#এক_তুমিতেই_আসক্ত
#আয়ান_মাহমুদ
|১|
লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছিল একেবারে ব্যস্ত। সকালবেলা রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশে সোনালী রশ্মি ক্যাম্পাসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছিল। ছাত্রছাত্রীরা একে একে ক্লাসে ঢুকছিল, কেউ কেউ পথ চলতে চলতে হাসছিল, আবার কেউ চোখে রোদের কারণে চশমা পরে চলছিল। লিসবন শহরের সাথে ক্যাম্পাসের এক অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল—এটা যেমন একটি শিক্ষার জায়গা, তেমনি আবার এখানে সবাই যেন নিজেদের সপ্নের জন্য একসাথে রাত্রি দিন কাটিয়ে দিচ্ছিল।
এমন এক দিনে প্রথম ক্লাসে ঢুকতে চলেছে তুর্য চৌধুরী। তুর্য একদম নতুন এখানে। গায়ের উপর সূর্যের আলো পড়ছিল, আর সেটি তাকে এক নতুন পরিচয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। পরিপাটি সাদা শার্ট আর সোজা করে বাঁধা জুতোতে সে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পদার্পণ করছিল।
ক্লাসরুমে প্রবেশ করতেই, ছাত্ররা সবার দৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্য তার উপর ফেলে। তবে তুর্য ছিল ভীষণ অগোচরে। চোখে চশমা পরা, গম্ভীর, আর অত্যন্ত মনোযোগী এক তরুণ, তবে তার মধ্যে একটা গভীরতা ছিল, যা ক্লাসের পরিবেশে সবার চেয়ে আলাদা।
তন্নী, অন্যদিকে, এক কোণে বসে ছিল। তার একেবারে নিঃশব্দ দৃষ্টি ছিল। যেন সে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক অজানা স্বপ্নে হারিয়ে গেছে। মিষ্টি গোলাপী রঙের শার্ট এবং সোজা পরা স্কার্টে তন্নী তার শালীনতা এবং অন্তর্মুখিতা নিয়ে ক্লাসে উপস্থিত ছিল। তার চোখের দৃষ্টি সবার থেকে খানিকটা আলাদা ছিল, এক অদৃশ্য পৃথিবীর দিকে।
তুর্য আর তন্নী একে অপরের দিকে সচেতনভাবে একদৃষ্টিতে তাকাল। তুর্য বুঝতে পারলো—এ মেয়েটি খুবই অন্তর্মুখী। খুব কম কথা বলে, তবে তার চোখের ভাষা যেন অনেক কিছু বলে। তন্নী অনুভব করলো—কেউ যেন তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অজান্তেই তার হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে গেল, তবে সে কিছুতেই তা প্রকাশ করতে চাইল না।
ক্লাস শুরু হল, কিন্তু তুর্য এবং তন্নীর মধ্যে এক অদৃশ্য কানেকশন তৈরি হয়ে গেল। তুর্য জানতো না কেন, কিন্তু কেন জানি, তন্নী তাকে প্রচণ্ড আকর্ষণ করছিল, যদিও তন্নী তেমন কিছু ভাবছিল না। সে সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের প্রাথমিক অংশে প্রবেশ করেছে, এবং এই প্রাথমিক ধাক্কাতেই সে নিজেকে খুঁজে পেতে চাইছিল।
ক্লাস চলছিল, কিন্তু তুর্য বারবার তার দৃষ্টি তন্নীর দিকে চলে যাচ্ছিল। তন্নী অল্পস্বল্প মাথা নেড়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছিল, তবুও সেই অজানা অনুভূতি তাকে এক অদ্ভুত আচ্ছন্নতায় ফেলেছিল। কিন্তু তারা দুজনেই কেউই সে অনুভূতি সম্পর্কে কিছু জানতো না। তাদের মধ্যে কোনো কথাই হয়নি, শুধু চোখের সংযোগ ছিল—এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা।
ক্লাস শেষে সবাই বেরিয়ে গেল, তবে তুর্য আর তন্নী একে অপরকে এত কাছে থেকেও কিছু বললো না। তুর্য তন্নীর কাছে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু যেন কোনো অজানা বাধা তার মনের মধ্যে ছিল। তন্নী তুর্যের দিকে তাকিয়ে, মনে মনে ভাবল—"কীভাবে এই নতুন জায়গায় নিজেকে দেখবো? আমি কি আসলেই এখানে থাকতে পারবো?"
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রথম দিনেই, তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল, যা তারা বুঝতে পারেনি। তবে এটি আস্তে আস্তে তাদের একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসবে, আর তাদের মধ্যে কিছু চিরকালীন পরিবর্তন আনবে।
আর তুর্য, সে প্রথম ক্লাসের শেষ মুহূর্তে একবার পিছনে ফিরে তাকায়—তন্নীকে দেখে, একটু অবাক হয়ে। তার মনে কোনো একটা প্রশ্ন ছিল। সেই প্রশ্ন, যা কখনো সমাধান হবে না, কিন্তু অন্তরে গুমরে উঠছিল।
"এই মেয়ে কি আসলেই এমন ঠান্ডা?"
চলবে__
0 Comments:
Post a Comment