গল্প রাজনীতি পর্ব ১০

 #রাজনীতি

#পর্ব_১০

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


দিনটা ভালোই কাটলো আসাদের । সারদিনের মাঝে প্রাপ্তির কথা একটি বারের জন্যও মাথায় আসেনি । হয়তো আসতে দেয়নি । হয়তো , খেলার মোড় ঘুরাতে চাচ্ছে আসাদ । 


-------------------------------------------------------------------------------------


পরদিন সকালেও ভার্সিটিতে যায় আসাদ , রাফি এবং সিফাত । সাথে সাঙ্গপাঙ্গরা তো আছে'ই । তবে আজকে ভার্সিটিতে গেছে অন্য একটা কাজে । কয়েকদিন পরেই ভার্সিটিতে হল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন । তবে প্রার্থী মাত্র দুই জন । নাবিল এবং রেজোয়ান । আসাদ নাবিলের পক্ষে থেকেই সম্পূর্ণ নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চাচ্ছে । অবশ্য নাবিলকে সাপোর্ট করার পিছনে যথেষ্ট কারনও আছে । কারন , নাবিলের মাঝে আসাদ নিজেকে দেখতে পায় । ভার্সিটিতে কারো কোনো সমস্যা হলে সবার আগে যদি কাউকে পাওয়া যায় সে হলো এই নাবিল । হোক সেটা ছোট বা বড় ধরনের কোনো সমস্যা । তো যার মাঝে মানুষকে সাহায্য করার প্রবণতা রয়েছে , সে নিশ্চয়ই একটা হল সামলানোর মতো সক্ষমতা রাখে নিজের মাঝে । 


আসাদ নাবিলকে সাপোর্ট করছে দেখে , উপায়ন্তর রেজোয়ান ছুটে গেছে বাপ্পির কাছে । বলা বাহুল্য , আসাদ এবং বাপ্পি একসময়ের সেরা বন্ধুত্বের খেতাব বহন করেছিলে ভার্সিটিতে । তবে এখন , একজন আরেক জনের চোখের বিষ । কারন , ঐ যে রাজনীতি । এই একটা শব্দ ওদের সাত বছরের বন্ধুত্ব সাত সেকেন্ডে শেষ করে দিয়েছিলো । কেউ ভাবেনি কখনো , স্কুল লাইফের এতো ঘনিষ্ঠ দুই জন বন্ধু শুধু এই রাজনীতির চক্করে পড়ে আলাদা হয়ে যাবে । 


বাপ্পি ঢুকছে গেট দিয়ে । মিনারের পাশে দৃঢ় পায়ে দাঁড়ানো হিজল গছের নিচে আসাদ নাবিলের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত । আসাদকে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো বাপ্পি । আসদ গ্রাহ্য করেনি । 


দু'জনের চোখাচোখি শেষ হলে , বাপ্পি মিনারের দু'টো শিড়ি উপরে উঠে হাতে একটা মাইক নিয়ে বলে , "আর কয়েকদিন পরেই তো ইলেকশন । নিশ্চয়ই তোমরা জানো কাকে ভোটটা দিতে হবে , বা কাকে দিলে তোমরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে । এখন আসি মূল কথায় । প্রেসিডেন্ট সবাই হতে পারে , কিন্তু সবাই দায়িত্ব পালন করতে পারেনা । তাই দায়িত্ববান কেউ'ই এই পদ পাবার যোগ্যতা রাখে বলে আমি মনে করি । আমার মতে , রেজোয়ানের চেয়ে ভালো প্রেসিডেন্ট তোমরা অত্র ভার্সিটিতে চিরুনি তল্লাশি চালালেও আরেকজন পাবেনা । তাই কারো প্ররোচনায় না এসে , নিজেদের ভালোটা বুঝতে শেখো ।"


কথাগুলো বলে ক্ষানিক জিরিয়ে নিলো বাপ্পি । অতঃপর আসাদের দিকে তাকিয়ে ঠাট্টার ছলে বলে , "অনেকে তো কোনো যোগ্যতা ছাড়াই রাজনীতিতে চলে আসে ! অতএব , সেসব যোগ্যতাহীন মানুষদের যতটা পারবে এড়িয়ে চলবে ।"


নিজের কথাগুলো শেষ করে , মুচকি হেসে হাত দিয়ে মাইকটা এগিয়ে আহ্বান করে আসাদকে নিজের কথা বলার জন্য । আসাদও প্রতিউত্তরে মুচকি হেসে মাইকটা হাতে তুলে নেয় । দুই আঙুল দিয়ে মাইকে দু'টো বারি মেরে বলতে আরম্ভ করে , "সবাই এতো দূরে দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ? মিনারের কাছে এসো , কথা আছে তোমাদের সাথে ।"


আসাদের ডাকে সকালে সাড়া দিয়ে , ধীরে ধীরে মিনারের কাছে এসে ভিড় জমালো । আসাদ বলে , "তোমাদের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছে , সকলে উত্তর দেবে আশা করি ।"


সকলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালে আসাদের প্রথম প্রশ্ন , "মনে করো , তোমাদের সামনে দু'টো মোবাইল আছে । একটা দেখতে অনেক সুন্দর , পিছনে চারটা ক্যামেরা , ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সরও আছে । বড় সাইজের ডিসপ্লে । কিন্তু প্রসেসর ভালো না । অন্য ফোনে প্রথমটার মতো চারটা ক্যামেরা নেই , অনেক বড় ডিসপ্লে নেই , কিন্তু প্রসেসর অনেক ভালো । এখন আমার প্রশ্ন হলো , তোমরা কোনটা বেছে নেবে ? প্রথমটা নাকি দ্বিতীয়টা ?"


সকলে উচ্চস্বরে বলে উঠলো , "দ্বিতীয়টা !"


আসাদের মুখে হাসি ফুটলো । বাপ্পি রাগে ফুঁসছে , কিন্তু কিছু বলছে না । আসাদ আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো , "এবার আরেকটা প্রশ্ন করি , কেমন ? একজন যোগ্যতাবান ব্যক্তি যে তোমাদের কখনো কোনো বিপদে আপদে সাহায্য করেনি , তোমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি । অন্যদিকে একজন যোগ্যতাহীন ব্যক্তি , যার কোনো যোগ্যতা নেই । কিন্তু মানুষকে সাহায্য করার জন্য বড় একটা মন আছে । সকলের বিপদে আপদে এগিয়ে আসে , সবাইকে নিজের পরিবারের একজন সদস্য মনে করে । এবার বলো , কাকে চাই তোমাদের  ? যোগ্যতাবান নাকি যোগ্যতাহীন ?"


এবারও সবার উত্তর আসাদের পক্ষেই এলো । বাপ্পি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে । কি'ই বা বলবে , বলার মতো কিছু নেই ওর কাছে । আসাদ মুখের হাসি বজায় রেখে বলে , "দেখো তোমাদের নেতা বাপ্পি হয়তো কিছু বলতে চায় । শোনো তাহলে মনোযোগ দিয়ে ।"


আসাদ মাইকটা বাপ্পির হাতে তুলে দিয়ে সবাইকে নিয়ে মিনারের সামনে থেকে চলে আসে । মাঝ মাঠে আসার পরে নাবিল বলে , "ভাই , চলে যাবে নাকি থাকবে ?"


- "কেনো ?"


- "সবাই মিলে একটু চা , সিঙ্গারা খেতাম আর কি !"


- "আমার সামনে ফর্মালিটি দেখালে মাইর এটাও মাটিতে পড়বে না । চা , সিঙ্গারা যারা তোকে ভোট দেবে , যাদের কারনে তুই জিতবি , তাদেরকে খাওয়াবি । আমরা ক্যান্টিনে আছি । প্রয়োজন পড়লে ডাক দিস !"


- "আচ্ছা , ভাই !"


আসাদ এবং বাকিরা চলে গেলো ক্যান্টিনে আর নাবিল গেলো নিজের কাজে । 


ক্যান্টিনে গিয়ে বসতে না বসতেই সিফাত আসাদকে খোঁচানো শুরু করে । আসাদ ত্যক্ত হয়ে বলে , "কি শুরু করছিস ? মেয়ে পেয়েছিস নাকি ?"


সিফাত হাসতে হাসতে বলে , "আরে তোর পাখি এসেছে !"


- "মানে ?"


- "একটু পিছনে তাকাও খোকা ।"


আসাদ পিছনে তাকিয়ে দেখে অনন্যা আসছে । তবে আজ চোখ ফেরাতে পারছে না অনন্যার থেকে । কালো শাড়ি , কালো টিপ , বেশ মানিয়েছে মেয়েটাকে । মুখে মাতাল করা হাসি , আসাদকে বেকাবু করে তুলছে । আসাদ নিজেকে সামলাতে পারছে না । অবস্থা বেশি বেগতিক হবার আগেই আসাদ নিজের চোখ ফিরিয়ে নেয় । 


আসাদের অবস্থা দেখে কেউ নিজের হাসি আটকে রাখতে পারলো না । অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সবাই । ইতিমধ্যে অনন্যাও সেখানে এসে হাজির । বেশ উৎফুল্লের সাথে জিজ্ঞেস করে , "কি ব্যাপার , তোমরা এতো হাসাহাসি করছো কেনো ? আমাকেও বলো !"


রাফি আসাদের কাঁধে হাত রেখে বলে , "তেমন কিছু না , আসলে একজন হারিয়ে ফেলছিলো নিজেকে অন্য একজনের মাঝে । সেটা দেখেই হাসছি ।"


- "এভাবে অর্ধেক কথা বলিস কেনো? লাথি মারমু । পুরোটা বল ।"


- "আরে একটা কুত্তা একটা কুত্তির দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো , সেটাই বলছি ।"


- "কুত্তা কেমন ভাষা ? কুকুর বলতে পারিস না ?"


- "ওরা কুকুর না , ওরা কুৃত্তা !"


- "কই দেখি ?"


রাফি বিরবির করে বলে , "নিজেকে কিভাবে দেখবি ? এখানে তো আর আয়না নেই ।"


- "কি বললি , শুনতে পাইনি ।"


রাফি মুখ খোলার আগেই আসাদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে অনন্যাকে বলে , "আরে ওদের কথা বাদ দাও তো । চলো ঐদিকটায় গিয়ে বসি ।"


- "আচ্ছা , চলো ।"


- "বসবে নাকি হাঁটবে ?"


খুশি হয়ে বলে , "চলো হাঁটি !"


অতঃপর আরকি , দু'জন মিলে বেড়িয়ে পড়ে কিছুটা আনন্দ খোঁজার উদ্দেশ্যে । তবে ভার্সিটির বাহিরে বাইকে উঠতে গেলে দেখা হয় প্রাপ্তির সাথে । প্রাপ্তি আসাদের দিকে তাকিয়ে বলে , "এসব কি আসাদ ? তুমি ওর সাথে কি করছো ?"

 

প্রাপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আসাদ বলে , "তুমি আমার সেই ছাত্রী , যাকে আমি শিখিয়েছি সব নিজের হাতে । শিষ্য হয়ে গুরুকে তুমি মারবে কি শর্তে ? যদি করতে ভুল , তবে ক্ষমা পেতে বারংবার । তবে করেছো যে অন্যায় , তুমি'ই বলো সেটার কি ক্ষমা হয় ?"


চলবে...!!

0 Comments:

Post a Comment