#এক_তুমিতেই_আসক্ত
#আয়ান_মাহমুদ
|২৬|
ক্যাম্পাসের ক্লাসরুমে সেদিন একটু অন্যরকম গতি। তাসনিম বলেই ফেলল,
— "তন্নীকে নিয়ে এত চাপ! চল, একটা রিফ্রেশমেন্ট দরকার আমাদের। ট্রিপে যাওয়া হোক!"
তিহান তৎক্ষণাৎ বলে ওঠে,
— "পোর্তো? উইকেন্ডে ছোট্ট একটা রোড ট্রিপ করে আসা যায়। রিভারসাইড, হ্যারিটেজ এলাকা, পুরনো সড়ক আর সানসেট!"
তুর্য তখন চুপ। তন্নীর দিকে তাকিয়ে শুধুই বলল,
— "তুই যাবি?"
তন্নীর চোখে লুকানো হাসি, মাথা হালকা নেড়ে সম্মতি।
বাকিটা ইতিহাস!
---
সাদা মাইক্রোবাসে বসে তাসনিম বাজিয়ে দেয় সেলিন ডিওনের “Taking Chances”.
রাস্তায় চুপচাপ বসে তুর্য, তন্নী জানালার দিকে তাকিয়ে। মাঝেমাঝে তাসনিম আর তিহান তর্কে জড়িয়ে পড়ে। রাফায়েল ড্রাইভ করছে, হালকা গলায় গুনগুন।
তুর্য হঠাৎ বলে,
— “তোর গান শুনতে ইচ্ছা করে। লাইভ।”
তন্নী হেসে চোখে চোখ রাখে।
— “আমি তো গাই না।”
— “তবু, একদিন শুনতে চাই।”
এই ছোট ছোট বাক্যগুলোতেই যেন জমে থাকা অনুভবের জাল বোনা হচ্ছিল।
---
পোর্তো শহর তাদের স্বাগত জানাল পুরনো ছাদ আর কাচের জানালাওয়ালা ঘর দিয়ে। লাল ইঁটের পথ, রেলিং দিয়ে সাজানো রিভার সাইড আর দূরের পাহাড়ঘেরা আকাশ।
তাসনিম সেলফি নিতে ব্যস্ত, তিহান জোর করে রাফায়েলের হাত ধরে পোজ দিতে বাধ্য করল।
তুর্য তন্নীর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
— “এই শহরটা কেমন যেন চুপচাপ, অথচ বলে অনেক কিছু।”
তন্নী বলে,
— “তুইও তো এমন। চুপচাপ, কিন্তু ভেতরে অনেক কিছু।”
তুর্য তার দিকে তাকিয়ে থাকে একটুক্ষণ। কিছু বলে না। কিন্তু ওর চোখে যেন কিছু বলার ইচ্ছে ফোটে।
---
রাতের পোর্তো অন্যরকম। নদীটার পাশ ঘেঁষে হালকা বাতাস। রঙিন আলোয় আলোকিত ঘাট।
তুর্য আর তন্নী হাঁটছে দূরে একসাথে। বাকিরা পেছনে।
হঠাৎ হালকা ঠান্ডা বাতাসে তন্নীর চুল এলোমেলো হয়ে যায়। তুর্য নিজের হাত দিয়ে ওর চুল গুছিয়ে দেয়।
তন্নী হেসে বলে,
— “এটা তো সিনেমার সিন!”
তুর্য হেসে ফেলে, তারপর বলে,
— “তুই তো আমার সিনেমার নায়িকা।”
তন্নী চুপ করে থাকে, কিন্তু ওর হাতটা আর পেছনে থাকে না। তুর্যর হাত ধরা হয় হালকাভাবে—নীরবে।
---
ছোট্ট রেস্টুরেন্ট। চারদিকে হালকা হলুদ আলো। গিটারিস্ট স্প্যানিশ ফ্লেমিঙ্গো বাজাচ্ছে।
তাসনিম রঙিন ড্রেসে দুলে ওঠে। তিহান বলে,
— “তাসনিম, এবার তুই গান গা।”
তাসনিম মাইক হাতে নেয়। শুরু করে রবীন্দ্রসংগীত—
“এত যে তব কাছে আমি,
কাছে যে তব থাকি—
তবু কেন জানি মনে হয়,
দূরে কোথাও থাকি…”
তুর্য তন্নীর দিকে তাকায়। ওর চোখে জল চিকচিক করছে। তুর্য আস্তে বলে,
— “তোর চোখেই তো আমার বাড়ি।”
তন্নী কিছু বলে না। শুধু একফোঁটা নীরবতা জমে থাকে গালের পাশে।
---
হোটেলের ছাদে সবাই জড়ো হয় শেষে। তারার নিচে চারপাশে নিঃস্তব্ধতা।
তাসনিম বলল,
— “আজকের রাতটা আমি সারাজীবন মনে রাখব। এই শহর, এই বন্ধুত্ব, এই অনুভব।”
তিহান বলল,
— “ভালোবাসা একরকম না। কোনোটা চুপচাপ, কোনোটা ঝড়ের মতো। আমরা শুধু ঠিক মানুষটার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি।”
তুর্য তন্নীর দিকে তাকিয়ে বলল,
— “তুই পাশে থাকলেই সব সহজ হয়ে যায়।”
তন্নী কিছু বলে না। ও শুধু তুর্যর পাশে দাঁড়িয়ে থাকে—হাত ছুঁয়ে, চুপচাপ।
---
0 Comments:
Post a Comment