা কাজ টা ভাল করতাছস না। আমার ভাই হাসপাতালে ওর কিছু হইলে ওই শাহাদ খানরে ছাড়তাম না।"


"ছাড়িস না।ভাই তো তোর ভাইরে জানে মা*রে নাই আমি হইলে জানে মাই*রা দিতাম।কাল গিয়ে আমার নামে কেস করে আসবি। নয়তো তোর ভাইরে আমি আসলেই জানে মে*রে দিব।"


তমাল রিভ*বার টা কোমড়ে গুজে কাজ চলতে থাকা বিল্ডিং টা থেকে দলবল নিয়ে বের হয়ে আসলো। সবাই কমবেশি আহত। সবার শরীরেই ব্যান্ডেজ। তাও এই অবস্থায় তাদেরকে এইসব করতে হয়েছে। আশফাক খানের নির্দেশেই সব করা হচ্ছে। উনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা কোনো ষড়যন্ত্র। তাই তমালকে কয়েকটা ছেলে সমেত থানায় নজর রাখতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।আর থানার ভেতর থেকে শাহাদের নামে কেস হওয়ার খবর টা দিয়েছিলো এক কন্সটেবল। তাই ইন্সপেক্টর চলে যাওয়ার পর হানিফ বের হওয়ার সাথে সাথেই তাকে ধরে নিয়ে জোর করে কেস উইথড্র করানো হয়েছে। তমাল গাড়িতে উঠে বসে সিটে গা এলিয়ে দিলো।ড্রাইভার ছেলেটাকে একটা চায়ের দোকানে গাড়ি থামাতে বললো। আর একটু পরেই হয়তো ওকে জেলে যেতে হবে তাই আপাতত একটু চা নাস্তা করা যাক।


শাহাদ আউটহাউজ থেকে বেরিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে এলো। গাফফার খান আগের চেয়ে ভালো আছে। ডক্টরের ট্রিটমেন্ট শেষে একটু পরেই তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হবে।শাহাদ সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই রেজিয়া সুলতানা তার হাত আকড়ে ধরলো।জিজ্ঞেস করলো-

"বাবা কেমন আছেন?"


"ভালো আছে মা।"


এই কথা বলেই সে তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।রেজিয়া সুলতানা ছেলের পিঠে হাত রেখে বললেন-

"কুহু আমাকে সব বলেছে। রাজনীতির মাঠে এত মাথা গরম করলে হবে? আমি নাহয় এসব দেখে অভ্যস্ত কিন্তু কুহুর কথা ভেবে দেখে। ওর মনের ভিতর কি চলছে? ও তো কখনো এসব দেখে নি।"


শাহাদ রেজিয়া সুলতানাকে ছেড়ে দিয়ে অপরাধীর ন্যায় মাথা নাড়লো।তারপর তার দাদীজান আর অন্যদের সাথে দেখা করে ঘরে আসলো। কুহু বিছানায় পা তুলে হাটুতে মুখ গুজে বসে আছে। শাহাদ দরজা লাগিয়ে দিয়ে কুহুর সামনে বিছানায় বসলো। কাঁধের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বললো-

"এই দেখো ট্রিটমেন্ট নিয়েছি।ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে ওরা।"


কুহু কিছুক্ষন শাহাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর ঝড়ের বেগে শাহাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। শাহাদ টাল সামলতে পারলো না। কুহুকে নিয়ে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লো।কাঁধের যন্ত্রনা সহ্য করে নিয়ে গভীরভাবে আলিঙ্গন করলো কুহুকে। শাহাদ যে কাঁধে আঘাত পেয়েছে সে কাঁধে মুখ গুজেই কুহু কাঁদছে। শাহাদ প্রচন্ড যন্ত্রণার মাঝেও নিশব্দে হাসলো। এ কেমন মেয়ে বিয়ে করলো সে? স্বামী কোন কাঁধে আঘাত পেয়েছে আবেগের চোটে তা-ই ভুলে বসে আছে।


--------


আনিশা নাকে টিস্যু চেপে ধরে কাঁদছে।রাহাত পায়চারী করছে আর একটু পর পর আনিশার দিকে তাকাচ্ছে।শেষে আর থাকতে না পেরে আনিশার পাশে এসে বসলো। বিরক্তি নিয়ে বললো-

"আমি কতবার জেলে গেলাম, মা*র খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। আমার জন্য তো এইভাবে কোনোদিন কাঁদলে না।আর তোমার ভাই এর একটু আচড় লেগেছে এতেই নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে গেছে।"


আনিশা শব্দ করে নাক পরিষ্কার করে সর্দি সমেত টিস্যুটা রাহাতের উপর ছুড়ে দিলো। রাহাত ছিটকে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আনিশা কান্না ভেজা কন্ঠে বললো- 

"আমার ভাই কি তোমার মতো গুন্ডা? ও তো দুধের বাচ্চা। আরেকটু হলেই ওকে পুলিশে ধরে নিয়ে যেতো।ও জেলে গিয়ে আসামীদের সাথে থাকতে পারতো?"


"তোমার দুধের বাচ্চা ভাই দুদিন পর নিজের বাচ্চার দুধ কিনতে কিনতে ফকির হয়ে যাবে। যত্তসব!!"


আনিশা আবারো একটা টিস্যু নিলো। এর মানে আরেক দফা কান্নার প্রস্তুতি।রাহাত আনিশার কাছে এসে বসলো।কন্ঠ নরম করে বলল- 

"কান্নাকাটি করো না। এতই যদি শাহাদের জন্য চিন্তা হয় তাহলে আমরা ওকে গিয়ে দেখে আসব কেমন।"


বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা আসতেই আনিশার চোখ চকচক করে উঠলো। সে হাসিমুখে বললো-

"সত্যি?"


মুখ ফসকে এই কথা বলে ফেলে রাহাত পড়ে গেলো বিপদে। কদিন পর নির্বাচন এখন বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যাওয়া বিলাসিতা। তাও সে এই অবস্থায় আনিশাকে স্বান্তনা দিয়ে বলল- 

"অবশ্যই সত্যি।"


------------


এই ঘটনার পর থেকে শাহাদের বাড়ির বাইরে যাওয়া আশফাক খান বন্ধ করে দিলো। এটেম্প টু মার্ডার কেসে তমালকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এরপর আশফাক খান গিয়ে ছাড়িয়ে এনেছে। কেসটা এখনো চলমান কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। শাহাদ এখন বাড়িতেই থাকে। দলের কাজ কর্ম এখন আউটহাউজ থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে সে।পার্টি অফিসের ওই ঘটনার পর তারাও থানায় মামলা করেছে। তাই শাহাদ সিদ্ধান্ত নিলো এই কটা দিন বাড়িতেই থাকবে এরপর সুযোগ বুঝে গা ঝাড়া দিয়ে বের হওয়া যাবে। 


শাহাদ বাড়িতে থাকায় সবচেয়ে বেশি খুশি কুহু। সে সারাদিন শাহাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করে। শাহাদ স্টাডি রুমে থাকলে সেখানেও বিভিন্ন ছুতো ধরে যায়। মাঝে মাঝে শাহাদ নিজেই "এটা দিয়ে যাও" "ওটা দিয়ে যাও" এরকম বিভিন্ন অযুহাতে কুহুকে ডেকে নিয়ে অসভ্য আচরন করে।কুহু সামনাসামনি রাগ দেখায়, তার কাজ আছে বলে চলে আসতে চায় কিন্ত মনে মনে সে এইগুলোয় চায়। শাহাদ যখন আউটহাউজের ছাদে বসে ফাইল দেখে কুহু তখন ঘরের বারান্দায় বসে শাহাদকে দেখে।


আজ বিকালে কুহু বেশ ফুরফুরা মেজাজে ছাদে আসলো। ছাদে এসে রাফা আর রিদিকে মাদুর পেতে খেলতে দেখলো। রঙিন কাগজ দিয়ে কিসব করছে। কুহু রেলিঙের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। এখানে দাঁড়ালে আউটহাউজটা স্পষ্ট দেখা যায়। ওইতো শাহাদ বসে আছে ছাদে।পায়ের উপর পা তুলে ফাইল দেখছে।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তমাল। আকাশে মেঘ জমেছে চারদিকে ঝিরিঝিরি বাতাস।বৃষ্টি আসবে বোধহয়। কুহু চোখ বন্ধ করে বাতাসটা নাক দিয়ে টেনে নিলো। মিষ্টি বাতাস নাক দিয়ে ঢুকে শরীর মন জুড়িয়ে দিলো। কুহু তার ওড়নাটা তুলে ধরে বাতাসে খানিকক্ষণ উড়ালো। রাফা রিদি এসে বললো- 

"ভাবিমনি দেখো আমরা ঘুড়ি বানিয়েছি।"


কুহু দেখলো রঙিন কাগজ দিয়ে ওরা খুব সুন্দর একটা ঘুড়ি বানিয়েছে।কুহু বললো -

"বাহ! খুব সুন্দর।চলো এটা উড়িয়ে দেখি।এখন অনেক বাতাস আছে।"


রিদি গাল ফুলিয়ে বললো-

"না ভাবিমনি এটা উড়ে চলে যাবে।"


"আরেহ নাহ কিছু হবে না।দাও আমাকে।"


কুহু ঘুড়িটায় সুতা লাগিয়ে উড়ানোর চেষ্টা করলো। কয়েকবারের চেষ্টায় সফল হলো।কুহু ঘুড়ি নিয়ে ছাদের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়াতে লাগলো। রাফা আর রিদি দুজনেই খুশিতে লাফাতে লাগলো।।কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না। রেলিঙের কাছে আমগাছটায় ঘুড়ি আটকে গেলো। রিদি মন খারাপ করে বলল- 


"দেখেছো আগেই বলেছিলাম ঘুড়িটা নষ্ট হবে।"


কুহু বললো-

"আরে কিচ্ছু হবে না। এখনি নামিয়ে আনছি। "


কুহু সুতায় ধরে হ্যাচকা টান দিলো।ঘুড়িটা নেমে এসে আমগাছের মাঝ বরাবর আরেকটা ডালে আটকে গেলো।আরেকবার টান দিতেই সুতা ছিড়ে চলে এলো। এবার তিনজনই একজন আরেকজনের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। রিদি নীরবতা ভেঙে চিৎকার করে উঠলো-

"আমার ঘুড়িইইইই।"


কুহু তাড়াতাড়ি রিদির মুখ চেপে ধরে বললো-

"আমি এনে দিচ্ছি।"


ঘুড়ি আনতে গিয়ে দেখলো রেলিঙের উপরে উঠা ছাড়া ঘুড়ি আনা অস্মভব।রাফা অবস্থা দেখে বললো-


"আর কাউকে ডেকে আনি ভাবিমনি।ভাইয়াকে ডাকি?"


শাহাদ কাজ করছে এই অবস্থায় তাকে বিরক্ত করতে চায় না কুহু।তাছাড়া নিজে খেলতে গিয়ে বাচ্চাদের ঘুড়ি আটকে ফেলেছে এরকম ছেলেমানুষীর কথা শাহাদকে শুনানো যাবে না।তাই কুহু নিজেই একটা চেয়ার টেনে আনলো। রাফাকে বললো -


"তুমি ধরে রাখো আমি উঠে নিয়ে আসছি ঘুড়িটা।"


রাফা বললো-

"আমার ভয় করছে ভাবিমনি।"


"ভয় পেয়ো না,আমার এসব অভ্যাস আছে।"


রাফা রিদি দুজনেই শক্ত করে চেয়ারটা ধরলো। কুহু টলমল পায়ে চেয়ারে উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু ঘুড়ির নাগাল পেলো না।আরেকটু গেলেই নাগাল পাওয়া যেতো। রেলিং টা বেশ উঁচু তাই সে আমগাছের একটা ডালে ধরে ব্যালেন্স ঠিক রেখে চেয়ার ছেড়ে রেলিঙের উপর উঠে দাঁড়ালো। রাফা চাপাস্বরে চেচিয়ে উঠলো-


"ভাবিমনি কি করছো? নেমে এসো।"


কিন্তু কুহু এসব শুনলো না। উপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে তার ভয় লাগলো। ভয় দূর করতে আম গাছের ডালটা শক্ত করে ধরে ঘুড়ি নামানোতে মনোযোগ দিলো । রেলিং টা বেশ চওড়া তাই এত অসুবিধা হচ্ছে না তার।সে এই ডালটা ছেড়ে একটু দূরে অন্য একটা ডাল ধরে হাত বাড়ালো ঘুড়িটার দিকে। হাত বাড়িয়ে তেমন নাগাল পেলো না।আরেকটু হলেই নাগাল পাবে। তাই সে দুই পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়ালো।ঘুড়ি আনার জন্য সে এতই মরিয়া হলো যে কোথায় পা রাখছে সেই ব্যাপারে জ্ঞান থাকলো না। রাফা চেচিয়ে উঠলো- 

"ভাবিমনি তোমার পা_____"


রাফার আকস্মিক চেচানোতে কুহু ভয় পেয়ে পায়ের দিকে তাকালো আর তখনি ব্যালেন্স হারিয়ে রেলিং থেকে পা দুটো সরে গেলো। কুহু এক চিৎকার দিয়ে আম গাছের ডাল ধরে রেলিঙের বাইরে ঝুলে রইলো।সেই সাথে যুক্ত হলো রাফা রিদির চিৎকার।


মেয়েদের চিৎকারে তমাল মাথা তুলে এদিক ওদিক চাইলো। তারপর সামনের দিকে আম গাছের ডালের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো।  স্তম্ভিত কন্ঠে শাহাদকে বললো-

"ভাই এটা ভাবি না?"


শাহাদ কুহুর দিকে পিছন ফিরে বসে কাজ করছিলো। মুখ তুলে সামনে দাঁড়ানো তমালের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চোখ বড় বড় করে কি যেন দেখছে।তাই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর সাথে সাথে সেও হতভম্ব হয়ে গেলো। শাহদ চেয়ার ছেড়ে উঠে আউটহাউজের ছা্‌দের কিনারায় চলে এলো।বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে দেখলো কুহু আম গাছের ডাল ধরে ঝুলে আছে আর রাফা-রিদি রেলিঙের কাছে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে। শাহাদ চিৎকার করে উঠলো-


"কুহুউউউউ"


শাহাদের গলা শুনতে পেয়ে কুহু তার বাম পাশে তাকালো।শাহাদ যে এখানে আছে এটা সে ভুলেই গিয়েছিলো। শাহাদকে এভাবে বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কুহু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে এক চিৎকার দিয়ে আম গাছের ডাল ছেড়ে দিলো।কুহুকে ডাল ছেড়ে নিচে পড়তে দেখে শাহাদ দ্বিতীয় বারের মতো চিৎকার করে উঠলো -

"কুহুউউউউউউউউ।"


চলবে

0 Comments:

Post a Comment