#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৩৪
কুহুদের বাড়ি থেকে শাহাদের ফিরতে ফিরতে সকাল পেরিয়ে প্রায় দুপুর হয়ে গেলো। অনেক আগেই চলে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু শিরিনা বেগম কিছুতেই না খাইয়ে ছাড়বেন না। শেষে শাহাদকে গোসল করে খেয়ে দেয়ে আসতে হলো। খান বাড়িতে যখন ঢুকলো তখন বাড়ির মহিলারা খেয়ে দেয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। শাহাদকে দেখে সবাই একযোগে তাকালো। শাহাদ সবাইকে এভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা বিব্রত হলো। সবাই যে শুধু তাকিয়ে আছে তা না,মুখ টিপে হাসছে। রেজিয়া সুলতানা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন-
"কুহু ঠিক আছে?"
"হ্যা, আছে।"
শাহাদ এটা বলেই ধুপধাপ সিড়ি পেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। শাহাদ চলে যেতেই মালা আর জয়া বেগম অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।রেজিয়া সুলতানাও হাসলেন নিশব্দে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুশি হলেন কুলসুমা বেগম।তিনি হাসি হাসি মুখে পান চাবাচ্ছেন। নাতির যে সুমতি হয়েছে এতে তিনি খুশি। বউ বাপের বাড়ি গেলে রাত বিরাতে বউ এর কাছে ছুটে যাওয়া পুরুষই তো আসল পুরুষ।
শাহাদ ঘরে এসে পাঞ্জাবি পায়জামা পড়ে আবার বের হলো তার গন্তব্য পার্টি অফিস।ওখানে গিয়ে সবাইকে পাওয়া গেলোনা। গুটিকয়েক ছেলে এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে অলস সময় পার করছে।তমালকে দেখা গেলো মিটিং রুমে চেয়ারের উপর হেলান দিয়ে বসে ঝিমুচ্ছে। শাহাদের আসার আভাস পেয়ে সবাই মোটামুটি গা ঝাড়া দিয়ে উঠলো।সবাই এসে ঝড়ো হলো মিটিং রুমে।তমালও উঠে দাঁড়ালো।শাহাদ প্রশ্ন করলো-
"সবাই কোথায়?"
তমাল উত্তর দিলো-
" স্যার আর সিনিয়র সব নেতারা নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শনে বের হয়েছেন।"
শাহাদ কিছুক্ষন টেবিলের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো। একটা ছেলেকে ডেকে পাশের দোকান থেকে সবার জন্য চা বিস্কুট আনানোর কথা বললো। তারপর সবাইকে জড়ো করে কাজে লেগে পড়লো। পোস্টার ব্যানারের ডিজাইন নিয়ে আলোচনা করলো।কোথায় কোথায় ব্যানার আর পোস্টার লাগানো হবে তার একটা সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করলো। পরে সিনিয়রদের সাথে মিটিং এ বসে চাইলে চেঞ্জও করে নিতে পারবে।নির্বাচনের বাজেটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে দলের সিনিয়ররা তাই এই বিষয়ে সে তেমন কোনো প্ল্যান করলো না। কোন এলাকায় কখন নির্বাচনী প্রচারনায় যাবে তার লিস্ট করলো।মিছিলের স্লোগান কেমন হবে তা ছেলেদেরকে নিয়ে ঠিক করলো। কোন স্লোগান কেমন লাগবে তা ছেলেরা স্লোগান প্র্যাক্টিস করেও দেখলো। এসব করে করেই শাহাদের সারাদিন পার হলো।আপাতদৃষ্টিতে কাজ খুব কম মনে হলেও তার ঠিকঠাক প্ল্যান করতে গিয়ে ঘাম বেরিয়ে গেলো।নির্বাচনের প্রচার যেমন তেমন হলে চলবে না, বিরোধী দলের সাথে টক্কর দেয়ার মতো হতে হবে।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শাহাদ অফিসেই করলো। সন্ধ্যার মধ্যে কাজ শেষ হলেও শাহাদ বাড়ি ফিরলো না,দলের ছেলেদের সাথে আড্ডায় রয়ে গেলো।বউ যেহেতু বাপের বাড়ি তাই ঘরে ফিরার বিশেষ কোনো তাড়া নেই। সারাদিনে দু একবার কুহু কল দিয়েছিলো। ব্যস্ততার কারনে বেশিক্ষন কথা বলতে পারে নি শাহাদ।আর এত এত ছেলেদের সামনে চাইলেও বউ এর সাথে কথা বলা যায় না। এইবার ফাঁকা পেয়ে পার্টি অফিসের বারান্দায় চেয়ারে বসে কুহুকে কল দিলো।ওপাশ থেকে ভেসে এলো কুহুর উচ্ছ্বসিত কন্ঠ।বুঝাই যাচ্ছে বাপের বাড়িতে খুব আনন্দেই আছে কুহু।তবে কুহুর আনন্দে শাহাদ আনন্দিত হলো না।তার বউ তাকে ছাড়া আনন্দে আছে বিষয়টা তার জন্য তেমন আনন্দের না। সে মলিন কন্ঠে প্রশ্ন করলো-
"কি করছো?"
কুহু সরব কন্ঠে বললো-
"আচার খাচ্ছি আর আড্ডা দিচ্ছি।আমার বান্ধবি তনয়া এসেছে বাড়িতে। আজ আমরা একসাথে থাকব।"
আচার খাওয়ার দরুন কথার মাঝখানে কুহু জিভ দিয়ে "ঠা" শব্দ করলো।শাহাদ এটা শুনে নিশব্দে হাসলো। ভনিতা করে কুহুকে বললো-
"বান্ধবী নিয়ে আড্ডা দিচ্ছ? আমি ভাবছিলাম আজ রাতে আসব।"
ওপাশ থেকে নীরবতা ভেসে আসলো।আচার খাওয়ার শব্দও থেমে গেলো।বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটা দ্বিধায় পড়ে গেছে। কুহু আমতা আমতা করে বলল-
"তাহলে তনয়াকে কি করব? ও যদি রাগ করে?"
শাহাদ আবারো নিশব্দে হাসলো।বুঝলো কুহু সত্যি সত্যিই ধরে নিয়েছে যে শাহাদ যাবে।আর তাই নিয়েই সে চিন্তায় পড়ে গেছে। শাহাদের বেশ মজা লাগলো। সারাদিন তেমন কথা হয় নি। সিদ্ধান্ত নিলো আরো কিছুক্ষন সে কুহুর সাথে এরকম আলাপ চালিয়ে যাবে।আরো ভড়কে দিবে কুহুকে।
------------
আনিশা বিরক্ত মুখে খাটে পা তুলে বসে আছে। তার দৃষ্টি সামনে বসা রাহাতের দিকে। রাহাত খাতা কলম নিয়ে লিস্ট করছে। খাতায় লিখার ফাকে ফাকে ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে কিসব মনে করার চেষ্টা করছে। এখনো সে ছাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। ছাদ থেকে চোখ সরিয়ে আনিশার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
" নিউ বর্ন বেবি কি লাইটিং জুতা পছন্দ করবে? শুনেছি লাইটিং জুতায় বাশির সাউন্ড থাকে। এই সাউন্ডে ভয় পেয়ে যদি কান্না শুরু করে দেয়।"
চরম বিরক্তিতে আনিশা অন্য দিকে মুখ করে শ্বাস ফেললো। ঘন্টা খানেক ধরে সে রাহাতের এসব সহ্য করছে৷ অনাগত বাচ্চার কি কি লাগবে এসব নিয়ে রাহাত লিস্ট করতে বসেছে। আনিশাকে সে কোথাও যেতে দিচ্ছে না। তার কথা হচ্ছে বাবা মা দুজনকেই একসাথে আলোচনা করে লিস্ট করতে হবে তাই আনিশাকে অবশ্যই থাকতে হবে। আনিশা মুখ ঘুরিয়ে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল-
"নিউ বর্ন বেবি হাটতেই তো পারবে না তাহলে জুতার শব্দ কিভাবে হবে? লাইটিং জুতায় হাটলেই একমাত্র শব্দ হয়।"
রাহাত মাথা নেড়ে বললো-
"হ্যা, ঠিক ঠিক।ব্যাপারটা মাথায় ই আসে নি।আচ্ছা তাহলে লাইটিং জুতা কনফার্ম।কিন্তু কোন রঙের লাইটটা ভালো হবে?"
আনিশার বিরক্তির বাঁধ ভেঙে গেলো।রাহাতের হাত থেকে খাতাটা কেড়ে নিয়ে বিছানার এক পাশে ছুড়ে ফেললো। রেগে গিয়ে বললো-
"যথেষ্ট সহ্য করেছি,আর না। "
রাহাত স্বাভাবিকভাবেই খাতাটা আবার নিজের কাছে নিয়ে আসলো।আনিশার ব্যবহারে বিশেষ কিছু মনে করলো না সে।এই সময়ে মেয়েদের মেজাজ চরমে থাকে।স্বামী হয়ে যায় দুচোখের বিষ।আবার মাঝে মাঝে সেই স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরেই আহ্লাদে আটখানা হয় ।এই সময় প্রচুর মুড সুয়িং হবে আনিশার। রাহাত সেই অনুযায়ী মানসিকভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছে।খাতা টা কোলের উপর রেখে আনিশার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
"দোলনা কেমন কিনব?কাঠের দোলনাই তো ভালো হবে নাকি?"
তারপর কি একটা ভেবে চোখ বড় বড় করে আনিশার দিকে তাকিয়ে বলল-
"যদি আমাদের টুইন বেবি হয় তবে? তবে তো দুটো দোলনা লাগবে।"
আনিশা হতাশ শ্বাস ফেললো। মাত্র দুদিন হলো প্রেগন্যান্সির খবর হয়েছে এখনি টুইন বেবি হবে কিনা তার খবর কেমনে জানবে সে? রাহাত খাতাটা রেখে ঝুকে আনিশার পেটে কান রাখলো তারপর আনিশার দিকে তাকিয়ে বলল-
"এই, বাবু তো পেটের ভিতর নড়াচড়া করছে!!"
তারপর আবার মাথা রাখলো আনিশার পেটে৷ আনিশা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।। রাহাতের পাগলামি তো বেড়ে যাচ্ছে। প্রেগন্যান্সির খবর পাওয়ার পর থেকে রাহাত বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।সে ঘোষণা দিয়েছে বাচ্চা জন্মানো পর্যন্ত এমনকি বাচ্চা জন্মানোর পরেও সে আর বাড়ির বাইরে যাবে না। সে বউ বাচ্চার সেবা করবে। তারই প্রমানস্বরূপ সে দুদিন যাবত বাড়িতে খুটি গেড়ে বসে আছে। এই দুদিনেই আনিশা হাঁপিয়ে উঠেছে। রাহাত এমন সব কান্ড কারখানা শুরু করেছে যে আনিশা বিছানা থেকে নামলেও রাহাতের অনুমতি নিতে হয়। একটু একটু পর সে ডাক্তারকে কল করে বিরক্ত করে। আনিশা বিরক্ত হচ্ছে কিন্তু স্বামীর এই অতিরিক্ত ভালোবাসা আবার তার ভালোও লাগছে। সে রাহাতের মাথা আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো। রাহাত এখনো মনোযোগ সহকারে আনিশার পেটের উপর মাথা দিয়ে আছে। সে ব্যস্ত হয়ে আনিশাকে বললো-
" বাবু কিক দেয় না কেন? কিক কখন দিবে?"
-------------
দুদিন যেতেই শাহাদ গিয়ে উপস্থিত হলো কুহুদের বাড়িতে। উদ্দেশ্য কুহুকে সাথে করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া। সোফায় বসে নিচের দিকে তাকিয়ে সে বিনয়ের সাথে কয়েক রকমের অযুহাত দেখালো কুহুকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে। সামনে নির্বাচন, তাই বাড়ির বউ হিসেবে কুহুর থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখা করে বুঝালো। মোয়াজ্জেম সাহেব মেয়ে জামাইয়ের অযুহাত শুনে মৃদু হেসে বললেন-
" তা তো নিয়ে যাবেই। কিন্তু দুপুরের খাবার খেয়ে তারপর যাও।"
কুহু আড়াল থেকে বেশ কয়েকবার উঁকি মেরে গেলো। প্রতিবারই শাহাদের চোখে চোখ পড়লো। কুহুকে দেখে শাহাদের অস্থিরতা বেড়ে গেলো। কিন্তু মোয়াজ্জেম সাহেব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। এর মাঝে উঠেও আসা যাচ্ছে না। এক পর্যায়ে মোয়াজ্জেম সাহেব তাকে বিশ্রাম নেয়ার জন্য ঘরে যেতে বললেন। শাহাদ দেরি না করে কুহুর ঘরে চলে আসলো। ঘরে এসে চারদিক দেখে হতাশ হয়ে ছোট নিশ্বাস ফেললো।কুহু ঘরে নেই।ঘর ফাঁকা। ইডিয়ট মেয়ে!! স্বামী ঘরে আসবে নিশ্চিত জেনেও এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন ওর দেখা পেতে আর কতকাল অপেক্ষা করতে কে জানে। শাহাদ শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে দিলো। অপেক্ষা করতে করতে গরম লাগছে। কুহুকে কল যে দিবে তার জো নেই কুহু বিছানার উপর ফোন রেখে গেছে। অপেক্ষার এক পর্যায়ে দেখা মিললো কুহুর। হাতে করে খাবারের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। শাহাদ খাটে হেলান দিয়ে বিছানায় বসে ছিলো কুহুকে দেখে সোজা হয়ে বসলো। গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করলো-
"এতক্ষন লাগে ঘরে আসতে? আমি কয়েক ঘন্টা যাবত একা বসে আছি।"
কুহু বেড সাইড টেবিলে ট্রে রাখতে রাখতে বিস্ময় নিয়ে বললো-
"কয়েক ঘন্টা কখন হলো? আপনি এই ঘরে এসেছেন ৭-৮ মিনিট হবে।"
শাহাদ কুহুর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে বসিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। কুহুর চুলে মুখ গুজে বড় বড় নিশ্বাস টেনে বললো-
"পরের বার চুলের শ্যাম্পু বাড়িতে রেখে আসবে। তোমার চুলের ঘ্রান না পেলে ঘুম আসে না।"
কুহু ঘাড় বেকিয়ে শাহাদের দিকে তাকিয়ে রম্য কন্ঠে বললো-
" শ্যাম্পু রেখে আসলে শ্যাম্পু পাশে নিয়ে ঘুমাতেন।"
"হুম্মম্ম।"
কুহু হো হো করে হেসে উঠলো যেন শাহাদ খুব একটা মজার কথা বলেছে।হাসতে হাসতে শাহাদের বাহুতে লুটিয়ে পড়লো। শাহাদ কুহুকে নিজের বাহুতে সামলে নিয়ে কুহুর হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মিষ্টি করে হাসলো।
---------
হিশাম গম্ভীর হয়ে ডায়নিং টেবিলের চেয়ারে বসে আছে। তার ভ্রু কুচকানো। তৃপ্তি টেবিলে খাবারের বাটিগুলো রাখতে রাখতে স্বামীর দিকে তাকালো। গত কয়েকদিন যাবত বাড়ির অবস্থা থমথমে হয়ে আছে। দুই ভাইয়ের মাঝে দেয়াল উঠেছে। হাসিব পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে হিশামের কাছ থেকে। মঞ্জুরা বেগম তসবি হাতে নিয়ে মুখ নাড়তে নাড়তে চেয়ার টেনে বসলেন। টেবিলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখলেন সব ঠিকঠাক আছে কিনা। মাকে দেখে হিশাম প্রশ্ন করলো-
"তোমার ছোট ছেলে কি সন্নাস গ্রহন করেছে?"
মঞ্জুরা বেগম অবাক হয়ে বললেন-
"ওমা তা কেন হবে?"
"তাহলে সে ঘরবন্দী হয়ে আছে কেন?"
" তোর ভয়ে সে নিচে আসছে না।তোকে অনেক মানে।"
হিশাম রাগে কিড়মিড়িয়ে উঠলো -
"হুম্মম্মম। খুব মানে, খুব ভয় পায়। আমার মান সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দেয়ার আগে এই ভয় কই ছিলো? "
মঞ্জুরা বেগম আমতা আমতা করতে লাগলেন।হিশাম বললো-
"যাও, তোমার ছোট ছেলেকে নিয়ে এসো।একসাথে বসে খাব। যে কয়দিন বাড়িতে আছে একসাথেই সবার সাথে বসে খাবে।"
মঞ্জুরা বেগমের মুখটা কাল হয়ে গেলো। শুকনো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো -
"যে কয়দিন মানে?"
"ওকে আমি হলে পাঠিয়ে দিব।এই বাড়িতে থাকলে সে এরকম আরো কিছু করবে।এখন যাও ওকে নিয়ে এসো।"
তৃপ্তি বললো-
"আমি ওকে ডেকে নিয়ে আসছি।"
মঞ্জুরা বেগম খেক খেক উঠলেন-
"তোমার যেতে হবে না।আমার ছেলে আমার ডাক ছাড়া অন্য কারো ডাকে আসবে না। তোমার জন্যই তো সব হচ্ছে। আমার সংসারটা তো ধ্বংস করে দিলে।"
মঞ্জুরা বেগম উঠে চলে গেলেন হাসিবকে আনতে।তৃপ্তি অবাক চোখে একবার মঞ্জুরা বেগমের দিকে আরেকবার হিশামের দিকে তাকালো। প্রশ্ন করলো-
"এইখানে আমার কি দোষ? "
হিশাম উত্তর দিলো না। প্রসংগ এড়ানোর জন্য সে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেতে লাগলো। মা বউ এর মাঝখানে সে আপাতত আসতে চায় না। তৃপ্তি রাগী দৃষ্টিতে হিশামের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। তারপর শব্দ করে তরকারির বাটি টেবিলে রেখে চলে গেলো। হিশাম ছোট একটা শ্বাস ফেললো।সবকিছুই কেমন হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
হাসিব মাথা নিচু করে মায়ের সাথে চেয়ারে এসে বসলো। এই কদিন সে নিজের ঘরে খেয়েছে। আজকে অনিচ্ছা স্বত্তেও বাইরে আসতে হলো। সে গুটিসুটি মেরে বসে রইলো। হিশাম কিছুক্ষন ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো-
" আর কখনো এই ধরনের কোনো কাজ করার সাহস দেখাবি না। শাহাদ সম্মানীত বাড়ির ছেলে, পুলিশ কেস করেনি তাই এই বাড়ির কিছুটা সম্মান এখনো অক্ষত রয়েছে।"
মঞ্জুরা বেগম মুখ মুচড়ে বললে -
"খু*নির আবার সম্মান। আমার দুধের ছেলেটা না বুঝে এসব করেছে। তুই ওর উপর রাগ করিস না।নিশ্চয়ই কেউ ওকে ইন্ধন দিয়েছে।"
হিশাম বিরক্তি নিয়ে বললো-
"ছেলের তাবেদারি করা বন্ধ করো মা। ওর হাড্ডি মাংস এখনো আমি আলাদা করি নি তার মানে এই না সে শাস্তি পাবে না। ও আর একদিন পরেই হলে ফিরে যাবে। আর কোনো ধরনের কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে সে নাক গলাবে না।"
তারপর হাসিবের দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বললো-
"পড়াশোনা করতে দিয়েছি পড়াশোনা করবি।ব্যস।বুঝেছিস?"
হাসিব নিচ দিকে মাথা দিয়ে শক্ত হয়ে বসে রইলো। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে তার এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। হিশাম ঘর কাঁপিয়ে ধমক দিয়ে উঠলো-
"বল, বুঝেছিস?"
মঞ্জুরা আর হাসিব দুজনেই কেপে উঠলো। রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কথা শুনতে থাকা তৃপ্তিও আতকে উঠলো। ডায়নিং টেবিলে খাবার সার্ভ করতে আসা কাজের লোকগুলো কয়েক পা পিছিয়ে গেলো। হাসিব মাথা নিচ দিকে দিয়েই বসে রইলো। হিশামের চিৎকারে ভয়ে তার অন্তরাত্না কেঁপে উঠেছে। চোখে খানিকটা পানিও চলে এসেছে। মঞ্জুরা বেগম তাড়াতাড়ি ছোট ছেলের বাহুতে স্পর্শ করে উত্তর দেয়ার জন্য তাড়া দিলেন। হাসিব নিচের দিকে তাকিয়ে কম্পমান গলায় বলল-
"বুঝেছি।"
হিশাম স্বাভাবিক হলো। পাঞ্জাবির হাতাটা একটু উপরে তুলে নিজ হাতে হাসিবের প্লেটে ভাত দিলো। তারপর হাসিবের প্রিয় একটা আইটেম যত্ন সহকারে প্লেটে তুলে দিয়ে বলল-
"খা।"
তৃপ্তি এগিয়ে এসে স্বামী আর শ্বাশুড়িকে খাবার বেড়ে দিলো। হাসিব মাথা নিচে করে ভাতের প্লেটের দিকে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করলো। চোখ থেকে দু ফোটা পানি ভাতের প্লেটে পড়লো। হিশামের কাছ থেকে চোখের পানি আড়াল করতে সে আর ঝুঁকে পড়লো ভাতের প্লেটের দিকে। । ভাইয়ের প্রতি তার রাগ নেই। বরং নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত সে।
চলবে
0 Comments:
Post a Comment