গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ১৮

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত 

#আয়ান_মাহমুদ 

|১৮|


আজ তন্নী জানতো, তার মনের গভীরে কিছু একটা চলছিল। তবে, তা বুঝে উঠতে তার কিছুটা সময় লাগছিল। ক্যাম্পাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে, সকালের রোদে স্নিগ্ধতার মধ্যে, তন্নী যেন নিজেই এক অদ্ভুত অবস্থায় ছিল। কয়েকদিন ধরে তার মনের ভিতরে যে দুশ্চিন্তা কাজ করছে, তা কোনোভাবে উধাও হচ্ছিল না। এর মধ্যেই তুর্যও তার দিকে তাকিয়ে ছিল, কিন্তু তন্নীর মধ্যে কোনো পরিবর্তন সে সঠিকভাবে অনুভব করছিল না।


আজকের দিনে, কিছু একটা বিশেষভাবে ঘটবে, তন্নী তা জানত। এমন সময়, যখন তুর্য তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল, তন্নী কিছুটা সংকোচ অনুভব করছিল। সেদিনের পর, তুর্যের সাথে তাদের সম্পর্ক এক নতুন দিক নিয়েছিল—অথচ কিছু অস্পষ্টতা এখনও তাদের মধ্যে ছিল। তন্নী জানতো, তার জীবনের মধ্যে একটা গভীর বিষয় আছে, যা সে সরাসরি তুর্যকে বলতেও পারছে না।


তুর্য তার দিকে তাকিয়ে বলল, "তন্নী, তুমি আজকাল কিছুটা বদলে গেছো, কী হয়েছে?"


তন্নী, গম্ভীর হয়ে, নীরবে কিছুটা সময় কাটিয়ে বলল, "কিছু নয়, তুর্য। আমি শুধু মনে হচ্ছিলাম... তুমি আমাকে ঠিকভাবে বুঝতে পারছো না।"


তুর্য খানিকটা অবাক হয়ে বলল, "কেন? আমি তো তোমার পাশে আছি, তন্নী।"


তন্নী হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। "না, তুর্য, তোমার কাছে বলার মতো কিছু নেই। আমি শুধু... কিছুটা বিপদে আছি, বুঝতে পারছো?"


"তুমি কী বলছো, তন্নী?" তুর্য আগ্রহী হয়ে প্রশ্ন করল। "কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলো।"


তন্নী চুপ করে থাকল। তার চোখে এক ধরনের অস্থিরতা ছিল, যেন সে কিছু বলার সাহস পাচ্ছিল না। তুর্য যেন তন্নীর মনের ভেতরের অন্ধকারটুকু বুঝতে পারছিল, কিন্তু সে কিভাবে সাহায্য করবে, সে নিশ্চিত ছিল না।


সন্ধ্যা বেলা, ক্যাম্পাসের গাছের নিচে এক চুপচাপ জায়গায় তারা দুজন বসে ছিল। তুর্য অনুভব করছিল, তন্নী কিছুটা দূরে সরে যাচ্ছে। তার চোখে এক ধরনের গভীর শূন্যতা ছিল, যে শূন্যতা সে খালি করে তুলতে চাইছিল।


"তন্নী, যদি কিছু সমস্যায় পড়ো, বলো। তোমার সব কিছু আমার কাছে খুবই মূল্যবান।"


তন্নী নীরব হয়ে বসে থাকল। কিছুটা সময় পরে সে বলল, "তুর্য, আমি জানি, আমি কখনোই সবকিছু তোমার সামনে নিয়ে আসি না। তবে, আমার নিজের কিছু বিষয় আছে, যেগুলো আমি নিজেই সামলাতে চাই।"


তুর্য তার দিকে তাকিয়ে ছিল, কিন্তু এবার তার চোখে কিছুটা বিভ্রান্তি ছিল। "কী ধরনের বিষয়, তন্নী? তুমি আমাকে জানাবে না?"


তন্নী হালকা এক দুঃখভরা হাসি দিয়ে বলল, "তুর্য, আমি জানি তুমি যতটা চাইবে, আমি ততটা খোলামেলা হতে পারব না। আমার কিছু স্মৃতি আছে, কিছু সম্পর্ক, যেগুলো আজও আমাকে তাড়া করে।"


তুর্য আরও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "তন্নী, আমাদের মধ্যে এমন কিছু নেই যা তুমি বলতে পারো না। তুমি জানো, তুমি যে কোনো মুহূর্তে আমাকে তোমার পাশে পাবে।"


তন্নী মাথা নিচু করে, কিছুটা সময় ভাবল। তারপর সে ধীরে ধীরে চোখ তুলে বলল, "তুর্য, আমার পরিবারের মধ্যে কিছু সম্পর্ক এতটা জটিল, যে আমি জানি না কীভাবে সেগুলো ঠিক করা যাবে। আমি জানি না, আমি তাদের সাথে কীভাবে মুখোমুখি হব।"


তুর্য কিছু সময় তার দিকে চুপ করে তাকিয়ে ছিল। তার চোখে এক ধরনের গভীর সমবেদনা ছিল। "তন্নী, তুমিই তো জানো, তোমার পরিবার তোমার জীবন, তাদের সাথে সম্পর্ক শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। তুমি কখনোই একা নও, আমি এখানে আছি।"


তন্নী আরও কিছু সময় নীরব হয়ে বসে থাকল। তারপর সে এক গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, "কখনো কখনো, আমি জানি না, আমি ঠিক কী চাই। সব কিছু যেন ধোঁয়ায় মিশে যাচ্ছে।"


তুর্য তার হাত ধরে বলল, "তন্নী, কিছু সময় নাও। সময় দিলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। তুমি তোমার জীবনের পথে এগিয়ে যাও, আমি জানি তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।"


তন্নী কিছুটা হালকা হয়ে উঠে বলল, "ধন্যবাদ, তুর্য। তুমি জানো, আমি কখনোই তোমাকে এভাবে বলতে পারতাম না।"


তুর্য মৃদু হাসল, "তন্নী, তুমি কখনো একা নও। আমি তোমার পাশে আছি।"


এদিন, তন্নী কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে নিজের ভিতরের কষ্টগুলো বের করার সাহস পেয়েছিল। তবে, তুর্যের সাথে তার সম্পর্ক আরও গভীর হতে চলেছিল—একটু একটু করে, সময়ের সাথে। কিন্তু তন্নীর ভিতরে যে গোপন কষ্ট ছিল, তা এখনও এক অনির্ধারিত পথের দিকে এগোচ্ছিল। তুর্য তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সেই পথের আলো দেখাচ্ছিল, কিন্তু কবে সে পুরোপুরি সেসব অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসবে, তা ছিল তার নিজের অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল।

0 Comments:

Post a Comment