গল্প রাজনীতি পর্ব ১৬ সমাপ্ত

 #রাজনীতি

#পর্ব_১৬_এবং_শেষ

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদের কথা শুনে সেলিনা বেগম আনন্দের হাসি হাসলেন । সে কি হাসি । মায়ের মুখের হাসির কাছে হয়তো দুনিয়ার সব সুখ তুচ্ছ ।


-------------------------------------------------------------------------------------


অন্যদিকে , সিফাত প্রাপ্তির সামনে বসে আছে । হাত-বাঁধধা , পা-বাঁধা অবস্থায় বেশ অসহায় প্রাপ্তি । একমনে সিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে । চোখ দিয়ে গিলে ফেলার উপক্রম । সিফাত নিজের চেয়ারটা হাত দিয়ে আরেকটু সামনে টেনে নিয়ে প্রাপ্তিকে বলে , "কেমন আছো ?"


প্রাপ্তি গলা ফাটিয়ে উত্তর দিলো , "মজা নিচ্ছিস তুই আমার সাথে ? হাত-পা খোল আমার । জানে মেরে দিবো একদম !"


- "উফ , কি তেজ ! সত্যি অসাধারন একটা চরিত্র তুমি । তোমার তো রাজনীতিতে থাকা উচিত । আমার কি মনে হয় জানো ? আসাদ ভুলে রাজনীতিতে চলে এসেছে । ওর জায়গায় তুমি হলে হয়তো এতদিনে অনেক সফলতা অর্জন করতে পারতে ।"


- "তুই কিন্তু এবার বেশি বাড়াবাড়ি করছিস । আমাকে এভাবে বেঁধে রাখার কারন কি ? তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি আমি ? শুধু শুধু আমার পথের কাঁটা কেনো হচ্ছিস ?"


- "গুড কোশ্চেন ! উত্তরটা হলো , তুমি আমার কোনো পাকা ধানে মই দাওনি । তবে , আমার ভাইয়ের পাকা ধানে মই দিয়েছো । আর নিজের ভাইয়ের ক্ষতি কিভাবে সহ্য করি , বলো ?"


- "কে তোর ভাই ?"


- "কেনো , আসাদ !"


- "দুইদিন আগে পরিচিত হওয়া একটা ছেলো তোর ভাই ? হাউ ফানি । আগে কি কমেডিয়ান ছিলি নাকি ?"


- "তা ঠিক না , তবে তুমি আসাদকে মারার জন্য যে জগতে পা দিয়েছো । সেই জগতের বাদশা আমি !"


- "মানে ?"


- "মস্টারের নাম শুনেছো কখনো ?"


- "আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাস্টার !"


- "হুম !"


- "না শোনার কি আছে ? তবে কেউ নাকি কখনো দেখেনি ওনাকে !"


- "সামনে আসলে না দেখবে । মাস্টার নামটা শুধু শুধু সবাই ভয় পায়না । মাস্টার একটা ব্রান্ড । মাস্টার নামটা ভালো মানুষদের জন্য যেমন আনন্দের কারন , ঠিক তেমনি খারাপদের জন্য ভয়ের আভা । তোমার কাছে ছোট্ট একটা প্রশ্ন , যদি মস্টার তোমাকে এখন মেরে ফেলতে চায় তাহলে তুমি কি করবে ?"


- "হাসালি । আমাকে মারতে এলে ও নিজে'ই ফেরত যেতে পারবে না । জিন্দা কবর দিয়ে দিবো !"


- "তাই ?"


- "কোনো সন্দেহ আছে ?"


- "ইয়াহ , অভিয়াসলি ।"


- "মাস্টারকে এনে দে , তোর সন্দেহ দূর করে দেবো !"


- "এইতো সামনে বসে আছি , মারো !"


সিফাতের কথায় হতভম্ব হয়ে যায় প্রাপ্তি । সিফাতের মুখে এমন কোনো কথা হয়তো ও আশা করেনি । করবেই বা কিভাবে ? দুইদিন আগে আসা একটা ছেলে , যে কিনা আসাদের ছায়ার তলে পড়ে থাকতো সে নিজেকে মাস্টার পরিচয় দিচ্ছে । সেই মাস্টার , যার নামে সম্পূর্ণ আন্ডারওয়ার্ল্ড চলে । যাকে কেউ কখনো চোখে দেখেনি । হঠাৎ কেউ এসে নিজেকে মস্টার বলে দাবি করলে , চকমকানোটা তো স্বাভাবিক । প্রাপ্তি ক্ষানিক অট্টহাসি হেসে বলে , "তোর কি মনে হয় ? আমি এখন মজা করার মুডে আছি ? তোর কমেডি তুই সার্কাসে গিয়ে শোনাবি । অনেক ইনকাম হবে । তবে আমাকে নয় !"


মুখে একটা মুচকি হাসির রেখা টেনে বলে , "ইফ ইউ থিংক , ইউ আর গুড এট পলিটিক্স । দেন ইউ শুড নো ওয়ান থিং , আই এম দ্যা মেকার অফ রোস্ট পলিটিশিয়ানস্ ।"


সিফাত বসা থেকে উঠে পকেট থেকে একটা সুইচ গিয়ার বের করে বলে , "দিস ইজ ফর ইউ । আই ডোন্ট থিংক দ্যাট , আই শুড ওয়েস্ট এ বুলেট অন ইউ । টু এন আনগ্রেটফুল পারসন !"


ব্লেডের ধারটা অতিরিক্ত ছিলো । প্রাপ্তির গলায় ছোঁয়ানোর সাথে সাথেই রক্ত বের হতে শুরু করে চুয়িয়ে চুয়িয়ে । সিফাত একটানে ব্লেডটা সড়িয়ে ফেলে প্রাপ্তির গলা থেকে । ছটফট করতে করতে প্রাণ হারায় প্রাপ্তি ।


রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে সিফাত মামাকে বলে , "মামা !"


- "হ , ভাইগনা কও !"


- "লাশের সাথে কি করতে হবে আশা করি জানো তুমি !"


- "হেইয়া আবার কইতে ? লাশটারে কুঁচি কুঁচি কইরা মুই তোমারে ছবি পাডাই দিমু আনে । তুমি যাও !"


সিফাত কোনো উত্তর না দিয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো ।  


-------------------------------------------------------------------------------------


ন্যাশনাল পর্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আছে আসাদ এবং সিফাত । আসাদ সিফাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে , "আমাকে এখানে আনলি কেনো ?"


- "কিছু কথা বলার জন্য !"


- "সেটা তো বাসায়ও বলা যেতো , এতদূর আসার কি দরকার ছিলো ?"


- "দরকার আছে বলেই তো আসলাম !"


- "আচ্ছা বল , কি কথা ?"


- "তোর রাজনীতিতে আসার কারন জানতে চাই আমি !"


- "শুনবি ?"


- "হুম , বল !"


- "আমার বাবা একজন সনামধন্য এমপি ছিলেন । আমি তখন অনেক ছোট । আমার পরিবারে , আমি , আমার একটা বড় ভাই , আব্বু আর আম্মু ছিলাম । ছোট হওয়ার সুবিধার্থে আদর অনেকটা বেশি'ই পেতাম বড় ভাইয়ের তুলনায় । তো একদিন সকালে আমি বায়না ধরি ঘুরতে যবো বলে । বাবাও উপয়ান্তর রাজি হয়ে যায় , কারন সেদিন ওনার কোনো কাজ ছিলো না । তাই আমরা চারজন মিলে চলে আসি গাজিপুর ন্যাশনাল পার্কে । ঠিক এইখান-টাতেই বসেছিলাম আমরা । অপজিশন পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন আসলাম সিকদার । পরপর দুইবার বাবার কাছে হেরে যাওয়া গ্লানিটা সে মেনে নিতে পারেনি । তাই সুযোগ পেয়ে ঐদিন হামলা করে আমাদের উপরে । বাবা-মা তো মারা গিয়েছিলেন , তবে আমি আর ভাই বেঁচে গিয়েছিলাম । আমাদের তাড়া করার এক পর্যায়ে আমি আর ভাই আলাদা হয়ে যাই । আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলাম । তবে ভাইয়ের সাথে আর কখনো দেখা হয়নি । আমি তো এটাও জানি না , ও বেঁচে আছে কিনা । এটাই আমার জীবনের ছোট্ট একটা গল্প । আর এই গল্পটাকে সমাপ্ত করতেই আমার রাজনীতিতে আসা । আসলাম সিকদারকে মারাই আমার মূল লক্ষ্য । হ্যাঁ , মারতে তো আমি এখন'ই পারি যদি চাই । তবে না , ও'কে আমি পাওয়ার দিয়েই মারবো । কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা । মজার বিষয় হলো , আমি যাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতাম । সেই রাফি'ই আমাকে সিকদারের সাথে হাত মিলিয়ে মারতে চেয়েছিলো !"


- "রাজনীতি বিষয়টা কি জানিস ? মনে কর আমার এক হাতে এক কাপ চা , আর অন্য হাতে একটা বিস্কুট । এক কাপ চায়ের আমি একটু খেলাম আর বিস্কুটটাকে একটু খাওয়ালাম । এটা হলো মানবতা । এবার সেই বিস্কুটটাকেই আমি খেয়ে ফেললাম , এটা হলো রাজনীতি । রাজনীতিতে নিজের ছায়াকেও বিশ্বাস করতে নেই ।"


- "হুম , সেটা হারে হারে টের পাচ্ছি ।"


- "এবার আসি তোর প্রশ্নের উত্তরে । আমি কেনো তোকে সাহায্য করি বা আমি এতকিছু কিভাবে জানি । হ্যাঁ , তোর কাছে সেই পার্সেল আসা থেকে শুরু করে সবকিছু'ই আমার করা । মাস্টারের নাম তো শুনেছিস ?"


- "হুম , সবাই'ই তো চেনে । তবে শুধু নামে , চেহারায় নয় । চেহারা কেউ দেখেনি ।"


- "আমি'ই সেই মাস্টার , আর তোর বড় ভাই !"


- "দেখ সিফাত , এখন আমি মজা করার মুডে নেই !"


- "তোর বড় ভাইয়ের বাম হাতে একটা জন্মদাগ ছিলো , নিশ্চয়ই তোর মনে আছে ?"


- "হুম , তুই জানলি কিভাবে ?"


সিফাত নিজের বাম হাতটা আসাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে , "দেখতো , এটা সেই দাগ কিনা ?"


আসাদ অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে সিফাতের দিকে । আসাদের অবাক চাহনি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি , নিজের হারানো ভাইকে খুঁজে পাবার আনন্দ । সিফাত জড়িয়ে ধরে কান্নারত অবস্থায় বলে , "তুই এতদিন আমার সাথে ছিলি অথচ আমি চিনতে পারিনি ।"


সিফাত আসাদকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে , "থাক , আর কান্না করতে হবেনা । চল অসমাপ্ত কাজটা সেরে ফেলি ।"


হাত দিয়ে চোখের জল মুছে , "কি কাজ ?"


- "সিকদারের প্রাণ নেয়া !"


- "তার আগে প্রাপ্তির সাথে আমার বোঝাপড়া আছে !"


- "প্রাপ্তি তো নেই !"


- "কোথায় গেছে ?"


- "হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়েছি ।"


- "তাহলে চল , বাকি কাজটার জন্য আর সময় নষ্ট করে কি হবে ? নামের খোঁজে বেনামি !"


*****সমাপ্ত*****


[ গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি । আর গল্পটা অনেক সময় নিয়ে লিখেছি , অনেক অপেক্ষা করিয়েছি । তার জন্য দুঃখিত । এতদিন পাশে থাকার জন্য , অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ । আমার পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ রইলো ]

গল্প রাজনীতি পর্ব ১৫

 #রাজনীতি

#পর্ব_১৫

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


- "না , তা ঠিক না । তোমাকে দেখে তো ভালোই মনে হচ্ছে । যাওয়া যায় তোমার সাথে !"


- "চলো তাহলে !"


মেয়েটি আসাদের হাত আকড়ে ধরে বলে , "হুম , চলো !"


-------------------------------------------------------------------------------------


রাফি ক্রিকেট খেলার বেশ বড় একজন ভক্ত । খেলা চলাকালীন সময়ে দুনিয়া ওলট-পালট হয়ে গেলেও রাফির কোনো হুশ থাকেনা । 


- "ভাইয়া !"


একটা পরিচিত মেয়েলি কন্ঠস্বরের আওয়াজে রাফি চমকে উঠলো । পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি দাঁড়িয়ে । মুখে বিরল হাসি । সোফা থেকে নেমে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে বলে , "তুলি ? তুই এখানে কিভাবে এলি ?"


- "অবাক হলি ?"


আসাদ রাফির সামনে এসে দাঁড়িয়ে ধীর গলায় বললো কথাটা । রাফি বসা থেকে উঠে আমতা আমতা করে বলে , "আসাদ তুই ?"


- "এক্সপেক্ট করিসনি , তাই নাহ ? অবশ্য না করার'ই কথা ।"


- "আসলে...!"


- "ভাবিসনি কখনো এমন হতে পারে , কি তাই তো ? ঠিক'ই ভাবতি , তবে আজকে ভাগ্যটা হয়তো তোর সাথে ছিলো না । সেজন্যই আমার তুলির সাথে দেখা হয়ে গেলো । তুলিকে আমি অনেকদিন দেখতে চেয়েছি , এমনকি তোর গ্রামেও যেতে চেয়েছি । কিন্তু তুই আমাকে দেখাস নি , এমমনকি তোর বাড়িতেও নিয়ে যাসনি । কেনো করেছিলি সেগুলো ? যাতে নিজের বোনকে নিয়ে ব্যবসা করতে পারিস ?"


রাফি উচ্চ গলায় বলে , "কি সব যা-তা বলছিস ? ব্যবসা মানে কি , হ্যাঁ ?"


- "ব্যবসা নয়তো কি ? যে বয়সে মেয়েটা স্কুলে যাবে , খেলাধুলা লরবে । তা না করে ও কি করছে ? রেস্টুরেন্টে মানুষকে ফুল বিলাচ্ছে । বাহ , কি অসাধারন চিন্তা ভাবনা তোর ! এতই যখন টাকার দরকার ছিলো , তো আমাকে বলতি । আমি দিতাম , নিজের বোনকে দিয়ে এসব না করালেও পারতি ।"


- "আমার পাঁচ-দশ হাজার টাকার দরকার ছিলো না , যে তোকে বলবো । আমার দরকার লাখ টাকার । নাহলে আমার মা'কে আমি হারিয়ে ফেলবো !"


- "কি হয়ছে আম্মুর ?"


- "দু'টো কিডনি'ই নষ্ট হয়ে গেছে । ডাক্তার বলেছেন , প্রতিস্থাপন করা নাকি সম্ভব না । বাঁচিয়ে রখার একমাত্র উপায় হলো ডায়ালাইসিস । যেটা প্রতি মাসে দুই বার করে করতে হবে । এতো টাকা আমি কোথায় পাবো ?"


- "হাসালি রে রাফি । যাকে আমি মা বলে ডেকেছি , তার এতো বড় একটা অসুখ হয়েছে আর সেটা তুই আমাকে একবার বললি না পর্যন্ত । তোর তো শুধু টাকার দরকার ? আমি জীবন দিতেও ভাবতাম না । তোকে একটা কথা'ই বলবো , তুই সত্যি'ই আমার যোগ্য একজন বন্ধু । তোর মতো বন্ধু পেয়ে আমি ধন্য ।"


রাফি নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না । আসাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে , "মাফ করে দে আমাকে । সত্যি'ই আমি বুঝতে পারিনি । জানিস , আমি না বুঝে কতো বড় একটা অন্যায় করতে যাচ্ছিলাম ।"


আসাদ রাফিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে , "কিসের অন্যায় ?"


- "আমি সিকদারের সাথে হাত মিলিয়েছিলাম । সিকদার বলেছিলো , তোকে মারতে পারলে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেবে । আমার মাথা ঠিক ছিলো না রে , আমি ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই । তখন আমার মাথায় শুধু টাকার চিন্তাই ছিলো , অন্য কিছু ভাবার অবস্থায় আমি ছিলাম না ।"


আসাদ মুচকি হেসে জবাব দিলো , "সিফাত একটা কথা প্রায়'ই বলে , শুনেছিস তো ? আমি নাকি রাজনীতির 'র'ও বুঝি না । এখন মনে হচ্ছে , হি ইজ রাইট । আমি বোকা , আসলেই বুঝি না কিছু । রাজনীতি আমার জন্য না । আজকে সেটা তুই বুঝিয়ে দিলি । শুকরিয়া , আমাকে রাজনীতি শেখানোর জন্য । আমি কৃতজ্ঞ !"


- "আসাদ , শোন..!"


রাফির সম্পূর্ণ কথা না শুনেই আসাদ তুলিকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় । 


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ বাইক চালাচ্ছে , আর তুলি পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আসাদকে । এক পর্যায়ে আসাদ প্রশ্ন করে , "আম্মু কোন হাসপাতালে ভর্তি আছে , জানো আপু ?"


- "হুম , জানি তো ! আনোয়ার মেডিকেলের তিন তালার তিনশো বার নাম্বার রুমে !"


- "বাহ , তুমি দেখি সব জানো !"


- "জানবোই তো , আমি কি আর ছোট আছি নাকি ? আমি বড় হয়ে গেছি না ?"


- "হুম , অনেক বড় হয়েছো !"


- "আচ্ছা , তুমি আর ভাইয়া তখন রেগে রেগে কথা বলছিলে কেনো ? ভাইয়া কি কোনো ভুল করেছে ?"


- "নাহ , তোমার ভাইয়া কোনো ভুল করেনি । ভুল আমি করেছি !"


- "কি ভুল করেছো তুমি ?"


- "তোমার আম্মুকে আমি নিজের আম্মু ভেবেছি , এটাই আমার ভুল !"


- "এটা ভুল কিভাবে ? এটা তো ভালো , আমার এখন দুইটা বড় ভাইয়া আছে !"


আসাদ তুলির কথায় কোনো জবার না দিয়ে নিরবে একটা মুচকি হাসি দিলো । 


-------------------------------------------------------------------------------------


- "আম্মু , আম্মু দেখো কে এসেছে !"


তুলির ডাকে ঘুম ভাঙে সেলিনা বেগমের । মিটমিট করে তাকিয়ে দেখেন , তুলি ওনাকে ডাকছে । আর পাশে আসাদ দাঁড়িয়ে । আসাদকে দেখেই ওনার মুখ জুড়ে হাসি খিলখিল করে ওঠে । একটা হাত আসাদের দিকে বাড়িয়ে দিলে , আসাদ হাতটা আকড়ে ধরে । উনি কর্কশ গলায় বলেন , "জানো , আমি রাফিকে কতবার বললাম আসাদকে নিয়ে আসিস । আসাদকে নিয়ে আসিস । ও শুধু বলে , তুমি নাকি অনেক ব্যস্ত । আসতে পারবে না । তুমি'ই বলো , মায়ের সাথে দেখা করতে এলে কি ব্যস্ততা থাকে !"


- "আসলে আমি দেশের বাহিরে ছিলাম , তাই আসতে পারিনি । কিন্তু এখন থেকে প্রতিদিন এসে তোমার সাথে গল্প করে যাবো ।"


আসাদের কথা শুনে সেলিনা বেগম আনন্দের হাসি হাসলেন । সে কি হাসি । মায়ের মুখের হাসির কাছে হয়তো দুনিয়ার সব সুখ তুচ্ছ ।


-------------------------------------------------------------------------------------


অন্যদিকে...!!


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ১৪

 #রাজনীতি

#পর্ব_১৪

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ হা হয়ে তাকিয়ে আছে সিফাতের মুখের দিকে । একটা রহস্যময়ী হাসি বিরাজ করছে সিফাতের মুখে । আসাদ ঐ হাসির কারনটা বুঝতে চেষ্টা করছে , কিন্তু পারছে না । এমতাবস্থায় সিফাত বলে , "আচ্ছা শোন , তোকে একটা কথা বলি । কয়দিন পরেই তো ভার্সিটি ইলেকশন , তাই না ? আর ভার্সিটি ইলেকশন শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে কিন্তু তোর পালাও এসে পরবে । আমি জানি তোর মনে আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে । আমার কাজকর্ম নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে । বা তোকে আমি এতকিছু বলি , কিভাবে বলি ? কেনো বলি ? সবকিছু নিয়েই অনেকগুলো প্রশ্ন জমা হয়েছে তোর মাঝে । তো তুই যদি সামনের ইলেকশনে জয়লাভ করিস তাহলে তোকে বলবো সবকিছু । তাই বলছি , এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামাস না । সামনে যেটা আসতে চলেছে সেটা নিয়ে ভাব , বাকিটা আমি সামলে নেব ।"


আসাদের ঘোর এখনো কাটেনি । এতক্ষণ যেন সিফাতের কথা গুলো ও গিলে গিলে খেয়েছে কিন্তু কিছুই বুঝতে পারেনি । তাই , সিফাতের কথাই মেনে নিল আসাদ । সিফাতের হ্যাঁ এর সাথে হ্যাঁ মিলালো । সিফাত মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে যায় । রুমে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সিফাতের ফোনটা বেজে ওঠে । নাম্বারটা পরিচিত দেখে বিলম্ব না করে কলটা রিসিভ করে , 


- "হ্যালো , মাস্টার !"


- "হুম , বল !"


- "প্রাপ্তির খোঁজ পেয়েছি ।"


- "মামা তোর সাথে আছে !"


- "হ্যাঁ মামা আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন !" 


- "মামাকে ফোনটা দে !"


- "আচ্ছা !"


- "হ , ভাইগনা কও !"


- "প্রাপ্তিকে নিয়ে আমার পার্সোনাল রুমে রাখো । আমি রাতে আসবো ।"


- "ভাইগনা , তুমি কি করতে চাইতে আছো । মুই কিন্তু বুইজ্জা হালাইছি ।"


- "ধুর , উল্টা পাল্টা কথা বইলো না তো !"


- "আচ্ছা , মুই দেখতাছি । এখন রাখি তাইলে ।"


- "হুম !"


-------------------------------------------------------------------------------------


রাফি মাত্র ঘুম থেকে উঠলো । দূর্বলতাটা কাটেনি এখনো । বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হবার জন্য । ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় নিজের তাসরিফ জমিয়ে টিভিটা অন করলো । বেশ মনোযোগ দিয়ে টম এন্ড জেরি দেখছিল রাফি , হাসছিলোও বটে । মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে ফোনের শব্দ শুনে । বেশ বিরক্তি নিয়ে কলটা রিসিভ করে ফোনটা নিজের কানে ধরলো , "হ্যালো , কে ?"


- "আমি সিকদার !"


- "জ্বী , ভাই বলেন !"


- "ইলেকশনের তো আর বেশিদিন নেই রাফি । কিন্তু এখন পর্যন্ত একটা ভালো খবর তুমি আমাকে দিতে পারলে না ।"


- "ভাই , বাসায় তো এখন আসাদ আছে । আমি বরং আপনার সাথে দেখা করে কথা বলি ?"


- "আচ্ছা , ঠিক আছে । আমি অপেক্ষায় থাকবো তোমার কোনো ভালো খবরের । আর যদি সেটা না হয় তাহলে বাকিটা তো তুমি জানো'ই ।"


- "চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখিনি আমি । কিন্তু সময় এবং সুযোগ কোনটাই মিলছে না , সেজন্য একটু দেরি হচ্ছে । তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন , আপনাকে আমি হতাশ করবো না ।"


- "তাই যেন হয় । নাহলে কিন্তু আমিও আমার কথা রাখতে পারব না ।"


-------------------------------------------------------------------------------------


সময়ের টানে অনেকগুলো দিন অতিবাহিত হয়েছে । ভার্সিটি ইলেকশনও শেষ । আসাদের ইলেকশন আসতেও বেশি দিন বাকি নেই । নবাবী ভোজের রুফ টপে বসে সেই কথাগুলি'ই ভাবছিল আসাদ । হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে এসে ওর দিকে একটা গোলাপ বাড়িয়ে দিল । আসাদ প্রথমে কিছুটা অবাক হলো । পরক্ষণেই গোলাপটা নিজের হাতে নিয়ে মেয়েটিকে বলে , "এটা আমাকে কেনো দিলে আপু ?"


মেয়েটা হুট করে ক্ষানিকটা হেসে দিয়ে বলে , "আমার কাজ'ই তো এটা !"


হাসিটা বড়'ই মলিন । বোঝাই যাচ্ছে , মেয়েটি নিজের অবস্থাতে বেশ ভালো'ই আছে । আসাদ মেয়েটিকে নিজের কোলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে , "কিন্তু এটা তো তোমার স্কুলে যাওয়ার সময় , খেলাধুলা করার সময় আপু । সেটা না করে তুমি এখানে মানুষকে ফুল দিয়ে বেড়াচ্ছো ।"


মেয়েটি বিষন্ন গলায় উত্তর দিল , "আমার কাছে তো টাকা নেই , যে আমি স্কুলে যাব । এই কাজ করে যতটুকু টাকা পাই সেটা দিয়েই আম্মুর চিকিৎসা করাচ্ছি । এখন আমি যদি সেটা না করে স্কুলে যাই , তাহলে আমার মা যে মারা যাবে । তখন আমি কার কাছে থাকবো ?"


- "কি হয়েছে তোমার মায়ের ?"


- "ডাক্তার আংকেল বলেছে , আমার মায়ের নাকি খুব কঠিন একটা রোগ হয়েছে । যেটার চিকিৎসা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন । আমি তো ছোট , কেউ আমাকে বড় কোনো কাজে দেয়না । তাই এই কাজটাই করি ।"


- "এই কাজ করে যে টাকা পাও সেটা থেকে তোমার মায়ের চিকিৎসা হবে ?"


- "আমি তো বলতে পারব না , কিন্তু আমার একটা বড় ভাই আছে । যার কাছে আমি টাকাগুলো নিয়ে দেই ও'ই সবকিছু জানে ।"


- "তোমার ভাইয়ের সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দেবে ?"


- "দাঁড়াও আমার ভাইয়ের একটা ছবি আছে আমার কাছে , তোমাকে দেখাচ্ছি ।"


মেয়েটি আসাদের কোল থেকে নেমে দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো । কিছুক্ষণ পরে হাতে একটা ছোট্ট ছবি নিয়ে এসে ছবিটা আসাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে , "এই দেখো , এটা আমার ভাইয়া ।"


তবে ছবিটা যার ছিল সেটা দেখার জন্য আসাদ হয়তো মোটেই প্রস্তুত ছিল না । নিজের চোখকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না । তবে বিষয়টাতে কোনো রিয়েক্ট না করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মেয়েটিকে বলে , "তুমি সিওর , এটাই তোমার ভাইয়া ?"


- "এখানে শিওর হওয়ার কি আছে ? আমার ভাইয়ের ছবি আমার কাছে থাকবে , এটাই তো স্বাভাবিক । তুমি কি বোকা গো ।"


কথাটা বলে খিল খিল করে হাসতে থাকে মেয়েটি । আসাদ আপন মনে বলে , "সত্যি'ই আমি অনেক বোকা ! সিফাত ঠিক'ই বলে , আমি মানুষ চিনতে পারিনি ।"


মেয়েটির মৃদু ধাক্কায় ধ্যান ভাঙে আসাদের । মেয়েটি বলে , "কি হলো , কথা বলছো না কেনো ?"


- "নাহ , কিছুনা ! তুমি যাবে আমার সাথে ?"


- "কিন্তু কোথায় ?"


- "তোমার ভাইয়ার কাছে !"


- "তুমি আমার ভাইয়াকে চেনো ?"


- "চিনি তো , আমার খুব ভালো বন্ধু ।"


- "না বাবা আমি তোমার সাথে যাব না । আমি শুনেছি , খারাপ লোকেরা আমাদের মতো ছোট ছোট বাচ্চাদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয় । তুমিও যদি তাই করো , তখন ?"


- "আমাকে দেখে কি এমন মনে হচ্ছে তোমার ?"


- "না , তা ঠিক না । তোমাকে দেখে তো ভালোই মনে হচ্ছে । যাওয়া যায় তোমার সাথে !"


- "চলো তাহলে !"


মেয়েটি আসাদের হাত আকড়ে ধরে বলে , "হুম , চলো !"


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ১৩

 #রাজনীতি

#পর্ব_১৩

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


রাফি নিজের চোখ খুলে দেখে , সামনে মস্ত বড় একটা কেক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন ছেলে । রাফি কেকটা কাঁটতে যাবে তখনি বাহির থেকে কয়েকজন ছেলে এসে প্রাপ্তির মুখ চেপে ধরল । রাফি কিছু করতে গেলে ওদের মধ্যে থেকে একজন হকি স্টিক দিয়ে সজোরে আঘাত করে রাফির মাথায় । 


------------------------------------------------------------------------------------


- "এরপর আমার আর কিছু মনে নেই । আমার মাথায় কিভাবে ব্যান্ডেজ এলো , কে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেছিলো কিছুই না । শুধু একটু আগে কেউ একজন যখন আমাকে ডেকে তুলল , তখন চোখ খুলে দেখি একটা গাড়িতে বসে আছি । আর গাড়িটা ঠিক আমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । তবে মজার বিষয় কি জানিস ? গাড়িতে যে ছেলেগুলো ছিল ওরা'ই আমাদেরকে বাঁচিয়ে ছিল । যেদিন আমরা রেজওয়ানের ম্যাসেজ মোতাবেক গোডাউনে দেখা করতে গিয়েছিলাম এবং আমাদের উপর হামলা হয় সেদিন ।"


আসাদ বুঝতে পারছে না কী বলবে । পুরনো চিন্তাগুলো এসে জেঁকে বসেছে , "যদি আমি প্রাপ্তির ছবির পেছনের লেখাগুলোর কথা চিন্তা করি , তাহলে তো প্রাপ্তি'ই দোষী । কিন্তু রাফি তো অন্য কথা বলছে । আর রাফির কথার সাথে আমার চিন্তা-ভাবনা গুলো মিলছে না । কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ।"


এদিকে সিফাতের মুখে মুচকি মুচকি হাসি , যেটা আসাদের চোখ এড়ালো না । আসাদ এই হাসির কারণ খুঁজে পাচ্ছে না । ক্ষানিক কৌতূহলের সাথে সিফাতকে জিজ্ঞেস করে , "কিরে তুই এভাবে হাসছিস কেনো ?"


সিফাত নিজের মুখের হাসি বজায় রেখে বলে , "হাসছি রাফির কথা শুনে ।"


- "রাফি কী এতক্ষণ হাসির কথা বলল নাকি ?"


- "আহ্হারে আসাদ , এখনও কিছু বুঝতে শিখলি না । নিজের মাথাটাকে একটু কাজে লাগা ভাই । এই মাথা নিয়ে তো রাজনীতি করতে পারবি না ।"


- "সব সময় এতো প্যাঁচানো কথা বলবি না তো , যা বলার খোলাখুলি স্পষ্ট ভাবে বলবি ।"


- "না , আমি সব কিছু বলতে পারবো না । যদি আমি'ই সবটা বলে দেই তাহলে তোর কি কাজ ? আমার পক্ষে যতটুকু বলা সম্ভব ছিল , বা যতটুকু করা সম্ভব ছিলো আমি করেছি । বাকিটা তুই নিজেই করে নে । হ্যাঁ যদি তোর সাহায্য লাগে তবে আমি আছি , কিন্তু তোকে তোর লক্ষ্যে পৌঁছে দেবো ? সরি রে , আমি পারবো না । নিজের লক্ষ্যে তুই নিজেই পৌছাবি ।"


- "যতটুকু করা সম্ভব বলতে ? বুঝলাম না ঠিক !"


- "কিছুনা , আচ্ছা তোরা থাক । আর রাফি এক কাজ কর , একটু ঘুমিয়ে নে । তাহলে ভালো লাগবে । শরীরের দুর্বলতাটা কেটে যাবে । আমি একটু বাহির থেকে আসছি , ছোট্ট একটা কাজ আছে ।"


- "হুম , যা !"


রাফি বেরিয়ে গেলে অনন্যা বলে , 


- "আসাদ , আমিও বরং যাই । অনেকটা দেরি হয়ে গেছে , মামা-মামী আবার চিন্তা করবে ।"


- "আমি পৌঁছে দিয়ে আসবো ?"


- "না তার দরকার হবেনা , আমি সিএনজি নিয়ে চলে যেতে পারবো । তুমি রাফির কাছে থাকো । যদি ওর কোনো কিছুর দরকার হয় । আর হ্যাঁ , যেকোন প্রয়োজনে সবার আগে ফোনটা যেন আমার কাছে আসে , কথাটা মাথায় রেখো ।"


- "যথাআজ্ঞা মহারানী , মাথায় থাকবে ।"


অনন্যা বেরিয়ে গেলে আসাদ গেট লক করে রাফিকে নিয়ে রুমে চলে যায় । 


------------------------------------------------------------------------------------


রুমটা বেশ গোছানো । তবে রুমটাতে আলোর বড্ড অভাব আছে । এত বড় রুমে মাত্র একটি লাইট । রুমের মাঝখানে একটি ইজি চেয়ার রাখা । যেখানে একটা মধ্যবয়স্ক ছেলে বসে আছে । আর ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরো অনেকগুলো ছেলে । ইজি চেয়ারে বসে থাকা ছেলেটি বলে , "এবার বল সম্পূর্ণ কাহিনী , কিভাবে কি করলি ?"


সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ছেলে গুলোর মাঝে একটা ছেলে বলতে আরম্ভ করে , "ভাই রাফিকে আমরা একটা পুরাতন গোডাউন থেকে উদ্ধার করি । ও সেখান অজ্ঞান অবস্থায় ছিল , এরপর ও'কে আমরা হসপিটালে নিয়ে যাই । এবং প্রাথমিক চিকিৎসা করে বাসায় রেখে আসি । এতটুকুই , তবে গোডাউনে আমরা অন্য কাউকে খুঁজে পাইনি ।"


- "কিন্তু রাফি যে বলল , প্রাপ্তিকেও ওর সাথে নেওয়া হয়েছে । তাহলে তো গোডাউনে প্রাপ্তিরও থাকার কথা ।"


- "পুরো গোডাউনের রাফি ছাড়া একটা কাকপক্ষীও ছিল না ।"


ছেলেটার কথা শুনে ইজি চেয়ারে বসে থাকা ছেলেটি উঠে দাঁড়ায় । এবং কোনো কথা না বলে হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে যায় । 


------------------------------------------------------------------------------------


সিফাত রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর আসাদকে ফোন দিচ্ছে । কিন্তু আসাদ ফোন তুলছে না । উপায়ান্তর ফোনটা পকেটে রেখে সিফাত বাসার দিকে হাঁটতে আরম্ভ করে । 


বাসার সামনে গিয়ে কলিং বেল প্রেস করলে , কিছুক্ষণ পর আসাদ এসে দরজা খুলে দেয় । আসাদের চোখের ঘুম ঘুম ভাবটা কাটেনি । হাত দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে বলে , "কিরে এত দেরী করে এলি যে ? তুই না বললি একটু পরে'ই চলে আসবি ?"


- "আমার কথা রাখ , তোকে যে এতগুলো ফোন দিলাম । ধরলি না কেনো ?"


- "কখন ফোন দিলি তুই ?"


- "এই তো কিছুক্ষণ আগে !"


- "তাহলে হয়তো ঘুমোনো ছিলাম , তাই শুনতে পাইনি !"


- "আচ্ছা তোর সাথে আমার কথা আছে , যা ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে আয় !"


- "আচ্ছা তুই বস , আমি চোখে মুখে পানি দিয়ে আসছি ।"


সিফাতকে ড্রইংরুমে বসিয়ে আসাদ ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে সিফাতের পাশে এসে বসে এবং বলে ,


- "বল কি কথা ?"


- "প্রাপ্তির কোনো খোঁজ পেলি ?"


- "নাহ প্রাপ্তির ফোন তো বন্ধ বলছে । এখন তো আমারও চিন্তা হচ্ছে , রাফির কথা মোতাবেক যদি ওরা প্রাপ্তিকেও তুলে নিয়ে যায় তাহলে তো প্রাপ্তির সামনে বিপদ । আমাদের উচিত প্রাপ্তিকে খুঁজে বের করা , তুই কি বলিস ? আমরা শুধু শুধু মেয়েটাকে ভুল বুঝলাম ।"


সিফাত মুখে একগাল হাসি নিয়ে বলে , "তুই এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি আসাদ । মানুষ তোকে যেটা দেখায় ,যেটা বোঝায় তুই ঠিক সেটাই বুঝে বসে থাকিস । নিজে থেকে কখনো কোনো রহস্যের উদঘাটন করার চেষ্টা করিস না । তোর এই একটাই সমস্যা । আর এই জিনিসটা তোকে মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে । কথাটা মাথায় রাখিস ।"


আসাদ হা হয়ে তাকিয়ে আছে সিফাতের মুখের দিকে । একটা রহস্যময়ী হাসি বিরাজ করছে সিফাতের মুখে । আসাদ ঐ হাসির কারনটা বুঝতে চেষ্টা করছে , কিন্তু পারছে না । এমতাবস্থায়...!! 


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ১২

 #রাজনীতি

#পর্ব_১২

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


- "রাফির কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না । খোঁজ লাগাও , আজকের মধ্যে ও'কে আমার চাই !"


- "আচ্ছা , মুই দেখতে আছি । তুই চিন্তা করিস না !"


কথা বলা শেষ করে লোকটা নিজের কল লিস্ট থেকে একটা নাম্বার বের করে কল লাগায় , 


- "এ তুই কোম্মে আছো আয় ?"


- "মামা আমিতো অফিসে আছি !"


- "তুই তায় অপিসেই থাক , মুই আইতাছি !"


- "হঠাৎ অফিসে আসবে কোনো কাজ ছিলো নাকি ?"


- "আইয়া কমু আনে !"


- "আচ্ছা !"


কল কেটে পুনরায় রওনা দেয় মগবাজের উদ্দেশ্যে । 


অফিসে পৌঁছে লোকটা ভিতরে গিয়ে দেখে সবাই তাস খেলা এবং হাসি ঠাট্টায় ব্যস্ত । টেবিলের উপরে চাপড় মেরে কর্কশ গলায় বলে , "তোগো কি এইগুলা করার লইগ্গা রাকছি নাকি ? কোন জাগা কি অয় , হেয়ার খবর তো রাহো না । খালি মজমা নিয়া থাহো না ?"


একজন বসা থেকে উঠে কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বলে , "মজমা কি মামা ?"


- "নাটক করো মোর লগে ? জানা না তোরা ?"


- "জানলে কি আর জিজ্ঞেস করতাম বলো ?"


- "মজমা মানে , মদ-জুয়া-মাইয়া মানুষ ।"


ছেলেটা দুই হাতে নিজের কান চেপে ধরে বলে , "তোমার এই কথা শোনার আগে আমি বধির হয়ে গেলাম না কেনো ?"


- "অভিনয় এট্টু কোম কর বোজ্জো ? নাইলে উস্টা মাইরা দাঁত কয়োডা ভাইঙ্গালামু ।"


- "ওকে মামু !"


- "ভেটকি মাইরো না । যে কামের লইগ্গা আইছি , হেইয়া হোন ।"


- "হুম , বলো না !"


- "রাফি নাকি নিখোঁজ । ভাইগনা মোরে ফোন দেছেলে । তোগো উফার নাকি দায়িত্ব আছেলে ওগো দেইক্কা হুইন্না রাহার ?"


- "মামা , ভাই তো আমাদের বলছিলো আসাদের উপরে নজর রাখতে । রাফির ব্যাপরে তো কিছু বলেনি ।"


- "তোমাগো কয় নাই , হেইর পানে তোমরা করও নায় । হাত তালি দিমু মুই ?"


কেউ কিছু বলছে না । নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রয়েছে । মামা আবার বলে , "হোন , সবাইরে কামে লাইগ্গা যাইতে ক । যতো তাড়াতাড়ি পারো রাফিরে খুইজ্জা বাইর কর । নাইলে ভাইগনা যে কি করবে হেয়া কিন্তু মুই কইতে পারি না ।"


- "আচ্ছা মামা , তুমি নিশ্চিন্ত থাকো । আমরা দেখছি কি করা যায় ।"


- "তোগো জ্বালায় আর নিশ্চিন্ত থাহার কোনো কায়দা আছে নাকি আয় ? গেছেলাম দুই প্যাগ মারমু বইল্লা কিন্তু ভাইগনা ফোনডা দেছে এমন সময় , আহ্হারে ।"


- "তুমি তাহলে যাও খাইতে , আমরা কাজে গেলাম ।"


ছেলেগুলো রুম থেকে বেড়িয়ে গেলে । মামা একটা চেয়োর টেনে বসে পড়লেন । কপালে হাত দিয়ে বলেন , "এক্কালে ঘাইম্মা গেছি রে । বুড়া অইছি , এতো কাম করা যায় ?"


আচমকাই নিজের জীভ দাঁত দিয়ে কেটে বলেন , "ওমা , এয়া মুই কি কই ? মুই তো এহনো জুয়ান , বুড়া ক্যামনে অইলাম । এহনো তো ভাইগনার লইগ্গা এট্টা মামি আনতে অইবে । মোর বা দোষ কোতায় । এতো প্রেসার দেলে কি মাতা ঠিক থাহে নাকি ?"


মামা নিজেই নিজের সাথে বক বক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন । 


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ ড্রয়িং রুমে পাইচারি করছে । সিফাত এবং অনন্যাও আছে অবশ্য । অনন্যা আসাদকে শান্ত করতে না পেরে নিজেই চুপটি মেরে বসে আছে সোফার উপরে । সিফাত বলে বলে ক্লান্ত হয়ে গেছে যে , "রাফি ফিরে আসবে , ওর কিছু হবেনা ।"


কিন্তু আসাদ মানতে নারাজ । সচক্ষে রাফিকে দেখা না অবধি আসাদের মনে শান্তি মেলবেনা ।


দুপুরেও কিছু খায়নি ছেলেটা । আসাদ না খাওয়ায় সিফাত এবং অনন্যার পেটেও কিছু পড়েনি । মুখটা শুকিয়ে গেছে চিন্তায় চিন্তায় । আসাদের লোকজনও কোনো খোঁজ পাচ্ছে না । 


কিছুক্ষন পরে ডোর বেল বাজলে আসাদ গিয়ে গেট খুলে দেখে রাফি দাঁড়ানো । মাথায় ব্যান্ডেজ পেঁচানো আছে । ব্যান্ডেজের কোনা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে চুয়িয়ে চুয়িয়ে । রাফিকে আসাদ নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিয়ে বলে , "তুই ঠিক আছিস তো ভাই ? কতটা চিন্তায় ফেলেছিলি জানিস ? দম বন্ধ হয়ে আসছিলো ।"


রাফি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে , "আরে আমার কিছু হয়নি । জাস্ট মাথায় একটু চোট লেগেছে ।"


- "কিভাবে হলো এসব ? নিশ্চয়ই প্রাপ্তির কাজ তাই না ?"


- "ভিতরে চল বলছি সব । দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না । মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা ।"


- "হুম , চল । চল !"


আসাদ রাফিকে ধরে ভিতরে সোফায় নিয়ে বসালো । অতঃপর বলে , "একটু ঘুমিয়ে নিবি নাকি ? তাহলে মনে হয় আরাম লাগবে ।"


- "নাহ , লাগবে না । আমি ঠিক আছি ।"


- "তোর এই অবস্থা হলো কিভাবে ? প্রাপ্তি করেছে তাই না ? ও'কে তো আমি মেরেই ফেলবো ।"


আসাদ উত্তেজিত হলে রাফি শান্ত গলায় বলে , "আরে না , প্রাপ্তি কিছু করেনি ।"


- "প্রাপ্তি'ই তো তোকে ক্যান্টিনের পিছনের গেটে নিয়ে গেছিলো ।"


- "পুরো কথাটা তো শুনবি নাকি ?"


- "বল , শুনছি ।"


- "আজকে যে আমার জন্মদিন ছিলো সেটা তোর মাথায় আছে ?"


- "আজকে তোর জন্মদিন ?"


- "হুম , জানি হয়তো কাজের চাপে ভুলে গেছিস । তবে প্রাপ্তির মনে ছিলো । আর ও আমাকে ক্যান্টিনের পিছনের গেটে নিয়ে গিয়ে , 


-------------------------------------------------------------------------------------


-"কি ব্যাপার এখানে আসলে কেনো ? ওখানে সবার সামনেই তো বলতে পারতা !"


- "হুম , পারতাম তবে সারপ্রাইজটা আর থাকতো না ।"


- "কিসের সারপ্রাইজ ?"


- "নিজেই নিজের বার্থডে মনে রাখতে পারো না , আর বলছো কিসের সারপ্রাইজ ?"


- "আজকে আমার বার্থডে ছিল ?"


- "নাগো আমার ছিল !"


- "কিন্তু আমার বার্থডে হলে আসাদ নিশ্চয়ই উইশ করতো ওর তো ভুলে যাওয়ার কথা না ।"


- "সে তো এখন অনন্যাকে নিয়ে ব্যস্ত । তোমার বার্থডে মনে রাখার সময় কি তার কাছে আছে নাকি ?"


- "এভাবে বলোনা , ছেলেটার মনটা খারাপ ছিল । তারপর তুমি ওর উপরে রাগ করছো , কথা বলো না । সেজন্য হয়তো অনন্যার সাথে একটু সময় কাটিয়ে নিজের মনটা ভালো করতে চেয়েছিল ।"


- "বাহ আমি রাগ করছি বলে অন্য মেয়ের সাথে ঘুরে নিজের মন ভালো করতে হবে তাই না ? আমাকে মানিয়ে নেয়া যায়না । তার উপরে তুমি জানো , ও আমাকে কি বলছে ? আমি নাকি ও'কে মারতে চাই , ও আমাকে নাকি কতকিছু শিখাইছে । এগুলো কেনো বলল , কি জন্য বলল কিছুই বুঝলাম না ।"


- "ধুর , বাদ দাও তো ওর কথা । মন ভালো হলে ঠিক'ই ফিরে আসবে । এখন বলো আমার জন্য কি সারপ্রাইজ আছে ?"


- "চোখ বন্ধ করো ।"


রাফি নিজের চোখ বন্ধ করে বলে , "এই নাও করলাম ।"


- "ওয়ান টু থ্রি , সারপ্রাইজ !"


রাফি নিজের চোখ খুলে দেখে , সামনে মস্ত বড় একটা কেক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন ছেলে । রাফি কেকটা কাঁটতে যাবে তখনি বাহির থেকে কয়েকজন ছেলে এসে প্রাপ্তির মুখ চেপে ধরল । রাফি কিছু করতে গেলে ওদের মধ্যে থেকে একজন হকি স্টিক দিয়ে সজোরে আঘাত করে রাফির মাথায় ।  


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ১১

 #রাজনীতি

#পর্ব_১১

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


প্রাপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আসাদ বলে , "তুমি আমার সেই ছাত্রী , যাকে আমি শিখিয়েছি সব নিজের হাতে । শিষ্য হয়ে গুরুকে তুমি মারবে কি শর্তে ? যদি করতে ভুল , তবে ক্ষমা পেতে বারংবার । তবে করেছো যে অন্যায় , তুমি'ই বলো সেটার কি ক্ষমা হয় ?"


প্রাপ্তি নির্বাক । বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে । আসাদ মুচকি হেসে অনন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো প্রাপ্তির সামনে থেকে । প্রাপ্তি নির্বাক তাকিয়ে আছে ওদের চলে যাবার দিকে । 


ক্যান্টিনে ঢুকে রাফিকে দেখে প্রাপ্তি ও'কে ডাক দিলো । প্রাপ্তির ডাকে সাড়া দিয়ে রাফি বলে , "হুম বলো !"


- "সময় হবে তোমার কাছে ?"


- "কেনো ?"


- "কিছু কথা ছিলো !"


- "হুম বলো না !"


- "এখানে নয় , ঐ দিকটা চলো !"


হাত দিয়ে ক্যান্টিনের পিছনের গেটের দিকে ইশারা করে বলে প্রাপ্তি ।


- "কেনো , এখানে বললে কি প্রবলেম ?"


- "এতো প্রশ্ন না করে , চলো প্লিজ !"


- "আচ্ছা চলো ।"


রাফি চলে যেতে নিলে , সিফাত প্রশ্ন করে , "কোথায় যাচ্ছিস ?"


- "এইতো একটু পিছনের গেটে যাচ্ছি !"


- "কেনো ?"


- "প্রাপ্তি নাকি কি বলবে তার জন্য !"


- "যা বলার এখানে বলতে বল , অন্য কোথাও যাবার প্রয়োজন নেই !"


- "প্রাপ্তির নাকি সমস্যা আছে এখানে । তোরা একটু বস আমি এক্ষুনি চলে আসবো !"


- "আমি কিন্তু বারন করছি রাফি !"


সিফাতের কথার তোয়াক্কা না করে রাফি চলে যায় প্রাপ্তির সাথে । পিছনের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রাফি বলে , "হুম বলো , কি বলবে ?"


- "বলবো না করবো !"


- "মানে ?"


- "ওয়ান , টু , থ্রি ! সারপ্রাইজ !"


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ এবং অনন্যা ভার্সিটিতে ফিরে এসেছে । বাইক থেকে নেমে অনন্যা আসাদের হাতের উপরে হাত রেখে বলে , "থ্যাংকস , এতো সুন্দর একটা সময় আমাকে উপহার দেবার জন্য ।"


- শুধু থ্যাংকস ?"


- "তাহলে ?"


- "খিচুড়ি হলে মন্দ হতো না ।"


অনন্যা মুচকি হেসে বলে , "ওহ , এই ব্যাপার ? আচ্ছা ঠিক আছে , কালকে বানিয়ে আনবো !"


- "ওকে , তুমি ভিতরে যাও আমি বাইক রেখে আসছি ।"


- "একসাথেই যাই , সমস্যা নেই ।"


- "তাহলে একটু ওয়েট করো ।"


- "হুম ।"


আসাদ বাইক পার্ক করে এসে , "চলো !"


আসাদ এবং অনন্যা ক্যান্টিনে গিয়ে দেখে সিফাত এবং বাকিরা বসে আছে তবে রাফি নেই । সিফাতের কাছে জিজ্ঞেস করলে বলে , "রাফি তো প্রাপ্তির সাথে ক্যান্টিনের পিছনের গেটে গেছে ।"


- "কখন গেছে ?"


- "তা প্রায় এক ঘন্টার মতো হয়েছে ।"


- "পাগল নাকি তুই ? আটকাতে পারলি না ?"


- "আমি অনেকবার বলছি রাফিকে কিন্তু ও শোনেনি !"


- "শোনেনি বলে তুই নিশ্চিন্তে এখানে বসে আছিস , তাই তো ? তুই নিজেই আমাকে বললি সবকিছু আর এখন নিজেই এতো বড় ভুলটা কিভাবে করলি ?"


- "তুই এতো উত্তেজিত হচ্ছিস কেনো ? রাফির কিছু হবে না !"


- "বাহ , দারুণ বলেছিস তো !"


আসাদ ক্যান্টিন থেকে হন হন করে বেড়িয়ে গেলো । আসাদের পিছু পিছু বাকিরাও গেলো । পিছনের গেটের কাছে গিয়ে দেখে কেউ নেই । সম্পূর্ণ ভার্সিটি খুঁজেও রাফি এবং প্রাপ্তির কোনো হদিস পাওয়া গেলো না । নাম্বারও বন্ধ দেখাচ্ছে । আসাদ ক্ষিপ্র কন্ঠে সিফাতকে বলে , "রাফি কই ?"


- "এই একই প্রশ্ন তো আমারও !"


- "তুই থাকতে এটা কিভাবে হলো ? তোর কি আর একটু সবধান হওয়া উচিত ছিলো না ?"


অনন্যা আসাদের কাঁধে হাত রেখে শান্ত গলায় বলে , "একটু শান্ত হও , রাফি হয়তো প্রাপ্তির সাথে কথা বলে কোনো কাজে গেছে । কাজ শেষ হলে ফিরে আসবে ।"


- "কাজে গেলে ফোন বন্ধ কেনো ?"


- "নেটওয়ার্ক প্রবলেম হতে পারে না ?"


আসাদ আর কিছু না বলে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে যায় । অনন্যাও গেলো পিছু পিছু । 


সিফাত বাকিদের চলে যেতে বলে নিজেও বের হয়ে যায় । 


-------------------------------------------------------------------------------------


সবাই বাসের জন্য অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার এক পাশে । যানজটের এই শহরে বাস কখন আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই । হঠাৎ ম্যানহলের ঢাকনা খুলে একজন লোক বেড়িয়ে আসলো । সবাই হাসতে হাসতে নাজেহাল । লোকটার পড়নে সাদা গেঞ্জি , কালো কোটি এবং কালো প্যান্ট । মাথায় ঘন কোঁকড়া চুল । হাসতে থাকা মানুষগুলোর সামনে গিয়ে লোকটা বলে , "এ তোমরা হাসতে আছো কিল্লোইগগা ?"


উত্তরে একটা লোক নিজের হাসির পরিমান ক্ষানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে , "সরকার এতো সুন্দর রাস্তা বানিয়ে দিলো , সেটা থাকতে আপনি ম্যানহলের ভিতরে কেনো ?"


- "আরে মিয়া , বোঝনা তো কিছু । খালি আমরে কও লিচু ! এতো যানজটের মইদ্দে রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে কবে যে গন্তব্যে পৌঁছামু হেয়ার কোনো ঠিক ঠিকানা নাই । হেল্লেইগা ম্যানহলের মইদ্দে দিয়া আইছি । মগবাজার দিয়া এইহানে আইছি মাত্র দশ মিনিটে । এইয়া যদি রাস্তা দিয়া অইতাম , হ্যালে দুই ঘন্টা লাগতো । যাউক , তোমরা খারাই থাহো । মোর কাম আছে , মুই যাই ।"


কিছুটা দূর আগাতেই ফোনটা বেজে ওঠে । কল রিসিভ করে বলে , "হ , ভাইগনা কও !"


- "কোথায় তুমি ?"


- "মুই তো শাহাবাগ আইছেলাম ।"


- "এখন , শাহাবাগ কেনো ?"


- "বোঝো না কেয়া আইছি ?"


- "সারাদিন ঐ বাল নিয়া'ই থাকো । কোথায় কি হয় তার খবর তো রাখো না !"


- "কি অইছে ভাইগনা ? এতো চেইত্তা আছো কিল্লোইগা ?"


- "রাফির কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না । খোঁজ লাগাও , আজকের মধ্যে ও'কে আমার চাই !"


- "আচ্ছা , মুই দেখতে আছি । তুই চিন্তা করিস না !"


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ১০

 #রাজনীতি

#পর্ব_১০

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


দিনটা ভালোই কাটলো আসাদের । সারদিনের মাঝে প্রাপ্তির কথা একটি বারের জন্যও মাথায় আসেনি । হয়তো আসতে দেয়নি । হয়তো , খেলার মোড় ঘুরাতে চাচ্ছে আসাদ । 


-------------------------------------------------------------------------------------


পরদিন সকালেও ভার্সিটিতে যায় আসাদ , রাফি এবং সিফাত । সাথে সাঙ্গপাঙ্গরা তো আছে'ই । তবে আজকে ভার্সিটিতে গেছে অন্য একটা কাজে । কয়েকদিন পরেই ভার্সিটিতে হল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন । তবে প্রার্থী মাত্র দুই জন । নাবিল এবং রেজোয়ান । আসাদ নাবিলের পক্ষে থেকেই সম্পূর্ণ নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চাচ্ছে । অবশ্য নাবিলকে সাপোর্ট করার পিছনে যথেষ্ট কারনও আছে । কারন , নাবিলের মাঝে আসাদ নিজেকে দেখতে পায় । ভার্সিটিতে কারো কোনো সমস্যা হলে সবার আগে যদি কাউকে পাওয়া যায় সে হলো এই নাবিল । হোক সেটা ছোট বা বড় ধরনের কোনো সমস্যা । তো যার মাঝে মানুষকে সাহায্য করার প্রবণতা রয়েছে , সে নিশ্চয়ই একটা হল সামলানোর মতো সক্ষমতা রাখে নিজের মাঝে । 


আসাদ নাবিলকে সাপোর্ট করছে দেখে , উপায়ন্তর রেজোয়ান ছুটে গেছে বাপ্পির কাছে । বলা বাহুল্য , আসাদ এবং বাপ্পি একসময়ের সেরা বন্ধুত্বের খেতাব বহন করেছিলে ভার্সিটিতে । তবে এখন , একজন আরেক জনের চোখের বিষ । কারন , ঐ যে রাজনীতি । এই একটা শব্দ ওদের সাত বছরের বন্ধুত্ব সাত সেকেন্ডে শেষ করে দিয়েছিলো । কেউ ভাবেনি কখনো , স্কুল লাইফের এতো ঘনিষ্ঠ দুই জন বন্ধু শুধু এই রাজনীতির চক্করে পড়ে আলাদা হয়ে যাবে । 


বাপ্পি ঢুকছে গেট দিয়ে । মিনারের পাশে দৃঢ় পায়ে দাঁড়ানো হিজল গছের নিচে আসাদ নাবিলের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত । আসাদকে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো বাপ্পি । আসদ গ্রাহ্য করেনি । 


দু'জনের চোখাচোখি শেষ হলে , বাপ্পি মিনারের দু'টো শিড়ি উপরে উঠে হাতে একটা মাইক নিয়ে বলে , "আর কয়েকদিন পরেই তো ইলেকশন । নিশ্চয়ই তোমরা জানো কাকে ভোটটা দিতে হবে , বা কাকে দিলে তোমরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে । এখন আসি মূল কথায় । প্রেসিডেন্ট সবাই হতে পারে , কিন্তু সবাই দায়িত্ব পালন করতে পারেনা । তাই দায়িত্ববান কেউ'ই এই পদ পাবার যোগ্যতা রাখে বলে আমি মনে করি । আমার মতে , রেজোয়ানের চেয়ে ভালো প্রেসিডেন্ট তোমরা অত্র ভার্সিটিতে চিরুনি তল্লাশি চালালেও আরেকজন পাবেনা । তাই কারো প্ররোচনায় না এসে , নিজেদের ভালোটা বুঝতে শেখো ।"


কথাগুলো বলে ক্ষানিক জিরিয়ে নিলো বাপ্পি । অতঃপর আসাদের দিকে তাকিয়ে ঠাট্টার ছলে বলে , "অনেকে তো কোনো যোগ্যতা ছাড়াই রাজনীতিতে চলে আসে ! অতএব , সেসব যোগ্যতাহীন মানুষদের যতটা পারবে এড়িয়ে চলবে ।"


নিজের কথাগুলো শেষ করে , মুচকি হেসে হাত দিয়ে মাইকটা এগিয়ে আহ্বান করে আসাদকে নিজের কথা বলার জন্য । আসাদও প্রতিউত্তরে মুচকি হেসে মাইকটা হাতে তুলে নেয় । দুই আঙুল দিয়ে মাইকে দু'টো বারি মেরে বলতে আরম্ভ করে , "সবাই এতো দূরে দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ? মিনারের কাছে এসো , কথা আছে তোমাদের সাথে ।"


আসাদের ডাকে সকালে সাড়া দিয়ে , ধীরে ধীরে মিনারের কাছে এসে ভিড় জমালো । আসাদ বলে , "তোমাদের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছে , সকলে উত্তর দেবে আশা করি ।"


সকলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালে আসাদের প্রথম প্রশ্ন , "মনে করো , তোমাদের সামনে দু'টো মোবাইল আছে । একটা দেখতে অনেক সুন্দর , পিছনে চারটা ক্যামেরা , ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সরও আছে । বড় সাইজের ডিসপ্লে । কিন্তু প্রসেসর ভালো না । অন্য ফোনে প্রথমটার মতো চারটা ক্যামেরা নেই , অনেক বড় ডিসপ্লে নেই , কিন্তু প্রসেসর অনেক ভালো । এখন আমার প্রশ্ন হলো , তোমরা কোনটা বেছে নেবে ? প্রথমটা নাকি দ্বিতীয়টা ?"


সকলে উচ্চস্বরে বলে উঠলো , "দ্বিতীয়টা !"


আসাদের মুখে হাসি ফুটলো । বাপ্পি রাগে ফুঁসছে , কিন্তু কিছু বলছে না । আসাদ আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো , "এবার আরেকটা প্রশ্ন করি , কেমন ? একজন যোগ্যতাবান ব্যক্তি যে তোমাদের কখনো কোনো বিপদে আপদে সাহায্য করেনি , তোমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি । অন্যদিকে একজন যোগ্যতাহীন ব্যক্তি , যার কোনো যোগ্যতা নেই । কিন্তু মানুষকে সাহায্য করার জন্য বড় একটা মন আছে । সকলের বিপদে আপদে এগিয়ে আসে , সবাইকে নিজের পরিবারের একজন সদস্য মনে করে । এবার বলো , কাকে চাই তোমাদের  ? যোগ্যতাবান নাকি যোগ্যতাহীন ?"


এবারও সবার উত্তর আসাদের পক্ষেই এলো । বাপ্পি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে । কি'ই বা বলবে , বলার মতো কিছু নেই ওর কাছে । আসাদ মুখের হাসি বজায় রেখে বলে , "দেখো তোমাদের নেতা বাপ্পি হয়তো কিছু বলতে চায় । শোনো তাহলে মনোযোগ দিয়ে ।"


আসাদ মাইকটা বাপ্পির হাতে তুলে দিয়ে সবাইকে নিয়ে মিনারের সামনে থেকে চলে আসে । মাঝ মাঠে আসার পরে নাবিল বলে , "ভাই , চলে যাবে নাকি থাকবে ?"


- "কেনো ?"


- "সবাই মিলে একটু চা , সিঙ্গারা খেতাম আর কি !"


- "আমার সামনে ফর্মালিটি দেখালে মাইর এটাও মাটিতে পড়বে না । চা , সিঙ্গারা যারা তোকে ভোট দেবে , যাদের কারনে তুই জিতবি , তাদেরকে খাওয়াবি । আমরা ক্যান্টিনে আছি । প্রয়োজন পড়লে ডাক দিস !"


- "আচ্ছা , ভাই !"


আসাদ এবং বাকিরা চলে গেলো ক্যান্টিনে আর নাবিল গেলো নিজের কাজে । 


ক্যান্টিনে গিয়ে বসতে না বসতেই সিফাত আসাদকে খোঁচানো শুরু করে । আসাদ ত্যক্ত হয়ে বলে , "কি শুরু করছিস ? মেয়ে পেয়েছিস নাকি ?"


সিফাত হাসতে হাসতে বলে , "আরে তোর পাখি এসেছে !"


- "মানে ?"


- "একটু পিছনে তাকাও খোকা ।"


আসাদ পিছনে তাকিয়ে দেখে অনন্যা আসছে । তবে আজ চোখ ফেরাতে পারছে না অনন্যার থেকে । কালো শাড়ি , কালো টিপ , বেশ মানিয়েছে মেয়েটাকে । মুখে মাতাল করা হাসি , আসাদকে বেকাবু করে তুলছে । আসাদ নিজেকে সামলাতে পারছে না । অবস্থা বেশি বেগতিক হবার আগেই আসাদ নিজের চোখ ফিরিয়ে নেয় । 


আসাদের অবস্থা দেখে কেউ নিজের হাসি আটকে রাখতে পারলো না । অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সবাই । ইতিমধ্যে অনন্যাও সেখানে এসে হাজির । বেশ উৎফুল্লের সাথে জিজ্ঞেস করে , "কি ব্যাপার , তোমরা এতো হাসাহাসি করছো কেনো ? আমাকেও বলো !"


রাফি আসাদের কাঁধে হাত রেখে বলে , "তেমন কিছু না , আসলে একজন হারিয়ে ফেলছিলো নিজেকে অন্য একজনের মাঝে । সেটা দেখেই হাসছি ।"


- "এভাবে অর্ধেক কথা বলিস কেনো? লাথি মারমু । পুরোটা বল ।"


- "আরে একটা কুত্তা একটা কুত্তির দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো , সেটাই বলছি ।"


- "কুত্তা কেমন ভাষা ? কুকুর বলতে পারিস না ?"


- "ওরা কুকুর না , ওরা কুৃত্তা !"


- "কই দেখি ?"


রাফি বিরবির করে বলে , "নিজেকে কিভাবে দেখবি ? এখানে তো আর আয়না নেই ।"


- "কি বললি , শুনতে পাইনি ।"


রাফি মুখ খোলার আগেই আসাদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে অনন্যাকে বলে , "আরে ওদের কথা বাদ দাও তো । চলো ঐদিকটায় গিয়ে বসি ।"


- "আচ্ছা , চলো ।"


- "বসবে নাকি হাঁটবে ?"


খুশি হয়ে বলে , "চলো হাঁটি !"


অতঃপর আরকি , দু'জন মিলে বেড়িয়ে পড়ে কিছুটা আনন্দ খোঁজার উদ্দেশ্যে । তবে ভার্সিটির বাহিরে বাইকে উঠতে গেলে দেখা হয় প্রাপ্তির সাথে । প্রাপ্তি আসাদের দিকে তাকিয়ে বলে , "এসব কি আসাদ ? তুমি ওর সাথে কি করছো ?"

 

প্রাপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আসাদ বলে , "তুমি আমার সেই ছাত্রী , যাকে আমি শিখিয়েছি সব নিজের হাতে । শিষ্য হয়ে গুরুকে তুমি মারবে কি শর্তে ? যদি করতে ভুল , তবে ক্ষমা পেতে বারংবার । তবে করেছো যে অন্যায় , তুমি'ই বলো সেটার কি ক্ষমা হয় ?"


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৯

 #রাজনীতি

#পর্ব_৯

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


রাগে চোখ রক্তবর্ণ ধারন করেছে । রক্তবর্ণ চোখে ছেলেটার দিকে তাকালে , চোখের ঝাঁজ সহ্য করতে না পরে মাথা নিচু করে ফেলে ছেলেটা । মুচকি হেসে বলে , "শান্ত হবো ? হ্যাঁ আমি শান্ত হবো । তবে সেদিন , যেদিন আমার দেয়া কাজটা তোরা সম্পন্ন করতে পারবি । দুই দিন সুযোগ করে দিলাম , কিন্তু লাভ কি হলো ? ব্যর্থ । তোরা তো জানিস , ব্যর্থতা জিনিসটা আমার সহ্য হয়না । শেষ আরেকটা সুযো দিলাম । হয় আসাদকে মেরে ফেল , নাহয় তোদের মৃত্যু কেউ আটকাতে পারবে না । কথাটা যেন মাথায় থাকে । আমি বারবার বলবো না !"


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ বাসায় এসে পৌঁছেছে । অন্যন্যার সাথে সময়গুলো বেশ ভালোই কেটেছে ওর । পুরোনো স্মৃতিগুলো আবার জেঁকে বসেছে । ভার্সিটির সেই দিনগুলোর কথা মাথায় আসতেই , আসাদ নিজের অজান্তে হেসে ফেলে । 


সিফাত রুমে ঢুকে দেখে আসাদ আপনমনে হাসছে । বিছানায় নিজের তাসরিফ জমিয়ে কিছুটা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে , "কিরে হাসছিস কেনো ?"


- "হাসছি নিজের অবস্থার উপরে । কেমন ছিলাম , আর কেমন হয়ে গেলাম !" 


- "বাদ দে সব পুরোনো কথা । যার জন্য তোর কাছে আসা , লেখাগুলোর সন্ধিহান করতে পারলি ?"


- "হ্যাঁ , পারছি । তবে ভাবিনি কখনো , আমার সাথে এমনটা হবার ছিলো ।"


- "ভাবিস নি , তো এখন ভেবে নে !"


- "মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে । একটা চিরচেনা মানুষের এমন হঠাৎ পরিবর্তন কিভাবে মেনে নেই , বল ?"


- "যাকে তুই চিরচেনা বলছিস , তার কাছে তুই অপরিচিত ।"


- "কি জানি ।"


- "বুঝতে পারছিস , এটাই অনেক । সাবধানে থাকিস , এটুকুই বলবো । এখন বল , অনন্যা কে ?"


- "রাফি বলেনি কিছু ?"


- "আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি !"


- "আমার ক্লাসমেট ছিলো । ভার্সিটি লাইফ একসাথেই কেটেছে আমাদের । খুব ভালো একটা মেয়ে । মনটা অনেক পরিস্কার । বাকি সবার মতো মনে অতশত প্যাচ গোঁজ নাই । জানিস , একটা অপরিচিত মানুষ যাকে ও আগে কোনদিন দেখেনি পর্যন্ত , কিন্তু সে বিপদে পড়লে হাত বাড়িয়ে দেয়া মানুষ গুলোর মাঝে অনন্যা একজন । আমদের ক্যান্টিনে যে ছেলেটা আছে , ওর পড়াশোনার সকল খরচ অনন্যা'ই বহন করে !"


- "এতদিন তো মনে হয় , দেশের বাহিরে ছিলো ?"


- "হুম , গতকাল রাতেই এলো । বললো তখন , শুনলি না ?"


- "তো হঠাৎ দেশের বাহিরে কেনো গেছিলো , জানিস ?"


- "হয়তো পড়াশোনার জন্য , তাছাড়া আর কি হবে ? দেশের বাহিরে তো ওর কোনো আত্নীয়স্বজনও নেই ।"


- "বাবা-মা ?"


- "অনন্যা এতিম । মামা-মামি ও'কে বেশ যত্নে লালন-পালন করেছেন । আমার ভাষ্যমতে , আমি কোনদিন দেখেনি অনন্যাকে তারা নিজের মেয়ে ছাড়া অন্যকিছু ভেবেছেন ।"


- "তো তুই অনন্যার মামা-মামির থেকে জানতে পারতি না , অনন্যা কেনো দেশের বাহিরে গেলো সবাইকে ছেড়ে !"


- "আমি গিয়েছিলাম তাঁদের বাসায় , তবে তারা সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন । অনন্যার নাম্বারও বন্ধ দেখাচ্ছিলো । মামা-মামিরও কোনো খোঁজ পাইনি , তাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম । কিন্তু তুই হঠাৎ ওসব পুরোনো কথা ঘাটছিস কেনো ?"


- "ঘাটছি কারন , অনন্যা কি সত্যি পড়াশোনার জন্য দেশের বাহিরে গেছিলো ? নাকি এখানে অন্য কোনো গল্প আছে ?"


- "ভাই আমারে মাফ কর , প্লিজ । এমনিতেই একটা ধাঁধা সলভ করতে গিয়ে নাকানিচুাবানী খেয়ে বেসামাল অবস্থায় আছি । তার উপরে আবার অন্য কোনো ধাঁধা দিসনা !"


সিফাত ক্ষানিক হেসে আসাদের কাঁধে একটা হাত রেখে বলে , "এটা তোর জীবনের ধাঁধা । যেটার সমাধান তুই ছাড়া অন্য কারো কাছে নেই । দুর্বল আসাদ থেকে এই আসাদ হয়ে ওঠার গল্পটা নিশ্চয়ই সহজ ছিলো না । পিছনের সেই গল্পটা নিয়ে একটু ভাব , তুই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবি । আর এবারের ফলাফলটা তোর জীবন বদলে দেবে , মিলিয়ে নিস !"


আসাদ হাবার মতো তাকিয়ে আছে সিফাতের মুখের দিকে । সিফাত রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো কিন্তু তবুও আসাদের কোনো হেলদোল নেই । মাঝে মাঝে সিফাতের চরিত্রটা বুঝতে ভীষণ কষ্ট হয় আসাদের । হাবাগোবা ছেলেটার কয়েকটা জটিল কথা আসাদকে নিজের অবস্থানে স্থির করে দেবার জন্য যথেষ্ট । সিফাত ছেলেটার মাঝে কিছু একটা আছে , এটা আসাদের ভাবনা । ভাবনাটা কি সত্যি , নাকি ভাবনার অন্তরালে অন্য কোনো কাহিনী রচিত আছে ।


-------------------------------------------------------------------------------------


অনন্যার মন আনচান করছে আসাদের সাথে কথা বলার জন্য , কিন্তু ভাবছে কল দেবে কি দেবে না । নাম্বারটা বারবার ওপেন করে আবার কেটে দিচ্ছে । কথা বলতেও ইচ্ছে করছে আবার কল দিতেও কেমন কেমন লাগছে । ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে আসাদের নাম্বারে কল দিলে , কিছুক্ষণ পরে আসাদ কল রিসিভ করে বলে , "হুম , বলো !"


- "কি করো ?"


- "এইতো ফেবুতে নিউজফিড ঘাটাঘাটি করছিলাম , তুমি ?"


- "ভাবছিলাম ।"


- "কি ?"


- "কোনো একজনের কথা !"


- "কার কথা ?"


- "পরে বলবো !"


- "আচ্ছা !"


- "এখন রাখি পরে কথা হবে ।"


আসাদের উত্তর না শুনেই অনন্যা ফোন রেখে দেয় । লজ্জায় লাল হয়ে গেছে অনন্যার মুখ । 


-------------------------------------------------------------------------------------


দিনটা ভালোই কাটলো আসাদের । সারদিনের মাঝে প্রাপ্তির কথা একটি বারের জন্যও মাথায় আসেনি । হয়তো আসতে দেয়নি । হয়তো , খেলার মোড় ঘুরাতে চাচ্ছে আসাদ । 


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৮

 #রাজনীতি

#পর্ব_৮

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


প্রাপ্তি কোনো উত্তর দিলো না । আসাদ প্রাপ্তির পাশ থেকে উঠে ক্যানটিনের দিকে যায় । কিছুটা সামনে এগোলে , কারো ডাক পেয়ে আসাদ থমকে দাঁড়ায় । গলার স্বরটা বেশ পরিচিত । তবে খেয়াল করতে পারছে না কোথায় শুনেছে । মাথায় জোর না দিয়ে পিছনে তাকালে দেখে , অনন্যা ওর দিকে এগিয়ে আসছে । মুখে বিরল হাসি । ভার্সিটি জীবন একসাথেই কেটেছে ওদের । তবে , দুর্বল আসাদ থেকে সবল হয়ে ওঠার রাস্তাটা ভীষণ কঠিন ছিলো । আর সেই রাস্তায় আসাদের সঙ্গীদের মাঝে অনন্যাও একজন । মজার বিষয় হলো , অনন্যা আসাদকে সব ভাবে সাহায্য করলেও আসাদের এটা অজানা । কিন্তু রাফি জানে , অনন্যা আসাদের জন্য ঠিক কতটা করেছে । 


আসাদের সামনে এসে মুখে হাসি রেখে অনন্যা বলে , "কি গো রাজনীতিবিদ , আমাকে তো ভুলেই গেলেন ! না কোনো কল , না ম্যাসেজ । পর হয়ে গেছি বুঝি ?"


আসাদ মাথা চুলকে বলে , "আরে তেমন কিছু না । আসলে তোমার নতুন নাম্বার আমার কাছে নেই , পুরাতন নাম্বারে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু সংযোগ হয়ে ওঠেনি ।"


- "রাফির কাছে তো আমার নাম্বার ছিলো , ও'কে বলতে পারতা !"


- "কই রাফি তো আমাকে কিছু বলেনি । আমি ওর কাছে তোমার নম্বার অনেকবার চেয়েছি । বাট ও বলেছে , ওর কাছে নেই ।"


- "আচ্ছা , বাদ দাও । চলো এক কাপ কফি খেয়ে আসি । ক্যান্টিনের সেই কফি , আর জমজমাট আড্ডা । উফ , অনেক মিস করি ।"


- "হুম , চলো । কফি পাগলি !"


- "বলছে তোমাকে ।"


- "বলছেই তো । কফি ছাড়া তো আর কিছু মাথায় আসে না তোমার !"


অনন্যা মুখ ভেংচি কেটে বলে , "তোমার মাথা !"


খুনসুটি করতে করতে ক্যান্টিনের সামনে চলে এসেছে । ভিতরে রাফি , সিফাত এবং বাকিরা সিঙ্গারার আড্ডায় মেতে উঠেছে । রাফির কাছে গিয়ে রাফির পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে অনন্যা বলে , "কিরে হারামি , তোর কাছে আমার নাম্বার নেই ?"


রাফি অনন্যাকে দেখতে পেয়ে বসা থেকে উঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে । অনন্যা মজা করে বলে , "হয়েছে ভাই , ছাড় এবার । নাহলে আমার হাড্ডি-গুড্ডি এখন ভাঙবে । যেভাবে ধরেছিস !"


অনন্যাকে ছেড়ে দিয়ে বলে , "এবার বল , হঠাৎ কি মনে করে ? আমাকে তো একটাবার জানানোর প্রয়োজনবোধ করলি না যে , তুই আজকে ক্যাম্পাসে আসবি ।"


- "একটা থাপ্পড় মারবো । তুই আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে । আমার নাম্বার নেই তোর কাছে ?"


- "হুম , আছে ।"


- "আসাদ চয়েছিলো , তো দিলি না কেনো ?"


- "তুই তো জানিস কেনো দেইনি । তাও এই প্রশ্নটা কেনো করছিস ?"


- "দিতে পারতি , আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি । আমার সমস্যা হতো না । আমার জিনিসটা নাহয় একান্তই আমার থাক ।"


- "যাকগে , বদ দে ঐসব পুরোনো কথা । এখন বল , তুই দেশে আসলি কবে ?"


- "এইতো গতকাল রাতে এসেছি । নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না ক্যাম্পাসে আসা থেকে , তাই চলে এলাম টহল দিতে ।"


- "ভালো করেছিস , জানি তো কফির লোভে এসেছিস এখানে । আমাদের সাথে দেখা করতে এলে তো জানাতি ।"


- "আসাদের সাথে থেকে থেকে তুইও এখন আসাদের মতো কথা বলছিস !"


রাফি ক্ষানিক হেসে নিয়ে বলে , "আচ্ছা , তোরা ঐদিক টায় গিয়ে বস যা ! আমি একটু পরে আসছি ।"


- "ঠিক আছে ।"


আসাদ এবং অনন্যা গিয়ে কর্নারের একটা টেবিলে বসলো । আসাদ কফির অর্ডার দিয়ে অনন্যার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।


- "এতদিন কোথায় ছিলে ? ভার্সিটি লাইফ শেষ হবার পড়ে না কোনো খোঁজ , না কোনো খবর !"


একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে , "ছিলাম কারো স্মৃতিচারণে ।"


- "মানে ?"


- "বাদ দাও আমার কথা । তুমি বলো , এতো অল্প সময়ে এতো নাম ডাক কিভাবে ? দুই বছর আগের আসাদ আর এখনকার আসাদের মধ্যে পার্থক্য আকাশ পাতাল । এতটা পরিবর্তন কিভাবে ?"


- "আমি সেই আগের আসাদ'ই রয়ে গেছি । শুধু তোমাদের দেখার নজরিয়াটা বদলে গেছে ।"


- "হয়তো ! তারপর , প্রাপ্তির কি খবর ?"


- "আছে ভালোই ।"


- "আগের মত'ই রয়ে গেছে নাকি পরিবর্তন এসেছে ?"


- "যেদিন থেকে আমি পরিবর্তন হয়েছি , সেদিন থেকে ওর মাঝেও পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি । এখন জানিনা , সেই পরিবর্তনটা কার জন্য এসেছে ।"


- "আলবাদ , তোমার জন্য । যেহেতু ও তোমাকে ভালোবাসে ।"


- "হয়তো , আবার হয়তো না !"


- "হয়তো কেনো বলছো , যাকে ভালোবাসো তাকে বোঝো না তুমি ?"


আসাদ কিছু বলার আগেই পিচ্চি কফি নিয়ে হাজির । অনন্যাকে দেখে ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বলে , "আপু তুমি কেমন আছো ? কতদিন পর তোমাকে দেখলাম ।"


মন খারাপ বলে বলে , "এখন তো আর আগের মতো আসো'ই না ।"


অনন্যা পিচ্চির গালে হাত বুলিয়ে বলে , "কিভাবে আসবো রে সোনা , আমি তো দেশে ছিলাম না । তুই কি পড়াশোনা করিস এখন ? নাকি আমার যাবার পড়ে সব বাদ , কোনটা ?"


- "তুমি'ই তো প্রতি মাসে রফিক চাচার কাছে আমার জন্য টাকা পাঠাতে , তাহলে কিভাবে বাদ দিবো বলো ? আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা ?"


কপালে চুমু একে দিয়ে বলে , "গুড বয় । আচ্ছা , এখন যা ।"


- "আচ্ছা !"


আসাদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে অনন্যাকে দেখছে । আসলেই মেয়েটা অদ্ভুত প্রকৃতির । যাকে চেনেনা , যার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই । তার দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় । সবাই যদি এমন হতো , তাহলে হয়তো সমাজে কারো সাথে কোনো বৈষম্য থাকতো না ।


-------------------------------------------------------------------------------------


রুমের সবকিছু ভেঙে চুরমার । তবুও রাগ কমছে না । নিজেকে সামলাতে পারছে না কিছুতেই । টেবিলের উপরে এক হাত রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে মেয়েটি । ভয়ে ভয়ে একটা ছেলে সামনে এগিয়ে এসে বলে , "আপু , শান্ত হও প্লিজ !"


রাগে চোখ রক্তবর্ণ ধারন করেছে । রক্তবর্ণ চোখে ছেলেটার দিকে তাকালে , চোখের ঝাঁজ সহ্য করতে না পরে মাথা নিচু করে ফেলে ছেলেটা । মুচকি হেসে বলে , "শান্ত হবো ? হ্যাঁ আমি শান্ত হবো । তবে সেদিন , যেদিন আমার দেয়া কাজটা তোরা সম্পন্ন করতে পারবি । দুই দিন সুযোগ করে দিলাম , কিন্তু লাভ কি হলো ? ব্যর্থ । তোরা তো জানিস , ব্যর্থতা জিনিসটা আমার সহ্য হয়না । শেষ আরেকটা সুযো দিলাম । হয় আসাদকে মেরে ফেল , নাহয় তোদের মৃত্যু কেউ আটকাতে পারবে না । কথাটা যেন মাথায় থাকে । আমি বারবার বলবো না !"


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৭

 #রাজনীতি

#পর্ব_৭

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


রাত প্রায় দু'টো । আসাদ এবং রাফি নিজের কাজে বেড়িয়ে পড়েছে । শরীরে ভদ্রলোকের ট্যাগ লাগনো কারো হয়তো জীবনযাত্রার সমাপ্তি ঘটবে আজ । নাকি সব ভাবনাচিন্তা গুলো রং বদলাবে , আসাদের অজান্তেই ! 


শিক্ষক , নামটা শুনলেই একটা স্বস্তি পাওয়া যায় , তাই না ? যে ছাত্রদের নিজের হাতে গড়ে তোলে । স্নেহ , ভালোবাসা দিয়ে । আচ্ছা একজন রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে ওঠে , তখন তার কি শাস্তি হওয়া উচিত ? আসাদের মতে , মৃত্যুর চেয়ে বড় শাস্তি কাউকে দেয়া যায়না । তেমনি এক শিক্ষকের গল্পের সমাপ্তি ঘটাবে আসাদ । যে শিক্ষক পড়ানোর নামে ছোট ছোট মেয়েদের যৌন হয়রানির শিকার করে । 


বর্তমান সমাজের পরিস্থিতি হলো এমন , বাবা-মা দু'জন'ই কাজের সূত্রে দিনের বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকেন । হয়তো কেউ বাসায় আয়া রেখে দেন ছেলে-মেয়েদের একাকিত্ব দূর করার জন্য । আর কেউ কেউ রাখেন না এই ভেবে , ছেলে-মেয়ে তো দিনের তিন চতুর্থাংশ সময়'ই প্রাইভেট আর পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে । বন্ধুবান্ধবের সাথে থাকবে , কথা বলবে । একাকিত্ব কি সেটা বোঝার সুযোগ হয়ে উঠবে না । বাবা-মা টাকা কামাতে এতটাই ব্যস্ত যে , তার মেয়ে কোন পরিস্থিতিতে আছে সেটা খোঁজ রাখার সময়টুকুও হয়ে ওঠেনা তাদের কাছে । এমনও মেয়ে আছে যারা পুরো ব্যাপারটা বুঝতে বুঝতেই অনেকটা সময় পার হয়ে যায় । আর যখন বুঝতে পারে , তখন হয়তো কিছুই করার থাকেনা । লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে বলতেও পারেনা । এই সময়টা যে কতটা কষ্টের , সেটা হয়তো সে'ই বুঝতে পারবে যে বা যারা এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে । 


এই ধরনের বিষয়গুলো যে শুধু শিক্ষকরা'ই করে এমনটা কিন্তু না । পরিবার-পরিজন , আত্মীয়স্বজনদের মাঝেও এমন কিছু নরপিশাচ থাকে , যারা ভালো মানুষির আড়ালে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ব্যস্ত । এমন মানুষগুলো খুব'ই ভয়ঙ্কর প্রকৃতির হয় , বিষাক্ত হয় । যাদেরকে খালি চোখে চেনা যায়না । কিন্তু তাদের বিষক্রিয়া মারাত্মক । 


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদের কাজ শেষ । সকালে খবের কাগজের হেডলাইন হবে , শিক্ষক নামের একজন নরপশু হত্যা । নাহ , একটু ভুল বলে ফেললাম । এই ভদ্রলোকের সামাজে তো সত্যের চেয়ে মিথ্যার দাপট বেশি । তাই, হয়তো এই খবরটাও বাকি খবরের আড়ালে চাপা পড়ে যাবে । 


-------------------------------------------------------------------------------------


অনেকদিন পর আসাদ আজ ক্যাম্পাসে এসেছে । গুলি লাগার পর থেকে আর আসা হয়নি । একটা শাস্তির নিশ্বাস ত্যাগ করে ক্যান্টিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পরিচিত শিমুল গাছটার নিচে তাকালে দেখে , প্রাপ্তি ওর কয়েকজন বন্ধবীর সাথে বসে আছে নির্জীব মনে । 


আসাদকে আসতে দেখে বাকিরা উঠে যায় । প্রাপ্তি তখনও দেখেনি আসাদকে । কাহিনী বুঝতে না পেরে বলে , "কিরে সবাই চলে যাচ্ছিস কেনো ?"


আসাদকে দেখতে পেয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টা প্রাপ্তির বোধগম্য হলো । তাই আর কিছু না বলে পুনরায় নিজের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো । আসাদ প্রাপ্তির পাশে বসে বলে , "মন খারাপ ?"


- "জ্বী , না !"


- "তাহলে , কথা বলার ইচ্ছা নেই ?"


- "না , নেই ।"


- "চলে যাবো তাহলে ?"


- "তোমার ইচ্ছা । ভার্সিটিটা তো আর আমার একার না , যে আমি যা বলবো তাই হবে । এমনিতেই তোমার ভয়ে কোনো ছেলে আমার সাথে কথা বলতে চায়না ।"


- "ছেলেদের সাথে কথা বলতে চাও তুমি ?"


- "শুধু কি ছেলেরা , মেয়েরাও তো কথা বলে না আমার সাথে । কয়েকজন ছাড়া !"


- "আমি কি তাদের বারন করেছি তোমার সাথে কথা বলতে , বা না মিশতে !"


- "হয়তো করেছো । তোমাকে এর আগেও অনেকবার বলেছি , হয় আমাকে বেছে নাও , নতুবা তুমি রাজনীতি নিয়ে থাকো ।"


- "একটা কথা মনে আছে তোমার ?"


- "কি কথা ?"


- "যখন আমি একজন সহজ , সরল সাধারণ ছেলে ছিলাম । যখন আমার নাম , ডাক , পরিচিতি ছিলো না । তখন তুমি ঠিক কি কি করেছিলে ? ছেলেদের সাথে কফি শপে যাওয়া , কথা বলা , তাদের বিভিন্ন গিফট দেয়া । আমার জন্মদিন তুমি ভুলে যেতে , কিন্তু দুইদিন আগে পরিচিত হওয়া একটা ছেলেকে তুমি কফিশপে গিয়ে গিফট দিয়ে আসতে । এবং আমি যখন এগুলো তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম , তখন তোমার কাছে কোনো উত্তর থাকতো না । তুমি কথার ছলে সেগুলো এড়িয়ে যেতে । এবং মজার বিষয় হলো , আমিও তখন তোমার কাছে একটা প্রশ্ন করেছিলাম । আমাকে চাই নাকি তোমার ঐসব বন্ধুদের । তুমি কি বলেছিলে ? তোমার জীবন , তোমার মর্জি মতো চলবে । তাহলে আজ কেনো আমাকে যেকোন একটা বেছে নিতে বলছো ?"


- "আমি কিন্তু এখন কারো সাথেই কথা বলিনা , সেটা তোমার অজানা নয় !"


- "কবে থেকে কথা বলো না ? যেদিন থেকে এই শহরের মানুষ আসাদকে চেনে , সেদিন থেকে । যেদিন থেকে আসাদের নাম , জশ , খ্যাতি হয়েছে , সেদিন থেকে । যেদিন থেকে আসাদ নিজেকে সামলে নিতে শিখেছে সেদিন থেকে । কিন্তু আসাদ যখন অনেক দুর্বল ছিলো , যখন প্রাপ্তিকে ছাড়া আসাদ কিছু বুঝতো না , তখন কিন্তু তুমি আমার মনোবল না হয়ে আমাকে আরো ভেঙে দিয়েছো । এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে সেই দিনগুলো ? তোমার কি ভাবনা , আসাদ হাসিখুশি আছে , তার মানে সে অনেক ভালো আছে ? তাহলে বলবো তুমি আমার প্রেমিকা হতে পারোনি ।"


- "আমাকে নিয়ে এতকিছু ভাবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।"


আসাদ ক্ষানিকটা হেসে নিয়ে বলে , "যখন'ই আমার প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর তোমার কাছে থাকে না , তখন'ই এই একটা কথা বলে এড়িয়ে যাও সবকিছু ।"


- "হ্যাঁ , হ্যাঁ আমি খারাপ । আর কিছু বলতে চাও !"


- "বাদ দাও ঐসব কথা । ভার্সিটিতে আসলে বাট কল দিলে না ? দেখা করার কথা ছিলো আমাদের , তাই না ?"


- "মনে ছিলো না ।"


- "আচ্ছা , ঠিক আছে । তোমার তো মনে হয় একটু পরে ক্লাস শুরু হবে । থাকো তাহলে , আমি আসি ।"


প্রাপ্তি কোনো উত্তর দিলো না । আসাদ প্রাপ্তির পাশ থেকে উঠে ক্যানটিনের দিকে যায় । কিছুটা সামনে এগোলে...!!


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৬

 #রাজনীতি

#পর্ব_৬

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ সবটা খুলে বললে , সিফাত হাতে তালি দিয়ে বলে , "বাহ , ভালো তো । সবসময় শুধু রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকিস । বাহ্যিক কোনো জ্ঞান তো মাথায় নেই । স্প্রুফিং বুঝিস ?"


- "স্প্রুফিং ?"


- "হ্যাঁ , স্প্রুফিং !"


- "সেটা কি ?"


- "স্প্রুফি হলো এমন এক ধরনের পদ্ধতি যার মাধ্যমে তোর নাম্বার আমার কাছে নেই কিন্তু তোর নাম্বার দিয়ে আমি যাবতীয় সব কাজ করতে পারবো । যেমন , কাউকে ম্যাসেজ পাঠানো বা কল দেয়া । একই কাজ ইমেইল দিয়েও করা যায় ।"


- "কিন্তু কেউ আমার সাথে এমনটা কেনো করবে ? কি স্বার্থ থাকতে পারে তার ?"


- "স্বার্থ তো একটাই !"


- "কি ?"


- "তোর জীবন নেয়া !"


- "তুইও এই কথা বলছিস ? সকালে আসলো পার্সেল আর এখন তুই !"


- "যেটা দেখেছি , যেটা বুঝেছি , সেটাই বলেছি । স্প্রুফিং করে তোকে পুরোনো গোডাউনে ডাকা , তোর উপরে হামলা হওয়া । সবকিছু তো আর কাকতালীয় হতে পারে না , তাই নয় কি ?"


- "তোর কথায় যুক্তি আছে , কিন্তু এই কাজগুলো কে বা কারা করছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না ।"


- "কারা না , বল কে !"


- "তুই এতটা নিশ্চিত হয়ে কিভাবে বলছিস ?"


- "সকালের লেখাগুলো নিয়ে একটু খেলা করা শেখ , বুঝতে পারবি । যাই হোক , তোরা বিশ্রাম নে । আমি বাহির থেকে একটু হেঁটে আসি । ভালো লাগছে না বসে থাকতে ।"


- "আচ্ছা যা !"


সিফাত বাসা থেকে বের হয়ে শান্ত মনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে । হঠাৎ একটা কালো জিপ গাড়ি এসে থামে ওর সামনে । 


-------------------------------------------------------------------------------------


- "শোন , আসাদের দিকে সবসময় নজর রাখবি । কারন আসাদের জীবনের ঝুঁকি এখন অত্যাধিক মাত্রায় বেড়ে গেছে । সে আসাদকে প্রাণে না মারা অব্দি শান্তি পাবে না !"


- "ভাই , আমরা তো জানি কাজটা কে করছে । তাকে রাস্তা থেকে সড়িয়ে দিলেই তো হয় !"


- "নাহ ! আমি চাই , আসাদ এই রহস্যের শিখরে পৌঁছাক !"


- "পারবে কি ?"


- "জানা নেই আমার । আসাদ নিজেকে রাজনীতিবিদ বলে দাবি করে , কিন্তু ও এখনো রাজনীতে ভীষণ রকমের কাঁচা একজন খেলোয়াড় । রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝে উঠতে উঠতে ওর অনেকটা সময় পার হয়ে যাবে ।"


- "তুমি যেটা ভালো বোঝো । আমরা আসাদের ছায়া হয়ে থাকবো , তুমি সে বিষয়ে চিন্তা করো না !"


- "নিরাশ যেন হতে না হয় । সেদিকে খেয়াল রাখিস ।"


- "আচ্ছা ভাই !"


- "আমাকে নামিয়ে দিয়ে আয় , অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে ।"


- "জ্বী !"


-------------------------------------------------------------------------------------


ফোনের স্ক্রিনে প্রাপ্তির ছবি ভাসছে । আসাদ একমনে তাকিয়ে আছে সেদিকে । কেউ যে ওর জানের ভুখা হয়ে উঠেছে , সেই চিন্তা এখন ওর মাথায় নেই । প্রাপ্তির সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্ত গুলোই জড়োসড়ো হয়ে আছে ওর ভাবনা জুড়ে । শেষ বিকেলে নদীর পাড়ে হাত ধরে হাঁটা , প্রাপ্তির দুষ্টুমি ভরা কথা । আসাদ নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে প্রাপ্তিকে নিজের জীবনের অংশ করতে পেরে । তবে , সময়ের সাথে সাথে সেই ভাগ্যটা যেন র্দুভাগ্যে পরিনত না হয় , সেটাই দেখার বিষয় ।


রাত অনেক হয়েছে । কিন্তু কারো পেটে'ই খাবার পড়েনি । রাফি এসে একবার আসাদকে ডেকে গেছে , কিন্তু আসাদ নাকচ করে দেয় খাবেনা বলে । তাই রাফিও আর জোর করেনি । 


-------------------------------------------------------------------------------------


রাত প্রায় দু'টো । আসাদ এবং রাফি নিজের কাজে বেড়িয়ে পড়েছে । শরীরে ভদ্রলোকের ট্যাগ লাগনো কারো হয়তো জীবনযাত্রার সমাপ্তি ঘটবে আজ । নাকি সব ভাবনাচিন্তা গুলো রং বদলাবে , আসাদের অজান্তেই ! 


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৫

 #রাজনীতি

#পর্ব_৫

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ এবং রাফি বাসা থেকে বের হলে , সিফাত নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কল করে একটা পরিচিত নাম্বারে । কলটা রিসিভ হলে বলে , "আসাদ বেড়িয়ে পড়েছে । আশা করি , তোর কাজটা তুই ঠিকমতো করবি !"


- "জ্বী , ভাই !"


কল কেটে একটা রহস্যময় হাসি হাসে সিফাত । যে হাসির গভীরতা হয়তো অনেকটা বেশি । 


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদের বাইক এসে থামে গাজীপুর সালনার একটা পুরাতন ফ্যাক্টরির সামনে । সিফাত বারবার বলে দিলেও আসাদ রাফি ছাড়া অন্য কাউকে সাথে আনেনি । বাইক থেকে নেমে ভিতরে চলে যায় । কিন্তু রেদোয়ানকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না । উপায়ন্তর ফোন করে রেদোয়ানের নাম্বারে ।


-------------------------------------------------------------------------------------


সিলেটের একটা টং দোকানে বসে চা খাচ্ছে রেদোয়ান এবং ওর কয়েকজন বন্ধু । হঠাৎ ফোনের রিংটোন বাজলে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে আসাদের নাম্বার থেকে কল এসেছে । সাতপাঁচ না ভেবে কল রিসিভ করে বলে , "আসসালামু আলাইকুম , ভাই !"


- "ওয়ালাইকুমুস সালাম ! কোথায় তুই , এখনো আসছিস না যে ? আমি অপেক্ষা করছি ।"


- "আমি তো সিলেট আছি । আর কোথায় আসার কথা বলছো ?"


- "তুই না আমাকে ম্যাসেজে বললি পুরাতন গোডাউনে আসতে ।"


- "না ভাই , আমি তো ঢাকার বাহিরে আছি । তাহলে কেনো তোমাকে সেখানে আসতে বলবো , বলো ?"


- "তোর নাম্বার থেকে যে ম্যাসেজ আসলো , সেটা ?"


- "সত্যি , আমি কোনো ম্যাসেজ পাঠাই নি ।"


রেদোয়ানের কানে গুলির আওয়াজ ভেসে আসলে , তার কিছুক্ষণ পরেই কলটা কেটে যায় । 


-------------------------------------------------------------------------------------


উত্তরে আসাদ কিছু বলতে যাবে , ইতিমধ্যেই সেখানে গুলির বর্ষন শুরু হলো । রাফি তৎক্ষনাৎ কোমর থেকে নিজের গান বের করে কভার ফায়ার দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । আসাদকে নিয়ে রাফি একটা কন্টেইনারের পিছনে আশ্রয় নিলো । নিজেদের সুরক্ষার দিকটা নিশ্চিত করতে করতে গুলির আওয়াজ আর শুনতে পাচ্ছে না ওরা । আসাদ উঁকি দিয়ে চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে কিন্তু লাশ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না । 


হঠাৎ কয়েকজন মধ্যবয়স্ক ছেলে এসে আসাদ এবং রাফির সামনে দাঁড়ালো । আসাদ কিছু বলতে যাবে , "চলুন , আপনাদের বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি ।"


ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো । উত্তরে আসাদ বললো , "তোমাদের তো ঠিক চিনলাম না ।"


- "আমাদের না চিনলেও চলবে । তবে এতটুকু মাথায় রাখুন , আপনার কাছের মানুষগুলোই এখন আপনার জানের দুশমন হয়ে উঠেছে । তাই সেই সকল মানুষদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন ।"


- "বুঝলাম না তোমার কথা ।"


- "বুঝবেন আস্তে আস্তে । তবে দেরি করে যেন না বোঝেন , সেই দোয়া'ই রইলো । এখন চলুন , আপনাদের পৌঁছে দেই । আমাদের আরো কাজ আছে ।"


আসাদও আর কথা না বাড়িয়ে ওদের পিছন পিছন বাহিরে চলে গেলো । বাইকে উঠতে গেলে অন্য একজন ছেলে আসাদের হাত থেকে বাইকের চাবিটা নিয়ে বলে , "গাড়িতে উঠুন আমাদের সাথে । বাইক আপনার বাসায় পৌঁছে যাবে ।"


-------------------------------------------------------------------------------------


গাড়ি এসে বাসার সামনে থামলে , আসাদ এবং রাফি ওদের ধন্যবাদ জানিয়ে ভিতরে চলে যায় । ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছে সিফাত । দরজা খোলা থাকায় আসাদ এসে ড্রয়িং রুমের সোফায় নিজের তাসরিফ জমিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো । সিফাত দেখতে পেয়ে প্রশ্ন করে , "একা গিয়েছিলি ?"


আসাদের তরফ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সিফাত আবারও বলে , "কি হলো , কিছু জিজ্ঞেস করেছি তো নাকি ?"


- "হুম !"


- "একা কেনো গিয়েছিলি ? সবাইকে সাথে নিয়ে যেতে বলেছিলাম না ?"


- "ভাবিনি এমন কিছু হবে ।"


- "কি হয়েছে ?"


আসাদ সবটা খুলে বললে , সিফাত হাতে তালি দিয়ে বলে , "বাহ , ভালো তো । সবসময় শুধু রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকিস । বাহ্যিক কোনো জ্ঞান তো মাথায় নেই । স্প্রুফিং বুঝিস ?"


- "স্প্রুফিং ?"

 


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৪

 #রাজনীতি

#পর্ব_৪

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


সিফাত কিছু বলতে যাবে , তখন'ই বাসার কলিংবেলটা বেজে উঠলো । রাফি উঠতে গেলে , আসাদ বলে , "তোরা থাক , আমি দেখছি !"


বসা থেকে উঠে , গিয়ে দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই । তবে নিচে একটা পর্সেল পড়ে আছে । চারদিকে পুনরায় একবার চোখ বুলিয়ে পর্সেলটা নিজের হাতে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো । পার্সেলের উপরে আসাদের নাম লেখা রয়েছে । তবে , কোথা থেকে এসেছে সে ব্যাপারে কিছু লেখা নেই । বেনামি পার্সেল । হাতে থাকা পার্সেলটা আসাদ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখছে , কিন্তু বুঝতে পারছে না এটার ভিতরে ঠিক কি আছে বা থাকতে পারে । 


ড্রয়িং রুমের সোফায় এসে বসে পার্সেলটা টি টেবিলে রেখে , নিজের দুই হাটুর উপরে দুই হাত দিয়ে ভর রেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে । এতক্ষণে সেখানে আগমন ঘটে সিফাত এবং রাফির । পার্সেলের দিকে নজর পড়তেই রাফি বলে , "পর্সেল কে পাঠিয়েছে , আসাদ ?"


- "জানি না , নাম লেখা নেই কারো ।"


- "খুলে দেখ কি আছে ভিতরে ।"


- "হুম ।"


আসাদ ব্যস্ত হয়ে পড়ে পার্সেলটা খুলতে । র‍্যাপিং পেপার ছিড়ে বাক্সটা খুলে দেখে , ভিতরে প্রাপ্তির একটা ছবি রাখা আছে । এবং ছবির পিছনে কালো মার্কার দিয়ে লেখা , "তুমি বিশ্বাস করো , সে ভালোবাসে । তবে কাকে ভালোবাসে , তোমাকে নাকি তোমার প্রাণ ভোমরা'কে ?"


ছবিটা দেখে আসাদ যতোটা না অবাক হয়েছে , তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে ছবির পিছনের লেখাটা দেখে । আসাদের অবাক চাহনি দেখে সিফাত বলে , "কি হলো , এভাবে কি দেখছিস ?"


রাফি কিছু জিজ্ঞেস না করে ছাবিটা আসাদের হাত থেকে নিয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টা নিজের আয়ত্তে নিলো । আসাদের মুখ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সিফাতও রাফির ন্যায় একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটায় । 


আসাদ এবং রাফি দু'জন'ই অবাকের শীর্ষে অবস্থান করলেও , সিফাত স্বাভাবিক'ই রয়েছে । রাফি আসাদকে উদ্দেশ্য করে বলে , "এসবের মানে কি ? কেউ কি ফাইজলামি করে এগুলো করছে নাকি ?"


আসাদ আত্নবিশ্বাসী দৃষ্টিতে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে , "নাহ , এমন কাজ কেউ ফাইযলামি করে করবে বলে আমার মনে হয়না । নিশ্চয়ই এর মাঝে কোনো রহস্য আছে । আমি সেটা নিয়ে ভাবছি না । আমার চিন্তা হলো , লেখাটা নিয়ে । যে'ই এই পার্সেলটা পাঠাক না কেনো , সে আমার হয় ভালো চায় নতুবা খারাপ চায় । কিন্তু মানুষটা কে হতে পারে ?"


আসাদের কথা শেষ হলে সিফাত মুখে হাসি নিয়ে বলে , "তুই না রাজনীতিবিদ ?"


সিফাতের কথার আগাগোড়া বুঝতে না পেরে আসাদ প্রশ্ন করে , "এর সাথে রাজনীতির কি সম্পর্ক থাকতে পারে ?"


- "বাহিরের সকল চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে , একজন রাজনীতিবিদের মতো ভাব । আশা করি , তোর উত্তর তুই পেয়ে যাবি !"


সিফাত আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় । সিফাত চলে গেলে আসাদ রাফির দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে বলে , "সিফাত কি বলে গেলো এগুলো ? বুঝচ্ছিস কিছু ?"


- "আমার ছোট মাথায় এগুলো খেলে না রে ! তুই বরং ভাব , আমি রুমে গেলাম ।"


রাফিও চলে যায় নিজের রুমে । আসাদ একা বসে আছে । মাথায় জড়ো হয়েছে নানানরকমের প্রশ্ন , কিন্তু উত্তর কে দেবে ?"


ছবিটা নিজের হাতে নিয়ে আসাদ আবার সেই লেখাগুলোতে চোখ বুলায় । লেখাগুলোর কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছে না ও । আসাদের ভাবনা কিছুটা এই রকম , "আমি বিশ্বাস করি সে আমাকে ভালোবাসে ! কিন্তু কার কথা বুঝানো হয়েছে এখানে ? প্রাপ্তি ? ওর ছবির পিছনেই তো লেখাগুলো রয়েছে । আর প্রাপ্তিও তো আমাকে ভালো'ই বাসে । তবে , শেষের লাইনের মানে কি ? প্রাণ ভোমরা বলতে কি বুঝাতে চেয়েছে ?"


ছবিটা টেবিলের উপরে ছুড়ে ফেলে হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো টানতে টানতে আসাদ বলে , "উফ , কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি । মানে কি এইসবের ? মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সবকিছু । পল্লব ভাই একটা কথা বলেছিলো যখন আমি রাজনীতিতে নতুন নতুন পা রেখেছি তখন , 'রাজনীতিতে নিজের ছায়াকেও বিশ্বাস করতে নেই !' আচ্ছা , তার কথার সাথে কি এই লেখাগুলোর কোনো মিল আছে , বা থাকতে পারে ?"


আসাদ নিজের ভাবনা গুলো সম্প্রসারিত করার আগেই ওর ফোনের ম্যাসেজ টোনটা বেজে ওঠে । রেদোয়ানের নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে । লেখা ছিলো , "বিকেল পাঁচ টায় আমাদের সেই চিরচেনা জায়গায় আইসেন ভাই । জরুরি কথা আছে আপনার সাথে , আমি অপেক্ষায় থাকবো ।"


রেদোয়ানের নাম্বারে কল দিতে গিয়েও দিলো না । আসাদ ভাবে , "রেদোয়ানের আবার কি হলো ? হঠাৎ জরুরি তলপ ? বাসায়'ই তো আসতে পাড়তো ।"


-------------------------------------------------------------------------------------


বিকেল পাঁচটা । আসাদ তৈরি হচ্ছে বের হবার জন্য । বাসা থেকে বের হতে নিলে সিফাত জিজ্ঞেস করে , "কোথায় যাচ্ছিস এখন ?"


- "তেমন কিছু না । রেদোয়ান ম্যাসেজ দিয়ে বললো , কি নাকি জরুরি কথা আছে । সেখানেই যচ্ছি ।"


- "একা যাসনে ।"


- "কেনো , একা গেলে কি সমস্যা ?"


- "যেতে বারন করেছি , তাই যাবিনা । এখানে সমস্যা থাকা বা না থাকার কি আছে ?"


- "আজব ! আচ্ছা , নিয়ে যাবো নে একজনকে ।"


- "একজন না । সবাইকে নিয়ে যাবি । এবং সবার সাথে গান রাখতে বলবি মাস্ট বি !"


- "রেদোয়ান আমার গ্যাংয়ের'ই লোক । ওর সাথে দেখা করতে যাবো , এতে গান নেবার কি আছে ?"


- "সব প্রশ্নের উত্তর যদি আমি'ই দেই তাহলে তোর কাজ কি ?"


- "মানে ?"


- "মানে কিছু না ! যেটা বললাম সেটা কর !"


- "আচ্ছা , ঠিক আছে ! তুই যাবি ?"


- "নাহ , আমার একটা কাজ আছে !"


- "তোর আবার কি কাজ এখন ?"


- "পরে বলবো , তুই রাফিকে নিয়ে যা !"


- "ওকে , থাক তাহলে ।"


- "হুম !"


আসাদ এবং রাফি বাসা থেকে বের হলে , সিফাত নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কল করে একটা পরিচিত নাম্বারে । কলটা রিসিভ হলে বলে , "আসাদ বেড়িয়ে পড়েছে । আশা করি , তোর কাজটা তুই ঠিকমতো করবি !"


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৩

 #রাজনীতি

#পর্ব_৩

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


- "অজুহাত দেবার জন্য'ই তো তোদের রেখেছি , তাই না ? ভুলেও আমার চোখের সামনে আসিস না , জান নিয়ে নিবো । মাথায় রাখিস ।"


কল কেটে ফোনটা বিছানায় রাখলো । রাগ সামলাতে না পেরে , নিজের চুল নিজেই টানছে । যেন গোড়া থেকে আলাদা করে ফেলবে । 


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ এখন মোটামুটি সুস্থ । গুলি লাগার পর থেকে এখন পর্যন্ত , গত নয় দিনে প্রাপ্তি আসাদকে একটা কল অব্দি দেয়নি । আসাদও আর বিরক্ত করেনি , ভাবলো হয়তো রেগে আছে । সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে । আসাদের ভাবনা , "যে মেয়েটা একদিন কথা না বলে থাকতে পারতো না , সেই মেয়েটা আজ নয় দিন যাবৎ আমার সাথে কথা বলেনা । অভিমানের পাহাড় জন্মেছে হয়তো ।"


ভাবনার অবসান ঘটিয়ে , নিজের ফোন হাতে নিয়ে ডায়াল করলো প্রাপ্তির নাম্বার । প্রথমবার রিং হলো কিন্তু ফোন ধরার নাম ঘন্ধ নেই । আসাদ ভাবছে , "প্রাপ্তি ফোনটা ধরবে তো ? নাকি রাগের পাহাড় নিয়েই বসে থাকবে । আচ্ছা এতদিনে একটি বারও কি ওর ইচ্ছে হয়নি আমার খোঁজ নেবার ? রাফি তো ও'কে বলেছিলো আমার গুলি লেগেছে । মানলাম বাসায় এসে দেখে যেতে পারবে না , তবে বাহিরে তো দেখা করতেই পারতো ।"


ভাবনার অবসান ঘটে ফোনের রিংটনে । স্ক্রিনে প্রাপ্তির নাম্বার ভাসছে । কল রিসিভ করলে , অপরপ্রান্ত থেকে প্রাপ্তি বলে , 


- "কল করেছিলে ?"


- "হুম !"


- "বলো , কি বলবে ।"


- "ব্যস্ত খুব ?"


- "জ্বী , একটু । কাজ করছিলাম । বাসায় আজ ফুপিমণি আসবেন ।"


- "হঠাৎ ?"


- "আজব , আসতে পারেন না , নাকি ?"


- "সেটা কখন বললাম ? এমনি জানতে চাইলাম ।"


- "ভালো !"


- "তুমি কি আমার উপরে রেগে আছো ?"


- "নাহ ।"


- "এতদিনে একবার খোঁজ নেবারও প্রয়োজন বোধ করনি ?"


- "হয়তো না ।"


- "বিরক্ত হচ্ছো ?"


- "নাহ , বলো শুনছি !"


- "দেখা করতে পারবে আজকে ?"


- "বললাম না , ফুপিমণি আসবেন বাসায় । কাজ আছে অনেক । ঘর গুছাতে হবে , রান্না করতে হবে । আরো অনেক কাজ ।"


- "ওহ , আচ্ছা । সময় পেলে ফোন দিও ।"


- "হুম , টাটা !"


- "বাই !"


কল কেটে ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হেসে নিলো আসাদ । পাগলিটা বড্ড বেশি অভিমান করে ফেলেছে । দেখা করুক একবার , সব অভিমান ভাঙিয়ে দিবো নিমিষেই । 


-------------------------------------------------------------------------------------


সিফাত রান্না করতে ব্যস্ত । বলতে হবে , ছেলেটা ভালোই রান্না করতে পারে । চাচিকে রান্নার কাজে সাহায্য করতে করতে নিজেও রান্নাবান্নার বিষয়গুলো বেশ আয়ত্ত করে নিয়েছে । সিফাত ছেলেটা এতিম । যখন ওর বাবা-মা মারা যায় , তখন ও কিছু বুঝতেই শেখেনি । সবেমাত্র বয়স তিনের দোরগোড়ায় । চাচা চাচি মানুষ করেছে বেশ যত্নে । অভাবের সংসার হলেও সিফাতের পড়ালেখাতে কখনো কোনো প্রভাব পড়তে দেয়নি । বাবা-মা হারা ছেলেটা যে এতটা পথ অতিক্রম করতে পারবে , সেটা হয়তো কেউ ভাবতেও পারেনি । 


আসাদ , রাফি এবং সিফাতের সম্পর্ক এখন তুমি থেকে তুইতে পরিনত হয়েছে । সিফাতও বেশ খুশি , আসাদের সঙ্গী হতে পেরে । এতদিনে ছেলেটার ছোট মাথায় এতটুকু খেলেছে যে , ও যাদের সাথে আছে তারা লোকমুখে প্রচলিত ভদ্র সমাজের মানুষদের মতো স্বার্থপর না । 


-------------------------------------------------------------------------------------


রান্না শেষ হলে সিফাত গিয়ে আসাদ এবং রাফিকে ডেকে আনে । 


খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে আসাদ বলে , "রাফি , আজ রাতে একটা কীটপতঙ্গ সাফ করতে হবে । তৈরি থাকিস !"


আসাদের কথার প্রসঙ্গে সিফাত বলে , "কিসের কীটপতঙ্গ ? বাসায় তো কিছু নেই । দু'দিন আগেই তো সবকিছু এতো সুন্দর করে পরিষ্কার করলাম ।"


সিফাতের কথা শুনে আসাদ এবং রাফি কেউ'ই হাসি আটকে রাখতে পারলো না । ওদের কার্যক্রম দেখে সিফাত আহাম্মকের মতো প্রশ্ন করে , "কি ব্যাপার , তোরা এভাবে হাসছিস কেনো ?"


হাসির পরিমান কিছুটা কমিয়ে দিয়ে আসাদ বললো , "হাসছি তোর কথা শুনে !"


- "কি এমন বললাম যে এভাবে হাসতে হবে ?"


- "আমি সমাজের কীটপতঙ্গের কথা বলেছি , বাসার না ।"


- "সেটা সরাসরি বললেই হতো । এতো প্যাঁচানোর কি আছে ?"


- "বুঝেছি , এখন খা ।"


সিফাত কিছু বলতে যাবে , তখন'ই বাসার কলিংবেলটা বেজে উঠলো । রাফি উঠতে গেলে , আসাদ বলে , "তোরা থাক , আমি দেখছি !"


বসা থেকে উঠে , গিয়ে দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই । তবে নিচে...!! 


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ২

 #রাজনীতি

#পর্ব_২

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


----------------------------------------------------------------------------------------------------


রাস্তার মানুষজন জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । হাসপাতালে নেবার আগ্রহ কারো মাঝে নেই । কারন , মুখটা যে সবার কাছে খুব চেনা । শহরের বাকিদের কাছে সে আসাদ ভাই নামেই পরিচিত । আসাদের সাথে ঝামেলার বিষয়টা সকলের'ই অজ্ঞাত আছে । তাই কেউ সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারছে না আসাদের ধারে কাছে যাবার । 


ভিড় অতিক্রম করে একটা ছেলে সামনে এগিয়ে আসলো । গায়ের রং নিকস কালো । চোখে চশমা , ফরমাল ড্রেসআপ , হাতে একটা কালো ফাইল । দেখতে সাধাসিধে ছেলেটা ব্যস্ত হয়ে পড়ে , আসাদকে হাসপাতালে নেবার জন্য । সবাই কেমন ভয় ভয় চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে । সবার এভাবে তাকিয়ে থাকার কারন খুঁজে পাচ্ছে না ছেলেটি । মনে মনে ভাবলো , "হয়তো আমি কালো , তাই সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে !"


সেদিকে তোয়াক্কা না করে , একটা সিএনজি ডাকে আসাদকে হাসপাতালে নেবার উদ্দেশ্যে । তবে প্রথম দুইজন ড্রাইভার আসাদকে দেখেই নাকোয করে দেয় । তার অল্প কিছুক্ষণ পরে অন্য আরেকজন সিএনজি ড্রাইভার আর ঐ ছেলেটা মিলে আসাদকে হাসপাতালে নিয়ে যায় । 


----------------------------------------------------------------------------------------------------


রাফি এবং বাকি সবাই সবেমাত্র এসে হাসপাতালে পৌঁছালো । রিসিপশনে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে অপারেশন সাকসেসফুলি সম্পন্ন হয়েছে । বেডে দেয়া হয়েছে , পাঁচ তলার পাঁচশ দুই নাম্বার কেবিনে । 


দেরি না করে কেবিনে গিয়ে দেখে , আসাদের জ্ঞান এখনো ফেরেনি । বেশি মানুষ এলাও না থাকায় , রাফি একা ভিতরে ঢোকে এবং বাকিরা বাহিরে দাঁড়ায় । 


ছেলেটা এখনো আসাদের সাথে আছে । বলতে হবে , ছেলেটা আসলেই অনেক দায়িত্ববান । তবে ছেলেটাকে দেখে রাফির মনে প্রশ্ন জন্মায় , "ছেলেটা কে ? নিচ থেকে তো কিছু বললো না ওর ব্যাপারে !" 


ইতস্ততবোধ না করে জিজ্ঞেস করে , "তুমি কে ? আর এখানে কি করছো ?"


ছেলেটা নজর ফিরিয়ে উত্তর দেবার আগেই রুমে একজন ডাক্তারের আগমন ঘটে । রাফির প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন , "উনি ছিলেন বলেই আজ পেশেন্ট বেঁচে আছেন , আর একটু লেট হলে বাঁচানো মুশকিল ছিলো !"


রাফি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মলিন স্বরে বলে , "কি বলে তোমাকে ধন্যবাদ দেবো , সেই ভাষা আমার জানা নেই !"


মুখে হাসি নিয়ে জবাব দিলো , "এখানে ধন্যবাদ দেবার কি আছে ? আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলেও তো এক'ই কাজ করতো ।"


- "নাহ , করতো না । এই শহরে আসাদ এক আতঙ্কের নাম । কেউ জেনে বুঝে নিজের পরিবারকে বিপদের মুখে ফেলতে চাইবে কেনো ? তুমি বোধহয় এই শহরে নতুন , তাই না ?"


- "জ্বী , আমি আজকেই এসেছি এখানে । চাকরির ইন্টারভিউ ছিলো একটা !"


- "চকরি পেলে ?"


- "গরিবের আবার চাকরি । এই দেশে চাকরি পেতে হলে হয় টাকার জোর লাগে , নাহয় মামুর জোর লাগে । আর আমার কোনোটা নেই !" 


- "দাঁড়াও , তোমার সাথে একটু পরে কথা বলছি !"


ছেলেটার সাথে কথা বলায় বিরতি দিয়ে রাফি ডাক্তারের উদ্দেশ্যে বলে , "ডক্টর , আসাদের এখন কি অবস্থা ? কবে নাগাদ সুস্থ হবে বলে ধারনা আপনার ?"


- "সঠিক বলা যাচ্ছে না , কারন গুলিটা ওনার হার্ট স্পর্শ করে বেরিয়ে গেছে । তবে আশা রাখি , সপ্তাহখানেক এর মাঝে সুস্থ হয়ে যাবেন । আচ্ছা আপনারা কথা বলুন , আমাকে রাউন্ডে যেতে হবে ।"


ডাক্তার সাহেব কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলে রাফি ছেলেটাকে নিয়ে পাশের সোফায় গিয়ে বসলো । একটু নড়েচড়ে বসে রাফি বলে , "এবার বলো তোমার নাম কি ?"


- "আমার নাম সিফাত , আপনার ?"


- "আমি রাফি ! আর একটা কথা , আমাকে আপনি করে বলার দরকার নেই । তুমি করে বললেই হবে ।"


- "আচ্ছা , চেষ্টা করবো ।"


- "হুম ! কাজ করবে ?"


সিফাত খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললো , "কি কাজ , কি কাজ ? যেকোনো কাজ করতে আমি রাজি আছি । একটা চাকরির আমার খুব দরকার !"


- "রাজনীতি ! করবে ?"


রাফির মুখে রাজনীতি শব্দটা শুনেই সিফাত চুপসে গিয়ে বলে , "রাজনীতি ? কিন্তু তাতে তো অনেক টাকা লাগে । আর আমার কাছে অতো টাকা নেই ।"


রাফি নিজের হাসি আটকাতে না পেরে বলে , "সবসময় এতো টাকার চিন্তা করো কেনো ? টাকা'ই কি সবকিছু নাকি ?"


- "এই স্বার্থপর দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে যে টাকার খুজ প্রয়োজন , ভাই !"


- "ভুল বললে , সবার কাছে টাকা ম্যাটার করে না । সবাই টাকার ভুখা হয়না ।"


- "হয়তো আপনার কথা ঠিক , আবার হয়তো না ।"


- "এতো হয়তো হয়তো না করে বলো , রাজনীতি করবে ?"


- "কিন্তু আমি তো এখানের কাউকে'ই চিনি না ।"


রাফি মৃদু হেসে উত্তর দিলো , "তুমি আসলেই অনেক সহজসরল ।"


এতক্ষণে আসাদের জ্ঞান ফিরে এসেছে । আসাদের জ্ঞান ফিরতে দেখে রাফি এবং সিফাত বেডের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো । জ্ঞান ফিরে রাফিকে সামনে দেখতে পেয়ে আসাদ নিচু গলায় বললো , "আমি মরিনি ? এখনো বেঁচে আছি ? বলতে হবে , কই মাছের প্রাণ !"


রাফি ক্ষানিক রেগে গিয়ে বলে , "শুরু হয়ে গেছে তোর , তাই না ?"


- "ভুল কি বললাম , ঠিক'ই তো বলেছি ।"


- "হুম , তুই তো ভুল বলতেই পারিস না ।"


- "এইতো বুঝতে পেরেছিস । যাই হোক , এই ছেলেটা কে ? ও'কে তো ঠিক চিনলাম না !"


পাশে দাঁড়ানো সিফাতের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে আসাদ । আসাদের প্রশ্নের জবাবে রাফি উত্তর দেয় , "ওর নাম সিফাত ! সিফাত'ই তোকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে ।"


- "শহরে নতুন এসেছে , তাই না ?"


- "হুম !"


আসাদের মুখের হাসি দেখে সিফাত কিছুটা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে , "আপনারা দুই জন'ই একই প্রশ্ন কেনো করলেন ? নতুন হই বা পুরাতন , দূর্ঘটনার স্বীকার হওয়া একজন মানুষকে হাসপাতলে নিয়ে আসা আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে ।"


- "কর্তব্যের কথা বলছো ? আচ্ছা , ঐখানে তো আরো অনেক মানুষ ছিলো । কিন্তু কেউ আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা তো দূরের কথা ছুঁয়েও দেখেনি , কেনো ? এই প্রশ্নের উত্তর তোমার কাছে আছে ?"


সিফাতের নিশ্চুপতা দেখে আসাদ আবার বলে , "এই শহরে আসাদ এক আতঙ্কের নাম । মানুষ আমাকে রাজনীতিবিদ কম , পশু হিসেবেই বেশি চেনে । সবাই জানে আসাদ একজন খুনি , যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষের জীবন কেড়ে নেয় । জানো , যদি আমি আজ মারা যেতাম তাহলে সম্পূর্ণ শহরে খুশির জোয়ার বয়ে যেতো । সবাই স্বস্তির ঘুম ঘুমাতে পারতো । কাউকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হতো না এই ভেবে যে , কখন না জানি আসাদ নামক নরপশুটা আমার জীবন নামক পাখিটাকে খাঁচায় পুরে নেয় ।"


- "আপনি মানুষ খুন করেন ?"


- "আমি যাদের খুন করি , তারা ভদ্র সমাজে মানুষ নামেই পরিচিত । তবে আমি আসাদের কাছে তারা এক একটা জানোয়ার ।"


- "তাদের শাস্তি দেবার জন্য তো আইন আছে । আপনি কেনো আইন নিজের হাতে তুলে নেন ?"


- "রাফির কাছে শুনে নিও , এই ভদ্র সমাজের কাহিনী । তোরা এখন একটু বাহিরে যা , আমার ভালো লাগছে না ।"


রাফি আসাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে , "আচ্ছা , তুই বিশ্রাম নে । আমরা বাহিরে আছি । কোনো কিছুর দরকার হলে ডাক দিস ।"


সিফাত এবং রাফি কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায় । বাহিরে বাকিদের সাথে সিফাতের পরিচয় করিয়ে দেয় রাফি । অল্প কিছু সময়ের মাঝেই ওরা একে অপরের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে । 


----------------------------------------------------------------------------------------------------


ফোনটা বেজে উঠলে মেয়েটি কল রিসিভ করে বলে , "হুম বল , কি খবর ?"


ছেলেটা ভয়ে ভয়ে বললো , "আপু , আসাদ এখনো বেঁচে আছে ।"


- "মানে ?"


- "গুলি করার পরে কেউ'ই ও'কে সাহায্য করেনি । তবে কোথা থেকে যেন একটা ছেলে এসে হাসপাতালে নিয়ে যায় ।"


মেয়েটি উচ্চস্বরে বলে , "তোরা কি তখন ঘাস খাচ্ছিলি নাকি ?"


- "চারদিকে অনেক মানুষ ছিলো । অতো মানুষের ভিড়ে কিছু করা সম্ভব ছিলো না , আপু ।"


- "অজুহাত দেবার জন্য'ই তো তোদের রেখেছি , তাই না ? ভুলেও আমার চোখের সামনে আসিস না , জান নিয়ে নিবো । মাথায় রাখিস ।"


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ১

 - "ক্ষমতা জিনিসটা বড়'ই অদ্ভুত , তাই না রে আসাদ ?"


নদীর পাড়ে বসে আছে আসাদ এবং রাফি । আসাদকে নিশ্চুপ দেখে কথাটা বললো রাফি । আসাদ রাফির দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় নিজের দৃষ্টি আকাশের দিকে স্থাপন করে বলে , 


- "হঠাৎ এই কথা বলছিস যে ?"


- "কয়েকদিন আগেও যে মনিরের কলিজার টুকরা ছিলাম আমরা , আর আজ সেই মনির ক্ষমতার লোভে আমাদের জানের দুশমন হয়ে গেছে ।"


আসাদ মৃদু হেসে উত্তর দিলো , 


- "আমার রাজনীতিতে আসার কারনটা তো তুই জানিস ! আমি আমার উদ্দেশ্য সফল করতে চাই । কোন বেইমান কি করলো , না করলো সেটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার মতো সময় আমার হাতে নেই । তবে চেহারা গুলো মাথায় আছে , কার আচরন কেমন আর কে কখন কি করছে সবকিছু সুদ সমেত ফেরত দিবো সময়মত ।"


- "উহুম , উহুম !"


মেয়েলি কন্ঠস্বরের আওয়াজ শুনে আসাদ এবং রাফি পিছন ফিরে তাকালো । শ্যামলা মেয়েটি আজও হাজির , প্রতিদিনের মতো । পড়নে কালো শাড়ি , লম্বা চুল কোমার ছুই ছুই । চোখে হালকা কাজল , কপালে কালো টিপ । বেশ লাগছে মায়াবতীকে , বলতেই হবে ।


- "আচ্ছা তোরা কথা বল , আমি বাকিদের সাথে ঐদিকটায় আছি ।"


কথাটা বলে রাফি উঠে চলে যায় । আসাদ কিছু নুড়িপাথর কুড়িয়ে নিয়ে নদীর বুকে নিক্ষেপ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । মেয়েটি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে আসাদের পাশে বসে বলে , 


- "এভাবে আর কতদিন আসাদ ?"


কোনো উত্তর না পেয়ে মেয়েটি আবারও বললো , 


- "আমি তো কিছু জিজ্ঞেস করেছি , নাকি ? শুনতে পাওনি ?"


- "শুনেছি , কিন্তু উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করছি না ।"


- "তুমি কি চাওনা , আমরা একটা ছোট্ট সংসার সাজাই ? তুমি কি চাওনা , আমাদের কোল জুড়েও একটা রাজকন্যা আসুক ?"


- "আমার মাথায় এখন ওগুলো নেই , বোঝার চেষ্টা করো প্রাপ্তি ।"


- "মাথায় নেই , মাথাই নেই আর মাথায় নেই । গত এক বছর ধরে আমাকে শুধু এই কথাটাই শুনতে হচ্ছে । একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে ? তোমার মাথায় ছিলো কবে সেটা একটু বলবে ?"


- "যেটা বোঝো না সেটা নিয়ে তর্ক করো না তো ।"


- "হুম , আমি বুঝি না । আর তুমি তো সব বুঝে উদ্ধার করে ফেলছো ।"


- "সকাল সকাল মাথা খারাপ করো না । তোমাকে ডাকি কথা বলে মন ভালো করার জন্য , উল্টো খারাপ করার জন্য নয় ।"


- "এখন তো এটা বলবেই , পুরনো হয়ে গেছি না ।"


- "আজব , এটা কখন বললাম আমি ?"


- "সব কথা মুখে বলতে হয়না । কিছু কথা বুঝে নিতে হয় ।"


- "হুম , তোমার তো আবার সবকিছুতে দুই লাইন বেশি বুঝতে হয় ।"


- "কথা এতো না পেঁচিয়ে সোজাসুজি বলে দিলেই তো পারো , আমাকে আর ভালো লাগে না তোমার ।"


- "তোমার সাথে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো । থাকো তুমি , আমি গেলাম । কাজ আছে ।"


- "যাও যাও , যেদিন থাকবো না সেদিন বুঝবে ।"


আসাদ কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যায় রাফিদের কাছে । বাকিরা আসাদের রাগান্বিত চেহারা দেখে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলো না । বাইকে বসে বাইকটা স্টার্ট দিয়ে রাফিকে বলে , 


- "আমি গেলাম , প্রাপ্তিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তোরা চলে আসিস !"


রাফি কিছুটা চিন্তা কাতর হয়ে বললো , 


- "একা যাওয়াটা কি ঠিক হবে এখন ?"


- "আমার কিছু হবে না , তোরা যা !"


- "আচ্ছা , সাবধানে যাস !"


- "হুম ।"


আসাদ চলে গেলে , রাফি গিয়ে প্রাপ্তির পাশে বসলে লক্ষ্য করে প্রাপ্তির চোখে জল । কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে , 


- "কি হলো তুমি কান্না করছো কেনো ? আসাদ আবার কিছু বলেছে , তাই না ?"


কান্নারত অবস্থায় উত্তর দিলো , 


- "আমি আর সহ্য করতে পারছি না এইসব । অতিষ্ট হয়ে গেছি আসাদের আচরনে । দিন দিন কেমন খিটখিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছে ও । কোনো কথা ছোঁয়ানো যায়না । সবসময় ওর মাথায় রাজনীতি ঘোরে । বাসা থেকেও বিয়ের জন্য প্রেসার দিচ্ছে । কতদিন সামলানো যায় , বলো ?"


- "কি বলবো বুঝতে পারছি না । আসাদের রাজনীতিতে আসার একটা কারন আছে । সেটাতে সফল না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনদিকে মনোযোগ দেবে না । এই জায়গায় আসতে গত দুই বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে ও ।"


- "সবসময় শুধু বলো , কারন আছে । কি কারন সেটা না আসাদ বলে , না তুমি বলো ।"


- "বাদ দাও ওসব কথা , পরে কোনো একদিন বলবো নে । চলো বাসায় পৌঁছে দেই তোমাকে ।"


- "লাগবে না , আমি একা'ই চলে যেতে পারবো ।"


প্রাপ্তি উঠে চলে যায় । রাফি পিছন থেকে অনেকবার ডাকলেও প্রাপ্তি কোনো সাড়া দেয়নি । 


----------------------------------------------------------------------------------------------------


অন্যদিকে আসাদ অন্যমনস্ক হয়ে বাইক চালাচ্ছে । হঠাৎ একটা গুলি এসে ঝাঁঝরা করে দেয় আসাদের বুক । কে গুলি করেছে , কেনো করেছে সবটা'ই অজানা । চলন্ত বাইক গিয়ে বারি খায় রাস্তার সাইড রেলিং এ । রক্তে মেখে গেছে পুরো জায়গাটা । 


রাস্তার মানুষজন জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । হাসপাতালে নেবার আগ্রহ কারো মাঝে নেই । কারন , মুখটা যে সবার কাছে খুব চেনা । শহরের বাকিদের কাছে সে আসাদ ভাই নামেই পরিচিত । আসাদের সাথে ঝামেলার বিষয়টা সকলের'ই অজ্ঞাত আছে । তাই কেউ সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারছে না আসাদের ধারে কাছে যাবার । 


ভিড় অতিক্রম করে...!!


চলবে...!!


#রাজনীতি

#পর্ব_১

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ

গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ৩০ সমাপ্ত

 |৩০|


আজকের দিনটা একদম আলাদা। সেই একই পর্তুগাল, সেই একই গির্জা, কিন্তু এই বারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ থেকে, তুর্য ও তন্নী একে অপরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতে চলেছে। অনেকদিনের অপেক্ষা, কষ্ট, উত্তেজনা আর অবশেষে, এক ছিমছাম সাদামাটা বিয়ের আয়োজন।


তন্নী গির্জার সামনে দাঁড়িয়ে, সবকিছু কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। গির্জার দরজার দিকে তাকালে তার মনে হয়, সময় যেন থেমে গিয়েছে। সেদিন, যখন প্রথম লিসবনের কফি শপে তাদের চোখে চোখ পড়েছিল, কখনো কল্পনাও করেনি, একদিন তারা এখানে দাঁড়িয়ে, একে অপরকে চিরকাল একসাথে থাকার শপথ নেবে।


তন্নী একটু গভীর শ্বাস নেয়। তার চোখে অজানা এক প্রশান্তি। আজকের দিনটা শুধু তাদের নয়, একসাথে বেড়ে ওঠা সব মুহূর্ত


--


তুর্য গির্জার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। তার বুকের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি চলছে। সবকিছু যেন সম্পূর্ণ নতুন মনে হচ্ছে। বিয়ের আগে যেসব কষ্ট, ভীতি ও চ্যালেঞ্জ ছিল, সেগুলো সব কিছুতেই এখন আর কোনো জায়গা নেই। একদিকে এই জীবন শুরু হওয়ার উত্তেজনা, অন্যদিকে এক নতুন ধরনের শান্তি, যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি।


তুর্য তন্নীকে একবার দেখে, তার চোখে শান্ত এক টুকরো হাসি ফুটে ওঠে।

— "তন্নী, আজকে সারা পৃথিবীটাই আমাদের, তুমি জানো?"


তন্নী একটু হেসে ওঠে।

— "হ্যাঁ, তুর্য। আমি জানি।"


এটা একটা সহজ কথার মতো হলেও, এর ভেতর গভীরতা ছিল। এত দিন ধরে একে অপরের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা, এতগুলো দিন একে অপরকে বুঝতে, গ্রহণ করতে—আজকের দিনে সব কষ্ট আর আবেগ মিশে গিয়ে এক অপরিসীম ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে।


---


বিয়ে হওয়ার আগে, তুর্য ও তন্নী গির্জার অদূরে এক ছোট্ট আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে। সাদা ফুলের সজ্জায় সজ্জিত, শান্ত পরিবেশ, কিন্তু তাদের মন এক দম উজ্জ্বল। চারপাশের দিক-দিক থেকে বন্ধুরা তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল, এবং তন্নী এক মুহূর্তের জন্য ভাবছিল, সত্যিই কী এই দিনটি আসবে?


তুর্য, তার হাত ধরে, ধীরে ধীরে বলে—

— “তন্নী, তোমার জন্য আমি সব কিছু ছাড়তে প্রস্তুত ছিলাম। তুমি যে আমাকে বিশ্বাস করেছো, সেটা আসলেই অসাধারণ।”


তন্নী তার হাত শক্ত করে ধরে, চোখে কাঁটা থাকে না, কিন্তু এক ধরনের শান্তি ভর করে।

— “তুর্য, আমরা দুজন একে অপরকে আজকের দিনের জন্য প্রস্তুত করেছিলাম। আজ, আমি জানি—যত যাই ঘটুক না কেন, আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়ে গেছে।”


পর্তুগালের ঐ গির্জার প্রাচীন হলের মধ্যে, তুর্য ও তন্নী একে অপরের দিকে তাকিয়ে শপথ নেয়। তাদের আত্মিক যাত্রা, মনোযোগী সম্পর্ক, ভালোবাসার বন্ধন—এই সব একে অপরকে শপথ করার সময় চিরকাল একে অপরের কাছে থাকার অঙ্গীকারে পরিণত হয়।

তুর্য তার মিষ্টি গলায় বলেছিল—

— “আমি আজও আগের মতো তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, তন্নী। আজ, আমি জানি, আমরা একসাথে থাকব, আমাদের ভালোবাসার প্রতীক হয়ে।”


তন্নী মৃদু হেসে বলেন—

— “তুর্য, আমার জীবনে তুমি যে রূপে এসেছো, সেই রূপই আমার হৃদয়ের প্রতি অঙ্গীকার হয়ে থাকবে।”


---


সবাই তাদের চারপাশে দাঁড়িয়ে, তাদের এই দিনটি উদযাপন করছিল। কফি শপের মিষ্টি স্মৃতির মতো, পর্তুগালের গির্জা—এখন তারা একে অপরের জীবন সঙ্গী হয়ে উঠল।


তন্নী আর তুর্য একে অপরকে দেখে, চোখে চোখ রেখে হাসে। দুজনেই জানে, এক নতুন জীবনের শুরু হচ্ছে আজ।


একটি মুহূর্তের জন্য, গির্জার চূড়ায় বিকেল রোদ যেন আলোর রেশ ফেলে, তাদের মনে নতুন আশা, সাহস, এবং ভবিষ্যতের দিকে এক দৃঢ় পদক্ষেপ রাখতে উৎসাহ দেয়।


তুর্য তন্নীর হাত ধরে, গির্জার চূড়ায় বেরিয়ে যায়। তাদের আস্থা, বিশ্বাস, এবং ভালবাসা—সব কিছুর ওপরে—এখন তারা একে অপরের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দুই অদ্ভুত পথ, এক চিরস্থায়ী মিলনের দিকে চলে এসেছে।


এটা শুধুমাত্র একটা বিয়ের দিন নয়, এটা তাদের এক নতুন জীবনের শুরু।

এটা, আসলেই, "এক_তোমাতেই_আসক্ত"


---


সমাপ্ত 

গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ২৯

 |২৯|


সোফির কাছে ফোন এলো—

— “তুর্য ফিরে এসেছে। সে এলিয়েন নাকি? এটাই কি তার ফিরে আসা?”


তন্নী এক দৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকে। এক সময়, সেই এক নাম, সেই এক মুখ এখন কতটা বদলে গেছে। অনেক কিছু বদলে গেছে, তন্নী নিজেও জানে।


তুর্য ক্যাম্পাসে ফিরেছে। এখন সব কিছুই যেন নতুন।


তন্নী তখন কনফিউশনে—

এমনকি তুর্যের ফিরে আসাও যেন এক ধরনের নতুন পরীক্ষা। কতটা প্রস্তুত সে? কতটা বদলেছে তার কাছ থেকে দূরে থাকার সময়?


---


অবশেষে ক্যাম্পাসের গেটে দেখা হয়।

তুর্য একদম পুরনো তুর্য, কিন্তু তন্নী জানে—তাকে এই অবস্থায় দেখার জন্যই তো এত সময় কেটেছে।


তুর্য কাছে আসে, চোখে তার নিরবতা আর কিছুটা লাজুকতা।

— “তন্নী...”


তন্নী তার চোখের দিকে তাকায়, শ্বাস ফেলে।

— “তুর্য, তুমি কী ভাবে ফিরে এসেছো?”


তুর্য একটু হাসে, তারপর চোখের কোণে এক টুকরো দুঃখ বয়ে যায়।

— “তন্নী, পৃথিবীটা কখনোই পুরোপুরি বদলানো যায় না। যেটা পরিবর্তন হয়, সেটা কেবল সময়। তুমি ছিলে, আমি ছিলাম—এখনো আছি।”


তন্নী চোখের জল ফেলতে চায় না, কিন্তু তার হৃদয়ের অভ্যন্তরে এক অজানা শূন্যতা বেড়ে যায়।

তুর্য কি বুঝতে পারছে তার এই অনুভূতি? সে কি জানে যে এত দিন পর, তাদের নতুন করে একে অপরের কাছে ফিরে আসা কতটা কঠিন?


---


তুর্য হেসে বলে,

— “আমরা তো অনেক গল্প জমিয়ে রেখেছি! মনে আছে আমাদের কাস্কাইসের রোদে দোল খাওয়ার দিন?”


তন্নী হেসে ওঠে, কিন্তু তার হাসি যেন অস্থির।

— “হ্যাঁ, খুব ভালো মনে আছে।”


তুর্য তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকায়।

— “তন্নী, আমি তো জানতাম তুমি সবসময় ভাববে আমি চলে যাব, কিন্তু আমি জানি, তুমি কিছুটা হলেও বিশ্বাস করো—আমার জন্য এই সময়টা অনেকটা অপেক্ষা ছিল।”


তন্নী কিছু বলার আগেই তুর্য তার হাতটা তুলে ধরে। সে একটু আশ্চর্য হয়, তন্নী।

এই মুহূর্তে তার মনে হয়নি, তুর্য কতটা কাছাকাছি এসেছে, অথচ সে এত দিন তাকে দূরে ঠেলে রেখেছিল।


---


তন্নী হাতের তালুতে অনুভব করে তুর্যের উষ্ণতা।

তুর্য ফিরে এসেছে, সে জানে, কিন্তু মনের অজানা ভয় কি তাকে আবার বাঁচতে দেবে? আবার সেই প্রাচীন অনুভূতি কি ফিরে আসবে?


তন্নী ঘাড় ঘুরিয়ে, চোখে অস্থিরতা নিয়ে হেসে বলে—

— “তুর্য, জানো, তুমি ফিরে এলেও অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। সময় পাল্টে গিয়েছে। আমাদেরও। আমরা দুজন আলাদা।”


তুর্য শুধু এক মুহূর্ত থেমে থেকে বলে—

— “তন্নী, আমি জানি। কিন্তু আমরা একসাথে বড় হতে পারব না, যদি সঠিক সময়ে আমাদের হাতে হাত না থাকে।”


তন্নী কিছু বলতে পারে না। তার মনের ভেতরে হাজারটা অশান্তি। আবার নতুন করে সব শুরু করতে হবে?


তুর্য তার হাত চেপে ধরে, নীরবভাবে বলে—

— “আসলেই তো, আবার দেখা, আবার হাতে হাত।”


তন্নী বুঝে, সেই হাত ধরে থাকার শক্তি শুধুমাত্র একটাই—ভালোবাসা। যতই সময় পার হয়ে যাক, সেই অনুভূতিটা কখনো মুছে যায় না।


---


তন্নী কিছুটা সময় নেয়। পরে হালকা হাসে এবং তুর্যর হাত আঁকড়ে ধরে।

তুর্য হেসে ওঠে, আবার সেই পুরনো হাসি।


— “তন্নী, জানো, অনেক কিছু হারানোর পরে বুঝতে পারলাম—এটাই সঠিক সময়।”


তন্নী শুধু একবার চোখ বন্ধ করে, তারপর বলে—

— “তোমার কথা মনে ছিল, তুর্য। আমি জানতাম, তুমি ফিরে আসবে।”


তুর্য তার হাত শক্ত করে ধরে, যেন কিছু হারানোর ভয় নেই।

এই নতুন শুরু, এই নতুন অধ্যায়, সবকিছু যেভাবে শুরু হয়েছিল—ঠিক সেভাবেই, আবার শুরু হতে চলেছে।


---

গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ২৮

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত 

#আয়ান_মাহমুদ 

|২৮|


---


সকালে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই তন্নীর মনে হলো, যেন এক স্বপ্নভঙ্গের উৎসব চলছে। সবাই আজ পরিপাটি, গাউন পরে, ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে। একদিকে হাসি, অন্যদিকে অশ্রুর ভার।


তাসনিম সোনালি টুকটুকে শাড়িতে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তিহান তার কালো স্যুটে যেন পরিপূর্ণ পুরুষ।

তুর্য নেই।


তন্নী সাদা জামদানি পরে আয়নায় নিজেকে দেখে। ঠোঁটের কোণে একটুকু হাসি থাকলেও, চোখের তলায় ক্লান্তি।


— “তুর্য থাকলে হয়তো আজ আমার ছবি তুলত সবচেয়ে বেশি...” মনে মনে বলে তন্নী।


---


গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে যখন নাম ডাকা হচ্ছিল, তাসনিম গলা চড়িয়ে চিৎকার করে—


— “তন্নী চৌধুরীই আমাদের ক্যাম্পাস কুইন!”


সবাই হেসে উঠল। তন্নী লজ্জায় পড়ে মাথা নামিয়ে হাঁটে মঞ্চে।


তিহান ছবি তুলছে পাগলের মতো।

— “তাসনিম, তুই যদি আর জোরে চিৎকার করিস, আমি তোর ব্যাগ চুরি করে পালাবো।”


তাসনিম ফিসফিস করে বলে,

— “তোর তো পালানোর শখ চিরকাল। কিন্তু আজ পালানোর দিন না। আজ বিদায়ের দিন...”


এই কথাটাই চারপাশে বারবার ফিরে আসে।

বিদায়।


---


সন্ধ্যাবেলায় স্নাতক বিদায়ের পর তন্নী যখন নিজের রুমে ফিরে আসে, দরজার সামনে ছোট একটা বাক্স পড়ে থাকে।


তার উপরে লেখা শুধু—


> “From someone who remembers.”


ভেতরে একটা সাদা মিনি ফটো অ্যালবাম, তুর্য নিজে এঁকেছে ছোট ছোট স্কেচ আর লিখেছে নোট।


“তাসনিমের ঝগড়া – দিন ২৮”


“লাইব্রেরিতে তন্নীর বইয়ের ভেতর লুকানো চকোলেট – দিন ১৪”


“সিন্ত্রার বৃষ্টি – আমাদের একমাত্র ছায়া”


শেষ পাতায় লিখা —


> “আজ স্নাতক। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর শিক্ষার নাম।


আসছি। শীঘ্রই।”


তন্নী চোখ বন্ধ করে রাখে অনেকক্ষণ।

নীরব কান্না নামিয়ে আনে ধীরে ধীরে।


---


স্নাতক বিদায়ের রাতটা ক্যাম্পাসের টেরেসে সবাই মিলে কাটায়।


তিহান গিটার বাজায়, তাসনিম গায়, কেউ কেউ হেসে হেসে পুরনো গল্প বলে।


তন্নী চুপচাপ বসে থাকে, কানে হালকা সুর বাজে—

“তোমায় খুঁজে ফিরি দূর আকাশে,

আসবে কি তুমি আবার কাছে?”


তিহান একসময় পাশে এসে বসে, বলে—

— “ও আসবে তন্নী। ওই ছেলে তো তোকে ভালোবাসে অন্ধের মতো।”


তন্নী হেসে বলে,

— “ভালোবাসা মানে তো শুধু হাত ধরা না, পাশে থাকা না।

ভালোবাসা মানে অপেক্ষা।

আমি অপেক্ষা করবো।”


চাঁদের আলোয় ওর চোখের ঝিলিক টের পায় সবাই।


---