গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২৭

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২৭


- কোনো কিছুই আর ভালো লাগে না পেখমের,, ওর মনে হচ্ছে ও যেন রোবটের মতো হয়ে গেছে,,যার মধ্যে নেই কোনো অনুভূতি,,, হঠাৎ হঠাৎ করে কাঁদতে ইচ্ছা করলে একঘন্টা মতো কেঁদে নেবে,,,তারপর ব‍্যালকনিতে গিয়ে রকিং চেয়ারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে,,,,কেন সেই মানুষটি একবারের জন্যেও ওর খোঁজ করছে না,,, ও তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, সেই দিন ওভাবে বলা উচিত হয় নি ওর কিন্তু ও বা কি করবে,,সহ‍্য করতে পারিনি আর,,,,


-আজ প্রায় তিন-চার মাস হয়ে গেল আবির ওর সাথে কথা বলে না,,এমনকি পেখমের ধরা- ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়ে ব‍্যাঙ্গালোরে বসে আছে,,,পেখম তো  ভেবেছিলো তীয়ার সাদে অন্তত আসবে মানুষটা কিন্তু না আসেনি সে,,,তার বদলে ভিডিও কলে তীয়া আর পুলকের সাথে কথা বলে নিয়েছে,,,এইসব কথা গুলো ভাবতে ভাবতে পেখম অতীতে ডুব দেয়,,,,,


(অতীত)


- তীয়া প্রেগনেন্ট হওয়ার পর থেকে পেখম বেশ খানিকটা সময় ওবাড়িতে থাকতো প্রত‍্যেকটা দিন,, তারপর কোচিং, কলেজ আর আবিরের সাথে ঝগড়া, ভালোবাসা নিয়েই চলে যাচ্ছিল বেশ,,,কিন্তু এরই মাঝে পেখম লক্ষ‍্য করে আবির রাতে প্রায় ফোনে কথা বলে ব‍্যালকনিতে দাঁড়িয়ে,,, সোহিনীর আসা যাওয়াটাও ইদানিং বেশ বেড়েই গিয়েছিল,,,, যা ও চুপচাপ সহ‍্য করত। একদিন রাতে যখন আবির ওয়াশরুমে ছিল ঠিক তখন ওর ফোনে কল আসে,,,পেখম ফোনটা নিয়ে দেখে সোহিনী কল করেছে,,,তারপর কলটা কেটে গেলে ও আবিরের ফোন চেক করে দেখে সোহিনীর নাম্বার থেকে প্রায় কল আসে আর তার কথা বলার সময় প্রায় একঘন্টা কখনো কখনো দেড় ঘন্টা তাও আবার রাতে,,,যেটা দেখে পেখমের খুব কান্না পেল আর তার সাথে রাগও হল,,,ও ফোনটা জায়গা মতো রেখে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ বাদে আবির ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ফোন চেক করে,,, তারপর পেখমের দিকে তাকিয়ে ব‍্যালকনিতে চলে যায়,,,প্রায় একঘন্টা পর রুমে আসে,,তারপর সোফায় শুয়ে পড়ে,,,যদি একবার তখন পেখমের দিকে তাকাতো তাহলে দেখতে পারতো তার প্রিয়তমার অশ্রুসিক্ত মুখটা,,, কারণ পেখম তখনো জেগে ছিল আর কষ্টে কাঁদছিল,,,এই যন্ত্রণা যে কতটা ভয়াবহ তা যার উপর দিয়ে যায় সেই বোঝে,,,,


- এই রকম আরও একদিন পেখমদের কলেজের পর কোচিং থাকায় ওরা ঠিক করে কলেজ থেকে কোনো একটা রেস্টুরেন্টে যাবে,সেখানে গিয়ে খেয়ে তারপর কোচিং সেন্টারে যাবে,,যথারীতি ওরা সবাই আশেপাশের একটা ভালো রেস্টুরেন্টে যায়,,,সবাই যখন খাবার আসার জন্য অপেক্ষা করছিল তখন অর্নব বলে ওঠে," পেখু আবির দা না ওটা?? ওই যে সামনের টেবিলে বসে আছে,,, সঙ্গে একটা মেয়েও আছে দেখছি"। অর্নবের কথা শুনে সবাই ওদিকে তাকিয়ে দেখে যে হ‍্যাঁ সত‍্যিই ওদের ঠিক একটু আগের  টেবিলে বসে আছে আবির,,,পেখমতো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে শুধু সামনের দিকে,,, ও নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না যে আবির আর সোহিনী বসে আছে,, ও সবাইকে বলে একটু সাইডে গিয়ে আবিরকে ফোন করে,,,,কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর আবির রিসিভ করে,,


- হ‍্যালো


- হ‍্যাঁ পাখি বলো,,,


- আপনি কোথায় এখন??


- আমি তো মিটিং আছি কেন?? কিছু বলবে??


- না এমনি জিজ্ঞাসা করলাম,,,


- ঠিক আছে আমি একটু ব‍্যস্ত আছি,,, রাখছি( বলেই আবির ফোনটা কেটে দেয়)


- আবিরের সাথে কথা বলে পেখম এসে দেখে আবির হেসে হেসে কথা বলছে সোহিনীর সাথে,,এই তার ব‍্যাস্ততা,পেখমের আর গলা দিয়ে খাবার নামলো না,,,এতবড় একটা মিথ্যে কথা বলতে পারলো,,আজ এই মানুষটাকে পেখমের কাছে বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে,,, একটিবারের জন্যে জিজ্ঞাসা অবদি করলো না যে পেখম খেয়েছে কিনা,,,


- কি রে পেখু খা,,,কি ভাবছিস??? আর আবির দার সাথে দেখা করেছিস??( রুশা)


- না রে উনি অফিসের কাজ নিয়ে আলোচনা করছে এখানে তাই আর ডিসটার্ব করলাম না,,, আর শোন আমার না শরীর টা কেমন খারাপ লাগছে,,,আমি বাড়ি যাচ্ছি,,,


- এমা সেকি,,তাহলে চল আমি তোকে দিয়ে আসি,,,( দিপু)


- না না তোরা খা আমি আসছি( বলেই পেখম রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে,,,সারা রাস্তা প্রায় কাঁদতে কাঁদতে আসে)


-সেদিন রাতে আবির বাড়ি ফিরে আসেনি,,, অফিসের কাজ থাকার কারণে সেখানে থেকেই গিয়েছিল,,,আর এইদিকে পেখম কেঁদে কেটে নিজের চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিল,,,


- আমি তো আপনাকে খুব ভালোবাসি সেটা কি আপনি বোঝেন না?? আপনার এইসব ব‍্যবহারে বা ওই সোহিনী কে আপনার পাশে দেখলে এই বুকের ভিতরে ভীষণ কষ্ট হয় সেটা কি আপনি বোঝেন না?? এইভাবে কষ্ট না দিয়ে আমাকে তো মেরে ফেলতেই পারতেন,,, কেন সেদিন বাঁচিয়েছিলেন???আমি তো ভেবেছিলাম আপনাকে কদিন জ্বালিয়ে তারপর আমি আপনার কাছে ধরা দেব,,,অথচ আপনি আমাকে সেই প্রথম থেকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আসছেন,,,, আমি আর সহ্য করতে পারছি না,,, আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,,, এই আপনি টাকে আমি চিনি না,,, খুব অচেনা লাগে,,,,আমার সেই আগের আবির দাকে চাই ,,


-সারাদিন রাত কাঁদার ফলে খুব ভোরের দিকেই পেখম ঘুমিয়ে পড়ে,,, ঘুম ভাঙে যখন, তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা একটা বেজে দশ মিনিট,,, ও তড়িঘড়ি করে উঠে স্নান করে নীচে যায়,,,,


- কি রে তোর শরীর ঠিক আছে তো??


- হ‍্যাঁ মামনি আমার আবার কি হবে??


- না আজ অনেক সময় ধরে ঘুমালি,,আমি তো তোর ঘরে গিয়ে দেখি তোর চোখ মুখ সব ফুলে গেছে,,,শোন তুই আর রাত জেগে পড়বি না,,,এখন খেয়ে নে,,,


- মামনি তোমার ছেলে,,,


- পেখমের কথা শেষ করতে না দিয়ে অনুপমা বলে" ও একেবারে রাতে আসবে,,,ভীষণ চাপ নাকি,,,আমি ফোন করে ছিলাম,,,, কেন তোর সাথে কথা হয়নি??


- না আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই,,,


- ওওওও

_____________


- রাত প্রায় দশটার দিকে আবির বাড়ি ফেরে,,তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে যায়,যেখানে অনুপমা, অশোক আর পাখি ওর জন্যে অপেক্ষা করছে,,,


- তা সব কিছু কি রেডি হয়ে গেছে???( অশোক)


- না একটু বাকি আছে,,, রাজিব আর সোহিনী ওরা সামলে নেবে,,আর আমি তো আছি,,


- তা কালকে কখন যাচ্ছো??( অশোক)


- যাচ্ছে মানে?? কোথায় যাচ্ছে ও??(অনুপমা)


- ও মা তোমাকে তো বলা হয়নি,,,আমি আর সোহিনী কালকে ব‍্যাঙ্গালোরে যাচ্ছি,,,ফিরতে হয়তো এক মাস লাগবে,,,কিন্তু সোহিনী,,,,


- এতক্ষন চুপচাপ এদের কথা শুনছিলো পেখম,, কিন্তু আর থাকতে না পেরে আবিরের কথা বলার মাঝেই ও উঠে দাঁড়ায়,,,


- কি হলো উঠলি যে,,,খাবি না আর??( অনুপমা)


- না মামনি,,, আমার আর ভালো লাগছে না খেতে,,,


- কেন মা শরীর ঠিক আছে তো??( অশোক)


- হ‍্যাঁ পাপা ঠিক আছে,,, আর চিন্তা করো না খিদে পেলে ফ্রিজে তো দই আর জুস আছে,,,খেয়ে নেবো,,,আসছি আমি তোমরা কন্টিনিউ করো,,,গুড নাইট,,,( এই বলে পেখম চলে আসে)


- হ‍্যাঁ আবির তুমি কি বলছিলে??( অশোক)


- সোহিনী এক সপ্তাহ পর এখানে চলে আসবে আর তোমার সাথে জয়েন করবে,,,রাজিব আমার সাথে ওখানে থাকবে,,,


-ঠিক আছে,,,

________________

- রাতে আবির মা বাবার সাথে কথা বলে ঘরে যায়,,,ও আজ ভেবেই রেখেছিল যেহেতু অনেক দিন থাকবে না সেহেতু আজ ও ওর প্রিয়তমাকে একটু আদর করবে,,,এই বেহায়া মনটার আজকে তার রাত- প্রেয়সীকে ভালোবাসতে ইচ্ছা করছে,,,আবির ঘরে গিয়ে দেখে পেখম ঘরে নেই,,,ব‍্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখে পেখম ওখানে দাঁড়িয়ে আছে,,,


- আবির পিছন থেকে গিয়ে পেখমের কোমড় জড়িয়ে ধরে পেখমের কাঁধে নিজের থুতনি রাখে,,,কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর আবির যখন দেখলো তার রাত-প্রেয়সী তাকে বাঁধা দিচ্ছে না তখন সে তার স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতর করলো,,,পেখম আজ  নিজেও চাই আবিরের কাছে নিজেকে সপে দিতে,তারপর এই মানুষটিকে বোঝাবে মোহ কি জিনিস,,,,কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো সামান্য কিছু প্রমাণ করার জন্য নিজের সম্মান সে নষ্ট করতে পারবে না,,, তাই আবিরে ওই গভীরতর স্পর্শের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে চাই,,,কিন্তু পারে না,,, আবির তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখে,,,পেখম কোনো উপায় না পেয়ে বলে ওঠে,,


- আপনার আর রিকের ছোঁয়ার মাঝে কোনো তফাৎ খুঁজে পাচ্ছি না আমি আজ,,,


- পেখমের এই কথাটা শুনে আবিরের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে আসে,,কথাটা বোধগম্য হতেই আবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়,,, হয়ে ওঠে চোখ দুটো রক্তিমময়,,, পেখমকে ছেড়ে দেয় সাথে সাথে ও,,,তারপর বলে,,," তুমি যেটা বলছো ভেবে বলছো তো???


- একদম ভেবে বলছি,,,(অন‍্যদিকে তাকিয়ে)


- পাখি এসব তুমি কি বলছো?? মাথা ঠান্ডা করে বলো,,রিকের সাথে আমার তুলনা করছো???


- ও সরি আমার ভুল হয়ে গেছে,,, আপনি রিকের থেকেও একটা খারাপ লোক,,, আপনি একজন চরিত্রহীন,,, আপনার ঘরেও একটা লাগে আর বাইরেও একটা লাগে,,,না জানি কোথায় কোথায় কি করে বেরিয়েছেন,,,, আপনি একটা মিথ‍্যেবাদি,,,প্রতারক,,,,আপনি সেদিন কেন বাঁচিয়েছিলেন আমাকে?? মরতে দিতেন তাহলে আমি সত‍্যিই বেঁচে যেতাম,,,,


- পাখিইইইইইইই ( জোড়ে চিৎকার করে)


- একদম চিৎকার করবেন না,,,, আমি জাস্ট আপনাকে সহ‍্য করতে পারছি না,,, এই আমি তো আপনার শুধু মোহ,,,আমার প্রতি আপনার শুধু আকর্ষণ ছিল,, সেইজন্য বারবার আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেন বলুন,,,,কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার ছোঁয়ায় আমার শরীর ঘিনঘিন করে ওঠে,,,,


- আবির পাখির কথায় এত রেগে যায় যে সেন্টার টেবিলে থাকা ফুলদানি নিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে,,,তারপর পাখির দুই বাহু শক্ত করে ধরে  ওর ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে  বলে,,,,, ইনাফ পাখি অনেক বলে ফেলেছো,,,আমি চুপ আছি বলে এই না যে তুমি যা ইচ্ছা তাই আমাকে বলবে,,,ঠিক আছে তুমি চাও না তো আমাকে বেশ,,,তোমার দেওয়া সব অভিযোগ আমি মাথায় পেতে নিলাম,,, আর ওইসব মিথ্যে অভিযোগ গুলোকেই সত‍্যি করে তুলবো আমি,,,,আজকে ভীষণ হার্ট করেছো তুমি আমাকে,,,, আমার স্পর্শ কে তুমি অপমান করেছো,,,,আমার স্পর্শে তোমার শরীর ঘিনঘিন করে তাই তো,,,একদিন আমার এই সামান্য স্পর্শ পাওয়ার জন্য তুমি ব‍্যাকুল হয়ে উঠবে,,,,আমাকে পাওয়ার জন্য কাতরাবে,,,,,( কথা গুলো বলে আবির পেখমের হাত ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,, আর পেখম ওখানে বসেই কাঁদতে থাকে,,,ও চাইনি বলতে কিন্তু যা হচ্ছে সেসব ওর সহ‍্য হচ্ছিলো না,,পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ও আর আবিরকে দেখতে পাইনি,,, আর সেই থেকে আজ তিন-চার মাস হয়ে গেল না কোনো ম‍্যাসেজের রিপ্লাই করেছে,,,না কোনো খোঁজ নিয়েছে পেখমের,,, পেখম ভাবে হয়তো ওখানে আনন্দেই আছে আবির,,,সোহিনী থাকতে ওর কোনো অসুবিধা হবে না,, হওয়ার কথাও না,,,)

__________________________


(বর্তমান)


- রেখাদির ডাকে পেখমের ভাবনার সুতোয় টান পড়ে,,,অতীত থেকে বেরিয়ে আসে,,,, নিজেকে সামলে নিয়ে বলে" কি হয়েছে রেখা দি???


- মা নিচে তোমাকে ডাকছে বৌমনি,,,,,


- ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি,,,,কিছুক্ষণ পর পেখম নিচে নেমে দেখে যে ড্রয়িংরুমের সোফায় সোহিনী বসে আছে,,,সোহিনীকে দেখে পেখম ভাবলো যে তাহলে হয়তো আবিরও বাড়িতে এসেছে,,,পেখমকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোহিনী বলে ওঠে,,


- আরে ম‍্যাম কেমন আছেন?? আপনার সাথে অনেকদিন পর দেখা হচ্ছে,,,


- পেখম আশেপাশে চোখ বুলিয়ে হাসি মুখে বলে আমি ভালোই আছি,,,ইনফ‍্যাক্ট খুবই ভালো আছি মিস সোহিনী,,,তা আপনি এখানে হঠাৎ,,,,


- আরে পেখু ওর তো বিয়ে সামনের সপ্তাহে,,,(অনুপমা)


- বিয়ে??( পেখম অবাক হয়ে বললো)


- হ‍্যাঁ বিয়ে,,,আর জানিস কার সাথে হচ্ছে,,,আবিরের বিসনেস কলেজের বন্ধু রাজিবের সাথে,,,,সোহিনী এই রাজিব তো আমাদের নতুন প্রজেক্টের কাজে আবিরকে সাহায্য করছে বল???


- হ‍্যাঁ আন্টি,,,( লজ্জা পেয়ে)


- সোহিনীর সাথে তো আবির রাজিবের সোর্সেই পরিচিত হয়েছে,,,আচ্ছা তোরা কথা বল আমি রান্নার দিকে গেলাম,,(অনুপমা)


- তবে ম‍্যাম আমি খুবই থ‍্যাঙ্কফুল আবির স‍্যারের কাছে,,,স‍্যার না থাকলে আমার আর রাজিবের বিয়েটা হত না,,,,(সোহিনী)


- এতক্ষণ কথা শুনে পেখম নিজের কৌতূহল দমন করতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে কেন??


- আরে রাজিব তো ব্রাহ্মণ,,,, তাই ওর বাবা ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়ে ছাড়া ছেলের বিয়ে দেবে না,,,, দীর্ঘ দশ বছরের প্রেম আমাদের,,, কত ঝামেলা পোহাতে হয়েছে এই নিয়ে,,, কিন্তু শেষে স‍্যার সবার সাথে কথা বলে বুঝিয়ে,, সবাই কে রাজি করাই,,,এট লাস্ট আমাদের বিয়েটা হচ্ছে(সোহিনী)


- কিন্তু তুমি আজ এখানে,,, তোমাকে তো ব‍্যাঙ্গালোরে থাকার কথা??( পেখম)


- হ‍্যাঁ ম‍্যাম আমার যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওখানে এক সপ্তাহ থেকে আমাকে ব‍্যাক করে বড়ো স‍্যারের সাহায্য করতে বলেছিল স‍্যার,,, কিন্তু,,(সোহিনী)


- কিন্তু কি মিস সোহিনী??( পেখম)


- কিন্তু আমাদের যাওয়ার আগের দিন রাতে স‍্যার হঠাৎ আমাকে ফোন করে বলে যে আমাকে যেতে হবে না,,, আমি যেন এইদিক টা সামলায়,,,ওখানে যা কাজ আছে স‍্যার আর রাজিব মিলে করে নেবে,,,,(সোহিনী)


- আচ্ছা আগের দিন আপনাদের কোনো মিটিং ছিল রেস্টুরেন্টে??(পেখম)


- হ‍্যাঁ ছিল,,, মুম্বাইয়ের দুটো ক্লাইন্টের সাথে,,,কেন ম‍্যাম?? এনিথিং রঙ????( সোহিনী)


- এতক্ষন চুপচাপ সব প্রশ্নের উত্তর গুলো শুনে ঠিক থাকলেও শেষের উত্তর টা শুনে পেখম ঠিক থাকতে পারলো না,,, ও বুঝতে পারলো ওর দ্বারা কি বড়ো ভুল হয়েছে,,, এই ভুলের কি কোনো ক্ষমা হয়?? ও কি আবিরের কাছে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য???


- পেখমকে চুপ থাকতে দেখে সোহিনী জিজ্ঞাসা করে,,,ম‍্যাম কি হয়েছে আপনার???


- মিস সোহিনী ভীষণ বড়ো ভুল করে ফেলেছি আমি,,,কিন্তু আমি আপনাকে সেটা বলতে পারবো না,,, আপনি শুধু এইটুকু বলুন আপনার স‍্যার কি আপনার বিয়েতে আসছেন???


- হ‍্যাঁ উনি তো আসবেন,,,, আপনি কিন্তু অবশ্যই যাবেন ম‍্যাম ,,,


- হ‍্যাঁ আমি নিশ্চয়ই যাবো,,,


- ধন্যবাদ আজ তাহলে উঠি,,,,


- সোহিনী চলে যাওয়ার পর পেখম ওখানেই বসে থাকে,,,আর ভাবতে থাকে সেদিন বিনা দোষে মানুষটাকে সে  কি কি বলেছে,,,,আর সব কিছু মনে পড়তেই আবিরের বলা শেষের কথাটা বারবার মনে পড়ে ", একদিন এই স্পর্শের জন্যে তুমি ব‍্যাকুল হয়ে উঠবে,,, আমাকে পাওয়ার জন্য কাতরাবে"

কথা গুলো মনে পড়তেই আঁতকে ওঠে পেখম,,,


চলবে,,,,


0 Comments:

Post a Comment