গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ২২

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত #আয়ান_মাহমুদ 

|২২|


--


সিন্ত্রার পাহাড়ি ট্রিপ শেষ। ক্যাম্পফায়ার, রাতে অচেনা স্বীকারোক্তি আর দিনের রোদে দেখা দুটো ছায়া—তুর্য আর তন্নী যেন নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করল। ফিরে এল তারা লিসবনের ব্যস্ত রুটিনে।


কিন্তু ফিরে আসার পর, যেন একটা নীরবতা ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ মুখে কিছু বলছে না, কিন্তু চোখে চোখ পড়লে, চুপচাপ একটা ব্যাখাহীন টান খেলে যায়।


ক্লাসে আবার মুখোমুখি


ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্লাসরুমে সেদিন তাদের আবার একসঙ্গে বসার পালা। একটা গ্রুপ প্রেজেন্টেশন ছিল, তাদের টিমে তাসনিম, তিহান, তুর্য আর তন্নী।


তাসনিম হাসিমুখে বলে, “তোমাদের ট্যুরের রিফ্রেশমেন্ট এখনও গেছে বলে মনে হয় না!”


তুর্য তন্নীর দিকে তাকিয়ে বলে, “সব কিছুতে সময় লাগে। কখনও কখনও অনুভবগুলো এত গভীর হয়ে যায় যে, স্বাভাবিক হতে সময় লাগে।”


তন্নী চোখ নামিয়ে ফেলে, কিন্তু মুখে একটা হালকা হাসি। তিহান ঠাট্টা করে বলে, “ভাই, প্রেজেন্টেশনটা না করলে তোমাদের সেই ‘গভীর অনুভব’ ফেইল হয়ে যাবে।”


সবাই হেসে ওঠে। সেই হাসির মধ্যে, তুর্য তন্নীর দিকে তাকিয়ে একটা শব্দ বলে না। কিন্তু তার চোখ বলছিল—"আমি আছি, তোর পাশেই।"


---


প্রেজেন্টেশন শেষে সবাই ক্যাম্পাসের ক্যাফেতে যায়। রোদেলা বিকেল, ইউনিভার্সিটির সামনে লম্বা বেঞ্চে বসে তন্নী বই পড়ছিল। তুর্য পাশে এসে বসে।


কিছুক্ষণ চুপচাপ। তারপর তুর্য বলল, “তুই জানিস, তোর সেই স্বীকারোক্তির পর থেকে আমি আর আগের মতো নেই। তুই আমাকে ছুঁয়েছিস, গভীরভাবে। এমনভাবে, যা কেউ কখনও পারেনি।”


তন্নী কিছু বলে না।


তুর্য তার পাশে থাকা তন্নীর হাতটা ধীরে ধীরে ধরে ফেলে।


না, কোনো ড্রামা না। না কোনো নাটকীয়তা। নিঃশব্দে, নিঃশ্বাসের মতো এক স্পর্শ।


তন্নীর ঠোঁটের কোণে একটা চুপচাপ হাসি—আর চোখে এক অদ্ভুত আলো।


হাতটা সে ছাড়ায় না।


তুর্য ফিসফিস করে বলে, “এই ছায়ার মতো হাত রাখা, আমার সবচেয়ে নিরাপদ অনুভব।”


---


বন্ধুদের চোখে প্রেমের আভাস


তাসনিম আর তিহান দূর থেকে দেখে।


তিহান হেসে বলে, “তুই কী বলবি?”


তাসনিম বলে, “যে ভালোবাসা শব্দ ছাড়াও প্রকাশ পায়, সেটা সবচেয়ে শক্তিশালী। তন্নী পারছে ওকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে। আর তুর্য? সে তো শুরু থেকেই তন্নীর মতো কাউকে খুঁজছিল।”


---


সেদিন রাতে তন্নীর মায়ের ফোন আসে। অসুস্থ মায়ের গলায় কষ্ট, কিন্তু ভালোবাসা উপচে পড়ে।


“তোর গলায় যেন কিছু বদলে গেছে মা। তুই কি সুখী?”


তন্নী জানে, সে এখনো প্রেমের গল্প মাকে বলেনি।


তবু বলে—“হ্যাঁ মা, আমি একটু একটু করে সুখ খুঁজে নিচ্ছি।”


--


তুর্য রাতে তার বারান্দায় দাঁড়িয়ে, মোবাইলে তন্নীকে মেসেজ পাঠায়—


“তুই আমার জীবনে এক ছায়া, যেটা আমি হারাতেও চাই না, আবার শব্দে বাঁধতেও ভয় পাই। তুই আছিস, আর সেটাই এখন সবচেয়ে বড় পাওয়া।”


তন্নী শুধু রিপ্লাই দেয়—

“হাতে হাত, মনেতে রঙ... আমরা হয়তো বলি না, কিন্তু বুঝি। আর তাতেই আসক্তি বাড়ে...”


---

0 Comments:

Post a Comment