#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৪৮
খুশির খবরটা ছড়াতে বেশি সময় লাগলো না। পরদিন সকালে কুহুর বাবা মা ভাই ফল আর মিষ্টি নিয়ে হাজির হলো খান বাড়িতে। বাবা মা আসার খবর পেয়ে কুহু দৌড়ে নিচে নামলো। এতক্ষন শাহাদ তাকে ঘরে আটকে রেখেছিলো। কুহুকে দৌড়াতে দেখে কুলসুমা বেগম হায় হায় করে উঠলেন।রেজিয়া সুলতানা দ্রুত তাকে ধরে ধমকে বললেন-
"এই অবস্থায় এভাবে দৌড় দেয়া যাবে না কুহু।"
কুহুর মা শিরিনা বেগম এসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙালেন। আশফাক খান বন্ধুর আসার খবর পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন। দুই বন্ধু একসাথে কোলাকুলি করলো। আশফাক খান বন্ধুকে নিয়ে সোফায় বসে বললেন-
"এত দিন পর বাড়িটায় একটা খুশির সংবাদ এসেছে। আল্লাহর রহমত নেমে এসেছে। আমি যে কত খুশি তোকে বলে বুঝাতে পারব না।"
মোয়াজ্জেম হোসেন পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে তার চোখের কোনায় জমে থাকা পানিটা মুছে বললেন-
" মেয়েটাকে খুব আদরে বড় করেছি। মনে হচ্ছে এই সেদিন ছোট্ট কুহু পুতুল খেলছিলো।আর আজ সে নিজেই মা হতে যাচ্ছে।"
আব্দুল গাফফার খান লাঠিতে ভর দিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে মোয়াজ্জেম সাহেবের পাশে বসতে বসতে বললেন-
"মেয়ে মানুষ আর কলা গাছ, এরা হুট করে বড় হয়ে সবাইকে চমকে দেয়। বুঝলে মোয়াজ,এই বয়সে এসে নাতির ঘরের পুতি দেখতে পারছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। "
মোয়াজ্জেম সাহেব হাসলেন। তিনি নিজেও এই ধরনের সংবাদ আশা করেন নি। অনুরোধের সুরে বললেন-
" চাচা আমার একটা কথা আছে। বিয়ের পর আপনাদের আদর পেয়ে আমার মেয়ে তার পড়াশোনা একদম ছেড়ে দিয়েছে।ঠিকমতো ভার্সিটিতেও যায় না। আমার আবদার থাকবে আপনারা ওকে শাসন করে গ্র্যাজুয়েশনটা কম্পলিট করাবেন।"
আশফাক খান উত্তর দিলেন -
"অবশ্যই। কুহুর মন চাইলে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি -ব্যবসা যা ইচ্ছে হয় তাই করবে৷ এ বিষয়ে আমার ছেলের কিংবা আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। ও ওর ইচ্ছামত জীবন কাটাবে। এই নিয়ে তুই ভাবিস না।"
মোয়াজ্জেম সাহেব অত্যন্ত খুশি হলেন। একজন প্রফেসর হিসেবে পড়াশোনার গুরুত্ব তার কাছে অনেক। সেই হিসেবে তিনি নিজের মেয়েকে কিছুতেই পড়াশোনা ছাড়তে দিবেন না।
একটু পর শাহাদ আসলো ড্রয়িং রুমে। মোয়াজ্জেম সাহেবের কাছে গিয়ে বিনীত কন্ঠে সালাম দিলো।সালামের জবাব দিয়ে মোয়াজ্জেম সাহেব মেয়ে জামাইকে জড়িয়ে ধরলেন। পাশে বসিয়ে বললেন-
"আমার মেয়েটা একটু চঞ্চল। ওর একটু খেয়াল রেখো।"
"অবশ্যই বাবা। আপনি চিন্তা করবেন না।"
"তোমার মতো দায়িত্ববান ছেলের কাছে মেয়ে দিয়ে আসলেই আমি নিশ্চিন্তে আছি। "
শশুড়ের কথায় শাহাদ মৃদু হাসলো। নিজেকে আজ তার অনেক সুখী সুখী লাগছে। এতদিন সে বাবা হওয়ার আনন্দ কেমন হবে তা নিয়ে মনে মনে চিন্তা করেছে আজ সেটা উপলব্ধি করে এক অন্যরকম সুখ পাচ্ছে। যেদিন তার সন্তানকে কোলে সেদিন হয়তো এই সুখের আর সীমা থাকবে না।
বাড়ির মেয়েরা কুলসুমা বেগমের ঘরে ভীড় জমিয়েছে। কুলসুমা বেগম নিজের বিছানায় বসে একটা গয়নার বাক্সে হাত বুলাচ্ছেন।কুহু তার সামনেই বসা।বাক্স খুলে অনেক ভারি একটা সোনার সীতাহার বের করলেন। হারটার গায়ে হাত বুলিয়ে বললেন-
"আমার বহুদিনের শখ আমার বংশধরকে কোলে নিয়ে এই হারটা তোমার গলায় পড়াব। তোমার শ্বাশুড়ি মাকেও এমন একটা হার পড়িয়েছিলাম।এরপর তোমার জন্য গড়িয়ে রেখেছি এটা।"
রাফা খাটের কোনায় বসে কুলসুমা বেগমের পানের বাটা নাড়াচাড়া করে বলল-
"ভাবিমনির ছেলে না হলে কি এই হার তাকে দিবে না?"
কুলসুমা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললেন-
"চুপ কর। আজেবাজে কথা বলিস কেন। অবশ্যই আমার নাতবউ আল্লাহর রহমতে এই বাড়ির বংশধর জন্ম দিবে।মেয়ে হলেও অসুবিধা নেই।তবে এই বাড়ির জন্য এখন বংশধর দরকার। "
কথা শেষ করে কুলসুমা বেগম কুহুর মায়ের দিকে তাকালেন।কুহুর মায়ের মুখটা কিছুটা মলিন দেখালো। কুলসুমা বেগম তার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনলেন।তার হাতের উপর নিজের হাত রেখে বললেন-
"মনে কিছু নিয়ো না মা। ছেলে হোক মেয়ে হোক তোমার মেয়ের যত্ন এই বাড়িতে একটুও কমবে না।তবে তুমিও তো একজন ছেলের মা, তুমি নিশ্চয়ই আমার উদ্বেগটা বুঝতে পারছো।"
শিরিনা বেগম হেসে বললেন-
"বুঝতে পারছি চাচী।আমার মেয়ে আপনাদের বাড়ির বউ। অবশ্যই তার উপর আপনাদের অধিকার আছে। আমি মনে কিছু করি নি। দোয়া করি আল্লাহ আপনার ইচ্ছা পূরন করুক।"
খান বাড়ির গেটের সামনে বাইক থামালো হাসিব। গেটের বাইরে থেকে বিশাল বড় খান বাড়িটা একবার দেখে নিলো। এইখানে সে আগে কখনো আসে নি।আজ ই প্রথম। বাড়িটা ওদের বাড়ির মতোই বিশাল। নিজের বাড়ির কথা মনে পড়তেই বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। বাড়িটা বোধ হয় আর বেশি দিন নিজেদের থাকবে না। মনসুর আলী নিলামে তোলার সব ব্যবস্থা করছে। আজ বাড়িতে এসে মঞ্জুরা বেগমের সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে আলাপ করে গেছে। কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার দোহাই দিয়ে বাড়ি নিলামে তুলে হিশামের চিকিৎসা খরচ চালানোর পরামর্শ দিয়েছে মনসুর আলী। মঞ্জুরা বেগম চোখের পানি মুছে বুকে পাথর চাপা দিয়ে সে পরামর্শ মেনে নিয়েছে। পুত্রশোকে তিনি এখন বিবেক হারিয়ে বসেছেন। চার পাশে অথৈ পানিতে এক টুকরো খড়কুটো খুজছেন আকড়ে ধরার জন্য। হাসিব আর তৃপ্তি তাকে হাজার বুঝিয়েও লাভ হয় নি। বরং তিনি কান্নাকাটি চিৎকার চেচামেচি করে আরো শয্যাশায়ী হয়েছেন।
হাসিব নিজেকে প্রস্তুত করে বাইকটা গেটের কাছাকাছি নিয়ে হর্ন দিলো।দুবার হর্ন দিতেই দাড়োয়ান গেট খুলে দিলো। বাইক নিয়ে ধীরে ধীরে ড্রাইভওয়ে পেরিয়ে পার্কিং এরিয়াতে পার্ক করলো বাইকটা। পার্কিং এরিয়ায় অনেক গাড়ি। বাগানে এবং আউটহাউসের সামনে অনেক মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে খাওয়া দাওয়া করছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওরা দলের ছেলে ছোকড়া। অনেক নেতা গোছের মানুষও আছে। আজ কি তবে কোনো বিশেষ দিন? এই দিনে এসে ভুল করলো কি সে?
হাসিব একবার মনে মনে ভাবলো বাইক ঘুরিয়ে ফেরত যাবে। অন্য কোনো দিন আসবে। কিন্ত পরক্ষনে নিজের পরিবারের দুর্দশার কথা মনে করে নিজেকে শক্ত করলো। বাইক থেকে নেমে হেটে গিয়ে সদর দরজার সামনে দাঁড়ালো। ভিতরে অনেক নারী পুরুষ দেখা যাচ্ছে। সবাই হাসি হাসি মুখে মিষ্টি খাচ্ছে। হাসিব এদিক ওদিক তাকিয়ে শাহাদকে খুজলো। দূরে সে কুহুকে দেখতে পেলো। কিন্তু তাকে ডাক দেয়ার সাহস নেই তার। একটা কাজের লোককে খাবারের ট্রে হাতে যেতে দেখে সে দাঁড় করালো। বললো-
"শাহাদ খানকে একটু ডেকে দিবেন? আমি উনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। উনিই আমাকে আসতে বলেছিলেন।"
কাজের লোকটা হাসিবকে ড্রয়িং রুমের বাইরের লম্বা বারান্দাতে থাকা চেয়ারে বসিয়ে চলে গেলো। হাসিব কাঁধের ব্যাকপ্যাকটা কোলে নিয়ে বসলো। বারান্দা থেকে বাগানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
কুহু দূর থেকে হাসিবকে লক্ষ্য করেছে।আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছে হাসিব।মুখটা কালো হয়ে গেছে।দেখেই বলে বুঝা যাচ্ছে আগের মতো যত্ন নেই। কাজের লোকটাকে ডেকে জানতে চাইলো হাসিবের ব্যাপারে। সব জেনে সে রাফাকে ডেকে হাতে মিষ্টি আর ফল ভর্তি খাবারের ট্রে ধরিয়ে দিয়ে বলল-
"বারান্দায় একটা ছেলে তোমার ভাইয়ের অপেক্ষায় বসে আছে। ওকে এগুলো দিয়ে আসো।তোমার ভাই ফ্রি হতে অনেক সময় লাগবে।ততক্ষনে একটু খাওয়া দাওয়া করুক। "
রাফা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো-
"আমি কেন দিয়ে আসব? কাজের লোক দিয়ে পাঠিয়ে দাও।"
" ও হিশাম চৌধুরীর ভাই। কাজের লোক দিয়ে কিভাবে দিব? আমি নিজেই নিয়ে যেতাম কিন্তু ও বিব্রত হবে তাই তোমাকে পাঠাচ্ছি। "
হিশাম চৌধুরীর ভাইয়ের কথা শুনে রাফার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। ও শুনেছে হিশাম চৌধুরীর ভাই ই নাকি কুহুকে কিডন্যাপ করেছিলো। ছেলেটাকে ও কখনো দেখেনি। তাই এই সুযোগ সে মিস করলো না।খাবারের ট্রে হাতে বারান্দায় এসে উপস্থিত হলো।দেখলো ব্যাগপ্যাক কোলে নিয়ে শুকনো মুখে একটা ছেলে বসে আছে। তার দৃষ্টি বাগানের দিকে। একমনে কিসব চিন্তা করছে। রাফা কাছাকাছি এসে বললো-
"টেবিলটা একটু এই পাশে এনে দেন।"
হাসিব চমকে তাকালো রাফার দিকে। দেখলো একটা সুন্দরমতো মেয়ে হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাসিবকে হা করে থাকতে দেখে রাফা বিরক্ত হয়ে বললো-
"বলছি ছোট টেবিলটা একটু এই পাশে টেনে আনুন।ট্রেটা রাখব।"
হাসিবের ঘোর কাটলো।সে তার অপর পাশে থাকা টেবিলটা এক হাতে টান দিয়ে আনলো। রাফা সেখানে ট্রেটা রেখে বলল-
"ভাইয়া একটু ব্যস্ত আছে। আসতে দেরি হবে। আপনি ততক্ষনে একটু খাওয়া দাওয়া করুন।"
হাসিব খাবারের দিকে তাকালো। খাবারের দিকে তাকিয়ে ওর এতক্ষন নিভে থাকা ক্ষুধাটা জ্বলে উঠলো। মনে পড়লো সে কাল রাত থেকে কিছু খায় নি। তৃপ্তি তাকে কয়েকবার ডেকেছিলো।কিন্তু তার আর খেতে ইচ্ছে হয় নি।হাসিব দেরি না করে ব্যাকপ্যাকটা পাশের চেয়ারে রেখে একটা মিষ্টি খেলো। আপেলের দুটো পিস মুখে দিলো। রাফা মনোযোগ সহকারে দাঁড়িয়ে থেকে দেখছে হাসিবের খাওয়া।হাসিবও কয়েকবার আড়চোখে রাফাকে খেয়াল করেছে। আচমকা রাফা প্রশ্ন করে বসলো-
"আপনি নাকি আমার ভাবিমনিকে কিডন্যাপ করেছিলেন।"
হাসিব পানি খাচ্ছিলো এই কথা শুনে বিষম খেলো। কাশি উঠে গেলো তার। রাফা তড়িঘড়ি করে তার পিঠে দুটো চাপড় দিলো কাশি কমানোর জন্য। হাসিব কাশতে কাশতে নিজেকে সামলালো। কাশি একটু কমে এলে বললো-
"শাহাদ ভাইকে একটু আসতে বলুন।খুব দরকার।"
রাফা বুঝলো হাসিব বিব্রত হচ্ছে। সে আরেকটু জ্বালানোর জন্য বললো-
" আমার সাথে শেয়ার করলে অসুবিধা কি। প্রমিস আমি কাউকে জানাব না। আমি আসলে পুরো স্টোরিটা জানিনা তো তাই।"
হাসিব কি বলবে বুঝতে পারলো না। যেই বাড়ির বউকে কিডন্যাপ করেছিলো সেই বাড়ির মেয়েই আবার কিডন্যাপের গল্প শুনতে চাচ্ছে।এটা তো চরম বিব্রতকর।হাসিবকে বিব্রত অবস্থা থেকে রেহাই দেয়ার জন্য শাহাদের আগমন ঘটলো। বারান্দায় আসতে আসতে রাফাকে উদ্দেশ্য করে বলল-
"কিসের স্টোরি শুনতে চাস?"
রাফা ভাইকে দেখে থতমত খেয়ে বললো-
"কিছুনা।"
এরপর দ্রুত চলে গেলো। শাহাদ মৃদু হেসে চেয়ারে বসতে বসতে বললো-
"খুব দুষ্ট মেয়ে। নিশ্চয়ই তোমাকে বিরক্ত করছিলো!"
হাসিব বিনীত কন্ঠে বললো-
" না না। "
"আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই দেরি হলো।আমাকে জানিয়ে আসলে এতক্ষণ অপেক্ষা করতে হতো না।"
হাসিব ব্যাকপ্যাকটা নিজের কাছে নিয়ে তা থেকে একটা মোটা ফাইল শাহাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-
"আপনি যেই কাগজগুলো চেয়েছিলেন তা আমি পেয়েছি। আর সাথে আরো কিছু কাগজপত্র ছিলো ভাইয়ার লকারে।কোনগুলো গুরুত্বপূর্ণ তা আমি জানি না।তাই প্রায় সব কিছুই নিয়ে এসেছি।"
শাহাদ ফাইলটা নিতে নিতে বললো-
"ভাল করেছো।কাউকে জানাও নি তো?"
হাসিব মাথা নাড়লো।সে কাউকে জানায় নি।এমনকি তার মা আর ভাবিকেও না।সে গোপনে হিশামের লকার থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছে। এই জন্য তাকে হাসপাতালে গিয়ে হিশামের ফিংগার প্রিন্ট নিয়ে আসতে হয়েছে লকারটা খোলার জন্য। শাহাদ উলটে পালটে কাগজগুলো দেখছে। হাসিব একটা কথা বলার জন্য উশখুশ করছে। বলবে না বলবে না করেও সে বলার জন্য তৈরি হলো।জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে বললো-
" আপনার কাছে একটা অনুরোধ আছে। বিশেষ করে বললে এটা ভাবির অনুরোধ।"
শাহাদ হাসিবের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
"কি অনুরোধ ?"
শাহাদকে সরাসরি তাকাতে দেখে হাসিব আরো জড়োসড়ো হয়ে গেলো। নিচের দিকে তাকিয়ে বলল-
" ভাইয়ার একাউন্টে যা টাকা ছিলো তা শেষ হয়ে গেছে।ভাবি গহনা বিক্রি করতে চাইলে মা সেগুলো রিশামের জন্য রেখে দিয়ে নিজের গহনাগুলো বিক্রি করেছেন।সেগুলো দিয়ে বড়জোড় আর দু তিনদিন হাসপাতালের বিল চালানো যাবে। তাই ভাবি বলছিলো আপনি যদি কিছু টাকা ধার দিতেন। পরে আমরা শোধ করে দিব।"
হাসিবের কন্ঠে স্পষ্ট অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো। শাহাদ শান্ত হয়ে কিছুক্ষন হাসিবকে দেখলো। ওদের এই পরিণতির জন্য তার নিজেকে অপরাধী মনে হলো ।কেননা তার বাবাকে বাঁচাতে গিয়েই আজ হিশামের এই অবস্থা।
হাসিব কথাটা বলে মাথা নিচু করে বসে রইলো। তার জীবনে এত অসহায় সে আর কখনোই হয় নি।ধার শোধ করার কথা সে বলেছে। অথচ কিভাবে শোধ করবে তা নিজেও জানে না।
শাহাদ চারটা কাগজ হাসিবের সামনে ধরে বললো-
"এইগুলা কি জানো?"
হাসিব ফ্যালফ্যাল করে কাগজগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। শাহাদ বললো-
" হিশাম ভাই তুমি,তোমার মা, ভাবি এবং রিশামের জন্য আলাদা আলাদা চারটা একাউন্টে মোটা অংকের টাকা ডিপোজিট করে রেখেছেন। যাতে তার কিছু হয়ে গেলে তোমাদের কারো কাছে হাত না পাততে হয়।"
হাসিব চমকে তাকালো শাহাদের দিকে। তার চোখে পানি এসে জমলো। কিছু বলার ভাষা পেলো না সে। শাহাদ হাসিবের হাতে পেপারগুলো দিয়ে আঙুল দিয়ে প্রত্যেকের একাউন্টের টাকার এমাউন্টটা দেখিয়ে দিলো। হাসিবের চোখ থেকে ফোটায় ফোটায় পানি পড়লো কাগজগুলোর উপরে। যে টাকার জন্য তার ভাইয়ের চিকিৎসা বন্ধ হতে যাচ্ছিলো, যে টাকার জন্য তার বাড়িতে খাবার টেবিলে ঠিকমতো খাবার উঠবে কিনা তা নিয়ে শংকায় ছিলো সেই টাকাই এখন এরকম অপ্রত্যাশিতভাবে তার হাতে ধরা দিয়েছে।
শাহাদ হাসিবের কাঁধে হাত রেখে বললো-
" আমি জানতাম হিশাম ভাই এরকম কিছু অবশ্যই করেছে। আমি হলে আমিও তাই করতাম। যেই পেশায় জীবনের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই, সেই পেশায় থেকে প্রত্যেক পুরুষই নিজের পরিবারের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যেটা আমার বাবাও করেছে ভবিষ্যতে আমিও করব। আর এজন্যই আমি তোমাকে কাগজপত্র আনার কথা বলেছিলাম।"
হাসিব চোখের পানি মুছলো। পরিবারের দায়িত্ব কিভাবে নিবে তা নিয়ে সে এতদিন চিন্তায় কাটিয়েছে।এখন আর চিন্তা নেই। যে বিপুল পরিমান টাকা হিশাম রেখেছে তা দিয়ে নিশ্চয়ই সে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। সে শাহাদের হাত আকড়ে ধরে ধন্যবাদ জানালো।শাহাদ হাসিবকে আশ্বাস দিয়ে বলল-
"ভেঙে পড়ো না।শক্ত থাকো।এই কাগজগুলো নিয়ে ব্যাংকে গেলে প্রয়োজনমতো টাকা তুলতে পারবে। হিশাম ভাইয়ের সেক্রেটারির সাথে যোগাযোগ করো। উনি তোমাকে সব বুঝিয়ে দিবে।"
হাসিবে উঠে চলে যেতে নিলে শাহাদ তাকে থামিয়ে বললো-
" ভাবিকে গিয়ে বলবে কুহু মা হতে চলেছে। উনি যেন দোয়া করে।যদি সম্ভব হয় তবে যেন একবার আসে আমাদের বাড়িতে।"
শাহাদ হাসিবের সাথে ফল আর মিষ্টি পাঠিয়ে দিলো চৌধুরী বাড়িতে।হাসিব চলে গেলে শাহাদ কাগজগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখলো। হিশাম নাইমুরের ব্যাপারে অনেক তথ্য জোগাড় করেছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড এর অনেক সিক্রেট ব্যাপারই এর মধ্যে রয়েছে৷ এর সব কিছু শাহাদ পুলিশকে দিবে না। কিছু সে নিজের কাছে রাখবে। নিজের কাজে লাগাবে।
চলবে
0 Comments:
Post a Comment