গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ৪০

 #টক_ঝাল_মিষ্টি 

#তামান্না_আঁখি 

#পর্ব -৪০


হাসিব হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের দরজার সামনে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। এক পা মাটিতে শুইয়ে আরেক পায়ের হাঁটু ভাজ করে তাতে এক হাত ভর দিয়ে নিষ্প্রাণ চোখে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে এখনো পানি পড়ছে। মনে পড়ছে হিশামের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো। বাবা মা*রা যাওয়ার পর হিশামই ছিলো তার একমাত্র অভিভাবক।কিন্তু আস্তে আস্তে দুজনের মাঝে কেমন জানি একটা দূরত্ব চলে এলো। তাকে জোর করে হলে পাঠানোটাই সে দূরত্ব সৃষ্টির মূল কারন। হাসিবের ঘোর কাটলো তৃপ্তির ফোপানোর শব্দে। একটা চেয়ারে পা তুলে হাঁটুতে মুখ গুজে তৃপ্তি কাঁদছে। মঞ্জুরা বেগম অসুস্থ হয়ে অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি। ছেলের মৃত্যু সংবাদ তিনি সহ্য করতে পারেন নি। তারপর যখন শুনলেন হিশাম এখনো বেঁচে আছে এরপর তার শরীরের অবস্থা কিছুটা ভাল হয়েছে। 


হাসপাতালের এই ওয়ার্ডটা পুরোটা নেতাকর্মী দিয়ে ভর্তি। সবাই অপারেশন থিয়েটার থেকে দূরে করিডোরে ভীড় জমিয়েছে। অনেকেই উত্তেজিত হয়ে হিশামের এক্সিডেন্টের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য হম্বিতম্বি করছে। কয়েকজন গার্ড করিডোরের মুখ দাঁড়িয়ে আছে। উত্তেজিত নেতাকর্মীরা যেন অটির সামনে গন্ডগোল না পাকায় সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে তারা। হিশামের সেক্রেটারি হাসিবের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে কাঁধে হাত রেখে বলল- 


" চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। যা হয়ে গেছে তা মেনে নিয়ে নিজেকে শক্ত করো।তুমি শক্ত না হলে তোমার মা ভাবি ওরা যে আর টিকতে পারবে না।"


হাসিব মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠলো। হাত সরিয়ে সেক্রেটারির দিকে তাকিয়ে বলল-


"কেমন করে শক্ত হব আমি? আমার যে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।"


সেক্রেটারি চশমা খুলে চোখের পানি মুছলেন৷ হাসিবকে বললেন-

" যে করেই হোক শক্ত হও।নাহলে অনেক কিছু হারাবে তুমি।"


সেক্রেটারি চলে গেলো।হাসিব দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। তখন মনসুর আলী আর নাইমুর আসলো। মনসুর আলী দুঃখী কন্ঠে তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো-


"আহারে!! ফুলের মতো মেয়েটার কি হাল হয়েছে!! চিন্তা করো না মা। হিশামের কিছু হতে দিব না আমরা।"


মনসুর আলীর কথা শুনে হাসিব রেগে গিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ক্ষিপ্ত হয়ে মনসুর আলীর পাঞ্জাবির কলার ধরে বলল- 

"আপনি আমাকে ভুল খবর কেন দিয়েছিলেন? আমার ভাই বেঁচে আছে এখনো অথচ আপনি বলেছেন সে মা*রা গেছে। এই খবর শুনে আরেকটু হলেই আমার মা হার্ট এটাক করতো।"


মনসুর আলী ক্ষুব্ধ চোখে তাকালেন হাসিবের দিকে। বাম পাশে করিডোরের দিকে তাকালেন সেখানে সব নেতাকর্মীরা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। নেতাকর্মীদের সামনে একটা বাচ্চা ছেলের হাত এত বড় অপমান মনসুর আলী মানতে পারলেন না। তিনি হাসিবের উপর চরম প্রতিশোধ নিবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু এখনি তা প্রকাশ করলেন না। আবারো চোখেমুখে দুঃখী ভাব ফুটিয়ে বললেন-


" আমি তোমাকে ভুল খবর দেই নি বাবা।আমি নিজেই তো এমন সংবাদ শুনে স্ট্রোক করার পর্যায়ে চলে গিয়েছিলাম।তারপর এখানে এসে দেখলাম হিশাম বাবা বেঁচে আছে।"


হাসিব কলার ছেড়ে দিয়ে আবারো দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মনসুর আলী আর নাইমুর চোখ চাওয়াচাওয়ি করলো। দুজনেই সেখান থেকে চলে এসে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ালো। দুজনেই সিগারেট ধরালো। নাইমুর নাক দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বললো-


"এখন কি করবেন? প্ল্যান ত এটাও ঠিকঠাক হলো না।"


"প্ল্যান ঠিকঠাক না হয়ে শাপে বর হয়েছে।হিশামকে জেলে দিতে চেয়েছিলাম এখন সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে।"


"যদি না ম*রে?"


মনসুর আলি ভ্রু কুচকে বললো- 

" না ম*রলে তুমি মে*রে দিবে। এই পর্যন্ত এসে আর পিছিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।হিশাম ওখানে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলো তার মানে সে নিশ্চয়ই কিছু জেনেছে।বেচে থাকলে আমাদের বারটা বাজাবে।"


নাইমুর কপাল চুলকে আবারো সিগারেটে টান দিলো। বলল-

" হুম্মম। কিন্তু নির্বাচনের কি করবেন? খান পরিবার নির্বাচনে থাকলে আপনার জিতা তো অসম্ভব। হিশাম চৌধুরী থাকলে তাও জিতার সম্ভাবনা ছিল, আপনাকে ভোট দেয়া তো দূরের কথা ভোট চাইতে গেলে মানুষ দৌড়ানি দিবে।"


শেষের কথাটা বলার সময় নাইমুর "খেক" করে হাসির শব্দ তুললো।মনসুর আলী অপমানিত হয়ে গরম চোখে তাকালেন। সিগারেট ছুড়ে ফেলে বললেন-


"ভোট না দিলে ভোট চুরি করব। তোমাকে দলে নিয়েছি কি করতে? ভোট চুরি করার ব্যবস্থা কর। যত টাকা লাগে দিব।"


মনসুর আলী চলে গেলো। নাইমুর বাঁকা চোখে মনসুর আলীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে কুৎসিত একটা গালি দিয়ে বলল- 

" বেইমানের বাচ্চা! আমার স্বার্থ না থাকলে তোর জান বের করে নিতাম।"


সন্ধ্যায় শাহাদ কুহুকে নিয়ে হাসপাতালে আসলো। আশফাক খানের আঘাত তেমন গুরুতর না তারপরও তাকে ফুল বডি চেকাপ করা হবে এবং কয়েক ঘন্টা মনিটরিং এ রাখা হয়েছে। রেজিয়া সুলতানা তো আগেই চলে এসেছিলো এবার জয়া বেগম শ্বাশুড়িকে নিয়ে হাসপাতালে আসলো। কুলসুমা বেগম ছেলের ব্যান্ডেজ দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। আব্দুল গাফফার বেডের পাশে চেয়ারে বসে থেকে বললেন-


"কেঁদো না। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে ছেলেটা।কান্নাকাটি করে ওর মানসিক অবস্থা দূর্বল করে দিয়ো না।"


কুলসুমা বেগম ছেলের পাশে বসে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললেন-

"এই বয়সে এত কিছু সহ্য করা যায় না। এত বিপদ আপদ থেকে কবে যে মুক্তি মিলবে।"


শাহাদ এগিয়ে এসে কুলসুমা বেগমকে ধরে স্বান্তনা দিলো। বললো -

"চিন্তা করো না দাদীজান সব ঠিক হয়ে যাবে"


শাহাদ কুহুকে নিয়ে হিশামকে যে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে সেখানে আসলো। পুরো করিডোর জুড়ে নেতাকর্মীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সবাই শাহাদের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। কারো কারো চোখে ক্ষোভ। শাহাদ কুহুকে নিয়ে সবাইকে এড়িয়ে হিশামের কেবিনের কাছাকাছি এলো। কুহু আশপাশের সবার তাকানো দেখে শাহাদের বাহু খামছে ধরলো।দ্বিতীয় দফায় তারা আবারো বাধা পেলো দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডদের কাছে। শাহাদ বিচলিত হলো না।শান্তভাবেই বললো-

" আমি হিশাম চৌধুরীকে দেখেই চলে যাব।"


কথাটা বলার কিছুক্ষন পরে হিশামের কেবিনের ভেতর থেকে একটা নারীকন্ঠ ভেসে এলো-

"উনাকে ভেতরে আসতে দাও।"


গার্ডগুলো সরে দাঁড়ালো।শাহাদ কুহুকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। প্রথমেই চোখ পড়লো মঞ্জুরা বেগমের দিকে।তিনি কান্নাভেজা চোখে তৃপ্তির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তৃপ্তি শাহাদকে ঢুকতে আদেশ দিয়েছে এই জন্য। শাহাদ মঞ্জুরা বেগমকে পাত্তা দিল না। সে হিশামের বেডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। অনেক জটিল অপারেশনের পর হিশামকে কেবিনে দেয়া হয়েছে।তার মাথা ব্যান্ডেজে মোড়ানো, মুখে নল। দুটো হাতেই স্যালাইন আর রক্ত দেয়ার নল। মাথার কাছে যন্ত্রপাতি গুলো বিপ বিপ শব্দ করে এখনো হিশামের হৃদস্পন্দন যে চলমান তার সংকেত দিচ্ছে। শাহাদের শরীর কেঁপে উঠলো হিশামের এমন অবস্থা দেখে। সে বেডের একপাশের স্ট্যান্ড ধরে নিজেকে সামলালো।


কুহু তৃপ্তির কাছে গিয়ে তৃপ্তির হাত ধরলো।তৃপ্তি হালকা হেসে কান্নাভেজা কন্ঠে বললো- 

"তুমি এসেছো আমার ভাল লাগছে। ওর সেন্স থাকলে তোমাদেরকে দেখলে খুশি হতো।"


কুহু স্বান্তনা দিয়ে বলল- 

" সব ঠিক হয়ে যাবে আপু।ধৈর্য ধরেন।"


মঞ্জুরা বেগম শাহাদের দিকে তাকিয়ে বলল- 

"খুশি হয়েছো তো আমার ছেলেটাকে এভাবে দেখে? দেখো কি হাল করেছো তার।"


শাহাদ চোখ বন্ধ করে আবার খুললো। ধরা গলায় বলল- 

"আমি কেন হিশাম ভাইকে মা*রতে যাব?এটা একটা এক্সিডেন্ট। সেখানে আমার বাবাও ছিলো।উনিও আঘাত পেয়েছেন।"


মঞ্জুরা বেগম শাহাদের কথা গায়ে মাখলেন না। হিশামের হাত ধরে গুনগুনিয়ে কেঁদে উঠলেন। ওই মুহুর্তে ডক্টরকে নিয়ে হাসিব ঢুকলো। শাহাদ আর কুহুকে দেখে বিব্রত বোধ করলো সে। শাহাদ হাসিবকে সহজ করার জন্য তার কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে বলল- 

" যা হয়েছে তা ভুলে নিজেকে শক্ত করো। আমি আছি তোমার সাথে। নিজেকে একা ভাববে না।হিশাম ভাইয়ের সব দায়িত্ব আমি নেব।"


হাসিব নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো। শাহাদ হাসিবকে জড়িয়ে ধরলো। বললো-


" হিশাম ভাইয়ের মতো আমিও তোমার বড় ভাই।যেকোনো প্রয়োজনে আমি তোমার সাথে থাকব।"


মঞ্জুরা বেগম ফুস করে উঠে বললেন -

"এই ছেলে আমার ছেলেকে ছাড়ো।তোমার কোনো সাহায্য লাগবে না। এখান থেকে বিদায় হও।"


শাহাদ ছেড়ে দিলো হাসিবকে।হাসিব বিরক্ত হয়ে বললো -


"মা প্লিজ থামো।"


ডক্টর বললো -

"আপনারা রোগীর পাশে এভাবে চিৎকার চেচামেচি করবেন না। "


শাহাদ ডক্টরকে জিজ্ঞেস করলো- 

" রোগীর অবস্থা কি ডক্টর? জ্ঞান কবে ফিরবে।"


হাসিব হতাশ শ্বাস ফেলে কেবিনে রাখা সোফাটায় গিয়ে গা এলিয়ে বসে পড়লো।ডক্টর কি বলবে সে জানে। দ্বিতীয়বার এই কথা শোনার শক্তি তার নেই। ডক্টর বললো-


"মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় উনি কোমায় চলে গেছেন।জ্ঞান কবে ফিরবে আদৌ ফিরবে কিনা বলা যাচ্ছে না।"


এই কথা শুনে তৃপ্তি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলে।দৌড়ে এসে হিশামের বুকের উপর শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে বল্ললো-

"আমাকে ছেড়ে তুমি যেও না। আমার ছেলেটাকে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করো না।গেলে আমাদেরকে সাথে নিয়ে যাও।"


কুহু তৃপ্তিকে এসে টেনে সরাতে চাইলো কিন্তু পারলো না।শেষে ডক্টর এসে তৃপ্তিকে বুঝিয়ে সরাতে সক্ষম হলো।মঞ্জুরা বেগম হিশামের নাম ধরে বুক চাপড়ে কাঁদছেন। হাসিব তাকে থামাতে পারছে না। ডক্টর ও চেষ্টা করে পারছেন না। শাহাদ এই অবস্থায় নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না। সে দু পা পিছিয়ে গেলো।কোমায় চলে যাওয়া হিশামের দিকে তাকিয়ে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।সে দ্রুত কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে আসলো। কোনোমতে পা চালিয়ে হাস্পাতালের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।দুহাত রেলিঙে রেখে চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে  ঝুঁকে রইলো। হিশাম কোমায় চলে গেছে, আর কোনোদিন জ্ঞান ফিরবে কিনা তার ঠিক নেই। শাহাদ যেন কোনোমতেই মানতে পারছে না।রাগে কষ্টে ব্যান্ডেজ করা হাতটা দিয়ে রেলিঙে ঘুষি মারলো।তীব্র যন্ত্রণার ঢেউ বয়ে গেলো শরীর জুড়ে। তবে এই যন্ত্রনা তার মানসিক যন্ত্রনার কাছে কমই মনে হলো। বড় বড় শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো। ভাবতে চেষ্টা করলো কেন এমন বিপদ নেমে আসছে তাদের উপর।এই বিপদ থেকে পরিত্রান পাবার উপায়ই বা কি?


সেই মুহুর্তে শাহাদের চোখ গেলো হাসপাতালের বাগানের দিকে। নাইমুর আর মনসুর আলী আলোচনায় ব্যস্ত।মনসুর আলীর মুখ হাসি হাসি৷ হিশামের কোমায় থাকাই যে এই হাসির মূল কারন তা বুঝতে শাহাদের সময় লাগলো না। নাইমুর আর মনসুর আলী দুজনকেই সে উপযুক্ত শাস্তি দিবে। সব ই তার প্ল্যান করা আছে,এখন শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা।


মাঝরাতে কুহুর ঘুম ভেঙে গেলে দেখলো শাহাদ পাশে নেই। কুহু উঠে বসলো বিছানায়। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর থেকেই কথা বার্তা কম বলছে শাহাদ।। সারাক্ষন কি যেন ভেবেছে আর স্টাডি রুমেই বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছে। ফোনে চিৎকার চেচামেচিও কম করেনি। কয়েকবার আউট হাউজে গিয়েও কিসব মিটিং করেছে।দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরকেও সে ডাকিয়ে এনেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। 


কুহু পা টিপে টিপে স্টাডিরুমে দরজা খুলে উঁকি দিলো।নাহ,ভেতরে শাহাদ নেই।একে একে সে বারান্দা ওয়াশরুম সব জায়গায় খুজলো। শাহাদ কোথাও নেই। ছাদে গেছে কিনা দেখার জন্য ঘরের বাইরে আসতেই ড্রয়িং রুমের দিকে চোখ গেলো তার। ড্রয়িং রুমের বাম পাশের হলওয়ের দিকে।সেখান থেকে আলো আসছে। ওইদিকে তো জিম। তার মানে কি শাহাদ জিমে আছে?কুহু সিড়ি দিয়ে নেমে ড্রয়িং রুম পেরিয়ে হলওয়েতে আসলো। সে ঠিক ধরেছিলো হলওয়ের শেষে জিমে আলো জ্বলছে। কুহু আস্তে আস্তে জিমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। শাহাদকে দেখতে পেলো।কালো স্লিভলেস গেঞ্জি পরিহিত শাহাদ এগ্রেসিভ হয়ে পাঞ্চিং ব্যাগে একের পর এক ঘুষি দিচ্ছে। হাতের ফোলা পেশিগুলো আরো ফুল্র ফেপে উঠছে।ঘাম বেয়ে পড়ছে ঘাড় বেয়ে। তার হাতে কোনো গ্লাভস নেই একটা সাদা কাপড় পেচিয়ে রেখেছে। শাহাদের হাতের আঘাতের কথা মনে পড়ে কুহু আতকে উঠলো। অস্থির হয়ে জিমে ঢুকে বললো-

" প্লিজ থামেন। আপনার হাত বাজেভাবে ইঞ্জুরড।"


আচমকা নারীকন্ঠ শুনে শাহাদ থেমে গেলো। তাকিয়ে দেখলো অস্থির মুখে কুহু দাঁড়িয়ে। শাহাদ কুহুর দিকে তাকিয়ে মুহুর্তের মাঝে নিজের এগ্রেসিভ ভাব টা ঝেড়ে ফেললো। নিজেকে শান্ত করে চমৎকার করে হেসে বললো-


"ঘুম ভেঙে গেছে?"


কুহু এগিয়ে এসে ঘামে ভেজা শাহাদকে জড়িয়ে ধরলো। শাহাদ এক হাতে কুহুকে আগলে আরেক হাতে ঘামে ভেজা চুলগুলো উপরের দিকে ঠেলে দিলো।কুহু অভিমানী কন্ঠে বললো- 


" একা একা কষ্ট পাচ্ছেন।আমার সাথে কি কিছু শেয়ার করা যায় না?আমি তো আপনার বউ।"


শাহাদ খুব সাবধানে একটা শ্বাস ফেললো। সে কুহুকে এসব কিছু থেকে দূরে রাখতে চায়।এই নোংরা রাজনীতির জগৎটা কুহুকে চেনাতে চায় না। চায়না কোনো কিছু শেয়ার করে কুহুর সরল মনটাকে বিষিয়ে দিতে। শাহাদ জিমে রাখা সোফায় বসে কুহুকে তার উরুর উপর বসালো।একটা টাওয়েল কুহুর হাতে দিয়ে হাসিমুখে বললো-


"ঘাম মুছে দাও।"


কুহু যত্ন করে শাহাদের ঘাম মুছে দিলো। শাহাদের ডান হাত থেকে পেচানো কাপড় খুলে হাতের ব্যান্ডেজের অবস্থা দেখলো। শাহাদ কুহুকে ঘনিষ্ট হয়ে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে বলল- 

"তুমি কাছে আসলে আমার সব চিন্তা দূর হয়ে যায়।সব কষ্ট ভুলে যাই আমি।"


কুহু ধরা গলায় বলল- 

"আমাকে তো ভালোই বাসেন না। এখন এসব বলে লাভ নেই।"


শাহাদ আশ্চর্য হয়ে বললো-

"কে বললো ভালবাসি না!! এত বড় অপবাদ।"


কুহুর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।বললো-

"যদি ভালোইবাসেন তবে পানিতে লাফ দেয়ার আগে আমার কথা মনে হয় নি?এত বড় রিস্ক কিভাবে নিতে পারলেন।"


শাহাদ কুহুর মুখের দিকে তাকিয়ে মধুর হাসি দিলো। কুহুর ঠোঁটে গভীর স্পর্শ দিয়ে বলল- 

"আমি যখন গাড়ির কাচের খোলা অংশ দিয়ে দেখালাম হিশাম ভাই ব্রিজের দিকে যাচ্ছে তখনও আমি জানতাম কি ঘটছে।কিন্তু যখন দেখলাম তার গাড়ি এক্সিডেন্ট করে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি। আমার চোখের সামনে আমি কাউকে ম*রতে দিতে পারি না। এইজন্য রিস্ক নিয়েছি। কিন্তু এতে যদি আমার প্রিয়তমার মনে আঘাত লেগে থাকে তাহলে তার জন্য স্পেশাল ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা আছে।"


কুহু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল- 

" কি সেটা?"


শাহাদ এক ঝটকায় কুহুকে সোফায় শুইয়ে দিলো। কুহু শাহাদের বুকে হালকা চাপড় দিয়ে চাপাস্বরে বলল- 

"কি করছেন কেউ চলে আসবে।"


শাহাদ একটা সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললো-

" আসুক। বউ যেহেতু ভালবাসার প্রমান চেয়েছে তাই তাকে ইন্সট্যান্ট এখানেই প্রমান দিব।"


কুহু চোখ বড় বড় করে অবিশ্বাসী কন্ঠে বললো- 

"আপনি একটা অসভ্য। "


শাহাদ ভিলেনদের মতো হেসে বলল- 

"ফাইন। তাহলে অসভ্যতামিই করব।"


চলবে

0 Comments:

Post a Comment