|৩০|
আজকের দিনটা একদম আলাদা। সেই একই পর্তুগাল, সেই একই গির্জা, কিন্তু এই বারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ থেকে, তুর্য ও তন্নী একে অপরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতে চলেছে। অনেকদিনের অপেক্ষা, কষ্ট, উত্তেজনা আর অবশেষে, এক ছিমছাম সাদামাটা বিয়ের আয়োজন।
তন্নী গির্জার সামনে দাঁড়িয়ে, সবকিছু কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। গির্জার দরজার দিকে তাকালে তার মনে হয়, সময় যেন থেমে গিয়েছে। সেদিন, যখন প্রথম লিসবনের কফি শপে তাদের চোখে চোখ পড়েছিল, কখনো কল্পনাও করেনি, একদিন তারা এখানে দাঁড়িয়ে, একে অপরকে চিরকাল একসাথে থাকার শপথ নেবে।
তন্নী একটু গভীর শ্বাস নেয়। তার চোখে অজানা এক প্রশান্তি। আজকের দিনটা শুধু তাদের নয়, একসাথে বেড়ে ওঠা সব মুহূর্ত
--
তুর্য গির্জার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। তার বুকের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি চলছে। সবকিছু যেন সম্পূর্ণ নতুন মনে হচ্ছে। বিয়ের আগে যেসব কষ্ট, ভীতি ও চ্যালেঞ্জ ছিল, সেগুলো সব কিছুতেই এখন আর কোনো জায়গা নেই। একদিকে এই জীবন শুরু হওয়ার উত্তেজনা, অন্যদিকে এক নতুন ধরনের শান্তি, যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি।
তুর্য তন্নীকে একবার দেখে, তার চোখে শান্ত এক টুকরো হাসি ফুটে ওঠে।
— "তন্নী, আজকে সারা পৃথিবীটাই আমাদের, তুমি জানো?"
তন্নী একটু হেসে ওঠে।
— "হ্যাঁ, তুর্য। আমি জানি।"
এটা একটা সহজ কথার মতো হলেও, এর ভেতর গভীরতা ছিল। এত দিন ধরে একে অপরের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা, এতগুলো দিন একে অপরকে বুঝতে, গ্রহণ করতে—আজকের দিনে সব কষ্ট আর আবেগ মিশে গিয়ে এক অপরিসীম ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে।
---
বিয়ে হওয়ার আগে, তুর্য ও তন্নী গির্জার অদূরে এক ছোট্ট আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে। সাদা ফুলের সজ্জায় সজ্জিত, শান্ত পরিবেশ, কিন্তু তাদের মন এক দম উজ্জ্বল। চারপাশের দিক-দিক থেকে বন্ধুরা তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল, এবং তন্নী এক মুহূর্তের জন্য ভাবছিল, সত্যিই কী এই দিনটি আসবে?
তুর্য, তার হাত ধরে, ধীরে ধীরে বলে—
— “তন্নী, তোমার জন্য আমি সব কিছু ছাড়তে প্রস্তুত ছিলাম। তুমি যে আমাকে বিশ্বাস করেছো, সেটা আসলেই অসাধারণ।”
তন্নী তার হাত শক্ত করে ধরে, চোখে কাঁটা থাকে না, কিন্তু এক ধরনের শান্তি ভর করে।
— “তুর্য, আমরা দুজন একে অপরকে আজকের দিনের জন্য প্রস্তুত করেছিলাম। আজ, আমি জানি—যত যাই ঘটুক না কেন, আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়ে গেছে।”
পর্তুগালের ঐ গির্জার প্রাচীন হলের মধ্যে, তুর্য ও তন্নী একে অপরের দিকে তাকিয়ে শপথ নেয়। তাদের আত্মিক যাত্রা, মনোযোগী সম্পর্ক, ভালোবাসার বন্ধন—এই সব একে অপরকে শপথ করার সময় চিরকাল একে অপরের কাছে থাকার অঙ্গীকারে পরিণত হয়।
তুর্য তার মিষ্টি গলায় বলেছিল—
— “আমি আজও আগের মতো তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, তন্নী। আজ, আমি জানি, আমরা একসাথে থাকব, আমাদের ভালোবাসার প্রতীক হয়ে।”
তন্নী মৃদু হেসে বলেন—
— “তুর্য, আমার জীবনে তুমি যে রূপে এসেছো, সেই রূপই আমার হৃদয়ের প্রতি অঙ্গীকার হয়ে থাকবে।”
---
সবাই তাদের চারপাশে দাঁড়িয়ে, তাদের এই দিনটি উদযাপন করছিল। কফি শপের মিষ্টি স্মৃতির মতো, পর্তুগালের গির্জা—এখন তারা একে অপরের জীবন সঙ্গী হয়ে উঠল।
তন্নী আর তুর্য একে অপরকে দেখে, চোখে চোখ রেখে হাসে। দুজনেই জানে, এক নতুন জীবনের শুরু হচ্ছে আজ।
একটি মুহূর্তের জন্য, গির্জার চূড়ায় বিকেল রোদ যেন আলোর রেশ ফেলে, তাদের মনে নতুন আশা, সাহস, এবং ভবিষ্যতের দিকে এক দৃঢ় পদক্ষেপ রাখতে উৎসাহ দেয়।
তুর্য তন্নীর হাত ধরে, গির্জার চূড়ায় বেরিয়ে যায়। তাদের আস্থা, বিশ্বাস, এবং ভালবাসা—সব কিছুর ওপরে—এখন তারা একে অপরের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দুই অদ্ভুত পথ, এক চিরস্থায়ী মিলনের দিকে চলে এসেছে।
এটা শুধুমাত্র একটা বিয়ের দিন নয়, এটা তাদের এক নতুন জীবনের শুরু।
এটা, আসলেই, "এক_তোমাতেই_আসক্ত"
---
সমাপ্ত
0 Comments:
Post a Comment