গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ২৯

 |২৯|


সোফির কাছে ফোন এলো—

— “তুর্য ফিরে এসেছে। সে এলিয়েন নাকি? এটাই কি তার ফিরে আসা?”


তন্নী এক দৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকে। এক সময়, সেই এক নাম, সেই এক মুখ এখন কতটা বদলে গেছে। অনেক কিছু বদলে গেছে, তন্নী নিজেও জানে।


তুর্য ক্যাম্পাসে ফিরেছে। এখন সব কিছুই যেন নতুন।


তন্নী তখন কনফিউশনে—

এমনকি তুর্যের ফিরে আসাও যেন এক ধরনের নতুন পরীক্ষা। কতটা প্রস্তুত সে? কতটা বদলেছে তার কাছ থেকে দূরে থাকার সময়?


---


অবশেষে ক্যাম্পাসের গেটে দেখা হয়।

তুর্য একদম পুরনো তুর্য, কিন্তু তন্নী জানে—তাকে এই অবস্থায় দেখার জন্যই তো এত সময় কেটেছে।


তুর্য কাছে আসে, চোখে তার নিরবতা আর কিছুটা লাজুকতা।

— “তন্নী...”


তন্নী তার চোখের দিকে তাকায়, শ্বাস ফেলে।

— “তুর্য, তুমি কী ভাবে ফিরে এসেছো?”


তুর্য একটু হাসে, তারপর চোখের কোণে এক টুকরো দুঃখ বয়ে যায়।

— “তন্নী, পৃথিবীটা কখনোই পুরোপুরি বদলানো যায় না। যেটা পরিবর্তন হয়, সেটা কেবল সময়। তুমি ছিলে, আমি ছিলাম—এখনো আছি।”


তন্নী চোখের জল ফেলতে চায় না, কিন্তু তার হৃদয়ের অভ্যন্তরে এক অজানা শূন্যতা বেড়ে যায়।

তুর্য কি বুঝতে পারছে তার এই অনুভূতি? সে কি জানে যে এত দিন পর, তাদের নতুন করে একে অপরের কাছে ফিরে আসা কতটা কঠিন?


---


তুর্য হেসে বলে,

— “আমরা তো অনেক গল্প জমিয়ে রেখেছি! মনে আছে আমাদের কাস্কাইসের রোদে দোল খাওয়ার দিন?”


তন্নী হেসে ওঠে, কিন্তু তার হাসি যেন অস্থির।

— “হ্যাঁ, খুব ভালো মনে আছে।”


তুর্য তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকায়।

— “তন্নী, আমি তো জানতাম তুমি সবসময় ভাববে আমি চলে যাব, কিন্তু আমি জানি, তুমি কিছুটা হলেও বিশ্বাস করো—আমার জন্য এই সময়টা অনেকটা অপেক্ষা ছিল।”


তন্নী কিছু বলার আগেই তুর্য তার হাতটা তুলে ধরে। সে একটু আশ্চর্য হয়, তন্নী।

এই মুহূর্তে তার মনে হয়নি, তুর্য কতটা কাছাকাছি এসেছে, অথচ সে এত দিন তাকে দূরে ঠেলে রেখেছিল।


---


তন্নী হাতের তালুতে অনুভব করে তুর্যের উষ্ণতা।

তুর্য ফিরে এসেছে, সে জানে, কিন্তু মনের অজানা ভয় কি তাকে আবার বাঁচতে দেবে? আবার সেই প্রাচীন অনুভূতি কি ফিরে আসবে?


তন্নী ঘাড় ঘুরিয়ে, চোখে অস্থিরতা নিয়ে হেসে বলে—

— “তুর্য, জানো, তুমি ফিরে এলেও অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। সময় পাল্টে গিয়েছে। আমাদেরও। আমরা দুজন আলাদা।”


তুর্য শুধু এক মুহূর্ত থেমে থেকে বলে—

— “তন্নী, আমি জানি। কিন্তু আমরা একসাথে বড় হতে পারব না, যদি সঠিক সময়ে আমাদের হাতে হাত না থাকে।”


তন্নী কিছু বলতে পারে না। তার মনের ভেতরে হাজারটা অশান্তি। আবার নতুন করে সব শুরু করতে হবে?


তুর্য তার হাত চেপে ধরে, নীরবভাবে বলে—

— “আসলেই তো, আবার দেখা, আবার হাতে হাত।”


তন্নী বুঝে, সেই হাত ধরে থাকার শক্তি শুধুমাত্র একটাই—ভালোবাসা। যতই সময় পার হয়ে যাক, সেই অনুভূতিটা কখনো মুছে যায় না।


---


তন্নী কিছুটা সময় নেয়। পরে হালকা হাসে এবং তুর্যর হাত আঁকড়ে ধরে।

তুর্য হেসে ওঠে, আবার সেই পুরনো হাসি।


— “তন্নী, জানো, অনেক কিছু হারানোর পরে বুঝতে পারলাম—এটাই সঠিক সময়।”


তন্নী শুধু একবার চোখ বন্ধ করে, তারপর বলে—

— “তোমার কথা মনে ছিল, তুর্য। আমি জানতাম, তুমি ফিরে আসবে।”


তুর্য তার হাত শক্ত করে ধরে, যেন কিছু হারানোর ভয় নেই।

এই নতুন শুরু, এই নতুন অধ্যায়, সবকিছু যেভাবে শুরু হয়েছিল—ঠিক সেভাবেই, আবার শুরু হতে চলেছে।


---

0 Comments:

Post a Comment