#এক_তুমিতেই_আসক্ত
#আয়ান_মাহমুদ
|৯|
কাস্কাইসের ট্যুর শেষ হওয়ার পর, ক্যাম্পাসে আবারও পুরনো রুটিনে ফিরে আসা। কিন্তু সেদিনের অনুভূতিগুলো তুর্য আর তন্নী দুজনের মনেই ছিল, যেন কাস্কাইসের সোনালী বালু আর সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো এক অন্য ধরনের শান্তি তাদের মাঝে উঁকি দিচ্ছিল।
তন্নী একদিন সন্ধ্যায়, ক্যাম্পাসে আসার পর, হালকা ধূসর আকাশে নিজের চিন্তাগুলোর মধ্যে ডুবে ছিল। ঠিক সেই সময় তুর্য তাকে পেয়ে গেল। তুর্য জানত, তন্নী নিজের মনকে সহজে প্রকাশ করে না, কিন্তু কিছু এমন ছিল যা তাকে টানছিল। তন্নীর চোখের আড়ালে যে এক ধোঁয়াশা ছিল, তুর্য সেটা সহজেই অনুভব করতে পারছিল। তন্নী কোনো কারণ ছাড়া সেদিন কিছুটা বিষণ্ণ ছিল, যেন কোন ভয়ের তাড়নায় ভুগছে।
"তন্নী, তুমি কেমন আছো?" তুর্য তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল। তার কণ্ঠে এক ধরনের উদ্বেগ ছিল, যেন সে জানতো তন্নী কিছু একটা ভাবছে, কিন্তু সে সেটা প্রকাশ করবে না।
তন্নী চুপচাপ ছিল, তবে তার মুখাবয়বে কিছুটা পরিবর্তন ছিল—যেন কিছু একটা ভেঙে পড়ছে। "তুর্য, আমার মায়ের কথা মনে পড়ছে।"
তুর্য থেমে গেল। কিছু সময়ের জন্য সেদিকে তাকিয়ে ছিল। তন্নী যে কথা বলছিল, তার মাঝে একটা গভীর অনুভূতি ছিল, যা তুর্য সহজে বুঝতে পারছিল। "তন্নী, তোমার মা কি অসুস্থ?" তুর্য তার পাশে বসে, ধীরে ধীরে বলল।
তন্নী এক মুহূর্ত চুপ করে রইল, তারপর তার কণ্ঠে এক ধরনের ভারীতা ছিল, "হ্যাঁ, কিছু দিন ধরে আমার মা অসুস্থ। তার জন্য আমি অনেক চিন্তা করি। মা তো একা, বাংলাদেশে থাকে। আমি এখানে আছি, তবে তার পাশে থাকতে পারি না। এই কষ্টটা... কিছুটা সইতে পারছি না।"
তুর্য বুঝতে পারছিল, তন্নী নিজের মায়ের জন্য যে দুঃখ অনুভব করছিল, তা খুব গভীর। সে নিজের কাঁধে কিছুটা চাপ অনুভব করছিল। তন্নীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে কষ্ট, সেটা নিশ্চয়ই অনেক বড় ব্যাপার ছিল। "তন্নী, তুমি জানো, আমরা এখানে সবাই তোমার পাশে আছি।" তুর্য ধীরে ধীরে তার হাতে হাত রাখল, যেন একটি নির্ভরতা ও সাহস প্রদান করতে পারে।
তন্নী মৃদু মাথা নেড়ে বলল, "জানি, তুর্য। তবে এই অনুভূতি কখনো সরে না। আমি প্রতিদিন মায়ের জন্য কষ্ট বয়ে বেড়াই। তবে, কী জানি, এখানে এসে সব কিছু একটু ভুলে থাকতে চাই।"
তুর্য গভীরভাবে ভাবল। তন্নীর মনোজগতের যে দুঃখ ছিল, তা না জানা তুর্য সহজে বয়ে নিতে পারছিল না। তন্নী যেটা বলছিল, সেটা ছিল তার একান্ত ব্যক্তিগত দুঃখ, যেটা হয়তো সে অনেক দিন ধরেই ভেতরে রেখেছিল। তুর্য জানত, যদি কখনও সে একে অপরকে গভীরভাবে জানবে, তাহলে এরকম খুঁটিনাটি দুঃখ-সংগতি গুলো প্রকাশ পাবে।
"তন্নী, তোমার মায়ের কথা ভাবো না, এই মুহূর্তে তুমি কোথায় আছো, তা বেশি গুরুত্ব দিন।" তুর্য তার হাত আরও শক্ত করে ধরল। "এই সময়টা তোমার, ক্যাম্পাসের সময়টা, তোমার বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাও। যখনই তোমার মনে হবে, আমি তোমার পাশে আছি।"
তন্নী ধীরে ধীরে মাথা তুলল, এবং তার চোখে কিছুটা নতুন প্রেরণা দেখা গেল। "তুর্য, তুমি যদি না থাকো, তবে আমার কোথাও থামা নেই। এই জায়গায় অনেক কিছু যেন হারিয়ে যায়, তবে তোমার মতো একজনের সাহস আমার মনে আশার আলো জ্বালিয়ে দেয়।"
তুর্য মৃদু হাসল, "তন্নী, তুমি জানো, জীবন কখনোও সরল পথে চলে না। কিন্তু যেখানেই থাকো, আমরা একে অপরকে পাশে পাবো।"
তন্নী এবার একটু হাসল, "হ্যাঁ, তুর্য। এবং আমি জানি, যদি কখনো কিছু মনে হয়, আমি তোমার কাছে আসব।"
তুর্য তার চোখে দৃষ্টি রাখল। যদিও কথাগুলো সহজ ছিল, কিন্তু তন্নীর চোখের মধ্যে গভীর কিছু ছিল যা তুর্য কখনোই ভুলবে না। তাদের মাঝে একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছিল, তবে এটা ধীরে ধীরে হচ্ছিল। তুর্য জানত, সে যেভাবে তন্নীকে বুঝতে চাইছিল, তন্নীও হয়তো তুর্যকে কিছুটা চিনতে চাচ্ছিল, তবে সময়ই সবকিছু স্থির করবে।
এই মুহূর্তে, যখন তারা একে অপরের পাশে বসে ছিল, পুরো ক্যাম্পাসের সেই সোনালি আকাশের নিচে, কিছু অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছিল
__
0 Comments:
Post a Comment