#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২৫
-সেই কখন থেকে বই মুখের সামনে নিয়ে বসে আছে পেখম,,, আবির ওর সামনে বই গুলো রেখে ফ্রেশ হতে গেছে,,,, প্রায় আধা ঘন্টা পর আবির ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে পেখম অন্য দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে আর ডান হাতের নখ দাঁত দিয়ে কাটছে,,,আবির একটু এগিয়ে এসে পেখমের সামনে দাঁড়ালো,,তাতেও পেখমের কোনো হেলদোল না দেখে গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল,,
- হমম হমম তো আজকাল বই এর লেখা বুঝি ব্যালকনির পর্দায় থাকে??( টাউজারের পকেটে হাত রেখে র্নিলিপ্ত ভাবে কথা টা বলল)
-পেখম অন্যমনস্ক থাকায় হঠাৎ করে আবিরের কন্ঠস্বর শুনে কেঁপে ওঠে,,, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে " এত বড়ো হয়েছেন,, এত বড়ো একজন business man আর তা ছাড়া business কলেজে নাকি টপ করতেন,,তাহলে এইটুকুও জানেন না যে ব্যালকনির পর্দায় কোনো বই এর লেখা থাকে না,,, যদি না সেটা ওখানে টোকা হয়,,,,
- আজকাল বড্ড মুখে মুখে কথা বলো,,যেটা আমি পছন্দ করি না পাখি,,,
- আমিও অনেক কিছু পছন্দ করি না,,,
- কিন্তু আফসোস এটাই যে তোমার পছন্দ হোক বা না হোক সেখানে জিনিস গুলোই তোমাকে মেনে চলতে হবে,,, এখন ঝটপট একবার বই গুলো দেখে নাও,,তোমার হাতে দশ মিনিট সময় আছে ,,তারপর আমি প্রশ্ন করবো আর যদি তুমি সঠিক উত্তর দিতে না পারো তাহলে আমি তোমাকে যে শান্তি দেবো সেটা তোমাকে মানতে হবে,,,
- মানে টা কি?? কাল আমার পরীক্ষা এখন আপনি পড়া ধরবেন?? আপনার কি মনে হয় আমি বাচ্চা??
- আমার মনে হয় না পাখি,,তুমি তো সত্যিই বাচ্চা, নাহলে কি আমাকে এত অপেক্ষা করতে হয়???
- মানে কি বলতে চাইছেন একটু স্পষ্ট করে বলুন,,,আর আমি মোটেও বাচ্চা নয়,,,আমি অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী,, কাল থেকে আমার ফাইনাল পরীক্ষা,, তারপরে আমি তৃতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হবো,,তাহলে আমাকে আপনার কোন দিক দিয়ে বাচ্চা মনে হয়??? আর আমি যদি বাচ্চা হই তাহলে আপনি একজন বুড়ো,,,
-পেখমের কথা গুলো শুনে আবির ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে পাখির উদ্দেশ্যে বলে" তুমি বাচ্চা নয় তাই তো ঠিক আছে,,, তাহলে তোমার শাস্তি আমি বড়োদের মতো করেই দেবো,,,তোমার সময় শুরু হচ্ছে এখন থেকে,,,,
- আবির নিজের কথা মতো দশ মিনিট পর পেখমের কাছে থেকে বই নিয়ে নেয়,,,তারপর এক এক করে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে থাকে,,পেখম মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়,,, কিন্তু যখন স্ট্যাটিসটিক এর উপর আবির প্রশ্ন করতে শুরু করে তখন পেখম সব প্রশ্নের উত্তর গুলিয়ে ফেলে,,,
- কি হল বলো মিডিয়ানের সূত্র কি??আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো simple একটা উত্তরের জন্যে??
- উফফ আপনি একটু চুপ করুন না,,,আমি মনে করার চেষ্টা করছি,,, ওই তো 2min + না - ছিল,,,মনে পড়ছে না(মুখ টা করুণ অবস্থা করে বলে,,,আর যা দেখে আবিরের হাসি পেলেও নিজেকে সামলে গম্ভীর হয়ে বলে,,)
- উত্তরটা যখন মনে নেয় তাহলে শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও,,,
- ছেড়ে দিন না,,,আপনি বরং বইটা দিন আমি একবার রিভাইস দি,,
- পড়তে তো তোমাকে হবে যতক্ষণ না আমি উত্তর ঠিক ঠাক পাবো,,,সেটা যত রাতই না হোক,,, কিন্তু এখন শাস্তি তোমাকে পেতে হবে,,,আর যেহেতু তুমি নিজে দাবী করছো যে তুমি বাচ্চা না বড়ো,,সুতরাং শাস্তিও তোমাকে বড়োদের মতো পেতে হবে,,,আর তোমার শাস্তি হলো- ঝটপট আমার কাছে এসে আমার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে থাকো দশ মিনিট,,,আবিরের এমন কথা শুনে পেখম হতভম্ব হয়ে যায়,,,কতক্ষণ যে ও ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে ওইভাবে তাকিয়ে ছিল আবিরের দিকে তার ঠিক হিসাব নেই,,,ওর ঘোর কাটে আবিরের ডাকে,,,,
- কি হল পাখি,,,কি বলছি আমি,, যদি তুমি আমার কথা না শোনো তাহলে কিন্তু এর থেকেও বড়ো শাস্তি দেবো,,অযথা দেরি করে আমাকে রাগিয়ে দিও না,, যদি একবার রেগে যায় জানো তো আমি কি করতে পারি,,,(গম্ভীর হয়ে)
- আবিরের এই রকম কথা শুনে পেখমের আর সাহস হল না দিরুক্তি করার,,,ও আস্তে করে করে আবিরের সামনে যায়, তারপর নিজের মাথাটা আবিরের বুকে রেখে কাঁপা কাঁপা হাতে আবিরকে জড়িয়ে ধরে,,,আর আবির মুচকি হেসে পরম আবেশে পেখমকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে,,,,,
- আবিরের বুকে মাথা রাখার সাথে সাথে পেখমের শরীর বেয়ে ঠান্ডা রক্তস্রোত নেমে যায়,,,দুজনের অশান্ত মনটা এক নিমিষেই শান্ত হয়ে যায়,,, পেখম শুনতে পারছে তার স্বামী নামক পুরুষটির হৃদয়ের স্পন্দন যা ক্ষনিকে ক্ষনিকে বলছে এটাই তোর স্বপ্ন পুরুষ,,, এটাই তোর প্রেমিক পুরুষ,,, এটাই তোর একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষ,,, এই সেই পুরুষ যার উপরে একমাত্র তোরই অধিকার সম্পূর্ণ তোরই,,,আর কারোর নয়,,,,,
- পেখমকে জড়িয়ে ধরে আবির ভাবছে,,আজ কতদিন পর তোমাকে এইভাবে কাছে পেলাম আমি রাত-প্রেয়সী,,,, তুমি কি আমাকে একটু বুঝবে না,,, ভালোবাসবে না আগের মতো করে???
- তারপর এইভাবেই আবির প্রশ্ন করে আর পাখি উত্তর দেয়,,কখনো কখনো জেনে শুনেই ভুল উত্তর দেয় পাখি আর যার শাস্তি স্বরূপ তাকে কখনো আবিরের গালে চুমু খেতে হয়েছে,,,কখনো মাথায় পাঁচ মিনিট হাত বুলিয়ে দিতে হয়েছে তো কখনো কফি করে আনতে হয়েছে,,,আবার কখনো কখনো আবিরের দুই গালে ও কপালে চুম্বন করতে হয়েছে,,, এমনকি গান শোনাতেও হয়েছে,,,আর এইসব কাজ পাখি ভালোবেসেই করেছে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল উত্তর দিয়ে,,, আসলে এইরকম ভালোবাসাময় সময়টা ওরা দুজনেই উপভোগ করতে চেয়েছিল যার জন্যে আবিরো কঠিন কঠিন প্রশ্ন ,,ঘুড়িয়ে ফিড়িয়ে প্রশ্ন করছিল পেখমের কাছে আসার জন্য,,,,বেশ অনেক রাত করেই দুজনে ঘুমিয়েছে প্রশ্ন-উত্তরের পালা শেষ করে।
- পরীক্ষা গুলো ভালো ভাবেই দেয় পেখম,, কেননা তাকে এই কদিন আবির পড়িয়েছে,,তবে হ্যাঁ পড়ার মধ্যে পাখির শাস্তিও ছিল রোমান্টিকতায় ভরপুর। আবির পরীক্ষার কদিন পেখমকে দিয়ে এসেছে আর নিয়েও এসেছে,,পেখমের কখন কি লাগবে সেদিকেও খেয়াল রেখেছে,, পেখম যতবার দুর্বল হয়ে পড়ে আবিরের প্রতি ঠিক ততবারই ওই তিক্ত সত্যিটা চোখে ভেসে উঠেছে,,,,ঠিক তখনই নিজেকে আবার সামলে নিয়েছে,,,
__________________________________________
- সোনালী আলোয় ঝলমলে আকাশ টা হঠাৎ করেই ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায় আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বয়ে যায় বাতাস,,,শরৎকালে শরৎ মেঘের এই হলো সমস্যা,, যখন তখন মেঘ সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি হবে,,,কিন্তু তবুও পেখমের এই ঋতুটাকে খুব ভালো লাগে,,,যখন ও কাশফুল দেখে রাস্তার চারপাশে,, আর যখন শিউলি ফুলের ঘ্রাণে মেতে ওঠে এই শরতের পরিবেশ তখন ওর মন নেচে ওঠে বাঁধন ছাড়া ময়ূরের মতো,,,,
- রাস্তার চারপাশে যখন ধূলোময় পরিবেশ ঠিক তার মাঝেই হেঁটে আসে ওরা ছয়জন,,, হ্যাঁ পেখমদের কথা বলা হচ্ছে এখানে,,, পরীক্ষা শেষ হওয়ার একমাসের মাথায় আবির নিজে ওকে নতুন একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেয়,,ফাইনাল ইয়ার টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে,,আর দ্বিতীয় বর্ষের রেজাল্ট অবশ্য নেক্সট সপ্তাহে দেবে,,,,
- আর পেখম যেহেতু এই কোচিং সেন্টারে পড়ে সুতরাং পেখমের পিছনে পিছনে ওর পাঁচজন বন্ধুরাও এখানে চলে আসে,,,আজ বিকেলে কোচিং ছিল তাই ওরা একসাথেই এসেছে কিন্তু রাস্তার মাঝেই এই বৃষ্টি শুরু হওয়াতে একটু ভিজে যায় ওরা,,,
- কোচিং ক্লাস শেষ হয়ে যায় রাত আটটার সময়,, বাইরে তখনই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে,,,প্রায় সবাই যে যার মতো বাড়িতেও চলে যায়। পেখম জোড় করে প্রিয়া আর রুশা কে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়,,অর্নবদের বললে ওরা বলে যতক্ষণ আবিরদা না আসবে ওরা দাঁড়াবে,,,হঠাৎ ঝুমঝুম করে জোড়ে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে যায়,, পেখম বুঝে উঠতে পারছে না আবিরের কেন এত দেরি হচ্ছে,,এর আগে এমন দেরি কখনো হয়নি,,,
- পেখু তুই একটু দাঁড়া ,, আমরা একটু স্যারের সাথে কথা বলে আসছি,,অর্নব তোর ক্রাশ সামনেই দাঁড়িয়ে আছে,, যা একবার তোর ছাতাটা দিয়ে আয়,,(দিপু)
- ফাউল বকিস না,,,যা তোর কাজে,,,( অর্নব)
- এই অর্নব যা তো মনের কথা টা আজকে বলেই দে(পেখম)
- সত্যি যাবো বলছিস?? তা তুই এখানে একা থাকবি ,,তুইও চল আমার সাথে,,(অর্নব)
- আরে আমি একা কোথায়,,, কত মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই পাশে,,,আর তোরা তো এখানেই আছিস শুধু একটু দূরে এই যা,,,
- পেখম একটু পর পর ঘড়ি দেখছে আর রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে,, এমন সময় পিছন থেকে রাহুল বলে ওঠে,,
( রাহুল পেখমদের সাথে এই কোচিং সেন্টারে পড়ে,,আবার রুশাকেও পছন্দ করে,, সেই সূত্রে ওদের সাথে বেশ ভালোভাবে মিশে গেছে এই এক মাসে)
- পেখম কোনো সমস্যা?? বারবার এইভাবে ঘড়ি দেখছো,,,(রাহুল)
- না না তেমন কোনো সমস্যা না,,আবির দা এখনো আসছে না কেন তাই??
- সিরিয়াসলি পেখম তুমি তোমার হাসবেন্ড কে এখনো দাদা বলছো,,,তাহলে তো তোমাদের বেবি হওয়ার পর তারা আবিরদাকে মামা বলে ডাকবে,,,ব্যাপার টা তখন কেমন হবে বলোতো,,(কথাটি বলেই রাহুল হেসে দেয়,,,পেখম প্রথমে ভ্রু কুঁচকালেও পরে এইসব ভেবে রাহুলের হাসিতে যোগ দেয়,,,আর তারপর হাসতে হাসতে বলে,,,
- আমি তো এটা ভেবে দেখিনি,, ভাগ্যিস তুমি বললে ,,,,এটা নিয়ে এখন আমাকে গবেষণা করতে হবে,,, কথাটা বলে আর এক দফা দুজন হেসে উঠলো,,, আর এইসব কিছু দূর থেকেই গাড়িতে বসে দেখছিল আবির,,সৃষ্টি হয় মনের মধ্যে দাবানল আর যেটার আভাস চারিদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই নিজেকে সামলে নেয় আবির,,,
-আবির গাড়ি থেকে নেমে ছাতা মাথায় দিয়ে পেখমের কাছে এগিয়ে যায়,,, আর ততক্ষণে অর্নবরাও চলে আসে ওখানে,,, আবিরকে দেখে ওরা সবাই বলে ওঠে,,,, কেমন আছো?? আবির ওদের প্রশ্নের উত্তর দেয় ,,,তারপর ছাতাটা পাখির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে গাড়িতে গিয়ে বসতে,,পাখিও আর কথা না বাড়িয়ে রাহুল ও ওর বন্ধুদের কাছে থেকে বিদায় নেয়,,এরপর সবাই এক এক করে আবিরের সাথে কথা বলে বাড়িতে চলে যাও,,আর আবির কোচিং সেন্টারের স্যারের সাথে কথা বলে গাড়িতে এসে বসে,,,কোচিং সেন্টার থেকে গাড়ির কাছে আসতে আসতেই আবিরের শার্ট প্রায় ভিজে যায়,,,তাই দেখে পাখি বলে,,,
- আপনি তো প্রায় ভিজে গেছেন দেখছি,,,
- তাতে তোমার কি??( বলেই গাড়িতে স্টার্ট দিলো)
-আবিরের কথার মাঝে রাগের আভাস স্পষ্ট ভাবে পাই পেখম,,, তাই খুব ধিরেই বলে,,আমার কিছু না,, কিন্তু একটু পরেই আপনি হাচ্চি করতে শুরু করবেন,, বলেই আবিরের দিকে একটু এগিয়ে এসে নিজের ওরনা দিয়ে আবিরের মাথাটা মুছে দিতে লাগলো ,,,,
- পেখমের এইরূপ কার্যে আবির হতবাক হয়ে পড়ে,,,ও হঠাৎ উপলব্ধি করতে লাগলো যে ক্রমেই যে রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সেটাতে কেউ এক পশলা বৃষ্টি এনে দিয়ে শান্ত করে দিলো,,,,,মনে বিষাদের মেঘটা কাটার সাথে সাথে মেজাজটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো,,
- পেখম আবিরের মাথা মুছে দিতে দিতে হঠাৎ খেয়াল করে ও আবিরের খুব কাছে চলে এসেছে,,, এতটাই কাছে চলে এসেছে যে আবিরের গরম নিশ্বাস ওর মুখে এসে বারি খাচ্ছে,,,ও তাড়াতাড়ি করে সরে আসতে নিলেই টের পায় একজোড়া শক্তিশালী বাহু ওর কোমড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে,,,এই স্পর্শ ওকে আলাদা ভাবে শিহরিত করছে ক্ষণে ক্ষণে,,ও সরে আসার জন্য আবিরের দিকে তাকাতেই দেখে একজোড়া মোহনীয় চোখ ওর দিকে আকৃষ্ট হয়ে তাকিয়ে আছে,, যা দেখে পেখমের নিজেকে সামলে রাখতে খুব কষ্ট হয়,,,আর যখন ও অনুভব করে আবির ধিরে ধিরে ওর দিকে অগ্ৰসর হচ্ছে ঠিক তখনই পিছনের গাড়ি গুলো হর্ন দিতে শুরু করে,,আর কেউ কেউ তো বলে ওঠে রাস্তার মাঝে এইভাবে কেউ হুট করে গাড়ি থামিয়ে দেয়,,,এইসব কথা কানে আসতেই আবিরের ঘোর কাটে,,,আর সাথে সাথেই ওর চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে ওঠে শেষের কথা টা শুনে,,
এদিকে পেখম তো মনে মনে ওদের ধন্যবাদ দেওয়া শুরু করে দিয়েছে,,,,
- বৃষ্টির জন্যে যখন সবাই দোকান বন্ধ করে বসে আছে,, রাস্তাঘাট প্রায় যখন ফাঁকা ,,,ঠিক তখনই আবির খেয়াল করে রাস্তার একধারে একটি বাচ্চা ছেলে ভিজছে,,হাতে তার একটা ঝুড়ি, আর সেই ঝুড়িতে রয়েছে বেলি ফুলের মালা,,,সদ্য ফোঁটা শিউলি ফুল,,,আবির গাড়িটা ছেলেটার সামনে দাঁড় করায়,এতে ছেলেটা একটু ভয় পেলেও পরে মুখে হাসির রেখা ফোঁটে এই ভেবে হয়তো ওর ফুল কিনবে।
আবির ওই ছেলেটাকে বলে,,,
- বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন?? জ্বর আসবে তো,,,
- ভিজতাম না,,কিন্তু এই ফুল গুলো,,(বলেই মাথা নিচু করে ফেলে)
- আবির ওর ওয়ালেট থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট ছেলেটার হাতে দিয়ে বলে " তোর ঝুড়িতে যা আছে সব দে"
- ঝুড়িতে যা আছে সব দিলেও তো এত টাকা হবে না,,,
- না হোক,, ওটা তুই রেখে দে,,,যদি জ্বর আসে ওষুধ আর ফল কিনে নিস,,,
- ঠিক আছে বাবু,,,আপনি তাহলে এই ঝুড়িটা ধরেই নিন,,,বলেই আবিরের হাতে ঝুড়ি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় ছেলেটি,,,আবির ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ,,, তারপরে পেখমের হাতে ঝুড়িটা ধরিয়ে দিয়ে বলে,,,,
- "শুভ্র প্রণয়ের এই বর্ষণে এই শুভ্র ফুলগুলো একমাত্র শুভ্র প্রেয়সীর হাতেই মানায়"। (কথাটা বলে আবার ড্রাইভিং মনোযোগ দেয় আবির)
- পেখম যত এই মানুষ টাকে দেখছে ততই অবাক হচ্ছে,,,পেখম বুঝতে পারে ফুল কেনার কারণ।প্রথমত ,ছেলেটার জন্যে কষ্ট হচ্ছিলো তাই ফুল গুলো নিয়েছে,, কারণ শুধু শুধু টাকা দিলে ছেলেটা হয়তোবা নিতো না,,,,আর দ্বিতীয়ত, একটু আগে ওর সাথে জোড়ে গলায় কথা বলেছে তার জন্যে এই ফুল গুলো দেওয়া যাতে আমি রাগ না করি,,,,,কথা গুলো নিজের মনে মনে বলে হেসে উঠলো পেখম,,,,তারপর ঝুড়ি থেকে ফুল গুলো হাতে তুলে নিয়ে তার ঘ্রাণ নিতে থাকে। ক্রমেই মনে বেড়ে চলেছে আবিরের প্রতি ভালোলাগার একরাশ অনুভূতি,,,,,
-ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে আড় চোখে আবির বারবার পেখমকে দেখে,, ফুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে প্রেয়সীর ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে আবিরের বলতে ইচ্ছা হলো " এই পৃথিবীতে যেন এইরকম প্রেমময় বর্ষণ ক্ষণে ক্ষণেই নামুক,,,আর ধুয়ে দিক মনের সকল বিষাদ। আর সেখানেই জন্ম নিক এক শুভ্র প্রণয়ের অনুভূতি"।
চলবে,,,,,
(
0 Comments:
Post a Comment