গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ৪৭

 #টক_ঝাল_মিষ্টি 

#তামান্না_আঁখি 

#পর্ব-৪৭


গাড়ি চালানো শিখার ব্যাপারে শর্ত দেয়া থাকলেও কুহু সেই শর্তের তোয়াক্কা করলো না। সে ঠিকই গাড়ি চালানো শিখার ৪-৫ দিনের মধ্যে রাস্তায় উঠে পড়লো গাড়ি নিয়ে। এই কথা শাহাদের কাছে গোপন থাকলো না। কারন কুহুর পিছনে সে লোক লাগিয়ে রেখেছে। কুহু যেখানেই যায় সেখানেই দুজন তাকে ফলো করে।একজন একটা গাড়ি নিয়ে আরেকজন একটা  বাইক নিয়ে। তাই শাহাদ সব জেনেও চুপ থাকলো। যেহেতু নিজে কুহুকে সময় দিতে পারছে না তাই সে কুহুকে নিজের মতো করে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিলো। 


কুহু প্রথম প্রথম বেশ লাফালাফি করলো।নিজে গাড়ি চালিয়ে ভার্সিটি গেলো।সেখানে গিয়ে তার সে কি ভাব! কুহুকে গাড়ি চালাতে দেখে তনয়ার চোখ কপালে উঠে গেলো। সে এই ঘটনা বিশ্বাসই করতে পারলো না। কুহু তাকে নিয়ে গাড়িতে চড়তে চাইলে সে কিছুতেই গাড়িতে উঠবে না। কুহু টানাটানি করে তাকে গাড়িতে তুললো।গাড়িতে উঠে তনয়া ভয়ে আধমরা হয়ে রইলো। কাঁপা কন্ঠে বললো- 


"আল্লাহর দোহায় লাগে কুহু!!গাড়ি থামা।এই বয়সে আমি জান টা খোয়াতে চাই না।"


কুহু তনয়ার কথায় ড্যাম কেয়ার ভাব দেখিয়ে বলল- 


"আরে চুপ করে বস তো। জান খোয়াবি না।অনেক আস্তে চালাচ্ছি।"


তনয়া সিটবেল্টটা আকড়ে ধরে বসে রইলো। তনয়াকে এমন ভয়ে কুকড়ে থাকতে দেখে কুহুর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।সে একটা ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে ফুল স্পিডে টান দিলো। তনয়া গলা ছেড়ে চিৎকার  দিলো। কুহু তনয়ার চিৎকার পাত্তা দিলো না।সে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে। তনয়ার ভয়ে দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা।শেষে কুহুর হাতেপায়ে ধরে সে এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পেলো।কুহু শেষমেশ গাড়ি থামালো। গাড়ি থামানো মাত্র তনয়া গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে গেলো। কুহু এত করে বললো ওকে বাড়িতে পৌছে দিবে তাও সে রাজি হলো না। বললো-


" তোর সাথে গাড়িতে যাওয়ার থেকে লোকাল বাসে ঝুলে ঝুলে যাওয়া ভালো।"


বান্ধবীর এমন কথায় কুহু মন খারাপ করলো।কি এমন করেছে সে?একটু মজাই তো করতে চেয়েছিলো। একদিকে স্বামীর দেখাই পাওয়া যায় না আরেকদিকে বান্ধবী মন বুঝে না। সে মন খারাপ করে গাড়ি নিয়ে সোজা শাহাদের পার্টি অফিসের সামনে উপস্থিত হলো।সে নিজে গাড়ির ভেতর থেকে পার্টি অফিসকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে একটা সেল্ফি তুলে শাহাদকে পাঠালো।কিন্তু দশ মিনিটেও রিপ্লাই আসা তো দূরের কথা সেই ছবি শাহাদ দেখলোও না। কুহু গাড়ির কাচ নামিয়ে গেটের দিকে তাকালো। অনেক ছেলেদের আসা যাওয়া হচ্ছে। গেটের কাছে বাইকগুলোর উপর কয়েকটা ছেলে বসে চা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। কুহু হর্ন বাজিয়ে ছেলেগুলোর দৃষ্টি আকর্ষন করলো। ছেলেগুলো তাকালে সে ইশারা দিয়ে ডাকলো। একটা ছেলে এগিয়ে আসলো।কুহু মৃদু কন্ঠে বললো- 


"শাহাদ খান কি ভিতরে আছেন? উনাকে গিয়ে বলবেন যে কুহু নামের একজন উনার জন্য অপেক্ষা করছে। "


ছেলেটা কুহুর বার্তা নিয়ে পার্টি অফিসের ভেতরে গেলো।এর কিছুক্ষন পরেই শাহাদকে দ্রুত পায়ে হেটে আসতে দেখা গেলো। গাড়ির কাছে আসতে আসতে সে নিচু হয়ে ঘাড় বাকিয়ে উইন্ডশিল্ডের ভেতর দিয়ে কুহুকে দেখার চেষ্টা করলো। চোখে চোখ পড়লে সুন্দর করে হাসলো। এই হাসি দেখে কুহুর প্রচন্ড রাগ হলো।নিজের উপর রাগ। ভেবেছিলো রাগ করে মুখ ফুলিয়ে রাখবে কিন্তু এত সুন্দর হাসি দেখে রাগ কোথায় যেন উবে গেছে। চেষ্টা করেও রাগ করতে পারছে না।


শাহাদ গাড়ির দরজা খুল প্যাসেঞ্জার সিটে কুহুর পাশে বসলো। গাড়ির আশেপাশে তাকিয়ে বলল- 


"তো খুব ড্রাইভিং করা হচ্ছে তাই তো?"


কুহু স্টিয়ারিং এ হাত রেখে বললো-

" এ ছাড়া তো আর কিছু করার নেই। আমি তো এখন পুরনো হয়ে গেছি। তাই এখন আর গুরুত্ব নেই।"


শাহাদ কুহুর অভিমান বুঝে হাসলো। কুহুর ফোলা গালে আলতো করে টোকা দিলো। তার রাগিনী যে একটু আগে হাই স্পিডে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে রেস করেছে সেটা তার কানে এসেছে। রাগিনীকে ঠান্ডা করতে বললো-


" তাহলে বলো গুরুত্ব দিতে হলে কি করতে হবে?"


"লং ড্রাইভে যেতে হবে এখন আমার সাথে। শুধু এখন না, যখন চাইব তখনই।"


শাহাদ ঠোঁট কামড়ালো। যেভাবে কাজের চাপ পড়েছে  এর মাঝে বউকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাওয়ার মতো ফুরসত তার নেই।তাও সে কুহুকে রাজি করার জন্য বললো-

"ঠিক আছে।"


কুহু খু্‌শি হয়ে তৎক্ষনাৎ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল- 

" চলেন তাহলে এক্ষনি লং ড্রাইভে যাই।"


শাহাদ না করতে চেয়েও পারলো না।সে মিটিং এর মাঝখান থেকে উঠে এসেছে। ভেবেছিলো দশ মিনিটে কুহুকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু সেটা আর হলো না। 


কুহু গাড়ি চালিয়ে শাহাদকে নিয়ে নদীর পাড়ের রাস্তায় চলে এলো।  রাস্তা ফাকা পেয়ে গাড়ির ছাদ খুলে দিলো। বাতাসে তার চুল উড়ছে। গলায় ঝুলানো স্কার্ফটাও হালকা উড়ছে। শাহাদ মুগ্ধ চোখে তাকালো কুহুর দিকে। ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে যে কাজ সে করতে পারেনি সেটা কুহু করেছে। অথচ কুহুকে এরকম একটা রোমান্টিক মুহুর্ত দেয়াটা শাহাদের দায়িত্ব ছিলো। শাহাদ মৃদু হেসে কুহুর দিকে তাকিয়ে রইলো।কুহু  কথা বলছে।এক মিনিটের জন্যও মুখ বন্ধ করছে না। বোঝাই যাচ্ছে শাহাদকে বলার জন্য তার অনেক কথা জমে ছিলো।শাহাদ মনোযোগ দিয়ে সেসব শোনার চেষ্টা করলো। কিন্তু সেসবের কিছুই তার কানে ঢুকলো না। সে কুহুর চুলের মিষ্টি ঘ্রাণে বুঁদ হয়ে রইলো। লম্বা করে শ্বাস টানলো।  আবিষ্টের মতো তাকিয়ে রইলো কুহুর দিকে। মেয়েটা একটু অস্থির স্বভাবের,কিছু কিছু সময়ে ইম্মেচিউর কার্যকলাপ করে। তবে তার সরলতার মিশেলে নিষ্পাপ মনটা শাহাদকে বারবার তাকে ভালবাসতে বাধ্য করে। যদি সে পারতো তবে সব কাজবাজ ফেলে এই মেয়েটিকে নিয়ে দূরে কোথাও গিয়ে সংসার পাততো।


-----------


হাসিব অস্থির হয়ে নখ কামড়াচ্ছে। তার অস্থিরতা ক্রমেই আতংকে রূপ নিচ্ছে। এই প্রথম সে তাদের অফিসে এসেছে। অফিসের কিছুই সে জানেনা। তাও সে সব কিছু শিখে নিবে সেই আশা নিয়ে এসেছিলো।কিন্তু এখানে এসে যা দেখলো তাতে তার আশার প্রদীপ নিভে গেছে। নাইমুর আর মনসুর আলী অফিস দখল করেছে। হিশাম যেই চেম্বারে বসতো সেখানে আসন গেড়েছে দুজন। অফিসের একাউন্ট বোধ হয় ইতোমধ্যে খালি করে ফেলেছে। বাকি রইলো অফিসটা সেটাও কি নিলামে তুলবে? এরপর কি করবে? ওদের বাড়িটা দখল করবে? কেউ কি থাকবে না এসব দেখার? ওর বড় ভাই না থাকার সুযোগ নিবে ওরা?


হাসিব এক মুহুর্তের জন্য চিন্তাভাবনা থামিয়ে দিলো। বড় ভাইয়ের কথা মনে আসতেই মনে পড়লো শাহাদের কথা। শাহাদ কথা দিয়েছিলো ওকে বিপদে পড়লে যেকোনো সময় সাহায্য করবে। হাসিব মোবাইল ঘেটে শাহাদের নাম্বারটা বের করলো। ডায়াল করতে গিয়ে সে বারবার থেমে গেলো।তার মা যেভাবে শাহাদকে অপমান করেছে এরপরেও কি শাহাদ আসবে সাহায্য করতে? হাসিব নিজের ভাবনাকে দমিয়ে দিলো। জোর করে চিন্তা করলো শাহাদ তাকে সাহায্য করবে।অবশ্যই করবে। সে কাঁপা কাঁপা হাতে শাহাদের নাম্বারে ডায়াল করলো।


কল পেয়ে শাহাদ তৎক্ষনাৎ একটা ক্যাফে তে হাসিবের সাথে দেখা করলো। হাসিব তখনও মাথা নিচু করে বসে আছে। শাহাদ হাসিবের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো। ছেলেটার আগের সেই সুন্দর চেহারাটা আর নেই। শুকিয়ে গেছে অনেক।চোখের নিচে কালি পড়েছে। চোখ মুখ জুড়ে বেদনার ছাপ।চোখগুলো ফোলা ফোলা। কান্না করে হয়তো।শাহাদ হাসিবের জন্য বুকের ভেতর খুব মমতা অনুভব করলো।ওর একটা ছোট ভাই থাকলে হয়তো হাসিবের বয়সীই হতো। শাহাদ যথাসম্ভব ভরসার কন্ঠে বললো- 


"কোনো সমস্যা হয়েছে?'


হাসিব মুখ তুললো। ঢোক গিলে ক্লান্ত গলায় বলল- 


" আমাদের ব্যবসাটা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। মনসুর আলী আর নাইমুর আজ অফিসে এসেছিলো।"


শাহাদ শান্তমুখে সব শুনলো। বললো-


" শুধু তোমাদের ব্যবসাই না তোমাদের বাড়ি নিলামে তোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।"


হাসিব আতংকিত চোখে তাকালো তবে অবাক হতে হলো না। সে এরকমটাই আশা করছিলো। বললো-


" কিন্তু সব তো মায়ের নামে। মা যদি রাজি না হয় এসবে।"


"তাতে কিছুই যায় আসে না। ওরা জোর করে হলেও সব লিখিয়ে নিবে। কারন তোমাদের ব্যাংক ব্যালেন্স কিছুই নেই। ওরা হিশাম ভাইয়ের সাইন নকল করে সব টাকা তুলে নিয়েছে।"


হাসিব অসহায় কন্ঠে বললো- 

"তাহলে ভাইয়ার চিকিৎসা কিভাবে হবে? ভাইয়ার জন্য প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়।"


"ঠিক সেজন্যই তোমার মা বাড়ি নিলামে তুলতে রাজি হবে। ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করার জন্য তোমার মা বাড়ি নিলামে তুলবে। আর তারা সবটা টাকা হাতিয়ে নিবে জোর করে।আর অন্যদিকে কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেলে লোন দেয়া ব্যংকগুলো তা দখল করবে।"


হাসিব দুহাত দিয়ে মুখ ঘষলো। চিন্তায় তার মুখটা  আরো শুকিয়ে গেলো।নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে ধরা গলায় বলল- 

"ওরা কেন এমন করছে আমাদের সাথে।আমরা তো ওদের কোনো ক্ষতি করি নি।"


" করো নি। কিন্তু ওদের চাই ক্ষমতা আর টাকা। তোমাদের পরিবারকে ধ্বংস করে মনসুর আলী রাজনৈতিক দলটা দখল করবে।সে আর নাইমুর মিলে সব টাকা পয়সা ভাগ করে নিবে।"


হাসিব কিছু না বলে শান্ত হয়ে বসে রইলো। তার ভাইয়ের চিকিৎসা না হলে মা*রা যাবে হিশাম। সেই সাথে সমস্ত কিছু হারাবে তার পরিবার ।তার মা ভাবি সাথে ভাইয়ের সন্তান ওরা এসব সহ্য করতে পারবে তো?সে নিজেও কি সহ্য করতে পারবে?নিজেকে শক্ত করে দায়িত্ব নিতে পারবে ওদের? হাসিবের হাত কাঁপতে লাগলো। নিজেকে এই পৃথিবীতে একা এবং অসহায় হিসেবে আবিষ্কার করলো সে।


শাহাদ হাসিবের অবস্থা বুঝলো। টেবিলের উপর রাখা হাসিবের হাতের উপর হাত রেখে বললো-

"তুমি আমাকে কতটা বিশ্বাস করো হাসিব?"


হাসিব দ্বিধা নিয়ে তাকালো শাহাদের দিকে। শাহাদ আবারো বললো-

"তোমার ভাই আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতো। তাই সে আমার বাবাকে বাচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে এসেছিল। সে যখন গাড়ি নিয়ে ব্রিজ থেকে নিচে পড়ছিলো আমার ধারণা  তার মনে এই বিশ্বাস ছিলো যে আমি তাকে বাঁচাব। অন্তত বাঁচানোর চেষ্টা করব। কিংবা তার কিছু হলে তার পরিবারটাকে আমি দেখব।"


হাসিব কেঁদে ফেললো ভাইয়ের এক্সিডেন্টের কথা মনে  করে। শাহাদের হাতটা আকড়ে ধরে বলল- 

" আমি আপনাকে বিশ্বাস করি। আমার ভাইকে বাঁচান,আমার পরিবারটাকে বাঁচান।"


" বাঁচাব।তবে তার আগে তোমার সাহায্য দরকার আমার।"


"কি সাহায্য?"


শাহাদ কিছুক্ষন গম্ভীর মুখে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো।হাসিবকে সে বুঝাতে পারবে কিনা অথবা হাসিব বুঝবে কিনা সে জানেনা। তারপরও তাকে বলতে হবে কারন হাসিব ছাড়া এই কাজ কেউ করতে পারবে না।সে হাসিবের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল- 


" নাইমুরের ব্যাপারে হিশাম ভাইয়ের কাছে কিছু লুকানো ডকুমেন্টস আছে এইগুলো তোমাকে খুজে বের করে আনতে হবে। মনসুর আলীর অপরাধ প্রমান করা গেলেও নাইমুরের অপরাধ প্রমান  করা যাবে না।কারন সে কোনো প্রমান রাখে না। হিশাম ভাইকে যতটা চিনি সে বোকা না। সে এমনি এমনি নাইমুরের মতো সন্ত্রা*সের সাথে কাজ করবে না। নাইমুর যেন তাকে বিপদে ফেলতে না পারে এই ব্যাপারে সে নিশ্চয় আগে থেকে রেডি হয়ে ছিলো।"


হাসিব বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো- 

"নাইমুর একটা সন্ত্রা*স? ভাইয়া একটা সন্ত্রা*সের সাথে কেন হাত মিলিয়েছে?"


শাহাদ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজালো। চাইলেও সে হাসিবকে বলতে পারবে না যে হিশাম তাকে খু*ন করার জন্য নাইমুরকে ভাড়া করেছিলো।সে শুধু বললো-

"সব বলব।আগে তুমি ডকুমেন্টস গুলো খুজে আনো। এগুলো তোমাদের বাড়িতেই আছে। আর যেকোনো সমস্যায় পড়লে আমাকে না পেলে হিশাম ভাইয়ের সেক্রেটারির সাহায্য চাইবে কেমন? "


শাহাদ চলে যাওয়ার পর হাসিব অনেক ভেবেও একটা সন্ত্রা*সীর সাথে হিশামের সখ্যতার কারন খুজে পেলো না।সে তো নাইমুরকে দলীয় আরেকটা নেতা বলেই জানতো। সে আর দেরি করলো না বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। তাকে প্রথমে ডকুমেন্টস গুলো খুজতে হবে এরপর সে হিশামের সেক্রেটারিকে ধরবে এটা জানার জন্য যে কি কারনে হিশাম একটা সন্ত্রা*সীর সাথে হাত মিলালো।


----------


কুহু কুলসুমা বেগমের সামনে অপরাধী মুখে বসে আছে। ছাদে দেয়া আচার সে খেয়ে ফেলেছে। এজন্য কুলসুমা বেগম তাকে বসার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছেন। লজ্জায় কুহুর মরি মরি অবস্থা। ছাদে গিয়ে আচার দেখে সে খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে নি। আচারগুলো আনিশার জন্য বানানো হয়েছিলো। এর আগেও একবার আনিশাকে আচার পাঠানো হয়েছিলো।কুলসুমা বেগম আবারো নাতনীর জন্য আচার বানিয়ে রোদে দিয়েছেন। কুহু লোভ সামলাতে না পেরে শুধু একটুই মুখে দিয়েছিলো।এরপর কিভাবে কিভাবে যে সে পুরো বোয়াম শেষ করে ফেললো তা নিজেও জানে না। কুলসুমা বেগম মালাকে নিয়ে ছাদে এসে দেখেন কুহু কোলের উপর খালি আচারের বোয়াম রেখে মাটির উপর বসে হাতের আঙুল চাটছে।


এরপর তাকে বসার ঘরে ডেকে আনা হয়েছে। রেজিয়া সুলতানা শ্বাশুড়িকে চা দিয়ে সোফায় বসলেন।বললেন-

"মা, খামোখা মেয়েটাকে বসিয়ে রেখেছেন।আচারই তো খেয়েছে।আপনার দেয়া আচারে কি ওর অধিকার নেই।"


কুলসুমা বেগম চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন-

" অবশ্যই আছে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে এখনো ভালোভাবে আচারটা তৈরি হয় নি এর আগেই সে মুখে দিলো কেন? আচার খেতে মন চাচ্ছে ঘরে বানানো অন্য আচার খেতো।এতটা আচার খেয়ে যদি পেট খারাপ হয়।"


কুহু কিছু বললো না সে চুপ করে বসে রইলো।জয়া বেগম নাস্তা নিয়ে আসলেন।তিনি ডিমের পিঠা বানিয়েছেন।কুহুর মনটা খারাপ দেখে তিনি পিঠা ভর্তি বাটিটা কুহুর মুখের সামনে ধরে বললেন-

"এই নাও তোমার প্রিয় ডিমের পিঠা।"


ডিম আর তেলের তীব্র গন্ধে কুহুর গা গুলিয়ে উঠলো।পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো যেন ভেতরের সবকিছু উগলে আসতে চাইছে। সে দ্রুত মুখে হাত দিয়ে দৌড় দিলো ওয়াশরুমের দিকে। কুলসুমা বেগম উচুস্বরে বললেন-


"ওই দেখো, মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই অসুস্থ হয়ে গেছে।নিশ্চয়ই পেটে মোচড় দিয়েছে। এত আচার খেয়েছে তার একটা প্রতিক্রিয়া তো হবেই নাকি।"


জয়া বেগম আর রেজিয়া সুলতানা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। তারা দুজনেই ওয়াশরুমে ছুটে আসলেন। দেখলেন কুহু মুখ ভর্তি বমি করছে। দুজনেই দুদিক থেকে কুহুকে ধরলেন। কুহু বমি করা শেষ করলে হাত মুখ দুইয়ে দিলেন। রেজিয়া সুলতানা কুহুকে ঠিক হওয়ার সময় দিয়ে এরপর বললেন-


"কুহু আমি কিছু প্রশ্ন করব ঠিকঠাক সবগুলোর উত্তর দাও তো।"


জয়া বেগমও কিছু প্রশ্ন করলেন।কুহুর উত্তর শুনে দুজনই একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে রইলেন।কুহুকে এক গ্লাস লেবু পানি দিয়ে ডায়নিং এ বসিয়ে দুজনই কুলসুমা বেগমের কাছে আসলেন। সব শোনার পর কুলসুমা বেগম অস্থির হয়ে গেলেন। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডেকে এনে সন্দেহ দূর করার জন্য বললেন।


রাত দশটায় শাহাদ বাড়ি ফিরলো। ফিরতে আরো রাত হতো কিন্তু বিকাল থেকেই বাড়ির লোকজন তাকে ফোন করে বাড়িতে আসার জন্য জ্বালিয়ে মা*রছে। সেজন্য সে আজ দ্রুত বাড়ি ফিরেছে।সদর দরজা পেরিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে সবাইকে হাসি মুখে বসা দেখে শাহাদ একটু অবাকই হলো। এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলো- 

"কি হয়েছে? সবাই এত খুশি কেন?"


কুলসুমা বেগম এগাল ওগাল হেসে নাতির কাছে এসে থুতনিতে হাত রেখে চুমু খেয়ে ধরা গলায় বললেন-


" এত দিনে এই বুড়ির মনোবাসনা আল্লাহ পূরন করেছে।আল্লাহর দরবারে হাজার হাজা শুকরিয়া।"


রেজিয়া সুলতানা টেবিল থেকে মিষ্টির প্লেটটা নিয়ে এসে শাহাদের মুখে একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দিলেন। শাহাদ এত বড় মিষ্টি মুখে নিয়ে বিপাকে পড়ে গেলো।বললো-

" এই মিষ্টি কিসের জন্য? কি হয়েছে? "


রেজিয়া সুলতানা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন-

" কি হয়েছে সেটা কুহুকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর, যা।মেয়েটা অনেক্ষন যাবত তোর জন্য অপেক্ষা করছে। "


শাহাদ ভ্রু কুচকে তাকালো।আবার কি করেছে কুহু? খারাপ কিছু নিশ্চয়ই করেনি। নাহলে বাড়ির লোকজন এত খুশি থাকতো না।তাহলে কি করেছে আবার এই মেয়ে? শাহাদ দু তিনটা সিড়ি করে পেরিয়ে ঘরে চলে আসলো। ঘরে ঢুকে সে অবাকই হলো। কুহু কালো শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছে।লাজুক লতার মতো খাটের এক কোনায় শান্ত হয়ে বসে আছে। এত শান্ত তো তার থাকার কথা না। শাহাদকে দেখে যেন তার লাজুকতা আরো বাড়লো। সে ধীর পায়ে লজ্জামিশ্রিত চোখে শাহাদের চোখে চোখ রেখে তার দিকে এগিয়ে আসলো। শাহাদ স্থির হয়ে কুহুর কার্যকলাপ দেখছে। সে কিছুতেই কোনো কিছুর হিসাব মিলাতে পারছে না। মনে একটু ভয় ভয় ও লাগছে তার।


কুহু ধীর পায়ে হেঁটে শাহাদের খুব কাছে এসে দাঁড়ালো।মাথা উপরে তুলে শাহাদের চোখে চোখ রাখলো।শাহাদের পাঞ্জাবি থেকে ঘাম মিশ্রিত পারফিউমের গন্ধে তার গা গুলিয়ে আসছে। কিন্তু সে সহ্য করে নিলো। এই রোমান্টিক মুহুর্তটা সে নষ্ট করতে চায় না।


শাহাদ কুহুর আগুন ঝরা রূপে মোহিত হলো।কুহুর কোমড়ে হাত রেখে কুহুকে নিজের কাছে টেনে আনলো। কুহুর কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে গাঢ় কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো- 

"কি হয়েছে, হুম? সবাই এত খুশি কি নিয়ে?"


কুহু পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে উচু হয়ে শাহাদের গালে আলতো চুমু খেলো। এরপর শাহাদের দিকে তাকালো। খুশির খবরটা দেয়ার সময় সে শাহাদের মুখ দেখতে চায়।তাই শাহাদের চোখে চোখ রেখে বলল- -

"আপনি বাবা হতে চলেছেন।"


শাহাদ থ হয়ে গেলো। বার কয়েক চোখ পিট পিট করলো। তার শান্ত চোখেমুখে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়লো।দুহাতের আজলায় কুহুর মুখ ধরে কাঁপা কন্ঠে বললো- 

"স-সত্যি?"


কুহু তার গালে রাখা শাহাদের হাতের উপর নিজের হাত রেখে অশ্রুসজল চোখে মাথা নাড়লো। মুখে বললো-

" সত্যি।"


শাহাদের চোখ পানি চিক চিক করে উঠলো।সে কুহুকে বুকে চেপে ধরলো।এত জোরে চেপে ধরলো যে কুহুর দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা।এতক্ষন সে শাহাদের গায়ের পারফিউম মিশ্রিত ঘামের গন্ধ সহ্য করে নিলেও এখন আর পারলো না।সে হড়হড় করে শাহাদের গায়ে বমি করে দিলো।


চলবে

0 Comments:

Post a Comment