গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ২১

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত 

#আয়ান_মাহমুদ 


|২১|


---


ভোরের হাওয়া আর এক নতুন সকাল


সিন্ত্রার পাহাড়ঘেরা এক ছোট্ট রিসোর্টে ক্লাসের ট্যুরের দ্বিতীয় দিন। সকালের হালকা রোদ্দুর আর কুয়াশা মিলে এক অপার্থিব দৃশ্য। সবাই ব্যস্ত সকালের নাশতা আর ফটোসেশনে। তুর্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে দূরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে। তার পেছনে আস্তে পায়ে এসে দাঁড়ায় তন্নী।


তুর্য মুখ ফেরায় না, শুধু বলে, “সিন্ত্রা এত সুন্দর, কিন্তু আমি যেন আজ অন্য কিছুর জন্য অপেক্ষা করছি।”


তন্নী শান্ত গলায় বলে, “কি সেটা?”


তুর্য এবার তাকায়। “তুই।”


তন্নী একটু হেসে বলে, “আমি তো আছি।”


তুর্য নিচু গলায় বলে, “তুই আছিস, কিন্তু পুরোটা নিয়ে না।”


---


রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে সকলে ঘুরতে যায়। পাহাড়ি ট্রেইলে হাঁটার সময় তুর্য আর তন্নী একটু পিছিয়ে পড়ে। ঝোপের আড়াল দিয়ে দূরে ঝর্ণার শব্দ ভেসে আসছে।


হঠাৎ তন্নী দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর ধীরে ধীরে তুর্যের দিকে ঘুরে বলে—


“তুই জানিস, আমি তোকে কেন দূরে রাখি?”


তুর্য কোনো শব্দ করে না। শুধু তার চোখে অদ্ভুত এক তৃষ্ণা।


তন্নী বলে, “কারণ আমি তোকে ভয় পাই। তুই আমাকে এতটাই প্রভাবিত করিস যে, নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারি।”


তুর্য একটা ধীরে পা এগিয়ে বলে, “হারিয়ে যাস। আমি তোকে ধরবো।”


তন্নীর গলায় একটা কাঁপুনি—“তুই তো জানিস, আমি খুব স্বাভাবিক কেউ না। আমার ভেতর অনেক অনিশ্চয়তা। কিন্তু...”


তুর্য এগিয়ে এসে একদম কাছে দাঁড়ায়।


তন্নী চোখ নিচু করে বলে, “আমি তোমাতেই আসক্ত... কিন্তু সেটা স্বীকার করতে ভয় পাইছিলাম।”


তুর্য মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে, “এই স্বীকারোক্তি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর শব্দ।”


---


একটা না বলা চিঠি


সেই রাতে তন্নী তার নোটবুকে লিখে—


“তুর্য, তোর মাঝে আমি সেই ছায়া খুঁজি যেটা রোদে পথ দেখায়, আর বৃষ্টিতে ছাতা হয়ে দাঁড়ায়। তুই না বললেও, আমি জানি তুই বুঝে গেছিস। আমার এই আসক্তি আসলে ভালোবাসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তুই সেই ভালোবাসার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।”


চিঠিটা সে দেয় না। শুধু রাখে তার ব্যাগে, খুব যত্নে।


---


রিসোর্টের শেষ রাতে ক্যাম্পফায়ার হয়। গান-বাজনার মাঝে তাসনিম তন্নীর পাশে এসে বলে, “তুই তো মুখে কিছু বলিস না, কিন্তু তোর চোখ আজ বলছে সব কিছু।”


তন্নী কাঁধে মাথা রাখে, “তুই জানিস, তুর্যকে আমি হারাতে চাই না। ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।”


তাসনিম চোখের জল মুছে বলে, “তুই পেরেছিস তন্নী। তোদের মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, সেটা অনেক গভীর।”


---


রাতের শেষে তুর্য একা বসে তার নোটবুকে লেখে—


“আজ তন্নীর চোখে আমি আমার নিজের ছায়া দেখেছি। ওর স্বীকারোক্তি কোনো শারীরিক বন্ধনের নয়, বরং আত্মার। আমি জানি, এই ভালোবাসা আমার সারা জীবনের মতো আসক্তি হয়ে থাকবে।”


---


রিসোর্ট ছাড়ার আগে, বাসে ওঠার সময় তন্নী হালকা করে তুর্যের হাত ছুঁয়ে বলে, “তুই আমার মতো কাউকে চাসনি, আমি জানি। কিন্তু আমি তোকে নিজের মতো করে ভালোবাসি।”


তুর্য হাসে, আর তন্নীর হাতে গোপনে একটা ছোট্ট কাগজ গুঁজে দেয়।

লিখা—

“তুই যেমন আছিস, তেমনটাই আমার জন্য পারফেক্ট। আর আমি তোর ভালোবাসাতেই আসক্ত হয়ে যাচ্ছি...”


---

0 Comments:

Post a Comment