গল্প রাজনীতি পর্ব ২

 #রাজনীতি

#পর্ব_২

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


----------------------------------------------------------------------------------------------------


রাস্তার মানুষজন জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । হাসপাতালে নেবার আগ্রহ কারো মাঝে নেই । কারন , মুখটা যে সবার কাছে খুব চেনা । শহরের বাকিদের কাছে সে আসাদ ভাই নামেই পরিচিত । আসাদের সাথে ঝামেলার বিষয়টা সকলের'ই অজ্ঞাত আছে । তাই কেউ সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারছে না আসাদের ধারে কাছে যাবার । 


ভিড় অতিক্রম করে একটা ছেলে সামনে এগিয়ে আসলো । গায়ের রং নিকস কালো । চোখে চশমা , ফরমাল ড্রেসআপ , হাতে একটা কালো ফাইল । দেখতে সাধাসিধে ছেলেটা ব্যস্ত হয়ে পড়ে , আসাদকে হাসপাতালে নেবার জন্য । সবাই কেমন ভয় ভয় চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে । সবার এভাবে তাকিয়ে থাকার কারন খুঁজে পাচ্ছে না ছেলেটি । মনে মনে ভাবলো , "হয়তো আমি কালো , তাই সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে !"


সেদিকে তোয়াক্কা না করে , একটা সিএনজি ডাকে আসাদকে হাসপাতালে নেবার উদ্দেশ্যে । তবে প্রথম দুইজন ড্রাইভার আসাদকে দেখেই নাকোয করে দেয় । তার অল্প কিছুক্ষণ পরে অন্য আরেকজন সিএনজি ড্রাইভার আর ঐ ছেলেটা মিলে আসাদকে হাসপাতালে নিয়ে যায় । 


----------------------------------------------------------------------------------------------------


রাফি এবং বাকি সবাই সবেমাত্র এসে হাসপাতালে পৌঁছালো । রিসিপশনে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে অপারেশন সাকসেসফুলি সম্পন্ন হয়েছে । বেডে দেয়া হয়েছে , পাঁচ তলার পাঁচশ দুই নাম্বার কেবিনে । 


দেরি না করে কেবিনে গিয়ে দেখে , আসাদের জ্ঞান এখনো ফেরেনি । বেশি মানুষ এলাও না থাকায় , রাফি একা ভিতরে ঢোকে এবং বাকিরা বাহিরে দাঁড়ায় । 


ছেলেটা এখনো আসাদের সাথে আছে । বলতে হবে , ছেলেটা আসলেই অনেক দায়িত্ববান । তবে ছেলেটাকে দেখে রাফির মনে প্রশ্ন জন্মায় , "ছেলেটা কে ? নিচ থেকে তো কিছু বললো না ওর ব্যাপারে !" 


ইতস্ততবোধ না করে জিজ্ঞেস করে , "তুমি কে ? আর এখানে কি করছো ?"


ছেলেটা নজর ফিরিয়ে উত্তর দেবার আগেই রুমে একজন ডাক্তারের আগমন ঘটে । রাফির প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন , "উনি ছিলেন বলেই আজ পেশেন্ট বেঁচে আছেন , আর একটু লেট হলে বাঁচানো মুশকিল ছিলো !"


রাফি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মলিন স্বরে বলে , "কি বলে তোমাকে ধন্যবাদ দেবো , সেই ভাষা আমার জানা নেই !"


মুখে হাসি নিয়ে জবাব দিলো , "এখানে ধন্যবাদ দেবার কি আছে ? আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলেও তো এক'ই কাজ করতো ।"


- "নাহ , করতো না । এই শহরে আসাদ এক আতঙ্কের নাম । কেউ জেনে বুঝে নিজের পরিবারকে বিপদের মুখে ফেলতে চাইবে কেনো ? তুমি বোধহয় এই শহরে নতুন , তাই না ?"


- "জ্বী , আমি আজকেই এসেছি এখানে । চাকরির ইন্টারভিউ ছিলো একটা !"


- "চকরি পেলে ?"


- "গরিবের আবার চাকরি । এই দেশে চাকরি পেতে হলে হয় টাকার জোর লাগে , নাহয় মামুর জোর লাগে । আর আমার কোনোটা নেই !" 


- "দাঁড়াও , তোমার সাথে একটু পরে কথা বলছি !"


ছেলেটার সাথে কথা বলায় বিরতি দিয়ে রাফি ডাক্তারের উদ্দেশ্যে বলে , "ডক্টর , আসাদের এখন কি অবস্থা ? কবে নাগাদ সুস্থ হবে বলে ধারনা আপনার ?"


- "সঠিক বলা যাচ্ছে না , কারন গুলিটা ওনার হার্ট স্পর্শ করে বেরিয়ে গেছে । তবে আশা রাখি , সপ্তাহখানেক এর মাঝে সুস্থ হয়ে যাবেন । আচ্ছা আপনারা কথা বলুন , আমাকে রাউন্ডে যেতে হবে ।"


ডাক্তার সাহেব কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলে রাফি ছেলেটাকে নিয়ে পাশের সোফায় গিয়ে বসলো । একটু নড়েচড়ে বসে রাফি বলে , "এবার বলো তোমার নাম কি ?"


- "আমার নাম সিফাত , আপনার ?"


- "আমি রাফি ! আর একটা কথা , আমাকে আপনি করে বলার দরকার নেই । তুমি করে বললেই হবে ।"


- "আচ্ছা , চেষ্টা করবো ।"


- "হুম ! কাজ করবে ?"


সিফাত খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললো , "কি কাজ , কি কাজ ? যেকোনো কাজ করতে আমি রাজি আছি । একটা চাকরির আমার খুব দরকার !"


- "রাজনীতি ! করবে ?"


রাফির মুখে রাজনীতি শব্দটা শুনেই সিফাত চুপসে গিয়ে বলে , "রাজনীতি ? কিন্তু তাতে তো অনেক টাকা লাগে । আর আমার কাছে অতো টাকা নেই ।"


রাফি নিজের হাসি আটকাতে না পেরে বলে , "সবসময় এতো টাকার চিন্তা করো কেনো ? টাকা'ই কি সবকিছু নাকি ?"


- "এই স্বার্থপর দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে যে টাকার খুজ প্রয়োজন , ভাই !"


- "ভুল বললে , সবার কাছে টাকা ম্যাটার করে না । সবাই টাকার ভুখা হয়না ।"


- "হয়তো আপনার কথা ঠিক , আবার হয়তো না ।"


- "এতো হয়তো হয়তো না করে বলো , রাজনীতি করবে ?"


- "কিন্তু আমি তো এখানের কাউকে'ই চিনি না ।"


রাফি মৃদু হেসে উত্তর দিলো , "তুমি আসলেই অনেক সহজসরল ।"


এতক্ষণে আসাদের জ্ঞান ফিরে এসেছে । আসাদের জ্ঞান ফিরতে দেখে রাফি এবং সিফাত বেডের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো । জ্ঞান ফিরে রাফিকে সামনে দেখতে পেয়ে আসাদ নিচু গলায় বললো , "আমি মরিনি ? এখনো বেঁচে আছি ? বলতে হবে , কই মাছের প্রাণ !"


রাফি ক্ষানিক রেগে গিয়ে বলে , "শুরু হয়ে গেছে তোর , তাই না ?"


- "ভুল কি বললাম , ঠিক'ই তো বলেছি ।"


- "হুম , তুই তো ভুল বলতেই পারিস না ।"


- "এইতো বুঝতে পেরেছিস । যাই হোক , এই ছেলেটা কে ? ও'কে তো ঠিক চিনলাম না !"


পাশে দাঁড়ানো সিফাতের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে আসাদ । আসাদের প্রশ্নের জবাবে রাফি উত্তর দেয় , "ওর নাম সিফাত ! সিফাত'ই তোকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে ।"


- "শহরে নতুন এসেছে , তাই না ?"


- "হুম !"


আসাদের মুখের হাসি দেখে সিফাত কিছুটা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে , "আপনারা দুই জন'ই একই প্রশ্ন কেনো করলেন ? নতুন হই বা পুরাতন , দূর্ঘটনার স্বীকার হওয়া একজন মানুষকে হাসপাতলে নিয়ে আসা আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে ।"


- "কর্তব্যের কথা বলছো ? আচ্ছা , ঐখানে তো আরো অনেক মানুষ ছিলো । কিন্তু কেউ আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা তো দূরের কথা ছুঁয়েও দেখেনি , কেনো ? এই প্রশ্নের উত্তর তোমার কাছে আছে ?"


সিফাতের নিশ্চুপতা দেখে আসাদ আবার বলে , "এই শহরে আসাদ এক আতঙ্কের নাম । মানুষ আমাকে রাজনীতিবিদ কম , পশু হিসেবেই বেশি চেনে । সবাই জানে আসাদ একজন খুনি , যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষের জীবন কেড়ে নেয় । জানো , যদি আমি আজ মারা যেতাম তাহলে সম্পূর্ণ শহরে খুশির জোয়ার বয়ে যেতো । সবাই স্বস্তির ঘুম ঘুমাতে পারতো । কাউকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হতো না এই ভেবে যে , কখন না জানি আসাদ নামক নরপশুটা আমার জীবন নামক পাখিটাকে খাঁচায় পুরে নেয় ।"


- "আপনি মানুষ খুন করেন ?"


- "আমি যাদের খুন করি , তারা ভদ্র সমাজে মানুষ নামেই পরিচিত । তবে আমি আসাদের কাছে তারা এক একটা জানোয়ার ।"


- "তাদের শাস্তি দেবার জন্য তো আইন আছে । আপনি কেনো আইন নিজের হাতে তুলে নেন ?"


- "রাফির কাছে শুনে নিও , এই ভদ্র সমাজের কাহিনী । তোরা এখন একটু বাহিরে যা , আমার ভালো লাগছে না ।"


রাফি আসাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে , "আচ্ছা , তুই বিশ্রাম নে । আমরা বাহিরে আছি । কোনো কিছুর দরকার হলে ডাক দিস ।"


সিফাত এবং রাফি কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায় । বাহিরে বাকিদের সাথে সিফাতের পরিচয় করিয়ে দেয় রাফি । অল্প কিছু সময়ের মাঝেই ওরা একে অপরের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে । 


----------------------------------------------------------------------------------------------------


ফোনটা বেজে উঠলে মেয়েটি কল রিসিভ করে বলে , "হুম বল , কি খবর ?"


ছেলেটা ভয়ে ভয়ে বললো , "আপু , আসাদ এখনো বেঁচে আছে ।"


- "মানে ?"


- "গুলি করার পরে কেউ'ই ও'কে সাহায্য করেনি । তবে কোথা থেকে যেন একটা ছেলে এসে হাসপাতালে নিয়ে যায় ।"


মেয়েটি উচ্চস্বরে বলে , "তোরা কি তখন ঘাস খাচ্ছিলি নাকি ?"


- "চারদিকে অনেক মানুষ ছিলো । অতো মানুষের ভিড়ে কিছু করা সম্ভব ছিলো না , আপু ।"


- "অজুহাত দেবার জন্য'ই তো তোদের রেখেছি , তাই না ? ভুলেও আমার চোখের সামনে আসিস না , জান নিয়ে নিবো । মাথায় রাখিস ।"


চলবে...!!

0 Comments:

Post a Comment