#এক_তুমিতেই_আসক্ত
#আয়ান_মাহমুদ
|৮|
পর্তুগালের গ্রীষ্মকাল। দিনগুলো একে একে গড়িয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণে আনন্দের ঝিলিক, হাসি-ঠাট্টা আর কিছুটা অদেখা উত্তেজনা। কিন্তু তুর্য এবং তন্নী, তারা নিজেরাই এক অদ্ভুত ধীরগতির পথে হাঁটছিল। সম্পর্কের যে আস্তে আস্তে প্রগতি হচ্ছে, তার সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না তাদের কার্যক্রম—তবে, তারা জানত একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার জন্য সময় তো লাগবেই।
আজকের দিনটা ছিল বিশেষ। ক্যাম্পাসের বেশ কিছু বন্ধু মিলে কাস্কাইসের দিকে একদিনের জন্য ট্যুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। সেখানে গিয়ে সবাই মিলিয়ে একটু আনন্দ করতে চাচ্ছিল। তাসনিম ও তিহান নিশ্চিতভাবে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগ্রহী ছিল, এবং তুর্য আর তন্নীও তাদের সঙ্গে যেতে সম্মত হয়েছিল।
কাস্কাইস, পর্তুগালের পশ্চিম উপকূলে একটি ছোট্ট শহর, যেখানে সাগরের নীল জল আর সোনালি বালু একত্রে মিশে যায়। সেখানে সূর্যের আলোতে দোল খাওয়ার অনুভূতি ছিল একেবারেই আলাদা। ক্যাম্পাসের পড়াশোনার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেয়ে সবাই মিলে মুক্ত বাতাসে একটু শ্বাস নিতে চাচ্ছিল।
ক্যাম্পাস থেকে গাড়িতে করে সবাই কাস্কাইসের দিকে রওনা দিল। রাস্তায় চলতে চলতে তুর্য আর তন্নী দুজনেই হালকা কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখছিল। যদিও তারা একে অপরকে নিয়ে ভাবছিল, তাসনিম আর তিহান মাঝে মাঝে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মজা করছিল।
"তুর্য, তন্নী! একটা ছবি তোলো!" তাসনিম হঠাৎ করে তাদেরকে ডাকল। সে নিজে প্রায়ই এই ধরনের অস্থিরতার জন্য পরিচিত। তুর্য আর তন্নী একে অপরকে তাকিয়ে হাসল, কিন্তু কিছুটা লজ্জা পেলেও ছবির জন্য পোজ দিল।
তিহান তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, "দেখো, আজ তো কেউ অতিরিক্ত সিরিয়াস নয়। কিন্তু তুর্য, তোমার মধ্যে একটা গোপন রহস্য আছে না?"
তুর্য একটু মুচকি হাসল, "তিহান, তুমি তো জানো, আমাদের মধ্যে কিছু নেই।"
তাহলে, তারা সবাই কাস্কাইসের রুক্ষ সমুদ্রের তীরে চলে গেল। সেখানে সূর্য কিছুটা নিচু হয়ে আসছিল, আর সমুদ্রের ঢেউ সোনালী বালুর ওপর আছড়ে পড়ছিল। তন্নী নিস্তব্ধভাবে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিল, যেন কিছু গভীর চিন্তা তার মনে উঁকি দিচ্ছিল। তুর্য একটু দূর থেকে তাকিয়ে ছিল। তার মনে হচ্ছিল, তন্নী কিছু একটা ভাবছে, তবে সে জানত, তন্নী কখনো নিজেকে পুরোপুরি প্রকাশ করবে না।
তাসনিম আর তিহান তখন সমুদ্রের পাড়ে হঠাৎ মজা করতে শুরু করেছিল। তাসনিমের উত্তেজনায় সবার মধ্যে একটা হাস্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তবে তুর্য আর তন্নী একে অপরের চোখে কিছুটা আলাদা কিছু অনুভব করছিল। তারা মজা করছে না, তবে অনুভব করছে একে অপরকে। তুর্য কখনো হেসে উঠছিল, কখনো তন্নীর দিকে তাকিয়ে গভীর দৃষ্টি রাখছিল, তবে তন্নী যেন কিছুটা নিজেকে গুটিয়ে রাখছিল।
"তন্নী, এখানে শান্তি আছে, তাই না?" তুর্য তার কাছে গিয়ে বলল, যেন আরেকটু কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। "এখানে মন শান্ত থাকে।"
তন্নী কিছু সময় চুপচাপ ছিল, তারপর স্নিগ্ধ কণ্ঠে বলল, "হ্যাঁ, সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে থাকার অনুভূতি খুব শান্তিপূর্ণ। কিন্তু এমন শান্তি সব সময় পাওয়া যায় না।"
তুর্য তার কথা বুঝতে পেরে, হালকা হাসল। "তবে শান্তি তো এক ধরনের সমুদ্রের মতো, মাঝে মাঝে তা উত্তাল হয়।"
তন্নী তার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হল, "তুমি ঠিক বলেছো। আমি জানি, কিছু মুহূর্ত খুব কঠিন হতে পারে, কিন্তু এই শান্তি... একেবারে সবকিছুই বদলে দেয়।"
তুর্য তার দিকে তাকিয়ে ছিল, কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গিয়ে, কিন্তু তন্নী কিছুটা দূরে তাকিয়ে বলল, "তুর্য, আমি জানি, আমাদের মাঝে কিছু রয়েছে—তবে আমাদের এটা সময় নিয়ে বুঝতে হবে।"
তুর্য কিছুটা থেমে গিয়ে, "হ্যাঁ, আমি জানি।" তারপর তারা একে অপরকে কিছুক্ষণ চুপচাপ দেখল। তন্নীর চোখে কিছু এক অনুভূতি ছিল, কিন্তু সে সেটা আর প্রকাশ করতে চায়নি। তুর্যও বুঝতে পারছিল, তন্নী নিজের মনে কিছু ভাবছে, তবে সে তার মাঝে কিছু চাপ দেয়নি।
এদিকে, তাসনিম আর তিহান তাদের সাথে যুক্ত হয়ে বাকি সবাইকে সমুদ্রের ধারে নিয়ে যাচ্ছিল, তবে তুর্য আর তন্নী জানত, আজকের দিনটি তাদের জন্য আরও একটি নতুন সম্পর্কের দিক উন্মোচন করতে পারে।
এটা ছিল কাস্কাইসে তাদের প্রথম সফর, যেখানে ধীরে ধীরে এক নতুন অনুভূতি তৈরি হচ্ছিল।
---
0 Comments:
Post a Comment