গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ৪৬
#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৪৬
আশফাক খানকে নিয়ে উল্লাস করতে করতে বিশাল মিছিল খান বাড়িতে প্রবেশ করলো। আশফাক খান সহ কিছু সিনিয়র নেতা গাড়ি থেকে নেমে সদর দরজার কাছে দাঁড়ালো। সেখানে বরন করার জন্য কুলসুমা বেগম আর বাড়ির মহিলারা দাঁড়িয়ে আছে। কুহু মহিলাদের ভীড় থেকে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে শাহাদকে দেখার চেষ্টা করছে।কিন্তু শাহাদ এখানে এখনো আসে নি।শুধু আশফাক খান আর এমদাদ খান নেতাদের সাথে এসে সদর দরজায় দাঁড়িয়েছে। আশফাক খানের গলায় অসংখ্য ফুলের মালা।তিনি মালাগুলো খুলে একজনের হাতে দিলেন।সদর দরজায় দাঁড়ালো কুলসুমা বেগম আর আব্দুল গাফফার খানকে পা ছুয়ে সালাম করলেন। দুজনেই ছেলের মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন।কুলসুমা বেগম ছেলের থুতনিতে হাত ছুইয়ে চুমু খেয়ে বললেন-
"পা ছুয়ে সালাম করতে নেই বাবা।"
এরপর মালার হাতে থাকা ট্রে থেকে পায়েসের বাটিটা তুলে নিলেন। বাটি থেকে এক চামচ পায়েস নিয়ে ছেলের মুখে দিলেন। এরপর রেজিয়া সুলতানার হাতে বাটি দিয়ে আশফাক খানকে খাইয়ে দিতে বললেন। রেজিয়া সুলতানা স্বামীর মুখে পায়েস তুলে দিলেন।এমন সময় ভীড় ঠেলে শাহাদ এসে উপস্থিত হলো। রেজিয়া সুলতানাকে উদ্দেশ্য করে হাসিমুখে বললো-
" মা, আমাকেও দাও।"
এটা বলে শাহাদ গলা বাড়িয়ে মুখ হা করলো। রেজিয়া সুলতানা ছেলের আবদারে ছেলের মুখে পায়েস তুলে দিলেন।শাহাদ পায়েস মুখে নিয়ে খেতে খেতে কুহুকে খুজলো। ভীড়ের মাঝে কুহুকে খুজে পেলো।কুহুও তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।দুজনের চোখাচোখি হলে শাহাদ চোখ মারলো। কুহু লাজুক হেসে শাহাদকে চোখ রাঙালো।
খান বাড়িতে বিশাল উৎসব শুরু হয়ে গেলো।সিনিয়র কিছু নেতাকর্মীদের নিয়ে আশফাক খান তার অফিসে বসলেন। আর অন্যান্য দলের ছেলেদের জন্য বাগানে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শাহাদ তাদের খাবারের তদারকি করছে। কাছের কিছু আত্নীয় স্বজন এসেছে বাড়িতে আনন্দে যোগ দিতে।কুহুর বাবা ফোনালাপে আশফাক খানকে অভিনন্দন জানালেন।যিয়াদের পরিক্ষার কারনে তিনি আসতে পারবেন না বলে জানালেন। বাবার এমন সিদ্ধান্তে কুহুর মন খারাপ হলো।এমন একটা আনন্দের দিনে বাবা মা,ভাইকে দেখতে পেলে ভাল লাগতো।
মন খারাপ কাটাতে কুহু নিজের ঘরের বারান্দায় এসে নিচে বাগানের দিকে তাকিয়ে রইলো।সেখানে শাহাদ অন্যদের সাথে বসে খাওয়া দাওয়া করছে, আনন্দ করছে। দেখে বুঝাই যাচ্ছে শাহাদ খুব খুশি। সবার সাথে আজ বেশ খোলামেলা হয়ে আনন্দ করছে।সাদা পাঞ্জাবি পায়জামায় তাকে বরাবরই হ্যান্ডসাম লাগে। আজ যেন আরো বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে।
উৎসবের এক পর্যায়ে খবর এলো রাহাতের বাবা নির্বাচনে ফেল করেছেন। এতে আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়লো।আশফাক খান বেয়াইকে কল করে সমবেদনা জানালেন। রাহাতের বাবা নাজিমউদ্দীন নিজের ভাগ্য মেনে নিলেন। তবে তিনি হতাশ হলেন না।সামনের নির্বাচনের জন্য আরো ভালোভাবে তৈরি হবেন বলে জানালেন। রেজিয়া সুলতানা সহ বাড়ির মহিলারাও আনিশার শ্বাশুড়িকে স্বান্তনা দিলো। আনিশাকে পরামর্শ দিলো এই অবস্থায় যেন কোনোরকম টেনশন না করে। শাহাদও খবরটা শুনে অবাক হল। ও ভাবেনি যে রাহাতের বাবা হেরে যাবে। সে নিজেও রাহাতকে কল করে কথা বলে নিল।রাহাত জানালো আর কদিন পরেই আনিশাকে নিয়ে যখন আসবে তখন বিস্তারিত আলোচনা করবে।
উৎসব শেষ হতে হতে মাঝ রাত পেরিয়ে গেলো। দলের ছেলেরা শাহাদকে কিছুতেই ছাড়লো না।অনেক রাত পর্যন্ত তাকে আটকে রাখলো। শাহাদ কুহুর কাছে আসতে ছটফট করলেও তাড়াতাড়ি আসতে পারলো না।তার ঘরে আসতে রাত ১ টা বেজে গেলো। ঘরে ঢুকে দেখলো কুহু আধশোয়া হয়ে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। শাহাদ হাতের লাল টকটকে গোলাপগুলো কুহুর কোলের উপর রাখলো৷ খয়েরি জামদানিতে কুহুকে দেখে এত সুন্দর লাগছিলো যে তার খোপায় গোলাপ গুজে দেয়ার বড্ড ইচ্ছা হচ্ছিলো।কিন্তু সময়ই পায়নি। তাই এখন আসার সময় বাগান থেকে টাটকা গোলাপ তুলে এনেছে।কয়েকটা ফুল এখনো আধফোটা অবস্থায় ছিলো সেগুলোই তুলে এনেছে।
শাহাদ হাতের ঘড়িটা খুলে রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো। সারাদিনের ধুলো ময়লা ঘাম লেগে আছে শরীরে। এমন অবস্থায় বউ এর কাছে যাওয়া যায় না।তাই সে চট করে শাওয়ার নিয়ে টি শার্ট আর ট্রাউজার পড়লো। ভেজা চুল মুছলো না। কুহুর সামনে বসে দু পাশে দুই হাত রেখে কুহুর গালে আর গলায় ভেজা চুল ছুইয়ে দিলো। ভেজা চুলের স্পর্শ পেয়ে কুহুর ঘুম ভেঙে গেল্।সে চমকে তাকালো শাহাদের দিকে।শাহাদকে এত কাছাকাছি দেখে সে ভড়কে গেলো।কাচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় প্রথমে বুঝতে পারলো না সে কোথায় আছে। শাহাদ কুহুর চোখে চোখ রেখে চমৎকার করে হাসলো।শব্দ করে আলতো চুমু খেলো গালে। কুহুর কোলের উপর রাখা ফুলগুলো হাতে নিয়ে কুহুর গালে ছুইয়ে বললো-
" বাগানের ফুলগুলো এখনো পুরোপুরি ঘুমোয় নি অথচ আমার ঘরের ফুল ঘুমিয়ে কাঁদা।"
কুহু অভিমানে ঠোঁট ফুলালো।তার চোখে পানি এসে গেলো।অভিমানে শাহাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিলো। নরম হাতের ধাক্কা খেয়ে শাহাদ বিছানায় চিৎ হয়ে পড়ে গেলো। সেখানে শুয়ে থেকেই বললো-
"আমার হুকুর বুঝি অভিমান হয়েছে?"
কুহু গরম চোখে তাকালো শাহাদের দিকে। শাহাদকে দেখাবে বলে শাড়ি পড়েছিলো অথচ ভিড়ের মাঝে তেমন দেখাদেখি হলো না। মাঝ রাত পর্যন্ত সে এই সাজ নিয়ে বসে ছিলো।কয়েকবার আয়নায় দাঁড়িয়ে আবারো মেকআপ নিয়েছে। এরপর ক্লান্ত হয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানে না।অথচ এই লোক দেরি করে এসে ওকে কেমন ক্ষ্যাপাচ্ছে দেখো।
কুহু দেরি না করে ঝাঁপিয়ে পড়লো শাহাদের উপর।শাহাদ যেন এটারই অপেক্ষা করছিলো।সে দুহাত মেলে টুপ করে কুহুকে বন্দী করে নিলো নিজের বাহুডোরে। কুহু অবাধ্য মেয়ের মতো খুব নাড়াচাড়া করলো। কিন্তু শাহাদের শক্ত হাতের বাধন তাকে বাধ্য মেয়েতে পরিনত করলো।কুহু শান্ত হতেই শাহাদ তাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। নিজে কিছুটা উঠে কুহুর কাছাকাছি গেলো।কুহুর নাকে নাক ঘষে বললো-
"আজ থেকে আমার সমস্ত ব্যস্ততা শেষ।এখন থেকে আমার সবটা সময় কেবল তোমার।"
" এহহহহ!! মিথ্যা কথা।"
"সত্যি বলছি। প্রমিস।"
শাহাদ বাচ্চাদের মতো করে গলায় হাত রেখে প্রমিস করলো। কুহুফিক করে হেসে দিলো। সে এতদিনে এতটুকু অন্তত বুঝেছে রাজনীতি করা লোকেদের জীবনে ব্যস্ততা কখনো শেষ হয় না। এরা যতই মুখে প্রমিস করুক না কেন নিজেদের প্রমিস ওরা নিজেরাই রাখতে পারবে না। এতসব ভাবনার মাঝে কুহু ঠোঁটে শাহাদের গভীর স্পর্শ অনুভব করলো। সমস্ত ভাবনা ঝেড়ে ফেলে সে আলিঙ্গন করলো শাহাদকে।
----------
হিশামের ভিআইপি কেবিনে কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা বসে আছেন।তাদের সামনে সিংগেল সোফায় বসে আছে মঞ্জুরা বেগম।সাথে এক পাশে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে হাসিব। সবার মুখ ই থমথমে। একজন নেতা বললেন -
"এত আগে থেকে এই দলের সাথে আছি।একদম হিশামের বাবার সময় থেকে।অথচ আপনি আমাদের কারো সাথে পরামর্শ না করেই একটা বাইরের লোকের কাছে দলের দায়িত্ব দিয়ে দিলেন।সে আমাদেরকে বন্দুক দেখিয়ে মনোনয়ন নিলো।আর এখন নির্বাচন করে মানসম্মান সব ডুবিয়েছে।"
আরেকজন নেতা বললো-
"এত লজ্জাজনক হার আগে কখনো হয় নি। মিনিমাম ভোটটাও আমরা পাই নি।যা পেয়েছি তা হিশামের জন্যই মানুষ দয়া করে দিয়েছে।"
মঞ্জুরা বেগম চুপ করে বসে রইলেন। তার মুখে কোনো কথা নেই। প্রথম নেতা আবারো বললেন-
"শাহাদ ছেলেটার কথা মেনে তৃপ্তিকে নির্বাচনে দাঁড় করানোটাই সবচেয়ে ভালো হতো।ইমোশনাল হয়ে মানুষ আমাদের ভোট দিতো।"
মঞ্জুরা বেগম এইবার কথা বললেন-
"এই কথা আর মুখে আনবেন না।ওই খু*নি এই পরামর্শ দিয়েছিলো তার দলকে জিতানোর জন্য আমাদের ভালোর জন্য না।আর আমাদের দল হেরেছে এতে আপনাদেরও দোষ আছে।আপনারা বেশিরভাগ নেতারাই নির্বাচনে প্রচারণায় থাকেন নি।যারা থেকেছে তারাও না পেরে থেকেছে।সব খবরই আমার কাছে আসে।বিপদের সময় আপনারাও নিজেদের রূপ দেখিয়েছেন।"
মঞ্জুরা বেগমের এমন কথা শুনে সব নেতারাই উঠে দাঁড়ালো।একজন বলল-
"যেই লোক বন্দুক দেখিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে পারে তার আগেপিছে থাকা মানেই অন্যায়।তাকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করলে সে পুরো শহর জুড়ে অন্যায়ের রাজত্ব কায়েম করতো। "
মঞ্জুরা বেগম আবারো থম মেরে গেলেন।আরেকজন নেতা বিদায় জানিয়ে বললেন-
"হিশাম কে দেখার জন্যই এখানে আসা। দোয়া করি সে সুস্থ হয়ে দলের এই দুর্দশা থেকে আমাদের মুক্ত করুক। আসি।"
নেতারা চলে গেলে হাসিব মুখ খুললো-
" একটা ভন্ডকে বিশ্বাস করে পরিবারের দুর্নাম করলে মা। ভাবিকে নির্বাচনে দাঁড় করানোতে যদি তোমার এতই আপত্তি ছিলো তবে অন্য কাউকে দিতে।যোগ্য লোকের তো অভাব ছিলো না।"
" তুই থাম। আমার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠলে সবকিছু ঠিক করে দিবে। আমার ছেলেকে দমিয়ে রাখতে ওই শাহাদ খান ই প্ল্যান করে এক্সিডেন্ট করিয়েছে। "
হাসিব হতাশ কন্ঠে বললো-
"মা, তুমি এত বিবেকহীন কিভাবে হচ্ছ? শাহাদ খান না বাঁচালে তোমার ছেলে গাড়ি সহ নদীতে ডুবে মা*রা যেত।"
মঞ্জুরা বেগম হাসিবের কথা পাত্তা দিলেন না। তিনি উঠে গিয়ে হিশামের বেডের কাছে দাঁড়ালেন।কোমায় থাকা নির্জীব হিশামের দিকে তাকালেন।শাড়ির আচল দিয়ে চোখের কোন মুছে হিশামের মাথায় হাত বুলালেন।
হাসিব ব্যথাতুর চোখে হিশামের দিকে তাকিয়ে রইলো। নিজেকে অথৈ সমুদ্রে আবিষ্কার করলো।এতদিন মাথার উপর বড় ভাইয়ের ছায়া ছিলো।আজ সেই বড় ভাই মৃত মানুষের মতো হাসপাতালের একটা কেবিনে পড়ে আছে। পারিবারিক রাজনীতি থেকে শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছুতেই ধ্বস নামছে। ওত পেতে থাকা শকুনের দলেরা ইতোমধ্যেই লুটপাট করতে শুরু করে দিয়েছে।হাসিব অসহায়ের মতো মাথার চুল টেনে ধরে সোফায় বসে পড়লো।বিরবির করে বলল-
"ভাইয়া, প্লিজ সুস্থ হয়ে যাও। আমাদের যে তোমাকে খুব দরকার।"
--------
ফাঁকা পার্টি অফিসে নাইমুর আর মনসুর আলী বসে আছে। দুজনেরই মন মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে। মনসুর আলী মেজাজের তিরিক্ষি ভাব প্রকাশ করলেও নাইমুর তা করছে না।সে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। মনসুর আলী গমগম কন্ঠে বললো-
" নিজেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড এর কিং দাবি করো অথচ একটা নির্বাচন জিতাতে পারো না।শাহাদ ঠিকই বলেছে তুমি একটা অপদার্থ। "
নাইমুর চোখ খুলে তাকালো।তার চোখ লাল হয়ে আছে।কোমড় থেকে রিভ*লবার টা বের করে ক্ষিপ্র গতিতে চেয়ার থেকে উঠে মনসুর আলীর উপর চড়াও হলো। মনসুর আলীর গলায় রিভ*লবার ঠেকিয়ে বললো-
"এই বুইড়া,তুই কি ভাল মানুষ? যার খাস তার পিছনেই চুরি মারিস। তোকে মানুষ ভোট দিবে কি করতে? তোর জন্য আমার এত গুলো টাকা গচ্ছা গেলো। শাহাদ খান আসিফকে দিয়ে আমার প্ল্যান বানচাল করালো। আর আমি কিছুই করতে পারলাম না।এখন তুই আমার টাকা দে।"
নাইমুরের আক্রমণাত্মক রূপ দেখে মনসুর আলীর জান হাতে চলে এসেছে।তিনি বললেন -
"দিব দিব,সব টাকা দিয়ে দিব।"
"কিভাবে দিবি? তোর নিজের সব টাকাও তো শেষ।"
"হিশামের ব্যবসা দখল করে সব টাকা তুলে দিব।বিশ্বাস কর।"
নাইমুর মনসুর আলীর গলা থেকে রিভ*বার সরিয়ে চেয়ারে বসলো।বললো-
" তুই চাইবি আর তোকে হিশামের ব্যবসা দিয়ে দিবে তাই না?"
মনসুর আলী গলায় হাত বুলিয়ে বললেন-
"সেই প্ল্যান করা আছে।তুমি কোনো চিন্তা করো না।হিশাম না থাকায় তার প্রতিষ্ঠান এর সবাই-ই লুটেপুটে খাচ্ছে। আমি সেই ব্যবসা নতুন করে দাঁড় করানোর প্রস্তাব দিলে ওর মা না করবে না।"
" এত বড় হারের পর ওর মা এসব মেনে নিবে না।"
মনসুর আলী শয়তানি হাসি দিয়ে বলল-
"মানবে।কিভাবে মানাতে হয় তা আমার জানা আছে।"
নাইমুর চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। তার মেজাজ খুবই খারাপ। শাহাদ খানের দল জিতে যাওয়ায় এইবার তাকে খুব বিপাকে পড়তে হবে।এর আগে শাহাদ খানের সাথে কোনো দুশমনি তার ছিলো না।কিন্তু এইবার প্রকাশ্যে বিরোধী দলের সাথে হাত মিলানোয় সে নিশ্চয়ই শাহাদ খানের রোষানলে পড়ছে।তার উপর আসিফ আছে শাহাদ খানের কব্জায়।সব মিলিয়ে নাইমুরের রাজত্বে ধ্বস নামার অবস্থা।
--------------
কুহুকে সময় দেয়ার প্রমিস করলেও শাহাদ সেই প্রমিস রাখতে পারলো না। নির্বাচনের পরেও কাজ তার পিছু ছাড়লো না। এমদাদ খান ঘোষনা দিলেন তিনি অনেক দিন যাবত ব্যবসার কাজ সামলেছেন। বাড়ি ছেড়ে দূরে দূরে থেকেছেন।এইবার তিনি কয়েকদিন ছুটি নিবেন।এই সময়টায় ব্যবসা সামলাবে শাহাদ।
শাহাদ পড়লো ফাটা বাঁশের চিপায়।একে তো ব্যবসার কাজ সেই সাথে দলের অনেক কাজও তাকে ছাড়া হয় না।অন্যদিকে বউ কে সময় দিতে না পারায় বাড়িতে ফিরে বউ এর মুখ ঝামটাও সহ্য করতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে তার অবস্থা কেরোসিন। একদিন রাতে হাতে কয়েকটা বেলী ফুলের মালা নিয়ে বাড়ি ফিরলো। বেলী ফুলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে কুহু বললো সে গাড়ি চালানো শিখবে।
শাহাদ ফর্মাল ড্রেস পড়ে অফিসে গিয়েছিলো।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বিস্ময় নিয়ে কুহুর দিকে তাকালো।জিজ্ঞেস করলো-
"গাড়ি চালানো শিখে তুমি কি করবে?"
"আমার মন চাইছে তাই।আমার খুব শখ আমি গাড়ি চালানো শিখব। আপনি ব্যবস্থা করেন।"
শাহাদ গম্ভীর কন্ঠে বললো-
"উহু। এই ধরনের রিস্কি শখ দিয়ে দরকার নেই। কাল থেকে ভার্সিটি যাবে। ফ্রেন্ড নিয়ে আড্ডা দিলে এসব শখ মন থেকে দূরে থাকবে।"
কুহু মুখ গোমড়া করে বসে রইলো।তাও শাহাদের মন গললো না।সে কিছুতেই এইসব রিস্কি কাজ এলাউ করবে না।সে তার নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রইলো।কুহু শাহাদের কথামতো কয়েকদিন ভার্সিটিতে গেলো। সে বাড়ির গাড়ি না নিয়ে বাসে রিক্সায় গেলো। সারাদিন মুখ ভোঁতা করে রাখলো। শেষে শাহাদকে কুহুর জেদের কাছে হার মানতেই হলো।সে রাজি হলো কুহুর গাড়ি চালানো শিখার ব্যাপারে।তবে সে শর্ত জুড়ে দিলো কুহু একটা মাঠে গাড়ি চালানো শিখবে এবং এর পর সে কোনোভাবেই রাস্তায় যেতে পারবে না গাড়ি নিয়ে। কুহু এই শর্তে খুশিমনেই রাজি হলো।
তবে শাহাদ কোনো ড্রাইভার দিয়ে কুহুকে গাড়ি চালানো শিখাতে ভরসা পেলো না।কুহু যেই মাঠে গাড়ি চালানো শিখবে সেটা নদীর পাড় ঘেঁষে। কুহু যেরকম মেয়ে দেখা যাবে গাড়ি নিয়ে নদীতে চলে গেছে গাড়ি চালাতে।তাই শাহাদ অনেক কষ্টে সময় বের করলো কুহুকে গাড়ি চালানো শিখাতে।প্রথম দিন গাড়ির কোন জিনিস কি কাজে লাগে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখিয়ে দিলো কুহুকে। এরপর দিন স্টিয়ারিং কিভাবে সামলাতে হয় তা শিখানোর চেষ্টা করলো।
কুহু বারবার ভুল করলো।ডানে বললে সে বামে যায়,বামে বললে ডানে যায়।শাহাদ নিজে এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে রাখলো তাও সে কুহুর এরকম আজগুবি ড্রাইভিং করা ঠেকাতে পারলো না।শেষে বিরক্ত হয়ে দিলো এক ধমক।ধমক খেয়ে কুহু গাল ফুলিয়ে বললো-
" এই হচ্ছে বউ এর জন্য ভালোবাসা তাই তো? সামান্য কারনেই ধমকাধমকি।বাইরে যখন রাজনীতি করেন তখন তো মুখ দিয়ে মধু ঝরে।"
শাহাদ লম্বা শ্বাস ফেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। সব জায়গায় সব চলে না।বউ এর সাথে নেতাগিরিও তেমনি দেখানো উচিত না।সে নরম কন্ঠে বললো-
"গাড়ি চালানো শিখতে গেলে তোমাকে আগে সবকিছু ঠিকঠাক ইউস করা শিখতে হবে। যখন ব্রেক লাগবে তখন ব্রেক করতে হবে। ব্রেকের জায়গায় এক্সেলেটর চাপলে তো হবে না।"
কুহু সব বুঝে ফেলেছে এমনভাবে মাথা নেড়ে বললো-
"বুঝেছি।"
শাহাদ কুহুকে সব বুঝিয়ে দিলো।কুহু আবারো গাড়ি স্টার্ট করলো। আস্তে আস্তে অল্প গতিতে সে গাড়ি চালাতে লাগলো।শাহাদ পুরোটা সময় স্টিয়ারিং এ হাত দিয়ে রাখলো। এক পর্যায়ে শাহাদের ফোনে একটা মেসেজ আসলো।মেসেজের রিপ্লাই করার সময় আনমনে স্টিয়ারিং থেকে হাত সরিয়ে ফেললো।হাত সরানোর কয়েক সেকেন্ড পরেই গাড়ি হঠাৎ লাফ দিলো। এরপরই তীব্র বেগে ছুটতে আরম্ভ করলো।অর্থাৎ কুহু গাড়িতে ভুলভাল চাপাচাপি করে গতিবেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন অবস্থায় কুহু স্টিয়ারিং থেকে হাত সরিয়ে চিৎকার করতে লাগলো। শাহাদ ফোন ফেলে দিয়ে দ্রুত স্টিয়ারিং এ হাত দিলো। কুহুকে বললো-
"কুহু ব্রেক চাপো।"
কুহু হাজার খুজেও ব্রেক পেলো না।সে চিৎকার করতেই থাকল।শাহাদ নিজেই ব্রেক চাপার চেষ্টা করতে গিয়ে স্টিয়ারিং দিলো ছেড়ে। গাড়ি ছুটে চললো নদীর দিকে।নদীর পাড়ে আসতেই শাহাদ দ্রুত ব্রেক চাপলো। একটা ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়িটা থামলো। কিন্তু ততক্ষনে গাড়ি হাঁটু পানিতে নেমে এসেছে।
শাহাদ বড় বড় চোখে সামনে তাকিয়ে শ্বাস ফেললো। কুহুর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ভয়ার্ত চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। শাহাদকে তাকাতে দেখে সেও তাকালো।মিনমিন করে বলল-
" আমি কিছু করি নি।গাড়ি নিযে থেকেই চলতে চলতে নদীতে নেমে গেছে।বোধ হয় গোসল করতে চেয়েছিলো।"
শাহাদ হতাশ চোখে তাকালো। এমন অবস্থায় সে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। কদিন পর পর এই মেয়ের এসব কর্মকান্ড আর প্রাণে সয় না।
চলবে
No comments