#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ১২
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরলো মেহমেদ৷ বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ১বিরা পান ও পানের মশলার প্যাকেট নিয়ে। দরজার কলিং বেল মুনিবা বেগম দরজা খুললেন। তখন সবে মাত্র মেহমেদের বাবা ওয়াসিম চৌধুরী খাওয়া শেষ করে উঠেছে। মুরাদ তখনও খাচ্ছে ডাইনিং এ। মুনিবা বেগম ছেলের হাতে পান দেখেই বুঝতে পেরেছে, ছেলে তার কিছু একটা কান্ড ঘটিয়েছে। এখন এই ছেলে কি চেয়ে বসবে সেই ভেবেই দিশেহারা হচ্ছে মুনিবা বেগম। মেহমেদ তার মায়ের হাতে পান জর্দা দিয়ে বলল, খিদে পেয়েছে! খাবার দেও আম্মু।
আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।মেহমেদ কথাটা বলে আর দাড়ালো না,চলে গেলো নিজ কক্ষে। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ যখন আসলো তখন মুনিবা বেগম শুধু বসে আছেন। মেহমেদ খাবার টেবিলে বসতেই মুনিবা বেগম তাকে শুধালো, এভাবে হুটহাট আসতে তোমায় কতবার বারণ করেছি মেহমেদ।একবার ফোন করলেও তো পারতে। দেখো! আজ তোমার সব অপছন্দের রান্না আমি করেছি। আমি জানলে তোমার পছন্দের কিছুও রান্না করতাম।
মেহমেদ হাসলো মায়ের কথায়, থালাটা নিজের কাছে টেনে মাকে বলল,দাও যা রেধেছ।কোনো সমস্যা নাই, তোমার সাথে জরুরি আলোচনা আছে।
মুনিবা অবাক হলেন, যে ছেলে অপছন্দের রান্না হলে ফ্লাট বাসা কাপিয়ে তুলতো, সেই ছেলে আজ মিনি বিড়াল হয়েছে।
আশ্চর্য!
ছেলের নিকটে গিয়ে গালে, ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দেখলো, নাহ! জ্বর আসেনি। মুনিবা স্বহসা বলে উঠল, মেহমেদ আব্বু তুমি ঠিক আছো তো?
মেহমেদ হেসেই জবাব দিলো, একদম ঠিক আছি।
অতঃপর মেহমেদ খাবার খেয়ে উঠল এবং চলে গেলো নিজ কক্ষে।
.
.
ওদিকে ওয়াসিম চৌধুরী ও মুরাদ বসার ঘরে বসে টিবি দেখছেন। সাম্প্রতিক দেশের হালচাল নিয়ে বেশ আলাপ আলোচনা হচ্ছে তাদের মাঝে। তার মাঝেই মুনিবা কফি নিয়ে দিয়ে আসলো এবং নিজের কফির মগ সমেত চলে গেলো মেহমেদের কক্ষে। মায়ের হাত থেকে কফিটা নিয়ে টেবিলে রাখলো মেহমেদ। তারপর মুনিবা বেগমকে টেনেই বিছানায় বসালেন। অতঃপর মায়ের উড়ুতে মাথা দিয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো কোলে মাথা গুজলো মেহমেদ, আদো আদো কন্ঠে বলতে লাগলো মুনিবাকে, আম্মু! দেখেছো তোমায় আমি কতো ভালোবাসি। আজ বাজারে খুব সুন্দর পান পেয়েছি তাই তোমার জন্য নিয়ে আসলাম। তুমি খুশি হয়েছ?
মুনিবা মেহমেদের মাথায় হাত বুলিয়ে জবাব দিলো, ঘুষ দিচ্ছ মেহমেদ?কি চাই সেটা বল!তুমি তো আমায় পানই খেতে দেও না, তাহলে?হু হু বলো বলো!
মেহমেদ উঠে বসল তার মায়ের সামনে, চোখ নিচু করেই বলে উঠল, ইমতিয়াজ ভাইয়ের শালিকে আমার পছন্দ, আমার বউ করে তুমি এনে দাও না মা হুরিজিয়ানকে?
ছেলের মুখে এমন কথা শুনে মুনিবা বেগম অবাক হলেন। মেহমেদকে শুধালেন, হুরিজিয়ানের ছবি আছে তোমার কাছে মেহমেদ?
অপ্রত্যাশিত কথা মায়ের মুখে শুনে অবাকের চরম সীমা যেনো অতিক্রম করলো মেহমেদ।সে তো মনে করেছিল, তার মা অন্যকিছু বলবে।চারপাশ হাতড়ে মোবাইলটা হাতে নিলো মেহমেদ। তারপর হুরের একটা শাড়ি পড়া ছবি দেখালো তার মাকে। এতো দিন মুনিবা বেগম শুধু শুনেছে ইমতিয়াজের শালির কথা। আজ ছবিতে দেখে নিলো মুনিবা বেগম। মনে মনেই বেশ হাসে ভাবতে লাগলো , তাহলে এই মেয়েই তার ছেলেকে মিনি বিড়াল বানালো। এখন তাই বাঘের গর্জন না করে ম্যাও ম্যাও করছে।
মুনিবা বেগম একটু বাক ফিরিয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল, তুমি কি মনে করেছ মেহমেদ?১বিরা পান ঘুষ দিলেই আমি মেনে নিবো। কখনোই না। তুমি চাইলে বাড়িয়ে ২ বিরা পান নিয়ে আসলে একটা চিন্তা ভাবনা করতাম, তোমার বাবাকে বোঝানোর একটা ব্যাপার আছে।
না মেহমেদ! আমি সামনে আর এগোতে পারছিনা।
তোমার মতো বুদ্ধিমান ছেলের কাছ থেকে এটা আসা করিনি আমি!
মুনিবা বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো। মোড় ফিরে যেতে নিলেই মেহমেদ হাত পাকড়ে টেনে ধরলো তার মায়ের এবং বলল, দেব! দেব!
যত পান তোমার লাগে দিব। তার আগে বল বউকে তুমি এনে দিবে।
মুনিবা মেহমেদের অবয়বে হাত বুলিয়ে বলল, কেন দেব না! অবশ্যই দিবো।
অনেক রাত হয়েছে। এখন ঘুমাও। সকালে এ বিষয় নিয়ে খোলাখোলি আলোচনা করবো।
অতঃপর মুনিবা বের হয়েই মুরাদকে শুধালো, ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করে যাস। তোর সাথে কথা আছে। মুরাদ মাথা দুলালো, যার মানে ঠিক আছে।
মুনিবা বেগম নিজ বিছানা গোছানো শেষ হতেই ওয়াসিম চৌধুরীকে রেখে মুরাদের কাছে এসে, বিভিন্ন বাহানা করেই মুরাদ কে জিজ্ঞেস করলো, ইমতিয়াযের শালির কি যেন নাম?
~হুরিজিয়ান
হু হু মেয়েটা কেমন তুই দেখেছিস?
মুরাদ মাথাটা মুনিবার উড়ুতে হেলিয়ে দিয়েই বলল,এই মাইয়ার মতো মাইয়া হয় না, অনেক সুন্দর, অনেক ভালো, খুব মিশুক। অনেক দুষ্টু।
কথাটা শেষ করতেই হঠাৎ কি যেনো ভেবেই মুরাদ ওঠে বসল তার মায়ের সামনে। সে কৌতুহল মনোভাব নিয়েই তার মাকে শুধালো, হঠাৎ বেয়াইনের কথা জিজ্ঞেস করছ কেনো আম্মু?
মুনিবা হেসেই জবাব দিলো, চিন্তা করলাম রিও আর তোমাদের জন্য ইমতিয়াজের শালিকে ভাবি করে আনবো, তাই আরকি জিজ্ঞাসা করলাম।
আচ্ছা তুমি এখন ঘুমতে যাও পরে আবার কথা বলবো।
মুরাদ কথাটা শুনে আনন্দে নিজেই যেনো আনন্দ ফেটে পড়লো, তার মানে তার পথ পরিষ্কার হলো।
নাচতে নাচতেই কক্ষে ঢুকলো, মুরাদের নাচানাচি দেখে মেহমেদ ভ্রু কুচকালো, সে বলল, কি হইছে তোর? জলাতঙ্ক রোগির মতো নাচানাচি করতাছস কেন?
অতঃপর.....
~চলবে।
(সবার উচিত মেহমেদের মতো তার মাকে ঘুষ দেওয়া। আমার সাথে কে কে একমত। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও)
0 Comments:
Post a Comment