গল্প রাজনীতি পর্ব ১৬ সমাপ্ত

 #রাজনীতি

#পর্ব_১৬_এবং_শেষ

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদের কথা শুনে সেলিনা বেগম আনন্দের হাসি হাসলেন । সে কি হাসি । মায়ের মুখের হাসির কাছে হয়তো দুনিয়ার সব সুখ তুচ্ছ ।


-------------------------------------------------------------------------------------


অন্যদিকে , সিফাত প্রাপ্তির সামনে বসে আছে । হাত-বাঁধধা , পা-বাঁধা অবস্থায় বেশ অসহায় প্রাপ্তি । একমনে সিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে । চোখ দিয়ে গিলে ফেলার উপক্রম । সিফাত নিজের চেয়ারটা হাত দিয়ে আরেকটু সামনে টেনে নিয়ে প্রাপ্তিকে বলে , "কেমন আছো ?"


প্রাপ্তি গলা ফাটিয়ে উত্তর দিলো , "মজা নিচ্ছিস তুই আমার সাথে ? হাত-পা খোল আমার । জানে মেরে দিবো একদম !"


- "উফ , কি তেজ ! সত্যি অসাধারন একটা চরিত্র তুমি । তোমার তো রাজনীতিতে থাকা উচিত । আমার কি মনে হয় জানো ? আসাদ ভুলে রাজনীতিতে চলে এসেছে । ওর জায়গায় তুমি হলে হয়তো এতদিনে অনেক সফলতা অর্জন করতে পারতে ।"


- "তুই কিন্তু এবার বেশি বাড়াবাড়ি করছিস । আমাকে এভাবে বেঁধে রাখার কারন কি ? তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি আমি ? শুধু শুধু আমার পথের কাঁটা কেনো হচ্ছিস ?"


- "গুড কোশ্চেন ! উত্তরটা হলো , তুমি আমার কোনো পাকা ধানে মই দাওনি । তবে , আমার ভাইয়ের পাকা ধানে মই দিয়েছো । আর নিজের ভাইয়ের ক্ষতি কিভাবে সহ্য করি , বলো ?"


- "কে তোর ভাই ?"


- "কেনো , আসাদ !"


- "দুইদিন আগে পরিচিত হওয়া একটা ছেলো তোর ভাই ? হাউ ফানি । আগে কি কমেডিয়ান ছিলি নাকি ?"


- "তা ঠিক না , তবে তুমি আসাদকে মারার জন্য যে জগতে পা দিয়েছো । সেই জগতের বাদশা আমি !"


- "মানে ?"


- "মস্টারের নাম শুনেছো কখনো ?"


- "আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাস্টার !"


- "হুম !"


- "না শোনার কি আছে ? তবে কেউ নাকি কখনো দেখেনি ওনাকে !"


- "সামনে আসলে না দেখবে । মাস্টার নামটা শুধু শুধু সবাই ভয় পায়না । মাস্টার একটা ব্রান্ড । মাস্টার নামটা ভালো মানুষদের জন্য যেমন আনন্দের কারন , ঠিক তেমনি খারাপদের জন্য ভয়ের আভা । তোমার কাছে ছোট্ট একটা প্রশ্ন , যদি মস্টার তোমাকে এখন মেরে ফেলতে চায় তাহলে তুমি কি করবে ?"


- "হাসালি । আমাকে মারতে এলে ও নিজে'ই ফেরত যেতে পারবে না । জিন্দা কবর দিয়ে দিবো !"


- "তাই ?"


- "কোনো সন্দেহ আছে ?"


- "ইয়াহ , অভিয়াসলি ।"


- "মাস্টারকে এনে দে , তোর সন্দেহ দূর করে দেবো !"


- "এইতো সামনে বসে আছি , মারো !"


সিফাতের কথায় হতভম্ব হয়ে যায় প্রাপ্তি । সিফাতের মুখে এমন কোনো কথা হয়তো ও আশা করেনি । করবেই বা কিভাবে ? দুইদিন আগে আসা একটা ছেলে , যে কিনা আসাদের ছায়ার তলে পড়ে থাকতো সে নিজেকে মাস্টার পরিচয় দিচ্ছে । সেই মাস্টার , যার নামে সম্পূর্ণ আন্ডারওয়ার্ল্ড চলে । যাকে কেউ কখনো চোখে দেখেনি । হঠাৎ কেউ এসে নিজেকে মস্টার বলে দাবি করলে , চকমকানোটা তো স্বাভাবিক । প্রাপ্তি ক্ষানিক অট্টহাসি হেসে বলে , "তোর কি মনে হয় ? আমি এখন মজা করার মুডে আছি ? তোর কমেডি তুই সার্কাসে গিয়ে শোনাবি । অনেক ইনকাম হবে । তবে আমাকে নয় !"


মুখে একটা মুচকি হাসির রেখা টেনে বলে , "ইফ ইউ থিংক , ইউ আর গুড এট পলিটিক্স । দেন ইউ শুড নো ওয়ান থিং , আই এম দ্যা মেকার অফ রোস্ট পলিটিশিয়ানস্ ।"


সিফাত বসা থেকে উঠে পকেট থেকে একটা সুইচ গিয়ার বের করে বলে , "দিস ইজ ফর ইউ । আই ডোন্ট থিংক দ্যাট , আই শুড ওয়েস্ট এ বুলেট অন ইউ । টু এন আনগ্রেটফুল পারসন !"


ব্লেডের ধারটা অতিরিক্ত ছিলো । প্রাপ্তির গলায় ছোঁয়ানোর সাথে সাথেই রক্ত বের হতে শুরু করে চুয়িয়ে চুয়িয়ে । সিফাত একটানে ব্লেডটা সড়িয়ে ফেলে প্রাপ্তির গলা থেকে । ছটফট করতে করতে প্রাণ হারায় প্রাপ্তি ।


রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে সিফাত মামাকে বলে , "মামা !"


- "হ , ভাইগনা কও !"


- "লাশের সাথে কি করতে হবে আশা করি জানো তুমি !"


- "হেইয়া আবার কইতে ? লাশটারে কুঁচি কুঁচি কইরা মুই তোমারে ছবি পাডাই দিমু আনে । তুমি যাও !"


সিফাত কোনো উত্তর না দিয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো ।  


-------------------------------------------------------------------------------------


ন্যাশনাল পর্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আছে আসাদ এবং সিফাত । আসাদ সিফাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে , "আমাকে এখানে আনলি কেনো ?"


- "কিছু কথা বলার জন্য !"


- "সেটা তো বাসায়ও বলা যেতো , এতদূর আসার কি দরকার ছিলো ?"


- "দরকার আছে বলেই তো আসলাম !"


- "আচ্ছা বল , কি কথা ?"


- "তোর রাজনীতিতে আসার কারন জানতে চাই আমি !"


- "শুনবি ?"


- "হুম , বল !"


- "আমার বাবা একজন সনামধন্য এমপি ছিলেন । আমি তখন অনেক ছোট । আমার পরিবারে , আমি , আমার একটা বড় ভাই , আব্বু আর আম্মু ছিলাম । ছোট হওয়ার সুবিধার্থে আদর অনেকটা বেশি'ই পেতাম বড় ভাইয়ের তুলনায় । তো একদিন সকালে আমি বায়না ধরি ঘুরতে যবো বলে । বাবাও উপয়ান্তর রাজি হয়ে যায় , কারন সেদিন ওনার কোনো কাজ ছিলো না । তাই আমরা চারজন মিলে চলে আসি গাজিপুর ন্যাশনাল পার্কে । ঠিক এইখান-টাতেই বসেছিলাম আমরা । অপজিশন পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন আসলাম সিকদার । পরপর দুইবার বাবার কাছে হেরে যাওয়া গ্লানিটা সে মেনে নিতে পারেনি । তাই সুযোগ পেয়ে ঐদিন হামলা করে আমাদের উপরে । বাবা-মা তো মারা গিয়েছিলেন , তবে আমি আর ভাই বেঁচে গিয়েছিলাম । আমাদের তাড়া করার এক পর্যায়ে আমি আর ভাই আলাদা হয়ে যাই । আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলাম । তবে ভাইয়ের সাথে আর কখনো দেখা হয়নি । আমি তো এটাও জানি না , ও বেঁচে আছে কিনা । এটাই আমার জীবনের ছোট্ট একটা গল্প । আর এই গল্পটাকে সমাপ্ত করতেই আমার রাজনীতিতে আসা । আসলাম সিকদারকে মারাই আমার মূল লক্ষ্য । হ্যাঁ , মারতে তো আমি এখন'ই পারি যদি চাই । তবে না , ও'কে আমি পাওয়ার দিয়েই মারবো । কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা । মজার বিষয় হলো , আমি যাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতাম । সেই রাফি'ই আমাকে সিকদারের সাথে হাত মিলিয়ে মারতে চেয়েছিলো !"


- "রাজনীতি বিষয়টা কি জানিস ? মনে কর আমার এক হাতে এক কাপ চা , আর অন্য হাতে একটা বিস্কুট । এক কাপ চায়ের আমি একটু খেলাম আর বিস্কুটটাকে একটু খাওয়ালাম । এটা হলো মানবতা । এবার সেই বিস্কুটটাকেই আমি খেয়ে ফেললাম , এটা হলো রাজনীতি । রাজনীতিতে নিজের ছায়াকেও বিশ্বাস করতে নেই ।"


- "হুম , সেটা হারে হারে টের পাচ্ছি ।"


- "এবার আসি তোর প্রশ্নের উত্তরে । আমি কেনো তোকে সাহায্য করি বা আমি এতকিছু কিভাবে জানি । হ্যাঁ , তোর কাছে সেই পার্সেল আসা থেকে শুরু করে সবকিছু'ই আমার করা । মাস্টারের নাম তো শুনেছিস ?"


- "হুম , সবাই'ই তো চেনে । তবে শুধু নামে , চেহারায় নয় । চেহারা কেউ দেখেনি ।"


- "আমি'ই সেই মাস্টার , আর তোর বড় ভাই !"


- "দেখ সিফাত , এখন আমি মজা করার মুডে নেই !"


- "তোর বড় ভাইয়ের বাম হাতে একটা জন্মদাগ ছিলো , নিশ্চয়ই তোর মনে আছে ?"


- "হুম , তুই জানলি কিভাবে ?"


সিফাত নিজের বাম হাতটা আসাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে , "দেখতো , এটা সেই দাগ কিনা ?"


আসাদ অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে সিফাতের দিকে । আসাদের অবাক চাহনি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি , নিজের হারানো ভাইকে খুঁজে পাবার আনন্দ । সিফাত জড়িয়ে ধরে কান্নারত অবস্থায় বলে , "তুই এতদিন আমার সাথে ছিলি অথচ আমি চিনতে পারিনি ।"


সিফাত আসাদকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে , "থাক , আর কান্না করতে হবেনা । চল অসমাপ্ত কাজটা সেরে ফেলি ।"


হাত দিয়ে চোখের জল মুছে , "কি কাজ ?"


- "সিকদারের প্রাণ নেয়া !"


- "তার আগে প্রাপ্তির সাথে আমার বোঝাপড়া আছে !"


- "প্রাপ্তি তো নেই !"


- "কোথায় গেছে ?"


- "হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়েছি ।"


- "তাহলে চল , বাকি কাজটার জন্য আর সময় নষ্ট করে কি হবে ? নামের খোঁজে বেনামি !"


*****সমাপ্ত*****


[ গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি । আর গল্পটা অনেক সময় নিয়ে লিখেছি , অনেক অপেক্ষা করিয়েছি । তার জন্য দুঃখিত । এতদিন পাশে থাকার জন্য , অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ । আমার পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ রইলো ]

0 Comments:

Post a Comment