#এক_তুমিতেই_আসক্ত
#আয়ান_মাহমুদ
|৪|
পরবর্তী সপ্তাহের দিনগুলো তুর্য এবং তন্নীর জন্য বেশ শান্ত, কিন্তু তাদের মধ্যে অদ্ভুত এক টান যেন বাড়ছিল। পরস্পরের সঙ্গে কথা না বললেও, তারা একে অপরকে অনুভব করছিল—এক ধরনের অজানা সংযোগ। ক্যাম্পাসে যখন তন্নী হেঁটে যেত, তুর্য তার দৃষ্টি থেকে চোখ সরাতে পারত না, কিন্তু তন্নী খুব কমই চোখে চোখ রাখতে দিতো। তন্নী জানত, তুর্য তাকে বেশ লক্ষ করছে, তবে সে যেন অজান্তেই সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টির প্রতি এতটা মনোযোগ দিতে পারছিল না।
একদিন বিকেলবেলা ক্যাম্পাসে একটা ছোটো গ্রুপ বের হয়েছিল। তারা পর্তুগালের ঐতিহাসিক শহর সিনট্রা পরিদর্শন করতে যাচ্ছিল। এই গ্রুপের মধ্যে তুর্য আর তন্নী দুজনকেই দেখা গেল। তুর্য, য সাধারণত একা থাকতে পছন্দ করতো কিন্তু আজ কিছুটা অন্যরকম অনুভূতি ছিল। তন্নীও খুব একটা কথা বলছিল না, তবে তার মুখে এক অদ্ভুত শান্তি ছিল—যেন কিছু একটা শুরু হতে চলেছে।
সিনট্রা পৌঁছানোর পর, তুর্য এবং তন্নী একে অপরের থেকে কিছুটা দূরে ছিল, তবে তাদের মধ্যে এক নিঃশব্দ বোঝাপড়া ছিল। ক্যাম্পাসের অন্যান্য ছাত্ররা যেহেতু মজা করছিল, তাই তুর্য আর তন্নী একান্তে একটু সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
"এখানে কখনো এসেছো?" তুর্য তন্নীকে জিজ্ঞেস করল তখন তারা একটি প্রাচীন দুর্গের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
"না," তন্নী সটান উত্তর দিল, "কিন্তু আমি মনে করি, এমন জায়গাগুলোর মধ্যে সবকিছুই এক ধরনের অদ্ভুত সৌন্দর্য বহন করে। আমি এখানে অনেক কিছু দেখতে চাই।"
তুর্য একটু থেমে দাঁড়িয়ে, তন্নীর দিকে তাকালো। তার কথা শুনে তুর্য বুঝতে পারছিল, তন্নী এমন এক ব্যক্তি যে সাধারণ দর্শনের বাইরে কিছু একটা খুঁজে পায়, যা সাধারণভাবে কেউ খুঁজে পায় না।
"তুমি কি খুব বেশি সময় একা থাকতে পছন্দ করো?" তুর্য প্রশ্ন করল, যেন সরাসরি তন্নীর ভেতরের অনুভূতিকে জানার চেষ্টা করছিল।
তন্নী একটু মৃদু হাসল, "হ্যাঁ, একা থাকতে ভালো লাগে। তবে মাঝে মাঝে, কাউকে যেন খুঁজে পাওয়া যায়—যে বোঝে, আর কাউকে কিছু বলার দরকার হয় না।"
এটা শুনে তুর্য কিছুটা অবাক হলো। তার মনে হল, তন্নী আসলে বোঝাতে চাইছে, মানুষের মধ্যে এমন কিছু অনুভূতি থাকে, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, এবং এমন কিছু মুহূর্ত থাকে, যা শুধুমাত্র অনুভব করা যায়।
"কিছুটা যেন... একসাথে থাকার মধ্যে শিথিলতা থাকে, না?" তুর্য বলল।
তন্নী এক মুহূর্তের জন্য থেমে, তার চোখে এক ধরনের উজ্জ্বলতা ফুটে উঠল। "হ্যাঁ," সে ধীরে ধীরে বলল, "একসাথে থাকতে, তবে একে অপরকে চাপ না দিয়ে, শুধু হাটতে থাকতে ভালো লাগে।"
তুর্য কিছুটা চিন্তা করল, কিন্তু কিছু বলল না। ক্যাম্পাসের এক অংশ থেকে হাসির আওয়াজ আসছিল, আর সে অনুভব করছিল যে, কিছু একে অপরকে জানার জন্যই অপেক্ষা করছে, তবে সেটা ধীরে ধীরে আসবে। তন্নী তার নিস্তব্ধতা এবং পীড়িত হৃদয়কে ধীরে ধীরে তাকে খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছিল।
তন্নী সিঁড়ির ধারে দাঁড়িয়ে রইল, কিছুটা অবাক চোখে তাকিয়ে, "তুমি কি জানো, পর্তুগালের এই জায়গাগুলো অনেকটা মানুষের অনুভূতির মতো। কিছু জায়গা খুব বেশি আলোকিত, আবার কিছু জায়গা খুব একাকী।"
তুর্য তার কথায় বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনল। "তুমি কী মনে কর, আমাদের সম্পর্কটা কেমন হবে?"
তন্নী একটু চুপ করে রইল, তারপর খুব আস্তে বলল, "যে সম্পর্ক ধীরে ধীরে তৈরি হয়, সেটাই সবচেয়ে শক্তিশালী।"
এই কথা শুনে তুর্য একটু স্তম্ভিত হয়ে গেল, কিন্তু তারপর কিছুটা হাসি দিয়ে বলল, "হ্যাঁ, আমি তাতে একমত।"
কিছু সময় পরে, তারা দুজনই গ্রুপের সাথে ক্যাফেতে বসে চা পান করছিল। কথা হয়নি তেমন, তবে তাদের চোখের মধ্যে একটা অদৃশ্য বোঝাপড়া ছিল। তুর্য মনে মনে ভাবছিল, তন্নী যেন এক রহস্যময় জগতের মধ্যে হারিয়ে যায়, এবং সে সেই জগতকে একটুও হালকাভাবে ভাবছে না।
তন্নীও জানতো, কিছু সময় পরে তাদের মধ্যে একটা বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠবে, তবে তার জন্য একে অপরকে জানার প্রয়োজন ছিল—আর তার জন্য ধৈর্য থাকতে হবে। একে অপরকে সহজভাবে নিতে হবে, শুধুমাত্র অনুভবের মধ্যে থাকতে হবে।
এভাবে, সেদিন তারা সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে, সেই পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে, পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, যেখানে একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ ছিল।
চলবে__
0 Comments:
Post a Comment