গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ৭

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত 

#আয়ান_মাহমুদ 


|৭|


ক্যাম্পাসে এক স্নিগ্ধ বিকেল। পর্তুগালের আকাশে সোনালী রোদ যেন সমস্ত দৃশ্যটাকে সোনালী রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে। আর ঠিক তখনই, তুর্য আর তন্নী এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল। তন্নী এখনও আগের মতো শান্ত, কিছুটা দূরত্ব রেখে তুর্যকে অনুভব করছিল। তুর্যও জানত, তাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে, তবে সে এক ধরনের আগ্রহ নিয়ে তন্নীকে আরও জানতে চাচ্ছিল।


তাছাড়া, তুর্য জানত যে এই ক্যাম্পাসে আরও কিছু বন্ধু রয়েছে যারা প্রায়ই তাদের মাঝে হাস্যরসের ঘটনা তৈরি করে। আজকের বিকেলে সেই হাস্যরসের গল্পে যোগ দিতে এসেছিল তাসনিম আর তিহান। তাসনিম, যাকে সবাই খুব প্রফুল্ল ও দুষ্টু হিসেবে জানে, আজও তার সেই পুরনো হাস্যরসের শৈলী নিয়ে হাজির। আর তিহান, যে তাসনিমের সহযাত্রী এবং মাঝে মাঝে তার অদ্ভুত মন্তব্যে সব কিছু আরও মজার করে তোলে, আজও কিছু এক্সট্রা মজা খুঁজে বের করছিল।


তাসনিম এসে দাঁড়াল তুর্য ও তন্নীর পাশে। তার মুখে এক লুকানো দুষ্টুমি ছিল, যেন সে কোনো কিছু ঘটানোর জন্য প্রস্তুত।


"তুর্য, তন্নী, তোমরা তো বড় সিরিয়াস। একটু মজা দরকার, কী বলো?" তাসনিম হালকা হেসে বলল।


তুর্য মৃদু হাসল, "কিছু মজা করতে চাইলে, তবে আমরা সেজন্য প্রস্তুত।"


তন্নী তাসনিমের দিকে তাকিয়ে, একটু মৃদু হাসল, কিন্তু তার চোখে ছিল একধরনের মুচকি হাসির আভাস—যেমন কিছু একটা জিজ্ঞাসা করতে চায়, কিন্তু কেবল কথাগুলো লুকিয়ে রাখতে চায়।


"তাহলে, তোমরা জানো কি? তিহান আজ আবারও অদ্ভুত কিছু বলেছে," তাসনিম বলল, তার মুখে কিছুটা তামাশার ছাপ ছিল। "সে বলছে, তোমরা দুজনের মাঝে ‘কেমিস্ট্রি’ এখন ঠিকঠাক চলছে না।"


তন্নী একটু অস্বস্তি অনুভব করে, তাসনিমের দিকে তাকাল। "তিহান কি... জানে আমাদের কথা?" সে কিছুটা সন্দেহভরে প্রশ্ন করল।


তাসনিম হেসে বলল, "আরে না, তন্নী। তিহান শুধু একটা মজার মন্তব্য করেছে। তুমি আর তুর্য তো, আসলেই একে অপরের কাছাকাছি আসছো, তবে এই কেমিস্ট্রি কি সত্যিই কাজ করছে?"


তুর্য একটু থেমে গিয়ে বলল, "তাসনিম, তোমার কেমিস্ট্রি আমার মাথায় ঢুকছে না, কিন্তু তুমি কী বলতে চাও তা বোঝা যাচ্ছে।"


তিহান তখন এসে হাজির, তার হাতে একটি কফি কাপ ছিল। "তাসনিম তোমাকে জানাতেই চেয়েছিল, কিন্তু আমরা সবাই জানি তোমরা দুটি কি করছেন। তোমাদের মাঝে কিছু তো নিশ্চয়ই ঘটছে, তবে এখনও কিছু বলার সময় হয়নি।"


তন্নী একটু লাল হয়ে গেল, তার মুখে হালকা লজ্জা দেখা গেল। তুর্যও একটু অস্বস্তি অনুভব করছিল, কিন্তু তার মধ্যে এক ধরনের মিষ্টি হালকা হাসি ফুটে উঠেছিল। তাসনিম আর তিহান দুজনেই তাদের নিয়ে হাসাহাসি করছিল, কিন্তু এটা যেন একটি বন্ধুত্বপূর্ণ মজা ছিল, যা সম্পর্কের মধ্যে কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি।


"তাসনিম, তুমি কি কখনো থামবে?" তুর্য তার কণ্ঠে মৃদু তামাশা করে বলল।


তাসনিম হাত তুলে বলল, "ঠিক আছে, ঠিক আছে! আমি শুধু বলছিলাম, ক্যাম্পাসে সবাই জানে তুমি দুজন একে অপরের প্রতি কি অনুভব করছো।"


তন্নী কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নিচু করে বলল, "আমরা শুধু একটু পরিচিত হচ্ছি, কিছুই ঘটেনি।"


তিহান হালকা হাসল, "তুমি ঠিক বলেছো, তন্নী। কিন্তু ক্যাম্পাসে কিছু অদ্ভুত শক্তি কাজ করে, তাই না? যারা নিজেদের মধ্যে কিছু অনুভব করতে পারে, তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত টান থাকে।"


তুর্য কিছুক্ষণ তন্নীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, "তাসনিম, তিহান, তোমরা যদি আমাদের ব্যাপারে কিছু বলো, তবে আমরা জানি কীভাবে বুঝতে হবে। তবে আমাদের সম্পর্ক এখন ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে।"


তাসনিম আর তিহান একসাথে হেসে বলল, "বেশ! আমরা তো শুধু তোমাদের মজা করার জন্য বলছিলাম।"


তবে, তাদের হাসি ও মজা তন্নী এবং তুর্যকে কিছুটা উদ্বিগ্ন করে দিয়েছিল। এই প্রথমবার, তারা বুঝতে পারছিল যে ক্যাম্পাসে তাদের সম্পর্ক নিয়ে কিছু একটা চলছে—এটা হয়তো ছিল তাসনিম আর তিহানের তামাশা, কিন্তু তাদের মনের গভীরে সেই মজার পেছনে এক ধরনের অস্বস্তি ছিল।


এদিকে, তুর্য আর তন্নী নিজেদের মধ্যে কিছু অনুভব করছিল, তবে প্রকাশের ভয় এবং নিজেদের ভেতরের চিন্তা গুলিয়ে ফেলছিল। তাসনিম আর তিহান হয়তো মজা করছিল, কিন্তু তুর্য আর তন্নী জানত, তাদের সম্পর্কটা এত সহজ নয়—এটা ধীরে ধীরে আবিষ্কার করা দরকার।


তারা সেদিন বিকেলে ক্যাম্পাসের এক প্রান্তে গিয়ে বসে, একে অপরের মধ্যে মনের কথা বলতে না পারলেও, অন্তরের এক জায়গায় একটা নতুন কিছু জন্ম নিচ্ছিল। হয়তো মজা আর হাস্যরসের আড়ালে তাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে গভীর হয়ে উঠছিল।


---

0 Comments:

Post a Comment