গল্প শিশির_কণা পর্ব ৪

 #শিশির_কণা

শামসুল ইসলাম

(পর্বঃ- ৪)

এক পর্যায় অনুভব করলাম শিশিরের প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছি। সে আমার হ্রদয়ের গহিনে অবস্থান করেছে।

অনেক ভেবেচিন্তে ইনিয়েবিনিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম আমি তাকে চাই। শিশির আমার কথা বুঝে কিন্তু শাড়া দেইনা।

হঠাৎ একদিন আমার আশা পূরণ হলো, শিশির আমাকে সরাসরি প্রস্তাব দেই, সে আমাকে ভালোবাসে।

ভালোবাসা কথাটি শুনেই আমার হ্রদয়ে অনন্দে খুশির জোয়ার বয়ে চলে। 

আমি নিজেও জানিনা কেনো অচেনা রাজকুমারের প্রেমে হাবুডুবু খেলাম। তারপ্রতি  দুর্বলতা হওয়ার পিছনে সবথেকে বড়ো কারন ফেসবুকে নিয়মিত চ্যাটিং।

যাইহোক এতো কথা আর বলতে যাচ্ছি না, শিশিরের সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় দুই বছরের মতো। অনেকবার অনুরোধ করেছি দেখা করার জন্য।

আমি তাকে এমনো প্রস্তাব করেছি যে, তুমি অন্ততপক্ষে বাসা থেকে যখন ঢাকাই যাবে তখন খুলনা থেকেই আমার সাথে দেখা করো। বেচারা আমার কথা কানেই করেনা।

আমাদের প্রেমটা অনেকটা ছন্নছাড়া মতোই, যানিনা সে আমার মতো করে কখনো অনুভব করে কিনা। তবে আমরা শুধু দুজন দুজনকে চিনি জানি তাছাড়া আমাদের পরিবার সম্পর্কে পরস্পর কেউ কিছু জানিনা।

হঠাৎ মণি বললো-

-" আপু তোমাকে বড়ো মামি ডাকছে?"

-" কিজন্য?"

-" জানিনা, যেয়ে দেখো।"

মামানির কথা শুনলে বুকের ভিতরে ধকধক করে ওঠে, কারন ব্যাবহারটা তেমন সুবিধের না। যারা নানা বাড়ি থাকেন তারাই বুঝবেন ব্যাপারটা। তবে মামাদের আদর সোহাগ অমায়িক কখনো কোনো চাহিদা অপূরণ রাখেননি। খুব ছোটবেলা থেকে তাদের কাছে মানুষ যারকারনে মেয়ের মতো আদর সোহাগ পাই আমরা দুইবোন।

আমি দ্রুতপায়ে মামির কাছে যেয়ে বললাম-

-" মামি ডেকেছেন আমাকে?"

-" হ্যাঁ এই নে হালুয়া রুটি খা, সাথে মণি আর তোর মার জন্য নিয়ে যাস।"

-" আসলে মামি শবেবরাত সম্পর্কে হালুয়া রুটি খাওয়া বিদআত তাই খাবোনা আমরা কেউ।"

মামানি ভেংচি কেটে-

-" ইশ! কি আমার ধার্মিক গো, নামাজ কালামের মুরোদ নাই আমার ধর্মের বুলি!"


আমি আর কথা বাড়ালাম না, চুপ করে দাড়িয়ে থাকলাম।

কিছুক্ষণ পর আবার বললেন-

-" এতো ধর্মধর্ম করবিনা, বড়ো হয়েছিস বিয়েশাদী করে সংসার কর। বসেবসে তো তোর মামা নানার ঘাড় মটকাচ্ছিস।টাকাতো আর গাছে ধরেনা আয় করতে হয় সাথে পরিশ্রম লাগে।

দুইটা বোন তোরা বড়ো হচ্ছিস সেই ছোটবেলা থেকে মামা নানার ঘাড়ে চড়েছিস তোরা তিনজন তাই কিছু বুঝছিস না। তোর মা যদি আবার বিয়ে করতো তাহলে কখনোই আমাদের জালাতন পোহাতে হতোনা। তোরা আছিস ভালো কথা থাক থেকে মোন দিয়ে পড়াশোনা কর, কিন্তু তোদের মতো মানুষের স্বপ্ন এতো বড়ো হওয়ার কি দরকার?

আর্টসে না পড়ে পড়ছিস সাইন্সে, শুনলাম নাকি তোরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবি?

কি দরকার বাপু এতো বড়োবড়ো স্বপ্ন দেখার?

আর্টসে পড়লে তো আর এতো প্রাইভেট কোচিং হাবিজাবি করতে হতোনা। আসলে না করে কি করবি পাইছিস কিছু বলদ মামা নানা, যারা তোদের সব চাহিদা পূরণ করে যারজন্য তোদের এতো স্বপ্ন।

যদি গরিব ফকিরের ভাগ্নি হতিস তাহলে এসব স্বপ্ন ছুটে যেত।

যতো সব আপদবিপদ চাপছে আমাদের ওপর।"


মামির কলের গান ফুল ভলিউমে অনেকক্ষণ চালালো। আমার চোখদিয়ে পানি গড়াচ্ছে তাঁর কথায়, বাবাকে ভীষণ মনে পড়ছে আজ যদি বাবা থাকতেন তাহলে মামিদের কটু কথা শুনতে হতোনা।

আমার চোখদিয়ে অশ্রুজল গড়ানো দেখে মামি বললেন-

-" কণা মা কিরে কাঁন্দিস কেন! কি এমন বললাম। কষ্ট নিস না, আসলে ভালোবাসি তোদের তাই সঠিকটা বললাম যাতে সুধরে নিস নিজেদের।"

আমি না কান্নার ভান করে এক চিলতে শুকনো হাসি দিয়ে-

-" হাহাহা কি বলো মামি তুমি ঠিক বলেছো, কেনো দুঃখ পাবো বল?"

মামানি আমার মুখে এ কথা শুনে আবার কটুকথার কলের গান শুরু করল-

-" আসলে দেখ! আমার মেয়ে ফারজানা তাকে কতো প্রাইভেট কোচিং করালাম কিন্তু সে এসএসসি পাশই করতে পারলোনা। একদম গোবর গণেশ, আর এদিকে দেখ তোরা দুইবোন কতো ভালো লেখা পড়াই তাই একটু হিংসে হয় তোদের দেখে। তবে আরেক দিক থেকে ভালোলাগে আমার মেয়ে তোদের থেকে সুন্দরী তাই ভালো জাইগাই বিয়ে হবে কারন তোদের বাপ দাদার ঠিক নেই আমার মেয়ের আছে।"

মামির মুখের প্রতিটা কথা মনে হচ্ছে রেললাইনের প্রতিটা পাথর যা দিয়ে আমার সারা শরির আঘাত করছে। আজ খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা তুমি কেনো পরপারে চলে গেলে আমাদের এতিম করে মানুষের অপমান সয্য করার জন্য?

খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু, উপাই নেই এখন মনে হচ্ছে আমার জন্ম বড়ো মামির কটু কথা শুনার জন্য।

দাদা বাড়ি পৈতৃক পরিচয়ে বড়ো হবো সে উপাই নেই, দাদা মারা গেছেন দাদি কোনো কারনে আত্মহত্যা করেছেন তারা বেঁচে থাকতেও কখনো খোঁজখবর নেননি।

হাইরে কপাল এই অভাগা যেদিকে যাই সব হাহাকার হয়।

আমি খাম্বার মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি একটা কথাও বলছিনা, শুধু শ্রবণ। আমার পিনপতন নীরবতা। যা দেখে মামি কাছে এসে পিঠে হালকা আদর মাখা স্পর্শে বললেন-

-" কষ্ট পাসনা সত্যকথা তিতা হয় যা শুনতে খারাপ, আসলেই তো আমি ঠিক বলছি তোদের বাবা নেই তাই এমন কষ্ট তোদের। তুই যেহেতু হালুয়া রুটি খাবিনা তাহলে যা পড়তে বস?"

আমি মুখ ঘুরিয়ে চলে আসবো এমন সময়ে-

-" মারে তোর মামা যেন আমি যা যা বলিছি তা যেনো না জানে। যদি জানতে পারে আস্তো রাখবেনা কারন আমাদের থেকে তার কাছে তোরাই সব, আর  আমরা বানে ভেসে আসা শেওলা।"

ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আল্লাহকে বললাম-

-" ইয়া আল্লাহ কেনো আমি এতিম, কেন তাদের এতো কষ্ট মানুষের কটু কথা কেনো কেনো?"

★★★

রাতের অন্ধকারে চোখদুটি মুছতে মুছতে আসলাম নিজের ওর্না দিয়ে। রুমে আসার সাথেসাথে মণি-

-" আপু তোমার কি হয়েছে তুমি কাঁদো কেনো?"

-" বোনরে আমরা এতিম এই কান্নাটা তার প্রাপ্য প্রতিদান। আমাদের জন্য মানুষের মাথার বোঝা হওয়া আর কটুকথা শুনার।

আর থাকতে ইচ্ছে হয়না এবাড়িতে। যদি মাথাগোঁজার আশ্রয় পেতাম জীবনের মতো চলে যেতাম কটুভাষিণী মানুষের সামনে থেকে।"

কান্না করেই যাচ্ছি, আম্মু রান্নাবাড়ার কাজে ব্যস্ত তাই রুমে আসছেননা। মণি চোখটা মুছতে মুছতে আমার কাছে এসে বললো-

-" আপু কেঁদনা, আল্লাহপাক কি বলেছেন যানো?

“নিশ্চয় কষ্টের পর স্বত্বি আসে” (সুরা ইনশিরাহ)

সুতারাং যারা কটুভাষিণী এতিমদের সম্পদ বা বদনাম ও কটুকথায় কষ্ট দেন আল্লাহপাক তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিবেন। কষ্টের পর যেহেতু সুখ দিবেন অবশ্যই আমরা সুখি হবো।"

মণিকে জড়িয়ে ধরলাম, মনে হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদি। মণিও কাঁদে আমি কষ্টের মাঝেও বললাম-

-" কাঁদিসনা বোন আমার কাঁদিসনা।"

মণি শান্ত হয়ে বললো-

-" কণাপু, আরেকটা অপরাধ কখনো করবেনা?"

-" কিরকম? "

-" অনেক সময় আমরা যারা মা বাবা হারা তারা মানুষের কটু কথাই বা নিজেদের কষ্টের সময় আল্লাহপাককে গালি দিই যে, আল্লাহ কেনো আমার মা বাবাকে নিয়ে গেছো বা বিলাপ করে কান্নাকাটি করি বিভিন্ন ভুলভাল বাক্য উচ্চারণ করি যা আমাদের জন্য চরম অন্যায় অনেক গোনাহগার হতে হবে। আমরা মেয়েরা এমনটা বেশি করি, কারন আমাদের ভালোবাসাটা বেশি যা সহজে ভুলতে পারিনা। কিন্তু বিষয়টা কি জানো?

আমরা আল্লাহকে দোষারোপ করি কিন্তু কখনো বুঝিনা এটা তার হায়াত এই পর্যন্ত ছিলো। যা বিভিন্ন উপায়ে আল্লাহপাক আমাদের মাঝ থেকে উঠায়ে নিয়ে যান। প্রকৃত পক্ষে আমার তোমার সবথেকে বড়ো গার্জিয়ান অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ। তিনি তার বান্দাকে কখনোই অমঙ্গল চাননা। তাই তাঁর সিদ্ধান্তটা মেনে নিয়ে সবর করাটা আমাদের জন্য অনেক পুণ্যের কাজ।"

খুব ভালোলাগছে আমার কলিজার বোন মণির কথায় আমি বিষণ্ণ মনে প্রসন্ন হয়ে যাই।

জড়িয়ে ধরে মুখে একটা চুমু দিয়ে বললাম-

-" আমার সোনা বোন ময়নাপাখি,

 তোরে এখন কোথাই রাখি,

 তোর কথায় শুকিয়ে গেছে আমার কাজল আখি।"

বিষণ্ণা মোন একদম শান্ত হয়েগেছে, হ্রদয়ের গহিনে শীতলতা অনুভব করছি।

ভাবলাম আম্মুকে এক পলক দেখে আসি কি রান্না করছে।

রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে-

-" কি করোগো আম্মু?"

-" ও মা !!! তুই না পড়ে এখানো কেন?"

-" তোমাকে দেখতে মোন চাইলো তাই চলে আসলাম এখানে।"

-" দেখা হয়েছে এবার যা পড়তে বস আমাকে উদ্ধার কর?"

-" কি বলো মা!! ভাবলাম একটু সুখদুঃখের গল্প করবো তা না তুমি তাড়িয়ে দিচ্ছ?"

কথাটা বলেই মোন খারাপ করে মুখ গোমরা করে ফেললাম।

আম্মু আমার গোমরা মুখদেখে কাছে ডেকে মুখে আলতো স্পর্শে হাত বুলিয়ে-

-" আমার সোনা মা, রাগ করে না এভাবে রাগ করে মুখ ফুলিয়ে থাকলে ভাল্লাগেনা মটেই।"

কথাটি বলেই আমার মৃদু নাকের ডগাই টান দিলেন। আহা কি যে সুখ মায়ের আদরে বোঝানো বড়ো দায়।

আম্মুর সাথে বেশ কিছুক্ষণ ইয়ার্কি করার পর বললাম-

-" আম্মু আব্বুকে তোমার মনে পড়ে?"

আম্মু হঠাৎ রান্না বাদদিয়ে আমার দিকে তাকালো, খেয়াল করলাম আম্মুর চোখে পানিতে ছলছল করছে।

আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না, তবুও বললাম-

-" সরি আম্মু তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি!"

-" বিয়ে কর বুঝবি ভালোবাসা মহব্বত টান তার স্মৃতি কতোটুক অনুভবে মিশে থাকে।"

আসলে কি শান্তনা দিব বুঝতে পারছিনা, আম্মুর চোখের প্রতিটা অশ্রুকণা আমার জন্য বিষাক্ত তির, যা সরাসরি কলিজাই হানে।

আমি নিরুপায় হয়ে বললাম-

-" আম্মু যাই, পড়তে বসি।"

-" যা রান্না শেষ করে ভাত আনছি।"

আর কথা না বলে রুমের দিকে হাটা দিলাম, পৌঁছানোর পর মণি-

-" কণাপু মোন ভালো হয়েছে?"

-" হ্যাঁ তোর মতো লক্ষ্মীবোন আর জান্নাতি মা থাকতে মোন খারাপ হয় বল?"

-" আপু আমি লক্ষ্মী?"

-" হ্যাঁ অবশ্যই!!!

-" ভুল কথা!!  লক্ষ্মী শব্দটি হিন্দুদের একজন দেবতার নাম যাকে চরিত্রে ভালো প্রকাশ করা হয়। আমরা কথাই কথাই আবেগে এই কথাটি প্রকাশ করি, যা বর্জন করা উচিৎ। বরং বলতে পারো আলহামদুলিল্লাহ তোর মতো বোন বা মাসআল্লাহ তোর মতো বোন থাকতে মোন খারাপ হবে কেনো?

লক্ষ্মীর প্রশংসার চেয়ে  আল্লাহর প্রসংশা করাটা অনেক অনেক ভালো।"

-" মাসআল্লাহ বোন আমার তোর কথাই হ্রদয় প্রশান্ত হয়ে যাই।

-" যাঝাকিল্লাহ খইর, অনেক হয়েছে এবার পড়তে বসো তাছাড়া তোমার পরিক্ষার বারটা বাজবে।"

আচ্ছা, বলেই পড়তে বসলাম।

★★★

রাতের খানাপিনা পর্বঃ পরিসমাপ্তি করে বিছানাই গা এলিয়ে দিলাম, রাত  ১১.৩০টা হবে প্রায়। 

মনের রাজ্যে তো শিশির উড়াউড়ি করছে। তারসাথে একটু কথা বলার জন্য কণা ঘুমিয়ে পড়ার পর চোরের মতো ফোনটা সাইলেন্ট করে ডাটা অন করলাম।

যেদিক সেদিক ফোনটা টানাটানি করে ডানা চালু হলো, মেসেঞ্জার চেক করে দেখি প্রিয় আমার মেসেজ করেছে-

-" লাভ ইউ বাবু মিস ইউ।"

 আরো কিছু ইস্টিকার যা বলা যাবেনা।

আমার চিরাচরিত অভ্যাস কেউ আমাকে কষ্ট দিলে সহজে ভুলতে পারিনা, এবং কথাগুলো রাত যতো গভীর হবে ততো মনের ভিতরে ক্ষত সৃষ্টি করবে।

মামির কথায় মোনে বিষক্রিয়া করেছে যা প্রকাশ করার জন্য তাঁকে মেসেজ করলাম-

-" বাবু আমার মোন খারাপ!"

সাথেসাথে রিপ্লে-

-" কেনো কি হয়েছে বাবু?"

-" আজ আমার মামি অনেক কটু কথা বলেছেন।"

-" কি বলেছেন?"

-" আমার মৃত বাবাকে নিয়ে, আমাকে বলতে পারতো কিন্তু বাবাকে কেনো বলবে বলো?"

-" কি! তোমার বাবা নেই?"

-" না, আমরা যখন ছোট তখন সেই ছোটবেলাই মারা গেছেন।"

-" তাহলে তোমাদের সংসার চলে কিভাবে?"

-" আম্মু ছোট একটা চাকরি করেন, আর মামারা আছেন নানা নানি জীবিত। এককথাই সবাই অনেক সাহায্য করেন।"

-" তোমার দাদা সাহায্য করেননা?"

-" তিনি মারা গেছেন, জীবিত থাকতেও খোঁজখবর নেইনি কখনো?"

-" তোমরা কোথায় থাকো তাহলে?"

-" নানু বাড়ি।"

-" তারমানে তোমার পৈতৃক ভিটাহীন?"

-" কি যা তা বল? আমার আম্মুই কিছু নেননি সেখান থেকে।"

-" ওহ, শোনো তাহলে?"

-" বলো?"

-" একটা কথা বলি মোন দিয়ে শুনবে আশাকরি বুঝবে বিষয়টা।"

-" বলো?"

-" তোমার বাবা নেই, তাতে আবার পৈতৃকভূমি নেই তোমাদের। সংসার চলে পরনির্ভরশীল আবার তোমার আম্মু নাকি ছোটখাটো চাকরি করেন। বাস্তবতার সাথে চলতে হলে জীবনে অর্থকড়ির দরকার হয়। সুতারাং তোমাদের সেটা নেই, তাতেও আপত্তি ছিলোনা। কিন্তু আমার বাবা বড়ো ব্যবসায়ী তোমার মতো মেয়ে কখনো মেনে নেবেননা। তাই আগে জানলেই সম্পর্কে জড়াতাম না। কিন্তু এখন সত্যাটা জানতে পারলাম, তুমি আর কষ্ট পেয়ো না ক্ষমাপ্রার্থী দয়াকরে ভুলে যেও কখনোই আর নক করোনা। বাধ্যহয়ে ব্লক করে দিলাম বাই।"

কথাগুলো শেষ হবার পরপরই দেখলাম লিখা আসছে-

-"You con't reply to this conversation .learn more"

শতো প্রশ্ন জাগ্রত হলো কিন্তু তা করার পুর্বেই আমাকে ব্লক।

আমার মাথাই আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। দুই বছরের সম্পর্ক!! 

আজ বাবা না থাকার জন্য সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলো?

আমার হেস্কি উঠা শুরু হলো কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছি। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।

হতাশ হয়ে পড়লাম-

বাবা না থাকার জন্য চারিদিকে আমাকে এতো কষ্ট পোহাতে হবে?

কতো ভালোবাসতাম শিশিরকে, আজ বাবা না থাকার জন্য সব শেষ?

রাখব না জীবন, এতো কষ্ট আর সহ্য করার নই।

আবেগ আপ্লুত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম গলাই ফাঁশি নিয়ে নিজেকে শেষ করে দিব। বিষদায়ক জীবনে পাদচারণা আর সম্ভব না।

আম্মু আর কণার ঘুমিয়ে থাকা পবিত্র মুখখানি দেখে বাইরে বের হলাম ঘরের পিছনে আমগাছে ফাঁশ দিয়ে মরবো…………(চলবে)

গল্পে যে মৃত বাবাকে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর জন্য সবাই দোয়া করবেন। যেন আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা করে  জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করেন। (আমীন)

0 Comments:

Post a Comment