গল্প জোড়_করে_বিয়ে পর্ব ৫

 জোড় করে বিয়ে

পর্ব:৫

#আবির হাসান নিলয়


জান্নাতের কথা শুনে যতোটা খারাপ লাগছিলো

তার থেকেও দ্বিগুণ রাগ হচ্ছিলো আব্বু আম্মুর

প্রতি।বাসায় এসে ইচ্ছা মতো সব কিছু ভাঙতে

শুরু করে দিলাম।এটা অবশ্য নতুন না।এর আগেও

অনেকবার ভেঙেছি। আজ একটু বেশি রাগ হচ্ছিলো।

কারণ তারা আমার সব কথা রাখে কিন্তু আজ কেন

তারা আমার একটা চাওয়া পূরণ করতে পারলো

না।এসব ভাবতে ভাবতে যখনি দেয়ালে থাকা

আমার একটা ছবিতে বারি দিছি অমনি ছবিতে

থাকা কাচ এসে হাত কেটে দিলো।যার জন্য আর

কিছু ভাঙতে পারা বয়ে উঠলো না।নিজেকে

অনেক দুর্বল লাগছিলো।


কাটা হাত নিয়ে কখন ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানিনা।

যখন ঘুম ভাঙলো।দেখলাম আব্বু আম্মু আমার

পাশে বসে আছে।আর হাতে ব্যান্ডেজ করা।

যখনি উঠতে যাবো তখন আব্বু বলল...

আব্বুঃকি হয়েছে তোমার।এমন পাগলামো করছো কেন

আমিঃ........(নিশ্চুপ)

আম্মুঃকি হলো বল।কেনো করছিস এমন।

আমিঃআব্বু আমি তোমাদের কাছে কি চেয়েছিলাম।

আব্বুঃকি চেয়েছো।আর তুমি চেয়েছো আমরা

দেয়নি। এমন কি জিনিশ আছে??

আমিঃজান্নাত.....!!!

আম্মুঃহুম জান্নাতের কি হয়েছে।

আমিঃজান্নাতের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

আম্মুঃকিহহ।তারমানে তুই জান্নাতের বিয়ের

কথা শুনে এসব ভাংচুর শুরু করেছিস??

আমিঃহ্যা।তাছাড়া কি করবো।

আব্বুঃনিলয়ের মা আমি শিওর তোমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে।

আমিঃমানে।কি বলতে চাইছো তুমি??😡😡

আম্মুঃঠিকি তো বলছে।তুই একটা পাগল।

আমিঃআম্মুউউউ...!!

আম্মুঃচুপ।তুই জানিস জান্নাতের কার সাথে বিয়ে

ঠিক হয়েছে..???

আমিঃনা।

আম্মুঃআরে গাধা।তোর সাথেই জান্নাতের বিয়ে

ঠিক হয়েছে।সেটাও সামনের মাসের ৩তারিখে।

আমিঃকিন্তু জান্নাত যে বলল..

আব্বুঃতুমি নিজেই তো বারণ করছিলা।যেনো

আমরা কেউ জান্নাতকে না জানাই।

আব্বু-আম্মুর কথা শুনে মন চাইছে এখনি লুঙী

পরে ড্যান্স শুরু করি।কিন্তু আব্বু আম্মু পাশে থাকায়

কিছু করতে পাড়লাম না।আব্বু আম্মুকে জড়িয়ে

ধরে হাজার বার চুমু খেলাম।সাথে কিছু পাম মারলাম।😂😂


আম্মু আমাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো।আমিও

ভাবতে লাগলাম।বিয়ের পর জান্নাতকে কিভাবে

জ্বালাতন করা যায়।আমাকে কষ্ট দেয়া।তুমি

হারে হারে টের পাইবা সোনা বউ।দেখতে দেখতে

আমাদের বিয়ের দিনটাও কাছে চলে এলো।

কাল আমাদের বিয়ে।সাথে জান্নাতকে জ্বালাতন

করার প্রথম দিন শুরু হবে।আমাকে কি বলেছিলে

আমাকে এ জীবনেও বিয়া করবেনা।এবার

বুঝবা সোনা আমি কি করতে পারি।রুমেই

ভিতরে আনমনে এসব ভাবে চলেছি।।

পুড়ো বাসা হৈচৈ তে মেতে আছে।রাফিও এখন

অনেক সুস্থ।আর সবার আনন্দ করাটাও স্বাভাবিক

দেশের নামকরা বিজনেস ম্যান AR কোম্পানির

এমডি স্যারের ছেলের বিয়ে বলে কথা।


রাফি এসে ডাকাতে ওর সাথে ছাদে গেলাম।দেখলাম

সব হারামি বন্ধুরা বসে আছে।

মেহেদিঃকিরে সালা ভাবিকে তো পেয়েই গেলি।

আমিঃকেনো??আমার কি পাওয়ার কথা ছিলো না।

জয়ঃতুই চাওয়ার পরেও পাবিনা।এমন জিনিশ

আমার মনে হয় পৃথিবীতে তৈরি হয়নি।

সবাইঃ😀😀😀

তারপর ওদের সাথে অনেক্ষণ আড্ডা দেয়ার পরে

রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম।পরেরদিন আম্মুর ডাকে

ঘুম ভেঙে গেলো।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম।

নিলাঃআরে নিলয় বাবু যে।কি খবর।

আমিঃআমার তো বিন্দাস। তোর কি খবর।

নিলাঃএইতো চলছে।

আমিঃদেশে আসলি কবে

নিলাঃরাতের ফ্লাইটে।তা তোর বউয়ের নাম কিরে?

আমিঃজান্নাতুল মাওয়া।

নিলাঃখুব সুন্দর নাম।


নিলার সাথে কথা বলে রুমে চলে আসলাম।আর

হ্যা আপনাদের তো বলায় হয়নি নিলা কে??

নিলা হলো আমার আম্মুর বোনের বড় মেয়ে।

মানে আমার খালতো বোন।নিলা আর ওর পরিবার

কানাডা থাকে।ওর ছোট বোনের নাম রোজি।

থাক আর জানতে হবে না।


গোসল করার পর সবাই মিলে আমাকে সাহায্য

করছে।কোনটা পড়বো কোনটা পড়বো না।সবাই

মিলে আমাকে রেডি করার পরে রোজি বলল..

রোজিঃভাইয়া তোমাকে কিন্তু হেব্বি লাগছে।

আমিঃতাই নাকি।তোর ভাবি কি আমাকে দেখে

ক্রাশ খাইবো...???

নিলাঃকি বলিস।আমার এতো সুন্দর হ্যান্ডসাম

ভাইকে দেখে ক্রাশ খাবেনা সেটা কি হয়।

আমিঃথাক আর পাম দিতে হবে না।

রাফিঃনা সত্যি ভাইয়া।তোমাকে একদম নায়কদের

মতো লাগছে।মন চাইছে একটা সেলফি তুলি।

সবাইঃ😂😂😂


সব নিয়ম কানুন মেনে কনের অর্থাৎ আমার শ্বশুর

বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।যথাসময়ে জান্নাতদের

বাসায় এসে পৌছালাম।আমাদের গাড়ি আসা দেখে

বাচ্চা ছেলে মেয়েরা হৈ চৈ করতে লাগলো।

তারপর কিছু মানুষ আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে

বাসার ভিতরে নিয়ে গেলো।কেনো জানিনা আমার

মনটা অনেক ক্লান্ত হয়ে গেলো।সবাই হয়তো

বিয়ের দিনে অনেক হ্যাপি থাকে।আমিও ছিলাম

কিন্তু কেনো জানি এখন ভালো লাগছে না।

আমিঃজয় দোস্ত আমার কেমন জানি লাগছে?

জয়ঃমানে।কেমন লাগছে?

আমিঃভালো লাগছে না।

জয়ঃসালা বুঝতে পাড়ছি এখন ভাবির সাথে কথা

বলবি।তাই তো...

আমিঃআরে তেমন কিছু না।

জয়ঃথাক আর বলা লাগবে না।আমি দেখছি কি

করা যায়।


তারপর জয় আর মেহদি চলে গেলো।৫মিনিট পরে

আমাকে ওরা দু'জন মিলে একটা রুমের ভিতরে

দিয়ে গেলো আর বললঃআমরা বাইরে অপেক্ষা

করছি।কথা বলে আয়।

আমি আর কিছু না বলেই রুমের ভিতরে গেলাম।

দেখলাম জান্নাত বসে আছে।এখন আর কেন

জানিনা খারাপ লাগছেনা।হয়তো জান্নাতকে

দেখার জন্য এই মনটা ব্যাকুল হয়ে ছিলো।

কত সুন্দর চুপচাপ বসে আছে।হয়তো আমাকে

এখনো দেখেনি।দেখলে এতোক্ষন মনে হয়

থাপ্পড় খেতে হতো।

আমিঃসো মিসেস নিলয় কেমন আছেন।

কথাটি বলার সাথে সাথে জান্নাত আমার দিকে

তাকালো।ওর তাকানোর মাঝে অনেকটা ক্ষোভ

বিদ্যমান ছিলো।হয়তো ভাবছে আমি এখানে কেন।

জান্নাতঃআপনি এখানে???

আমিঃতাহলে কে থাকবে...

জান্নাতঃমানে...(অবাক হয়ে)

আমিঃমানে তোমার আর আমার বিয়েই তো হচ্ছে

জান্নাতঃকি আজে বাজে কথা বলছেন।বেরিয়ে যান রুম থেকে

আমিঃকেনো বিশ্বাস হচ্ছে না।বিশ্বাস না হলে তুমি

তোমার আম্মুকে এখন জিজ্ঞাস করো।


কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জান্নাত কান্না করতে

লাগলো।এক পর্যায় রুম থেকে কান্না করতে

করতে বেড়িয়ে আসতে চাইলো।কিন্তু সেটাতে

আর সফল হয়ে ওঠা হলো না।

আমিঃকোথায় যাচ্ছো...??

জান্নাতঃআমি এই বিয়ে করবো না।তোর মতো

ছিটার লম্পটকে আমি জীবনেও বিয়ে করবো না।

আমিঃতাহলে এখন কি করবে শুনি?/

জান্নাতঃআব্বুকে গিয়ে বলবো আমি এই বিয়ে

করতে পারবো না।।

আমিঃসব চাইলেই কি হয়।তোমার আব্বুর সম্মানের

কথা একবারো ভাববে না।।

(আমি জানি তুমি এমন টাই করতে তাই তো

এরকম গেম খেলতে হলো।কারণ তোমার যে জেদ

যার কাছে সবাই কুপোকাত। কিন্তু সোনা বউ এখন

যে তোমার আর কোনো জেদকে সফল করতে

পারবে না।😎😎)

নিজের মনে মনেই কথাগুলো ভাবছি। এমন সময়

জান্নাত আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিলো।

যা আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছিলো।তাই 

বন্ধুদের সাথে করে সেখান থেকে চলে আসলাম।


কিছুক্ষণ পর কিছু ছেলে ও মেয়েরা জান্নাতকে

নিয়ে আসলো।কিন্তু এখন জান্নাতকে একদম

বাজে দেখাচ্ছে।চোখের কাজল লেপ্টে গেছে।আর

চোখ দুটো লালা হয়ে রয়েছে।মনে হচ্ছে আমাকে

দেখার পর থেকে শুধু কান্নাই করেছে।কিন্তু পাগলিটাকে

কি করে যে বোঝাবো খুব ভালোবাসি তোমাকে।জান্নাতকে এভাবে দেখে নিজের মধ্যেই খারাপ

লাগা বিরাজ করতে লাগলো।কোনো ভুল করছি নাতো।

নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছি।কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছিনা।

যথাসময় আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো।

বাসরঘর.....??? 

চলবে.........

গল্প জোড়_করে_বিয়ে পর্ব ৪

 জোড় করে বিয়ে

পর্ব:৪

#আবির হাসান নিলয়


রাতে খাবার টেবিলে বসে আছি এমন সময় আব্বু বলল...

আব্বুঃনিলয় তোমার আম্মু যা বলছে।সেগুলো কি সত্যি

আমিঃকি বলছে আম্মু তোমাকে

আব্বুঃতোমার বিয়ের কথা

আমিঃজ্বি আব্বু।কিন্তু তোমার কাছে একটা অনুরোধ

আছে।প্লিজ বলো রাখবে।

আব্বুঃহুম বলো। 

আমিঃআমিই যে জান্নাতকে বিয়ে করছি এটা

ওকে বলবেনা।সেটার জন্য তুমি যা ইচ্ছা করো।

আব্বুঃকিন্তু নিলয়....

আমিঃআব্বু আমি কোনো কিন্তু শুনতে চাই না।

আর আম্মু তুমিতো কিছু বলো।

আম্মুঃঠিক আছে আমি আর তোর আব্বু মিলে

জান্নাতের বাবা মায়ের সাথে কথা বলবো।এখন

তুই জান্নাতের বাসার ঠিকানা বল।


তারপর জান্নাতের বাসার ঠিকানা দিয়ে এসে পড়াশোনা

করে ঘুমিয়ে গেলাম।পরেরদিন পরিক্ষার জন্য

যেতে একটু দেরি হয়ে যায়।হলে গিয়ে দেখলাম

জান্নাত সিটে বসে আছে।


আমিঃকি করো....

জান্নাতঃআপনার চোখ নেই।আমি করি

আমিঃআরে রাগ করছো কেন....জান্নাত একটা

কথা জিজ্ঞাস করি।

জান্নাতঃকিহহ??

আমিঃআমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। আর

আমি তোমাকে বিয়া করতে চাই।

জান্নাতঃআপনার কি কোনো কথা কানে যায় না।

আমি আপনাকে কতবার বলবো।আমি আপনাকে

ভালোবাসি না।আর আমার প্রাণ থাকতে আমি

কোনোদিন আপনাকে বিয়া করবোনা।

আমিঃকেন করবে না...(ওর মুখটা আমার দিকে ঘুরিয়ে)

জান্নাতঃঠাসস। তোর সাহস কি করে হয়।আমাকে

স্পর্শ করার।ছোটলোক জানোয়ার।


আমি বুঝতেই পারিনি জান্নাত এরকম কোনো

কাজ করবে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম

সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

রাফির কিছু বন্ধু যারা আমাকে চেনে তারা আমার

দিকে আসতে চাইলেও হাত দিয়ে বারণ করি

যেনো তারা না আসে।জান্নাতের চোখের দিকে তাকাতেই

বুকের ভিতরে ব্যথা অনুভব করলাম।মনে হচ্ছে

কেউ আমার হৃত্পিণ্ডতে আঘাত করছে।কারণ

জান্নাতের চোখ থেকে যখন তখন বৃষ্টি নামতে

পারে।


জান্নাতের এমন অবস্থা দেখে ওকে রাগান্বিত করার

জন্য প্রস্তুত হলাম।যদিও থাপ্পড়টার ব্যথা এখনো

করছে তারপরেও ভালোবাসার মানুষকে খুশী

করতে লাগলাম।

আমিঃআমি জানি তুমি এখন কান্না করবে...

জান্নাতঃ..😡😡(তাকিয়েও কিছু বলল না)

আমিঃজানি তো তুমি ছিছ কাঁদুনে...

জান্নাতঃকে বলছে তোকে?

আমিঃতোমার চোখ।

জান্নাতঃচোখ কি কথা বলতে পারি।মজা নিস

আমার সাথে।আর একবার যদি আমায় রাগাতে

আসিস তাহলে তোর খবর আছে।

আমিঃযেভাবে থাপ্পড় মারছো এরপরেও কিছু করবে।

জান্নাতঃসরি...

আমিঃকেনো গো বউ

জান্নাতঃতোকে আমি.....

কিছু করার আগেই স্যার এসে হাজির।যার জন্য

বেচে গেলাম।না হলে হয়তো আবার একটা থাপ্পড়

খেতে হতো।বউটাকে শান্তশিষ্ট লাগলেও ঠিক 

সেরকম না।যেভাবে থাপ্পড় দিছে আমার বাপের

জন্মেও মনে হয় এতো জোড়ে থাপ্পড় খাইনি।


সেদিনের মতো পরিক্ষা শেষ করে বাসায় চলে

আসলাম।ফ্রেস হয়ে আম্মকে ডাকলাম...

আম্মুঃকিরে মন খারাপ নাকি..

আমিঃনা আম্মু

আম্মুঃতাহলে কি কিছু বলবি

আমিঃহুম কিছু বলার ছিলো।

আম্মুঃতাহলে বল

আমিঃআম্মু তুমি তো জানো আমি।জান্নাতকে

কতোটুকু ভালোবাসি 

আম্মুঃহ্যা জানি তো।আমার পাগল ছেলেটা আমার

ছেলের বউকে অনেক অনেক ভালোবাসে।

আমিঃকিন্তু আম্মু জান্নাত আমাকে বুঝতেই চাই না

আম্মুঃকেনো বুঝতে চাই না সেটার কারণ জিজ্ঞাস

করেছিস কখনো জান্নাতকে।

আমিঃকি জিজ্ঞাস করবো।শুধু থাপ্পড় দেয়।

আম্মুঃ😀😀

আমিঃআম্মু তুমি হাসছো কেন?

আম্মুঃতো নয়তো কি করবো।তোর মতো ফাজিল

ছেলেকে থাপ্পড় মারা কি কম কথা।

আমিঃআম্মুউউউউ😡😡

আম্মুঃঠিক আছে।এখন বল আমাকে কি করতে হবে।

আমিঃকিছু টিপস দাও।


তারপর আম্মুর থেকে কিছু টিপস নিয়ে ঘুমিয়ে

গেলাম।পরেরদিন অর্থাৎ শেষ পরিক্ষা দিতে

কলেজে চলে আসলাম।পরিক্ষার হলে ডুকতেই দেখতে পেলাম জান্নাত আজ অনেক হাসিখুশী।

মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে হাজার বার ধন্যবাদ দিলাম।

কেননা আম্মুর থেকে কিছু টিপস কাজে লাগাতে

হবে।জান্নাতের কাছে যেতেই আমাকে অবাক

করে দিয়ে জান্নাত বলল.....

জান্নাতঃআপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে

আমিঃহুম বলো।

জান্নাতঃনা এখন না।পরিক্ষা শেষ হলে বলবো।

জান্নাতকে এতো হাসিখুশী দেখে আমারো কেনো

জানিনা অনেক ভালো লাগছিলো।তাই জান্নাতকে

বললাম ঠিক আছে।


পরিক্ষা শেষ করে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময়

জান্নাত এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।

আমিঃহুম বলো কি বলবে....(অনেকটা আগ্রহ 

প্রকাশ করে কথাটি জিজ্ঞাস করলাম।)

জান্নাতঃআমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

আমিঃকিহহ।তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো তাই না

জান্নাতঃআপনাকে মিথ্যা বলে আমার কি লাভ।

বরং আমার তো আরো ভালো লাগছে।আপনি

আমার পিছু নেয়া বাদ দিবেন।আমাকে আর

জ্বালাতে পারবেন না।আমার সাথে আর কথা বলবেন

না।এককথায় আমি এখন অনেক খুশী।


জান্নাতের কথা গুলো কেমন যেনো বুকের বা পাশে

এসে খুব জোড়ে জোড়ে আঘাত করছিলো।তাই

ওকে কথা থামাতে বলে আমি বাসায় চলে আসলাম।।।

চলবে.........

গল্প জোড়_করে_বিয়ে পর্ব ৩

 জোড় করে বিয়ে

পর্বঃ৩

#আবির হাসান নিলয়


পরিক্ষার রুমে ডুকতেই দেখতে পেলাম জান্নাত

সিটে বসে আছে।আর কি যেনো আনমনে ভেবে

চলেছে।প্রতিটা মানুষের কিছু ভালো লাগার

বিষয় থাকে।তার মধ্যে একটা হলো ভালোবাসার

মানুষটার দুষ্টু-মিষ্টি পাগলামি। এ জন্যই হয়তো

রবী ঠাকুর ভেবে বলেছেনঃআমরা সেটাই

মুগ্ধভাবে উপভোগ করি।যেটা আমাদের উপভোগ

করার বিষয়।সে যাই হোক আমিতো আর রবী

ঠাকুর না।যে তার কথার ব্যাখ্যা দিবো।


অনেকক্ষণ জান্নাতকে দেখার পরে সিটে গিয়ে

বসলাম।আমার বসা দেখে প্রথমে কিছুটা ভয়

পেয়েও তেমন কোনো রিয়াক্ট করলো না।

আমিঃকেমন আছো হবু বউ।

জান্নাত কিছু না বলে অগ্নিময় দৃষ্টি নিয়ে আমার

দিকে তাকালো।ওর চোখের ভাষাটা কিছুটা হলেও

আমি বুঝতে পারছিলাম।ওর চোখ দু'টো দেখে

বোঝা যাচ্ছে আমায় এখন চিবিয়ে খাবে।

আমিঃকি হলো কথা বলছো না কেন?

জান্নাতঃকি বলবো শুনি।আর আমায় বউ ডাকার

আপনি কে?আমাদের কি বিয়ে হয়েছে?

আমিঃকেনো বউ রাগ করছো কেন।এখন না

হয় কিছুদিন করে ঠিকি বিয়ে হবে।

জান্নাতঃঅসম্ভব।আমার জান থাকতে আপনাকে

আমি বিয়া করবো না।

আমিঃসেটা না হয় সময় বলে দিবে।

জান্নাতের সাথে কথা বলতে বলতে স্যার এসে

পরিক্ষার প্রশ্ন আর খাতা দিলো।


পরিক্ষা শেষ করে আমি জান্নাতের জন্য অপেক্ষা

করছি।কিছুক্ষণ পরেই জান্নাত রুম থেকে বের হলো।

আমিঃজান্নাত এদিকে চলো।

জান্নাতঃনা যাবোনা।আর আজ মারলে আমি

বাসায় গিয়ে আম্মুকে বলে দিবো।

জান্নাতের কথা শুনে আমি হাসবো নাকি কান্না

করবো ভেবে পাচ্ছি না।এতো বড় মেয়ে হয়েও

৩-৪বছরের মেয়েদের মতো কথাবার্তা।

আমিঃপ্লিজ তোমার সাথে একটা জরুরী কথা আছে।

জান্নাতঃনা আমি যাবোনা।আপনার জন্য কাল

আমি আম্মু থেকে বকা শুনছি।

আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম।ছাত্রছাত্রী সংখ্যা

তেমন কোনো নেই।এই সুযোগটাতেই মায়াবতী

গালে ছোট একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলাম।

চুমুটা দেয়ার পরে জান্নাত আমার কলার ধরে

কলেজের এক পাশে নিয়ে গেলো।


জান্নাতঃতুই আমাকে চুমু দিলি কেনো

ওরেম্মা এই মেয়ে এগুলো কি বলে।যে মেয়েকে কেউ

ধমক দিলে চুপ হয়ে যায়।সেই কিনা রেগে কথা

বলছে সেটাও আবার তুই করে।অবশ্য এরকম

ভাবে কথা বলাটাই স্বাভাবিক। কারণ অপরিচিত

কেউ এভাবে চুমু দিলে রাগ করাটাই সাজে।কিন্তু

হবু বউটাকে অনেক রুপবতী লাগছে।রাগ করলে

জান্নাতকে রাগলে এতোটা রুপবতী লাগে না দেখলে

হয়তো জীবনের অনেক বড় একটা জিনিশের

অপূর্ণতা রয়ে যেতো। জান্নাতকে দেখে মনটা 

চাইছে জরিয়ে ধরে একটু আদর করি। 

জান্নাতঃকি হলো হাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

আমিঃতাছাড়া কি করবো।

জান্নাতঃঐ হারামি, বাদর,কালো বিড়াল,হনুমান

তুই আমাকে চুমু দিলি কেন?সেটা বল।

আমিঃতুমি কি এগুলো আমাকে বলছো..

জান্নাতঃতো তুই ছাড়া এখানে কে বা আছে?

আমিঃছিঃ..এভাবে কি কেউ হবু বরকে বকা দেয়।

জান্নাতঃকে হবু বর।

আমিঃকেনো আমি।

জান্নাতঃআর একবার যদি বাজে কথা বলিস তাহলে

(গলা চেপে ধরে)তোকে মেরেই ফেলবো।😡

আমিঃতোমার লজ্জা করে না।এভাবে কাউকে মারতে

জান্নাতঃসালা লুচু তোর লজ্জা লাগেনা।আমাকে চুমু খাস।

আমিঃআমি তো আমার....(থামিয়ে দিয়ে)

জান্নাতঃতোর পায়ে পরি প্লিজ আর বউ বলিস না।

আমিঃঠিক আছে। আজ আর বলবো না।


তারপর আর কোনো।কথা না বলে জান্নাত চলে গেলো।

আমিও বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে দেখি

আম্মু বসে আছে।আমাকে দেখে...

আম্মুঃএকটা সত্যি কথা বলবি?

আমিঃআমি কি মিথ্যা কথা বলছি কোনো?

ডাহা মিথ্যা কথা।কারণ আমি সত্য বলা থেকে

মিথ্যা কথা বেশি বলি।

আম্মুঃহ্যা আইছে আমার সত্যবাদী ছেলে।এখন

তুই আমাকে সত্যিকরে বল ঐ মেয়েটা কে?

আমিঃকোন মেয়ে আম্মু?(অবাক হয়ে)

আম্মুঃগতকাল যে হাসপিতালে নিয়ে এসেছিলি।

আমিঃআসলে আম্মু আমি ওকে.....

আম্মুঃহুম বল...তুই ওকে

আমিঃআমি ওকে ভালোবাসি আর বিয়ে করতে চাই।

আম্মুঃ আলহামদুলিল্লাহ। ছেলের আমার পছন্দ আছে।

তা কিভাবে কি হলো আমাকে প্রথম থেকে বল.।


তারপর আম্মুকে প্রথম থেকে শুরু করে সব বললাম।

আর আম্মুকে এটাও বললাম যে আমি জান্নাতকে

খুব তাড়াতাড়ি বিয়া করবো।কিন্তু জান্নাত যেনো

এই বিষয়ে না জানতে পারে।


পরেরদিন........

পরিক্ষার হলে বসে আছি। আর বোরিং হচ্ছি কারণ

জান্নাত এখনো আসেনি।তাই চোখ বন্ধ করে নিচের

দিকে তাকিয়ে আছি।কিন্তু হঠাৎ পাশে কাউকে

অনুভব করলাম।তাকিয়ে দেখলাম জান্নাত বসে

আছে।কিন্তু আজ একটু মন খারাপ লাগছে।

যে কেউ আজ জান্নাতকে দেখে বলে দিবে আজ

ওর মন খারাপ।

আমিঃজান্নাত তোমার কি মন খারাপ???

জান্নাতঃ...(নিশ্চুপ)

আমিঃকি হলো বলো....

জান্নাতঃআজ জেরি এক্সিডেন্ট করছে?

আমিঃজেরি কে??

জান্নাতঃআমাদের বাসার বিড়াল...

আমিঃএহহহ..বিড়াল।হাহাহাহা😂😂

(কেউ বিড়ালের জন্য নাকি মন খারাপ করে।

সেটাও আবার পরিক্ষার হলে।জান্নাত যেভাবে

মন খারাপ করে আছে।ওকে দেখে মনে হবে ওর

কোনো আত্মীয় ইন্তেকাল করেছে।কিন্তু পাগলিটা

এমন ভাবে কথা বলছে যেনো ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড)


জান্নাতঃকি হলো হাসতেছেন কেনো?

আমিঃনা তেমন কিছু না।এমনি।

জান্নাতঃওহ

আমিঃজ্বি।

সেদিনের মতো পরিক্ষা শেষ করে বাইরে বের হলাম।

কিছুক্ষণ পর জান্নাত বের হলো।ওকে ডাকাতেই

মন মরা হয়ে কাছে আসলো।

আমিঃজান্নাত একটা কথা বলি?

জান্নাতঃবলেন...

আমিঃআমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তোমাকে

বিয়ে করতে চাই।

জান্নাতঃআমি আপনাকে ভালোবাসি না।আর আপনাকে

তো আমি জীবনেও বিয়া করবো না।ঢেঙা ষাঁড় কোথাকার।

আমিঃকি বললে তুমি।আবার বলো.....

জান্নাতঃগাধা হনুমান।

বলেই হোসাইন বোল্টের মতো দৌড়ে চলে গেলো।


আমারো ভালো লাগে জান্নতের এমন পাগলামি।

এরই মাঝে ৭টা পরিক্ষা শেষ। আর মাত্র ২টা আছে।

না জানি পাগলিটা আমার ভালোবাসা বুঝবে কিনা।

আর ইদানীং আমিও কেন জানি না জান্নাতের প্রতি

অনেকটা দু্র্বল হয়ে পড়েছি।ওকে না দেখলে মনে

হয় পৃথিবীটা ধমকে গেছে।মনে হয় বন্ধুকের বুলেটগুলো

আমার হৃত্পিণ্ডকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিবে।

চলবে........

গল্প জোড়_করে_বিয়ে পর্ব ২

 জোড় করে বিয়ে

পর্বঃ২

#আবির হাসান নিলয়


পরিক্ষার প্রায় ২ঘন্টা হয়ে এসেছে।কিন্তু এর মাঝে

মেয়েটি একবারো কিছু জিজ্ঞাস বা শুনে নেই

নি।হয়তো ভালো ছাত্রী। রাফির কিছু বন্ধু

আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

কারণ তারা সবাই আমাকে চেনে।


লাস্ট প্রশ্নটা লিখতে যাবো কিন্তু হঠাৎ করে

মেয়েটির দিকে চোখ পড়লো।লেখা বাদ দিয়ে

মন খারাপ করে বসে আছে।আমি আবার কি

করলাম। আমি তো কিছু করিনি তাহলে

পরিক্ষায় লেখা বাদ দিয়ে বসে থাকার কারন কি।

কিছু বলতে যাবো তার আগেই কলমের হেট

কামরাতে লাগলো।মেয়েটির এমন অবস্থা দেখে

না হেসে পারলাম না।ইন্টার ২য় বর্ষের মেয়ে

হয়েও বাচ্চাদের মতো করছে।এতোটাই মায়াবী

লাগছে মন চাইছে পরিক্ষা রেখে দিয়ে মেয়েটির

দিকে তাকিয়ে থাকি।মেয়েটির মায়াবী রুপ

দেখে যখন আমি ভাবনার জগতে চলে গেছি।

ঠিক তখন মেয়েটির কথা শুনে ভাবনার

জগৎ থেকে বের হলাম।


মেয়েঃহাসছেন কেন?

আমিঃতেমন কিছুই না।মন চাইলো তাই হাসলাম।

মেয়েঃ......(কিছু না বলে মাথা নিচু করলো)

আমিঃকত মার্ক কমপ্লিট করছো।

মেয়েঃ৬৫...

আমিঃতাহলে বসে আছো কেন।লেখো তাড়াতাড়ি

মেয়েঃআর মনে পরছেনা।আপনি যদি।ধমক

না দিতেন তাহলে আরো করতে পারতাম।


আল্লাহ গো এই মেয়ে কি বলে।আমার জন্য নাকি

সে লিখতে পারছে না।তারপর হুট করে মনে

পরে গেলো মেয়েটিকে বলেছিলাম ৯৫ মার্ক 

পাইয়ে দিবো।এতো কিছু না ভেবে মেয়েটির

খাতা নিয়ে নিলাম।

মেয়েঃআরে আপনি আমার খাতা নিচ্ছেন কেন?

আমিঃলিখে দিবো তাই।

মেয়েঃজীবনেও না।আমি আপনাকে আমার খাতা

দিবো না দিচ্ছি না।

স্যারঃকি হচ্ছে এসব চুপ করো।

আমিঃসরি স্যার।তুমি যদি এখন খাতায় লিখতে

না দাও তাহলে আবার ধমক দিবো।

আমার কথা শুনে মেয়েটি চুপ হয়ে গেলো।

আমিঃআমার আর ১০মার্ক আছে।এইটা তুমি

কমপ্লিট করে দাও।আমি তোমাকে সব বলে

দিচ্ছি কেমন ভাবে কি করতে হবে।ঠিক আছে?

মেয়েটিঃজ্বি(মাথা নিচু করে)


আমি আর কথা না বাড়িয়ে লেখা শুরু করলাম।

লিখতে লিখতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে।আর

আপনারা ভাবছেন আমি এতো লিখছি

কিভাবে।সেটার কারণ হলো এর আগেও এই

পরিক্ষা দিছি সাথে আমি ইন্টার থেকে A+পেয়েছি।

যদিও আমি একটু ফাজিল কিন্তু পড়াশোনা করি।

পরিক্ষা প্রায় শেষ।ওয়ার্নিং বেলটাও পরে গেছে।

হঠাৎ মেয়েটি আমাকে বলল....

মেয়েঃআর কত লিখবেন। সময় প্রায় শেষ আমার

খাতা আমাকে দিয়ে দিন।

আমি আর কোনো কথা না বলে তাকে খাতা

দিয়ে দিলাম।কারণ আমার ৩০ মার্ক করা শেষ।

যেটা ওয়াদা দিছিলাম সেটা রেখেছি।

মেয়েঃহনুমান(আস্তে করে বলল)

আমি;কিছু বললে আমাকে।

মেয়েঃকই।না তো।

আমিঃওহ ঠিক আছে।


পরিক্ষা শেষ। বাইরে এসে ইকবাল ভাই(স্যার)এর সাথে কথা বলছি এমন সময়

মেয়েটি আমার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো।

আমি আর ইকবাল ভাইয়ের সাথে কথা না

বলে মেয়েটির পিছু নিলাম।মেয়েটি যে একটু

ডেকে কথা বলব সেটাও হয়ে ওঠেনি। কারণ

মেয়েটির নাম এখনো জানিনা।

আমিঃএই মেয়ে দাঁড়াও।

মেয়েঃ........(পিছু অবধি তাকালো না)

আমিঃকাছে গিয়ে..এই যে মিস কানা। এতোক্ষন

ধরে ডাকছি কথা কানে যায় না।

মেয়েঃআমি আপনার কথা শুনবো কেন?

আমিঃআমি ডাকছি তাই

মেয়েঃকে আপনি

আমিঃতোমার হবু স্বামী

মেয়েঃকিহহহ😡😡(রেগে গিয়ে)

আমিঃআমার সাথে চলো।

মেয়েঃনা আপনার সাথে আমি কোথাও যাবোনা।

আমিঃবলছি না চলো।

মেয়েঃবললাম তো যাবো না।

আমিঃঠাসস আর একবার না বললে আবার দিবো।

থাপ্পড় খাওয়ার পরে মেয়েটি গালে হাত দিয়ে

মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে।সাথে কিছু

ছেলে মেয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।

যেটা দেখে আমার খুব বিরক্তি লাগছিলো।তাই

সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললামঃ

আমিঃযদি কারো থাপ্পড় খাওয়ার ইচ্ছা না থাকে

তাহলে সবাই এখান থেকে চলে যা।না হলে

সবাইকে পিটাবো।


আমার কথা শুনে সবাই চলে যেতে লাগলো।

মেয়েটির দিকে তাকাতেই মনের ভিতরে চিন

চিন ব্যথা অনুভব করলাম।কারণ মেয়েটি কান্না

করছে। তার থেকেও বড় কথা মেয়েটির গাল লাল হয়ে গেছে।যা দেখতে খুব খারাপ লাগছিলো।

মেয়েটির চশমাটা খুলে চোখের জল মুছে দিয়ে

বললামঃ

আমিঃআমি আসলে মারতে চাইনি।তুমি যদি

আমার কথাটি শুনতে তাহলে মারতাম না।

মেয়েটিঃ(নিশ্চুপ)

আমিঃএখন চলো.....


তারপর মেয়েটিকে নিয়ে গাড়িতে উঠালাম।

আমিঃআচ্ছা তোমার নাম কি?

মেয়েঃজান্নাতুল মাওয়া।ডাক নাম জান্নাত।

আমিঃবাহ সুন্দর নাম।তোমার বাসা কোথায়।

জান্নাতঃকলেজের উত্তর পাশে যে একটা ফ্লাট আছে সেটা আমাদের।

আমিঃতোমরা একাই থাকো?

মেয়েঃনা।নিচ তালায় ভাড়াটে থাকে।

আমিঃতোমার বাসায় কে কে আছে?

জান্নাতঃআব্বু,আম্মু, ছোট বোন আর আমি।

আমিঃওয়াও আমার তাহলে একটা শালিকাও

আছে।ভালোই হবে(রাগানোর জন্য বললাম)

মেয়েঃ..(আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে

কিছু না বলেই মাথা নিচু করে নিলো)

তাই আমিও আর কিছু বললাম না।আবার যদি

মন খারাপ করে।সেই ভয়ে।


নানু বাসায় আসার পরে....

আমিঃম্যাডাম নামুন।এসে গেছি।

জান্নাত কিছু না বলে নেমে গেলো।হয়তো ভাবছে

যদি কিছু জিজ্ঞাস করে আবার যদি মারি সেই

ভয় পেয়ে।ওকে দেখতে কিছুটা ভীতু দেখাচ্ছে।

কিন্তু ওর এই মায়াবী রুপ সাথে মুখে ভয়ের ছায়া যা আমাকে বার বার ওর মায়ায় জড়িয়ে

যেতে সাহায্য করছে।জানিনা ওর মধ্যে কি প্রভু

কি এমন লুকিয়ে দিছে।কিন্তু আমি খুঁজে পাচ্ছি

না।জান্নাত আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই বললাম...

আমিঃচলো আমার সাথে।

তারপর জান্নাতকে সাথে নিয়ে নানু বাড়ীর ভিতরে

ডুকলাম।আমাকে দেখেই রোহান(রাফির ছোট ভাই।ক্লাস থ্রি'তে পড়ে) বলল...

রোহানঃভাইয়া এই আপুটা কে?

আমিঃতোর জানতে হবে না। চল আমার সাথে।

রোহানঃকোথায় ভাইয়া...

আমিঃরাফির রুমে।

রোহানঃভাইয়াকে তো হাসপিতালে নেয়া হয়েছে।

আমিঃকেনো...

রোহানঃআবার অসুস্থ হয়েছিলো।তাই ডক্টর আঙ্কেল

হাসপিতালে নিয়ে যেতে বলছিলো।কিন্তু কোন

হাসপিতালে নেয়ে হয়েছে আমি যানিনা।

আমিঃঠিক আছে তুই থাক আমরা গেলাম।

বলে জান্নাতকে সাথে নিয়ে গাড়িতে উঠালাম।

আম্মুকে ফোন দিয়ে কোন হাসপিতালে নেয়া

হয়েছে সেটা যেনে।আমি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ 

করতা লাগলাম।প্রায় ৩০মিনিট পর হাসপিতালে

এসে পোঁছালাম। দেখলাম আম্মু,মামি আর মামা

বাইরে বসে আছে।আমি তাদের কাছে যেতেই

আম্মু জান্নাতকে দেখে বললঃ

আম্মুঃনিলয় এই মেয়েটা কে?

আমিঃআম্মু ও জান্নাত রাফির সাথে পরিক্ষা দিচ্ছে।

আর জান্নাত ইনি হলো আমার আম্মু। (কানের

কাছে গিয়ে বললাম)সাথে তোমার হবু শ্বাশুরী মা।

কথাটা শোনার পর জান্নাত অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে আমার

দিকে তাকালো।সেদিকে আমি।না দেখে মামিকে

বললামঃরাফির কি অবস্থা

মামিঃএখন একটু ভালো।

আমিঃঠিক আছে। তোমরা বাইরে থাকো আমি

আর জান্নাত ভেতর থেকে আসছি।


জান্নাতকে সাথে নিয়ে রাফির বেডের কাছে

গিয়ে বললাম....

আমিঃএকে চেনো ডিয়ার হবু বউ।

জান্নাতঃখবরদার আমাকে আর হবু বউ বলবেন

না।বললে কিন্তু আমি আত্মহত্যা করবো।

আমিঃমাথায় হাত দিয়ে... পাগলি নাকি তুমি?

জান্নাতঃসেটা যাই বলেন।

আমিঃহয়েছে।এখন একে দেখো।রাফিকে দেখিয়ে।

জান্নাতঃহুম চিনি।ইনি।রাফি যে আমার সাথে...

(জান্নাতকে থামিয়ে দিয়ে)

আমিঃএখন চলো।তোমার বাসা থেকে আবার চিন্তা করবে।


জান্নাতকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।বাইরে চলে আসলাম।বাইরে এসে আম্মু মামি আর

মামার সাথে কথা বলে জান্নাতকে নিয়ে গাড়িতে

উঠলাম।কিন্তু জান্নাত কেমন ভাবে যেনো

তাকিয়ে আছে।হয়তো কিছু বলতে চাইছে।

আমিঃকিছু বলবে.?

জান্নাতঃযদি বকা আর না মারেন তাহলে বলতে পারি

আমিঃঠিক আছে বলো।কিছু বলবো না।

জান্নাতঃওনার কি।হয়েছে।

আমিঃএকটু মানসিকভাবে অসুস্থ।সেই জন্য

ওর পরিবর্তে আমি পরিক্ষা দিচ্ছি।যেনো

রাফির একটা বছর নষ্ট না হয়।

জান্নাতঃওহ।


জান্নাতের সাথে কথা বলতে বলতে জান্নাতের

বাসার সামনে আসতেই আমাকে থামাতে বলল।

আমি এক পাশে থামাতেই জান্নাত নেমে।বাসায়

চলে যেতে লাগলো...

আমিঃকেউ কাউকে সাহায্য করলে ধন্যবাদ বলতে হয়।

মেয়েঃআমি বলি না।বলেই দৌড়ে বাসার ভিতরে

চলে গেলো।আমিও আর সেখানে না থেকে বাসার

উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।বাসায় এসে মামাকে ফোন

দিয়ে বললাম রাফির সব।গুলো পরিক্ষা আমিই

দিবো।রাফির অবস্থার কথা চিন্তা করে মামাও

আর না করলো না।

চলবে.........

গল্প জোড়_করে_বিয়ে পর্ব ১

 বন্ধুরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি এমন।সময়

পকেটে থাকা ফোনটা বাজতে শুরু করে দিল।

এক বালতি রাগ নিয়া ফোনটা তুলেই সব রাগ

বদলিয়ে মিষ্টি ভালোবাসাতে পরিণত হলো।

কারণ ফোনটা আম্মু করেছে।

ফোনটা তুলতেই আম্মু বলল....


আম্মুঃনিলয় কোথায় তুই

আমিঃজ্বি আম্মু আমি তো বন্ধুদের সাথে বাইরে

আড্ডা দিচ্ছি।

আম্মুঃতারাতারি তুই তোর নানা বাড়ী আয়।

আমিঃকিন্তু কেনো আম্মু।

আম্মুঃযেটা বলছি সেটা কর।

বলে ফোন কেটে দিলেন।

কি বা আর করা। বন্ধুদের সাথে আড্ডা মাটি

করে নানু বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।কিন্তু

মাথায় একটা জিনিশ কিছুতেই ডুকছেনা।

কাল রাতে আম্মু আর আব্বু মিলে নানুর

বাসায় গেছে।জিজ্ঞাস করাতেও কিছু বলে

নাই।আর এখন হুট করেই জরুরী তলব।

এসব ভাবতে ভাবতে নানু বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় গিয়ে আম্মু বলে ডাকাতেই আম্মু রাফি-র

রুম থেকে বেড়িয়ে আসলেন।

আমিঃআম্মু কি হয়েছে।তোমাকে দেখে এতো 

চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?

আম্মুঃসেটা পরে বলিস।এখন আমার সাথে চল

আমিঃকোথায় আম্মু

আম্মুঃরাফির রুমে।

আমিঃঠিক আছে চলো।


রাফি আমার মামাতো ভাই।অনেক ভালো আর

আমার থেকে ১বছরের ছোট।কিন্তু রাফি কি

করলো।ওর তো পরিক্ষা হচ্ছে।এক রাশ চিন্তা

নিয়ে রাফির রুমে যেতেই দেখালাম সবাই ঐ

রুমে বসে আছে সাথে ডক্টর।


আমিঃআম্মু রাফির কি হয়েছে।

আম্মুঃকাল রাত থেকেই ও কেমন জেনো করছে।

পরে যখন তোর মামা ডক্টরকে ফোন দিয়ে বাসায়

আনে।তখন ডক্টর বলে রাফি নাকি এখন মানসিক

ভাবে অসুস্থ। কিন্তু সকাল থেকে ওর শরিরে 

এতোটাই জ্বর হয়েছে যে ও বিছানা থেকেও

উঠতে পারছে না।

আমিঃতাহলে ওকে হাসপিতালে নাও।

ডক্টরঃসেটার দরকার নাই।কিছু সময় হলেই

ঠিম হয়ে যাবে।

আমিঃতাহলে থাক। আমাকে ডাকার কি আছে।

মামিঃরাফি তো আমাদের কথা শোনে না।

তাই তোমাকে ডেকে আনা হয়েছে।

আমিঃকিন্তু মামি।ওকে কি বলতে হবে।

আম্মুঃঐ গাধা ওর পরিক্ষা চলছে তুই ভুলে গেছিস।

আমিঃএকদমি না।

আম্মুঃতাহলে....

আমিঃতাহলে কি ওর পরিক্ষা দেয়া লাগবেনা।

আম্মুঃসেটা রাফিকেই বল।ওকে অনেক বার

বলছি কিন্তু শুনছে না।

আমিঃঠিক আছে আমি বলছি।


রাফির কাছে গিয়ে....

আমিঃরাফি....

রাফিঃহুম ভাইয়া বল

আমিঃপরিক্ষা না দিলে হয় না...

রাফিঃভাইয়া তুমিও...একটা বছর আমার

নষ্ট হয়ে যাবে।

আমিঃকিন্তু তুই তো অসুস্থ পরিক্ষা দিবি কিভাবে

রাফিঃভাইয়া আমি পরিক্ষা দিতে পারবো

আমিঃচুপ।গাধা এ অবস্থায় ও পরিক্ষা দিবে😡😡

রাফিঃ😔😔😔

আমিঃঠিক আছে তোর এক বছর নষ্ট হবে না।

মামাঃকিভাবে

আমিঃআমি পরিক্ষা দিবো


কথাটা বলার সাথে সাথে সবাই মনে ভুত দেখছে

সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে।

মনে হচ্ছে আমি মঙ্গল গ্রহ থেকে আসা এলিয়েন।

আম্মুঃঐ কি বলছিস ভেবে বলছিস তো।

আমিঃহ্যা তবে আব্বুর সাহায্য লাগবে।

আব্বুঃকি সাহায্য

আমিঃপরে সমস্যা হলে সেই দিক তুমি দেখবে

আব্বুঃঠিক আছে।কিন্তু

আমিঃকোনো কিন্তু না আব্বু। এখন তোমরা

সবাই বাইরে যাও।


আমার কথা শুনে সবাই বাইরে চলে গেলো।

আমিও আমার ড্রেস বদলিয়ে রাফির একটা

ড্রেস পরে নিলাম।এখন আপনাদের আমার

পরিচয় দেয়।আমি আবির হাসান নিলয়।

বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।আর কিছু বলা

যাবে না। সময় নাই।ড্রেস বদলিয়ে রাফির থেকে

জেনে নিলাম আজ কি এক্সাম আর কিছু

গুরুত্বপূর্ণ টিপস। যেটা আমাকে সাহায্য করতে

পারে।রাফির টেবিল থেকে বই আর পরিক্ষার

সকল কাগজ পত্র নিয়ে বাইরে এলাম।


আম্মুঃনিলয় কিছু খেয়ে যা।

আমিঃনা আম্মু এসে খাবো।

আব্বুঃআমি ড্রাইভারকে বলে রেখেছি তোমাকে

নিয়ে যাওয়ার জন্য। সাবধানে।যাবে।

আমিঃঠিক আছে আব্বু।


গাড়িতে উঠে রাফির কলেজের উদ্দেশ্য রওনা

দিলাম।যেতে।যেতে রাফির থেকে শোনা

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গুলো পড়তে লাগলাম।প্রায় ৩০

মিনিট পর রাফির কলেজে আসলাম।রাফির

কলেজ বললে ভুল হবে। এখানে আমিও

পড়াশোনা করতাম।সে যাই হোক ক্লাসের দিকে

যাওয়া যাক।না হলে ছোট ভাইয়েরা দেখে ফেললে

সর্বনাশ। দ্রুত ক্লাসে চলে আসলাম।এসে প্রশ্ন

গুলো পড়তে লাগলাম।হঠাৎ কারো কথা কানে

আসাতে ঘুরে দেখতেই আমি অবাক।একটা

মেয়ে এতো সুন্দর হয় কিভাবে।দেখতে অনেক

বাচ্চা বাচ্চা লাগছে সাথে চোখে একটা চশমা।

সবকিছু জাস্ট ওয়াও। মনে মনে রাফিকে

হাজার হাজার বার ধন্যবাদ দিচ্ছি।

মেয়েঃএই যে এতোক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে

পাচ্ছেন না।হা করে কি দেখছেন।

আমিঃকিছু না।

মেয়েঃআপনি এই সিটে কি করেন।

আমিঃপরিক্ষা দেয়ার জন্য বসে।আছি।

মেয়েঃএখানে তো অন্য এক ছেলে পরিক্ষা

দিচ্ছে আপনি কেন।

আমিঃপরিক্ষা শেষ হওয়ার পরে বলি।

মেয়েঃনা আমায় এখন বলুন।

আমিঃপ্লিজ এখন।বিরক্তি করো না।

মেয়েঃআপনি না বললে একশত বার করবো।

আমিঃএই মেয়ে বলছি না পরিক্ষার পরে বলবো।

এখন চুপচাপ বসে থাকো।(অনেকটা ধমক দিয়ে)

কাঁদোকাঁদো মুখ নিয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।

আমিঃপ্লিজ মন খারাপ করো না।আমি আসলে

তোমাকে ধমক দিতে চাইনি।তোমার গনিত(আজকের

পরিক্ষার বিষয়)বিষয়ে সর্বোচ্চ পয়েন্ট কত?

মেয়েঃ৮৫(আস্তে আস্তে কথাটি বলল)

আমিঃআমি তোমাকে।৯৫ পাইয়ে দিবো।যদি

তুমি কাউকে কিছু না বলো।


আমার কথা শুনে মেয়েটি আমার দিকে অবাক

হয়ে তাকিয়ে রইলো।আমি।সেদিকে খেয়াল না

করে প্রশ্ন গুলো পরে স্যার এর টেবিলে বইটা

জমা দিয়ে দিলাম।


কিছুক্ষণ পর স্যার এসে খাতা দিতে লাগলো।

আমার কাছে আসতেই...

স্যারঃনিলয় তুই

আমিঃভাই প্লিজ। এখন কিছু বলো না।পরিক্ষা

শেষ হলে সব বলবো।🙏🙏

স্যারঃঠিক আছে।


খাতা নিয়ে লিখতে যাবো তখনি দেখি আমার

পাশে বসা মেয়েটা আমার দিকে অবেক হয়ে

তাকিয়ে আছে।হয়তো জানতে চাই কে আমি।

আর কেনোই বা স্যারকে ভাই বললাম।

আমিঃকিছু বলবে..?

মেয়েঃনা(মাথা নিচু করে)

আমিঃতাহলে লেখো।আর কিছু না পারলে

আমার থেকে শুনে নিবা ঠিক আছে।

মেয়েঃমাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।


গল্পঃজোড় করে বিয়ে

পর্বঃ১

গল্প তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল পর্ব ৩৪ সমাপ্ত

 তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল

অন্তিম_পাতা

সারিকা_হোসাইন


********

চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত হচ্ছে,পুব আকাশের সূর্য টা লাল বর্ণের আভা ছড়িয়ে আকাশ কে লালিমা লেপন করে দিয়ে জানান দিচ্ছে এখন ভোর হয়েছে।বাইরে মৃদুমন্দ  বাতাস  প্রবাহিত হচ্ছে।টুপটুপ করে কুয়াশা পড়ে গাছের পাতা,ঘাসের ডগা গুলো কে ভিজিয়ে দিচ্ছে।


মুহিতের উদোম লোমহীন বুকে শান্তির নিদ্রা যাপন করছে স্বর্গ।

মুহিতের কক্ষের দক্ষিণের জানালা খোলা থাকায় ভোরের  শিরশিরে ঠান্ডা বাতাসে শীতে কেঁপে শরীর কাটা দিয়ে উঠলো স্বর্গের।

একটু উমের আশায় বিড়াল ছানার মতো মুহিতের বাহুডোরে লুকালো।


স্বর্গের কাঁপুনিতে মুহিতের ঘুম ছুটে গেলো।চোখ মেলেই স্বর্গের ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখশ্রী দেখে এক অনিন্দ্য সুখ পেলো মুহিত।

সরে যাওয়া পাতলা ব্ল্যাঙকেট জড়িয়ে দিলো স্বর্গের নগ্ন পিঠে।

আরাম পেয়ে মুহিত কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো স্বর্গ।


রাতের সুখময় স্মৃতি মনে পড়তেই নিমিষেই মুহিতের রক্ত গরম হয়ে উঠলো।


স্বর্গের কপালে,গালে ,ঠোঁটে ভালোবাসার পরশ একে নিজের সাথে চেপে ধরলো স্বর্গকে।

ঘুমের মধ্যেই ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো স্বর্গ।


হাতের বাধন আলগা করে গত রাতের কথা ভাবলো মুহিত।


বহুদিন পর নিজের শ্রেয়সী কে কাছে পেয়ে একটু বেশি ই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে।


মুহূর্তেই নিজের প্রতি নিজের রাগ হলো।


"এতো হিংস্র কি করে হতে পারলো সে?"


"মেয়েটা তো আর তার থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলো না।"


স্বর্গের আবেদনময়ী রূপ দেখে মুহিত নিজেকে কোনোভাবেই কন্ট্রোল করতে পারেনি।খুব বেশি ই বেসামাল হয়ে গেছিলো সে।


স্বর্গের তুলার মতো নরম শরীর  নিমিষেই দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে মুহিত।


মুহিত তো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলো যে,সে কখনো স্বর্গকে তার তরফ থেকে  কোনো কষ্ট পেতে দিবেনা।

তাহলে একরাত্রের ব্যবধানেই কি করে প্রতিজ্ঞা ভাঙলো মুহিত?

হঠাৎই মুহিতের ভাবনার ছেদন হলো স্বর্গের ঘুম ঘুম কন্ঠে 

"লাভ ইউ জান" 

কথাটি শুনে।


স্মিত হেসে কপালে চুমু খেয়ে মুহিত বলে উঠলো

"লাভ ইউ টু"


স্বর্গের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মুহিত অপরাধীর ন্যায় বলে উঠলো

"কাল রাত্রের জন্য আম রিয়েলি সরি"

"আমি নিজেকে আয়ত্তে আনতে পারিনি।

"প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আর কখনো এমন ভুল হবে না"


স্বর্গ মুহিতের নাকে হালকা স্লাইড  বুকে আঁকিবুকি করতে করতে   আবেশ মেশানো ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো

" তুমি যতো বার কন্ট্রোললেস হবে আমি ততো বার তোমাকে কন্ট্রোলে আনতে প্রস্তুত।


মুহিত স্বর্গের কাঁধে মুখ ডুবিয়ে জিজ্ঞেস করলো―

"সত্যি?

স্বর্গ দুই হাতে মুহিতের পিঠ জড়িয়ে বলে উঠলো

―তিন সত্যি।


এরপর নিজেকে সরিয়ে বিছানায় বসে মুহিত স্বর্গকে বললো

"তোমার জন্য দুটো সারপ্রাইজ আছে।কবে দেখতে চাও সেগুলো?


"স্বর্গ দুম করে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলো কেমন সারপ্রাইজ??

"গেলেই দেখতে পাবে "হেসে বলে উঠলো মুহিত।


"তাহলেই আজকেই যেতে  চাই"


"অনেক লম্বা জার্নি করতে হবে ,পারবে??


"আলবাত পারবো।


"আচ্ছা ঠিক আছে কাল নিয়ে যাবো।


"না আমি আজকেই যেতে চাই"


"আজকে তোমাদের বাড়িতে যেতে হবে ভুলে গেছো পাগলী?


"স্বর্গ মিন মিন করে "হুম" বলে মুহিতের কোমর জড়িয়ে আরেকটু ঘুমানোর চেষ্টা করলো।


―――――

স্বর্গ ,মুহিত,সুখ,নামিরা আর সোহাগ যখন নাফিজ মাহমুদ এর বাংলোতে এসে পৌঁছায় তখন দুপুর বারোটা বাজে।

মিসেস তনুজা আর হেল্পিং হ্যান্ড ফতেমা মিলে স্বর্গ আর মুহিতের পছন্দ সই বিভিন্ন পদ রান্না করছেন।

নাফিজ মাহমুদ জরুরি কাজে বাইরে গিয়েছিলেন।যখন মুহিত জানালো তারা বাসা থেকে বের হচ্ছে তখনই নাফিজ মাহমুদ দ্রুত কাজ সেরে বাসার দিকে রওনা দেন।


এসেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষন বসে থাকলেন নাফিজ মাহমুদ।

মেয়ে যখন বাড়িতে ছিলো তখন সারাদিন দেখা না হলেও কিছুই অনুভব হতোনা।

কিন্তু মেয়েটা যেই দূরে চলে গিয়েছে তখনই বুকটা খাঁ খাঁ করতে শুরু করেছে।

আসলেই দূরত্ব ভালোবাসার কদর বোঝায়।


স্বর্গ নাফিজ মাহমুদ এর পিঠ হাতড়াতে হাতড়াতে বলে উঠলো

"বাপী আমি কিন্তু এখন কেঁদে দেবো।


অমনি নাফিজ মাহমুদ স্বর্গকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।

"না মামনি কেঁদোনা, তোমার কান্নার সুর শুনে মুহিত ভয় পাবে।


ইচ্ছে করেই বিকৃত শব্দে খিক খিক করে হেসে উঠলো" সুখ।"


পরিবারের সকলের খুনসুটিতে নিমিষেই সকল মন খারাপ দৌড়ে পালালো।


খেতে খেতে ডাইনিং টেবিলে নাফিজ মাহমুদ মুহিতকে জিজ্ঞেস করলেন


"তা কোথায় ঘুরতে যাচ্ছ?


"স্যার এটা সিক্রেট আছে,স্বর্গের জন্য সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছি।


"সেকি বাবা এখনো স্যার স্যার করে যাচ্ছ?

"হয় বাবা বলো না হয় মামা বলো,এরম স্যার স্যার বলে আমাদের দূরে ঠেলে দিও না 

অনুযোগের সুরে বলে উঠলো তনুজা।


"নেক্সট টাইম প্র্যাকটিস করে তারপর বলবো ম্যাডাম"

বলেই স্বর্গের দিকে তাকালো মুহিত।


স্বর্গ চোখ গরম করে বলে উঠলো 

"এখনই বলতে হবে তোমাকে ,ফুপিকে তো সকালে উঠেই আমি মা বলেছি।

তোমার এতো আজাইরা লজ্জার কারন তো দেখছি না।

মামীর" মী, কেটে দিয়ে মা বলবে আর বাপিকে বাবা বলবে শেষ।


স্যার ,ম্যাডাম ডাকলে আমিও তোমাকে ভাইয়া ডাকবো।


খুক খুক করে কেশে উঠলো মুহিত।

একগ্লাস পানি নিয়ে খেতে খেতে ভাবলো


নিজের প্রানপ্রিয় বউয়ের মুখে ভাইয়া ডাক শোনার মতো হরিবল আর কিছুই হয়না।


স্বর্গকে বিশ্বাস নেই ডেকেও ফেলতে পারে।তার আগেই শুধরে যাই।


ঠিকাছে বলছি 

ম্যাডাম সরি মা,বাবা আমি আজকেই স্বর্গকে নিয়ে চলে যেতে চাই।যদি আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকে।

অনেক দিন আমাদের কারোর ই ঘুরাঘুরি হয়নি।

আমি যখন মিশনে ছিলাম তখন স্বর্গ  ডিউটি আর বাসা করেই সময় কাটিয়েছে।

আর মিশন থেকে এসেই বিয়েটা হয়ে গেলো।


তাই আমি কিছুদিন একান্তে ওর সাথে টাইম স্পেন্ড করতে চাচ্ছি।


নাফিজ মাহমুদ আর তনুজা সম্মতি জানালো।


রাতের খাবার খেয়ে মুহিতরা বেরিয়ে গেলো।

পিছনে ফেলে গেলো তিনজন বিমর্ষ প্রিয়জনকে।


*********

আজ ডিসেম্বর মাসের পনেরো তারিখ।মোটামুটি ভালোই শীত পড়তে শুরু করেছে।দিনে শীতের প্রকোপ এতোটা বোঝা না গেলেও রাতে ঠিকই বোঝা যায়।

ভোর পাঁচটা বাজেতেই কর্কশ স্বরে মুহিতের ফোনের এলার্ম বেজে উঠলো।

স্বর্গ কম্বল দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে  বিরক্তি প্রকাশ করলো।

সারা রাত ঘুম হোক বা না হোক এই ভোর রাতে শান্তির ঘুম যেনো চোখের পাতায় এসে জেঁকে বসে।


তড়িৎ গতিতে এলার্ম বন্ধ করে উঠে বসলো মুহিত।

আজ স্বর্গকে সারপ্রাইজ দেবার প্রথম দিন।

দ্রুত ফ্রেস হয়ে এসে আদুরে স্বরে ডেকে উঠলো স্বর্গকে।


মুহিত খুব ভালো করেই জানে এই মেয়ে প্রচুর অলস।

ঘুমের আরামের জন্য দেখা যাবে বলে বসেছে"আজকে সারপ্রাইজ লাগবে না,অন্য দিন দিও"


স্বর্গকে হাড়ে হাড়ে চেনে মুহিত।

তাই এক টানে ব্ল্যাঙকেট সরিয়ে দুই হাত টেনে উঠে বসালো স্বর্গকে মুহিত।


স্বর্গ আবার শুয়ে পড়তে চাইলেই মুহিত জগে থাকা পানি অল্প হাতে নিয়ে স্বর্গের চোখে ছিটিয়ে দিলো।


শীতে ঠান্ডা পানির স্পর্শে চোখ মেলে তাকালো স্বর্গ।


ঘুম কাতুরে কন্ঠে বলে উঠলো

"এভাবে আমাকে কষ্ট দিচ্ছ কেনো মুহিত"


মুহিতের বুঝি মায়া হলো স্বর্গের এহেন অভিযোগে।

কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।একজনের কাছে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।তাকে যেতেই হবে।দায়িত্ব কর্তব্য  ফেলে এখানে ভাবলেশহীন দিন কাটানোর মানুষ মুহিত নয়।


মুহিত স্বর্গের গালে হাত দিয়ে বলে উঠলো


"তোমার বর একজনের কাছে খুব ঋণী।তার ঋন পরিশোধ না করলে মরেও যে শান্তি পাবোনা !


মুহিতের এমন সিরিয়াস কথা শুনে স্বর্গ দ্রুত ফ্রেস হতে চলে গেলো।

আধা ঘন্টার মধ্যে রেডি হয়ে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মুহিতের জলপাই রঙা জিপে চেপে বসলো দুজনে।


হালকা আলো ফুটার আগেই হাইওয়ে ধরলো মুহিত আর স্বর্গ।


সকালের বাতাস টা খুব  গায়ে লাগছে।হালকা কুয়াশার ধুম্রজাল  বেষ্টন করেছে ধরণী।

 জিপ থামিয়ে গলার মাফলার দিয়ে নাক কান পেঁচিয়ে নিলো মুহিত সাথে স্বর্গকেও ভালো মতো পেঁচিয়ে দিয়ে আবার জিপ হাকালো।


চারপাশের সুন্দর মনোরম পরিবেশ স্বর্গকে মুগ্ধ, বিমোহিত করছে।গাছের পাতার ফাক গলিয়ে লাল সূর্যটা বেরিয়ে এলো।পাখি গুলো আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে।রাস্তায় দুই একজন মানুষের দেখা মিলছে মাঝে মধ্যে।

কিছু কিছু হোটেল,চায়ের স্টল এ আগুন জ্বালানো হচ্ছে।

ঘন্টা তিনেক পর শহর থেকে একটু দূরে একটি টং দোকানের কাছে ব্রেক কষলো মুহিত।


স্বর্গ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মুহিতের দিকে তাকালো।


মুহিত মুচকি হেসে বললো,"এখনো বহুদূরের পথ বাকী।

নেমে এসো চা খাবো।"


বড় বড় রেস্টুরেন্ট বা কফিশপের চায়ের থেকেও টং দোকানের চায়ের স্বাদ বেস্ট।

অল্প চুমুক আর  বড় নিশ্বাস,যেনো আত্মিক প্রশান্তি।


মুহিত কড়া লিকারের দু কাপ দুধ চা চাইলো।

দোকানী  দ্রুত চা বানিয়ে মুহিতের হাতে তুলে দিলো।


মুহিত স্বর্গের পানে চা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো

" সকালের এই ঠান্ডা হাওয়ায় লম্বা একটা শ্বাস নেবে,এরপর চায়ে চোখ বন্ধ করে ছোট চুমুক দেবে।চা টা গিলে শ্বাস ছাড়বে।

দেখবে কতো প্রশান্তি !"


মুহিতের কথা মতো স্বর্গ চা পান করে যেনো এক অনন্য সুধা পান করলো।

মনে হলো চা আর প্রকৃতির মিষ্টি হাওয়া দুটোই পেটে নয় অন্তরে গিয়ে লাগলো।


স্বর্গ উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো 

"তুমি এটা কিভাবে জানলে??


"পাপা শিখেয়েছিলো,আর আমি শীতকাল আসলে ইচ্ছে করেই গ্রাম সাইডের আর্মি  ক্যাম্পিং এ যাবার জন্য নাম লিখাতাম।


প্রকৃতির সাথে থাকলে তুমি কখনো কুটিল হতে পারবে না।

প্রকৃতি তোমাকে তারমতো উদার বানিয়ে দেবে।

বিশ্বাস না হলে জানুয়ারিতে আমার সাথে ক্যাম্পিং এ চলো।


স্বর্গ মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো,সে যাবে।


ফাঁকা রাস্তা,এবং মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ সব মিলিয়ে সাড়ে আট ঘণ্টা সময় লাগলো মুহিতদের কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছুতে।


দেড় বছরে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে।পাহাড় কেটে রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে।খাসিয়া পল্লীর সবচেয়ে শেষের ঘরটা ডিকো দের।

মুহিত নিমিষেই চিনে ফেললো সেই ঘর।

কিন্তু পাশে আরো দুটো নতুন ঘর হয়েছে।


স্বর্গ অবাক হয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছে।কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না।


মুহিত গাড়িতে করে এক গাদা জিনিস এনেছে বাচ্চা মেয়েটির জন্য।


গাড়ি থেকে দুজনে মিলে সব নামিয়ে শেষ করতে পারলো না।কিছু জিনিস রেখে নেমে বাড়ির  সদর দরজায় টোকা দিলো।

মিনিট পাঁচেক পরেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলো একটি মেয়ে।

এই দেড় বছরে সে অনেক খানি বড় হয়ে গিয়েছে।তার ছোট কোঁকড়ানো চুল গুলোও কাঁধ ছাপিয়ে নেমে এসেছে।


মেয়েটি মুহিতের দিকে তাকিয়েই চোখ বড় বড় করে ফেললো।


চিল্লিয়ে তার মা কে ডেকে উঠলো

"দেবতা আইসেছে"


মেয়েটির চিল্লানোর শব্দে মারুং আর তার স্ত্রী দৌড়ে এসে মুহিতের সামনে দাঁড়ালো।

তাদের রীতি অনুযায়ী মেহমান কে সম্মান জানালো।


প্রথমেই মুহিত ডিকোর হাতে তুলে দিলো লাল টকটকে একটা জামা।

মারুং কে গাড়ি নির্দেশ করে বলে উঠলো

"ওখানে যা কিছু আছে সব ডিকোর"


স্বর্গ এতোক্ষন চুপ থাকলেও সুযোগ পেতেই মুহিতকে জিজ্ঞেস করলো 

"এদের কিভাবে চেনো?"


"আজকে তুমি এদের জন্যই আমাকে পেয়েছো স্বর্গ"

বলেই সেই বিভীষিকা ময় ঘটনার বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললো মুহিত।


পুনরায় সেই কুৎসিত স্মৃতি মনে পড়তেই চোখের কোনে জল জমা হলো স্বর্গের।


হঠাৎই হাতে কারো স্পর্শ অনুভব করলো স্বর্গ।হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো ডিকো লাল ফ্রকটি পরে সেজে দাঁড়িয়ে আছে।


মেয়েটিকে গাল টিপে আদর করে দিলো স্বর্গ।

মুহিত মেয়েটিকে কোলে তুলে আদুরে স্বরে বলে উঠলো

"তুই আমার  অনেক সেবা করেছিস,এবার তোর সারা জীবনের সেবা করতে পারলে নিজেকে  হালকা লাগবে।


মেয়েটি মুহিতের কথার আগা মাথা কিছুই না বুঝে শুধু নীরবে তাকিয়ে রইলো।


মারুং এর থেকে মুহিত জানতে পারে মুহিতের দেয়া টাকাটা দিয়ে তারা একটা পানের বর দিয়েছে।সেখান থেকে ভালোই টাকা আসে।তারা তিনবেলা পেট ভরে খেয়ে পরে ভালোভাবেই বেঁচে আছে।

ডিকো স্কুলে যায়।সরকার থেকে ওদের জন্য একটা স্কুল করা হয়েছে,চিকিৎসা সেবাও ভালো এখন।


মুহিত মারুং কে অনুরোধ করে 

"ডিকো যতদূর পড়তে চায় মারুং যেনো বিনা বাধায় তাকে পড়তে দেয়।ডিকোর সকল খরচ মুহিত প্রদান করবে।

এবং সুযোগ পেতেই তাদের সাথে দেখা করতে আসবে।


সারাদিন সময় কাটিয়ে মুহিত আর স্বর্গ বেরিয়ে আসে মারুং দের বাড়ি থেকে।

ডিকো কেঁদে ভাষায়, মারুং আর তার স্ত্রী নীরবে চোখের অশ্রু মুছে।

কে বলেছে রক্তের সম্পর্ক না থাকলে মানুষ আত্মার আত্মীয় হয়না?


বরং রক্তের সম্পর্ক হীন মানুষ ই বেশি আত্মার আত্মীয় হয়।

মারুং আর তার পরিবার  জলন্ত প্রমান।


যেতে নাহি দিবো হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।

নিজেদের জীবিকার তাগিদে মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেই হয়।

ধরে বেঁধেও কেউ রেখে দিতে পারে না।

বিষন্ন মনে মুহিত আর স্বর্গ জিপে চেপে বসে,

স্বর্গ মুহিত চির কৃতজ্ঞ এই ছোট খাসিয়া পরিবারটির কাছে।


মুহিত জিপ হাঁকায়, যতো দূর দৃষ্টি সীমানায় মুহিতের জিপ দেখা যায় ডিকো, মারুং, আর তার স্ত্রী তাকিয়ে থাকে।

স্বর্গ মুহিত ও পিছন ফিরে বারবার তাদের বিদায় জানায়।


――――

মুহিত আর স্বর্গ বসে আছে  আছে  দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

সাড়ে পাঁচ ঘন্টার নন স্টপ এমিরেটস ফ্লাইটে তারা এসে পৌঁছেছে।

দুবাই কেনো এসেছে মুহিত স্বর্গ কে নিয়ে তা অজানা স্বর্গের।


মুহিত তারজন্য কি সারপ্রাইজ রেখেছে সেটা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে স্বর্গ।


একটু পরে একটি লোক হন্তদন্ত করে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মেজর মুহিত ওয়াসীফ এর খুজ চালাচ্ছে।

এই ব্যাস্ত এয়ারপোর্ট এ কোথায় খুঁজবে সেই মেজর কে?ভাবতেই দুবাই ছামাদের ঘাম ছুটে গেলো।


মুহিত তার কালো চশমার ভেতর দিয়ে দুবাই ছামাদ কে দেখে  ফিচেল হাসলো।

কারন এই ব্যাক্তির চেহারা মুহিত আগেই দেখেছে ফোনে।


মুহিত ব্যাগপত্র নিয়ে স্বর্গের হাত ধরে দুবাই ছামাদের সামনে দাঁড়ালো। গমগমে কন্ঠে ছামাদ কে উদ্দেশ্য করে আরবি ভাষায়  বলে উঠলো


"মারহাবান"(হ্যালো)

মাসাউল খাইর"(শুভ সন্ধ্যা)


চমকে উঠলো ছামাদ।এই বহুরূপী দেশে কে তাকে এভাবে শুভ সন্ধ্যা জানাচ্ছে।

মুখের দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো

"মা আন্ত?


মুহিত মেপে হাসলো।এর পর আরাবিক ভাষায় উত্তর দিলো

"ইসমী মেজর,,,,,


মুহিত কে কথা শেষ করতে না দিয়েই মুহিতের মুখের দিকে তাকিয়ে ছামাদ দিল খোলা হেসে মুহিত কে জড়িয়ে ধরলো।


কোলাকুলি করে বলে উঠলো

আম সরি  ব্রো

আম রিয়েলি সরি 


মুহিত বলে উঠলো

"দা "আ" হা তাদহাব,(আরে বাদ দাও)


ছামাদ হাতের প্ল্যাকার্ড উল্টিয়ে রাস্তা নির্দেশ করে মুহিত আর স্বর্গের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো

"দায়ানা নাদহাব, (চলো যাওয়া যাক)


এয়ারপোর্ট থেকে মুহিত আর স্বর্গ বেরিয়ে পার্কিং এরিয়াতে আসতেই ছামাদ কালো রঙের রেঞ্জ রোভার গাড়ি নির্দেশ করে তাদের উদ্দেশ্যে দরজা খুলে দিলো।


মুহিত স্বর্গকে নিয়ে গাড়িতে উঠতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো ছামাদ।


ত্রিশ কিলোমিটার পথ জার্নি করার পর  আবুধাবি শহরের একটি বিশাল বড় এপার্টমেন্ট এর সামনে এসে ছামাদ গাড়ি থামালো।


মুহিতকে প্রচুর উত্তেজিত দেখালো।

স্বর্গের হাত ধরে গাড়ি থেকে নেমে ছামাদ কে ব্যাগ নামানোর নির্দেশ দিলো।

একজন গার্ডের সহায়তায় তাদের লিফট পর্যন্ত নিয়ে ছত্রিশ তলার বাটন প্রেস করা হলো।


লিফটে দাঁড়িয়ে স্বর্গ মুহিত কে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করলো এতো সম্মান প্রদর্শন করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের?


মুহিত স্বর্গকে রিল্যাক্স থাকতে বলে আরাবিক ভাষায় গার্ড এর সাথে কিছু কথা বার্তা সারলো।


স্বর্গের কাছে এই মুহূর্তে মুহিতকে দুবাইয়ের শেখ মনে হচ্ছে।

যে কথায় কথায় আরবি ঝাড়ছে।


কাঙ্খিত ফ্লোরে আসতেই খুলে গেলো লিফটের দরজা।

গার্ড হাতের ইশারায় একটি বিশালাকার কারুকাজ খচিত দরজা নির্দেশ করলো।

সেখানে গিয়ে মুহিত কলিংবেল টিপতেই বেরিয়ে এলো সুদর্শন এক যুবক।

যার পড়নে কান্দুরা, মাথায় কেফায়া,লম্বা লম্বা দাড়ি,যেনো চেহারায় নূর ভাসছে।

স্বর্গ অভিভূত হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকলো।

লোকটিকে তার বড্ড চেনা পরিচিত লাগছে।

লোকটির সাথে বোরকা পরা পর্দানশীন একজন অল্প বয়সের মেয়েও বেরিয়ে এলো।


মুহিত স্বর্গকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই সকলেই তাদের সমাদর করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

আল্লাহর বিভিন্ন নাম,মদিনার ছবি, বিভিন্ন সূরার ওয়ালম্যাট শোভা পেয়েছে ঘরের প্রত্যেকটি দেয়ালে।


যুবকটি তাদের সামনের সোফায় বসে দৃষ্টি সংযত করে জিজ্ঞেস করলো

"কেমন আছো স্বর্গ"


"স্বর্গের বুক ধক করে উঠলো,আরেহ এটা আহিয়ান।

আহিয়ান এর এতো আমূল পরিবর্তন দেখে খুশিতে বাক হারা হলো স্বর্গ।

মুহিতের সারপ্রাইজ এ সে সত্যি সারপ্রাইজড হয়ে ভাষা হারিয়েছে।


পাশে থাকা মেয়েটিকে নির্দেশ করে দেখিয়ে বললো 

"ও আমার স্ত্রী মারীয়ম।"

মাস ছয়েক হয়েছে তারা দাম্পত্য জীবন শুরু করেছে।

বাংলাদেশ থেকে ফিরেই আহিয়ান নিজেকে শুধরে নিয়েছে।

নিজের খারাপ অতীতকে ঘৃণা করে বেছে নিয়েছে রাব্বুল আলামিনের রাস্তা।

আহিয়ান অনেক সুখে আছে তার স্ত্রী কে নিয়ে।

মেয়েটা এখানকার নাগরিক।

আহিয়ান রাশিয়া থেকে চলে এসে এখানে স্থান গেড়েছে।


মুহিতের হাত ধরে আহিয়ান কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো

"আমার এই জীবন তোমার দেয়া।আল্লাহ তোমার উছিলায় আমাকে তওবা করার সুযোগ দিয়েছে মেজর।


"আমার মা প্রতিদিন আমার স্বপ্নে আসে।আমাকে অনেক দোয়া করে,আমার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে"


"আমি দীর্ঘ ত্রিশ বছর আমার মাকে স্বপ্ন দেখিনি মেজর।"


"এখন রোজ দেখি"

মায়ের সাথে গল্প করি"


"একজন সন্তান হিসেবে এর চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কি আছে মুহিত?


আহিয়ান মায়ের জন্য কাঁদে,আল্লাহর ভয়ে কাঁদে।

সে হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছে এই খুশিতে কাঁদে।


আহিয়ানের খুশির কান্নায় ভিজে উঠে মারীয়ম সহ সকলের চোখ।


――――

সময় বহমান,পেরিয়ে গেছে চোখের পলকে দুটো বছর।

হসপিটাল এর ওটি রুমের সামনে সমানে পায়চারি করছে মুহিত,সুখ আর নাফিজ মাহমুদ।নামিরা,তনুজা মিসেস তারিন দোয়া পড়ে যাচ্ছেন সমানে।

স্বর্গের বেবি হবে,প্রেগন্যান্সি সময়ে তার অনেক জটিলতা গিয়েছে।


মুহিত ভয়ে থেকে থেকে অস্থির হয়ে উঠছে শুধু।


নামিরার সাড়ে তিন বছরের ছেলেটা সব কিছু প্রত্যক্ষ করছে।


হঠাৎই ভেসে উঠলো কান্নার আওয়াজ।ভয়ে কেঁদে ফেললো মুহিত ও।

আর কোনোভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছেনা মুহিত।

ডক্টর কেনো এখনো বের হচ্ছে না।

চিন্তায় প্রেসার ফল হবার উপক্রম।

একটু পর পিউ দুই হাতে দুটো বাচ্চা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।

পিউকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে গেলো মুহিত।

অসহায় চোখে পিউয়ের দিকে তাকাতেই পিউ চোখের ইশারায় ভেতরে যাবার অনুমতি দিলো।

মুহিত দৌড়ে স্বর্গের কাছে চলে গেলো।

লেবার পেইন আর নরমাল ডেলিভারির প্রেসারে একদম নেতিয়ে গিয়েছে মেয়েটা।

স্বর্গের হাত ধরে চুমু খেয়ে ফুঁপিয়ে বাচ্চাদের  কেঁদে ফেললো মুহিত।

স্বর্গ কাঁপা কাঁপা হাতে মুহিতের চোখের জল মুছে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।


কিছুক্ষন পর পিউ এসে মুহিতকে বললো 

"লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহিত ওকে কেবিনে শিফট করবো আমি। আপনি বাইরে গেলে ভালো হয়"

মুহিত বুঝতে পেরে মাথা দুলিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।

একটি পুত্র আর একটি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছে মুহিত।


মেয়েটা হুবুহু মায়ের চেহারা পেয়েছে।

ছেলেটার দিকে নজর দিতেই কলিজা মুষড়ে উঠলো মুহিতের।

মুকিত ,নামিরার ছেলে আর মুহিতের ছেলে হুবুহু চেহারা।


ছেলেমেয়েদের কোলে নিয়ে চুমু খেলো মুহিত।

বাবা হবার যেই  অব্যাক্ত আনন্দ তা কাউকে বলে বোঝানো যাবেনা।


******

আদনান ওয়াসিফ এর বিশাল বাড়ির ড্রয়িং রুমে দৌড়ে হেটে খেলে বেড়াচ্ছে মুহিতের দুই ছেলে মেয়ে "লিও"আর "রেইন"


হঠাৎই খেলতে খেলতে পড়ে গেলো দেড় বছরের মুহিতের মেয়ে রেইন।

মুহিত,স্বর্গ দৌড়ে আসার আগেই শুদ্ধ এসে টেনে তুলে আদর করে চোখ মুছিয়ে বলে উঠলো

"কেঁদোনা তুমি।তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট লাগে।

কথাটা শুনেই চুপ করে হাসতে লাগলো রেইন।


বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পাঁচ বছরের শুদ্ধ দৌড়ে নামিরার কাছে গিয়ে আবদার করলো

"মাম্মা আমিও মামার মতো ওকে বিয়ে করবো।রেইন কে আমার অনেক ভালো লাগে।ও অনেক সুন্দর পুতুলের মতো।


সকলেই এই কথা শুনে হাসতে হাসতে ঢলে পড়লো।


মনে মনে মিসেস তারিন ভাবলেন

আজ যদি মুকিত আর মানুষটা বেঁচে থাকতো তাহলে কতো খুশি হতো মুহিত আর নামিরার খুশিতে।

সব খুশিতেই পরিপূর্ণতা থাকে না।কিছু কিছু খুশি অপূর্ণতাই থেকে যায়।বলেই গোপনে সুখের অশ্রু মুছলেন।


          ――――――   সমাপ্ত   ――――――

গল্প তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল পর্ব ৩৩

 তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল

পর্ব_৩৩

সারিকা_হোসাইন®


★★★★

সেনাকুঞ্জ,ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট


সূর্য দিগন্তে হারিয়ে গোধূলির রূপ ধারণ করেছে।উত্তরীয় হাওয়ায় সেনাকুঞ্জের সারিবদ্ধ সাইকাসের চিরল পাতা গুলো হেলেদুলে নড়ছে  থেকে থেকে।

একটু অন্ধকার ছড়াতেই কনভেনশন সেন্টার সহ আশে পাশে জ্বলে উঠলো হরেক রঙের মরিচ বাতি।

কনভেনশন সেন্টার এর ভেতরে বড় বড় ঝাড়বাতি দিনের আলোর মতো দ্যুতি ছড়াচ্ছে।

সকল আত্মীয়স্বজন, বড় বড় আর্মি অফিসার এবং নব্য নির্বাচিত মন্ত্রীকে দাওয়াত করা হয়েছে এই স্বর্ণালী সন্ধ্যায়।


ছোট ছোট বাচ্চা গুলো এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে গুছানো চেয়ার টেবিল গুলো বার বার এলোমেলো করে ফেলছে।


মুহিত বর বেশে তৈরি হয়ে চলে এসেছে অনেক আগেই।


স্বর্গের সাজ ই নাকি এখনো কমপ্লিট হয়নি তাই সে পৌঁছায় নি।


মুহিত আজ পড়েছে   ডার্ক নেভি ব্লু রঙের "ক্লাস A"  সিরেমনিয়াল  ইউনিফর্ম।যার সাথে পরিধান করেছে এযাবৎ কালে তার অর্জিত সকল ব্যাজেস,মেডেল এবং  বিভিন্ন ডেকোরাম জিনিস।

হাতে নেভি ফোর্স এর ব্ল্যাক ফিতার ঘড়ি।পায়ে কালো শো, মাথায় নিজের রেঙ্ক অনুযায়ী  মিলিটারি পিকড ক্যাপ।


মুহিতের কলিগস,সৌম্য আদ্রিয়ান পড়েছে  সেইম ড্রেস শুধু তারা হাতে পড়েছে সাদা হাত মোজা।

মুহিত পায়চারি করছে আর ভাবছে  কখন স্বর্গ বধূবেশে তার সামনে এসে দাঁড়াবে আর মুহিত দুই চক্ষু ভরে সেই সৌন্দর্য সুধা উপভোগ করবে!


মুহিত  বাইরে বেরিয়ে একটি  বিশালাকার কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছের নিচে এসে দাঁড়ালো।

মিনিট পাঁচেক পরেই স্বর্গের দামি গাড়িটি সেনাকুঞ্জের গেটের সামনে দেখা  গেলো।

গাড়িটি ভেতরে ঢুকতেই মুহিতকে সামনে দেখে ড্রাইভার গাড়ি থামালো।

মুহিত দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিলো স্বর্গের পানে।

স্বর্গ মুহিতের  বাড়িয়ে দেয়া  হাত শক্ত করে ধরে বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে।

নববধূর সাজে সজ্জিত স্বর্গকে দেখে মুখের ভাষা হারালো মুহিত।


মোটেও তার প্রিয়তমা কে কোনো সাধারণ মানবী ঠেকছে না।

প্রত্যেক প্রেমিক পুরুষের কাছে তার স্ত্রী হুর তুল্য।

বিয়ের সাজে মেয়েদের যেই সৌন্দর্য ফুটে উঠে সেই সৌন্দর্য আর কখনোই চোখে পড়েনা।

অন্যরকম এক মাধুর্য ভেসে উঠে সর্বাঙ্গে।


স্বর্গ মুহিতের কথা অনুযায়ী গায়ে জড়িয়েছে ধবধবে সাদা জামদানি যার জমিন,পাড় আর আঁচল সোনালী জরি সুতায় কাজ করা।সেই পাড়ের সাথে মিলিয়ে পড়েছে ব্রাইডাল ওড়না।সাথে ম্যাচিং বড়  সিতা হার,চকার,কানের দুল ,টিকলি।

মুখে খুবই হালকা মেকআপের ছোয়া।চোখে সুরমা রঙা আইশ্যাডো পেলেটের নিখুঁত ছোয়া,গাঢ়  মোটা করে দেয়া হয়েছে কালো কাজল।ঠোঁটে ন্যুড কালার এর লিপস্টিক।চুলগুলো সুন্দর করে খোঁপা করে তাতে দেয়া হয়েছে বেলিফুলের গাজরা।


মুহিত মুগ্ধ নয়নে স্বর্গকে খুটিয়ে দেখে বলো উঠলো


"খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে স্বর্গ।একদম স্বর্গের হুরদের মতো।

যদিও আমি হুর দেখিনি।কিন্তু পবিত্র কোরআনে তাদের বর্ননা রয়েছে।সেই বর্ননা অনুযায়ী তোমাকে হুর ই লাগছে"


স্বর্গ অমায়িক হাসলো।

মুহিত আদুরে স্বরে বলে উঠলো

"চলো সবাই অপেক্ষা করছে।

মুহিতের হাত ধরে স্বর্গ সিরামিক ইটের গাঁথুনি করা  নিখুঁত রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললো কনভেনশন সেন্টার এর দিকে।


স্বর্গ আর মুহিত কে দেখে সকলেই দাঁড়িয়ে গেলো।

মুহিতের সহযোগী রা তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকা তলোয়ার দিয়ে হবু নব দম্পতি কে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে টানেল বানালো।

সেই টানেল এর ভেতর দিয়ে ধীর গতিতে মুহিতের কুনুই জড়িয়ে হেটে চললো স্বর্গ ।


টানেল পার হতেই মিসেস তারিন আর তনুজা স্বর্গকে ধরে স্টেজে তুলে সোফায় বসিয়ে দিলেন।

নাফিজ মাহমুদ মুহিত কে নিয়ে স্টেজে উঠলেন।

একটু পর কাজী এলো।


নাফিজ মাহমুদ মুহিত আর মিসেস তারিনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো 

"মেয়ে বিয়ে হয়ে স্বামী সংসারে চলে যাচ্ছে,আমার খারাপ লাগার কথা,আদরের মেয়ের বিদায়ে কান্না পাবার কথা"

কিন্তু তোমরা বিশ্বাস করো আমার একটুও খারাপ বা কষ্ট কিছুই লাগছে না।


"আমার চাইতেও মুহিত ওর ভালো খেয়াল রাখবে এটা আমার বিশ্বাস বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন নাফিজ মাহমুদ।


তনুজা আচলের সহিত নিজের চোখের জ্বল মুছে বলে উঠলো আমার মেয়েটাকে আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি,ওর ভুল ত্রুটি গুলো নামিরা ভেবে ক্ষমা করে দিবেন।


সুখ, স্বর্গের সামনে এসে হাটু মুড়ে বসে স্বর্গের কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।

স্বর্গ সুখের মাথায় হাত বুলিয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো

"আমি শশুর বাড়ী থেকে প্রতিদিন এসে এসে তোর সাথে মারামারি ঝগড়া সব করবো ।তুই শুধু দেখিস।


"চোখের জল মুছে সুখ বলে উঠলো

"আমি তোর ঝগড়া আর মার খাবার জন্য অপেক্ষা করবো আপুই।


মিসেস তারিন তনুজা আর নাফিজ কে শান্ত করে বললেন তোরা এভাবে কাঁদলে মেয়েটাও খুব কাঁদবে।

স্বর্গ যদি তোদের সাথেই থাকতে চায় থাকবে,দরকার পড়লে মুহিত মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যাবে।


আর আমি কি আমার আম্মার কোনো অযত্ন অবহেলা করতে পারবো রে পাগল!


মুহিত বলে উঠলো 

"স্যার আপনি কোনো চিন্তা করবেন না,আপনার মেয়েকে আমার সম্পর্কে কখনো কোনো অভিযোগ দেয়ার সুযোগ ও আমি দেবোনা।

আমি তাকে নিজের থেকেও বেশি যত্নে রাখবো।

ওয়াদা রইলো আপনার কাছে আমার।

মিসেস তারিন তাড়া দেখিয়ে বলে উঠলেন―


"চল বিয়েটা পড়িয়ে চার হাত এক করে দেই।সময় যে চলে যাচ্ছে।।গেস্ট দের খাবার খাইয়ে বিদেয় করতে হবে।

এখনো অনেক কাজ বাকী পড়ে আছে।"


সকলেই চোখের জল মুছে মুহিত কে আর স্বর্গকে বিয়ে পড়ানোর আসরে নিয়ে গেলো।


একটি সুন্দর কার্পেট বিছানো যার চারপাশে তাজা ফুলের বেড়া।সুগন্ধি ফুলের গন্ধে ম ম করছে চারিপাশ।

স্বর্গের পাশে বসে গেলো তার বান্ধবী রা আর মুহিতের পাশে তার সকল সহকর্মী, সৌম্য,মেজর আদ্রিয়ান।


মাঝখানে দেয়া হলো সাদা কার্টেন এর দেয়াল।


কাজী সকল পেপার্স রেডি করে মুহিতের দিকে এগিয়ে দিলো।

মুহিত বিসমিল্লাহ বলে ঘস ঘস করে সই করে বলে উঠলো

"আলহামদুলিল্লাহ কবুল"


মুহিতের সহকর্মীরা হাত তালি দিয়ে সমস্বরে বলে উঠলো

"আলহামদুলিল্লাহ।

এবার স্বর্গের পানে এগিয়ে দেয়া হলো খাতা কলম।


কলম হাতে নিতেই স্বর্গের চোখ বেয়ে অঝোরে বর্ষণ হতে লাগলো।

আজ থেকে সে অন্যের অধীনে চলে যাবে।বাবার বাড়িতে এর পর থেকে সে মেহমান হিসেবে গণ্য হবে।

মেয়ে থেকে মেহমান হওয়া একটি মেয়ের জন্য কতোটা কষ্টের তা কেবল সেই মেয়েটি ই জানে।

যদিও স্বামী হিসেবে মুহিতের জুড়ি মেলা ভার।


পিউ স্বর্গকে পিঠে হাত বুলিয়ে রিল্যাক্স করে বললো

"দেরি হয়ে যাচ্ছে

প্লিজ সই টা করে দে।

কাঁপা কাঁপা হাতে স্বর্গ সই করে ভেজা  রিনরিনে কন্ঠে জবাব দিলো


"আলহামদুলিল্লাহ, কবুল।


সমস্বরে সবাই আনন্দ উল্লাস এ চিৎকার করে উঠলো।

তুলে দেয়া হলো সামনের কার্টেন।

স্বর্গের হাতে চুমু খেয়ে হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো মুহিত।


নব্য তরুণ আর্মি অফিসার রা বিভিন্ন নাচ গান করছে।মেয়েরাও সাথে পাল্লা দিয়ে অংশগ্রহণ করছে।

কোনো ঝামেলা ছাড়াই আনন্দ বেদনা মিলিয়ে শেষ হয়ে গেলো মুহিত আর স্বর্গের বিয়ের অনুষ্ঠান।


মুহিত আর স্বর্গকে গাড়িতে তুলে দেবার সময় নাফিজ মাহমুদ মুহিতের হাত জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলেন।


"মুহিত তুমি দেখেছো আমি কিভাবে ওদের বড় করেছি,আমার মেয়েটা দিনে দিনে বড্ড অবুঝ হয়ে যাচ্ছে।আমি তোমাকে অনুরোধ করে বলছি কখনো ওকে বকা দিয়ে কিছু বলো না।ওর মনটা খুব নরম।

তুমি একটু বুঝিয়ে বললেই ও বুঝে যাবে।

তনুজা স্বর্গকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলেন।

আজ থেকে ঘুম ভাঙলেই তিনি আর তার মেয়েকে দেখতে পাবেন না।

খাবার টেবিলের চেয়ার টা ফাঁকা পরে থাকবে।

কেউ আর বলবে না মাম্মা তাড়াতাড়ি খাবার দাও দেরি হয়ে যাচ্ছে।


স্বর্গ তনুজা আর সুখ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে।

সকলের কান্না দেখে মুহিতের ও চোখে পানি চলে আসলো।

মেজর আদ্রিয়ান আর সৌম্য নাফিজ মাহমুদ কে বুঝিয়ে শান্ত করলেন।

নামিরা আর পিউ তনুজা কে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।

মিসেস তারিন সুখ কে বলল

"আব্বা তুমি চলো ফুপির সাথে,স্বর্গের ভালো লাগবে।

সুখ চোখের জল মুছে মিসেস তারিনের গাড়িতে গিয়ে উঠলো।


প্রথমে  গাড়িতে করে  বড় বড় আর্মি অফিসার রা বেরিয়ে গেলো।

এর পর মিসেস তারিনের গাড়ি বেরিয়ে গেলো।

মুহিত আর স্বর্গের গাড়ি স্টার্ট দিলো সৌম্য।


মেজর আদ্রিয়ান নাফিজ মাহমুদ আর তনুজাকে সেনা নিবাস পৌঁছে দিবে বলে গাড়িতে উঠতে বললো।


ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে গেলো সেনাকুঞ্জ।


――――

ঘড়িতে রাত বারোটা বেজে ছিঁচল্লিশ মিনিট।

স্বর্গ তার গহনা খুলে একে একে শাড়ির পিন খুলছে।

খুট করে খুলে গেলো দরজা।

মুহিত কক্ষে প্রবেশ করলো।


মুহিত স্বর্গের কানের কাছে গিয়ে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো 


"আমি হেল্প করবো?"


স্বর্গ মুখ টিপে হেসে লাজুক ভঙ্গিতে বললো 

"লাগবে না তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।"


মুহিত ড্রেস চেঞ্জ করে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।


স্বর্গ কোনো মতে শাড়ি চেঞ্জ করে একটা টিশার্ট আর লোজ প্লাজু প্যান্ট পরে নিজের ব্যাগ খুললো।


এক এক করে নিজের সকল জিনিস বের করে কাবার্ড খুললো।

খুলেই শব্দ করে হেসে উঠলো।


কাবার্ড এর একটা সাইড এর পুরোটা খালি

সেখানে বড় বড় করে মোটা কাগজে লিখা 

"এখানে আমার বউয়ের জিনিস থাকবে।"


স্বর্গ বলে উঠলো" পাগল একটা".


  বলে আস্তে আস্তে  সব গোছালো।

মিনিট পনেরো পরেই মুহিত বেরিয়ে এলো।

স্বর্গ মুহিতের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো


মুহিত হাটু সমান সাদা একটি টাওয়েল পরেই বের হয়ে গিয়েছে।

তার ধবধবে ফর্সা শরীরে পানির ফোটা গুলো চকচকে হিরের মতো লাগছে।কপালে লেপ্টে আছে কিছু চুল যাদের আগায় শিশিরের মতো বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।

হাত দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিতে খুব ইচ্ছে করছে স্বর্গের।


ভাবনার মাঝে কখন যে মুহিত তার একদম কাছে চলে এসেছে সে টেরই পায়নি।

মুহিত নেশাক্ত কন্ঠে ডেকে উঠলো

"স্বর্গ!"


স্বর্গের ধ্যান ভাঙতেই মুহিত চুমু খেতে মুখ বাড়িয়ে দিলো স্বর্গের ঠোঁটের দিকে।

স্বর্গ মুহিত কে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে  হাতে থাকা মেরুন রঙের সুতি শাড়ি আর টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে দৌড়ে পালালো।


মুহিত চিল্লিয়ে বলে উঠলো

"একটু পরে  এই বন্ধ ঘরে আমার কাছেই আসতে হবে।কোথাও পালাতে পারবে না সুন্দরী।

বলেই হু হা হা করে ভিলেনের মতো হেসে উঠলো।


মেকআপ ক্লিন করে,সেটিং স্প্রে করা চুলের জট ছাড়িয়ে   ভালো ভাবে শাওয়ার নিয়ে আধ ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বের হলো।


ইতোমধ্যে নামিরা একটা ট্রেতে করে কিছু ফলমূল আর গ্লাসে করে দুধ দিয়ে গিয়েছে।সাথে দুটো জায়নামাজ।


স্বর্গ বের হতেই মুহিত বললো ওযু করে এসো আমি অপেক্ষা করছি নামাজ আদায় করতে হবে।


বাধ্য মেয়ের মতো স্বর্গ ওযু করে এসে মুহিতের পিছে দাঁড়ালো।


দুই রাকাত সালাত আদায় করে নিজেদের দাম্পত্য জীবন যাতে ঝামেলা মুক্ত,সুখের হয়, সেই দোয়া করলো।

মুহিত রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাত তুলে বললো

"মৃত্যুর দিন পর্যন্ত যেনো স্বর্গ তার থেকে কোনো আঘাত না পায়,মুহিত কে নিয়ে স্বর্গ যাতে কোনো অভিযোগ অনুযোগ না করতে পারে।


দুজনেই নামাজ শেষ করে উঠে দাঁড়ালো।


দেয়ালে থাকা সুইচবোর্ড হাতড়ে কক্ষের বাতি নিভিয়ে দিলো স্বর্গ।


আকাশে আজ  পূর্ণ থালার মতো চাঁদটি ঝকঝকে আলো ছড়াচ্ছে।

মুহিতের দক্ষিণ পাশের জানালার ফাক গলিয়ে সেই চাঁদের আলো ঘরময় হুটোপুটি খাচ্ছে।


সেই চাঁদের আলোতে স্বর্গকে অত্যাধিক মোহনীয় লাগছে মুহিতের কাছে।

পেছন থেকে মুহিত স্বর্গকে জড়িয়ে ধরলো।

কেঁপে উঠলো স্বর্গ।

পিঠের ভেজা চুল সরিয়ে ঘাড়ে চুমু খেয়ে পকেট থেকে একটি ডায়মন্ড এর পেনডেন্ট বের করে স্বর্গের গলায় পরিয়ে দিলো।


"আমার পক্ষ থেকে এই পবিত্র রাতে তোমার জন্য ছোট একটি উপহার।

"এর আগের বার কিছুই দিতে পারিনি তোমাকে,তার জন্য তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী"


স্বর্গ নিজেকে মুহিতের দিকে ঘুরিয়ে মুহিতের গলা জড়িয়ে বলে উঠলো

"আমার সোনা দানা হিরে কিছুই চাইনা।আমি শুধু তোমাকে সবসময় ,সব ভাবে ,প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে  আমার পাশে চাই।


"বলো থাকবে??"


মুহিত স্বর্গের কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠলো

"থাকবো"

স্বর্গ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মুহিত কে।

মুহিত তার শক্তিশালী দুই বাহুর সাহায্যে এমন ভাবে চেপে ধরলো স্বর্গকে তার মনে হচ্ছে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতে পারলে শান্তি পাওয়া যেতো।


আবেশে,শান্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেললো স্বর্গ।মুহিতের বুকের ধারকান স্বর্গকে মাতাল করে দিচ্ছে।

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলো হৃদযন্ত্রের গতি।

নেশাক্ত চোখে স্বর্গের পানে তাকালো মুহিত।


স্বর্গ মুহিতের পানে দৃষ্টি দিয়ে পড়ে ফেললো মুহিতের চোখের ভাষা।


মুহিত তার ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরলো স্বর্গের তিরতির করে কাঁপা ঠোঁটে।


স্বর্গ পরম ভালোবাসায় বদ্ধ উন্মাদের ন্যায় আকড়ে ধরলো মুহিতের ঠোঁট।

স্বর্গকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ের শার্ট এক টানে খুলে ফেললো মুহিত।


চাঁদের আবছা আলোতে হাতের নরম আঙ্গুলি দিয়ে মুহিতের কান থেকে গাল পর্যন্ত স্লাইড করলো স্বর্গ।

সহসাই স্বর্গের মেদহীন পেটে মুখ ডুবালো মুহিত।


শিউরে উঠলো স্বর্গ।

হাতের বিচরণ হলো অবাধ্য থেকে অবাধ্যতর


দুনিয়াবি সকল চিন্তাভাবনা  ভুলে দুজন মানব মানবী হারিয়ে গেলো ভালোবাসার পবিত্র সুধা আস্বাদনে।


চলবে।