জোড় করে বিয়ে
পর্বঃ২
#আবির হাসান নিলয়
পরিক্ষার প্রায় ২ঘন্টা হয়ে এসেছে।কিন্তু এর মাঝে
মেয়েটি একবারো কিছু জিজ্ঞাস বা শুনে নেই
নি।হয়তো ভালো ছাত্রী। রাফির কিছু বন্ধু
আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কারণ তারা সবাই আমাকে চেনে।
লাস্ট প্রশ্নটা লিখতে যাবো কিন্তু হঠাৎ করে
মেয়েটির দিকে চোখ পড়লো।লেখা বাদ দিয়ে
মন খারাপ করে বসে আছে।আমি আবার কি
করলাম। আমি তো কিছু করিনি তাহলে
পরিক্ষায় লেখা বাদ দিয়ে বসে থাকার কারন কি।
কিছু বলতে যাবো তার আগেই কলমের হেট
কামরাতে লাগলো।মেয়েটির এমন অবস্থা দেখে
না হেসে পারলাম না।ইন্টার ২য় বর্ষের মেয়ে
হয়েও বাচ্চাদের মতো করছে।এতোটাই মায়াবী
লাগছে মন চাইছে পরিক্ষা রেখে দিয়ে মেয়েটির
দিকে তাকিয়ে থাকি।মেয়েটির মায়াবী রুপ
দেখে যখন আমি ভাবনার জগতে চলে গেছি।
ঠিক তখন মেয়েটির কথা শুনে ভাবনার
জগৎ থেকে বের হলাম।
মেয়েঃহাসছেন কেন?
আমিঃতেমন কিছুই না।মন চাইলো তাই হাসলাম।
মেয়েঃ......(কিছু না বলে মাথা নিচু করলো)
আমিঃকত মার্ক কমপ্লিট করছো।
মেয়েঃ৬৫...
আমিঃতাহলে বসে আছো কেন।লেখো তাড়াতাড়ি
মেয়েঃআর মনে পরছেনা।আপনি যদি।ধমক
না দিতেন তাহলে আরো করতে পারতাম।
আল্লাহ গো এই মেয়ে কি বলে।আমার জন্য নাকি
সে লিখতে পারছে না।তারপর হুট করে মনে
পরে গেলো মেয়েটিকে বলেছিলাম ৯৫ মার্ক
পাইয়ে দিবো।এতো কিছু না ভেবে মেয়েটির
খাতা নিয়ে নিলাম।
মেয়েঃআরে আপনি আমার খাতা নিচ্ছেন কেন?
আমিঃলিখে দিবো তাই।
মেয়েঃজীবনেও না।আমি আপনাকে আমার খাতা
দিবো না দিচ্ছি না।
স্যারঃকি হচ্ছে এসব চুপ করো।
আমিঃসরি স্যার।তুমি যদি এখন খাতায় লিখতে
না দাও তাহলে আবার ধমক দিবো।
আমার কথা শুনে মেয়েটি চুপ হয়ে গেলো।
আমিঃআমার আর ১০মার্ক আছে।এইটা তুমি
কমপ্লিট করে দাও।আমি তোমাকে সব বলে
দিচ্ছি কেমন ভাবে কি করতে হবে।ঠিক আছে?
মেয়েটিঃজ্বি(মাথা নিচু করে)
আমি আর কথা না বাড়িয়ে লেখা শুরু করলাম।
লিখতে লিখতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে।আর
আপনারা ভাবছেন আমি এতো লিখছি
কিভাবে।সেটার কারণ হলো এর আগেও এই
পরিক্ষা দিছি সাথে আমি ইন্টার থেকে A+পেয়েছি।
যদিও আমি একটু ফাজিল কিন্তু পড়াশোনা করি।
পরিক্ষা প্রায় শেষ।ওয়ার্নিং বেলটাও পরে গেছে।
হঠাৎ মেয়েটি আমাকে বলল....
মেয়েঃআর কত লিখবেন। সময় প্রায় শেষ আমার
খাতা আমাকে দিয়ে দিন।
আমি আর কোনো কথা না বলে তাকে খাতা
দিয়ে দিলাম।কারণ আমার ৩০ মার্ক করা শেষ।
যেটা ওয়াদা দিছিলাম সেটা রেখেছি।
মেয়েঃহনুমান(আস্তে করে বলল)
আমি;কিছু বললে আমাকে।
মেয়েঃকই।না তো।
আমিঃওহ ঠিক আছে।
পরিক্ষা শেষ। বাইরে এসে ইকবাল ভাই(স্যার)এর সাথে কথা বলছি এমন সময়
মেয়েটি আমার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো।
আমি আর ইকবাল ভাইয়ের সাথে কথা না
বলে মেয়েটির পিছু নিলাম।মেয়েটি যে একটু
ডেকে কথা বলব সেটাও হয়ে ওঠেনি। কারণ
মেয়েটির নাম এখনো জানিনা।
আমিঃএই মেয়ে দাঁড়াও।
মেয়েঃ........(পিছু অবধি তাকালো না)
আমিঃকাছে গিয়ে..এই যে মিস কানা। এতোক্ষন
ধরে ডাকছি কথা কানে যায় না।
মেয়েঃআমি আপনার কথা শুনবো কেন?
আমিঃআমি ডাকছি তাই
মেয়েঃকে আপনি
আমিঃতোমার হবু স্বামী
মেয়েঃকিহহহ😡😡(রেগে গিয়ে)
আমিঃআমার সাথে চলো।
মেয়েঃনা আপনার সাথে আমি কোথাও যাবোনা।
আমিঃবলছি না চলো।
মেয়েঃবললাম তো যাবো না।
আমিঃঠাসস আর একবার না বললে আবার দিবো।
থাপ্পড় খাওয়ার পরে মেয়েটি গালে হাত দিয়ে
মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে।সাথে কিছু
ছেলে মেয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
যেটা দেখে আমার খুব বিরক্তি লাগছিলো।তাই
সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললামঃ
আমিঃযদি কারো থাপ্পড় খাওয়ার ইচ্ছা না থাকে
তাহলে সবাই এখান থেকে চলে যা।না হলে
সবাইকে পিটাবো।
আমার কথা শুনে সবাই চলে যেতে লাগলো।
মেয়েটির দিকে তাকাতেই মনের ভিতরে চিন
চিন ব্যথা অনুভব করলাম।কারণ মেয়েটি কান্না
করছে। তার থেকেও বড় কথা মেয়েটির গাল লাল হয়ে গেছে।যা দেখতে খুব খারাপ লাগছিলো।
মেয়েটির চশমাটা খুলে চোখের জল মুছে দিয়ে
বললামঃ
আমিঃআমি আসলে মারতে চাইনি।তুমি যদি
আমার কথাটি শুনতে তাহলে মারতাম না।
মেয়েটিঃ(নিশ্চুপ)
আমিঃএখন চলো.....
তারপর মেয়েটিকে নিয়ে গাড়িতে উঠালাম।
আমিঃআচ্ছা তোমার নাম কি?
মেয়েঃজান্নাতুল মাওয়া।ডাক নাম জান্নাত।
আমিঃবাহ সুন্দর নাম।তোমার বাসা কোথায়।
জান্নাতঃকলেজের উত্তর পাশে যে একটা ফ্লাট আছে সেটা আমাদের।
আমিঃতোমরা একাই থাকো?
মেয়েঃনা।নিচ তালায় ভাড়াটে থাকে।
আমিঃতোমার বাসায় কে কে আছে?
জান্নাতঃআব্বু,আম্মু, ছোট বোন আর আমি।
আমিঃওয়াও আমার তাহলে একটা শালিকাও
আছে।ভালোই হবে(রাগানোর জন্য বললাম)
মেয়েঃ..(আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে
কিছু না বলেই মাথা নিচু করে নিলো)
তাই আমিও আর কিছু বললাম না।আবার যদি
মন খারাপ করে।সেই ভয়ে।
নানু বাসায় আসার পরে....
আমিঃম্যাডাম নামুন।এসে গেছি।
জান্নাত কিছু না বলে নেমে গেলো।হয়তো ভাবছে
যদি কিছু জিজ্ঞাস করে আবার যদি মারি সেই
ভয় পেয়ে।ওকে দেখতে কিছুটা ভীতু দেখাচ্ছে।
কিন্তু ওর এই মায়াবী রুপ সাথে মুখে ভয়ের ছায়া যা আমাকে বার বার ওর মায়ায় জড়িয়ে
যেতে সাহায্য করছে।জানিনা ওর মধ্যে কি প্রভু
কি এমন লুকিয়ে দিছে।কিন্তু আমি খুঁজে পাচ্ছি
না।জান্নাত আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই বললাম...
আমিঃচলো আমার সাথে।
তারপর জান্নাতকে সাথে নিয়ে নানু বাড়ীর ভিতরে
ডুকলাম।আমাকে দেখেই রোহান(রাফির ছোট ভাই।ক্লাস থ্রি'তে পড়ে) বলল...
রোহানঃভাইয়া এই আপুটা কে?
আমিঃতোর জানতে হবে না। চল আমার সাথে।
রোহানঃকোথায় ভাইয়া...
আমিঃরাফির রুমে।
রোহানঃভাইয়াকে তো হাসপিতালে নেয়া হয়েছে।
আমিঃকেনো...
রোহানঃআবার অসুস্থ হয়েছিলো।তাই ডক্টর আঙ্কেল
হাসপিতালে নিয়ে যেতে বলছিলো।কিন্তু কোন
হাসপিতালে নেয়ে হয়েছে আমি যানিনা।
আমিঃঠিক আছে তুই থাক আমরা গেলাম।
বলে জান্নাতকে সাথে নিয়ে গাড়িতে উঠালাম।
আম্মুকে ফোন দিয়ে কোন হাসপিতালে নেয়া
হয়েছে সেটা যেনে।আমি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ
করতা লাগলাম।প্রায় ৩০মিনিট পর হাসপিতালে
এসে পোঁছালাম। দেখলাম আম্মু,মামি আর মামা
বাইরে বসে আছে।আমি তাদের কাছে যেতেই
আম্মু জান্নাতকে দেখে বললঃ
আম্মুঃনিলয় এই মেয়েটা কে?
আমিঃআম্মু ও জান্নাত রাফির সাথে পরিক্ষা দিচ্ছে।
আর জান্নাত ইনি হলো আমার আম্মু। (কানের
কাছে গিয়ে বললাম)সাথে তোমার হবু শ্বাশুরী মা।
কথাটা শোনার পর জান্নাত অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে আমার
দিকে তাকালো।সেদিকে আমি।না দেখে মামিকে
বললামঃরাফির কি অবস্থা
মামিঃএখন একটু ভালো।
আমিঃঠিক আছে। তোমরা বাইরে থাকো আমি
আর জান্নাত ভেতর থেকে আসছি।
জান্নাতকে সাথে নিয়ে রাফির বেডের কাছে
গিয়ে বললাম....
আমিঃএকে চেনো ডিয়ার হবু বউ।
জান্নাতঃখবরদার আমাকে আর হবু বউ বলবেন
না।বললে কিন্তু আমি আত্মহত্যা করবো।
আমিঃমাথায় হাত দিয়ে... পাগলি নাকি তুমি?
জান্নাতঃসেটা যাই বলেন।
আমিঃহয়েছে।এখন একে দেখো।রাফিকে দেখিয়ে।
জান্নাতঃহুম চিনি।ইনি।রাফি যে আমার সাথে...
(জান্নাতকে থামিয়ে দিয়ে)
আমিঃএখন চলো।তোমার বাসা থেকে আবার চিন্তা করবে।
জান্নাতকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।বাইরে চলে আসলাম।বাইরে এসে আম্মু মামি আর
মামার সাথে কথা বলে জান্নাতকে নিয়ে গাড়িতে
উঠলাম।কিন্তু জান্নাত কেমন ভাবে যেনো
তাকিয়ে আছে।হয়তো কিছু বলতে চাইছে।
আমিঃকিছু বলবে.?
জান্নাতঃযদি বকা আর না মারেন তাহলে বলতে পারি
আমিঃঠিক আছে বলো।কিছু বলবো না।
জান্নাতঃওনার কি।হয়েছে।
আমিঃএকটু মানসিকভাবে অসুস্থ।সেই জন্য
ওর পরিবর্তে আমি পরিক্ষা দিচ্ছি।যেনো
রাফির একটা বছর নষ্ট না হয়।
জান্নাতঃওহ।
জান্নাতের সাথে কথা বলতে বলতে জান্নাতের
বাসার সামনে আসতেই আমাকে থামাতে বলল।
আমি এক পাশে থামাতেই জান্নাত নেমে।বাসায়
চলে যেতে লাগলো...
আমিঃকেউ কাউকে সাহায্য করলে ধন্যবাদ বলতে হয়।
মেয়েঃআমি বলি না।বলেই দৌড়ে বাসার ভিতরে
চলে গেলো।আমিও আর সেখানে না থেকে বাসার
উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।বাসায় এসে মামাকে ফোন
দিয়ে বললাম রাফির সব।গুলো পরিক্ষা আমিই
দিবো।রাফির অবস্থার কথা চিন্তা করে মামাও
আর না করলো না।
চলবে.........
0 Comments:
Post a Comment