#রাজনীতি
#পর্ব_৪
#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ
-------------------------------------------------------------------------------------
সিফাত কিছু বলতে যাবে , তখন'ই বাসার কলিংবেলটা বেজে উঠলো । রাফি উঠতে গেলে , আসাদ বলে , "তোরা থাক , আমি দেখছি !"
বসা থেকে উঠে , গিয়ে দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই । তবে নিচে একটা পর্সেল পড়ে আছে । চারদিকে পুনরায় একবার চোখ বুলিয়ে পর্সেলটা নিজের হাতে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো । পার্সেলের উপরে আসাদের নাম লেখা রয়েছে । তবে , কোথা থেকে এসেছে সে ব্যাপারে কিছু লেখা নেই । বেনামি পার্সেল । হাতে থাকা পার্সেলটা আসাদ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখছে , কিন্তু বুঝতে পারছে না এটার ভিতরে ঠিক কি আছে বা থাকতে পারে ।
ড্রয়িং রুমের সোফায় এসে বসে পার্সেলটা টি টেবিলে রেখে , নিজের দুই হাটুর উপরে দুই হাত দিয়ে ভর রেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে । এতক্ষণে সেখানে আগমন ঘটে সিফাত এবং রাফির । পার্সেলের দিকে নজর পড়তেই রাফি বলে , "পর্সেল কে পাঠিয়েছে , আসাদ ?"
- "জানি না , নাম লেখা নেই কারো ।"
- "খুলে দেখ কি আছে ভিতরে ।"
- "হুম ।"
আসাদ ব্যস্ত হয়ে পড়ে পার্সেলটা খুলতে । র্যাপিং পেপার ছিড়ে বাক্সটা খুলে দেখে , ভিতরে প্রাপ্তির একটা ছবি রাখা আছে । এবং ছবির পিছনে কালো মার্কার দিয়ে লেখা , "তুমি বিশ্বাস করো , সে ভালোবাসে । তবে কাকে ভালোবাসে , তোমাকে নাকি তোমার প্রাণ ভোমরা'কে ?"
ছবিটা দেখে আসাদ যতোটা না অবাক হয়েছে , তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে ছবির পিছনের লেখাটা দেখে । আসাদের অবাক চাহনি দেখে সিফাত বলে , "কি হলো , এভাবে কি দেখছিস ?"
রাফি কিছু জিজ্ঞেস না করে ছাবিটা আসাদের হাত থেকে নিয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টা নিজের আয়ত্তে নিলো । আসাদের মুখ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সিফাতও রাফির ন্যায় একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটায় ।
আসাদ এবং রাফি দু'জন'ই অবাকের শীর্ষে অবস্থান করলেও , সিফাত স্বাভাবিক'ই রয়েছে । রাফি আসাদকে উদ্দেশ্য করে বলে , "এসবের মানে কি ? কেউ কি ফাইজলামি করে এগুলো করছে নাকি ?"
আসাদ আত্নবিশ্বাসী দৃষ্টিতে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে , "নাহ , এমন কাজ কেউ ফাইযলামি করে করবে বলে আমার মনে হয়না । নিশ্চয়ই এর মাঝে কোনো রহস্য আছে । আমি সেটা নিয়ে ভাবছি না । আমার চিন্তা হলো , লেখাটা নিয়ে । যে'ই এই পার্সেলটা পাঠাক না কেনো , সে আমার হয় ভালো চায় নতুবা খারাপ চায় । কিন্তু মানুষটা কে হতে পারে ?"
আসাদের কথা শেষ হলে সিফাত মুখে হাসি নিয়ে বলে , "তুই না রাজনীতিবিদ ?"
সিফাতের কথার আগাগোড়া বুঝতে না পেরে আসাদ প্রশ্ন করে , "এর সাথে রাজনীতির কি সম্পর্ক থাকতে পারে ?"
- "বাহিরের সকল চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে , একজন রাজনীতিবিদের মতো ভাব । আশা করি , তোর উত্তর তুই পেয়ে যাবি !"
সিফাত আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় । সিফাত চলে গেলে আসাদ রাফির দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে বলে , "সিফাত কি বলে গেলো এগুলো ? বুঝচ্ছিস কিছু ?"
- "আমার ছোট মাথায় এগুলো খেলে না রে ! তুই বরং ভাব , আমি রুমে গেলাম ।"
রাফিও চলে যায় নিজের রুমে । আসাদ একা বসে আছে । মাথায় জড়ো হয়েছে নানানরকমের প্রশ্ন , কিন্তু উত্তর কে দেবে ?"
ছবিটা নিজের হাতে নিয়ে আসাদ আবার সেই লেখাগুলোতে চোখ বুলায় । লেখাগুলোর কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছে না ও । আসাদের ভাবনা কিছুটা এই রকম , "আমি বিশ্বাস করি সে আমাকে ভালোবাসে ! কিন্তু কার কথা বুঝানো হয়েছে এখানে ? প্রাপ্তি ? ওর ছবির পিছনেই তো লেখাগুলো রয়েছে । আর প্রাপ্তিও তো আমাকে ভালো'ই বাসে । তবে , শেষের লাইনের মানে কি ? প্রাণ ভোমরা বলতে কি বুঝাতে চেয়েছে ?"
ছবিটা টেবিলের উপরে ছুড়ে ফেলে হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো টানতে টানতে আসাদ বলে , "উফ , কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি । মানে কি এইসবের ? মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সবকিছু । পল্লব ভাই একটা কথা বলেছিলো যখন আমি রাজনীতিতে নতুন নতুন পা রেখেছি তখন , 'রাজনীতিতে নিজের ছায়াকেও বিশ্বাস করতে নেই !' আচ্ছা , তার কথার সাথে কি এই লেখাগুলোর কোনো মিল আছে , বা থাকতে পারে ?"
আসাদ নিজের ভাবনা গুলো সম্প্রসারিত করার আগেই ওর ফোনের ম্যাসেজ টোনটা বেজে ওঠে । রেদোয়ানের নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে । লেখা ছিলো , "বিকেল পাঁচ টায় আমাদের সেই চিরচেনা জায়গায় আইসেন ভাই । জরুরি কথা আছে আপনার সাথে , আমি অপেক্ষায় থাকবো ।"
রেদোয়ানের নাম্বারে কল দিতে গিয়েও দিলো না । আসাদ ভাবে , "রেদোয়ানের আবার কি হলো ? হঠাৎ জরুরি তলপ ? বাসায়'ই তো আসতে পাড়তো ।"
-------------------------------------------------------------------------------------
বিকেল পাঁচটা । আসাদ তৈরি হচ্ছে বের হবার জন্য । বাসা থেকে বের হতে নিলে সিফাত জিজ্ঞেস করে , "কোথায় যাচ্ছিস এখন ?"
- "তেমন কিছু না । রেদোয়ান ম্যাসেজ দিয়ে বললো , কি নাকি জরুরি কথা আছে । সেখানেই যচ্ছি ।"
- "একা যাসনে ।"
- "কেনো , একা গেলে কি সমস্যা ?"
- "যেতে বারন করেছি , তাই যাবিনা । এখানে সমস্যা থাকা বা না থাকার কি আছে ?"
- "আজব ! আচ্ছা , নিয়ে যাবো নে একজনকে ।"
- "একজন না । সবাইকে নিয়ে যাবি । এবং সবার সাথে গান রাখতে বলবি মাস্ট বি !"
- "রেদোয়ান আমার গ্যাংয়ের'ই লোক । ওর সাথে দেখা করতে যাবো , এতে গান নেবার কি আছে ?"
- "সব প্রশ্নের উত্তর যদি আমি'ই দেই তাহলে তোর কাজ কি ?"
- "মানে ?"
- "মানে কিছু না ! যেটা বললাম সেটা কর !"
- "আচ্ছা , ঠিক আছে ! তুই যাবি ?"
- "নাহ , আমার একটা কাজ আছে !"
- "তোর আবার কি কাজ এখন ?"
- "পরে বলবো , তুই রাফিকে নিয়ে যা !"
- "ওকে , থাক তাহলে ।"
- "হুম !"
আসাদ এবং রাফি বাসা থেকে বের হলে , সিফাত নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কল করে একটা পরিচিত নাম্বারে । কলটা রিসিভ হলে বলে , "আসাদ বেড়িয়ে পড়েছে । আশা করি , তোর কাজটা তুই ঠিকমতো করবি !"
চলবে...!!
0 Comments:
Post a Comment