#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২৮
-পেখু তুই কিছু কি করছিস???
- না মামনি এমনি geography math গুলো দেখছিলাম,,, কেন কিছু বলবে??
- তীয়াকে এই কচুপাতা বাটা টা দিয়ে আসবি তো,,,আগের দিন তোর মা রান্না করেছিলো,,,তোর বৌমনি নাকি আর কিছু খাইনি,,, শুধু ও কচুপাতা বাটা দিয়ে সব ভাত খেয়েছে,,,তাই আজকে আমি রান্না করলাম,,,, মেয়েটা আজকাল কিছু খেতেই পারে না,,,
- ঠিক আছে দিয়ে আসবো,,,স্নান সেরে আমি ওবাড়িতে যাচ্ছি,,,
- ও হ্যাঁ আর একটা কথা কচি কলাপাতা রঙের কোনো শাড়ি তোর আলমারিতে আছে কিনা দেখিস তো,,
- কেন মামনি পড়বে তুমি??
- আরে তোর জন্য,,আমার একটা কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি আছে,তাই ভাবলাম সোহিনীর বিয়েতে তুই আর আমি এক রঙের শাড়ি আর এক ডিজাইন করা গয়না পড়ে যাবো,,,,সবাই বেশ তাকিয়ে দেখবে শাশুড়ি আর বৌমাকে,,, ব্যাপার টা কেমন হবে বলতো,,,আমার তো এখন থেকে ভাবলেই মজা লাগছে,,,
- আর আমার লজ্জা লাগছে,,
- তোর লজ্জা লাগে না আবার কোন জিনিসে তা কে জানে,,,, এখন দেখ আগে শাড়ি আছে কিনা,,, না থাকলে তীয়ার কাছ থেকে নিয়ে আসবি,,,আমি আসছি,,,
- ঠিক আছে,, আমি কিন্তু দুপুরে তাহলে ওবাড়িতে খেয়ে নেবো,,,
- সে কি আর বলতে,,আমি জানি তো মনোরমা তোকে না খাইয়ে পাঠাবে না,,,,( বলতে বলতে চলে গেল)
__________________________________________
- অনুপমা চলে যাওয়ার পর পেখম নিজের আলমারি খুলে শাড়ি খুঁজতে লাগলো,,,বিয়ের পর তীয়া একবার আলমারিটা ভালো করে গুছিয়ে দিয়েছিলো,আর কোথায় কি রেখেছে সব ওকে বলে দিয়েছিলো কিন্তু পেখমের সে সব কিছুই মনে নেই তাই বাধ্য হয়ে এখন সব জায়গায় ওকে দেখতে হচ্ছে,,,
- আলমারির সব জায়গায় খুঁজে অবশেষে উপরের তাকে একটা কচি কলাপাতা রঙের জামদানি শাড়ি পেল ওটা লাফিয়ে পেড়ে নিতেই শাড়ির সাথে একটা কিছু ওর গায়ের উপর পড়লো,,,জিনিস টা শক্ত হওয়ার দরুন পেখম একটু ব্যাথা পেল,,,,তারপর জিনিস টা কি ভালো করে দেখার জন্যে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে নিয়ে দেখলো যে এটা আবিরের ডাইরি,,,,ডাইরির উপরে স্পষ্ট করে লেখা আছে আবির চৌধুরী,,, Do not touch it
- Do not touch it এই লেখাটা পড়ে পেখমের খুব ইচ্ছা করছে ডাইরির ভিতরে কি লেখা আছে সেটা পড়ার জন্য,,,যদিও সেটা অন্যায়,,, বিনা অনুমতিতে কারোর পারসোনাল ডাইরি পড়া কিন্তু পেখমের এই অন্যায় কাজটা করতে খুব ইচ্ছা করছে,,,তাই চুপচাপ দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল,,, তারপর ডাইরি টা খুলে দেখলো,,,,প্রত্যেকটা পাতায় অল্প অল্প করে কিছু না কিছু লেখা,,,,
২৩ সেপ্টেম্বর(২০১২)
- এটা আমার সাথে কি হচ্ছে,,কেন হচ্ছে,,,তবে কি আমি ঐ পিচ্চিটার প্রেমে পড়েছি,,,ও মাই গড,,,একটা পিচ্চি কিভাবে আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে,,,
১০ ফেব্রুয়ারি(২০১৩)
-ওকে আজ বলে এসেছি সে জানো শাড়ি না পড়ে,,,এই পিচ্চিবেলায় অত শাড়ি পড়তে হবে না,,, তখন দেখার মতো মুখ ছিল তার,,,কিন্তু সে কি করে বুঝবে কেন তাকে বারণ করলাম,,,তাকে ওই অবস্থায় দেখে তো আমি আর আমার মধ্যে থাকতে পারছিলাম না, শুধু মনে হচ্ছিলো তার মাথাটা আমার এই বুকে চেপে ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি,,তাহলে যদি এই বুকটা শান্ত হয়,,,
২২ জুন(২০১৩)
- আজ তাকে বৃষ্টি বিলাস করতে দেখেছিলাম ছাদে,,,বৃষ্টির ফোঁটা গুলো যখন তার ওই শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছিলো তখন খুব হিংসে হচ্ছিলো আমার,,,, কেন ছোঁবে আমার প্রেয়সীর শরীর সে,,,,
- পেখম ডাইরির লেখা গুলো পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে,,, তারপর কি মনে করে ডাইরিটা এলোমেলো করে পড়তে লাগলো,,,লাস্টের দিকে একটা পেজে পেখমের চোখ আটকে যায়,,,
১০ জানুয়ারি(২০১৯)
- আজ আবার আমার রাত- প্রেয়সীকে দেখার জন্য মনটা কেমন করছিল,,তাই তো রাতের ফ্লাইটে চলে আসলাম কলকাতায়,,, কিন্তু সে দেখো ঘুমাচ্ছে,,, কি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে সে,,,অথচ আমার এই চোখে ঘুমের বদলে রয়েছে শুধু তাকে দেখার তৃষ্ণা,,,,
৬ ডিসেম্বর(২০১৮)
-আজ বাবা আমাকে অফিসের কিছু ফাইল চেক করার জন্য বললো,,,সকাল থেকেই লেগে পড়লাম কাজে,,,অতিরিক্ত কাজের চাপের জন্যে মনটা ভীষণ কফি কফি করছে,,,পাখিকে দেখলাম করিডোর দিয়ে যেতে,,তাই ওকে বললাম এক কাপ ব্ল্যাক কফি করে আনতে,,কিন্তু মহারানী বলল সে নাকি কফি করতে পারে না,,, কথাটা শুনে মেজাজ টা অটোমেটিক খারাপ হয়ে গেল,,,,,, কদিন পড়ে যে আমাকে সামলাবে ,,, আর এখন সে বলে কফি করতে পারে না,,,দিলাম এক ধমক,,, বললাম দশ মিনিটের মধ্যে যেন সে আমাকে কফি করে এনে দেয়,,,,,পরে অবশ্য শুনেছিলাম মায়ের কাছে,,, পাখি নাকি তীয়ার কাছে গিয়ে কেঁদে কেটে কফি বানানো শিখে দশ মিনিটের মধ্যেই আমাকে কফি করে এনে দিয়েছিল,,, ভাবলে এখানো হাসি পাই,,,মেয়েটা আমাকে অতিরিক্ত ভয় পায়,,,,
- পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে পাখির চোখ একটা জায়গায় গিয়ে আটকে যায়,,,
১৫ জুন(২০১৭)
- আজ বন্ধুদের জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়েই শপিং মলে যেতে হল,,,যখন গেলাম তখন নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে নিলাম,,, মল থেকে বেরিয়ে আসার আগেই একটা শাড়ির স্টলে চোখ আটকে যায়,,,বন্ধুদের এগিয়ে যেতে বলে আমি চলে আসি সেই স্টলে,, একগুচ্ছ শাড়ির মধ্যে চোখে লাগে একটা হলুদ জামদানি শাড়ি আর ঠিক তার পাশে রয়েছে লাল রঙের কালো পাড়ের জর্জেটের শাড়ি,,আর সাথে সাথেই আমার প্রিয়তমার মুখ টা ভেসে ওঠে,,, শাড়ি দুটোই কিনে নিলাম,, আর তার সাথে ম্যাচিং করে দুল,চুড়ি কিনে নিলাম। রাতে পুলকদের বাড়িতে গিয়ে দেখি পাখি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে,,,আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো,,, আর বসতে বললো,,আমি পুলকের সাথে কথা বলে বাড়ি আসার আগে পাখির ঘরে নক করতেই ও দরজা খুলে দিয়ে বলল"কিছু বলবেন আবির দা"?আমি ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে শাড়ি আর তার সাথে ম্যাচিং করা অর্ণামেন্টস গুলো এগিয়ে দিয়ে বলি এবারের স্বরস্বতী পূজোর সময় যেন সে এটা পড়ে,ও শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে ছিল,, তখন মনে হচ্ছিলো না থাক বলবো না।
আর লাল শাড়িটা আমি আমার আলমারিতে রেখে দিয়েছি,,,কোনো এক বিশেষ দিনে যখন আমি পাখিকে নিজের করে কাছে পাবো তখন এটা পাখিকে পড়তে বলবো, ওটা না হয় সেদিনের জন্যে তোলা থাক,,,
- পেখম তাড়াতাড়ি ডাইরিটা রেখে আলমারিতে শাড়িটা খোঁজে,,,অবশেষে আবিরের আয়রন করা শার্টের ভাঁজের থেকে ও সেই লাল শাড়ি, লাল কালো চুড়ি আর কালোর উপরে গোল্ডেন স্টোনের একজোড়া দুল পাই,,,পাখি সেইগুলো বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে,,,,অনেকক্ষণ পর নিজেকে ধাতস্থ করে আবার ডাইরি টা নেয়,,,পাতা উল্টিয়ে দেখে এবার সব উল্টো পাল্টা করে যেখানে সেখানে লেখা কোনো সাল নেই শুধু ডেট আছে,,ও প্রত্যেকটা পাতা পড়া শুরু করে,,,,
(৫জুলাই)
-সে কি জানে লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া তার রক্তিম মুখটাই যথেষ্ট আমার হৃদয়ের কম্পন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য??
(১৫ নভেম্বর)
-সে কি জানে তার অগোছালো স্বভাব আমার নিয়ন্ত্রণকে ভেঙেচুরে দেয় প্রতি নিয়ত??তার ওই ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখে আমার রাতের ঘুম উড়ে যায়,,,
(১৯ এপ্রিল)
- সে কি জানে তার অবাধ্য চুল গুলোর প্রতি আমার হিংসা হয় প্রতি নিয়ত?? যখন ওই অবাধ্য চুল গুলো তার চোখে মুখে আছড়ে পড়ে আমার খুব ইচ্ছা হয় তার কানের লতিতে চুলগুলোকে বাধ্য করে গুজে দিতে,,,
(২ ফেব্রুয়ারি)
-আজ ভীষণ কষ্ঠ হচ্ছে কি করে থাকবো তাকে না দেখে দু বছর,,,, বিসনেস কলেজে যেতে হচ্ছে আমাকে দু বছরের জন্য,,, এ দু বছরের প্রত্যেকটা দিন আমার কাছে বিষাদময় মনে হবে,,,,তাকে না দেখে,,,তার গলার স্বর না শুনে কি করে আমি সেখানে থাকবো,,,
- পেখম ভালো করে পৃষ্ঠা টা দেখলো,,,তাতে কাগজের উপর জল পড়লে যেমন টোপ খাওয়া মতো দাগ হয়,,ঠিক তেমনই দাগ আছে এই পৃষ্ঠাতে,,,ওর আর বুঝতে বাকি নেই যে আবির এইকথা গুলো লেখার সময় কাঁদছিল,,, অজান্তেই ওর চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে ডাইরির সেই পৃষ্ঠার উপড়ে পড়লো,,চোখের জল মুছে আবার পড়া শুরু করলো,,,
(১৮ জুন)
- মহারাণী কাল থেকে কলেজ যাবেন,,,,পিচ্চিটা বড়ো হয়েই গেল ,,,,ব্যাঙ্গালোরে আমার আর থাকতে ইচ্ছা করছে না,,, কিন্তু না থেকেও উপায় নেই বাবার বিসনেস তো আমাকেই দেখতে হবে,,,তবে পিচ্চির সব খবরাখবর দেওয়ার জন্য আমার ওখানে লোক রাখা আছে,,,,আজ পর্যন্ত কম ছেলেকে তো আর সাইজ করলাম না,,,,,
(৫ অক্টোবর)
- আজ প্রথম স্যালারি দিয়ে তার জন্য একটা কালো শাড়ি কিনেছি,,,এবং বলেছি এটা যেন সে একান্তই আমার সামনে পড়ে,,,,
(২৯ জুলাই)
- তুর্যের কোলে ওঠার সাহস কি করে পাই এই মেয়ে,,,মনে তো হচ্ছে ঠাসিয়ে দুটো চড় মারি,,,,তারপর ওই তুর্যের হাত দুটো ভেঙে দি,,,,ননসেন্স,,,
- উফফফ এই মেয়েটা সত্যিই পাগল করে দেবে ,,এইভাবে কেউ বৃষ্টিতে ভেজে,,,একের থেকে পায়ে ব্যাথা কিন্তু না উনার বৃষ্টিতে ভিজতে হবে,,,নিজেকে মাতাল মাতাল লাগছে প্রেয়সীর নেশায়,,, আমি তাকে স্পর্শ করতে চেয়েও করিনি কারণ আমি চাই এতে যেন তার সম্মতি থাকে,,,যা হবে আমাদের পবিত্র ও শুদ্ধতম স্পর্শ,,,,,,
(১ জুন)
- ঋষিকে নিয়ে ভাবাচ্ছে ভীষণ এই মনটা ,,,কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে পাখি একমাত্র এই আবির চৌধুরীর হৃদয়ের কাছে ধরা দেবে,,,সেচ্ছায় বন্দি হবে এই আবির চৌধুরীর মনের খাঁচায়,,,
(১১ জুন)
- আজ আমি তার সম্মতি পেয়ে স্পর্শ করেছি তাকে,,,সেই স্পর্শে ছিলো পবিত্রতা,,, একরাশ ভালোবাসা,, ভালোলাগার অনুভূতি,,,, দুজনে মিলে প্রেমের বৃষ্টিতে ভিজেছি,,,অবশেষে ধরা দিয়েছে সে আমার হৃদয়ের খাঁচায়,,,
(১২ জুন)
- আজ আমর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,,, না আমি কাউকে বলতে পারছি,,,না সইতে পারছি,,,ঋষির সাথে পাখির বিয়ে কি করে ঠিক হয়??? আমি পারবো না চোখের সামনে এসব সহ্য করতে,,,,আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে,,, দম বন্ধ হয়ে আসছে,,,, সব কিছু অন্ধকার,,,,
(১৫জুন)
-আজ যাবো আমি কাকুর সাথে কথা বলতে,,
(১৯ জুন)
- পাশাপাশি যখন নিজের বন্ধুর সাথে নিজের প্রেয়সীকে একসাথে রেস্টুরেন্টে দেখে তখন যে কি পরিমাণে কষ্ট হয়েছিল সেটা আমি লিখে বোঝাতে পারবো না,,,,
(২২ জুন)
- যে দিনটার জন্য আমি আজীবন প্রতীক্ষা করবো ভেবেছিলাম,, সেই দিনটা আজ এভাবে আমার কাছে এসে ধরা দেবে আমি বুঝতে পারিনি,,, হ্যাঁ সে আমার কাছে এসেছে,,,ভালোবাসে বলেছে,,,কিন্তু আমি তার পরিবর্তে তাকে আঘাত করেছি,,, তার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছি,,, জানিনা কোনো দিন সে আমাকে ক্ষমা করতে পারবে কি না?? কিন্তু আমি নিরুপায়
-(২৯ জুন)
- পুলকটা আমার উপরে অযথা রাগ করেই বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে,,, আমার কথা বুঝলো না,,,,তীয়াকে আমি বুঝিয়ে বলেছি,,,বোনটা আমার জন্য সেদিন খুব কেঁদেছিল,,, ভীষণ ভালো বাসে আমাকে সেইদিন খুব করে উপলব্ধি করে ছিলাম,,, কিন্তু নিজের সুখের জন্য কারোর মৃত্যুর কারণ আমি হতে চাই না,,, হয়তো আমার কপালে পাখি ছিল না,,,
-(৩১ জুন)
- কাল কে তার বিয়ে,,, আমি ঠিক করেছি কাল বিকেলের ফ্লাইটে ব্যাঙ্গালোরে চলে যাবো,,,নিজের চোখে তার বিয়ে আমি সহ্য করতে পারবো না,,,, এতটা সাহস আমার নেই,,,, হয়তো এই ডাইরিতে এটাই আমার কলমের লাস্ট লেখা,,,, যেই মানুষটাকে নিয়ে লিখতাম মনের হাজারো অনুভূতি,,, কাল যখন সেই মানুষ টি অন্যকারোর হয়ে যাবে,,, তখন আর এই ডাইরি লিখে আমার লাভ নেই,,, হয়তো কোনোদিন খোলাও হবে না এই ডাইরি,,,,সময়ের সাথে ভালোবাসা যেমন হারিয়ে যায় তেমন এই ভালোবাসার অনুভূতি পূর্ণ ডাইরিটাও যেন হারিয়ে যায় কোনো এক নাম না জানা দেশে,,,,,
- পেখম তারপর ডাইরির পেজ গুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলো,,,না আর কোথাও কিছু লেখা নেই,,,,পরের পেজ গুলো সব সাদা,,,পেখম ডাইরিটা বুকে জড়িয়ে ঢুকরে কেঁদে ফেললো,,,আর বলতে লাগলো,,,,
- মানুষটা আমাকে এত গুলো বছর ধরে এতটা ভালোবেসেছে আর আমি কিনা তাকেই এত অবিশ্বাস করলাম,,, কি করে পারলাম আমি এটা করতে?? সে কি আমাকে ক্ষমা করে দেবে?? আমাকে আবার বুকে টেনে নেবে?? আপনি প্লিজ ফিরে আসুন,,,, আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি,,,, আমাকে ক্ষমা করে দিন সেদিনের জন্যে,,,, কি করে পারলাম আপনার ভালোবাসাকে অপমান করতে?? কি করে পারলাম আপনাকে অপমান করতে?? কেন আমি আপনার মুখে বলা ওই কথা গুলো বিশ্বাস করলাম?? কেন আমি আপনাকে সন্দেহ করলাম??? প্লিজ আপনি ফিরে আসুন,,,,( কথা গুলো বলছে আর কাঁদছে,,,ওর এখন এই মুহূর্তে তীয়ার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে,,, সব কথা জানতে ইচ্ছে করছে কি এমন হয়েছিল যার জন্য আবির এই রকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে,,, তাড়াতাড়ি করে ডাইরি টা নিজের জায়গা মতো ঠিক করে রেখে স্নান করে ওবাড়িতে ছুটলো যাওয়ার জন্য)
___________________________________________
- হ্যাঁ রে আমি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছি,,,তোকে চিন্তা করতে হবে না,,, তুই শুধু এটা বল যে কবে আসছিস,,,আমার সাদেও তো এলি না দাদাভাই,,,আমি কিন্তু খুব রেগে আছি আর তার সাথে তোর চ্যাম্প ও রেগে আছে,,,(তীয়া)
- রাগ করিস না এইদিকে সবকিছু আগে সামলে নি তারপর ঠিক চলে যাবো ওখানে,,(আবির)
- আচ্ছা ঠিক আছে,, তুই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছিস তো?? তুই তো আবার তীয়ার কথা বলার মাঝেই ওর ঘরে হুরমুর করে পেখম ঢুকে পড়ে,,, পেখমকে এইভাবে আসতে দেখে তীয়া বলে" কি হয়েছে পেখু?? তুই এইভাবে দৌড়ে কোথা থেকে এলি??
- পেখম তীয়ার ঘরে ঢোকার সময় শেষের কথা গুলো শুনেই বুঝতে পেরেছিলো যে তীয়া আবিরের সাথে কথা বলছিলো,,তাই তো এক্সাইটেড হয়ে এইভাবে এসেছে ,,,কিন্তু এখন তো সেটা বলতে পারবে না তাই কথা ঘুড়িয়ে বলল
- মামনি তোমার জন্য কচুপাতা বাটা পাঠিয়েছে,,,
- ও তাই আচ্ছা দাঁড়া ,,,এই দাদাভাই তুই একটু পেখুর সাথে কথা বল,,,বলেই ফোনটা কান থেকে নামাতে নিলেই আবির বলে ওঠে,,,
-তীয়া আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি,,পাখির সাথে পরে কথা বলে নেবো,,,বলেই লাইনটা কেটে দেয়,,,
- তীয়া ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পাখির দিকে তাকায়,,, পাখির ছলছল চোখ দেখে ওর আর বুঝতে বাকি নেই যে নিশ্চয়ই এই মেয়ে কিছু করেছে ওর দাদাভাই এর সাথে,,যার কারণে ওর দাদাভাই রেগে আছে,,,,ও পেখুর দিকে তাকিয়ে বলে,,
- পেখু সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো??? তীয়ার বলার সাথে সাথেই পেখম তীয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়,,,পেখমকে এইভাবে কাঁদতে দেখে তীয়া চমকে যায়,,, তখনই ভেবে নেয় যে ব্যাপারটা সিরিয়াস,,, ও ধির স্থির ভাবে পেখমকে বলে কি হয়েছে বলার জন্য,,, পেখম কাঁদতে কাঁদতে শুরু থেকে সবটা বলে দেয় তীয়াকে,,, কথাগুলো শুনে তীয়া উত্তেজিত হয়ে পড়ে,,,তারপর বলে ওঠে,,,
- এই মুহূর্তে আমার কি করতে ইচ্ছা করছে জানিস,,,মনে হচ্ছে তোর দুগালে ঠাসিয়ে দুটো চড় মারি,,, তুই কি করে পারলি এটা করতে??? এই আমি তোকে জিজ্ঞাসা করিনি যে পেখু তোদের মধ্যে সব কিছু ঠিক আছে কিনা?? স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক ঠিক আছে কিনা?? কি হল বল জিজ্ঞাসা করিনি??
- করেছো( চোখের জল মুছে) কিন্তু আমি উনার কথা গুলোর জন্য,,,( পেখমকে বলতে না দিয়ে তীয়া বলে,,)
- হ্যাঁ ওই মুখের কথা গুলো বিশ্বাস করে আমার দাদাভাই কে কষ্ট দিলি,,,একবারের জন্যও কি তোর এটা মনে হয়নি মানুষটা কত কষ্টের মধ্যে তোকে এইকথা গুলো বলছে?? বা এই মানুষটা এইরকম কথা বলতেই পারে না,,,,
- আমি সত্যিটা জানতে চাই বৌমনি প্লিজ বলো আমাকে,,,
- তুই যেটা করেছিস একদম ঠিক করিসনি পেখম,,, শেষ পর্যন্ত সন্দেহ করেছিস,,,জানি না দাদাভাই তোকে ক্ষমা করবে কিনা,,,ঠিক আছে শুনতে চাইছিস যখন শোন,,,তোর আর ঋষির বিয়ে যে দিন ঠিক হয় তারপরের দিনই দাদাভাই বাবাকে নিয়ে তোর বাবার কাছে যায় তোর হাত চাওয়ার জন্যে,,, তোদের সম্পর্কে কারোর কোনো অমত ছিলো না যদি তোরা একটু আগে সবাই কে বলতিস,,
(অতীত)
- কাকু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি পেখমকে সারাজীবন ভালো রাখবো,,,আগলে রাখবো,,,আমি ওকে খুব ভালোবাসি,,, ওকে ছাড়া আমি এক মুহুর্ত ভাবতে পারি না,,,(আবির)
- দেখতেই পারছিস তো ছেলেটার কি অবস্থা,,, আমি বাবা হয়ে কি করে সহ্য করবো দেবেন্দ্র তুই বল??( অশোক বাবু)
- কিন্তু আমি যে নিরুপায় আবির,,,বাবার দু দুবার স্টোক হয়েছে,,,একবার হার্ট এ্যাটাক হয়েছে,,,এবার প্রায় মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে,,,শরীরের কান্ডিশন একদম ভালো না,,আমি যে কিভাবে বাবাকে এখানে এনেছি তা কেবল আমি আর ওই ভগবান জানেন,,,ডাক্তার আসার সময় বারবার করে বলে দিয়েছিলেন যে বাবা যেন বেশি উত্তেজিত হয়ে না পড়ে,,বিশ্বাস কর এই মুহূর্তে পেখমের বিয়ে আমিও দিতে চাইনি কিন্তু ওই যে বাবা তার বন্ধুকে কথা দিয়ে ফেলেছে তাই আর না করতে পারিনি,,, যাতে বাবার শরীর টা আর খারাপ না হয়,,,,এখন যদি আমি ঋষির সাথে পেখমের বিয়ে ভেঙে দিয়ে তোর সাথে ঠিক করি,জানি না বাবা কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে,,,যদি বাবা উত্তেজিত হয়ে কোনো ক্ষতি হয়ে যায় বা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে তখন সহ্য করতে পারবি তো আবির?? পেখমকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবি তো?? সারা জীবন মনে হবে না কারোর মৃত্যুর কারণ তুই??? বল কি হল বল??? আমি যদি আগে জানতাম তাহলে কখনোই বাবাকে এগোতে দিতাম না,,,তুই বল অশোক আমি কি করবো??? না পারছি একজন ছেলের কর্তব্য পালন করতে আর না পারছি একজন বাবার কর্তব্য পালন করতে,,(বলেই সোফায় বসে পড়লেন দেবেন্দ্র বাবু)
- না কাকু ,,,আমার ভুল,,, হয়তো পাখি নেই আমার ভাগ্যে,,, আমি এতকিছু জানতাম না,,, জানলে কখনোই এই অন্যায় আবদার নিয়ে তোমার কাছে আসতাম না,,,আমি নিজের সুখের জন্য কখনোই কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারি না,,,, কখনো না,,,(আবির)
- আবিরের কথা গুলো শুনে দেবেন্দ্র আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন যে সত্যি যদি পাখি তোর ভাগ্যে থেকে থাকে তো ওর সিঁথি তোর দেওয়া সিঁদুরে রাঙা হবে,,,
চলবে,,,,
0 Comments:
Post a Comment