#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২৪
-মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে যখন পাখিরা তাদের বাসা থেকে বেরিয়ে উড়তে থাকে অজানা জায়গার উদ্দেশ্যে তখন তাদের পথ দেখানোর জন্য ভোরের আলো ফুটে ওঠে সর্বদিকে,,,আর সেই সাথে নতুন একটা সকালের উদয় হয়। ভোরের আলো সামান্য জানালা আর ব্যালকনির পর্দার ফাঁক দিয়ে খুবই সন্তপর্ণে প্রবেশ করে ঘরটার অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত করে তোলে।
-অন্ধকার ভাবটা কেটে গিয়ে পেখমের চোখের উপর আলোর আভাস লাগতেই ও বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে নিল। তারপর খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে ধীরে সূস্থে পিটপিট করে চোখটি মেললো,,,তারপর নিজেকে বিছানায় দেখে তক্ষনাৎ উঠে বসলো ও,,,
-আমি যতদূর জানি কাল আমি সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম,, এখানে এলাম কখন?? নিজের মনে কথা গুলো বলে আড়োমোড়া খেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলেই চোখ যায় সোফায়,,গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে আবির,,ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না বিছানায় কিভাবে এল ও,,,
-পাখি বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারি থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল,,,,প্রায় আধা ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ব্যালকনির পর্দা সরিয়ে, কাঁচের দরজা খুলে ব্যালকনিতে গেল। তারপর ভিজে জামাকাপড় ও মাথা থেকে ভিজে টাওয়াল নিকড়ে সেই গুলো মেলে দিলো,,,ভেজা চুল গুলো কে হাত দিয়ে ঘাড়ের একপাশে আনলো,,,আবিরের ব্যালকনিতে অনেক গুলো গোলাপের চারা আছে,,ও সেই গুলো তে জল দিয়ে ঘরে আসতে যাবে ,হঠাৎ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখে চারপাশে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ পড়ে আছে,,,সেটা দেখে সকাল সকাল ওর মুডটা অফ হয়ে যায়,,,,
- কি পেয়েছেন টা কি উনি?? মানে যা ইচ্ছা তাই করবেন নাকি?? করাচ্ছি,,,এই রকম সিগারেট খেলে তো চেন-স্মোকার হয়ে যাবেন উনি,,,এইসব গুলো বলে রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে এল,,,এসে আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে" হমমম দেখো কি সুন্দর ভাবে বাচ্চাদের মতো মুখটা ইনোসেন্ট করে ঘুমাচ্ছেন,,, আপনার ঘুম আমি বার করছি,,,,
- হঠাৎ কোনো কিছুর শব্দে আবিরের ঘুমটা ভেঙে গেল,,ও চোখ পিটপিট করে খুলে দেখে পেখম ঠুসঠাস করে এদিকের জিনিস অন্যদিকে রাখছে,, তো কখনো বিছানা ঝাড়া ঝাড়ু দিয়ে দুম দুম করে বিছানা ঝাড়ছে তো কখনো ড্রেসিং টেবিলের উপরের জিনিস গুলোর জায়গা পরিবর্তন করে সেই গুলোকে জোড়ে জোড়ে শব্দ করে রাখছে,,,পেখমের এইরূপ কার্যে আবির বিষ্মিত হয়ে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ ওর দিকে,,,তারপর গুরুগম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করে "এখানে কি হচ্ছে এসব?? সকাল সকাল শান্ত পরিবেশ টাকে শব্দময় করে তুলছো কেন পাখি"??
- পাখি আবিরের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়,, তারপর হাত ভালো করে ধুয়ে, মুছে আসে ঘরে,,,আবির যে এই ঘরে আছে সেটা না দেখার ভান করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে,,,
- পাখির এইরূপ কারুকার্য বোধগম্য হলো না ঠিক আবিরের,,,ও মনে মনে স্বগোক্তি করে বলে "এ আবার ভিজে বিড়াল থেকে বাঘিনী রূপ কবে থেকে ধারণ করলো?? আবির তোর কপালে ভীষণ দুঃখ আছে,,কোথায় ভাবলি বিয়ের পর চুটিয়ে হানিমুন করবি,,কিন্তু হলো টা কি,,,,এইসব কথা ভাবার মাঝে সামনের দিকে তাকায় আবির,,আর তাকিয়েই ওর যেন হৃদস্পন্দন থেমে যায়,,পেখম কাঁচা হলুদ ও লাল রঙ মিশ্রিত একটা শাড়ি পড়েছে,,,যার আঁচল কোমড়ে গুজে রাখা,,,মায়াবী ওই চোখে হালকা কাজল ও কপালে লাল টিপ আর মাথায় সিঁদুর যা ওর স্বপ্নের প্রেয়সীকে সম্পূর্ণা করে তুলেছে,,,
- ওর সামনে যেন কোনো এক মায়াবী মানবী দাঁড়িয়ে আছে যে তার মায়ার জালে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে,,,পেখম আয়না দিয়েই দেখতে পারছে আবির ওর দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে,, ও সেইদিকে তেমন পাত্তা না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,আর আবির বেচারা ওয়াশরুমে চলে যায়,,,
__________________________________________
- মামনি বাড়ি পূরো ফাঁকা কেন??
- ও তুই উঠে গেছিস,, আমরা সবাই ভাবলাম তোরা বুঝি এখনো ঘুমাচ্ছিস,তাই আর ডাকিনি,,,হ্যাঁ সবাই চলে গেছে,,, পুলকের অফিস আছে তাই ওরাও চলে গেছে,, তবে চিন্তা করিস না প্রিয়া, রুশা, মৈনাক, ইশান আর কুশল ওরা আছে,,,
- আমাদের নিয়ে কি কথা হচ্ছিলো?? (কুশল)
- এ মা হাতে ব্যাগ কেন?? চলে যাচ্ছিস নাকি তোরা??
- হ্যাঁ কাকিমা আর্জেন্ট ছুটি নিয়ে এসেছিলাম,, তাই ফিরতে হচ্ছে,,,মৈনাক আর ইশান আমার সাথেই যাচ্ছে,,,(কুশল)
- আবিরের সাথে দেখা করেছিস??
- হ্যাঁ ওর সাথে দেখা করেই আমরা আসছি,,,ঠিক আছে এখন তাহলে আমরা আসি,,,বৌদি বলবো না তোমাকে,,, পেখু বলেই ডাকবো আমরা,,,ভালো থেকো আর আমাদের বন্ধুটাকে ভালো রেখো ( ইশান)
- অবশ্যই দাদা,,আপনারা কিন্তু আবার আসবেন(পেখম)
- হ্যাঁ আসবো,,যদি তোমার বান্ধবীরা মন খারাপ করে,,(মৈনাক)
-মিস্টার মৈনাক আপনি একটু বেশি কথা বলেন,,(রুশা)
- সেটাতো আপনাদের জন্য,,,(মৈনাক)
- কাকিমা আমরাও আসছি,,,নেক্সট মাস থেকে ফাইনাল টেস্ট পড়তে হবে,,, পেখু তুই তাহলে কালকে কলেজে আসিস,,(প্রিয়া)
- হমম ঠিক আছে,, খেয়েছিস তো তোরা??(পেখম)
- হ্যাঁ খেয়েছি,,,কালকে দেখা হচ্ছে তবে,,
-এক এক করে সবাই চলে গেলে বাড়িটা পুরো ফাঁকা হয়ে যায়,, পেখমের খুব ইচ্ছা করছিল ওদের বাড়ি যেতে কিন্তু কি নিয়মের জন্য যেতে পারিনি,,
___________________________________________
- বিয়ের সব রিচুয়াল পালন করা হয়ে গেছে,,, এরই মধ্যে আবির একবার পেখমকে নিয়ে থানায় এসেছিল রিকের বিরুদ্ধে প্রমাণ দেওয়ার জন্য,,, যথা সময়ে রিককে কোর্টে নেওয়া হয়েছিল এবং ওর শাস্তি পাঁচ বছরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
- পেখম ইদানিং পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে বেশি,,,আবিরের সাথে দেখা হয় তার রাতে,,কারণ আবির এই দিকের অফিসের সব দায়িত্ব নিজে নিয়েছে,,,আর বাইরের দিকটা অশোক বাবু নিজেই দেখাশোনা করে,,,,পেখমের সাথে আবিরের সম্পর্ক সেই বৌভাতের রাতের মতোই আছে,, আবির নিজে থেকে কথা বলতে চাইলেও পেখম এড়িয়ে যায় ওকে,,পেখমের কাল থেকেই পরীক্ষা, তাই এখন ওর যত মনোযোগ পড়াশোনা তেই এনেছে,,
- রাত আটটা বাজে,,আবির অফিস থেকে বাড়ি এসেছে,,,অনুপমার সাথে কথা বলে নিজের ঘরের দিকে গেল,,এই একমাসে কম চেষ্টা করেনি পাখির মন পাওয়ার বা ওর সাথে খোলামেলা ভাবে কথা বলার,,কিন্তু না পাখি ওকে এড়িয়ে গেছে বারংবার,,,মনে কষ্ট নিয়ে আবির নিজেকে বোঝাই ও যেই ব্যবহার টা করেছিল পাখির সাথে তাতে হয়তো এটা ওর প্রাপ্য। এই একমাসে পাখি ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে,, পাখির মুখটা না দেখতে পেলে ওর দম বন্ধ হয়ে যায়। পাখির শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ না পেলে ওর শ্বাসকষ্ট হয়,,নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে,,এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছে ও পাখির প্রতি,,,
- ঘরে এসে পাখির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আবির ব্যালকনিতে যায়,, সেখানেও পাখিকে না পেয়ে নীচে চলে আসে,,,অনুপমা আবিরকে নীচে নামতে দেখে জিজ্ঞাসা করে,,
- কি রে তুই ফ্রেশ না হয়ে চলে এলি!!
- ও মা তোমার কাছে আসছিলাম আমি,,,পাখি কোথায়?? ঘরে দেখলাম নেই,,,মহারাণী গেলেন কোথায়??কলেজের পর তো ওর কোনো টিউশনি ছিল না,,,
- উফফ আমার ছেলেটা কত কিছু ভেবে ফেলেছে,,,পেখু ও বাড়িতে গিয়েছে,,, ও তো কিছু দিন মানে পরীক্ষার কদিন ও বাড়িতে থাকবে বললো,,
- আমাকে তো একবার বললো না,,,
- দেখো মেয়ের কান্ড,,আমাকে বললো যে ফোন করে পরে তোকে বলবে,,,দেখ হয়তো ও বাড়িতে গিয়ে ভুলে গেছে,,,
- আচ্ছা মা আমি একটু ও বাড়ি থেকে ঘুরে আসছি,,,
- ফ্রেশ হয়ে যা,,,
- এসে ফ্রেশ হচ্ছি,,, বলেই আবির চলে গেল,,, ছেলে যে বউ পাগল হবে সেটা অনুপমা বিয়ের আগে থেকেই জানতেন তাই মাঝে মধ্যে ছেলের এইসব কাজ দেখলে উনি হেসে ফেলেন,,, আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি,,, উনি হাসতে হাসতে দরজা লক করে নিজের ঘরের দিকে গেলেন,,,
_________________________________________
- আচ্ছা দইটা কেমন হয়েছে বললি নাতো?? সেই তখন থেকে ৫০০ দই তুই নিজেই খেয়ে যাচ্ছিস,,,এত পেটুক কেন রে তুই?? আবির কি তোকে খাওয়াই না নাকি??(পুলক)
- মা আমি ভেবেছিলাম থাকবো এখানে,,, কিন্তু তোমার ছেলে যা শুরু করেছে,,, আমি এ দই খাবোও না আর আমি এখানে থাকবোও না,,,চললাম আমি,,,(পেখম)
- পুলক কেন শুধু শুধু মেয়েটার পিছনে লাগছিস??( মনোরমা)
- এই তুমি অফিস থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে এখানে বসে ওর পিছনে লাগছো কেন?? যাও আগে চেঞ্জ করে এসো,,,পেখু তোর দাদার কথায় কিছু মনে করিস না,,চল তুই তোর ঘরে,,,আমি আর একটু দই নিয়ে যাচ্ছি,,, তারপর দুজনে মিলে অনেক গল্প করবো,,,যা তুই,,,( পেখম ওর দাভাইকে মুখ ভেংচি কেটে তীয়ার সাথে চলে যায়,,,)
- পেখু একটা কথা জিজ্ঞাসা করি??
- হমম হু একটা কেন বৌমনি তুমি হাজার টা করতে পারো,,,এত সুন্দর দই বানিয়েছো তার জন্য এটা তোমার জন্য ছাড়,,,বলো বলো,,
- বলছি দাদাভাই এর সাথে তোর সবকিছু ঠিকঠাক তো?? মানে আমি কি বোঝাতে চাইছি বুঝতে পারছিস তো??
-পেখম সবে মুখের মধ্যে এক চামচ দই পুরেছিল , বৌমনির এমন কথায় ও সেটাকে তক্ষনাৎ গিলে,একটু হেসে বলে কেন ঠিক থাকবে না বৌমনি,,, সব ঠিকঠাক,, একদম ফাস্ট ক্লাস,,,
- এই আমি তোর সাথে আড্ডা মারছি?? সিরিয়াস হয়ে উত্তর দে,,,
- হ্যাঁ বৌমনি সব ঠিকঠাক আছে,,,বিগড়ানোর মতো কি কিছু হয়েছিল নাকি?? উনি যথেষ্ট খেয়াল রাখেন আমার,,,,
- আর তোদের মধ্যে মানে স্বামী স্ত্রীর যে সম্পর্ক তৈরি হয় সেটা তৈরি হয়েছে তো পেখু?? দেখ কিছু লুকাবি না আমার থেকে,,, আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই যা তোর এই প্রশ্নটার উত্তরের উপর নির্ভর করছে,,,
- পেখম বুঝতে পারছে তার বৌমনি কি বলতে চাইছে,,,কিন্তু ও কোন মুখে বলবে যে ওদের মধ্যে এখনো স্বামী স্ত্রীর কোনো স্বাভাবিক সম্পর্কই তৈরি হয় নি,,,, ও চাইনা ওদের মধ্যেকার কথা তৃতীয় কোনো ব্যক্তি জানুক,,কিন্তু এখন আর কি করার বৌমনি কে ও মিথ্যে বলতে পারবে না আবার সত্যিটাও বলতে পারবে না,,,ও আমতা আমতা করে তীয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে নিজের নামের উচ্চারণ শুনে ও চমকে ওঠে,,, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ,আবির পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,,,, পেখম একটা ফাঁকা ঢোক গেলে,,,,
-আরে দাদাভাই তুই কখন এলি?? আয় ভেতরে আয়,,আমি তোর জন্য কফি আনছি,,,,(তীয়া)
- তার কোনো দরকার নেই তীয়া,, আমি এখানে থাকতে আসিনি,,, জাস্ট দুটো কথা বলতে এসেছি পাখির সাথে,,,( পাখির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বললো)
- তীয়া এতক্ষণে বুঝতে পারলো নিশ্চয় কিছু করেছে পেখম,,, যার জন্য ও দাদাভাই এত রেগে আছে,,,ওদের কথা বলার জন্য স্পেস দেওয়া দরকার,,, এইসব কথা ভেবে তীয়া বলে" ঠিক আছে তোরা কথা বল,,আমি আসছি,,,
- তীয়া চলে যেতেই আবির ভিতর দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়,,, তাই দেখে পেখম ভয়ে কয়েকটা ঢোক গেলে,,,জিভ দিয়ে ঠোঁট দিয়ে ভিজিয়ে তুতলিয়ে বলে,,
- আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন??
- কারণ এই ঘরে এখন যেটা হবে,,সেটা যেন কেউ দেখতে বা শুনতে না পাই তার জন্য,,,
- মা,,মা,মানে,নে,,,ইআআআপপনি কি বলছেন,,, কি বলছেন এ সব??( দইটা রেখে দাঁড়িয়ে পড়লো বিছানা ছেড়ে)
- কি বলছি,,,যেটা ফ্যাক্ট সেটাই বলছি,,,,(এগিয়ে যেতে যেতে)
- আপনি এএএ এই এইভাবে এগিয়ে আসছেন কেন???
- তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো তাই,,,,
- পেখম আর একটু পিছিয়ে বলে,,,ঠিক আছে আমি আর পিছিয়ে যাচ্ছি না ,,আপনি আর এগোবেন না প্লিজ,,,
- কেন এগোলে কি হবে??( পকেটে হাত রেখে একটা ভ্রু উচু করে পাখির দিয়ে তাকিয়ে কথা টা বলল আবির)
- কিছু না,,, তা আপনি এই বাড়িতে??
- পাখির এই প্রশ্নে আবির তার ভ্রু যুগল কুঁচকে তাকালো পাখির দিকে,,,আবিরের এই রকম দৃষ্টি দেখে পাখি বলে,,
- না মানে আপনি আসতেই পারেন এ বাড়িতে,,,, কিন্তু হঠাৎ আমার কাছে কেন?? কি চাই??
- চাইতো আমার অনেক কিছুই,,, কিন্তু সেটা কদিনের জন্যে স্টোর করে রেখেছি, বাচ্চা মানুষ একটু বড়ো হোক,, then এই আবির চৌধুরী তাকে বুঝিয়ে দেবে সে কি জিনিস,,,( কথাটা একটু পাখির দিকে ঝুঁকেই বলল আবির,,,আর পাখি নিজের মুখটা একটু পিছিয়ে নিয়ে বললো)
- মানে?? কি বলছেন,,, আর কে বাচ্চা মানুষ?? আর কি স্টোর করে রেখেছেন??
- প্লিজ পাখি তোমার ওই ছোট মাথায় কিছু ঢুকবে না,,এমনিতে ওই ঘটে কিছু নেই,,, নাহলে এতদিন অনেক কিছুই বুঝে যেতে,,, by the way কার permission নিয়ে তুমি এই বাড়িতে এসেছো??
- আমার নিজের বাড়িতে আসতে গেলে এখন অনুমতি নিয়ে আসতে হবে নাকি,,,
- হ্যাঁ অবশ্যই তোমাকে অনুমতি নিয়েই আসতে হবে,,,
- আমি অত কারোর অনুমতি নিতে পারবো না,,, যদি আপনার এতে সমস্যা হয় তাহলে আমি আর ঐ বাড়িতে যাবো না,,,
- পেখমের এই কথায় আবিরের রাগ হলো,,,ও ধমকের সুরে বলে ওঠে" for your kind information মিস পাখি আপনি এখন লিগ্যালি মিসেস আবির চৌধুরী,, যার অর্থ হলো আপনি আর মিস পাখি সরকার নেই। আপনি এখন আমার ধরম স্ত্রী,,, সুতরাং আপনি যেখানে সেখানে নিজের ইচ্ছা মতো যেতে পারেন না,, আপনাকে আমার কাছে থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং সেটা specially আপনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক got it,,
- আবিরের কথায় পেখম রেগে গিয়ে বলে" একদম আমার উপর অধিকার খাটাতে আসবেন না,, আমি এই বিয়ে মানি না,,, আপনার কোনো অধিকার নেই আমার উপর,,,,
- পেখমের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আবির এগিয়ে যায় পেখমের কাছে,,,এতটাই এগিয়ে যায় যে একে অপরের নিশ্বাস আঁছরে পড়ে চোখে মুখে,,,পেখু পিছাতে চেয়েও পিছাতে পারছে না কারণ দুটো বলিষ্ট হাত ওর কোমড়কে শক্ত করে ধরে রেখেছে,,,দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে ,,দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়,,,পরস্পরের অধরযুগল যখন ছুঁইছুঁই ঠিক তখনই আবির পাখিকে ছেড়ে একটু সরে গিয়ে দাঁড়ায়,,,, আবির সরে দাঁড়াতেই পেখম তার সম্বিত ফিরে পাই আর সাথে সাথে নিজের লজ্জা ঢাকতে আশেপাশে তাকায়,,,পেখমের এই রকম অবস্থা দেখে আবির একটু হেসে ওঠে,তারপর নিজেকে সামলে গম্ভীর ও ভারী পুরুষালী কন্ঠে বলে ওঠে,,,
- " সে কি জানে না এই পৃথিবীতে তার উপর যদি কারোর অধিকার থেকে থাকে তো সেটা হলো এই আবির চৌধুরীর,,, এমনকি তার নিজের থেকেও বেশি এই আবির চৌধুরীর বেশি অধিকার আছে তার উপর"
- আবিরের এই কথায় পেখম ওর দিকে কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে,,,তাই দেখে আবির বলে,,,
- আমি জানি আমি দেখতে হ্যান্ডসাম, তাই বলে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে নাকি?? এখন ঝটপট আমার সাথে চলো ও বাড়িতে,,,
- আবিরের প্রথম কথাতে পেখম মিইয়ে গেলে ,শেষের কথা শুনে বলে ওঠে" আমি কোথাও যাবো না এখন,,, আগামী পনেরো দিন আমি এই বাড়িতে থাকবো,,,"
- আচ্ছা তা হঠাৎ থাকার কারণ কি??
- আমার পরীক্ষা আছে,, আমাকে অনেক পড়তে হবে তাই,,,আর ও বাড়িতে আমার পড়ায় ঠিক মন বসে না,,,( পড়ায় মন বসবে কি করে,,সারাদিন আপনাকে দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে যায়,,আর আপনি না থাকলে অসস্তিতে মন ভার হয়ে থাকে তখন আর পড়তে ইচ্ছা করে না,কথাটা মনে মনে বলে)
- আচ্ছা পড়ার ব্যাপারটা আমি দেখে নেবো,,,এখন চলো,,,
- যাবো না,,,
- ঠিক আছে, তাহলে আমার আর কিছু করার নেই( কথাটা বলেই পাখিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়,,,আর পাখি চিৎকার করে বলে" কি করছেন কি আমি যাবো না,,,, আর সবাই আছে সামনে ,কোল থেকে নামান,,কেউ দেখলে কি ভাববে,,,)
- সরি পাখি আমি এখন তোমাকে নামাতে পারবো না,,, একেবারে আমার ঘরে গিয়েই নামবে তুমি,,,
- ওদের দুজনকে এইভাবে দেখে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে যায়,,, মনোরমা বলে" কি হয়েছে আবির ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস??
- মামনি বাড়ি যাচ্ছি,,, তোমার মেয়ে আমার উপর রাগ করে চলে এসেছে,,,,তাই জোড় করে কোলে তুলে নিয়ে যাচ্ছি( পেখম তো ওই ভাবেই হাত-পা ছোটাচ্ছে)
- ও মা আমি ও বাড়িতে যাবো না,,, আমি এখানেই থাকবো,,,( পেখম)
- একদম না,,,যদি এমনি আসতিস তাহলে বারণ করতাম না,, কিন্তু তুই আমার ছেলের উপর রাগ করে এই বাড়িতে এসেছিস,,, একদম থাকা হবে না,,, আবির তুই ওকে নিয়ে যা,,,,( মনোরমা)
- thank you মামনি,,,তীয়া তুই একটু পরে ওর সব বই গুলো পাঠিয়ে দিস,,,(আবির)
- ও মা তুমি এটা বলতে পারলে,,,আমি যাবো না ,(বলেই আরো জোড়ে জোড়ে হাত পা ছোটাছুটি করে),(পেখম)
- একদম চুপ,,,,,,মামনি তোমার এই মেয়ে ভীষণ ঘ্যাড়তাড়া,,,,আসছি আমি,,,(আবির)
- মনোরমা ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বলল" সাবধানে যা,,,আর পেখু যদি তোর কথা না শোনে তো ওর বাবাকে ফোন করে দিবি,,,বেয়াদব মেয়ে,,,
চলবে,,,
নেক্সট পর্ব লিংক👇
https://wwp.ailony.com/redirect-zone/e7dc6d73
0 Comments:
Post a Comment