গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ৪৫
#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৪৫
আজ নির্বাচন। পুরো নির্বাচনী এলাকা জুড়ে একটা অন্যরকম পরিবেশ। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকটা দলের লোকেরা ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভীড় করছে। ভোট কার্যক্রম ঠিকঠাক চলছে কিনা দেখছে। শাহাদ অল্প কিছু ছেলে নিয়ে প্রত্যেকটা ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করছে। সাদা পাঞ্জাবি পাজামায় শাহাদকে আজ খুব হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে চোখে কালো চশমা পড়ায় নেতা নেতা ভাবটা যেন আরেকটু ফুটে উঠেছে।শাহাদ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ভোটকেন্দ্রটায় এলো। এখানে সবথেকে বেশি ভোট পড়ার সম্ভাবনা আছে। তাই বিরোধী দলীয় কেউ ঝামেলা করতে চাইলে এখানে করবে।
শাহাদের গাড়ি ভোটকেন্দ্রে ঢুকলো তখন আরো অনেক গাড়িকে বাইরে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলো। শাহাদ ঘাড় বাঁকিয়ে গাড়িগুলোর পাশে দাঁড়ানো লোকগুলোকে দেখলো।হিশামের দলের লোক ওরা।তার মানে মনসুর আলী হয়তো ভোটকেন্দ্রে এসেছে। শাহাদের বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। আজ হিশাম থাকলে সে ভোটকেন্দ্রগুলো দাপিয়ে বেড়াত। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে হিশাম যাই করুক না কেন ও যে একজন সুযোগ্য নেতা এই বিষয়ে শাহাদের কোনো দ্বিমত নেই। অথচ এখন ওর জায়গায় একটা ক্ষমতালোভী লোক বসতে চাইছে।
ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে দিলে শাহাদ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। পিছনের গাড়ি থেকে নেমে তমালসহ দলের অন্যান্য ছেলেরা শাহাদের পাশে এসে দাঁড়ালো।শাহাদ চারদিক একবার পর্যবেক্ষণ করে তমালকে জিজ্ঞেস করলো-
"আসিফ কি তার কাজ ঠিকঠাক করেছে?"
"করেছে ভাই। ভিতরে সব বৈধভাবেই হওয়ার কথা। বাকিটা সময় বলে দিবে।"
শাহাদ চশমা খুলে হাতে নিলো। জিভ দিয়ে উপরের পাটির দাঁত ছুয়ে আশেপাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। আপাতদৃষ্টিতে সবকিছু ঠিকঠাক লাগছে। তবে কাউকে বিশ্বাস নেই যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে।
শাহাদ দলবল নিয়ে ভোটকেন্দ্রের মাঠটায় প্রবেশ করলো। স্থানীয় একটা স্কুলকে ভোটকেন্দ্র বানানো হয়েছে।শাহাদ বামপাশে দুতলা বিল্ডিংটার দিকে তাকালো।পাঁচ বছর আগে এরকম এক ভোটের দিনে এই বিল্ডিংয়ের সামনেই হিশামের বাবা গু*লিবিদ্ধ হয়ে পড়েছিলো।হিশাম তখন অন্য ভোটকেন্দ্রে ছিলো। ও যতক্ষনে এসেছিলো ততক্ষণে শাহাদ ওর বাবার খু*নি সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। শাহাদ চোখ বন্ধ করে ঘটনাটা মন থেকে দূর করতে চাইলো কিন্তু পারলো না।
সে খুব চেষ্টা করেছিলো হিশামের বাবাকে বাঁচানোর।হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু দলের লোকদের ক্ষোভের মুখে পারে নি। র*ক্তাক্ত দলের নেতার থেকেও তখন শাহাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়াই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো। চারদিক থেকে সবাই তাকে ঘিরে ধরেছিলো। কয়েকজন জাপটে ধরে মাঠের দিকে টেনে নিচ্ছিলো গণপিটুনি দিয়ে বিচার করার জন্য। শাহাদ হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারে নি। মানুষের ভীড়ের ফাকফোকর দিয়ে হিশামের বাবার অন্তিম শ্বাস নেয়া দেখলো সে। নিজেকে কিছুটা মুক্ত করে যখন ছুটে যেতে চাইলো তখন তার দলের ছেলেরা এসে তাকে ধরে ফেললো নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য। বাকি ছেলেরা লেগে পড়লো ওদের সাথে মারামারিতে। শাহাদ হাজার চিৎকার করেও ওদেরকে বুঝাতে পারে নি।ওরা ধরে বেধে তাকে গাড়িতে তুলে তৎক্ষনাৎ দরজা লক করে দিয়েছিলো। গাড়ির কাচের ভেতর থেকে শাহাদ দেখলো হিশামের বাবার দলের লোকজন তার কাছে এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ততক্ষনে তিনি পরপারে চলে গেছেন।। বন্ধ গাড়িতে বসে শাহাদ কেবল চিৎকার করে গাড়ির কাচে আঘাতই করতে পেরেছিলো আর পেয়েছিলো খু*নি তকমা।
এতসব চিন্তা করে শাহাদের চোখে পানি এসে গেলো। চোখের পানি লুকাতে সে কালো চশমাটা চোখে দিলো। যে বিল্ডিংটায় ভোট নেয়া হচ্ছে তার সামনে নাইমুর আর অন্য কয়জন লোকের সাথে মনসুর আলীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। বুঝা গেলো অন্য লোকগুলোর কয়েকজন হিশামের দলের লোক।অনিচ্ছা স্বত্তেও দলের মায়ায় হয়তো ভোটকেন্দ্রে এসেছে তারা।মনসুর আলির মুখ থমথমে হয়ে আছে। নাইমুর শাহাদকে দেখে শকুনের দৃষ্টিতে তাকালো। হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে এক মুখ ধোয়া ছাড়লো।তার চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে।গত কয়েকদিন সে ঘুমোয় নি। মনসুর আলীকে পাশ করানোর জন্য সব ব্যবস্থা সে করেছিলো কিন্তু শাহাদ খান সব ভেস্তে দিয়েছে। নাইমুরের ইচ্ছে হলো শাহাদের নাক বরাবর একটা ঘুষি দিতে। কিন্তু সে নিজেকে সংবরন করলো।
শাহাদ ওদের অবস্থা দেখেই বুঝলো যে ওরা সুবিধা করতে পারছে না। সে ওদের পাশ কাটিয়ে ভোটকেন্দ্রের বারান্দায় উঠলো।ভিতরে গিয়ে ভোট দিয়ে আসলো।তার সাথের ছেলেগুলোও ভোট দিলো। এরপর কিছু ভোটারের সাথে কথা বললো, কুশল বিনিময় করলো। সব পর্যবেক্ষণ করে বুঝলো এইবারও তার বাবাই জিতবে। ঠোঁটের কোণে দুষ্টু একটা হাসি ফুটিয়ে সে মনসুর আলী আর নাইমুরের সামনে এসে দাঁড়ালো। চোখের চশমাটা খুলে রম্য কন্ঠে বললো-
" চাচা আমার ভোটটা আপনাকে দিয়েছি। আমার ছেলেদেরও বললাম যাতে আপনাকে ভোটটা দেয়। তবে পাজিগুলো বোধহয় দিবে না। "
মনসুর আলীর চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। কঠিন কন্ঠে বললো-
"আমার সাথে বিটলামি করো?"
শাহাদ মুচকি হাসলো। বললো-
" আপনার ব্রেইন ভালো।ব্যাপারটা ধরে ফেলেছেন। আসলে আপনাকে আমি ভোট দেই নি।মিথ্যা বলেছি।হি হি হি।"
শাহাদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা তমালসহ সবাই খিক খিক করে হেসে দিলো। নাইমুর শাহাদকে উদ্দেশ্য করে ঠান্ডা অথচ হিংস্রাত্মক কন্ঠে বললো-
" নিজেকে নিয়ে খুব কিনফিডেন্স না? অতিরিক্ত কিছুই ভাল না।"
শাহাদ স্থির দৃষ্টিতে নাইমুরের চোখে চোখ রাখলো।মনসুর আলি রাগে ফেটে পড়ে বললো-
" তুই আর তোর বাপ তোদের দুজনের মরন না দেখে আমি থামব না। নির্বাচনে জিতব না তো কি হয়েছে অন্যভাবে তোদের আমি ক্ষতি করবই।"
নাইমুর তাড়াতাড়ি মনসুর আলীকে শান্ত করলো।এইভাবে ওপেন থ্রেড দেওয়া মানে কোনো সমস্যা হলে সেটা তাদের উপরই বর্তাবে।
মনসুর আলীর কথা শুনে শাহাদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। কিন্তু সে নিজেকে শান্ত রেখে চাপা কন্ঠে বললো-
" আপনাকে ছাড় দেই মানে এই না যে আপনার কাজের প্রমান আমার কাছে নেই। এই কটা দিন একটু হাওয়া বাতাস খান। যেদিন আপনাকে ধরব সেদিন শ্বাস নেয়ার জন্যও বাতাস পাবেন না।"
মনসুর আলী তেড়ে আসতে চাইলে নাইমুর আটকালো। শাহাদ নাইমুরের দিকে তাকিয়ে বলল-
" আর তোর মতো অপদার্থ কে কি বলব!! আন্ডারওয়ার্ল্ড কন্ট্রোল করার হেডাম নেই এসেছিস নির্বাচন করতে।"
নাইমুর আর মনসুর আলী দুজনেই খেয়ে ফেলবে টাইপ দৃষ্টিতে শাহাদের দিকে তাকিয়ে রইলো।শাহাদ চশমাটা পুনরায় চোখে দিয়ে দলবল নিয়ে মাঠ পেরিয়ে গাড়ির কাছে আসলো। গাড়ির দরজাগুলো খুলে দিয়ে পা বের করে সিটে বসলো শাহাদ।অন্যরাও তার মতো করে গাড়িতে বসলো। একটা ছেলেকে দিয়ে চায়ের দোকান থেকে চা আনিয়ে চায়ের কাপে ছোট ছোট চুমুক দিতে দিতে অদূরে নাইমুরের দিকে তাকিয়ে রইলো। নাইমুর অস্থির হয়ে ফোনে কথা বলছে।ভাবভঙ্গি দেখে বুঝা যাচ্ছে গালাগালি করছে। শাহাদ ঠোঁটের কোনা বাকিয়ে হাসলো। নাইমুর ভেবেছিলো এত সহজেই সে কাজ হাসিল করে ফেলবে। সব ভোট নিয়ে ফেলবে মনসুর আলীর পক্ষে।কিন্তু এমন কিছুই করতে পারে নি সে। শাহাদ বোকা না। কোন রোগের কোন ঔষধ এটা সে ভালোমতোই জানে।
গুন্ডা-মাফিয়াদের কখন কাজে লাগাতে হয় তা তার জানা আছে। তাই সে আসিফকে কাজে লাগিয়েছে নাইমুর কোন কাজ কিভাবে করতে পারে তার ইনফরমেশন একমাত্র আসিফই দিতে পারে তাকে। তাই আসিফকে কাজে লাগিয়ে পন্ড করেছে নাইমুরের প্ল্যান। যারা যারা নাইমুরের কাছ থেকে টাকা খেয়ে ভোট চুরির সাথে যুক্ত হয়েছিলো তাদের কয়েকজনকে জানের ভয় দেখানো হয়েছে আর বাকিদেরকে নির্বাচনের ডিউটি থেকে বাতিল করা হয়েছে। শাহাদ এমনি এমনি আসিফ আর তার পরিবারকে সেফটি দেয় নি। ভবিষ্যতে কাজে লাগাবে বলেই দিয়েছে। নাইমুর বুদ্ধিমান কিন্তু সে হয়ত আসিফের কথে ভুলে গিয়েছিলো কোনোভাবে। তাই এই চালে সে হেরে গেছে।
--------
খান বাড়িতে বিকালের পরপরই একটা টেনশন টেনশন ভাব বিরাজ করছে। বাড়ির মহিলারা সবাই ড্রয়িং রুমে বসে হালকা পাতলা আলোচনা করছে।তাদের আলোচনার মূল বিষয় নির্বাচন।এতক্ষনে বোধ হয় ভোট গণনাও শুরু হয়ে গেছে। সন্ধ্যার একটু পরেই হার-জিতের ফলাফল ঘোষনা করা হবে। বাড়ির মহিলারা সবাই দুপুরের দিকে একসাথে ভোট দিয়ে এসেছে। শাহাদের চাচ্চু এমদাদ খানও এসেছেন ভোট দিতে।তিনি এখন আশফাক খানের সাথে হয়তো কোনো ভোটকেন্দ্রে আছেন।।
কুহু ফোনের মেসেজ অপশনে কীবোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে।শাহাদের সাথে যোগাযোগ নেই অনেক্ষন ধরে। সেই যে ভোরের দিকে কুহুর কপালে চুমু খেয়ে বের হয়েছিলো এরপর আর তার সাথে কোনো কথা হয় নি। কুহু চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। শাহাদকে একটা মেসেজ করবে কিনা ভাবছে।শাহাদ বিরক্ত হবে এই ভাবনায় তার আর মেসেজ করা হচ্ছে না। অবশেষে মনস্থির করে ছোট একটা টেক্সট পাঠালো-
"Busy?"
এক দুই মিনিট মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থেকে কোনো ফিডব্যাক না পেয়ে কুহু আশাহত হলো।ফোনটা উলটো করে রেখে দিলো সোফার উপর।মনোযোগ দিলো অন্যদের আলোচনায়। আরো এক দুই মিনিট পর ফোনটা ভাইব্রেট করলো। কুহু ছো মেরে ফোনটা হাতে নিলো। শাহাদ টেক্সট পাঠিয়েছে-
" Always free for you my Queen."
কুহু মুচকি হেসে মুখ ভেঙালো।এতক্ষন পরে রিপ্লাই দিয়ে "always free for you" বলা হচ্ছে।কত ঢং!!কুহু জানতে চাইলো শাহাদ কি করছে? অইখানের পরিস্থিতি ঠিক আছে কিনা।এটার জবাবে আরো ৭-৮ মিনিট পর শাহাদ একগাদা ছবি পাঠালো সাথে লিখে দিলো -
"See you soon."
কুহু ছবিগুলো দেখলো। ছবিগুলো এখনের তোলা না অনেক আগেই তোলা হয়েছে। সব ছবিতেই শাহাদ আছে।সানগ্লাস চোখে দেয়া। সাথে তার দলবলও তার সাথে পোজ দিয়ে ছবি তুলেছে।কুহু মুচকি হেসে সবগুলো ছবি দেখলো।শাহাদকে প্রশংসা করে একটা টেক্সটও পাঠালো কিন্তু সেটার আর রিপ্লাই আসলো না।বুঝলো শাহাদ অনেক ব্যস্ত। সে আর শাহাদকে বিরক্ত করল না। শাহাদের পাঠানো ছবিগুলো বাকিদের দেখাতে লাগলো।
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই এখনো নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনা হয় নি।বাড়ির সবাই রীতিমতো চিন্তিত।কুলসুমা বেগম তসবিহ পড়ছেন। কুহু মায়াকে সাথে নিয়ে সবার জন্য চা করে আনলো। রেজিয়া সুলতানা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল-
" আনিশা কি কল টল কিছু দিয়েছে? রাহাতদের ওখানে কি অবস্থা কে জানে? ওদের তো এতক্ষনে ফলাফল ঘোষনা করার কথা।"
জয়া বেগম বললো-
"এইবার ফলাফল প্রকাশে একটু বেশিই দেরি হচ্ছে। কোনো ঝামেলা না হলেই হয়।গতবারের কথা মনে পড়লে এখনো গায়ে কাটা দিয়ে উঠে।"
জয়া বেগম কথা শেষ করতেই কুলসুমা বেগম গলা ঝাড়লেন। জয়া বেগম তাকাতেই তিনি চোখ গরম করে ইশারা করে কুহুকে দেখালেন। ইশারা ভুঝে জয়া বেগম জিভে কামড় দিলো।কুহুর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে রাফা রিদির সাথে অন্য আলাপে মগ্ন তাই এইদিকের কথা সে কিছু শুনে নি।
কুহু কিছু বুঝতে পারে নি দেখে কুলসুমা বেগম নিশ্চিন্ত হলেন। কুহুর কাছে তিনি শাহাদকে নিয়ে এতকিছু এখনই তুলে ধরতে চান না।সে নিজে থেকে কোথাও শুনলে সেটা তখন সামাল দেয়া যাবে।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনা করা হলো।আশফাক খান জিতেছে। রেজিয়া সুলতানা দ্রুত ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করলেন। সবাই মিষ্টিমুখ করলো। শেফকে বললেন খাবার তৈরি করতে, কারন একটু পরই হৈ হৈ করে অনেক লোক আসবে বাড়িতে। একজনকে দোকানে পাঠালেন আরো মিষ্টি কিনে আনার জন্য।আরো কয়েকজনকে আউট হাউজে পাঠালেন আউট হাউজটা পরিপাটি করে রেখে আসতে। বাড়ির সবগুলো লাইট জ্বালিয়ে দেয়া হলো। বাগান থেকে শুরু করে পুরো বাড়ি আলোকিত করা হলো। ইলেকট্রনিক এর লোক আগে থেকে ঠিক করাই ছিলো।তারা এসে দ্রুত বাড়ির চারপাশ লাল নীল বাতি দিয়ে সাজিয়ে দিলেন। বাড়ির মহিলারা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কিচেনে। নবনির্বাচিত এমপি বরন করার জন্য রেজিয়া সুলতানা তৎক্ষনাৎ পায়েস বসালেন চুলায়। নির্বাচনে জয়লাভের আনন্দে দলবল নিয়ে মিছিল করে বাড়ির পর্যন্ত আসতে আসতে পায়েস হয়ে যাবে।
কুলসুমা বেগম হাক ছেড়ে বাড়ির বউদের নতুন শাড়ি পড়তে বললেন। রেজিয়া সুলতানা পায়েসে কিসমিস ছেড়ে দিয়ে কুহুকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
"কুহু, তাড়াতাড়ি গিয়ে একটা শাড়ি পড়ে নাও। ওরা কিন্তু চলে আসবে এক্ষুনি। "
কুহু তাড়াতাড়ি ঘরে এসে আগে ফ্রেশ হলো।এরপর আলমারি খুলে শাহাদের পছন্দমতো একটা শাড়ি বের করলো। খয়েরি রঙের জামদানি শাড়ি। চট করে শাড়ি পড়ে নিয়ে হালকা মেকাপ নিলো। কোমড় সমান চুলগুলো খোপা করলো।সামনে কপাল থেকে গাল ছুয়ে দুইপাশে কিছু চুল ছাড়লো। এরপর সুন্দর করে ঘোমটা টেনে দেখলো কেমন লাগে।।।এমন সময় মিছিলের আওয়াজ ভেসে আসলো। কুহু দৌড় দিলো বারান্দার দিকে।মাথায় দেয়া শাড়ির আচল লুটিয়ে পড়লো ফ্লোরে।
দুতলায় নিজের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিশাল এক মিছিলকে খান বাড়ির গেট দিয়ে প্রবেশ করতে দেখলো কুহু। সে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো। এই প্রথম সে এরকম কিছু দেখছে। মিছিলের মাঝখানে তিনটে গাড়ি। তিনটারই ছাদ খোলা।সামনের গাড়িটার খোলা ছাদ দিয়ে আশফাক খান দাঁড়িয়ে আছে,তার গলায় ফুলের মালা। তার পাশে দুজন সিনিয়র নেতা।দ্বিতীয় গাড়িটায় দাড়িয়ে আছে শাহাদ।তার গলাতেও তিন চারটে ফুলের মালা।তার গাড়ির ছাদে তমাল সহ দলের অন্যান্য ছেলেরা উঠে বসে হই হুল্লোড় করছে। গাড়ির সবকটা দরজা খুলে দরজা ধরে ঝুলে আছে ছেলেরা।আর গাড়ির আশেপাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অন্য ছেলেরা ব্যান্ড পার্টির সাউন্ডে নাচছে।পিছনের গাড়ির ছাদ দিয়ে কয়েকজন নেতা কর্মী দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িগুলো মিছিলের সাথে তাল মিলিয়ে আস্তে আস্তে চলছে।
ছেলেরা পুরো মিছিল জুড়ে ফুল ছিটাচ্ছে।কেউ কেউ আবার রঙ খেলছে। সব মিলিয়ে এক এলাহী অবস্থা।কুহু বিস্ময়ে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। হালকা হেসে শাহাদকে দেখতে লাগলো সে। শাহাদ তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় মুখে হাসি রেখে ছেলেদের সাথে এঞ্জয় করছে।হুট করে সে সরাসরি তার ঘরের বারান্দার দিকে তাকালো। চোখ পড়লো কুহুর দিকে।যা ভেবেছিলো ঠিক তাই।কুহু দাঁড়িয়ে আছে। সে মুগ্ধ চোখে কুহুর দিকে তাকিয়ে থেকে দুহাতে ঠোঁট ছুয়ে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিলো কুহুর দিকে।
কুহু লাজুক হাসলো শাহাদের কান্ড দেখে। নির্বাচনে জিতে গিয়ে এই লোকের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সবার সামনে কিস ছুড়ে মারছে।শাহাদ মন্ত্রমুগ্ধের মতো কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো কুহুর দিকে।তারপর ইশারা করলো নিচে আসতে।ওদের মিছিল ড্রাইভওয়ে অতিক্রম করে সদর দরজায় পৌছে গিয়েছে প্রায়।
কুহু এক দৌড়ে বারান্দা থেকে ঘরে চলে এলো। আয়নায় দাঁড়িয়ে ঘোমটা টানলো। ঠোঁটে হালকা লিপ্সটিক দিলো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখে নিয়ে ঘর ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। তার বিশ্বজয় করে আসা স্বামীকে এখন বরন করতে হবে।
চলবে
No comments