গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ১৯

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ১৯


- নিকোটিনের শেষ ধোঁয়ার অংশ টা  মুখ থেকে বেরিয়ে বাতাসের সাথে আস্তে আস্তে করে বিলীন হয়ে যায়,, সেই দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে, গিটারের ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে সুর তোলার চেষ্টা করে সে। কিন্তু বারবার ব‍্যর্থ হয়,,,এক জোড়ে চোখ খুঁজে চলেছে সর্বক্ষণ সেই মানবীকে দেখার তৃষ্ণায়,,, কিন্তু না সে তো আর দেখা দেবে না,,, এটা মনে হতেই মানবটির হৃদয় খাঁ খাঁ করে ওঠে,,,,আর তখনই গিটারের টুংটাং শব্দে নিজের কষ্টকে তুলে ধরে সে গান গেয়ে,,,,


মন যে ফিরে পেতে চায়

জানি আমি অসহায়

চুপ থাকা মন

খুঁজে প্রিয় জন

কেন সে বোঝেনা 


জানি আমায় ভেবে 

সে তো আমায় আর খোঁজে না।


আমি ভেসে যাওয়া কোন হাওয়াই

তোমাকেই খুঁজি 

জানি হাওয়ার মায়ায় খুঁজলে তোমায়

পাবো বুঝি।


কোলাহল যেন আজ পলাতক হয়ে রয় 

নীরবতা চুপিসারে সঙ্গী আজ হই

ফিরে পেতে চাই কাটানো সময়

তোমায় ছুঁয়ে তোমায় ভেবে।


চুপ থাকা মন

খুঁজে প্রিয় জন

কেন সে বোঝেনা 

জানি আমায় ভেবে।


সে তো আমায় আর খোঁজে না

আমি ভেসে যাওয়া কোন হাওয়াই

তোমাকেই খুঁজি 

জানি হাওয়ার মায়ায় খুঁজলে তোমায়

পাবো বুঝি।


মন যে.. মন যে..


- মানবীর অপেক্ষা করতে করতে কোনো এক সময় সে ওখানেই ঘুমিয়ে যায়,,, আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে নিকোটিনের শেষাংশ,,আর তার পাশে পড়ে থাকে তার অতি যত্নের গিটার,,,,,,


-রাতের প্রায় শেষ ভাগের দিকে আবিরের ঘুম টা ভেঙ্গে যায়,নিজেকে এইভাবে ঘুমিয়ে যেতে দেখে অবাক হয়,ও ভেবেছিল জাগবে কিন্তু ঘুম ঠিক চলেই এল। গত চার-পাঁচ দিনে একবারের জন্যেও আবির পাখিকে দেখেনি,,, অবশ্য দেখেনি বললে ভুল হবে পাখি নিজেই দেখা দেয়নি,,,,ঘরের দরজা, জানালা,, ব‍্যালকনির দরজা সব বন্ধ করে রেখেছে সেইদিনের পর থেকে,,, একটা বারের জন‍্যেও রাতে সে আর ব‍্যালকনিতে আসেনি,,,অবশ্য সে নিজেই বলেছিল আমার মুখ আর সে দেখবে না,,,, কথা গুলো নিজের মনে বলে আবার একটা সিগারেট ধরালো আবির,,,, আর সিগারেটের সেই ধোঁয়ার মাধ্যমে নিজের কষ্ট গুলো উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত,,,,


-এই তো সেদিনের কথা,,, মাঝ রাতে ব‍্যলকনিতে এসে দেখে পাখি ব‍্যালকনির ধারে রেলিংয়ে মাথা দিয়ে বসে বসেই ঘুমাচ্ছে,,,ও ঘরে চলে যেতে গিয়েও আর যায়নি,,, পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলোটা একদম পেখমের মুখের উপর পড়ায় ওর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। আবিরের বেহায়া মন আর পারেনি তার প্রেয়সীর কাছে থেকে দূরে যেতে। যখন ওই মৃদু হাওয়ায় পেখমের অবাধ্য চুল গুলো বারবার আছড়ে পড়ছিল ওর মুখের উপর, তখন আবিরের খুব করে মন চাইছিল ওই চুল গুলোকে ধমক দিয়ে শাসন করে কানের লতিতে গুঁজে দিতে,, কিন্তু ও পারিনি,,, সারাটা রাত আবির রকিং চেয়ারে বসে ওর প্রেয়সীকে দেখেছে,,,মন ভরে দেখেছে,,,এক মুহূর্তের জন‍্যেও আবির নিজের চোখের পাতা এক করেনি,,বরং নিচে গিয়ে ফ্লাক্সে করে ব্ল‍্যাক কফি তৈরি করে এনেছে জেগে থাকার জন্য,,, সকালে যখন সূর্যের আলো পেখমের মুখের উপর পড়েছিল,, আর পেখম বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলছিল ওর তখন সূর্যের আলোকে হিংসা হচ্ছিলো,,, কেন ছোঁবে ঐ আলো ওর প্রেয়সীকে,, যেখানে ও নিজেই একবারের জন্যও স্পর্শ করতে পারছে না,,,,, তীয়া পেগমকে ডাকতে আসার আগে পর্যন্ত আবির পেখমের দিকে তাকিয়ে ছিল,,,, তীয়া আসাতে তাড়াতাড়ি করে ল‍্যাপটপে কাজ করার ভান করে,,,,,

__________________________________________


-আর দু-দিন পর পেখমের বিয়ে,,,এরই মধ্যে বাড়িতে লোকজন ভরে গেছে,,, পেখম সবার সাথে হাসি খুশি থাকলেও রাতে গুমরে গুমরে মরে,,,প্রতিটা রাতের কষ্টের সাক্ষী হয় ওর ওই বালিশ টা,,,


-দিভাই আমরা একটু তোর ঘরে বসে আড্ডা মারতে পারি(তিতাস)


- হ‍্যাঁ এতে আবার জিজ্ঞাসা করার কি আছে?? যা খেল,,,বৌমনি বৌমনি,,,


- পেখু ডাকছিলিস??


- ও বৌমনি আমাকে একটু শাড়ি টা পড়িয়ে দেবে,,,,


- শাড়ি তুই এখন শাড়ি পড়ে কোথায় যাবি,,আর কত রাত হয়েছে দেখেছিস??


-উফফ বৌমনি এটা ঋষির পিসি ঠাম্মার  হুকুম,,, এই কটাদিন আমাকে সব সময় শাড়ি পড়ে থাকতে হবে,, এতে নাকি আমার অভ‍্যাস হয়ে যাবে,,, পরে তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না,,,ওই বাড়িতে উনার কথায় শেষ কথা,,,,


-হমম সে না হয় বুঝলাম,, তাহলে তো তুই একটা কাজ করতে পারতিস পেখু,,, উনাকে মানে তোর ওই হবু পিসি ঠাম্মামকে একটু রাগীয়ে দিতে পারতিস,,,তাহলে যদি বিয়ে টা ক‍্যানসেল হতো(শেষের কথাটা আস্তে করে বলে তীয়া)


- কি ক‍্যানসেল বৌমনি??


-কিছু না,,যাই বল পেখু তোর ওই ঠাম্মা শাশুড়ি কে আমার ঠিক সুবিধার লাগেনি,,, উনার থেকে একটু সাবধানে থাকিস,,এখন তুই এইদিকে আয়,,,শাড়িটা পড়িয়ে দি,,,এখানে তো ওরা খেলছে,,,, তারপর তীয়া পেখমকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে একটা লাল রঙের শাড়ি পড়িয়ে দেয়,,,,


-পেখু একটু ওই ঘরে গিয়ে দেখতো কি যেন ভাঙার আওয়াজ শুনতে পেলাম,,,, বাচ্চারা সব আছে,,( কথা গুলো বলতে বলতে মনোরমা পুলকের ঘরের দিকে এলেন)


- বাবা এ কে তীয়া?? আমার মেয়ে না?? কি সুন্দর লাগছে মা তোকে,, আয় একটু কাজলের টিপ দিয়ে দি,,,কারোর যেন নজর না লাগে,,,(বলেই একটু কাজল পেখমের ঘাড়ের কাছে দিয়ে দিলেন,,)


- পেখু যা আমার মনে হয় ওরা মারপিট করছে,,,(তীয়া)


-পেখম তাড়াতাড়ি নিজের ঘরের দিকে যায়,,, গিয়ে দেখে বাচ্চারা সব জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে,,,বিছানা এলোমেলো করে রেখেছে,, আর সব থেকে বড়ো কথা হল ঘরের জানালা আর ব‍্যালকনির দরজা খুলে দিয়েছে,,, যেটা দেখে পেখম আর নিজের রাগ সংযত করতে পারেনি,,,


- তিতাস কাকে বলে ব‍্যালকনির দরজা আর ঘরের জানালা খুলে দিয়েছিস বল (চিৎকার করে)


- সরি দিভাই আমাদের কেমন গরম লাগছিল তাই( মাথা নিচু করে)


- এখুনি যাও সব বন্ধ করে দাও,,,আর ড্রয়িংরুমে গিয়ে খেলা কর,,(পেখমের বলতে দেরি নেই ওমনি সব হুর হুর করে ঘর ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল)দেখেছো ফাজিল গুলোর কাজ,,,আমার ঘরটা তছনছ করে চলে গেল,,,


-পেখম ঘরের বিছানাটা আগে গুছিয়ে নিলো,,তারপর মেঝেতে এলোমেলো ভাবে পড়ে থাকা জিনিস গুলো গুছিয়ে রাখতে গিয়ে দেখে কত গুলো নীল চুড়ি ও এক জোড়া নুপূর পড়ে আছে,,ও সেই গুলো স্পর্শ করতেই অজান্তেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল নীচে,,, চোখের জল টি মুছে আনমনেই হেসে ফেলল, মনে পড়ে গেল পিছনে ফেলে আসা সেইদিনটির কথা,,,


- সেবার মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হওয়ার দরুন সন্ধ‍্যেবেলার দিকে ও মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিল,,,


- পেখু আমাদের তো উচিত তোকে মিষ্টি খাওয়ানো,,, কত ভালো রেজাল্ট করেছিস তুই(তীয়া)


- আমাকে না হয় পড়ে খাইয়ে দিয়ো এখন তুমি খাও তীয়া দি,,,


- এই নে তুই রেজাল্ট ভালো করেছিস বলে তোর আবির দা তোর পছন্দের মিষ্টি দই এনেছে,,,আমি আর তীয়া অবশ্য যেতাম একটু পরে তোদের বাড়ি,,,


- আমি এসেছি তো কি হয়েছে,,,এখন যাবে আমাদের বাড়ি,,,মা রাতে সবার জন্যে রান্না করছে,,,আমাকে শুধু বললো মিষ্টি টা দিয়ে আসতে,,,আর আবির দা রাতে কি খাবে শুনে আসতে,,,মানে উনি তো ভাত বা রুটি খান না তাই,,,,


-ঠিক আছে তোর আবির দা নিজের ঘরেই আছে শুনে আয়,,,আমি আর তীয়া রেডি হচ্ছি,,,,,(অনুপমা)


- কাকিমনি তুমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করে এসো না,,,(পেখম)


- তুই এত ভয় পাস কেনরে দাদাভাই কে,,,ও তোকে কিছু বলবে না,,,বরং দেখিস আজকে তোর প্রশংসা করবে,,,যা যা(তীয়া)


- পেখম আবিরের ঘরের দরজার কাছে গিয়ে কয়েক বার নক করতেই ওপাশ থেকে সদ‍্য কৌশর থেকে যৌবনে পা রাখা পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসলো পেখমের কানে,,,


- দরজা খোলা আছে,,,(পেখম ধীরে ধীরে দরজা খুলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে,,, আবির পেখমকে দেখে বলে"তুই এখানে কেন?? কি দরকার??)


- কিছু না মানে মা জিজ্ঞাসা করতে বললো যে আপনি রাতে কি খাবেন??


- মানে?তুই কি এখন আমাকে জ্বালাতে এসেছিস?? শোন পাখি আমি কিন্তু কলেজের প্রজেক্টের কাজ করছি,,মাথা খারাপ করে দিস না,,,আর  আমি রাতে কি খাবো মা তো জানে,,,,


- না না আপনি ভুল ভাবছেন,,, আমার মা জিজ্ঞাসা করতে বলেছে,,,,আজকে মা আমাদের বাড়িতে আপনাদের সবাইকে যেতে বলেছে রাতে খাওয়ার জন্য তাই,,,আপনি কি খাবেন,,


- চিকেন স‍্যূপ আর স‍্যালাট,,,, তা হঠাৎ ও বাড়িতে খাওয়া দাওয়া কেন??


-আমি রেজাল্ট ভালো করেছি তাই,,,


- ওই রেজাল্ট সবার ভালো বলে মনে হলো,,,অঙ্কে কত পেয়েছিস?


- ৭৫


- আমি ৮৮,,, ইংলিশে কত পেয়েছিস??


-৭০


- আমি ৯০,,,,ওই রেজাল্ট নাকি ভালো হয়েছে,,,, সারাদিন তো ছনছন করে বেরাস,,,পড়তে তো দেখিনা,,,উচ্চ মাধ‍্যমিকের রেজাল্ট যদি খারাপ হয় না তো কাকুকে বলবো ছেলে দেখতে,পরের দিনই বিয়ে দিয়ে এখান থেকে বের করে দেবো,,,,মনে থাকবে কথাটা,,,


-পেখম ঘাড় কাত করে বলে" হ‍্যাঁ মনে থাকবে,,,আমি বরং আসি আবির দা ,,,,বলেই পেখম দ্রুত গতিতে আবিরের ঘর ত‍্যাগ করতে চাইলো কিন্তু তার আগেই আবির ওকে ডাকে,,,


-পাখি একটু এদিকে আয় তো,,,,পেখম আবিরের কথা মতো এগিয়ে আসলে ,,আবির পেখমের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে,তারপর পেখমের একটা পা হাঁটুর উপরে তুলে রাখে,,,আবিরের এই কান্ড দেখে পেখম বলে" এ কি করছেন আবির দা??


- চুপচাপ থাক,,তারপর পকেট থেকে একটা জোড়া নুপূর পড়িয়ে দেয় পেখমের পায়ে,,,আর ক‍্যাবিনেট থেকে নীল চুড়ি গুলো বের করে হাতে পড়িয়ে দেয়,,,,পেখমকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবির বলে" এক চান্সে পাশ করেছিস বলে দিলাম,, এবার থেকে এইগুলো সব সময় পড়ে থাকবি"‌, যেমন আগে পড়ে থাকতিস,,,by the way এখন পড়িস না কেন??


- আমার নুপূর ঠিক করতে দেওয়া আছে দোকানে,, আনা হয়নি তাই,,,কিন্তু সব সময় কেন পড়বো??


- এমনি,,, তুই যা এখন,,,পেখম চলেই যাচ্ছিলো,,,কিন্তু যাওয়ার সময় আবিরের বলা কথা গুলো শ্রবণ হতেই পিছন ফিরে দেখে আবির ব‍্যালকনির দিকে তাকিয়ে বলছে,,,


-"সে কি জানে না তার ওই হাতে চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজ,,আর পায়ে নুপূরের রুমঝুম তাল মেলানো মাতাল করা শব্দ শ্রবণ না হওয়া পর্যন্ত আমার এ হৃদয়ে শান্তি মেলে না"

______


-কথা গুলো মনে পড়তেই পেখম আবার কেঁদে ফেলে,,,সেদিন আবিরের কথা গুলোর মর্মার্থ বোঝেনি সেই কিশোরী মন,,,,কিন্তু যেদিন থেকে সে যৌবনে পদার্পণ করেছে সেইদিন এর অর্থ বোধগম্য হতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়েছিল সে,,,,


তাড়াতাড়ি করে ঘরটা গুছিয়ে যেই ব‍্যালকনির দরজা বন্ধ করতে যাবে ওমনি সামনে চেয়ে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে ওর দিয়ে তাকিয়ে,,,সঙ্গে সঙ্গে পেখমের বুকটা ধক করে ওঠে,,,কি অবস্থা করেছে মানুষটা নিজের,,,গালে তরল কিছু অনুভব হতেই পেখম হাত দিয়ে দেখে চোখ দিয়ে আপনাআপনি জল ঝড়ছে,,,, ও নিজেকে সামলানোর জন্যে আবিরের মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দেয়,,, তারপর জানালা বন্ধ করে দিয়ে কেঁদে ফেলে,,,,ও চাইনা ওই মানুষটাকে ঘৃণা করতে,,,, ভালোবাসার মানুষটিকে কখনো ঘৃণা করা যায় না,,,

_________________________________________


-আজ পেখমের মেহেন্দী,,কাল বিয়ে,,,,ওর সব বন্ধুরা আজকে থেকেই এখানে থাকবে,,সন্ধ্যার দিকে একটা ছোট করে অনুষ্ঠান হবে ড্রয়িংরুমে,,, বিকেল থেকেই তার তোড়জোড় চলছে,,,


-সন্ধ্যার দিকে perlour থেকে দুটো মেয়ে আসে,,,ওরা সবার মেহেন্দী করে দেয়,,,এই দিকে পেখমের বন্ধুরা,,, বাড়ির পিচ্চি গুলো এমনকি বাড়ির বড়ো রাও নাচ গান করছে এই অনুষ্ঠানে,,,,


- এমন সময় parlour একটি মেয়ে পেখমকে জিজ্ঞাসা করে হাতে কি নাম লিখবে,,,আর পেখম আনমনেই বলে আবির। যথারীতি মেয়েটা আবিরের নাম লিখে দেয়,,,,


-রাতে সব খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ পেখমের সাথে আড্ডা মেরে শুতে চলে যায়,,,, রুশা আর প্রিয়া পেখমের কাছে থাকে,,,,


যেহেতু পেখমের আইবুড়ো ভাত ছিল তাই মনোরমা ওকে খাইয়ে দিয়েছিল,,, খাওয়াতে খাওয়াতে এক পর্যায় মা মেয়ে দুজনেই কেঁদে ফেলে,,,তাদের এই দৃশ্য দেখে পুলক ওর বাবাকে জড়িয়ে কেঁদে দিয়েছিল,,,


-পেখু এবার হাতটা ধুঁয়ে আয়,,,মেহেন্দী শুকিয়ে গিয়েছে,,(প্রিয়া)


- পেখম ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে,,, শাড়ি পাল্টে একটা টপ আর প্লাজো পড়লো,,,সারাদিন শাড়িতে থাকায় ওর কেমন অসস্তি হচ্ছে তাই,,,,


-এই পেখু এইদিকে আয়,,দেখি তো মেহেন্দী কেমন হয়েছে,,,আর মন খারাপ করে থাকিস না প্লিজ,,,(রুশা)


- মন খারাপ করে কি হবে,,,কাল দিনটার পর তো সব কিছু পাল্টে যাবে,,,দেখবি আমিও পাল্টে গিয়েছি,,,,দেখ মেহেন্দী বলে হাতের দিকে তাকাতেই চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলে তিন জনেই,,,,


- পেখু তুই এটা খেয়াল করিস নি,,,এটা কি করে হলো???(প্রিয়া)


-এখন যদি কেউ দেখে ,,কি ভাববে,,,বিশেষ করে ঋষি আর ওর পিসি ঠাম্মাম,,(রুশা)


- আমি নিজেই বুঝতে পারছি না,,, কি করে হলো,,, উনার নাম আমার হাতে কে লিখে দিলো,,,,


- ওইসব ভেবে কাজ নেই,, যা হওয়ার হয়ে গেছে,,, অনেক রাত হয়ে গেছে এখন ঘুমা,,,কাল আবার কাকভোরে উঠতে হবে,,, আপাতত তুই এই হাত কাউকে ভালো করে দেখাবি না,,,,কাল সকালে মেহেন্দী এনে ওই জায়গায় লাগিয়ে দেবো যাতে কেউ না বুঝতে পারে,,,,(প্রিয়া)


- প্রায় সকাল হতে চলল ,,,সবাই এখন ঘুমিয়ে আছে,,, কিন্তু মাত্র দুজোড়া চোখে ঘুম নেই,,, তার বদলে রয়েছে বারিধারা,,,,,

________________________________________


-কাকভোরে উঠে দধিমঙ্গল,,,আলতা উৎসব,,,জল সয়া সব কিছুর নিয়ম পালন করা প্রায় হয়ে গেছে,,,, পেখম ওর ঘরে বসে আছে আর সবাই ওকে ঘিরে বসে আছে,,, এক এক জন এক এক ভাবে কথা বলে পেখমকে লজ্জায় ফেলার চেষ্টা করছে কিন্তু তাতে পেখমের মুখে এক বিন্দুও লজ্জার আভাস পাওয়া যাচ্ছে না,,,


- এরই মধ্যে বাড়ির কেউ একজন দৌড়ে এসে বলে "ওরে সবাই এইদিকে আয়,,,বরের বাড়ি থেকে গায়ে হলুদের তত্ত্ব চলে এসেছে,,,,,


-তীয়া যা পেখমকে হলুদের শাড়িটা পড়িয়ে দে,,,ব্রাহ্মণ তাড়া দিচ্ছে,,, ওদিকেও তো যেতে হবে,,( মনোরমা)


- ঠিক আছে মা তুমি চিন্তা করো না এইদিকে আমি আছি,,,প্রিয়া রুশা এই শাড়িটা একটু পড়িয়ে দাও ওকে,,,আমি ওর গয়না গুলো নিয়ে আসি,,,পেখমকে একটা হলুদ তাঁতের শাড়ি পড়ানো হয়েছে,,,আর তার সাথে হালকা সোনার গয়না,,,চুল গুলো খোঁপা করে দিয়েছে প্রিয়া আর রুশা হালকা সাজিয়ে দিয়েছে,,,


- পেখু তুই তাহলে একটু বোস,,,আমরা শাড়ি পড়ে আসি,,,তারপর তোকে হলুদের ওখানে নিয়ে যাবো,,,প্রিয়া, রুশা ওরা চলে যাওয়ার পর পেখম চুপচাপ বসে থাকে ব‍্যালকনির দোল্লায়,, একবার আবিরকে দেখবে তাই,,,তখনই একটা পিচ্চি দৌড়ে আসে ওর কাছে,,,


-পেখু দিদি পেখু দিদি এটা তোমাকে একটা দাদা দিয়েছে,, হাতে একটা চিরকুট দিয়ে আবার দৌড়ে ঘরে থেকে চলে যায়,,,পেখম চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখে তাতে লেখা আছে


-" একবার কি আসতে পারবে?? শেষবারের মতো কি একবার দেখতে দেবে তোমাকে"?? তাহলে গ্ৰাউন্ড ফ্লোরের পিছনে এসো,,,


-পেখম চিঠিটা দেখেই কেঁদে ফেললো,,,এটা যে ওর আবির দা লিখেছে,, ও জানে,,তাই কোনো দিক না চিন্তা করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,,,,

___________________________________________


-কেন পাগলের মতো করছিস,,,এতদিন তো ঠিক ছিলিস তবে আজ কেন??? কেন চলে যাচ্ছিস,,,আরে আমি তো দেখতে চাইছিলাম আমার ছেলে কি করে সহ‍্য করে থাকতে পারে পেখমের বিয়ের দৃশ্য দেখে,,,(অনুপমা)


- উফ মা তুমি চুপ করো,,,আমি আর সহ্য করতে পারছি না,,, তুমি এই দিকটা সামলে নিয়ো,,,আমি এখুনি বেরিয়ে যাবো,,,তুমি যাও এখন,,,(আবির)


- সবাই যদি জিজ্ঞাসা করে ব‍্যাঙ্গালোরে কেন গেছে??


- বলবে অফিসের দরকারে,,, প্লিজ মা এইটুকু সাহায্য করো,,,


-মা সর্বনাশ হয়ে গেছে,,(চিৎকার করে তীয়া বলে)


- তীয়া তুই এখানে,,, আমি তো যাচ্ছিলাম ও বাড়ি,,,,কাঁদছিস কেন?? কি হয়েছে মা???(অনুপমা)


- কি হল তীয়া তুই কাঁদছিস কেন?? আমার পাখি ঠিক আছে তো?? কি হল বল,,,(চিৎকার করে)


- দাদাভাই পাখিকে দু ঘন্টা যাবত কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,,, এইদিকে ঋষির বাড়ি থেকে সবাই এসে যা নয় তাই বলছে,,,কোথায় গেল মেয়েটা বুঝতে পারছি না,,,


- কথা গুলো শুনে আবিরের পায়ের তলার মাটি নড়ে যায়,,,নিজেকে সামলে দৌড়ে যায় ও বাড়িতে,,, ওর পিছনে অনুপমা,, তীয়া দৌড়ে যায়,,,,মাত্র কয়েক মিনিটের ব‍্যবধানে বিয়ের বাড়ি শোকের বাড়িতে পরিণত হয়েছে,,, আবির ,,পুলক,, ঋষি, ওদের বন্ধুরা সবাই খুঁজতে বেরিয়েছে,, অশোক আর দেবেন্দ্র বাবু থানায় গিয়েছে ,,,,,


- সবাই সব দিকে ঘুরেও কোথাও পাখিকে খুঁজে পায়নি,,,এইদিকে রাত হয়ে গিয়েছে,,আবিরের মনে হচ্ছে ওর জীবন টা কেউ নিয়ে নিচ্ছে,,, দম আটকে আসছে,,,এমন সময় ওর পাখির কলেজের কথা মনে পড়ে গেল,,,,কলেজেও তো অনেক ছেলে পাখির শত্রু হতে পারে,,, আবির নিজে অনেক ছেলেকে থ্রেট পর্যন্ত দিয়েছে যাতে পাখিকে ডিসটার্ব না করে,,,আর কলেজের পাশের জায়গা টাও খারাপ,,,কি মনে করে আবির গাড়ি ঘুরিয়ে কলেজের দিকে গেল,,,,,,

__________________________________________


- একটা পুরোনো ঘরের মধ্যে পেখম শুয়ে আছে,,জ্ঞান ফেরার পর থেকে একটুও নড়তে পারছে না,, মাথাটা যন্ত্রণা করছে ভীষণ,,,পাশের ঘর থেকে কয়েকটি ছেলের হাসির শব্দ শুনে ও ভয় পেয়ে যায়,,, কোনো রকমে উঠে পালানোর চেষ্টা করে,,, ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে চারপাশে অন্ধকার,, ওর তখন দুপুরের কথা মনে পড়ে যায়,,,


- গ্ৰাউন্ড ফ্লোরের পিছন দিকে গিয়ে আবিরকে না পেয়ে ফিরেই আসছিল,, তারপর হঠাৎ মুখে কিছু অনুভব করায় আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,,, এখানে কিভাবে এসেছে?? কারা নিয়ে এসেছে কিছুই মনে নেই ওর,,,,ভীষণ কান্না পাচ্ছে পেখমের,,, না জানি বাড়িতে সবাই কি করছে,,,এইসব ভাবতে ভাবতে দৌড়াতে গিয়ে হঠাৎ একজনের সাথে ধাক্কা খায় পেখম,,, মুখ তুলে তাকিয়ে সেই ব‍্যক্তিকে দেখে ভয়ে গুটিয়ে যায় ও,,,,


-কোথায় যাচ্ছিলে,,,,


- কেন এনেছেন এখানে,,, ছেড়ে দিন আমাকে,,,


-ছেড়ে দেওয়ার জন্য তোকে আনিনি,,,অনেক হিসাব বাকি আছে বলেই সেই ব‍্যক্তি পেখমের শাড়ির আঁচল ধরে টান দেয়,,,পিন করা ছিল বলে শাড়ির আঁচল ও ব্লাউজ ছিড়ে যায়,,, পেখম সেই ব‍্যক্তিটাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে রাস্তার দিকে চলে যায়,,,, আর জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলছে বাঁচাও ,,,,


- আবির কলেজের সামনে গাড়ি থামিয়ে আশেপাশে দেখে আর তখনি ওর কানে আসে কারোর চিৎকার,,, ও সেই শব্দ অনুসরণ করে পাখি বলে ডেকে দৌড়ে যায় সেদিকে,,,,পাখি আবিরের গলা শুনে ওইদিকে যেতে গেলেই সেই ব‍্যক্তি পাখিকে ধরে ফেলে তারপর জোড় করে খুলে দেয় শাড়ি,,,,ছিঁড়ে দেয় ব্লাউজের বেশ কিছু অংশ,,,,আবির যাওয়ার সময় একটা কানের দুল পাই ,,ও ওটা অনুসরণ করে দৌড়ে যায় সেদিকে,,চারপাশে অন্ধকারের জন্যে আশেপাশের কিছুই দেখা যাচ্ছে না,, পাখি সেই ব‍্যক্তির হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য তার হাতে কামড়ে দেয়,,,আর ওই ব‍্যক্তি পাখির মাথায় আঘাত করে যার ফলে পাখি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,,,,কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পরে কারোর পায়ের শব্দ শুনতে পায় পাখি,,,চিৎকার করার আগেই সেই ব‍্যক্তিটি পাখির হাত মুখ চেপে ধরে,,,পাখির নড়ার শক্তি নেই,,, চোখ দিয়ে ঝড়ছে অনবরত জল আর তার মাঝেই দেখতে পেল আবির ওদের পাশ দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে,,,,ও মনে মনে বলে ওঠে আবির দা আমাকে বাঁচান,,,পিছন দিকে তাকান,,,,আমার সর্বনাশ হতে দেবেন না,,,,আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল আবিরের অবয়ব,,,পেখম চোখ বন্ধ করলো,,,,তবে কি শেষ হয়ে গেল পেখমের সতীত্ব???


চলবে,,,,,


0 Comments:

Post a Comment