গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২৫

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২৫


-সেই কখন থেকে বই মুখের সামনে নিয়ে বসে আছে পেখম,,, আবির ওর সামনে বই গুলো রেখে ফ্রেশ হতে গেছে,,,, প্রায় আধা ঘন্টা পর আবির ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে পেখম অন্য দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে আর ডান হাতের নখ দাঁত দিয়ে কাটছে,,,আবির একটু এগিয়ে এসে পেখমের সামনে দাঁড়ালো,,তাতেও পেখমের কোনো হেলদোল না দেখে গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল,,


- হমম হমম তো আজকাল বই এর লেখা বুঝি ব‍্যালকনির পর্দায় থাকে??( টাউজারের পকেটে হাত রেখে র্নিলিপ্ত ভাবে কথা টা বলল)


-পেখম অন‍্যমনস্ক থাকায় হঠাৎ করে আবিরের কন্ঠস্বর শুনে কেঁপে ওঠে,,, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে " এত বড়ো হয়েছেন,, এত বড়ো একজন  business man  আর তা ছাড়া business কলেজে নাকি টপ করতেন,,তাহলে এইটুকুও জানেন না যে ব‍্যালকনির পর্দায় কোনো বই এর লেখা থাকে না,,, যদি না সেটা ওখানে টোকা হয়,,,,


- আজকাল বড্ড মুখে মুখে কথা বলো,,যেটা আমি পছন্দ করি না পাখি,,,


- আমিও অনেক কিছু পছন্দ করি না,,,


- কিন্তু আফসোস এটাই যে তোমার পছন্দ হোক বা না হোক সেখানে জিনিস গুলোই তোমাকে মেনে চলতে হবে,,, এখন ঝটপট একবার বই গুলো দেখে নাও,,তোমার হাতে দশ মিনিট সময় আছে ,,তারপর আমি প্রশ্ন করবো আর যদি তুমি সঠিক উত্তর দিতে না পারো তাহলে আমি তোমাকে যে শান্তি দেবো সেটা তোমাকে মানতে হবে,,,


- মানে টা কি?? কাল আমার পরীক্ষা এখন আপনি পড়া ধরবেন?? আপনার কি মনে হয় আমি বাচ্চা??


- আমার মনে হয় না পাখি,,তুমি তো সত‍্যিই বাচ্চা, নাহলে কি আমাকে এত অপেক্ষা করতে হয়???


- মানে কি বলতে চাইছেন একটু স্পষ্ট করে বলুন,,,আর আমি মোটেও বাচ্চা নয়,,,আমি অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী,, কাল থেকে আমার ফাইনাল পরীক্ষা,, তারপরে আমি তৃতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হবো,,তাহলে আমাকে আপনার কোন দিক দিয়ে বাচ্চা মনে হয়??? আর আমি যদি বাচ্চা হই তাহলে আপনি একজন বুড়ো,,,


-পেখমের কথা গুলো শুনে আবির ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে পাখির উদ্দেশ্যে বলে" তুমি বাচ্চা নয় তাই তো ঠিক আছে,,, তাহলে তোমার শাস্তি আমি বড়োদের মতো করেই দেবো,,,তোমার সময় শুরু হচ্ছে এখন থেকে,,,,


- আবির নিজের কথা মতো দশ মিনিট পর পেখমের কাছে থেকে বই নিয়ে নেয়,,,তারপর এক এক করে প্রশ্ন  জিজ্ঞাসা করতে থাকে,,পেখম মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়,,, কিন্তু যখন স্ট‍্যাটিসটিক এর উপর আবির প্রশ্ন করতে শুরু করে তখন পেখম সব প্রশ্নের উত্তর গুলিয়ে ফেলে,,,


- কি হল বলো মিডিয়ানের সূত্র কি??আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো simple একটা উত্তরের জন্যে??


- উফফ আপনি একটু চুপ করুন না,,,আমি মনে করার চেষ্টা করছি,,, ওই তো 2min + না - ছিল,,,মনে পড়ছে না(মুখ টা করুণ অবস্থা করে বলে,,,আর যা দেখে আবিরের হাসি পেলেও নিজেকে সামলে গম্ভীর হয়ে বলে,,)


- উত্তরটা যখন মনে নেয় তাহলে শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও,,,


- ছেড়ে দিন না,,,আপনি বরং বইটা দিন আমি একবার রিভাইস দি,,


- পড়তে তো তোমাকে হবে যতক্ষণ না আমি উত্তর ঠিক ঠাক পাবো,,,সেটা যত রাতই না হোক,,, কিন্তু এখন শাস্তি তোমাকে পেতে হবে,,,আর যেহেতু তুমি নিজে দাবী করছো যে তুমি বাচ্চা না বড়ো,,সুতরাং শাস্তিও তোমাকে বড়োদের মতো পেতে হবে,,,আর তোমার শাস্তি হলো- ঝটপট আমার কাছে এসে আমার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে থাকো দশ মিনিট,,,আবিরের এমন কথা শুনে পেখম হতভম্ব হয়ে যায়,,,কতক্ষণ যে ও ফ‍্যাল ফ‍্যাল দৃষ্টিতে ওইভাবে তাকিয়ে ছিল আবিরের দিকে তার ঠিক হিসাব নেই,,,ওর ঘোর কাটে আবিরের ডাকে,,,,


- কি হল পাখি,,,কি বলছি আমি,, যদি তুমি আমার কথা না শোনো তাহলে কিন্তু এর থেকেও বড়ো শাস্তি দেবো,,অযথা দেরি করে আমাকে রাগিয়ে দিও না,, যদি একবার রেগে যায় জানো তো আমি কি করতে পারি,,,(গম্ভীর হয়ে)


- আবিরের এই রকম কথা শুনে পেখমের আর সাহস হল না দিরুক্তি করার,,,ও আস্তে করে করে আবিরের সামনে যায়, তারপর নিজের মাথাটা আবিরের বুকে রেখে কাঁপা কাঁপা হাতে আবিরকে জড়িয়ে ধরে,,,আর আবির মুচকি হেসে পরম আবেশে পেখমকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে,,,,,


- আবিরের বুকে মাথা রাখার সাথে সাথে পেখমের শরীর বেয়ে ঠান্ডা রক্তস্রোত নেমে যায়,,,দুজনের অশান্ত মনটা এক নিমিষেই শান্ত হয়ে যায়,,, পেখম শুনতে পারছে তার স্বামী নামক পুরুষটির হৃদয়ের স্পন্দন যা ক্ষনিকে ক্ষনিকে বলছে এটাই তোর স্বপ্ন পুরুষ,,, এটাই তোর প্রেমিক পুরুষ,,, এটাই তোর একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষ,,, এই সেই পুরুষ যার উপরে একমাত্র তোরই অধিকার সম্পূর্ণ তোরই,,,আর কারোর নয়,,,,,


- পেখমকে জড়িয়ে ধরে আবির ভাবছে,,আজ কতদিন পর তোমাকে এইভাবে কাছে পেলাম আমি রাত-প্রেয়সী,,,, তুমি কি আমাকে একটু বুঝবে না,,, ভালোবাসবে না আগের মতো করে???


- তারপর এইভাবেই আবির প্রশ্ন করে আর পাখি উত্তর দেয়,,কখনো কখনো জেনে শুনেই ভুল উত্তর দেয় পাখি আর যার শাস্তি স্বরূপ তাকে কখনো আবিরের গালে চুমু খেতে হয়েছে,,,কখনো মাথায় পাঁচ মিনিট হাত বুলিয়ে দিতে হয়েছে তো কখনো কফি করে আনতে হয়েছে,,,আবার কখনো কখনো আবিরের দুই গালে ও কপালে চুম্বন করতে হয়েছে,,, এমনকি গান শোনাতেও হয়েছে,,,আর এইসব কাজ পাখি ভালোবেসেই করেছে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল উত্তর দিয়ে,,, আসলে এইরকম ভালোবাসাময় সময়টা ওরা দুজনেই উপভোগ করতে চেয়েছিল যার জন্যে আবিরো কঠিন কঠিন প্রশ্ন ,,ঘুড়িয়ে ফিড়িয়ে প্রশ্ন করছিল পেখমের কাছে আসার জন্য,,,,বেশ অনেক রাত করেই দুজনে ঘুমিয়েছে প্রশ্ন-উত্তরের পালা শেষ করে।


- পরীক্ষা গুলো ভালো ভাবেই দেয় পেখম,, কেননা তাকে এই কদিন আবির পড়িয়েছে,,তবে হ‍্যাঁ পড়ার মধ্যে পাখির শাস্তিও ছিল রোমান্টিকতায় ভরপুর। আবির পরীক্ষার কদিন পেখমকে দিয়ে এসেছে আর নিয়েও এসেছে,,পেখমের কখন কি লাগবে সেদিকেও খেয়াল রেখেছে,, পেখম যতবার দুর্বল হয়ে পড়ে আবিরের প্রতি ঠিক ততবারই ওই তিক্ত সত‍্যিটা চোখে ভেসে উঠেছে,,,,ঠিক তখনই নিজেকে আবার সামলে নিয়েছে,,,

__________________________________________


- সোনালী আলোয় ঝলমলে আকাশ টা হঠাৎ করেই ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায় আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বয়ে যায় বাতাস,,,শরৎকালে শরৎ মেঘের এই হলো সমস্যা,, যখন তখন মেঘ সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি হবে,,,কিন্তু তবুও পেখমের এই ঋতুটাকে খুব ভালো লাগে,,,যখন ও কাশফুল দেখে রাস্তার চারপাশে,, আর যখন শিউলি ফুলের ঘ্রাণে মেতে ওঠে এই শরতের পরিবেশ তখন ওর মন নেচে ওঠে বাঁধন ছাড়া ময়ূরের মতো,,,,


- রাস্তার চারপাশে যখন ধূলোময় পরিবেশ ঠিক তার মাঝেই হেঁটে আসে ওরা ছয়জন,,, হ‍্যাঁ পেখমদের কথা বলা হচ্ছে এখানে,,, পরীক্ষা শেষ হওয়ার একমাসের মাথায় আবির নিজে ওকে নতুন একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেয়,,ফাইনাল ইয়ার টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে,,আর দ্বিতীয় বর্ষের রেজাল্ট অবশ্য নেক্সট সপ্তাহে দেবে,,,,


- আর পেখম যেহেতু এই কোচিং সেন্টারে পড়ে সুতরাং পেখমের পিছনে পিছনে ওর পাঁচজন বন্ধুরাও এখানে চলে আসে,,,আজ বিকেলে কোচিং ছিল তাই ওরা একসাথেই এসেছে কিন্তু রাস্তার মাঝেই এই বৃষ্টি শুরু হওয়াতে একটু ভিজে যায় ওরা,,,


- কোচিং ক্লাস শেষ হয়ে যায় রাত আটটার সময়,, বাইরে তখনই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে,,,প্রায় সবাই যে যার মতো বাড়িতেও চলে যায়। পেখম জোড় করে প্রিয়া আর রুশা কে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়,,অর্নবদের  বললে ওরা বলে যতক্ষণ আবিরদা না আসবে ওরা দাঁড়াবে,,,হঠাৎ ঝুমঝুম করে জোড়ে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে যায়,, পেখম বুঝে উঠতে পারছে না আবিরের কেন এত দেরি হচ্ছে,,এর আগে এমন দেরি কখনো হয়নি,,,


- পেখু তুই একটু দাঁড়া ,, আমরা একটু স‍্যারের সাথে কথা বলে আসছি,,অর্নব তোর ক্রাশ সামনেই দাঁড়িয়ে আছে,, যা একবার তোর ছাতাটা দিয়ে আয়,,(দিপু)


- ফাউল বকিস না,,,যা তোর কাজে,,,( অর্নব)


- এই অর্নব যা তো মনের কথা টা আজকে বলেই দে(পেখম)


- সত্যি যাবো বলছিস?? তা তুই এখানে একা থাকবি ,,তুইও চল আমার সাথে,,(অর্নব)


- আরে আমি একা কোথায়,,, কত মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই পাশে,,,আর তোরা তো এখানেই আছিস শুধু একটু দূরে এই যা,,,


- পেখম একটু পর পর ঘড়ি দেখছে আর রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে,, এমন সময় পিছন থেকে রাহুল বলে ওঠে,,

( রাহুল পেখমদের সাথে এই কোচিং সেন্টারে পড়ে,,আবার রুশাকেও পছন্দ করে,, সেই সূত্রে ওদের সাথে বেশ ভালোভাবে মিশে গেছে এই এক মাসে)


- পেখম কোনো সমস্যা?? বারবার এইভাবে ঘড়ি দেখছো,,,(রাহুল)


- না না তেমন কোনো সমস্যা না,,আবির দা এখনো আসছে না কেন তাই??


- সিরিয়াসলি পেখম তুমি তোমার হাসবেন্ড কে এখনো দাদা বলছো,,,তাহলে তো তোমাদের বেবি হওয়ার পর তারা আবিরদাকে মামা বলে ডাকবে,,,ব‍্যাপার টা তখন কেমন হবে বলোতো,,(কথাটি বলেই রাহুল হেসে দেয়,,,পেখম প্রথমে ভ্রু কুঁচকালেও পরে এইসব ভেবে রাহুলের  হাসিতে যোগ দেয়,,,আর তারপর হাসতে হাসতে বলে,,,


- আমি তো এটা ভেবে দেখিনি,, ভাগ‍্যিস তুমি বললে ,,,,এটা নিয়ে এখন আমাকে গবেষণা করতে হবে,,, কথাটা বলে আর এক দফা দুজন হেসে উঠলো,,, আর এইসব কিছু দূর থেকেই গাড়িতে বসে দেখছিল আবির,,সৃষ্টি হয় মনের মধ্যে দাবানল আর যেটার আভাস চারিদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই নিজেকে সামলে নেয় আবির,,,


-আবির গাড়ি থেকে নেমে ছাতা মাথায় দিয়ে পেখমের কাছে এগিয়ে যায়,,, আর ততক্ষণে অর্নবরাও চলে আসে ওখানে,,, আবিরকে দেখে ওরা সবাই বলে ওঠে,,,, কেমন আছো?? আবির ওদের প্রশ্নের উত্তর দেয় ,,,তারপর ছাতাটা পাখির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে গাড়িতে গিয়ে বসতে,,পাখিও আর কথা না বাড়িয়ে রাহুল ও ওর বন্ধুদের কাছে থেকে বিদায় নেয়,,এরপর সবাই এক এক করে আবিরের সাথে কথা বলে বাড়িতে চলে যাও,,আর আবির কোচিং সেন্টারের স‍্যারের সাথে কথা বলে গাড়িতে এসে বসে,,,কোচিং সেন্টার থেকে গাড়ির কাছে আসতে আসতেই আবিরের শার্ট প্রায় ভিজে যায়,,,তাই দেখে পাখি বলে,,,


- আপনি তো প্রায় ভিজে গেছেন দেখছি,,,


- তাতে তোমার কি??( বলেই গাড়িতে স্টার্ট দিলো)


-আবিরের কথার মাঝে রাগের আভাস স্পষ্ট ভাবে পাই পেখম,,, তাই খুব ধিরেই বলে,,আমার কিছু না,, কিন্তু একটু পরেই আপনি হাচ্চি করতে শুরু করবেন,, বলেই আবিরের দিকে একটু এগিয়ে এসে নিজের ওরনা দিয়ে আবিরের মাথাটা মুছে দিতে লাগলো ,,,,


- পেখমের এইরূপ কার্যে আবির হতবাক হয়ে পড়ে,,,ও হঠাৎ উপলব্ধি করতে লাগলো যে ক্রমেই যে রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সেটাতে কেউ এক পশলা বৃষ্টি এনে দিয়ে শান্ত করে দিলো,,,,,মনে বিষাদের মেঘটা কাটার সাথে সাথে মেজাজটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো,,


- পেখম আবিরের মাথা মুছে দিতে দিতে হঠাৎ খেয়াল করে ও আবিরের খুব কাছে চলে এসেছে,,, এতটাই কাছে চলে এসেছে যে আবিরের গরম নিশ্বাস ওর মুখে এসে বারি খাচ্ছে,,,ও তাড়াতাড়ি করে সরে আসতে নিলেই টের পায় একজোড়া শক্তিশালী বাহু ওর কোমড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে,,,এই স্পর্শ ওকে আলাদা ভাবে শিহরিত করছে ক্ষণে ক্ষণে,,ও সরে আসার জন্য আবিরের দিকে তাকাতেই দেখে একজোড়া মোহনীয় চোখ ওর দিকে আকৃষ্ট হয়ে তাকিয়ে আছে,, যা দেখে পেখমের নিজেকে সামলে রাখতে খুব কষ্ট হয়,,,আর যখন ও অনুভব করে আবির ধিরে ধিরে ওর দিকে অগ্ৰসর হচ্ছে ঠিক তখনই পিছনের গাড়ি গুলো হর্ন দিতে শুরু করে,,আর  কেউ কেউ তো বলে ওঠে রাস্তার মাঝে এইভাবে কেউ হুট করে গাড়ি থামিয়ে দেয়,,,এইসব কথা কানে আসতেই আবিরের ঘোর কাটে,,,আর সাথে সাথেই ওর চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে ওঠে শেষের কথা টা শুনে,,

এদিকে পেখম তো মনে মনে ওদের ধন্যবাদ দেওয়া শুরু করে দিয়েছে,,,,


- বৃষ্টির জন্যে যখন সবাই দোকান বন্ধ করে বসে আছে,, রাস্তাঘাট প্রায় যখন ফাঁকা ,,,ঠিক তখনই আবির খেয়াল করে রাস্তার একধারে একটি বাচ্চা ছেলে ভিজছে,,হাতে তার একটা ঝুড়ি, আর সেই ঝুড়িতে রয়েছে বেলি ফুলের মালা,,,সদ‍্য ফোঁটা শিউলি ফুল,,,আবির গাড়িটা ছেলেটার সামনে দাঁড় করায়,এতে ছেলেটা একটু ভয় পেলেও পরে মুখে হাসির রেখা ফোঁটে এই ভেবে হয়তো ওর ফুল কিনবে।

আবির ওই ছেলেটাকে বলে,,,


- বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন?? জ্বর আসবে তো,,,


- ভিজতাম না,,কিন্তু এই ফুল গুলো,,(বলেই মাথা নিচু করে ফেলে)


- আবির ওর ওয়ালেট থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট ছেলেটার হাতে দিয়ে বলে " তোর ঝুড়িতে যা আছে সব দে"


- ঝুড়িতে যা আছে সব দিলেও তো এত টাকা হবে না,,,


- না হোক,, ওটা তুই রেখে দে,,,যদি জ্বর আসে ওষুধ আর ফল কিনে নিস,,,


- ঠিক আছে বাবু,,,আপনি তাহলে এই ঝুড়িটা ধরেই নিন,,,বলেই আবিরের হাতে ঝুড়ি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় ছেলেটি,,,আবির ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ,,, তারপরে পেখমের হাতে ঝুড়িটা ধরিয়ে দিয়ে বলে,,,,


- "শুভ্র প্রণয়ের এই বর্ষণে এই শুভ্র ফুলগুলো একমাত্র শুভ্র প্রেয়সীর হাতেই মানায়"।   (কথাটা বলে আবার ড্রাইভিং মনোযোগ দেয় আবির)


- পেখম যত এই মানুষ টাকে দেখছে ততই অবাক হচ্ছে,,,পেখম বুঝতে পারে ফুল কেনার কারণ।প্রথমত ,ছেলেটার জন্যে কষ্ট হচ্ছিলো তাই ফুল গুলো নিয়েছে,, কারণ শুধু শুধু টাকা দিলে ছেলেটা হয়তোবা নিতো না,,,,আর দ্বিতীয়ত, একটু আগে ওর সাথে জোড়ে গলায় কথা বলেছে তার জন্যে এই ফুল গুলো দেওয়া যাতে আমি রাগ না করি,,,,,কথা গুলো নিজের মনে মনে বলে হেসে উঠলো পেখম,,,,তারপর ঝুড়ি থেকে ফুল গুলো হাতে তুলে নিয়ে তার ঘ্রাণ নিতে থাকে। ক্রমেই মনে বেড়ে চলেছে আবিরের প্রতি ভালোলাগার একরাশ অনুভূতি,,,,, 


-ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে আড় চোখে আবির বারবার পেখমকে দেখে,, ফুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে প্রেয়সীর ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে আবিরের বলতে ইচ্ছা হলো " এই পৃথিবীতে যেন এইরকম প্রেমময় বর্ষণ ক্ষণে ক্ষণেই নামুক,,,আর ধুয়ে দিক মনের সকল বিষাদ। আর সেখানেই জন্ম নিক এক শুভ্র প্রণয়ের অনুভূতি"।


চলবে,,,,,


(

গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২৪

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২৪


-মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে যখন পাখিরা তাদের বাসা থেকে বেরিয়ে উড়তে থাকে অজানা জায়গার উদ্দেশ্যে তখন তাদের পথ দেখানোর জন্য ভোরের আলো ফুটে ওঠে সর্বদিকে,,,আর সেই সাথে নতুন একটা সকালের উদয় হয়। ভোরের আলো সামান্য জানালা আর ব‍্যালকনির পর্দার ফাঁক দিয়ে খুবই সন্তপর্ণে প্রবেশ করে ঘরটার অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত করে তোলে।


-অন্ধকার ভাবটা কেটে গিয়ে পেখমের চোখের উপর আলোর আভাস লাগতেই ও বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে নিল। তারপর খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে ধীরে সূস্থে পিটপিট করে চোখটি মেললো,,,তারপর নিজেকে বিছানায় দেখে তক্ষনাৎ উঠে বসলো ও,,,


-আমি যতদূর জানি কাল আমি সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম,, এখানে এলাম কখন?? নিজের মনে কথা গুলো বলে আড়োমোড়া খেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলেই চোখ যায় সোফায়,,গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে আবির,,ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না বিছানায় কিভাবে এল ও,,,


-পাখি বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারি থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল,,,,প্রায় আধা ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ব‍্যালকনির পর্দা সরিয়ে, কাঁচের দরজা খুলে ব‍্যালকনিতে গেল। তারপর ভিজে জামাকাপড় ও মাথা থেকে ভিজে টাওয়াল নিকড়ে সেই গুলো মেলে দিলো,,,ভেজা চুল গুলো কে হাত দিয়ে ঘাড়ের একপাশে আনলো,,,আবিরের ব‍্যালকনিতে অনেক গুলো গোলাপের চারা আছে,,ও সেই গুলো তে জল দিয়ে ঘরে আসতে যাবে ,হঠাৎ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখে চারপাশে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ পড়ে আছে,,,সেটা দেখে সকাল সকাল ওর মুডটা অফ হয়ে যায়,,,,


- কি পেয়েছেন টা কি উনি?? মানে যা ইচ্ছা তাই করবেন নাকি?? করাচ্ছি,,,এই রকম সিগারেট খেলে তো চেন-স্মোকার হয়ে যাবেন উনি,,,এইসব গুলো বলে রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে এল,,,এসে আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে" হমমম দেখো কি সুন্দর ভাবে বাচ্চাদের মতো মুখটা ইনোসেন্ট করে ঘুমাচ্ছেন,,, আপনার ঘুম আমি বার করছি,,,,


- হঠাৎ কোনো কিছুর শব্দে আবিরের ঘুমটা ভেঙে গেল,,ও চোখ পিটপিট করে খুলে দেখে পেখম ঠুসঠাস করে এদিকের জিনিস অন‍্যদিকে রাখছে,, তো কখনো বিছানা ঝাড়া ঝাড়ু দিয়ে দুম দুম করে বিছানা ঝাড়ছে তো কখনো ড্রেসিং টেবিলের উপরের জিনিস গুলোর জায়গা পরিবর্তন করে সেই গুলোকে জোড়ে জোড়ে শব্দ করে রাখছে,,,পেখমের এইরূপ কার্যে আবির বিষ্মিত হয়ে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ ওর দিকে,,,তারপর গুরুগম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করে "এখানে কি হচ্ছে এসব?? সকাল সকাল শান্ত পরিবেশ টাকে শব্দময় করে তুলছো কেন পাখি"??


- পাখি আবিরের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়,, তারপর হাত ভালো করে ধুয়ে, মুছে আসে ঘরে,,,আবির যে এই ঘরে আছে সেটা না দেখার ভান করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে,,,


- পাখির এইরূপ কারুকার্য বোধগম্য হলো না ঠিক আবিরের,,,ও মনে মনে স্বগোক্তি করে বলে "এ আবার ভিজে বিড়াল থেকে বাঘিনী রূপ কবে থেকে ধারণ করলো?? আবির তোর কপালে ভীষণ দুঃখ আছে,,কোথায় ভাবলি বিয়ের পর চুটিয়ে হানিমুন করবি,,কিন্তু হলো টা কি,,,,এইসব কথা ভাবার মাঝে সামনের দিকে তাকায় আবির,,আর তাকিয়েই ওর যেন হৃদস্পন্দন থেমে যায়,,পেখম কাঁচা হলুদ ও লাল রঙ মিশ্রিত একটা শাড়ি পড়েছে,,,যার আঁচল কোমড়ে গুজে রাখা,,,মায়াবী ওই চোখে হালকা কাজল ও কপালে লাল টিপ আর মাথায় সিঁদুর যা ওর স্বপ্নের প্রেয়সীকে সম্পূর্ণা করে তুলেছে,,,


- ওর সামনে যেন কোনো এক মায়াবী মানবী দাঁড়িয়ে আছে যে তার মায়ার জালে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে,,,পেখম আয়না দিয়েই দেখতে পারছে আবির ওর দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে,, ও সেইদিকে তেমন পাত্তা না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,আর আবির বেচারা ওয়াশরুমে চলে যায়,,,

__________________________________________


- মামনি বাড়ি পূরো ফাঁকা কেন??


- ও তুই উঠে গেছিস,, আমরা সবাই ভাবলাম তোরা বুঝি এখনো ঘুমাচ্ছিস,তাই আর ডাকিনি,,,হ‍্যাঁ সবাই চলে গেছে,,, পুলকের অফিস আছে তাই ওরাও চলে গেছে,, তবে চিন্তা করিস না প্রিয়া,  রুশা, মৈনাক, ইশান আর কুশল ওরা আছে,,,


- আমাদের নিয়ে কি কথা হচ্ছিলো?? (কুশল)


- এ মা হাতে ব‍্যাগ কেন?? চলে যাচ্ছিস নাকি তোরা??


- হ‍্যাঁ কাকিমা আর্জেন্ট ছুটি নিয়ে এসেছিলাম,, তাই ফিরতে হচ্ছে,,,মৈনাক আর ইশান আমার সাথেই যাচ্ছে,,,(কুশল)


- আবিরের সাথে দেখা করেছিস??


- হ‍্যাঁ ওর সাথে দেখা করেই আমরা আসছি,,,ঠিক আছে এখন তাহলে আমরা আসি,,,বৌদি বলবো না তোমাকে,,, পেখু বলেই ডাকবো আমরা,,,ভালো থেকো আর আমাদের বন্ধুটাকে ভালো রেখো ( ইশান)


- অবশ্যই দাদা,,আপনারা কিন্তু আবার আসবেন(পেখম)


- হ‍্যাঁ আসবো,,যদি তোমার বান্ধবীরা মন খারাপ করে,,(মৈনাক)


-মিস্টার মৈনাক আপনি একটু বেশি কথা বলেন,,(রুশা)


- সেটাতো আপনাদের জন্য,,,(মৈনাক)


- কাকিমা আমরাও আসছি,,,নেক্সট মাস থেকে ফাইনাল টেস্ট পড়তে হবে,,, পেখু তুই তাহলে কালকে কলেজে আসিস,,(প্রিয়া)


- হমম ঠিক আছে,, খেয়েছিস তো তোরা??(পেখম)


- হ‍্যাঁ খেয়েছি,,,কালকে দেখা হচ্ছে তবে,,


-এক এক করে সবাই চলে গেলে বাড়িটা পুরো ফাঁকা হয়ে যায়,, পেখমের খুব ইচ্ছা করছিল ওদের বাড়ি যেতে কিন্তু কি নিয়মের জন্য যেতে পারিনি,,

___________________________________________


- বিয়ের সব রিচুয়াল পালন করা হয়ে গেছে,,, এরই মধ্যে আবির একবার পেখমকে নিয়ে থানায় এসেছিল রিকের বিরুদ্ধে প্রমাণ দেওয়ার জন্য,,, যথা সময়ে রিককে কোর্টে নেওয়া হয়েছিল এবং ওর শাস্তি পাঁচ বছরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।


- পেখম ইদানিং পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে বেশি,,,আবিরের সাথে দেখা হয় তার রাতে,,কারণ আবির এই দিকের অফিসের সব দায়িত্ব নিজে নিয়েছে,,,আর বাইরের দিকটা অশোক বাবু নিজেই দেখাশোনা করে,,,,পেখমের সাথে আবিরের সম্পর্ক সেই বৌভাতের রাতের মতোই আছে,, আবির নিজে থেকে কথা বলতে চাইলেও পেখম এড়িয়ে যায় ওকে,,পেখমের কাল থেকেই পরীক্ষা, তাই এখন ওর যত মনোযোগ পড়াশোনা তেই এনেছে,,


- রাত আটটা বাজে,,আবির অফিস থেকে বাড়ি এসেছে,,,অনুপমার সাথে কথা বলে নিজের ঘরের দিকে গেল,,এই একমাসে কম চেষ্টা করেনি পাখির মন পাওয়ার বা ওর সাথে খোলামেলা ভাবে কথা বলার,,কিন্তু না পাখি ওকে এড়িয়ে গেছে বারংবার,,,মনে কষ্ট নিয়ে আবির নিজেকে বোঝাই ও যেই ব‍্যবহার টা করেছিল পাখির সাথে তাতে হয়তো এটা ওর প্রাপ‍্য। এই একমাসে পাখি ওর অভ‍্যাসে পরিণত হয়েছে,, পাখির মুখটা না দেখতে পেলে ওর দম বন্ধ হয়ে যায়। পাখির  শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ না পেলে ওর শ্বাসকষ্ট হয়,,নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে,,এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছে ও পাখির প্রতি,,,


- ঘরে এসে পাখির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আবির ব‍্যালকনিতে যায়,, সেখানেও পাখিকে না পেয়ে নীচে চলে আসে,,,অনুপমা আবিরকে নীচে নামতে দেখে জিজ্ঞাসা করে,,


- কি রে তুই ফ্রেশ না হয়ে চলে এলি!!


- ও মা তোমার কাছে আসছিলাম আমি,,,পাখি কোথায়?? ঘরে দেখলাম নেই,,,মহারাণী গেলেন কোথায়??কলেজের পর তো ওর কোনো টিউশনি ছিল না,,,


- উফফ আমার ছেলেটা কত কিছু ভেবে ফেলেছে,,,পেখু ও বাড়িতে গিয়েছে,,, ও তো কিছু দিন মানে পরীক্ষার কদিন ও বাড়িতে থাকবে বললো,,


- আমাকে তো একবার বললো না,,,


- দেখো মেয়ের কান্ড,,আমাকে বললো যে ফোন করে পরে তোকে বলবে,,,দেখ হয়তো ও বাড়িতে গিয়ে ভুলে গেছে,,,


- আচ্ছা মা আমি একটু ও বাড়ি থেকে ঘুরে আসছি,,,


- ফ্রেশ হয়ে যা,,,


- এসে ফ্রেশ হচ্ছি,,, বলেই আবির চলে গেল,,, ছেলে যে বউ পাগল হবে সেটা অনুপমা বিয়ের আগে থেকেই জানতেন তাই মাঝে মধ্যে ছেলের এইসব কাজ দেখলে উনি হেসে ফেলেন,,, আজও তার ব‍্যতিক্রম হয়নি,,, উনি হাসতে হাসতে দরজা লক করে নিজের ঘরের দিকে গেলেন,,,

_________________________________________


- আচ্ছা দইটা কেমন হয়েছে বললি নাতো?? সেই তখন থেকে ৫০০ দই তুই নিজেই খেয়ে যাচ্ছিস,,,এত পেটুক কেন রে তুই?? আবির কি তোকে খাওয়াই না নাকি??(পুলক)


- মা আমি ভেবেছিলাম থাকবো এখানে,,, কিন্তু তোমার ছেলে যা শুরু করেছে,,, আমি এ দই খাবোও না আর আমি এখানে থাকবোও না,,,চললাম আমি,,,(পেখম)


- পুলক কেন শুধু শুধু মেয়েটার পিছনে লাগছিস??( মনোরমা)


- এই তুমি অফিস থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে এখানে বসে ওর পিছনে লাগছো কেন?? যাও আগে চেঞ্জ করে এসো,,,পেখু তোর দাদার কথায় কিছু মনে করিস না,,চল তুই তোর ঘরে,,,আমি আর একটু দই নিয়ে যাচ্ছি,,, তারপর দুজনে মিলে অনেক গল্প করবো,,,যা তুই,,,( পেখম ওর দাভাইকে মুখ ভেংচি কেটে তীয়ার সাথে চলে যায়,,,)


- পেখু একটা কথা জিজ্ঞাসা করি??


- হমম হু একটা কেন বৌমনি তুমি হাজার টা করতে পারো,,,এত সুন্দর দই বানিয়েছো তার জন্য এটা তোমার জন্য ছাড়,,,বলো বলো,,


- বলছি দাদাভাই এর সাথে তোর সবকিছু ঠিকঠাক তো?? মানে আমি কি বোঝাতে চাইছি বুঝতে পারছিস তো??


-পেখম সবে মুখের মধ্যে এক চামচ দই পুরেছিল , বৌমনির এমন কথায় ও সেটাকে তক্ষনাৎ গিলে,একটু হেসে বলে কেন ঠিক থাকবে না বৌমনি,,, সব ঠিকঠাক,, একদম ফাস্ট ক্লাস,,,


- এই আমি তোর সাথে আড্ডা মারছি?? সিরিয়াস হয়ে উত্তর দে,,,


- হ‍্যাঁ বৌমনি সব ঠিকঠাক আছে,,,বিগড়ানোর মতো কি কিছু হয়েছিল নাকি?? উনি যথেষ্ট খেয়াল রাখেন আমার,,,,


- আর তোদের মধ্যে মানে স্বামী স্ত্রীর যে সম্পর্ক তৈরি হয় সেটা তৈরি হয়েছে তো পেখু?? দেখ কিছু লুকাবি না আমার থেকে,,, আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই যা তোর এই প্রশ্নটার উত্তরের উপর নির্ভর করছে,,,


- পেখম বুঝতে পারছে তার বৌমনি কি বলতে চাইছে,,,কিন্তু ও কোন মুখে বলবে যে ওদের মধ্যে এখনো স্বামী স্ত্রীর কোনো স্বাভাবিক সম্পর্কই তৈরি হয় নি,,,, ও চাইনা ওদের মধ‍্যেকার কথা তৃতীয় কোনো ব‍্যক্তি জানুক,,কিন্তু এখন আর কি করার বৌমনি কে ও মিথ্যে বলতে পারবে না আবার সত‍্যিটাও বলতে পারবে না,,,ও আমতা আমতা করে তীয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে নিজের নামের উচ্চারণ শুনে ও চমকে ওঠে,,, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ,আবির পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,,,, পেখম একটা ফাঁকা ঢোক গেলে,,,,


-আরে দাদাভাই তুই কখন এলি?? আয় ভেতরে আয়,,আমি তোর জন্য কফি আনছি,,,,(তীয়া)


- তার কোনো দরকার নেই তীয়া,, আমি এখানে থাকতে আসিনি,,, জাস্ট দুটো কথা বলতে এসেছি পাখির সাথে,,,( পাখির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বললো)


- তীয়া এতক্ষণে বুঝতে পারলো নিশ্চয় কিছু করেছে পেখম,,, যার জন্য ও দাদাভাই এত রেগে আছে,,,ওদের কথা বলার জন্য স্পেস দেওয়া দরকার,,, এইসব কথা ভেবে তীয়া বলে" ঠিক আছে তোরা কথা বল,,আমি আসছি,,,


- তীয়া চলে যেতেই আবির ভিতর দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়,,, তাই দেখে পেখম ভয়ে কয়েকটা ঢোক গেলে,,,জিভ দিয়ে ঠোঁট দিয়ে ভিজিয়ে তুতলিয়ে বলে,,


- আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন??


- কারণ এই ঘরে এখন যেটা হবে,,সেটা যেন কেউ দেখতে বা শুনতে না পাই তার জন্য,,,


- মা,,মা,মানে,নে,,,ইআআআপপনি কি বলছেন,,, কি বলছেন এ সব??( দইটা রেখে দাঁড়িয়ে পড়লো বিছানা ছেড়ে)


- কি বলছি,,,যেটা ফ‍্যাক্ট সেটাই বলছি,,,,(এগিয়ে যেতে যেতে)


- আপনি এএএ এই এইভাবে এগিয়ে আসছেন কেন???


- তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো তাই,,,,


- পেখম আর একটু পিছিয়ে বলে,,,ঠিক আছে আমি আর পিছিয়ে যাচ্ছি না ,,আপনি আর এগোবেন না প্লিজ,,,


- কেন এগোলে কি হবে??( পকেটে হাত রেখে একটা ভ্রু উচু করে পাখির দিয়ে তাকিয়ে কথা টা বলল আবির)


- কিছু না,,, তা আপনি এই বাড়িতে??


- পাখির এই প্রশ্নে আবির তার ভ্রু যুগল কুঁচকে তাকালো পাখির দিকে,,,আবিরের এই রকম দৃষ্টি দেখে পাখি বলে,,


 - না মানে আপনি আসতেই পারেন এ বাড়িতে,,,, কিন্তু হঠাৎ আমার কাছে কেন?? কি চাই??


- চাইতো আমার অনেক কিছুই,,, কিন্তু সেটা কদিনের জন্যে স্টোর করে রেখেছি, বাচ্চা মানুষ একটু বড়ো হোক,, then এই আবির চৌধুরী তাকে বুঝিয়ে দেবে সে কি জিনিস,,,( কথাটা একটু পাখির দিকে ঝুঁকেই বলল আবির,,,আর পাখি নিজের মুখটা একটু পিছিয়ে নিয়ে বললো)


- মানে?? কি বলছেন,,, আর কে বাচ্চা মানুষ?? আর কি স্টোর করে রেখেছেন??


- প্লিজ পাখি তোমার ওই ছোট মাথায় কিছু ঢুকবে না,,এমনিতে ওই ঘটে কিছু নেই,,, নাহলে এতদিন অনেক কিছুই বুঝে যেতে,,, by the way কার permission নিয়ে তুমি এই বাড়িতে এসেছো??


- আমার নিজের বাড়িতে আসতে গেলে এখন অনুমতি নিয়ে আসতে হবে নাকি,,,


- হ‍্যাঁ অবশ্যই তোমাকে অনুমতি নিয়েই আসতে হবে,,,


- আমি অত কারোর অনুমতি নিতে পারবো না,,, যদি আপনার এতে সমস্যা হয় তাহলে আমি আর ঐ বাড়িতে যাবো না,,,


- পেখমের এই কথায় আবিরের রাগ হলো,,,ও ধমকের সুরে বলে ওঠে" for your kind information মিস পাখি আপনি এখন লিগ‍্যালি মিসেস আবির চৌধুরী,, যার অর্থ হলো আপনি আর মিস পাখি সরকার নেই। আপনি এখন আমার ধরম স্ত্রী,,, সুতরাং আপনি যেখানে সেখানে নিজের ইচ্ছা মতো যেতে পারেন না,, আপনাকে আমার কাছে থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং সেটা  specially  আপনার ক্ষেত্রে  বাধ্যতামূলক got it,,


- আবিরের কথায় পেখম রেগে গিয়ে বলে" একদম আমার উপর অধিকার খাটাতে আসবেন না,, আমি এই বিয়ে মানি না,,, আপনার কোনো অধিকার নেই আমার উপর,,,,


- পেখমের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আবির এগিয়ে যায় পেখমের কাছে,,,এতটাই এগিয়ে যায় যে একে অপরের নিশ্বাস আঁছরে পড়ে চোখে মুখে,,,পেখু পিছাতে চেয়েও পিছাতে পারছে না কারণ দুটো বলিষ্ট হাত ওর কোমড়কে শক্ত করে ধরে রেখেছে,,,দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে ,,দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়,,,পরস্পরের অধরযুগল যখন ছুঁইছুঁই ঠিক তখনই আবির পাখিকে ছেড়ে একটু সরে গিয়ে দাঁড়ায়,,,, আবির সরে দাঁড়াতেই পেখম তার সম্বিত ফিরে পাই আর সাথে সাথে নিজের লজ্জা ঢাকতে আশেপাশে তাকায়,,,পেখমের এই রকম অবস্থা দেখে আবির একটু হেসে ওঠে,তারপর নিজেকে সামলে গম্ভীর ও ভারী পুরুষালী কন্ঠে বলে ওঠে,,,


- " সে কি জানে না এই পৃথিবীতে তার উপর যদি কারোর অধিকার থেকে থাকে তো সেটা হলো এই আবির চৌধুরীর,,, এমনকি তার নিজের থেকেও বেশি এই আবির চৌধুরীর বেশি অধিকার আছে তার উপর"


- আবিরের এই কথায় পেখম ওর দিকে কেমন ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে চেয়ে থাকে,,,তাই দেখে আবির বলে,,,


- আমি জানি আমি দেখতে হ‍্যান্ডসাম, তাই বলে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে নাকি?? এখন ঝটপট আমার সাথে চলো ও বাড়িতে,,,


- আবিরের প্রথম কথাতে পেখম মিইয়ে গেলে ,শেষের কথা শুনে বলে ওঠে" আমি কোথাও যাবো না এখন,,, আগামী পনেরো দিন আমি এই বাড়িতে থাকবো,,,"


- আচ্ছা তা হঠাৎ থাকার কারণ কি??


- আমার পরীক্ষা আছে,, আমাকে অনেক পড়তে হবে তাই,,,আর ও বাড়িতে আমার পড়ায় ঠিক মন বসে না,,,( পড়ায় মন বসবে কি করে,,সারাদিন আপনাকে দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে যায়,,আর আপনি না থাকলে অসস্তিতে মন ভার হয়ে থাকে তখন আর পড়তে ইচ্ছা করে না,কথাটা মনে মনে বলে)


- আচ্ছা পড়ার ব‍্যাপারটা আমি দেখে নেবো,,,এখন চলো,,,


- যাবো না,,,


- ঠিক আছে, তাহলে আমার আর কিছু করার নেই( কথাটা বলেই পাখিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়,,,আর পাখি চিৎকার করে বলে" কি করছেন কি আমি যাবো না,,,, আর সবাই আছে সামনে ,কোল থেকে নামান,,কেউ দেখলে কি ভাববে,,,)


- সরি পাখি আমি এখন তোমাকে নামাতে পারবো না,,, একেবারে আমার ঘরে গিয়েই নামবে তুমি,,,


- ওদের দুজনকে এইভাবে দেখে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে যায়,,, মনোরমা বলে" কি হয়েছে আবির ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস??


- মামনি বাড়ি যাচ্ছি,,, তোমার মেয়ে আমার উপর রাগ করে চলে এসেছে,,,,তাই জোড় করে কোলে তুলে নিয়ে যাচ্ছি( পেখম তো ওই ভাবেই হাত-পা ছোটাচ্ছে)


- ও মা আমি ও বাড়িতে যাবো না,,, আমি এখানেই থাকবো,,,( পেখম)


- একদম না,,,যদি এমনি আসতিস তাহলে বারণ করতাম না,, কিন্তু তুই আমার ছেলের উপর রাগ করে এই বাড়িতে এসেছিস,,, একদম থাকা হবে না,,, আবির তুই ওকে নিয়ে যা,,,,( মনোরমা)


- thank you মামনি,,,তীয়া তুই একটু পরে ওর সব বই গুলো পাঠিয়ে দিস,,,(আবির)


- ও মা তুমি এটা বলতে পারলে,,,আমি যাবো না ,(বলেই আরো জোড়ে জোড়ে হাত পা ছোটাছুটি করে),(পেখম)


- একদম চুপ,,,,,,মামনি তোমার এই মেয়ে ভীষণ ঘ‍্যাড়তাড়া,,,,আসছি আমি,,,(আবির)


- মনোরমা ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বলল" সাবধানে যা,,,আর পেখু যদি তোর কথা না শোনে তো ওর বাবাকে ফোন করে দিবি,,,বেয়াদব মেয়ে,,,


চলবে,,,


নেক্সট পর্ব লিংক👇

https://wwp.ailony.com/redirect-zone/e7dc6d73


গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২৩

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২৩


- পেখম কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা ড্রেসিং টেবিলের দিকে গেল,,,আপন মনে সব গয়না গুলো খুলতে লাগলো,,এইসব পড়ার অভ‍্যাস নেই বলে ওর একটু অসস্তি হচ্ছে। হঠাৎ দেখে ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে আবির ওয়াশরুমে চলে গেছে,,ও গয়না খোলা বাদ দিয়ে ওয়াশরুমের দরজার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো,,,


- আশ্চর্য, লোক টা কি আমাকে মানুষ বলে মনে করে না, দেখছে যে আমি কাজ করছি,,আর অমনি সে আলো নিভিয়ে দিল,,কথা গুলো বলে পেখম সারা ঘরে চোখ বুলালো,,না একেবারে অন্ধকার হয়ে যায় নি ঘরটা বরং আলো নিভিয়ে দেওয়ার ফলে ঘরটাকে মায়াপুরী লাগছে নীল মরিচ আলোয় আর ছোট ছোট মোমবাতির আলোয়। সারা ঘরময় জুড়ে শুধু গোলাপ আর বেলী ফুলের ঘ্রাণ বিরাজমান,,, 


-এমন সময় ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ শুনে পেখম আবার আয়নার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের কাজ গুলো একমনে করতে থাকে। হঠাৎ করেই পিঠের কাছে হাতের ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে আয়নায় তাকালো ,আর দেখলো আবির দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে শীতল চাহনিতে,,,ও সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে চোখ নামিয়ে নিলো,,আয়নার সামনে থেকে সরে যেতে চাইলে পারলো না একজোড়া শক্ত বাহুবন্ধনের থেকে যা তার কোমড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে,,, ও আয়না দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে আবিরের দিকে তাকালো,আর তখন দেখলো আবির মৃদু হাসি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,,, তারপর কোমড় থেকে হাত সরিয়ে পিঠে হাত দিলো যেখানে নেকলেসের দড়ি আর ব্লাউজের দড়ি জড়িয়ে আছে,,,, আবিরের এইভাবে হঠাৎ হঠাৎ স্পর্শ পেয়ে পেখমের শিরদাঁড়া দিয়ে রক্তের শীতল স্রোত বেয়ে যায়,,তক্ষনাৎ পেখম হাত দিয়ে শাড়ি খামচে ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে,,, পেখমের প্রত‍্যেকটা মুভমেন্ট আবিরের চোখ এড়িয়ে যায় না,,,ও একটু এগিয়ে এলো পেখমের কাছে তারপর নেকলেস টা খুলে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দিলো। পেখম এতক্ষণ নিচের দিকেই দৃষ্টি নামিয়ে রেখেছিল হঠাৎ পিঠে কারোর গরম নিশ্বাসের স্পর্শ ও কানে আঙ্গুলের স্পর্শ পেয়ে চোখ তুলে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে আবির ওর দিকে ঝুঁকে ঝুমকো জোড়া আলতো করে খুলছে,,,, বাইরে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে ব‍্যালকনির লম্বা সাদা সাদা পর্দা গুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে,,,ঘরের ভেতরে বেলী ফুলের সুবাস ও নীল মরিচ আলোয় নিজের প্রেমিক পুরুষকে আরও আকর্ষণীয় লাগছে পেখমের কাছে,, নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে ওর কাছে তাই খুবই দ্রুত গতিতে চোখ বন্ধ করে নিলো,,,


-আবির ঝুমকো জোড়া খুলে খুবই সন্তপর্ণে তা রেখে দিলো টেবিলের উপর। এরপর আয়নায় নিজের প্রেয়সীর লজ্জা মিশ্রিত মুখটা দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি ও,,,পেখমের চুলে মুখ গুজে দিয়ে কিছুক্ষণ ওইভাবে থেকে ঘ্রাণ নিলো,,তারপর চুলগুলো পরম আবেশে ঘাড়ের একপাশে সরিয়ে দিয়ে ব্লাউজের ফিতেটা টান মেরে খুলে ফেলে,,,পেখম তক্ষনাৎ কেঁপে ওঠে,,, সারা শরীর যেন শিহরিত হয়ে উঠলো,,,,নিজেকে খুব করে চাইলো সামলাতে, কিন্তু পারলো না,,, খামচে ধরলো নিজের হাত,,,,ব্লাউজের ফিতে খুলে ফেলায় উন্মুক্ত হয়ে গেল পেখমের পিঠ,, আর সেই উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া পিঠে আবির নিজের অধরযুগল ছোঁয়ালো,,,সেই ছোঁয়া পেয়ে পেখম সাথে সাথেই চোখ খুলে তাকায়,,, নিজেকে এই অনুভূতি থেকে সামলে আবিরের কাছে থেকে সরে আসে ও,,,এমন মুহূর্তে পেখমের এইভাবে সরে যাওয়া আবির ঠিক হজম করতে পারলো না,,, প্রশ্নাত্মক চোখে তাকায় পেখমের দিকে,,,,,


- পেখম সরে এসেও হাঁফাতে থাকে,,,নিজেকে ধাতস্থ করার জন্য সেন্টার টেবিলের উপরে থাকা কাঁচের গ্লাসের জল টা প্রায় এক নিশ্বাসে শেষ করে ফেলল,,তারপর কিছুক্ষণ সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে নিলো,,আর সাথে সাথেই ভেসে উঠলো সেইদিনের সেই দুর্বিসহ কিছু ঘটনা,, কিছু তেঁতো সত‍্যি,,,, ও চোখ খুলে আবিরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখে, আবির এখনো ওর দিকেই তাকিয়ে আছে,,,পেখম কিছু না বলে সোফার দিকে যেতে নিলেই পিছন থেকে হেঁচকা টানে ও সোজা গিয়ে পড়ে আবিরের বুকে,,,,আবির পেখমের চুল গুলো কানের লতিতে গুজে দিয়ে জিজ্ঞাসা করে" পাখি কোথায় যাচ্ছিলে"??


-আবিরের প্রশ্নে কোনো উত্তর দেয় না পেখম,,, উল্টে আবিরের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এনে পাল্টা প্রশ্ন করে"কোন অধিকারে আপনি আমাকে স্পর্শ করেছেন?? আপনি জানেন না আপনার স্পর্শকে আমি ঘৃণা করি"??


-আবির জানতো তার প্রেয়সী তার উপরে রেগে আছে,,,আর ও এটাও জানতো ও ঠিক মানিয়ে নেবে তার প্রেয়সীকে,, কিন্তু পেখমের মুখে এমন কথা শুনে ও ব‍্যথিত হয়,,,নিজেকে সামলে বলে" প্রথমত আমরা স্বামী স্ত্রী পাখি,,,তাই তোমার উপরে যদি কারোর সবথেকে বেশি অধিকার থাকে তো সেটা হলাম আমি,,,তাই বলতেই পারো স্বামীর অধিকারে তোমাকে আমি স্পর্শ করেছি,,, আর তুমি কি বললে?? আবার বলো,,,আমার স্পর্শকে তুমি ঘৃণা করো??


- হ‍্যাঁ আর কত বার বলবো,,,শুধু আপনার স্পর্শ কেন আমি আপনাকেও ঘৃণা করি,,, আমি চাইনি আপনার এই মুখটা আর দেখতে বিশ্বাস করুন,, কিন্তু ভাগ্যের কি নিয়তি দেখুন সেই আপনি আজ আমার স্বামী,,,


- তার জন্য কি তুমি আফসোস করছো??( গম্ভীর হয়ে)


- আশ্চর্য তো,,,আমি আফসোস করবো কেন?? আফসোস তো করছেন আপনি,,, আপনার আর জীবনটাকে উপভোগ করা হলো না,,, তবে আপনি চিন্তা করবেন না ,আমি আপনার জীবনে বেশি দিনের জন্য থাকবো না,,,, আর হ‍্যাঁ সত্যি বলতে কি আমাকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ আপনাকে,,, তা না হলে হয়তো আমাকে  মরতে হতো,,,এতে অবশ্য আপনারই লাভ হতো অযথা সবাইকে দেখানোর জন্য আমাকে তো আর বিয়ে করতে হতো না আপনার,,,


- এবার আর আবির নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি খুব জোড়েই পাখি বলে চিৎকার করে উঠলো,,,


- উফ আস্তে চিৎকার করুন বাড়িতে এখনো লোকজন আছে,,,আমি তো ভুল কিছু বলিনি,,,তবে আপনার ক্ষমতা আছে,,কি সুন্দর অভিনয় করেন আপনি,,,বিশ্বাস করুন আমি যদি আপনার আসল সত‍্যিটা না জানতাম তাহলে হয়তো আমিও ধরতে পারতাম না আর সবার মতো,,, by the way এখন তো এখানে কেউ নেই ,,সুতরাং এখন আর আপনাকে অভিনয় করতে হবে না,,,


- এসব তুমি কি উল্টো পাল্টা বলছো পাখি,,(,নরম স্বরে)


- আমি জানি না আপনার কাছে কোন গুলো উল্টো পাল্টা কথা মনে হচ্ছে,, তবে আমি আপনাকে এটা বলতে পারি যে আমি কারোর কাছে মোহ বা আকর্ষণের বস্তু হিসাবে থাকতে চাই না,,,,


- আবির বুঝতে পারলো সেদিনের কথায় পাখি বেশ গুরুতর ভাবেই আঘাত পেয়েছে তাই ও পাখিকে নিজের কাছে টেনে আনলো,, তারপর নরম স্বরে বলল" ও গুলো সব মিথ‍্যে পাখি,,,আমি তোমাকে সত‍্যিই ভা,,,


- আবিরের কথা শেষ করতে না দিয়ে পেখম বলে" দয়া করে আর অভিনয় আমার সামনে অন্তত করবেন না,,, আর এইভাবে আমাকে যখন তখন ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না,,, আজ আমি আপনার ছোঁয়া আর রিকের ছোঁয়ার মধ্যে কোনো তফাৎ পাচ্ছি না,,, দুজনের ছোঁয়ায় কেমন লালশা মিশে আছে,,,


- পাখি তোমার মনে হয় না তুমি এবার একটু বেশি বেশি বলছো,, আমার ছোঁয়ায় লালশা মিশে আছে??( দাঁতে দাঁত চেপে)


- আমার তো তাই মনে হয়,,, অবশ্য আপনার এখন অধিকার আছে আমার উপর,,, কতদিনের মোহের বস্তু আমি আপনার,,, এখন সামনে আছি নিজেকে কিভাবে আর সামলে রাখবেন,,, নিন নিজের কার্যসিদ্ধি করুন এতদিন তো এটার অপেক্ষায় ছিলেন (বলেই পেখম নিজের শাড়ির আঁচল নামিয়ে ফেলে,,উন্মুক্ত করে দেয় নিজের শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গ)


- তাই দেখে আবির পাখি বলে চিৎকার করে হাত তোলে পাখির দিকে,,, মুহূর্তেই রোমাঞ্চকর পরিবেশ পরিণত হয় ক্রোধান্বিত,,,, আবির নিজের রাগকে সামলানোর জন্যে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে,,,তারপর হাত নামিয়ে পেখমের শাড়ির আঁচল যথাস্থানে তুলে দেয়,,,,খুবই শান্ত স্বরে বলে ওঠে" পাখি তুমি আমাকে ভুল ভাবছো,,,তোমাকে আমার অনেক কথা বলার আছে,,,


-পেখমের কানে তখন আবিরের কোনো কথায় যাচ্ছে না,, ওর চোখের সামনে শুধু এইমাত্র ঘটে যাওয়া দৃশ্য টাই ভেসে উঠছে,,,হঠাৎ আবিরের কথার মধ্যে পেখম বলে ওঠে" হাতটা নামিয়ে নিলেন কেন?? মারুন আমায়,,আপনার এই রূপটাও আমার দেখা বাকি ছিল, সেটাও দেখা হয়ে যেত। আর আমি আপনার কোনো কথায় শুনবো না,,আবার কোনো মিথ‍্যে বলবেন আমাকে,,,আবার হয়তো অভিনয় করবেন আমার সাথে,,,


- পাখি আমি খুব সরি,,তখন তোমার কথা গুলো শুনে নিজের উপর থেকে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছিলাম,,, সরি,,প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না,,,আমার কথা গুলো শোনো,,(পাখিকে নিজের কাছে এনে হাত দুটো ধরে আবির কথা গুলো বলে,,)


- আবিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পেখম বলে "ছোঁবেন না  আপনি আমাকে,,, আর কতবার বলবো আমি আপনার কোনো কথা শুনবো না,,প্লিজ আমাকে  ছেড়ে দিন,, আমি একটু একা থাকতে চাই,,, আর হয়তো আমি আপনাকে ডিভোর্স দিতে পারবো না বাড়ির লোকদের জন্যে,, কিন্তু আপনি চিন্তা করবেন না আমি এখানেও থাকবো না,,, চলে যাবো,,,কারণ আমি কারোর মোহ বা আকর্ষণের বস্তু হিসেবে থাকতে চাই না,,,,( কথা গুলো বলেই আবিরের থেকে বেশ দূরে চলে এল,,)


-আবির শুধু ফ‍্যাল ফ‍্যাল দৃষ্টিতে তার প্রেয়সীকে দেখছে,,,দেখছে তার কাজ কারবার,,,, ও মনে মনে মেনে নেয় এটা হয়তো ওর প্রাপ্য ছিল,,, নিজেকে সামলে গম্ভীর হয়ে অথচ শান্ত স্বরে পেখমের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,,


-" সে যদি আমার কথা শুনতে না চাই ,তাহলে থাক নাই বা বললাম আমার সেই কষ্টকর মুহূর্তের কথা,,কিন্তু তাকে আমি এটা জানিয়ে রাখছি সে নিজে থেকে আমার কাছে না আসলে আমি তার কাছে কোনোদিন যাবো না,,, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস একদিন সে আসবে ,,নিজের কাছে টেনে নেবে আমাকে,, আর আমি সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করে থাকবো,,,তবে তাকে শুধু এইটুকুই বলবো সে যেন বেশি দেরি না করে ফেলে"


- কথা গুলো বলেই আবির ব‍্যালকনির দিকে চলে যায়,,, আর পেখম বসে পড়ে ওখানেই,,


- আমি তো এমন কিছুই চাইনি ,,,আমি তো শুধু মাত্র উনার ভালোবাসা টুকু চেয়েছিলাম তোমার কাছে ভগবান,,, তবে কেন এত কষ্ট সহ‍্য করতে হচ্ছে আমাকে,,, কেন বিশ্বাস করতে পারছি না আমি তাকে,,,কথা গুলো বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো পেখম,,,,

_______________________________________


- আজ নিকোটিনের ধোঁয়াও আবিরের কষ্টটাকে কমাতে পারছে না,,, হ‍্যাঁ ও মানছে সেইদিন ও পেখমের সাথে খারাপ ব‍্যবহার করেছিল,, কিন্তু সেটা তো তখনকার পরিস্থিতির জন্য,,, আর তারও একটা কারণ ছিল,,, কিন্তু পাখি তো এখন কোনো কিছু শুনতেই নারাজ,,,,আর কি করে অতো কঠিন কঠিন কথা গুলো বলতে পারলো আবিরকে ও,,,না আজকে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,,, হয়তো সেদিন এমনই কষ্ট পেয়েছিল পাখি।


-প্রায় ভোররাতে আবির ব‍্যালকনি থেকে ঘরে আসে,,তারপর ব‍্যালকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে পর্দা গুলো টেনে দেয়,,,,ওয়াশরুমে গিয়ে ভালো করে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে, মুখ মুছে বেরিয়ে আসে ও,,,ঘরের পরিবেশ দেখে বুকে চিনচিন ব‍্যাথা অনুভব করে আবির,,,আজ যদি সব ঠিক থাকতো তবে এই রাতটা অন‍্যরকম হতো,,,যার সাক্ষী থাকতো আকাশের ঐ অর্ধচাঁদ,,,,কিন্তু না সব মুহুর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গেল কিছু ভুলের জন্য,,, এইসব কথা গুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আবির। তারপর বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে পেখম ওখানে নেই বরং সোফায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে,,,আবির একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে পেখমকে সোফা থেকে তুলে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়,,,তারপর দেখে পেখমের কপালে, ঘাড়ে মৃদু মৃদু ঘাম জমেছে,,, ও এসির রিমোর্ট নিয়ে সেটা অন করে দেয়,তারপর একটা চাদর পেখমের গায়ের উপর দিয়ে দেয়। ঘুমন্ত পেখমকে দেখে আবির বলে,,,


-" একদিন তুমি বুঝবে ঠিক আমায়,,,ভালোবাসবে ঠিক আমায়,,,তোমার ভালোবাসার আদরে ভরিয়ে দেবে ঠিক আমায়,,,আমি অপেক্ষা করবো সেই সময়ের রাত- প্রেয়সী"


- কথা গুলো বলে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে,,,আর সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে আবির,,,ক্লান্ত শরীর যখন একটু আরাম পাই তখন তন্দ্রা এমনিতেই ধরা দেয়,,,,


চলবে,,,,



গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২২

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২২


- বৌভাতের দিন সবাই ব‍্যস্ত সকাল বেলা,,, এত কম সময়ে সব আয়োজন করা চারটি খানি কথা না,,বাড়িতে লোকজন ভর্তি,,, আবিরদের ব্লিডিং এর টেরিসে সব আয়োজন করা হয়েছে,,, ভাত-কাপড়ের নিয়ম পালনের জন্য অনুপমা ড্রয়িংরুমে আবির ও পেখমকে যেতে বলেছে আধাঘণ্টার মধ্যে,,, একটু আগে এসেই তীয়া সবকিছু দিয়ে গেছে যেই গুলো পেখম পড়বে,,,প্রিয়ার সাহায্যে ও প্রায় রেডি হয়ে গেছে,,,


- পেখু তুই তাহলে সিঁদুর টা পড়ে নে ,আমি বৌমনিকে বলে আসি যে তুই রেডি হয়ে গেছিস,,,(প্রিয়া)


-ঠিক আছে তুই যা,,,প্রিয়া চলে যাওয়ার পর পেখম ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়নের শাড়ি আর গয়না গুলো ঠিক করে। চুলটা ভালো করে খোঁপা করে  তারপর সিঁদুর পড়ে,,,আর তখনই দরজা খোলার আওয়াজে আয়না দিয়ে তাকিয়ে দেখে পিছনে আবির দাঁড়িয়ে আছে,,, আর ওর দিকে কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে,,,,আবিরের এই ভাবে তাকানো দেখে পেখমের কেমন অসস্তি হতে লাগলো,,,


- আবির নিজের ওয়ালেট টা নিতেই ঘরে এসেছিল, কিন্তু সামনে ওর পাখিকে দেখে এক মিনিটের জন‍্যেও থমকে গিয়েছিল ও,,, পেখমকে এই সময় কোনো অপ্সরার থেকে কম সুন্দরী লাগছে না,,,গোলাপি রঙের জামদানি শাড়ি পড়েছে আর তার সাথে হালকা কিছু সোনার গয়না,,, চোখে গাঢ় কাজল,,,কপালে লাল টিপ,,অধরযুগলে বেবি পিঙ্ক লিপস্টিক আর সিঁথিতে চওড়া করে সিঁদুর পড়া,,,আবিরের নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে,,,,,ও কোনো রকমে নিজেকে সামলে আলমারির সামনে যায়,, তারপর ওয়ালেট টা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,,পেখম আবিরের যাওয়ার দিকে একটানা তাকিয়ে থাকে। সত‍্যিই ও এই মানুষটাকে ঠিক চিনতে পারে না,,, বিয়ের দিন থেকে আবিরের সাথে পেখমের তেমন কোনো কথাও হয়নি,,,নাহলে ও বুঝতে পারতো যে এই মানুষটা কি চাইছে,,,,

_________________________________________


- আবির এই ভাত-কাপড়ের থালাটা পেখমের হাতে দিয়ে বল আজ থেকে তোমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব আমি নিলাম,,,( অনুপমা)


- কি রে আবির বল( ওর বন্ধুরা সবাই মিলে একসাথে বলে ওঠে)


- আবির অনুপমার হাত থেকে ভাত-কাপড়ের থালাটা নিয়ে পেখমের হাতে দিয়ে বলে,,,


-"আজ থেকে তার শুধু ভাত কাপড় নয়,,তার সারা জীবনের যাবতীয় সব কিছুর দায়িত্ব আমি নিলাম। একফোঁটা কষ্ট যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে তার দায়িত্ব আমি নিলাম। পৃথিবীর সবচেয়ে খুশির মুহুর্ত গুলো আমি তাকে এনে দেবো তার দায়িত্ব আমি নিলাম। তার চোখের জল মোছার দায়িত্ব আমি নিলাম তেমন তার ওই ঠোঁটে হাসি লেগে থাকার দায়িত্বও আমি নিলাম"।


- আবিরের কথা বলা শেষ হলে চারপাশে যেন কেমন স্তব্দ মেরে যায় সবাই। আবিরের সব বন্ধুরা জানতো যে আবির একজনকে ভালোবাসে, সেই কৌশর কাল থেকেই,কিন্তু সেই মেয়েটি কে তারা তা জানতো না এমনকি আবির ওদের সামনে কখনো তার নাম নিতো না,,,শুধু সে ,বা তার ,বা প্রেয়সী ,কখনো কখনো প্রিয়তমা এইসব বলেই সম্বোধন করতো,,,আজ আবিরের বলা কথা গুলো শুনে ওরা একদম নিশ্চিত হয়ে গেল যে সেই মেয়েটা আর কেউ নয় বরং তাদের বন্ধু পুলককের বোন পেখম। মুহূর্তেই সব বন্ধুরা একসাথে চেঁচিয়ে ওঠে,,,আর আবিরকে কোলে তুলে নেয়,,পেখম তো ওদের এমন কান্ডে লজ্জা পেয়ে যায়।আর সবথেকে বেশি অবাক হয়ে যায় আবিরের কথা শুনে,, ওর এখন মনে হচ্ছে এই আবিরকেই ও চিনতো,,,কিন্তু একটা ঝড় এসে সব কিছু উলোট পালট করে দিয়ে গেল,,,,

_______________________________________


- parlour মেয়ে গুলো এসে পেখমকে আজ সাজিয়ে দিয়ে গেছে,,, পেখম বারণ করলে তারা বলে আজকে তারা আবির স‍্যারের interaction অনুযায়ী সাজাবে পেখমকে,,, এবং এটা তার অর্ডার,,, সেই কথা শুনে পেখম আর কিছু বলার সাহস পায়নি,,,


- পেখমকে আজ লাল আর গোল্ডেন কালারের কম্বিনেশনের শাড়ি পড়ানো হয়েছে,তার সাথে হাতা লম্বা নেটের ব্লাউজ,,মাঝ খানে সিঁথি কেটে চওড়া করে সিঁদুর পড়ানো হয়েছে আর তার উপরে সোনার টিকলি পড়ানো হয়েছে। হাতে শাখা পলার সাথে যোগ হয়েছে সোনার কঙ্কোন,বালা,চুড়,চুড়ি,,,পায়ে তাদের সাথে মিলিয়ে গোল্ডেনের উপর স্টোন বসানো নুপূর। চুল গুলো বড়ো করে স্টাইলে খোঁপা করা আর তার উপরে গোলাপ দেওয়া,, আর তাদেরকে ঘিরে আছে বেলী ফুলের শুভ্র মালা। কানে বড়ো বড়ো একজোড়া ঝুমকো,,, পায়ে আলতার সাথে হাতেও আলতা দেওয়া হয়েছে তার সাথে ম‍্যাচিং করে রূপোর আঙোট আর আংটি পড়ানো হয়েছে,,অধরযুগলে লাল লিপস্টিক,,,চোখে গাঢ় করে কাজল দেওয়া আর তার সাথে টেনে আইলাইনার পড়ানো হয়েছে,,কপালে লাল টিপ পড়ানো হয়েছে আর টিপের মাঝখানে একটা স্টোন বসানো,,,এক কথা জমিদার বাড়ির গিন্নী লাগছে,,,,


- আর এইদিকে আবির ঘিয়ে ও লাল রঙের কম্বিনেশনে একটা  পাঞ্জাবী পড়েছে,,তার সাথে লাল ধুতি,,,চোখে নিউ স্টাইলের হোয়াইট গ্লাসেস পড়া,,হাতে গোল্ডেন কালারের হ‍্যান্ডওয়াচ পড়েছে,,,তার সাথে ম‍্যাচিং করে জুতো পড়েছে। চুল গুলো জেল দিয়ে স্টাইলে উল্টানো আছে,,,এক কথায় আজকে আবিরকে যে দেখবে সে ক্রাশ খাবে,,

____________________________________________


- রিসেপশনের জায়গায় প্রায় সব গেস্টরা চলে এসেছে,,,সবাই এখন পেখমের জন্যে অপেক্ষা করছে,,,আবিরের অফিসের কলিগ,,,অশোক বাবুর বন্ধুরা সবাই চলে এসেছে,, আবির যখন ওর অফিস কলিগদের সাথে কথা বলায় ব‍্যস্ত ঠিক তখনই কেউ বলে ওঠে ওই তো অশোক বাবুর বৌমাকে অনুপমা বৌদি আনছেন,, তাদের কথা শুনে আবির সামনে তাকাই,,কিছুক্ষণের জন্য ও পুরো ব্ল‍্যাঙ্ক হয়ে গেছে,,, ওর মনে হচ্ছে হৃদয়ে খুবই দ্রুত গতিতে হৃদস্পন্দন হচ্ছে,,ও বুকে হাত দিয়ে বলে,,


" আজ বোধহয় প্রেয়সীর রূপের ছটায় এই প্রেমিক হৃদয়ের হৃদস্পন্দন থেমে যাবে" ।


- ও এতদিন যেভাবে পাখিকে বধূ বেশে কল্পনা করে এসেছে আজ ঠিক সেভাবেই সাজাতে বলেছিল parlour মেয়ে গুলোকে,,,কিন্তু ও যা কল্পনা করেছে তার থেকেও হাজার গুণ বেশি অপরুপ লাগছে ওর প্রেয়সীকে।


- অশোক বাবু, অনুপমা দুজনে মিলে সবার সাথে পেখমের পরিচয় করিয়ে দেয়,,,কিছুক্ষণ পর পেখমের বাড়ির লোকেরাও চলে আসে আর তার সাথেই আবির ও পেখমের বন্ধুদেরো আগমন ঘটে সেখানে,,, সবাই আড্ডা মারছে, কথা বলছে,,কিন্তু এত কিছুর মধ‍্যেও পেখমের অশান্ত চোখজোড়া সেই সুপুরুষ কে দেখার জন্য ছটফট করছে,,, এখানে আসার পর থেকে একবারের জন্যও পেখমের চোখে পড়েনি আবির,,,হঠাৎ সেই চোখজোড়া কে শান্ত করতে আগমন ঘটে আবিরের,,,পেখম দেখে পুলকের সাথে কথা বলতে বলতে আবির ওর দিকেই আসছে,,,পেখমের আজ সত‍্যিই মনে হচ্ছে আবিরই হল ওর স্বপ্নের পুরুষ যা ধরা ছোঁয়ার বাইরে,,,


- সবাই সবার সাথে কথা বলছে,,,গান করছে আড্ডা মারছে,,,কিন্তু এই সবের থেকেও সব থেকে বড়ো বিষয় হল এখানে একজন আরেকজনকে আড়ালে লুকিয়ে দেখে চলেছে,,, আজ দুজন মানব-মানবীর চোখজোড়া বড্ড বেহায়া হয়েছিল,,, তাদের মনের মানুষকে দেখেও যেন তৃপ্তি মিটছে না,,,এমন সময় কুশল বলে ওঠে আবিরকে গান গাইতে,, আর মৈনাক তো গিটার নিয়ে রেডি,,আবির গান গাইতে রাজী হলেই গিটার টা দেবে,,,আবির রাজী হয়ে যায় এবং গিটার হাতে নিয়ে তাতে টুং টাং সুর তুলে গান গেয়ে ওঠে-

    Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar

    Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar

   Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar

   Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar

   Chhaya Hai Nasha Meri Aankho Par

   Chhaya Hai Nasha Meri Aankho Par

   Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar

  Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar

  Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar


Mere Dil Mein Hai Arma Kai Kai

Meri Chahat Hai Abhi Nayi Nayi

Mere Dil Mein Hai Arma Kai Kai

Meri Chahat Hai Abhi Nayi Nayi

Reh Jaye Na Pyasa Pyar Mera

Meri Baahon Mein Bhar De Yaar Mera

Itana Sa Karam Tu Kar Mujh Par

Itana Sa Karam Tu Kar Mujh Par

Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar

Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar

Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar


Abhi Labo Ko Labo Ne Chhua Nahi

Arma Koi Pura Hua Nahi

Abhi Labo Ko Labo Ne Chhua Nahi

Arma Koi Pura Hua Nahi

Abhi Aash Ka Gulshan Khilana Hai

Abhi Do Jismo Ko Milna Hai

Dekhuga Abhi Main Wo Manjar

Dekhuga Abhi Main Wo Manjar

Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar

Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar

Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar

Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar

Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar

Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar

Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar

Aaya Hai Nazar, Aaya Hai Nazar,


-পুরো গানটাই আবির পাখির দিকে তাকিয়ে গেয়েছে,, গান শেষ হতেই সবাই একসাথে হাত তালি দিয়ে ওঠে,আর সেই শব্দেই পেখমের ঘোর কাটে,কেননা এতক্ষণ ও নিজেও আবিরের দিকে একটানা তাকিয়ে ছিল।

____________________________________________


- রিসেপশন শেষ হলেই যে যার মতো চলে গেছে,,, তীয়া আর পুলক শুধু থেকে গেছে অনুপমার কথাতে।অনুপমার কথা মতোই পেখমকে ওই ভারী সাজ থেকে মুক্তি দিয়ে একটা হালকা পাতলা নীল রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে,,, আর তার সাথে হালকা গয়না পড়ানো হয়েছে,,,


- আবিরের পিসি ,মা আর তীয়া এখন আবিরের ঘরে আছে,,,কি নিয়ম আছে সেই গুলো পালন করানোর জন্য,,, প্রিয়া আর রুশা পেখমকে আবিরের ঘরে নিয়ে আসলো,,,পেখম তো ঘরে এসে পুরোই আবাক হয়ে গেছে,, কারণ সারা ঘর বেলী ফুল আর গোলাপ দিয়ে সাজানো,,, আর তার সাথে নীল রঙের মরিচ আলো জ্বলছে,,,সেন্টার টেবিলের উপর একটা কাঁচের ট্রে মতো জলের পাত্র আছে , যেটাতে গোলাপের পাপড়ি ভাসছে আর তার সাথে রয়েছে ছোট ছোট মোমবাতি,,,


- বৌদি পছন্দ হয়েছে ঘর সাজানো?? এইসব কিন্তু আবিরের কথা মতোই সাজানো হয়েছে,,,(মৈনাক)


- পেখম লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে,, ও কিছু না বলে শুধু মাথা নেড়ে হ‍্যাঁ বলে।


- কি রে আবিরকে নিয়ে আয় তোরা,,কত রাত হয়েছে দেখেছিস,,,ওরা তো একটু বিশ্রাম নেবে,,(পিসি)


- আরে এই তো এসে গেছি বরকে নিয়ে,,, এতক্ষণ ধরে বলে বলে তাই কুড়ি হাজার টাকা হাতিয়েছি,,নাহলে বেচারাকে আজকে বাইরেই রাত কাটাতে হতো ,,,কথাটা বলেই হেসে ফেলল কুশল আর তার সাথে তাল মেলালো সবাই।।


- আচ্ছা অনেক হয়েছে,,, পেখম ওই পাত্রে নারকেলের জল আছে,,ওতে তোর চুলের শেষ প্রান্ত ভালো করে ডোবা,,তারপর ওটা দিয়ে আবিরের পা মুছিয়ে দে,,তারপর প্রণাম করবি আবিরকে,,(অনুপমা)


- অনুপমার কথা শুনে আবির বলে ওঠে" এই গুলো কি নিয়ম মা?? এই সব নিয়ম ওকে মানতে হবে না"


- আবির চুপ কর,,এই গুলো মানতে হয়,,আমি মেনেছি, এখন পেখম মানছে পরে তোর ছেলের বৌও মানবে,,,পেখম তুই করতো,,,(অনুপমা)


- পেখম অনুপমার কথা মতো সব কিছু করে,,,তারপর তীয়া বলে" পেখু এটাতে উষ্ণ গরম দুধ আছে, আর মিষ্টি আছে,,তোরা দুজন দুজনকে খাইয়ে দিবি,,,তারপর দাভাই কে এই পানটা দিবি,,,"


- এই পান আর দুধ ওরা ঘুমানোর আগে খাবে,,,বৌমা তুমি এখন আবিরকে মিষ্টি খাইয়ে দাও আর আবির তুইও বৌমাকে মিষ্টি খাওয়া। পিসির কথা মতো ওরা একেঅপরকে মিষ্টি খাওয়ালো,,আর তার সাথে ওদের চোখজোড়া আবার এক হলো,,,চাইলেও কেউ নামিয়ে নিতে পারলো না দৃষ্টি,,,,


- ভাই আর কত বার শুভদৃষ্টি করবি??( ইশান কথাটা বলতেই  ঘরে হাসির রোল পড়ে গেল,,এদের কথা শুনে অনুপমা ,পিসি ওরা বেরিয়ে গেল লজ্জায়,,, সত‍্যি এখনকার ছেলেদের মুখে কোনো লাগাম নেই,,,গুরুজনের সামনে এমন কথা কেউ বলে,,,পেখমের তো ইচ্ছে করছে মাটির নীচে চলে যেতে,,, 


-একে একে সবাই কথা বলে ঘর থেকে চলে গেলে আবির দরজা বন্ধ করে দেয়,, পেখম তখন পিছন দিকে ফিরে ছিল,,, আবিরের দরজা বন্ধ করার শব্দে চমকে ওঠে ও,,, বুকের মধ্যে শুরু হয় তোলপাড়। লজ্জারা ভির করে এসে জমা হয় ওর চোখে মুখে। আজ থেকে ও এই মানুষটার সাথেই একঘরে,এক বিছানায় থাকবে এটা ভাবতেই শরীরটা কেমন শিহরিত হয়ে উঠলো,,,আজ থেকে সামনের মানুষটিকে সে নিজের বলতে পারবে,,,সত‍্যিই কি এই মানুষটি তার নিজের?? একান্তই কি তার?? নাকি সব মিথ্যে সব ছলনা??


চলবে,,,,



গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২১

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২১


- সকাল বেলা থেকেই সবার কাজের চাপ বেড়েছে,,একটু পরেই পেখমকে নিয়ে চলে যাবে আবির,,,মনোরমা মেয়ে- জামাইকে আশীর্বাদ করার জন্য সব ব‍্যবস্থা ড্রয়িংরুমে করতে বলেছে তীয়াকে।

আবিরের কথায় ডাক্তার সকালে এসে আর একবার চেকআপ করে গেছে পেখমকে,,,পেখম এখনো ট্রমা থেকে বেরোতে পারিনি,,,, থেকে থেকে কেঁদেই চলেছে,,, হাতে ,ঘাড়ের এবং ঠোঁটের কোনে দাগ গুলো যতবার দেখছে ততবারই ডুকরে কেঁদে উঠছে,,,আর এরমধ্যে এই বিয়ে,লোকজন সব কিছুই যেন ওর কাছে বিরক্ত লাগছে,,,ডাক্তার যাওয়ার সময় বার বার করে বলেছেন যে ওর সাথে যেন সবাই স্বাভাবিক ব‍্যবহার করে,তাহলেই ও এই ট্রমা থেকে সহজ ভাবেই বেরোতে পারবে,,,


- বিদায় পর্ব এই জিনিস টা আবিরের একেবারেই অপছন্দ,,,, আশীর্বাদ পর্ব মিটে যাওয়ার পর ড্রয়িংরুমে কান্নার রোল পড়ে গেছে,,,এই রকম পরিবেশে আবির আর এক মুহূর্ত থাকতে চাই না পেখমকে নিয়ে,,, যেখানে কাল এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে পেখমের সাথে তার উপরে আজকে আবার এই কান্না কাটি,,আবির সবাইকে বোঝাতে অক্ষম যে এতে পাখির মানসিক চাপ পড়বে,,,কিন্তু কে শোনে কার কথা,,,সবার আগে তো পেখমই কেঁদে কেটে একাকার করে ফেলছে,,,ওর কান্না দেখে সবাই মনে মনে ভাবতেই পারে এই মেয়েকে নির্ঘাত জোড় করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে,,, এ মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে যেতে চাই না,,, অথচ কথাটা সম্পূর্ণ ভুল,,,, যাইহোক বিদায় পর্ব শেষ হলে ওরা রওনা দেয় ও বাড়িতে যাওয়ার জন্য,,, কিন্তু তার আগে পুলক আবিরকে এক প্রকার শাসিয়েছে,,,


- শোন তোর জন্য আমার বোন অনেক চোখের জল ফেলেছে,, মানছি তখন পরিস্থিতি অন‍্যরকম ছিল,,, কিন্তু এরপরে যদি আমি দেখেছি বা শুনেছি তোর জন‍্যেই আমার বোন আবার কেঁদেছে তো ভেবে নিস তোর আর আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ওখানেই শেষ,,, আর আমি জানি আমার বন্ধু সেটা কখনোই হতে দেবে না। আর আমি এটাও জানি এই পৃথিবীতে পাখিকে কেবল তুই ভালো রাখতে পারবি,,,


-তুই যেই ভাবে থ্রেট করলি এখন আর আমার সত‍্যিই সাহস নেয় ওকে কাঁদানোর,,,( কথা গুলো বলেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো,,,কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে পুলক বললো,,)


- পেখুকে সত‍্যিটা বলে দিস,,,বেচারি তোকে ভুল বুঝে রাগ করে আছে,,,


- ওর রাগ আমি  ভেঙে দেবো চিন্তা করিস না,,,কিন্তু আমি চাই না কাকুমনিকে ও ভুল বুঝুক,,,আর শোন কিছু কিছু কথা মেয়েদের কে বলতে নেই,,,ওরা এমনিতেই মাথা মোটা হয়,,,( বলেই হাসতে হাসতে দুজনে বাইরের দিকে গেল কারণ সবাই অপেক্ষা করছে)

__________________________________________


- অনুপমা ছেলে বৌমাকে বরণ করে ঘরে তুললেন,,, তারপর বিভিন্ন নিয়ম কানন পালন করে সোফায় বসালেন আবির ও পেখমকে,,, পেখমের অবস্থা ভীষণ খারাপ,,, মাথা যন্ত্রণা করছে,,, খিদেও পেয়েছে,,, সকাল বেলায় ও কিছু খাইনি তারপর আশীর্বাদ এর সময় মিষ্টি খেয়ে গা গুলিয়ে এসেছিল,,, তারপর কান্নাকাটি,,, এখন একটু ফ্রেশ হতে পারলে ভালো লাগতো এইসব কথা মনে মনে চিন্তা করছিল,,,এমন সময় আবির ওর মাকে বলে,,


- মা পাখিকে আমার ঘরে নিয়ে যাও,,ওর শরীরটা এমনিতেই খারাপ,, একটু ফ্রেশ হয়ে ঘুমালে ভালো লাগবে,,,


- হ‍্যাঁ দাঁড়া,,, রেখা পাখিকে একটু আবিরের ঘরে নিয়ে যা,,,,কুশল বাবা পাখির ল‍্যাগেজ টা একটু আবিরের ঘরে রেখে এসো না,,,,রুশা আর প্রিয়া তোরা যাতো পাখির সাথে,,,,পাখি যা মা একটু ফ্রেশ হয়ে আয়,,,আমি একটু পরে উপরে যাচ্ছি,,(পাখিরা চলে যাওয়ার পর),,আবির একটু নীচে যা তো তোর মাসিরা মনে হয় চলে এসেছে,,,আমি কোন দিকে যায়,,, সব লোকজন আজকের মধ্যেই চলে আসবে,,,তোর বাবা ডেকটরের লোকজনের সাথে কথা বলছে,,ওখানে তোকে যেতে বলেছে,,,


- ঠিক আছে মা তুমি চিন্তা করো না আমি যাচ্ছি,,, আর হ‍্যাঁ পুলক আর তীয়া একটু পরেই আসছে,,,কাকিমনি নাকি এখনো কান্নাকাটি করছে তাই দেরি হবে ওদের,,,

___________________________________________


- পেখম ওয়াশরুম থেকে বেরোনোর পর রুশা আর প্রিয়া দুজনে মিলে ওকে লাল রঙের একটা শাড়ি পড়িয়ে দেয়,,,,


- পেখু একটা কথা বলি,,,প্লিজ তুই আর মন খারাপ করিস না,,, দেখ যা হয়েছে সেটা কিন্তু ভালোর জন্যই হয়েছে,,,(রুশা)


- আর দেখ যাকে তুই ভালোবাসিস ,আজকে কিন্তু সেই তোর বর,,,কালো অধ‍্যায়টা ভুলে যা,,,আবিরদা তোকে সত্যিই ভালোবাসে,,,,(প্রিয়া)


- হমম ভালোবাসে,,,উনি আমাকে খুব ভালো বাসে,,,তোরা চিন্তা করিস না,,এখন যা ফ্রেশ হয়ে নে,,,বলছি তোরা কিন্তু এখানেই থাকবি,,,


- সে আর বলতে,,,আবিরদা আমাদের বারবার করে বলেছে আমরা যেন এখানে থাকি,,,বৌমনির পাশের ঘরেই আমাদের থাকার ব‍্যবস্থা করে দিয়েছে,,, আচ্ছা আমরা ফ্রেশ হয়ে আসছি,,,( রুশা প্রিয়া চলে যায়)

__________________________________________


- পেখম মাথা থেকে টাওয়াল টা খুলে সেটা ব‍্যালকনিতে গিয়ে মেলে দিয়ে আসে,,,তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে ভিজে চুল গুলো আঁচড়িয়ে সিঁথিতে সিঁদুর পড়ে,,,কপালে একটা লাল টিপ পড়ে,,,নিজেকে আয়নার সামনে সময় নিয়ে দেখে তারপর ঘাড়ের দিকে চোখ পড়তেই সেই রাতের মুহুর্ত গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে,, ওমনি অশ্রুরা ভির করে চোখে এসে,,, এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আবির ঘরে ঢুকছে,, পেখম কিছু না বলে ব‍্যালকনির দিকে চলে যায়,,,,


-ঘরে ঢুকেই পেখমের চোখে জল দেখে আবিরের বুক ঢক করে ওঠে,,কিন্তু কিছু বলার আগেই পেখম সেখান থেকে চলে যায়,,, আবিরের মন খারাপ হয়ে যায়,,, কিন্তু পরক্ষণেই সেই চিরপরিচিত প্রেয়সীর শরীরের ঘ্রাণ নাকে যেতেই মন ভালো হয়ে যায়,,, এবার ওর কি হবে,,,এই ঘ্রাণে যে মাদকতা আছে তাতে ও ঘুমাতে পারবে না সারারাত,,, এবার না জানি কত রাত ওর নির্ঘু্মে কাটাতে হবে,,,, এইসব কথা গুলো ভেবেই আনমনে হেসে ওঠে আবির,,


-তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঘড়ি খুলে রাখতে গিয়ে দেখে তার উপরে পাখির জিনিস ভর্তি,,, ও তো এতদিন এই দিনটার স্বপ্ন দেখেছে,,,যেখানে পাখি থাকবে ওর চোখের সামনে সবসময়,,, এই ঘরটা তখন আর সে নিজের বলবে না,,, বলবে এটা আমাদের ঘর,,ভালোবাসার ঘর,,,যেখানে থাকবে তার শরীরের সেই মিষ্টি ঘ্রাণ,,, সারা ঘরময় সে বয়ে বেড়াবে চুড়ি আর নুপূরের শব্দ নিয়ে,,,খিলখিল করে হেসে উঠবে মাঝেমধ্যে সে,,,,কষ্ট হলে বুকে এসে ঝাপিয়ে পড়বে সে,,কেঁদেকেটে শার্ট ভিজিয়ে ফেলবে সে,,,আদর করলে লজ্জায় মুখ লুকাবে সে এই বুকটাতে,,,রাতের বেলায় ঠিক বাচ্চাদের মতো করেই ওর বুকে মাথা রেখে পরম আবেশে ঘুমাবে সে,,কথাগুলো ভাবতেই আবার হেসে উঠল আবির,,,তারপর একটা গেঞ্জি আর টাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে গেল,,,।

__________________________________________


-সত‍্যিটা যদি তোদেরকে বলতে পারতাম তাহলে হয়তো নিজেকে হালকা লাগতো,,কিন্তু আমি চাইনা সেই মানুষটাকে কেউ ঘৃণার চোখে দেখুক,,,আমি নিজেও তো তাকে ঘৃণা করার কত চেষ্টা করেছি কিন্তু দিনশেষে আমি ব‍্যর্থ হয়েছি,,,একবার না বারংবার আমি ব‍্যর্থ হয়েছি,,,হয়তো ঘৃণার কারণ গুলো থেকে আমার ভালোবাসার গভীরতা টা বেশি তাই,,


প্রিয়া ,রুশা তোদেরকে আমি কি করে বলবো যে,সে আমাকে ভালোবাসে না,,আমি তার কাছে মোহ ছিলাম,,শুধুমাত্র আকর্ষণের বস্তু ছিলাম,,সে কি করে ওইদিন বলতে পারলো এই কথা গুলো??,,আমি আগে কেন বুঝলাম না?? ঐদিন রিক আমাকে স্পর্শ করেছে বিশ্বাস কর তারজন্য আমার শরীর এখনো ঘিনঘিন করছে,,মরে যেতে ইচ্ছে করছে,, কারণ ঐ স্পর্শে ভালোবাসা ছিল না, ছিল শুধু লালসা,,,,কিন্তু আবির দা তো আমাকে কোনোদিন ভালোবাসেনি,,,তার কাছে তো আমি ছিলাম মোহ,,,কিন্তু তার স্পর্শে আমার কোনো দিন গা ঘিনঘিন করেনি,,খারাপ লাগেনি,,বরং ভালো লেগেছিল,,, হৃদয়ে ভালোবাসার অনুভূতি এনেছিল,,,কিন্তু এই গুলো যে তার একটা নিঁখুত অভিনয় সেটা আমি বুঝিনি,,, কেন বুঝিনি আমি ভগবান?? কেন?? কেন??কেন??( কথা গুলো নিজের মনকে বলছে আর কাঁদছে হঠাৎ পিছন থেকে অনুপমার গলার আওয়াজ পেয়ে চোখের জল মুছে নেয়)


- পেখম এখানে কি করছিস?? আমি না তোকে রেস্ট করতে বলেছিলাম,,, চল আমার সাথে,,(তারপর ঘরে ঢুকে পেখমকে বিছানায় বসিয়ে দেয় অনুপমা,,,) হঠাৎ পেখমের গলায় একটা সোনার চেন ও দু হাতে দুটো বালা পড়িয়ে দেয় আনুপমা,,,,তারপর পেখমের দিকে তাকিয়ে দেখে ও প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে,,,, তখন অনুপমা হেসে বলে উঠলেন,,


- এই সোনার চেনটা আমার শাশুড়ি মা আমাকে পড়িয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন,, আর বলেছিলেন যে,,তোমার যদি ছেলে হয় তার বৌকে এটা দিয়ে আশীর্বাদ করো,,মা দেখো আজকে আপনার চেনটা আপনার নাতবৌমা পড়েছে( চোখের জল মুছে আবার বলে) আর এই বালা দুটো আবির একদিন আমার হাতে দিয়ে বলে " মা আমার প্রথম প্রজেক্ট টা সফল হয়েছে,, আর তা শুধুমাত্র তোমার হবু বৌমার জ‍ন‍্যে এই নাও আমার তরফ থেকে তার জন্য এই উপহার,,, যখন আমার বৌকে দেখবে পড়িয়ে দিও তার হাতে,,,আর দেখ তোর হাতে কি সুন্দর হয়ে গেল,,,


-পেখম হতভম্ব হয়ে গেছে অনুপমার কথা শুনে,,,ও জানে আবিরদা ওর হাতের মাপ জানে,,তা বলে যে ওকে বৌ বানাবে,,মানে বালা করে এনেছে,,, এইসব কথা ওর বোধগম্য হচ্ছে না,,, যে মানুষ টা ওকে ভালোবাসে না,,, বিয়ে করতে চাইনা আবার সেই মানুষটাই ওর হাতের মাপে বালা করে এনেছে,,,,


- কি রে ওই ভাবে মার দিকে চেয়ে আছিস কেন??( তীয়ার কথায় পেখমের ঘোর ভাঙে,, ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,) কাকিমনি তুমি কি আমাকে সত‍্যিই বৌমা বলে মেনে নিয়েছো??


- কেন মানবো না পেখম??( অনুপমা)


- না কাল কে যা,,হ,,( পেখমের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে অনুপমা বলে ওঠে,,)


- আমি জানি আমার পেখম মা পবিত্র,, কে কি বললো তাতে আমার যাই আসে না পেখম,,,,গঙ্গা যেমন পবিত্র তাতে তুমি যতই নোংরা আবর্জনা ফেলো না কেন ,গঙ্গা কি কখনো অপবিত্র হয়?? ঠিক তেমনই তুইও পবিত্র,,, কেউ তোকে কলঙ্কিত করতে চাইলে তা কোনোদিন পারবে না,,,আর তাছাড়া আবির যেখানে তোকে নিজের স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়েছে সেখানে আমি কেন আপত্তি করবো পেখম,,


-কাকিমনি বলে পেখম অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে ফেললো,,,তখন অনুপমা ওর চোখের জল মুছিয়ে বললো উমম হু কাকিমনি না বল মামনি,,,তুই তো জানিস আমার খুব ইচ্ছা ছিল যে আমার বৌমা আমাকে মামনি বলে ডাকবে,,,বল মামনি,,,, পেখম তারপর মামনি বলে আবার জড়িয়ে ধরলো,,


- বলছি যে আমি যে একটা মানুষ,,,সেই কখন থেকে ভাতের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি,,তা মা আর বৌমার নজরেই পড়লাম না,,হায়রে দুঃখ,,,(তীয়া)


- দেখতে পারছিস না আমরা এখন ব‍্যস্ত,,,( অনুপমা)


- হ‍্যাঁ সেটাই,,, বৌমাকে পেয়ে এখন নিজের মেয়েকে তো ভুলে যাবে,,,(তীয়া)


- ইশশ বৌমনি তুমি ভীষণ হিংসুটে,,,(পেখম)


- হ‍্যাঁ সেটাই তো,,, অনেক হয়েছে কান্না কাটি,,, এবার খেতে হবে,,,প্রিয়া আর রুশা ডাইনিং রুমে সবার সাথে খেতে বসেছে,,,,by the way দাভাই কোথায়??(তীয়া)


- এই তো আমি এখানে,,,( এতক্ষন আবির ওদের কথা শুনছিলো ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে)


- ও তুই যা খেয়ে নে,,পুলক অপেক্ষা করছে তোর জন্য,,,( তীয়া)


- ঠিক আছে যাচ্ছি,,,মা ক‍্যাবিনেটের মধ্যে পাখির সব ওষুধ আছে,,,ওর খাওয়া শেষ হলে ওষুধ গুলো খাইয়ে দিও,,,তারপর যেন লম্বা একটা ঘুম দেয় নাহলে আবার মাথা ব্যথা করবে ( বলেই আবির চলে যায়)


- আমার ছেলেটা কিন্তু তোকে খুব ভালোবাসে পেখম,,, ওর পাশে সব সময় থাকিস,,,,আমরা যখন থাকবো না আমার ছেলেটাকে তখন আগলে রাখিস,, ও একটু চাপা স্বভাবের কিন্তু ওর মনের কথা তোকেই বুঝে নিতে হবে,,,(অনুপমা)


- অনুপমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে পেখম শুধু ম্লান হাসে,,,

_________________________________________


-সন্ধ‍্যেবেলায় আবিরের ঘরে পেখমকে নিয়ে আড্ডার আসর বসিয়েছে সবাই,,, পেখমের সব বন্ধুদের আবির ফোন করে আসতে বলেছে,,যাতে পেখমের মনটা ভালো থাকে।


- আমাদের আবির কিন্তু খুব লাকি যে তীয়া,যে ও পেখমের মতো একটা মিষ্টি মেয়েকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছে(খুশি)


- হ‍্যাঁ আপু,,আমাদের পেখু খুব ভালো,,(তীয়া)


- by the way পেখম আবির দা কোথায়??( দিপু)


- ও একটু ক‍্যাটারারের সাথে কথা বলছে কালকের অনুষ্ঠানের বিষয় নিয়ে আর এই ঘরে এমনিতেই আজকে আসতে পারবে না কারণ আজ ওদের কালরাত্রি,,, হ‍্যাঁ কালকে থেকে পার্মানেন্টলি এই ঘরে আসতে পারবে(কুশল)


- তুই চুপ কর হা** যত সব উটকো কথা,,আগে ও আমাদের টাকা দেবে তারপর এই ঘরে প্রবেশ করবে ,,আরে আরে সবাই একটু সাহায্য করো,,,এতটা খাবার আমি একা নিয়ে আসতে পারি,,( মৈনাক)


- আরে মৈনাক দা কখন এলেন?? দিন আমাকে দিন খাবারের ট্রে টা (তীয়া)


- এই তো একটু আগে,,আবির ফোন করলো তারপর টিকিট কাটলাম then নেক্সট ফ্লাইটে মুম্বাই টু কলকাতায় চলে আসলাম,,, পেখম বৌদিমনি কেমন আছেন??(মৈনাক)


- ভালো আপনি কেমন আছেন ??( পেখম)


- আমি always ভালো,,, কি বলেন মিস রুশা,(চোখ মেরে মৈনাক বলে)


- অনেক কথা হয়েছে,,এবার সবাই খেয়ে নাও,,,কফিও চলে এসেছে,,(প্রিয়া)


- যে যার মতো খাচ্ছে আর গল্প করছে,,পেখম কফিতে চুমুক দিয়ে যেই বেগুনি নিতে যাবে অমনি তীয়া বলে "এই গুলো একটাও তোর জন্যে না পেখু,,, ভুলে কেন যাস বেগুনে তোর এলার্জি,,, দাদাভাই বারণ করেছে দিতে,,,


- পেখম কথাটা শুনে ছোট করে বলে"ওও আমার খেয়াল ছিল না বৌমনি"।


- তা বলে কি আমার বৌমা না খেয়ে থাকবে,,,(পিছন থেকে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে প্রবেশ করলেন অনুপমা )এই নে পেখম তোর পছন্দের পটেটো ন‍্যাগেট্স,,আবির অর্ডার দিয়ে আনিয়েছে,,আমি যাই আমার অনেক কাজ আছে,,,( বলেই অনুপমা চলে গেল)


- সত‍্যিটা রে পেখু আবির দা তোর ছোট খাটো দিকে খুব নজর দেয়,,এইতো বিকেলে আমাদের সবাইকে ফোন করে বললো আসতে এই বাড়িতে যাতে তোর মনটা ভালো থাকে,,(আকাশ)


- ভাগ্য করে এমন একটা বর পাইছো ম‍্যাইয়া,,, মাথায় করে রাখবা,,বুঝলা (চোখ টিপ দিয়ে অর্নব বলে,,আর সাথে সাথে হাসির রোল পড়ে যায় সারা ঘরময় জুড়ে)


- পেখম সত‍্যিই বুঝতে পারছে না মানুষটি এমন কেন?? কি চাই সে,,,নাকি সব লোক দেখানো,,,, 


চলবে,,,,



গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২০

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২০


- চোখ বন্ধ করার পর যখন সেই চোখের সামনে মা বাবা দাদা,,আবিরের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে তক্ষনাৎ পেখম বুদ্ধি করে নিজের পা দিয়ে সেই ব‍্যক্তির শরীরের নিন্মাংশে শরীরের সব শক্তি দিয়ে লাথি মারে,,,ওমনি ব‍্যাথায় কুকিয়ে ওঠে সেই ব‍্যক্তি,,,,হাত আলগা হয়ে আসে,,,তখনই পেখম উঠে দাঁড়িয়ে আবির দা বলে চিৎকার করে ওঠে,,,,,তারপর একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করে,,তারপর টলমল পায়ে এগিয়ে যেতে থাকে সামনের দিকে,, কিন্তু লাভ হয় না তার আগেই ওই ব‍্যক্তি আবার ওর হাত ধরে টেনে আনে ওই জায়গায়,,, শুরু হয় আবার ধস্তাধস্তি,,, পশুর মতো ঝাপিয়ে পড়ে পেখমের উপর,,,,পেখম চিৎকার দিয়ে ওঠে,,,,লোকটি যেই পেখমের চুল গুলো মুঠো করতে যাবে ওমনি কোথা থেকে এসে একটা শক্তপোক্ত হাত তাকে আটকে দেয়,,,পেছনে ফিরে সামনে তাকানোর আগেই আবার একটা ঘুষি পড়ে ঠিক তার নাক বরাবর,,তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে,,,,পেখম আবির দা বলে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে,,,,,


-আবির দৌড়ে গিয়ে পেখমকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়,,,তারপর ভালো করে পেখমের চেহারার দিকে তাকাতেই ওর চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে যার,,,কপালের রগ গুলো ফুলে ওঠে,,,,চোখ জোড়া রক্তিমময় রূপ ধারণ করে,,, পেখমের গায়ে শাড়ি প্রায় খুলে যাওয়ার মতো অবস্থা,,, ব্লাউজের অধিকাংশ অংশ ছেঁড়া,, সারা গায়ে,,মুখে, ঘাড়ে আঁচড়ের দাগ,,,ঠোঁটের কোণে কেটে গিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে আছে,,,ও পেখমের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে,,, আর তখনি পিছন থেকে সেই ব‍্যক্তিটি ঝাঁপিয়ে পড়ে আবিরের উপর,,,,আবির কোনো রকমে লোকটিকে ধাক্কা দেয় আর তখনই পুলক চলে আসে ঘটনাস্থলে,,, আবির পুলককের কাছে পেখমকে দেয়। পুলক বোনের এই অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলে,,,,আর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে,,,,


- আবির শালা শু*** চ্চাটাকে ছাড়বি না,,,ও আমার বোনকে কি করেছে,,, পেখু ওঠ দেখ তোর দাভাই চলে এসেছে,,,,


- আবির এখনো লোকটার মুখ দেখিনি,,,মুখ ঘুড়িয়ে যেই মারতে যাবে ওমনি ও বলে ওঠে" রিক তুই,,,, তোর এত বড়ো সাহস আমি দু দুবার বারণ করা সত্ত্বেও তুই আবার আমার পাখির দিকে হাত বাড়াস,,,এই হাত আমি ভেঙে দেবো বলেই একটা হাত নিয়ে বিপরীতে মুড়িয়ে দেয় ওমনি আর্তনাদ করে ওঠে রিক,,,,বল কেন করেছিস???? বল বলেই একটা চড় মারে ,,,আর রিক পড়ে যায়,,


-বেশ করেছি তুলে নিয়েএসেছি,,,,প্রেম নিবেদন করেছিলাম আমি,,,রিজেক্ট করে দিয়েছিল,,, ভরা কলেজের সামনে তুই,, এই তুই আমাকে মেরে ছিলিস,,, সেই দিন ঠিক করে নিয়ে ছিলাম ওর ক্ষতি আমি করবোই,,, যাকে বলে চরম ক্ষতি,,,,তুই আসলি ঠিক আছে,,, আর একটু পরে আসতে পারলি না,,,তোর এই পাখি ভীষণ ছটফটে,,সবে মাত্র শুরু করেছিলাম,,,, কথা টা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে আবির ওকে আবার মারে,,,আর বলে,,


- যাকে এত বছর ধরে আগলে রেখেছি তুই এই হাত দিয়ে তাকে অপবিত্র করতে চাইছিলি কুত্তার*** ,,এই হাত দিয়ে তুই আমার কলিজায় আঘাত করেছিস,,,এই হাত দিয়ে তাই না বলেই অপর হাতটা নিয়ে বিপরীতে মুড়িয়ে দেয়,,,আবার চারেদিকে রিকের আর্তচিৎকার শোনা যায়,,, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রিক,,,,


-পুলক তোকে তো আমি ফোন করে পুলিশ আনতে বলেছিলাম,,,


- কুশল আর ইশান নিয়ে আসছে পুলিশ,,, আবির তুই কি করে বুঝলি এই হারা***চ্চা আমার বোনটাকে এখানে এনেছে???


- আমি যখন রাস্তা দিয়ে আসছিলাম তখন পাখির কানের দুল আর গলার আওয়াজ পায়,,অন্ধকারে কিছু দেখতে পারছিলাম না ,,,কি করবো কোথায় খুঁজবো তাই তোকে ফোন করি,,,


- পেখম চোখ খোল দেখ আমরা,,আবির ওকে ধর,,আমার গাড়িতে জল আছে আমি নিয়ে আসি,,,ওর জ্ঞান ফেরানো আগে দরকার,,,,( বলেই পুলক চলে যায় জল আনতে)


- এই পাখি ওঠো না,,,পাখি,,,ওই মায়াবিনী দেখো আমি,,ওঠো,,,,


- পুলক এসে জল পেখমের চোখে মুখে ছিটিয়ে দেওয়ার পর ওর জ্ঞান ফেরে,,,তারপর আবিরকে দেখে ওর বুকের মধ্যে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে,,যা দেখে আবিরের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে,,,আর পুলক উঠে গিয়ে রিককে মারতে থাকে,,,,,আবির নিজের গায়ের শার্ট খুলে পেখমের গায়ে জড়িয়ে দিলো,,,কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এসে রিককে নিয়ে যায় আর ওদের বলে থানায় হয়তো পেখমকে যেতে হতে পারে,,,আবির বলে আমি আপনাদের সাথে পরে কথা বলে নেবো অফিসার,,,,


- ইশান আর কুশল পুলকের গাড়ি করে বেরিয়ে যায়,,, আর পুলক আবিরের গাড়িতে আবির আর পেখমকে ড্রাইভ করে নিয়ে যায়,,,, পেখম ভয়তে এতটাই প‍্যানিক হয়ে গেছে যে বার বার সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে আবিরের বুকে,,,,

___________________________________________


- কিছুক্ষণ আগে পেখমের জ্ঞান ফিরেছে,,,কিন্তু এখনো তেমন স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি,,, ডাক্তার এসে মেডিসিন দিয়ে গেছে,,পেখম এখন ওর ঘরেই শুয়ে আছে,,,,তীয়া, প্রিয়া আর রুশা ওর পাশেই বসে আছে ,,,তীয়া পেখমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,,, প্রিয়া চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে,,,,


- ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে গম্ভীর হয়ে,,,, আত্মীয় স্বজন কেউ কেউ চলে গেছে আবার কেউ কেউ আছে,,,কেউবা রঙ্গ তামাশা দেখার জন্য বাড়ি ভির করে রেখেছে,,,,


- আবিরের মুখ থেকে সবাই সব কিছু শুনে হতভম্ব হয়ে বসে আছে। মেয়ের ওই রকম অবস্থা দেখে মনোরমা তো দুবার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন,,, আর জ্ঞান ফেরার পর থেকে কেঁদেই চলেছেন,,, অনুপমা দেবী উনাকে সামলাচ্ছেন,,, দেবেন্দ্রর তো মনে হচ্ছে হৃদয়টা কষ্টে ছিন্নবিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে,,, তার মেয়েটার সাথে কেন এই রকম ঘটনা ঘটলো,,,,নরেন্দ্র বাবুর অবস্থা তেমন ভালো নয়,,,তিনি সোফায় বসে আছেন আর তাকে ধরে রেখেছেন বিমলা দেবী,,,,, ড্রয়িংরুমে চলছে এখন পিনপতন নিরাবতা,,, আত্মীয় স্বজন সবার মনেই এখন একটাই প্রশ্ন বিয়েটা কি হবে?? যদি না হয় মেয়েটার কি হবে?? ঋষির বাড়ির সবাই আছে কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না এমন সময় ব্রাহ্মণ ঠাকুর বলে ওঠেন,,


- বাবা দেবেন্দ্র বিয়েটা কি হবে?? লগ্ন যেহেতু দেরিতে সেহেতু হাতে এখনো সময় আছে,,,,পেখম মার নামে যেহেতু বিয়ের পবিত্র পূজো আরম্ভ হয়েছিল সেহেতু বিয়েটা না হলে মেয়েটা লগ্নভ্রষ্টা হয়ে যাবে,,


- ব্রাহ্মণ মশায়ের কথায় সবার টনক নড়ে উঠলো,,, এবং সাথে সাথেই আবিরের বুকটা আবার ভারী হয়ে উঠলো,,,,দেবেন্দ্র বাবু তখন ঋষির বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে বলেন,,


- আপনাদের যদি অনুমতি থাকে তাহলে বিবাহের কার্য শুরু করতে বলি??


- আমাদের বাড়ির সব সিদ্ধান্ত পিসিমা নেন,,,(ঋষির বাবা)


- দেবেন্দ্র বাবু কিছু বলার আগেই ঋষির পিসি ঠাম্মাম বলে ওঠেন" এখানে এই মুহূর্তে কোনো বিয়ে টিয়ে হবে না ব্রাহ্মণ মশাই,,, আপনি এখন আসতে পারেন,,,


- এ কি বলছেন আপনি?? বাবা উনি কি বলছেন??( দেবেন্দ্র তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে)


- নরেন্দ্র বাবু তার বন্ধুর দিকে তাকাতেই সে মাথা নত করে নেয়,,,অর্থাৎ তারা এই বিষয়ে বোনের মতামতকে সমর্থন করেন,,,,


-দেখো বাবা দেবেন্দ্র এই বিয়েটা আর কোনো ভাবেই হতে পারে না,,, আমরা সমাজে বাস করি,,,আর এইরকম মেয়েকে সমাজ কখনোই ভালো চোখে দেখে না,,,আর আমার তো মনে হয় তোমার মেয়ের কোথাও দোষ আছে তা না হলে ওই ছেলে তোমার মেয়েকে এই ভাবে তুলে কেন নিয়ে যাবে,,,আর সত‍্যি বলতে কি তোমার মেয়ের চালচলন আমার ঠিক পছন্দ হয়নি শুরু থেকেই,,, কিন্তু দাদা পছন্দ করে ছিল বলে আমি না করিনি। কিন্তু এখন তো কোনো ভাবেই আমি এ বিয়ে হতে দেবো না,,,বলা তো যায় না ওই ছেলে তোমার মেয়ের কোনো সর্বনাশ করতে বাকি রেখেছে কিনা?? জেনে শুনে কেন আমি এমন মেয়ের সাথে আমার ডাক্তার নাতির বিয়ে দেবো?? আর তো,,,,


- খবরদার আর একটাও বাজে কথা পাখির নামে বলেছেন তো, আমি ভুলে যাবো আপনি আমার গুরুজন হন,,,( এতক্ষণ সব মুখ বুজে সহ‍্য করছিল আবির কিন্তু শেষের কথা গুলো শুনে ও আর নিজেকে সংযত করে রাখতে পারেনি,,)


- আপনি এ কথা বলেন কি করে?? যেখানে দেখতে পাচ্ছেন আমার বোনটার উপর দিয়ে আজ কি ঝড় গিয়েছে,,,(পুলক)


-নরেন্দ্র বাবু হঠাৎ করেই উত্তেজিত হয়ে যায় আর জোড়ে বলে ওঠে "আমি মনে হয় মানুষ চিনতে এই প্রথম ভুল করলাম বিমলা। দিদিভাই তুই আমাকে ক্ষমা করেদিস,,,


- ঋষি তুই বল তোর কি মত??( পুলক)


-ও কি বলবে যেখানে আমরা সবাই বলছি এই বিয়ে হবে না,,,(ঋষির বাবা)


- আমি তাও তোর মুখ থেকে শুনতে চাই ঋষি তুই কি বলতে চাইছিস??( আবির)


- আমি আমার পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে পারবো না তোরা আমাকে ক্ষমা করিস। হ‍্যাঁ আমি একবার পেখমের সাথে কথা বলতে চাই,,,বিস্তর জানতে চাই তারপর যদি মনে হয় পেখমকে আমার বিয়ে করা উচিত,, তখন আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাবো,,,,(ঋষি)


- তার কোনো দরকার নেই ,,,পেখমের সাথে এই বিষয়ে তোর আর কথা বলতে হবে না,,,এই বিয়ে হবে না চল এখান থেকে,,,( ঋষির মা)


- ওদের সবার কথা শুনে দেবেন্দ্র চেয়ারে বসে পড়লেন মাথায় হাত দিয়ে,,,, মনোরমা ডুকরে কেঁদে উঠলেন,,,, আর বলে উঠলেন" ভগবান কোন পাপের শাস্তি তুমি আমার ওই মেয়েটাকে দিচ্ছো?? আমার মেয়েটাকে এখন কে বিয়ে করবে?? একবার বিয়ে ভেঙে গেলে সমাজে কি করে চলবে?? আমার মেয়েটাতো বেঁচে থেকেই মরে যাবে,,,এ তুমি কি করলে???


- মনোরমা শান্ত হও,,,দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে,,, আমি জানি আমার পেখু মা গঙ্গার মতো পবিত্র,,,,(অনুপমা)


- কি হল ব্রাহ্মণ মশাই এখনো আপনি দাঁড়িয়ে আছেন,,, এই বিয়ে হচ্ছে না আপনি আসতে পারেন,,,,ঋষি চল,,,(পিসি ঠাম্মাম)


- এই বিয়ে হবে,,,আজ এই মুহূর্তে এই বিয়ে হবে,,,( আবির)


- কি বলছিস তুই আবির (কুশল)


- হ‍্যাঁ আমি ঠিক বলছি,,,তারপর আবির নরেন্দ্র বাবুর কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে উনার হাত দুটো ধরে, নরম স্বরে বলে,,


- দাদুন পাখির সারা জীবনের দায়িত্ব তুমি আমাকে দেবে??


- আবিরের কথা শুনে ড্রয়িংরুমে সবাই অবাক হয়ে যায়,,, দেবেন্দ্র বিষ্মিত হয়ে বলে "এ তুই কি বলছিস"?


- আমি ঠিক বলছি,,,আর তার কারণ তুমি খুব ভালো করেই জানো কাকুমনি,,,অনেক সহ‍্য করেছি তোমার কথা শুনে,,, কিন্তু আর পারলাম না,,, তারপর দাদুর দিকে তাকিয়ে আবার বলে" কি হল বলো??"


- তুমি কি সত‍্যিই বিয়েটা করতে চাও দাদুভাই??( নরেন্দ্র বাবু)


- আমি আবির চৌধুরী সবার সম্মুখে বলছি পেখম সরকারকে আমি স্বজ্ঞানে বিবাহ করতে চাই,,,দেবে কি আমাকে সেই অনুমতি দাদুন???


- আবিরের কথা শুনে নরেন্দ্র বাবু ওকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন,,, তার যক্ষের ধন ওই নাতনী,,, আজ তার দুর্দিনে এই ছেলেটি নিজে এসে ঢাল হয়ে তাকে রক্ষা করতে চাইছে,,,তিনি কি করে বাঁধা দেবেন,,,,নিজেকে সামলে তিনি বলেন"আমার নাতনীর কপাল ভালো দেবেন্দ্র যে আবিরের মতো এমন একজনকে ও জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চলেছে"।


- আমি তোর কাছে অপরাধী,,,আমাকে ক্ষমা করে দিস আবির,,(দেবেন্দ্র)


- ওটা পরিস্থিতি ছিল,,, কিন্তু তুমি বলেছিলে সব কিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে,,,, দিয়েও ছিলাম,,, এইভাবে পেতে চাইনি ওকে আমি,,, কিন্তু আমরা সবাই পরিস্থিতির স্বীকার,,,(আবির)


- ব্রাহ্মণ মশাই বিয়ে শরু করুন,,,, পুলক তীয়াকে গিয়ে বলো আমার বৌমাকে একটু সাজিয়ে দেয় যেন,,,তারপর দেবেন্দ্রর কাধে হাত রেখে বলে " তবে আমাদের সম্পর্ক টা আরোও গভীর হলো বল??( অশোক)


- দেবেন্দ্র বাবু অশোক বাবুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন,,,, মনোরমা দেবী আবিরের কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন,, আর সেই দৃশ্য দেখে অনুপমা দেবী কাঁদার মধ্যেও হেসে ফেললেন,,,,ঋষিরা সবাই চলে গেছে,,,কুশল আর ইশান ওদের সাথে যায়নি,, এমনকি তারা ঋষিকে এটাও বলেছে এরপর থেকে তার সাথে বন্ধুত্ব রাখবে কিনা ভেবে দেখবে,,,


- বাড়িটা আবার আগের মতো মেতে উঠেছে,,, আবিরকে পুলক পাজ্ঞাবী পড়িয়ে দিয়েছে,,,আর ও দিকে পেখমকে ওর বান্ধবীরা আর তীয়া মিলে সাজিয়ে দিয়েছে,,, পেখম কিছুই বুঝতে পারছে না হচ্ছে টা কি,,এমনিতেও ও একটা ঘোরের মধ্যে আছে,,শরীরে তেমন শক্তি নেই উঠে দাঁড়ানোর,,ও তো শুনেছিল বিয়েটা হচ্ছে না,,, বরপক্ষ সবাই চলে গেছে,, তাহলে,,,,যখন ছাদনাতলায় পান পাতা সরিয়ে আবিরের মুখটা দেখেছিলো পেখম তখন ও হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল,,, কি রিয়‍্যাক্ট করা উচিত বুঝতে পারছিলো না,,,,ও একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে,,, মনে মনে শুধু একটা প্রশ্নই উঠে আসছিলো যেই মানুষটা ওকে ভালোবাসে না,,,যে এই লাইভ টা আনন্দ উপভোগ করে কাটিয়ে দিতে চাই,,তাহলে সেই মানুষটি কেন তাকে বিয়ে করবে?? তাহলে কি সেই মানুষটা তাকে দয়া করছে,,,এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ওর খেয়াল হয় সবাই বলে উঠছে সিঁদুর নাকের উপর অনেকটা পড়েছে,,,তারমানে আমাদের আবির দা পেখমকে অনেক ভালোবাসবে,,,,


-অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেল,,,রাতে খাওয়া দাওয়া পর্ব মেটার পর যে যেখানে পেরেছে শুয়ে পড়েছে,,, অনুপমা বাড়িতে ফিরে এসেছে ,কাল বধূ বরণের আয়োজন করতে হবে তাই। আবির পুলকের সাথে ওর ঘরে শুয়েছে,,,আর তীয়া পেখমের বান্ধবীরা পেখমের সাথে ওর ঘরে শুয়েছে,,,অর্নব, আকাশ, দিপু, ইশান আর কুশল ওরা সবাই আবিরদের বাড়িতে চলে গেছে,,,,


-পেখমের ঘরে যখন তীয়া বিছানা ঠিক করতে যাবে,,ঠিকই তখনই দরজা নক করার আওয়াজ শুনতে পায়,,, তীয়া গিয়ে দরজা খুলে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে,,, আবিরকে দেখে তীয়া বলে"কিছু বলবি দাভাই"??


- পেখম তখন বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে ছিল কাঁদছিলো আর প্রিয়া ওর চোখের জল মুছে দিচ্ছিলো,,,,আবিরের নাম শুনে দ্রুত চোখ খুলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ,আবির ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দু জোড়া চোখ এক হতেই পেখম দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।


- তীয়ার প্রশ্নে আবির বলে" এই নে তুলো আর স‍্যাভলন,,,ওর ক্ষত স্থানে দিয়ে দিস,,,আর শোন ওকে কাঁদতে বারণ কর,,,ঘুমাতে বল,,শরীরের উপর আজ অনেক ধখল গেছে ওর" কথা গুলো বেশ জোরে জোরে  বলেই পুলকের ঘরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় আবির।আর তীয়া তুলো আর স‍্যাভলন হাতে নিয়ে মুচকি হেসে দেয়,,,,এত বিষাদের মাঝেও একটু সুখ সুখ অনুভব করে পেখম,,,,,


চলবে,,,,,,


গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ১৯

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ১৯


- নিকোটিনের শেষ ধোঁয়ার অংশ টা  মুখ থেকে বেরিয়ে বাতাসের সাথে আস্তে আস্তে করে বিলীন হয়ে যায়,, সেই দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে, গিটারের ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে সুর তোলার চেষ্টা করে সে। কিন্তু বারবার ব‍্যর্থ হয়,,,এক জোড়ে চোখ খুঁজে চলেছে সর্বক্ষণ সেই মানবীকে দেখার তৃষ্ণায়,,, কিন্তু না সে তো আর দেখা দেবে না,,, এটা মনে হতেই মানবটির হৃদয় খাঁ খাঁ করে ওঠে,,,,আর তখনই গিটারের টুংটাং শব্দে নিজের কষ্টকে তুলে ধরে সে গান গেয়ে,,,,


মন যে ফিরে পেতে চায়

জানি আমি অসহায়

চুপ থাকা মন

খুঁজে প্রিয় জন

কেন সে বোঝেনা 


জানি আমায় ভেবে 

সে তো আমায় আর খোঁজে না।


আমি ভেসে যাওয়া কোন হাওয়াই

তোমাকেই খুঁজি 

জানি হাওয়ার মায়ায় খুঁজলে তোমায়

পাবো বুঝি।


কোলাহল যেন আজ পলাতক হয়ে রয় 

নীরবতা চুপিসারে সঙ্গী আজ হই

ফিরে পেতে চাই কাটানো সময়

তোমায় ছুঁয়ে তোমায় ভেবে।


চুপ থাকা মন

খুঁজে প্রিয় জন

কেন সে বোঝেনা 

জানি আমায় ভেবে।


সে তো আমায় আর খোঁজে না

আমি ভেসে যাওয়া কোন হাওয়াই

তোমাকেই খুঁজি 

জানি হাওয়ার মায়ায় খুঁজলে তোমায়

পাবো বুঝি।


মন যে.. মন যে..


- মানবীর অপেক্ষা করতে করতে কোনো এক সময় সে ওখানেই ঘুমিয়ে যায়,,, আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে নিকোটিনের শেষাংশ,,আর তার পাশে পড়ে থাকে তার অতি যত্নের গিটার,,,,,,


-রাতের প্রায় শেষ ভাগের দিকে আবিরের ঘুম টা ভেঙ্গে যায়,নিজেকে এইভাবে ঘুমিয়ে যেতে দেখে অবাক হয়,ও ভেবেছিল জাগবে কিন্তু ঘুম ঠিক চলেই এল। গত চার-পাঁচ দিনে একবারের জন্যেও আবির পাখিকে দেখেনি,,, অবশ্য দেখেনি বললে ভুল হবে পাখি নিজেই দেখা দেয়নি,,,,ঘরের দরজা, জানালা,, ব‍্যালকনির দরজা সব বন্ধ করে রেখেছে সেইদিনের পর থেকে,,, একটা বারের জন‍্যেও রাতে সে আর ব‍্যালকনিতে আসেনি,,,অবশ্য সে নিজেই বলেছিল আমার মুখ আর সে দেখবে না,,,, কথা গুলো নিজের মনে বলে আবার একটা সিগারেট ধরালো আবির,,,, আর সিগারেটের সেই ধোঁয়ার মাধ্যমে নিজের কষ্ট গুলো উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত,,,,


-এই তো সেদিনের কথা,,, মাঝ রাতে ব‍্যলকনিতে এসে দেখে পাখি ব‍্যালকনির ধারে রেলিংয়ে মাথা দিয়ে বসে বসেই ঘুমাচ্ছে,,,ও ঘরে চলে যেতে গিয়েও আর যায়নি,,, পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলোটা একদম পেখমের মুখের উপর পড়ায় ওর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। আবিরের বেহায়া মন আর পারেনি তার প্রেয়সীর কাছে থেকে দূরে যেতে। যখন ওই মৃদু হাওয়ায় পেখমের অবাধ্য চুল গুলো বারবার আছড়ে পড়ছিল ওর মুখের উপর, তখন আবিরের খুব করে মন চাইছিল ওই চুল গুলোকে ধমক দিয়ে শাসন করে কানের লতিতে গুঁজে দিতে,, কিন্তু ও পারিনি,,, সারাটা রাত আবির রকিং চেয়ারে বসে ওর প্রেয়সীকে দেখেছে,,,মন ভরে দেখেছে,,,এক মুহূর্তের জন‍্যেও আবির নিজের চোখের পাতা এক করেনি,,বরং নিচে গিয়ে ফ্লাক্সে করে ব্ল‍্যাক কফি তৈরি করে এনেছে জেগে থাকার জন্য,,, সকালে যখন সূর্যের আলো পেখমের মুখের উপর পড়েছিল,, আর পেখম বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলছিল ওর তখন সূর্যের আলোকে হিংসা হচ্ছিলো,,, কেন ছোঁবে ঐ আলো ওর প্রেয়সীকে,, যেখানে ও নিজেই একবারের জন্যও স্পর্শ করতে পারছে না,,,,, তীয়া পেগমকে ডাকতে আসার আগে পর্যন্ত আবির পেখমের দিকে তাকিয়ে ছিল,,,, তীয়া আসাতে তাড়াতাড়ি করে ল‍্যাপটপে কাজ করার ভান করে,,,,,

__________________________________________


-আর দু-দিন পর পেখমের বিয়ে,,,এরই মধ্যে বাড়িতে লোকজন ভরে গেছে,,, পেখম সবার সাথে হাসি খুশি থাকলেও রাতে গুমরে গুমরে মরে,,,প্রতিটা রাতের কষ্টের সাক্ষী হয় ওর ওই বালিশ টা,,,


-দিভাই আমরা একটু তোর ঘরে বসে আড্ডা মারতে পারি(তিতাস)


- হ‍্যাঁ এতে আবার জিজ্ঞাসা করার কি আছে?? যা খেল,,,বৌমনি বৌমনি,,,


- পেখু ডাকছিলিস??


- ও বৌমনি আমাকে একটু শাড়ি টা পড়িয়ে দেবে,,,,


- শাড়ি তুই এখন শাড়ি পড়ে কোথায় যাবি,,আর কত রাত হয়েছে দেখেছিস??


-উফফ বৌমনি এটা ঋষির পিসি ঠাম্মার  হুকুম,,, এই কটাদিন আমাকে সব সময় শাড়ি পড়ে থাকতে হবে,, এতে নাকি আমার অভ‍্যাস হয়ে যাবে,,, পরে তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না,,,ওই বাড়িতে উনার কথায় শেষ কথা,,,,


-হমম সে না হয় বুঝলাম,, তাহলে তো তুই একটা কাজ করতে পারতিস পেখু,,, উনাকে মানে তোর ওই হবু পিসি ঠাম্মামকে একটু রাগীয়ে দিতে পারতিস,,,তাহলে যদি বিয়ে টা ক‍্যানসেল হতো(শেষের কথাটা আস্তে করে বলে তীয়া)


- কি ক‍্যানসেল বৌমনি??


-কিছু না,,যাই বল পেখু তোর ওই ঠাম্মা শাশুড়ি কে আমার ঠিক সুবিধার লাগেনি,,, উনার থেকে একটু সাবধানে থাকিস,,এখন তুই এইদিকে আয়,,,শাড়িটা পড়িয়ে দি,,,এখানে তো ওরা খেলছে,,,, তারপর তীয়া পেখমকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে একটা লাল রঙের শাড়ি পড়িয়ে দেয়,,,,


-পেখু একটু ওই ঘরে গিয়ে দেখতো কি যেন ভাঙার আওয়াজ শুনতে পেলাম,,,, বাচ্চারা সব আছে,,( কথা গুলো বলতে বলতে মনোরমা পুলকের ঘরের দিকে এলেন)


- বাবা এ কে তীয়া?? আমার মেয়ে না?? কি সুন্দর লাগছে মা তোকে,, আয় একটু কাজলের টিপ দিয়ে দি,,,কারোর যেন নজর না লাগে,,,(বলেই একটু কাজল পেখমের ঘাড়ের কাছে দিয়ে দিলেন,,)


- পেখু যা আমার মনে হয় ওরা মারপিট করছে,,,(তীয়া)


-পেখম তাড়াতাড়ি নিজের ঘরের দিকে যায়,,, গিয়ে দেখে বাচ্চারা সব জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে,,,বিছানা এলোমেলো করে রেখেছে,, আর সব থেকে বড়ো কথা হল ঘরের জানালা আর ব‍্যালকনির দরজা খুলে দিয়েছে,,, যেটা দেখে পেখম আর নিজের রাগ সংযত করতে পারেনি,,,


- তিতাস কাকে বলে ব‍্যালকনির দরজা আর ঘরের জানালা খুলে দিয়েছিস বল (চিৎকার করে)


- সরি দিভাই আমাদের কেমন গরম লাগছিল তাই( মাথা নিচু করে)


- এখুনি যাও সব বন্ধ করে দাও,,,আর ড্রয়িংরুমে গিয়ে খেলা কর,,(পেখমের বলতে দেরি নেই ওমনি সব হুর হুর করে ঘর ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল)দেখেছো ফাজিল গুলোর কাজ,,,আমার ঘরটা তছনছ করে চলে গেল,,,


-পেখম ঘরের বিছানাটা আগে গুছিয়ে নিলো,,তারপর মেঝেতে এলোমেলো ভাবে পড়ে থাকা জিনিস গুলো গুছিয়ে রাখতে গিয়ে দেখে কত গুলো নীল চুড়ি ও এক জোড়া নুপূর পড়ে আছে,,ও সেই গুলো স্পর্শ করতেই অজান্তেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল নীচে,,, চোখের জল টি মুছে আনমনেই হেসে ফেলল, মনে পড়ে গেল পিছনে ফেলে আসা সেইদিনটির কথা,,,


- সেবার মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হওয়ার দরুন সন্ধ‍্যেবেলার দিকে ও মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিল,,,


- পেখু আমাদের তো উচিত তোকে মিষ্টি খাওয়ানো,,, কত ভালো রেজাল্ট করেছিস তুই(তীয়া)


- আমাকে না হয় পড়ে খাইয়ে দিয়ো এখন তুমি খাও তীয়া দি,,,


- এই নে তুই রেজাল্ট ভালো করেছিস বলে তোর আবির দা তোর পছন্দের মিষ্টি দই এনেছে,,,আমি আর তীয়া অবশ্য যেতাম একটু পরে তোদের বাড়ি,,,


- আমি এসেছি তো কি হয়েছে,,,এখন যাবে আমাদের বাড়ি,,,মা রাতে সবার জন্যে রান্না করছে,,,আমাকে শুধু বললো মিষ্টি টা দিয়ে আসতে,,,আর আবির দা রাতে কি খাবে শুনে আসতে,,,মানে উনি তো ভাত বা রুটি খান না তাই,,,,


-ঠিক আছে তোর আবির দা নিজের ঘরেই আছে শুনে আয়,,,আমি আর তীয়া রেডি হচ্ছি,,,,,(অনুপমা)


- কাকিমনি তুমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করে এসো না,,,(পেখম)


- তুই এত ভয় পাস কেনরে দাদাভাই কে,,,ও তোকে কিছু বলবে না,,,বরং দেখিস আজকে তোর প্রশংসা করবে,,,যা যা(তীয়া)


- পেখম আবিরের ঘরের দরজার কাছে গিয়ে কয়েক বার নক করতেই ওপাশ থেকে সদ‍্য কৌশর থেকে যৌবনে পা রাখা পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসলো পেখমের কানে,,,


- দরজা খোলা আছে,,,(পেখম ধীরে ধীরে দরজা খুলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে,,, আবির পেখমকে দেখে বলে"তুই এখানে কেন?? কি দরকার??)


- কিছু না মানে মা জিজ্ঞাসা করতে বললো যে আপনি রাতে কি খাবেন??


- মানে?তুই কি এখন আমাকে জ্বালাতে এসেছিস?? শোন পাখি আমি কিন্তু কলেজের প্রজেক্টের কাজ করছি,,মাথা খারাপ করে দিস না,,,আর  আমি রাতে কি খাবো মা তো জানে,,,,


- না না আপনি ভুল ভাবছেন,,, আমার মা জিজ্ঞাসা করতে বলেছে,,,,আজকে মা আমাদের বাড়িতে আপনাদের সবাইকে যেতে বলেছে রাতে খাওয়ার জন্য তাই,,,আপনি কি খাবেন,,


- চিকেন স‍্যূপ আর স‍্যালাট,,,, তা হঠাৎ ও বাড়িতে খাওয়া দাওয়া কেন??


-আমি রেজাল্ট ভালো করেছি তাই,,,


- ওই রেজাল্ট সবার ভালো বলে মনে হলো,,,অঙ্কে কত পেয়েছিস?


- ৭৫


- আমি ৮৮,,, ইংলিশে কত পেয়েছিস??


-৭০


- আমি ৯০,,,,ওই রেজাল্ট নাকি ভালো হয়েছে,,,, সারাদিন তো ছনছন করে বেরাস,,,পড়তে তো দেখিনা,,,উচ্চ মাধ‍্যমিকের রেজাল্ট যদি খারাপ হয় না তো কাকুকে বলবো ছেলে দেখতে,পরের দিনই বিয়ে দিয়ে এখান থেকে বের করে দেবো,,,,মনে থাকবে কথাটা,,,


-পেখম ঘাড় কাত করে বলে" হ‍্যাঁ মনে থাকবে,,,আমি বরং আসি আবির দা ,,,,বলেই পেখম দ্রুত গতিতে আবিরের ঘর ত‍্যাগ করতে চাইলো কিন্তু তার আগেই আবির ওকে ডাকে,,,


-পাখি একটু এদিকে আয় তো,,,,পেখম আবিরের কথা মতো এগিয়ে আসলে ,,আবির পেখমের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে,তারপর পেখমের একটা পা হাঁটুর উপরে তুলে রাখে,,,আবিরের এই কান্ড দেখে পেখম বলে" এ কি করছেন আবির দা??


- চুপচাপ থাক,,তারপর পকেট থেকে একটা জোড়া নুপূর পড়িয়ে দেয় পেখমের পায়ে,,,আর ক‍্যাবিনেট থেকে নীল চুড়ি গুলো বের করে হাতে পড়িয়ে দেয়,,,,পেখমকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবির বলে" এক চান্সে পাশ করেছিস বলে দিলাম,, এবার থেকে এইগুলো সব সময় পড়ে থাকবি"‌, যেমন আগে পড়ে থাকতিস,,,by the way এখন পড়িস না কেন??


- আমার নুপূর ঠিক করতে দেওয়া আছে দোকানে,, আনা হয়নি তাই,,,কিন্তু সব সময় কেন পড়বো??


- এমনি,,, তুই যা এখন,,,পেখম চলেই যাচ্ছিলো,,,কিন্তু যাওয়ার সময় আবিরের বলা কথা গুলো শ্রবণ হতেই পিছন ফিরে দেখে আবির ব‍্যালকনির দিকে তাকিয়ে বলছে,,,


-"সে কি জানে না তার ওই হাতে চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজ,,আর পায়ে নুপূরের রুমঝুম তাল মেলানো মাতাল করা শব্দ শ্রবণ না হওয়া পর্যন্ত আমার এ হৃদয়ে শান্তি মেলে না"

______


-কথা গুলো মনে পড়তেই পেখম আবার কেঁদে ফেলে,,,সেদিন আবিরের কথা গুলোর মর্মার্থ বোঝেনি সেই কিশোরী মন,,,,কিন্তু যেদিন থেকে সে যৌবনে পদার্পণ করেছে সেইদিন এর অর্থ বোধগম্য হতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়েছিল সে,,,,


তাড়াতাড়ি করে ঘরটা গুছিয়ে যেই ব‍্যালকনির দরজা বন্ধ করতে যাবে ওমনি সামনে চেয়ে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে ওর দিয়ে তাকিয়ে,,,সঙ্গে সঙ্গে পেখমের বুকটা ধক করে ওঠে,,,কি অবস্থা করেছে মানুষটা নিজের,,,গালে তরল কিছু অনুভব হতেই পেখম হাত দিয়ে দেখে চোখ দিয়ে আপনাআপনি জল ঝড়ছে,,,, ও নিজেকে সামলানোর জন্যে আবিরের মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দেয়,,, তারপর জানালা বন্ধ করে দিয়ে কেঁদে ফেলে,,,,ও চাইনা ওই মানুষটাকে ঘৃণা করতে,,,, ভালোবাসার মানুষটিকে কখনো ঘৃণা করা যায় না,,,

_________________________________________


-আজ পেখমের মেহেন্দী,,কাল বিয়ে,,,,ওর সব বন্ধুরা আজকে থেকেই এখানে থাকবে,,সন্ধ্যার দিকে একটা ছোট করে অনুষ্ঠান হবে ড্রয়িংরুমে,,, বিকেল থেকেই তার তোড়জোড় চলছে,,,


-সন্ধ্যার দিকে perlour থেকে দুটো মেয়ে আসে,,,ওরা সবার মেহেন্দী করে দেয়,,,এই দিকে পেখমের বন্ধুরা,,, বাড়ির পিচ্চি গুলো এমনকি বাড়ির বড়ো রাও নাচ গান করছে এই অনুষ্ঠানে,,,,


- এমন সময় parlour একটি মেয়ে পেখমকে জিজ্ঞাসা করে হাতে কি নাম লিখবে,,,আর পেখম আনমনেই বলে আবির। যথারীতি মেয়েটা আবিরের নাম লিখে দেয়,,,,


-রাতে সব খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ পেখমের সাথে আড্ডা মেরে শুতে চলে যায়,,,, রুশা আর প্রিয়া পেখমের কাছে থাকে,,,,


যেহেতু পেখমের আইবুড়ো ভাত ছিল তাই মনোরমা ওকে খাইয়ে দিয়েছিল,,, খাওয়াতে খাওয়াতে এক পর্যায় মা মেয়ে দুজনেই কেঁদে ফেলে,,,তাদের এই দৃশ্য দেখে পুলক ওর বাবাকে জড়িয়ে কেঁদে দিয়েছিল,,,


-পেখু এবার হাতটা ধুঁয়ে আয়,,,মেহেন্দী শুকিয়ে গিয়েছে,,(প্রিয়া)


- পেখম ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে,,, শাড়ি পাল্টে একটা টপ আর প্লাজো পড়লো,,,সারাদিন শাড়িতে থাকায় ওর কেমন অসস্তি হচ্ছে তাই,,,,


-এই পেখু এইদিকে আয়,,দেখি তো মেহেন্দী কেমন হয়েছে,,,আর মন খারাপ করে থাকিস না প্লিজ,,,(রুশা)


- মন খারাপ করে কি হবে,,,কাল দিনটার পর তো সব কিছু পাল্টে যাবে,,,দেখবি আমিও পাল্টে গিয়েছি,,,,দেখ মেহেন্দী বলে হাতের দিকে তাকাতেই চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলে তিন জনেই,,,,


- পেখু তুই এটা খেয়াল করিস নি,,,এটা কি করে হলো???(প্রিয়া)


-এখন যদি কেউ দেখে ,,কি ভাববে,,,বিশেষ করে ঋষি আর ওর পিসি ঠাম্মাম,,(রুশা)


- আমি নিজেই বুঝতে পারছি না,,, কি করে হলো,,, উনার নাম আমার হাতে কে লিখে দিলো,,,,


- ওইসব ভেবে কাজ নেই,, যা হওয়ার হয়ে গেছে,,, অনেক রাত হয়ে গেছে এখন ঘুমা,,,কাল আবার কাকভোরে উঠতে হবে,,, আপাতত তুই এই হাত কাউকে ভালো করে দেখাবি না,,,,কাল সকালে মেহেন্দী এনে ওই জায়গায় লাগিয়ে দেবো যাতে কেউ না বুঝতে পারে,,,,(প্রিয়া)


- প্রায় সকাল হতে চলল ,,,সবাই এখন ঘুমিয়ে আছে,,, কিন্তু মাত্র দুজোড়া চোখে ঘুম নেই,,, তার বদলে রয়েছে বারিধারা,,,,,

________________________________________


-কাকভোরে উঠে দধিমঙ্গল,,,আলতা উৎসব,,,জল সয়া সব কিছুর নিয়ম পালন করা প্রায় হয়ে গেছে,,,, পেখম ওর ঘরে বসে আছে আর সবাই ওকে ঘিরে বসে আছে,,, এক এক জন এক এক ভাবে কথা বলে পেখমকে লজ্জায় ফেলার চেষ্টা করছে কিন্তু তাতে পেখমের মুখে এক বিন্দুও লজ্জার আভাস পাওয়া যাচ্ছে না,,,


- এরই মধ্যে বাড়ির কেউ একজন দৌড়ে এসে বলে "ওরে সবাই এইদিকে আয়,,,বরের বাড়ি থেকে গায়ে হলুদের তত্ত্ব চলে এসেছে,,,,,


-তীয়া যা পেখমকে হলুদের শাড়িটা পড়িয়ে দে,,,ব্রাহ্মণ তাড়া দিচ্ছে,,, ওদিকেও তো যেতে হবে,,( মনোরমা)


- ঠিক আছে মা তুমি চিন্তা করো না এইদিকে আমি আছি,,,প্রিয়া রুশা এই শাড়িটা একটু পড়িয়ে দাও ওকে,,,আমি ওর গয়না গুলো নিয়ে আসি,,,পেখমকে একটা হলুদ তাঁতের শাড়ি পড়ানো হয়েছে,,,আর তার সাথে হালকা সোনার গয়না,,,চুল গুলো খোঁপা করে দিয়েছে প্রিয়া আর রুশা হালকা সাজিয়ে দিয়েছে,,,


- পেখু তুই তাহলে একটু বোস,,,আমরা শাড়ি পড়ে আসি,,,তারপর তোকে হলুদের ওখানে নিয়ে যাবো,,,প্রিয়া, রুশা ওরা চলে যাওয়ার পর পেখম চুপচাপ বসে থাকে ব‍্যালকনির দোল্লায়,, একবার আবিরকে দেখবে তাই,,,তখনই একটা পিচ্চি দৌড়ে আসে ওর কাছে,,,


-পেখু দিদি পেখু দিদি এটা তোমাকে একটা দাদা দিয়েছে,, হাতে একটা চিরকুট দিয়ে আবার দৌড়ে ঘরে থেকে চলে যায়,,,পেখম চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখে তাতে লেখা আছে


-" একবার কি আসতে পারবে?? শেষবারের মতো কি একবার দেখতে দেবে তোমাকে"?? তাহলে গ্ৰাউন্ড ফ্লোরের পিছনে এসো,,,


-পেখম চিঠিটা দেখেই কেঁদে ফেললো,,,এটা যে ওর আবির দা লিখেছে,, ও জানে,,তাই কোনো দিক না চিন্তা করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,,,,

___________________________________________


-কেন পাগলের মতো করছিস,,,এতদিন তো ঠিক ছিলিস তবে আজ কেন??? কেন চলে যাচ্ছিস,,,আরে আমি তো দেখতে চাইছিলাম আমার ছেলে কি করে সহ‍্য করে থাকতে পারে পেখমের বিয়ের দৃশ্য দেখে,,,(অনুপমা)


- উফ মা তুমি চুপ করো,,,আমি আর সহ্য করতে পারছি না,,, তুমি এই দিকটা সামলে নিয়ো,,,আমি এখুনি বেরিয়ে যাবো,,,তুমি যাও এখন,,,(আবির)


- সবাই যদি জিজ্ঞাসা করে ব‍্যাঙ্গালোরে কেন গেছে??


- বলবে অফিসের দরকারে,,, প্লিজ মা এইটুকু সাহায্য করো,,,


-মা সর্বনাশ হয়ে গেছে,,(চিৎকার করে তীয়া বলে)


- তীয়া তুই এখানে,,, আমি তো যাচ্ছিলাম ও বাড়ি,,,,কাঁদছিস কেন?? কি হয়েছে মা???(অনুপমা)


- কি হল তীয়া তুই কাঁদছিস কেন?? আমার পাখি ঠিক আছে তো?? কি হল বল,,,(চিৎকার করে)


- দাদাভাই পাখিকে দু ঘন্টা যাবত কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,,, এইদিকে ঋষির বাড়ি থেকে সবাই এসে যা নয় তাই বলছে,,,কোথায় গেল মেয়েটা বুঝতে পারছি না,,,


- কথা গুলো শুনে আবিরের পায়ের তলার মাটি নড়ে যায়,,,নিজেকে সামলে দৌড়ে যায় ও বাড়িতে,,, ওর পিছনে অনুপমা,, তীয়া দৌড়ে যায়,,,,মাত্র কয়েক মিনিটের ব‍্যবধানে বিয়ের বাড়ি শোকের বাড়িতে পরিণত হয়েছে,,, আবির ,,পুলক,, ঋষি, ওদের বন্ধুরা সবাই খুঁজতে বেরিয়েছে,, অশোক আর দেবেন্দ্র বাবু থানায় গিয়েছে ,,,,,


- সবাই সব দিকে ঘুরেও কোথাও পাখিকে খুঁজে পায়নি,,,এইদিকে রাত হয়ে গিয়েছে,,আবিরের মনে হচ্ছে ওর জীবন টা কেউ নিয়ে নিচ্ছে,,, দম আটকে আসছে,,,এমন সময় ওর পাখির কলেজের কথা মনে পড়ে গেল,,,,কলেজেও তো অনেক ছেলে পাখির শত্রু হতে পারে,,, আবির নিজে অনেক ছেলেকে থ্রেট পর্যন্ত দিয়েছে যাতে পাখিকে ডিসটার্ব না করে,,,আর কলেজের পাশের জায়গা টাও খারাপ,,,কি মনে করে আবির গাড়ি ঘুরিয়ে কলেজের দিকে গেল,,,,,,

__________________________________________


- একটা পুরোনো ঘরের মধ্যে পেখম শুয়ে আছে,,জ্ঞান ফেরার পর থেকে একটুও নড়তে পারছে না,, মাথাটা যন্ত্রণা করছে ভীষণ,,,পাশের ঘর থেকে কয়েকটি ছেলের হাসির শব্দ শুনে ও ভয় পেয়ে যায়,,, কোনো রকমে উঠে পালানোর চেষ্টা করে,,, ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে চারপাশে অন্ধকার,, ওর তখন দুপুরের কথা মনে পড়ে যায়,,,


- গ্ৰাউন্ড ফ্লোরের পিছন দিকে গিয়ে আবিরকে না পেয়ে ফিরেই আসছিল,, তারপর হঠাৎ মুখে কিছু অনুভব করায় আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,,, এখানে কিভাবে এসেছে?? কারা নিয়ে এসেছে কিছুই মনে নেই ওর,,,,ভীষণ কান্না পাচ্ছে পেখমের,,, না জানি বাড়িতে সবাই কি করছে,,,এইসব ভাবতে ভাবতে দৌড়াতে গিয়ে হঠাৎ একজনের সাথে ধাক্কা খায় পেখম,,, মুখ তুলে তাকিয়ে সেই ব‍্যক্তিকে দেখে ভয়ে গুটিয়ে যায় ও,,,,


-কোথায় যাচ্ছিলে,,,,


- কেন এনেছেন এখানে,,, ছেড়ে দিন আমাকে,,,


-ছেড়ে দেওয়ার জন্য তোকে আনিনি,,,অনেক হিসাব বাকি আছে বলেই সেই ব‍্যক্তি পেখমের শাড়ির আঁচল ধরে টান দেয়,,,পিন করা ছিল বলে শাড়ির আঁচল ও ব্লাউজ ছিড়ে যায়,,, পেখম সেই ব‍্যক্তিটাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে রাস্তার দিকে চলে যায়,,,, আর জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলছে বাঁচাও ,,,,


- আবির কলেজের সামনে গাড়ি থামিয়ে আশেপাশে দেখে আর তখনি ওর কানে আসে কারোর চিৎকার,,, ও সেই শব্দ অনুসরণ করে পাখি বলে ডেকে দৌড়ে যায় সেদিকে,,,,পাখি আবিরের গলা শুনে ওইদিকে যেতে গেলেই সেই ব‍্যক্তি পাখিকে ধরে ফেলে তারপর জোড় করে খুলে দেয় শাড়ি,,,,ছিঁড়ে দেয় ব্লাউজের বেশ কিছু অংশ,,,,আবির যাওয়ার সময় একটা কানের দুল পাই ,,ও ওটা অনুসরণ করে দৌড়ে যায় সেদিকে,,চারপাশে অন্ধকারের জন্যে আশেপাশের কিছুই দেখা যাচ্ছে না,, পাখি সেই ব‍্যক্তির হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য তার হাতে কামড়ে দেয়,,,আর ওই ব‍্যক্তি পাখির মাথায় আঘাত করে যার ফলে পাখি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,,,,কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পরে কারোর পায়ের শব্দ শুনতে পায় পাখি,,,চিৎকার করার আগেই সেই ব‍্যক্তিটি পাখির হাত মুখ চেপে ধরে,,,পাখির নড়ার শক্তি নেই,,, চোখ দিয়ে ঝড়ছে অনবরত জল আর তার মাঝেই দেখতে পেল আবির ওদের পাশ দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে,,,,ও মনে মনে বলে ওঠে আবির দা আমাকে বাঁচান,,,পিছন দিকে তাকান,,,,আমার সর্বনাশ হতে দেবেন না,,,,আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল আবিরের অবয়ব,,,পেখম চোখ বন্ধ করলো,,,,তবে কি শেষ হয়ে গেল পেখমের সতীত্ব???


চলবে,,,,,