গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ১৯

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত 

#আয়ান_মাহমুদ 

|১৯|


পর্তুগালের লিসবন শহর যেন রাতের বেলায় নতুন রঙে সেজে ওঠে। বাতিগুলো জ্বলে উঠে, রাস্তার পাশে বসা মানুষদের হাসি, ক্যাফের কাপে ধোঁয়া ওঠা কফির ঘ্রাণ, আর সেই বিশাল ট্যাগাস নদীর উপর পড়ে থাকা জোছনার আলোর রেখা—সব মিলিয়ে যেন এক কবিতা। এই শহরের রাতগুলো শুধু শহরের নয়, মনটারও ভিতর কিছু আলো আর ছায়ার খেলা।


তাসনিম, তিহান, তুর্য আর তন্নী—সবারই আজ একটু অন্যরকম দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার মিড প্রেজেন্টেশন শেষ হয়েছে, সবাই ক্লান্ত কিন্তু একরকম হালকা আনন্দের ছোঁয়ায় ভেসে আছে।


তিহান প্রস্তাব দিল, “চলো আজ সবাই লিসবনের রিভারসাইডে যাই। ক্যাফেতে বসে একটু আরাম করা যাক।”


তাসনিম চোখ টিপে বলল, “তোমার আসল উদ্দেশ্য কফি না, তন্নীর পাশে বসে প্রেমের অভিনয় করা।”


তিহান হেসে বলল, “ভুল করছো তাসনিম। আমার একমাত্র লক্ষ্য হলো তুর্যর চোখে ঝিলিক দেখা। ও আজ খুব ভালো প্রেজেন্টেশন করেছে।”


তুর্য হালকা হেসে বলল, “আমি বরং চাই তন্নী একটু হাঁটে, একটু রিল্যাক্স করে। ও গত কয়েকদিন ধরে বেশ চুপচাপ।”


তন্নী কিছু না বলে চোখ নামিয়ে নিল। এই নিঃশব্দতা যেন আজ তার ভাষা হয়ে উঠেছে।


---


রিভারসাইডের সন্ধ্যা:


চারজনই বসেছে শহরের নামী একটা রিভারসাইড ক্যাফেতে। সামনের টেবিলে মোমবাতির আলো। কফির কাপ, হালকা জ্যাজ মিউজিক, আর নদীর পাশে ভেসে আসা ঠান্ডা বাতাস। সময়টা যেন থেমে গেছে।


তুর্য হঠাৎ বলল, “তন্নী, তুমি এখন ঠিক আছো?”


তন্নী মাথা ঝাঁকিয়ে ‘হ্যাঁ’ বলল, কিন্তু চোখে ছিল অন্য কথা।


তাসনিম ও তিহান বুঝে গেল, ওদের একটু জায়গা দিতে হবে। তারা একটু দূরে গিয়ে নদীর দিকে হাঁটতে লাগল।


তন্নী ধীরে ধীরে বলল, “তুর্য, আমি তোমার কাছ থেকে কিছু লুকোতে চাইনি। শুধু সময় নিতে চেয়েছিলাম।”


তুর্য কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “আমি জানি তন্নী। আমি কেবল তোমার পাশে থাকতে চাই, কোনো চাপ ছাড়াই।”


তন্নী তাকিয়ে রইল নদীর ওপরে। “আজ আমি একটা কথা বলতে চাই... হয়তো এটা সময়ের আগেই বলে ফেলছি…”


তুর্য তার দিকে তাকিয়ে রইল। বাতাসে তন্নীর চুল ওড়ছিল, চোখে ছিল হালকা আলো-ছায়ার খেলা।


তন্নী বলল, “তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে বদলে দিচ্ছে। আমি অনুভব করছি, তুমি আমার ভেতরে এমন কিছু জাগিয়ে তুলছো, যেটা আগে কখনও অনুভব করিনি।”


তুর্য নিঃশব্দে বলল, “তন্নী… আমি এটা অনুভব করছিলাম। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম, তুমি নিজেই সেটা উপলব্ধি করো।”


তন্নী ধীরে বলল, “তুমি এমন একজন, যার পাশে আমি নিরাপদ বোধ করি। কিন্তু আমি ভয় পাই… যদি আমি আবার হারিয়ে যাই?”


তুর্য তার হাতের উপর হাত রাখল। “তুমি হারাবে না, কারণ আমি এবার তোমার পাশে আছি। পুরোপুরি। ধীরে ধীরে হলেও আমি জানি, আমাদের দুজনের পথ একইদিকে যাচ্ছে।”


তন্নীর চোখে একফোঁটা অশ্রু ঝরল—শুধু মুক্তি আর স্বস্তির। আজ রাতে সে প্রথমবার কারও সামনে নিজের অনুভব খুলে ধরল।


---


রাতের শেষটা:


তিহান আর তাসনিম ফিরে এসে বলল, “তোমরা তো দেখি একদম গল্পে ডুবে গেছো।”


তন্নী লজ্জা পেলেও মুচকি হেসে উঠল। তুর্য শান্তভাবে তাকিয়ে রইল তার দিকে।


লিসবনের রাত্রি আজ এক নতুন অনুভবের সাক্ষী হয়ে থাকল। এই রাত যেন প্রথম স্বীকারোক্তির রাত—মুখে বলা না হোক, কিন্তু চোখে, অনুভবে, নীরবতার ভেতর এক গভীর প্রেমের সূচনা হয়ে গেল।


---

0 Comments:

Post a Comment