#রাজনীতি
#পর্ব_৮
#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ
-------------------------------------------------------------------------------------
প্রাপ্তি কোনো উত্তর দিলো না । আসাদ প্রাপ্তির পাশ থেকে উঠে ক্যানটিনের দিকে যায় । কিছুটা সামনে এগোলে , কারো ডাক পেয়ে আসাদ থমকে দাঁড়ায় । গলার স্বরটা বেশ পরিচিত । তবে খেয়াল করতে পারছে না কোথায় শুনেছে । মাথায় জোর না দিয়ে পিছনে তাকালে দেখে , অনন্যা ওর দিকে এগিয়ে আসছে । মুখে বিরল হাসি । ভার্সিটি জীবন একসাথেই কেটেছে ওদের । তবে , দুর্বল আসাদ থেকে সবল হয়ে ওঠার রাস্তাটা ভীষণ কঠিন ছিলো । আর সেই রাস্তায় আসাদের সঙ্গীদের মাঝে অনন্যাও একজন । মজার বিষয় হলো , অনন্যা আসাদকে সব ভাবে সাহায্য করলেও আসাদের এটা অজানা । কিন্তু রাফি জানে , অনন্যা আসাদের জন্য ঠিক কতটা করেছে ।
আসাদের সামনে এসে মুখে হাসি রেখে অনন্যা বলে , "কি গো রাজনীতিবিদ , আমাকে তো ভুলেই গেলেন ! না কোনো কল , না ম্যাসেজ । পর হয়ে গেছি বুঝি ?"
আসাদ মাথা চুলকে বলে , "আরে তেমন কিছু না । আসলে তোমার নতুন নাম্বার আমার কাছে নেই , পুরাতন নাম্বারে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু সংযোগ হয়ে ওঠেনি ।"
- "রাফির কাছে তো আমার নাম্বার ছিলো , ও'কে বলতে পারতা !"
- "কই রাফি তো আমাকে কিছু বলেনি । আমি ওর কাছে তোমার নম্বার অনেকবার চেয়েছি । বাট ও বলেছে , ওর কাছে নেই ।"
- "আচ্ছা , বাদ দাও । চলো এক কাপ কফি খেয়ে আসি । ক্যান্টিনের সেই কফি , আর জমজমাট আড্ডা । উফ , অনেক মিস করি ।"
- "হুম , চলো । কফি পাগলি !"
- "বলছে তোমাকে ।"
- "বলছেই তো । কফি ছাড়া তো আর কিছু মাথায় আসে না তোমার !"
অনন্যা মুখ ভেংচি কেটে বলে , "তোমার মাথা !"
খুনসুটি করতে করতে ক্যান্টিনের সামনে চলে এসেছে । ভিতরে রাফি , সিফাত এবং বাকিরা সিঙ্গারার আড্ডায় মেতে উঠেছে । রাফির কাছে গিয়ে রাফির পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে অনন্যা বলে , "কিরে হারামি , তোর কাছে আমার নাম্বার নেই ?"
রাফি অনন্যাকে দেখতে পেয়ে বসা থেকে উঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে । অনন্যা মজা করে বলে , "হয়েছে ভাই , ছাড় এবার । নাহলে আমার হাড্ডি-গুড্ডি এখন ভাঙবে । যেভাবে ধরেছিস !"
অনন্যাকে ছেড়ে দিয়ে বলে , "এবার বল , হঠাৎ কি মনে করে ? আমাকে তো একটাবার জানানোর প্রয়োজনবোধ করলি না যে , তুই আজকে ক্যাম্পাসে আসবি ।"
- "একটা থাপ্পড় মারবো । তুই আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে । আমার নাম্বার নেই তোর কাছে ?"
- "হুম , আছে ।"
- "আসাদ চয়েছিলো , তো দিলি না কেনো ?"
- "তুই তো জানিস কেনো দেইনি । তাও এই প্রশ্নটা কেনো করছিস ?"
- "দিতে পারতি , আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি । আমার সমস্যা হতো না । আমার জিনিসটা নাহয় একান্তই আমার থাক ।"
- "যাকগে , বদ দে ঐসব পুরোনো কথা । এখন বল , তুই দেশে আসলি কবে ?"
- "এইতো গতকাল রাতে এসেছি । নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না ক্যাম্পাসে আসা থেকে , তাই চলে এলাম টহল দিতে ।"
- "ভালো করেছিস , জানি তো কফির লোভে এসেছিস এখানে । আমাদের সাথে দেখা করতে এলে তো জানাতি ।"
- "আসাদের সাথে থেকে থেকে তুইও এখন আসাদের মতো কথা বলছিস !"
রাফি ক্ষানিক হেসে নিয়ে বলে , "আচ্ছা , তোরা ঐদিক টায় গিয়ে বস যা ! আমি একটু পরে আসছি ।"
- "ঠিক আছে ।"
আসাদ এবং অনন্যা গিয়ে কর্নারের একটা টেবিলে বসলো । আসাদ কফির অর্ডার দিয়ে অনন্যার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।
- "এতদিন কোথায় ছিলে ? ভার্সিটি লাইফ শেষ হবার পড়ে না কোনো খোঁজ , না কোনো খবর !"
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে , "ছিলাম কারো স্মৃতিচারণে ।"
- "মানে ?"
- "বাদ দাও আমার কথা । তুমি বলো , এতো অল্প সময়ে এতো নাম ডাক কিভাবে ? দুই বছর আগের আসাদ আর এখনকার আসাদের মধ্যে পার্থক্য আকাশ পাতাল । এতটা পরিবর্তন কিভাবে ?"
- "আমি সেই আগের আসাদ'ই রয়ে গেছি । শুধু তোমাদের দেখার নজরিয়াটা বদলে গেছে ।"
- "হয়তো ! তারপর , প্রাপ্তির কি খবর ?"
- "আছে ভালোই ।"
- "আগের মত'ই রয়ে গেছে নাকি পরিবর্তন এসেছে ?"
- "যেদিন থেকে আমি পরিবর্তন হয়েছি , সেদিন থেকে ওর মাঝেও পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি । এখন জানিনা , সেই পরিবর্তনটা কার জন্য এসেছে ।"
- "আলবাদ , তোমার জন্য । যেহেতু ও তোমাকে ভালোবাসে ।"
- "হয়তো , আবার হয়তো না !"
- "হয়তো কেনো বলছো , যাকে ভালোবাসো তাকে বোঝো না তুমি ?"
আসাদ কিছু বলার আগেই পিচ্চি কফি নিয়ে হাজির । অনন্যাকে দেখে ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বলে , "আপু তুমি কেমন আছো ? কতদিন পর তোমাকে দেখলাম ।"
মন খারাপ বলে বলে , "এখন তো আর আগের মতো আসো'ই না ।"
অনন্যা পিচ্চির গালে হাত বুলিয়ে বলে , "কিভাবে আসবো রে সোনা , আমি তো দেশে ছিলাম না । তুই কি পড়াশোনা করিস এখন ? নাকি আমার যাবার পড়ে সব বাদ , কোনটা ?"
- "তুমি'ই তো প্রতি মাসে রফিক চাচার কাছে আমার জন্য টাকা পাঠাতে , তাহলে কিভাবে বাদ দিবো বলো ? আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা ?"
কপালে চুমু একে দিয়ে বলে , "গুড বয় । আচ্ছা , এখন যা ।"
- "আচ্ছা !"
আসাদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে অনন্যাকে দেখছে । আসলেই মেয়েটা অদ্ভুত প্রকৃতির । যাকে চেনেনা , যার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই । তার দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় । সবাই যদি এমন হতো , তাহলে হয়তো সমাজে কারো সাথে কোনো বৈষম্য থাকতো না ।
-------------------------------------------------------------------------------------
রুমের সবকিছু ভেঙে চুরমার । তবুও রাগ কমছে না । নিজেকে সামলাতে পারছে না কিছুতেই । টেবিলের উপরে এক হাত রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে মেয়েটি । ভয়ে ভয়ে একটা ছেলে সামনে এগিয়ে এসে বলে , "আপু , শান্ত হও প্লিজ !"
রাগে চোখ রক্তবর্ণ ধারন করেছে । রক্তবর্ণ চোখে ছেলেটার দিকে তাকালে , চোখের ঝাঁজ সহ্য করতে না পরে মাথা নিচু করে ফেলে ছেলেটা । মুচকি হেসে বলে , "শান্ত হবো ? হ্যাঁ আমি শান্ত হবো । তবে সেদিন , যেদিন আমার দেয়া কাজটা তোরা সম্পন্ন করতে পারবি । দুই দিন সুযোগ করে দিলাম , কিন্তু লাভ কি হলো ? ব্যর্থ । তোরা তো জানিস , ব্যর্থতা জিনিসটা আমার সহ্য হয়না । শেষ আরেকটা সুযো দিলাম । হয় আসাদকে মেরে ফেল , নাহয় তোদের মৃত্যু কেউ আটকাতে পারবে না । কথাটা যেন মাথায় থাকে । আমি বারবার বলবো না !"
চলবে...!!
0 Comments:
Post a Comment