#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ৩০
- সারা ঘরময় জুড়ে মৃদু আলো আর গোলাপের গন্ধে ভরপুর,,, থেকে থেকে শীতল বাতাস ব্যালকনির পর্দা গুলোকে উড়িয়ে দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করছে,,,যা ওই মৃদু আলো গুলোকে নিভু নিভু করতে প্রস্তুত,, আবার বাতাসের বেগ কমে এলে আলোর শিখা গুলো বড়ো হয়ে ওঠে,,,,বাইরে শীতল বাতাসের সাথে সঙ্গ দিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দেখাও মেলে,,,সেই সাথে মেয়েলি কন্ঠস্বরও আবিরের হৃদয়ের গহীনে গিয়ে আঘাত করে,,,
- কন্ঠস্বর টা যে ব্যালকনির দিক থেকে আসছে সেটা বুঝতে বাকি থাকে না আবিরের। মুহূর্তেই সেই মায়াবী কন্ঠস্বরের অধিকারিণী কে দেখার তীব্র ইচ্ছা জেগে ওঠে আবিরের,,,হাতের তোয়ালে টা ওয়াশরুমের স্ট্যান্ডে রেখে বেরিয়ে এসে,দ্রুত পায়েই ব্যালকনির দিকে যায় ও,,,ঘড়িতে তখন এগারোটা বেজে পঞ্চাশ,,আবির ব্যালকনির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অবাক হয়ে চেয়ে থাকে,,,,
- আবিরের মনে হচ্ছে পৃথিবী যেন থমকে গেছে,,,, ও যেন কোনো মায়াপুরী তে দাঁড়িয়ে আছে,,, আর ওর সামনে কোনো মায়াবী মানবী দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জল নিয়ে খেলছে,,,পড়নে তার সেই জর্জেটের কালো পারের লাল শাড়ি,,,, কালো স্লিভলেস ব্লাউজ,,,খোলা চুল গুলো বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে,,,,গাঢ় লাল লিপস্টিকের দ্বারা আবৃত অধরযুগলে লেগে আছে মৃদু হাসি,,,বৃষ্টির ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে হাতের লাল- কালো চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ চারেদিকে বারি খাচ্ছে,,,,মুহূর্তেই আবির প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্যের সাথে তাল মিলিয়ে আবিষ্কার করলো তার সামনে এক বাদল কন্যা দাঁড়িয়ে আছে।
- আর যখন সেই বাদল কন্যা ওর দিকে ফিরে এগিয়ে আসতে লাগলো তখন ,কানের ওই ঝুমকোর সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো গোল্ডেন স্টোনের সেই নুপূর জোড়া,,,,,গাঢ় কাজল দেওয়া চোখে যেন কত অভিমান আর একরাশ জল,,,পলক ফেললেই যেন ওই চোখ দিয়ে মুক্তধারা ঝড়ে পড়বে,,,,আবির হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে সেই মানবীর দিকে হঠাৎ ও উপলব্ধি করলো বুকের বাঁ পাশে থাকা হৃদয়ের গতিবেগ টা যেন মুহূর্তেই দ্বিগুণ হয়ে গেছে,,,, চোখটাকে সংযত করার চেষ্টা চালালেও পাড়ছে না,,,,
-নিজের মনের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ব্যস্ত যখন আবির,ঠিক তখনই ও উপলব্ধি করলো ওকে কেউ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে, বুকে মাথা দিয়ে আছে,,,কিছুক্ষণ বাদে এটাও আবিষ্কার করলো যে টিশার্ট টা ভিজে উঠেছে সেখানে,, ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। ঘড়ির কাঁটা যখন ঠিক বারোটার ঘরে ছুঁই ছুঁই, তখন রিনরিনে কন্ঠস্বর আবিরের শ্রবণ যন্ত্রে গিয়ে ধাক্কা খায়,,,,মুহুর্তের মধ্যে শ্রবণশক্তি দৃঢ় হলো,,, মস্তিষ্কের নিউরন গুলো সজাগ হলো,,,কন্ঠস্বরটির অধিকারিণী আবার বলে ওঠে,,,
- "শুভ জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো আপনার জন্য,,,"
- আবির কোনো প্রত্যুত্তর করলো না,,, শুধু নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,,,ওর এখন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে যে পেখম ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,, হমমম হুহুউউ শুধু সামনে নয় বরং ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে,,,,
- আমি আপনাকে খুব মিস করেছি,আপনি জানেন,,,, আমার ভীষণ কষ্ট হয়েছে এই কদিন,,, মানছি আমি, সেইদিন আপনার সাথে ওই রকম ব্যবহার করা উচিত হয়নি আমার,,,আমাকে ক্ষমা করে দেবেন,,,, কিন্তু আমি,,,
- পেখমের শেষের কথাটা শুনে আবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে,,,পেখমের কথা শেষ করতে না দিয়ে ও পেখমকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে একটু পিছিয়ে দাঁড়ায়,,,, আবিরের এইরূপ আচরণে পেখম কষ্ট পায়,,,তবুও নিজেকে সামলে বলে ওঠে,,,
- আপনি এভাবে কেন,,,( পেখমের কথা শেষ করতে না দিয়ে আবির বলে ওঠে,,)
- তুমি এখানে কেন?? কিভাবে এলে?? ( গম্ভীর হয়ে)
- পেখম আবিরের কন্ঠস্বর শুনেই ভয় পেয়ে যায়,,, তবুও নিজেকে সামলে ধিরে ধিরে বলে,," বিকেলের ফ্লাইটে এসেছি"।
- তুমি বিকেলে এসেছো??,,,,কে দিয়ে গেল?? আর কলকাতা থেকে এখানে এলে কেন???
- আবিরের কথায় রাগ রয়েছে সেটা সম্পূর্ণ প্রকাশ পাচ্ছে,,,পেখম আমতা আমতা করে বলে,,,আমি একাই এসেছি,,,তারপর আপনার ড্রাইভার কে ফোন করতেই উনি আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেয়,,,
- বাহ আজকাল আমার অগোচরে এত কিছু হচ্ছে আর আমি নিজেই জানতে পারছি না,,,, ভালো তবে তুমি এতটাও বড়ো হয়ে যাও নি যে কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে চলে আসবে আর আমি সেটা স্পেয়ার করবো,,এটা নিয়ে আমি মার সাথে পরে কথা বলে নেবো ,,, তা এত দিনে তো একবারের জন্যেও ব্যাঙ্গালোরে আসার প্রয়োজন পড়েনি,, তা আজ কেন প্রয়োজন হলো???( টাউজারের পকেটে হাত রেখে)
- আপনি এইভাবে কথা বলছেন কেন আমার সাথে?? আমার কষ্ট হচ্ছে,,,, একটু ভালো করে কথা বলুন না,,(ছলছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে)
- তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমার সাথে খারাপ ভাবে কথা বলছি??? আমার কিন্তু সেটা একবারের জন্য হলেও মনে হচ্ছে না,,,, আমি স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পছন্দ করি,, তাই তোমাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করছি হঠাৎ করেই এত কি প্রয়োজন হল যে তুমি কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে চলে এলে তাও আবার এই চরিত্রহীন মানুষটির কাছে???
- আবিরের প্রশ্নে পেখমের হৃদয় ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে,,,মানুষটাকে চরিত্রহীন কি করে বলেছিলো সেইদিন ও,,,কতটা কষ্ট পেয়েছিল সেইদিন এই মানুষটি,,, না না ওর শাস্তি প্রয়োজন,,,
- কি হল চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?? আমার প্রশ্নের উত্তর দাও,,,আর তুমি যদি মনে কর এইভাবেই চুপ করে থাকবে,,,সুতরাং আমার কিছু বলার নেই,,, তুমি আমাকে মানুষ বলে গণ্য না করতেও পারো,,অযথা এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না,,,অনেক রাত হয়েছে আমি ঘুমাবো,,, চাইলে তুমি এই ঘরে শুতে পারো নয়তো,,
- নয়তো কি???( চোখের জল মুছে,,,)
- নয়তো পাশে আরো একটা বেডরুম আছে,,,ওখানে থাকতে পারো ( কথা গুলো বলেই ঘরের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়)
- পারলে আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন,,,,আমি অন্যায় করেছি,,,সেই দিন আপনার সাথে ,,,
- পাখিকে বলতে না দিয়ে আবির পিছন ফিরেই বলে,,,ক্ষমার কথা আসছে কোথা থেকে পাখি?? তারপর পাখির দিকে ফিরে, পাখির চোখে চোখ রেখে বলে,,তুমি তো ক্ষমা চাওয়ার মতো এমন কিছু করোনি,,,কি করেছো এমন কিছু???( শান্ত ভাবে কথাটা বলে)
- আবিরের কথা শুনে পেখম ওখানেই কেঁদে দেয়,,,,
- একদম কাঁদবে না,,,জানো তো আমি তোমার ওই চোখের জল পছন্দ করি না,,, এখন যাও অনেক রাত হয়েছে,, আমি ভীষণ ক্লান্ত,, ঘুমাবো আর তুমি তো জানো আমি সবকিছু সময় মতো করতে পছন্দ করি,,,( কথা গুলো বলেই আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ঘরে চলে আসে আবির)
_________________________________________
- মোমবাতির মোম গুলো গলে জমাট বেঁধে আছে,,,ছোট ছোট বাতি গুলো সেই কখন নিভে গেছে,,,ঘরে শুধু মরিচ বাতি গুলোই জ্বলছে আর তার সাথে জ্বলছে দুটি হৃদয়,,,,
- আমি তো চেয়েছিলাম তোমাকে জড়িয়ে ধরতে,,,কিন্তু এই হাত দুটো কিছুতেই তোমাকে জড়িয়ে ধরতে দেয় নি,, আমি তো চেয়েছিলাম তোমার ওই চোখের জল নিজের অধর দিয়ে মুছিয়ে দিতে কিন্তু আমি তা পারিনি,, হয়তো আজ ভালোবাসার থেকে অভিমান টা জিতে গেল আমার কাছে,,,আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি,,,কিন্তু এই মন বলছে তোমাকে বোঝাতে হবে ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে আঘাত পেলে ঠিক কতটা যন্ত্রণা হয়,,,,( চোখের উপর বাহু দিয়ে কথা গুলো আবির মনে মনে ভাব
- ঘড়ির কাটা যখন একটা ছুঁই ছুঁই তখন আবির দেখে পেখম ঘরে আসেনি,,, বাইরে তখন ধুম বৃষ্টি হচ্ছে,,, কিছু একটা ভেবে ও বিছানা ছেড়ে উঠে ব্যালকনির দিকে যায়,, আর গিয়ে দেখে পেখম আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর মাঝে মাঝে হাত দিয়ে চোখের জল মুছছে,,,
- না এই মেয়েটাকে আমি হাজার চাইলেও কষ্ট দিতে পারবো না,,, বরং তার থেকে বেশি কষ্ট আমি পাবো,,এইসব কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে পেখমের খুব কাছে চলে যায় ও বুঝতে পারে না,,, তারপর পেখমের উদ্দেশ্যে বলে,,,
- " একান্তই যদি বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করে,, তাহলে কলকাতাতে গিয়ে ভিজো,,,এখানে ভিজে অসুস্থ হলে কে সেবা করবে?? (রাশভারী গলায়)
- আবিরের এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে পেখম ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে,,,আর ভিজবো না,,চলে যাচ্ছি আমি,,,তবে আমার একটা অনুরোধ রাখবেন প্লিজ,
- হমম বলো( গম্ভীর হয়ে)
- একবার কেকটা একটু কাটবেন,,, আমি অনেক কষ্ট করে এনেছি,,,নাহলে নষ্ট হয়ে যাবে,,,,একটু যদি সময় হয় আপনার প্লিজ,,,,
- পেখমের এইরকম আবদারে আবির না বলতে পারে নি,,, তাই মুখে কিছু না বলে ঘরের দিকে গেল,,,তারপর পেখমের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললো,,," কেকটা কি আমি একা একা কাটবো"??
- আবিরের কথা শুনেই পেখম দ্রুত ঘরে আসে,,,তারপর আবিরের উদ্দেশ্যে বলে আপনার ফোনটা একটু দেবেন???
- কেন ফোন নিয়ে কি করবে??
- আসলে আমার ফোনটা কিচেনে,,,মামনি বলেছিল আপনার কেক কাটার ছবি পাঠাতে,,,
- ও ঠিক আছে নাও,,,তারপর আবিরের কেক কাটার কয়েকটা ছবি ক্লিক করে পেখম,,,, ফোনটা আবিরের কাছে দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে নিলে আবির জিজ্ঞাসা করে ,,,"কোথায় যাচ্ছো??
- পাশের ঘরে,,,
- চাইলে এখানে শুয়ে পড়তে পারো,,,,
- সরি ,আমি চাইনা আমার জন্য আর কোনো অসুবিধা হোক আপনার,,,, এমনিতেই আমি বুঝতে পেরেছি এইভাবে এসে আপনাকে সারপ্রাইস দেওয়া আপনার সেটা ভালো লাগেনি,,,বরং বিরক্তির কারণ হয়েছি,,,সরি আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি আপনার মনে আমার জন্য কোনো ,,,আর বলতে পারে না কান্নার জন্যে,,, তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে আসে ও,,তারপর দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে,,,,হঠাৎ কি মনে করে ওয়াশরুমে চলে যায় পেখম তারপর মাথার উপরে শাওয়ার টা ছেড়ে তার তলায় বসে পড়ে,,, কিছু সময় পরে চোখের জল শাওয়ারের জলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়,,,,,
- এদিকে আবির নিজেও কষ্ট পাচ্ছে,,, শেষ পর্যন্ত না পেরে উঠে চলে যায় পাশের ঘরে,,, দরজা বন্ধ দেখে নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খোলে,,,,তারপর যখন দেখে ঘরে কোথাও পেখম নেয় তখন পাগল প্রায় হয়ে পাখি পাখি বলে চিৎকার করে ডাকে,,, কিন্তু কোনো উত্তর আসে না,,, হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে জলের আওয়াজ কানে আসতেই আবির সেদিকে যায়,,,দরজা খোলা থাকার দরুন ওয়াশরুমের ভিতরে গিয়ে দেখে পাখি অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে,,, ও সাথে সাথেই পাঁজাকোলা করে নিজের ঘরে নিয়ে আসে,,,তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পেখমকে ডাকতে থাকে,,,,
- পাখি প্লিজ চোখ খোলো,,,আমার ভুল হয়ে গেছে,,, সরি সোনা পাখি,,,চোখ খোলো,,,চোখে মুখে বারি দিয়ে,, তারপর জলের ছিটা দিয়ে নানান কথা বলতে থাকে,,,হঠাৎ পাখিকে চোখ পিটপিট করতে দেখে আবির ওর মুখটা আজলা করে ধরে বলে,,,
- সরি,,,প্লিজ চোখ খোলো,,,আর কোনোদিন এমন হবে না পাখি,,, প্লিজ চোখ খোলো,,,পাখি ধিরে ধিরে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকাতেই আবির ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,,, আর তাই দেখে পেখম আবিরের বুকে মাথা রেখে জোড়ে জোড়ে কেঁদে দেয়,,,কাঁদার এমন এক পর্যায়ে এসে তখন শুধু হেঁচকি তুলছে,,,আবির তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস জল এনে পাখিকে খাইয়ে দেয়,,,,তারপর বলে,,,
- আমি কিন্তু এইসব বাচ্চামো একদম পছন্দ করি না পাখি,,,কি হত এখন যদি আমি ওইঘরে না যেতাম,,, মানে আমি কিছু বললেই রাগ দেখাতে হবে???
- আমি তো রাগ দেখায়নি,,,
- তবে ওইভাবে কেন ছিলে??? কেন ভিজে জ্ঞান হারিয়ে ছিলে??
- নিজেকে শাস্তি দিতে,,,( মাথা নিচু করে)
- নিজেকে কেন শাস্তি দিতে চাও???বলো কেন??? তুমি জানো না তোমার একটু কিছু হলে আমার উপর দিয়ে কি যায়??? জানো না ??
- আমার কিছু হলে তাতে আপনার কি??
- তুমি সত্যিই নির্বোধ পাখি,,, নাহলে এতদিনে এই প্রশ্নের উত্তরটা ঠিক জানতে,,,
- কখনো কখনো উত্তর জানা থাকলেও সেটা প্রিয় মানুষটির মুখে শুনতে ভালো লাগে,,,
- যদি বলি ভালোবাসি তোমাকে,, বিশ্বাস করবে ?? নাকি সেই দিনের বলা মুখের কথাকে বিশ্বাস করে আজকের বলা কথাগুলোকে অবিশ্বাস করবে????
- ওই একভুল আপনার এই রাত-প্রেয়সী আর করছে না,,, বলেই আবিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করে দেয়,,,তারপর বলে আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন,, আমি আপনাকে অবিশ্বাস করেছি,,সন্দেহ করেছি,,আপনার ভালোবাসাকে অপমান করেছি,,,কিন্তু বিশ্বাস করুন আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি,,,,ভীষণ ভালোবাসি,,,আপনাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হয় আমার,,, দম বন্ধ হয়ে আসে,,,কেন আপনি এত গুলো দিন এখানে থাকলেন আমাকে ছেড়ে??? জানেন আমার কত কষ্ট হয়েছে???
- কষ্ট কি শুধুমাত্র তুমি পেয়েছো??আমি পাইনি?? তোমার থেকে দ্বিগুণ কষ্টে আমি ছিলাম পাখি,,,,খুব ভালোবাসি তোমায় আমি,,, আর কোনো দিন কষ্ট দেবো না তোমাকে,,, সরি,,(বুকের থেকে পাখিকে সরিয়ে আজলা করে মুখটা ধরে কপালে অধর ছোঁয়ালো আবির,,,তারপর চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,,)
- জানোনা তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয় না,,, যাও গিয়ে চেঞ্জ করে এসো,,,দেখো বিছানা ভিজে গেছে,,,,
- সরি আমি এক্ষুনি যাচ্ছি,,,( বলেই পাখি উঠে চলে যেতে নিলেই আবির ওর হাত ধরে বলে)
- এই দাঁড়াও দাঁড়াও ,,,তুমি এই শাড়িটা কোথায় পেলে??? তারপর কিছু একটা চিন্তা করে বললো ,,,তুমি আমার ডাইরি পড়েছো কেন পাখি??? জানো না কারোর অনুমতি না নিয়ে তার ব্যক্তিগত জিনিস স্পর্শ করতে নেই???(গম্ভীর হয়ে)
- হঠাৎ আবিরের এইরুপ কন্ঠস্বরে পেখম ভয় পেয়ে যায়,,, তারপর মাথা নিচু করে ফেলে,,,তাই দেখে আবির বলে ওঠে" কোনো ব্যাপার না ,,,তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী,, মানে আমার যা কিছু আছে তার উপরে আমার ঠিক যতটা অধিকার আছে,, ঠিক ততটাই তোমারো আছে,,,,বলেই পেখম কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,,,,আবিরের স্পর্শ পেয়ে পেখম কেঁপে ওঠে,,, তারপর খুব ধিরে বললো,,,
- আমার শরীর পুরো ভিজে,,,আপনি ভিজে যাবেন,,, আমাকে একটু সময় দিন,, আমি এই শাড়িটা পাল্টে আসছি,,,
- পাখি এই শাড়িটা আমি তোমাকে কখন পড়তে দিতাম বলোতো,,,যখন আমি তোমাকে নিজের ব্যক্তিগত ভাবে কাছে পেতাম,,,আর আজ তুমি কিন্তু এই শাড়িটা নিজে থেকে পড়েছো,,,(শান্ত স্বরে)
- আবিরের কথায় পেখম লজ্জায় লাল হয়ে যায়,,,হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় ও কোনো মতে নিজেকে সামলে বলে আমাকে যেতে দিন,,,( কিন্তু আবির ছাড়ে না বরং আরো বেশি করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,, তারপর ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,,,)
- আমার জন্মদিনের উপহার কোথায় পাখি?? আমি আমার এই জন্মদিনে সবথেকে সেরা উপহারটা চাইছি তোমার কাছে,,, (শাড়ির আঁচলের ফাঁক দিয়ে পাখির মেদহীন পেটে স্লাইড করতে থাকে,,,)
- পাখি কিছু না বলে শাড়ির আঁচল খামছে ধরে ,,,চোখ মুখ বন্ধ করে থাকে,,,,ওর এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে লজ্জায় মরে যাবে,,,মুখ কান গরম হয়ে যাচ্ছে আবিরের প্রত্যেকটা নিশ্বাসের বারিতে,,,,পেখমের এইরূপ অবস্থা দেখে আবির ঠোঁট কামড়ে হাসে,,,তারপর খুবই শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,,,,
- " সে কি দেবে অনুমতি তাকে নিজের করে কাছে পাওয়ার?? সে কি দেবে অনুমতি তাকে এই আবির চৌধুরীর অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে নেওয়ার??? সে কি দেবে অনুমতি তাকে নিজের ভালোবাসার আদরে চাদরে মুড়িয়ে দেওয়ার??? সে কি দেবে অনুমতি তার ওই অধরযুগল যার দ্বারা আবৃত তাকে ঘেটে দেওয়ার??সে কি দেবে অনুমতি আমাদের শরীরে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেওয়ার?? সে কি দেবে অনুমতি তার ওই মুখশ্রীতে লজ্জার আবরণ আনার"???
- এতক্ষণ আবিরের কথা গুলো শ্রবণ হতেই পেখমের বলতে ইচ্ছে করছে এই মাটি ফাঁক হয়ে যাক আর ও টুকুস করে মাটির মধ্যে ঢুকে যাক লজ্জা নিবারণ করার জন্য,,,আবার পরমুহূর্তেই আবিরের জন্য খুব গর্ববোধ হতে লাগলো,,,ওর মনে আবিরের জায়গাটা আরো বেশি সম্মানের লাগলো,,,মানুষ টা ওর কাছ থেকে এতদিনে জোড় করে হোক বা অন্য ভাবেই হোক ঠিক স্বামীর অধিকার আদায় করে নিতে পারতো,,,কিন্তু না তিনি তা করেননি,, বরং আজ এতগুলো দিন পর যখন দুজন দুজনকে ভালোবাসে জানে এবং সেটা জেনেও উনি এখন অনুমতি চাইছেন,,, কি করে ফিরিয়ে দেবে ও এমন মানুষকে,,, পেখম মুখে কিছু না বলে আবিরের দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরে,,,,বুকে মুখ গুজে দেয় লজ্জায়,,,
- আবির ওর উত্তর পেয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,,,," মৌনতা সম্মতির লক্ষণ"। তারপর পাখিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার শুইয়ে দেয়,,আস্তে আস্তে সব অলংকার খুলে দেয় পাখির,, তার শরীরে লেপ্টে থাকা ভিজে শাড়িটা খুলতেই পেখম ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,, আবির পাশের বেডল্যাম্পটা বন্ধ করে দেয়,,,শুরু হয় ভালোবাসার নতুন অধ্যায়,,,,আর সেই ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে আনন্দে ধরণীতে নৃত্য করে প্রকৃতির বারিধারা,,,,,
চলবে,,,,,,
0 Comments:
Post a Comment