গল্প Crazy_for_you পর্ব ১১
#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ১১
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
হুরিজিয়ান আর একটা কথাও উচ্চারণ করলো না, তবে তার সাথে কি হতে চলেছে তাই ভেবেই সে অস্থিরতা কাটাতে পারছে না। ধামরাই থানা স্টান্ডে এসে রিকশা থামল। তারপর মেহমেদ আবার একটা রিকশা ঠিক করলো, নবিনগর যাওয়ার জন্য। অতঃপর রিকশা থেকে নেমেই হুরিজিয়ানকে নিয়েই ডুকলো একটি ক্যাফেতে।
হুরিজিয়ান ও কিছু বলছে না। এর শেষ কোথাও সেও দেখবে।
মেহমেদ ইশারা করে হুরিজিয়ানকে বসতে বলল এবং নিজেও বসল হুরিজিয়ানের পাশে।
এমন পরিস্থিতিতে হুরিজিয়ান কখনও পরে নি। হুরিজিয়ানের বুক ধুকপুক করছে। সে তো মনে করেছিল, মেহমেদ চলে গিয়েছে। মেহমেদের কন্ঠস্বরে টনক নড়লো হুরিজিয়ানের।
"কি খাবে?"
"চিকেনফ্রাই"
"আর কিছুই খাবে না? "
"নাহ"
অতঃপর মেহমেদ অর্ডার কনফার্ম করে মনোনিবেশ করলো হুরিজিয়ানের প্রতি। হুরিজিয়ান চারপাশ অবোলোকন করলেও মেহমেদের দিকে একবারও তাকাচ্ছে না।
হঠাৎ মেহমেদ হুরিজিয়ানের হাত ছুয়িয়ে দিতেই, শিউরে উঠল, হুরিজিয়ানের তনু। সে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। হুরিজিয়ানের ক্রমাগত শ্বাস ভারি হচ্ছে। এ কেমন অনুভূতি। সে তো এমন অনুভূতি কখোনো পায় নি, কোনো কিছুতে। হুরিজিয়ানের চোখ বন্ধ করা অবয়ব দেখে মেহমেদ হাসে। সে তার ব্যাগ হতে একটা বক্সের ভেতর থেকে বের করে এক ডজন কাচের চুড়ি। সেই চুড়ি আপন মনে স্বযত্নে পড়িয়ে দেয়, তার শ্রেয়সীর হাতে। হাতে চুড়ি পড়ানোর অনুভব টের পেয়ে চোখ মেলে তাকায় হুরিজিয়ান। রেশমি কাচের নীল চুড়ি। চকচক করে ওঠে হুরিজিয়ানের চোখ।
সে খুশিতে চেচিয়ে মেহমেদকে বলে ওঠে, অনেক সুন্দর!
মেহমেদ ও হুরিজিয়ানের নিকট একটু এগিয়ে জবাব দেয়, তাই!
মেহমেদের আগানো দেখে তড়িৎ চোখ বন্ধ করে ফেলে হুরিজিয়ান।
মেহমেদ হুরিজিয়ানকে শুধায়, চোখ মেলে তাকাও হুর। তারপর হুরিজিয়ান চেষ্টা করে চোখ মেলে তাকানোর।
হুরিজিয়ান মেহমেদের চোখের পানে তাকাতেই হুরিজিয়ান একপলক তাকিয়ে চোখ আবারও বন্ধ করে ফেলল।তার হৃদয়ে ঘন্টা বাজছে।মেহমেদের চোখের নেশা যেন তীরের মতো তাকে গ্রাস করছে।
কেনো এমন হচ্ছে!
ভাবতেই হুরিজিয়ানের শ্বাস ভারি হয়ে আসছে।
তখনই আবার মেহমেদের নেশালো কন্ঠে শোনা গেল, "হুর আমার দিকে তাকাও"।
অতঃপর হুরিজিয়ান শ্বাসভারি কন্ঠেই জবাব দেয়, " আমি পারছি না। একদম পারছি না । আপনার চোখের পানে তাকাতে। আপনার অবয়বে তাকালেই, আপনার চোখে আমার সর্বনাশ দেখতে পাই। লজ্জারা আমায় গ্রাস করে।"
মেহমেদ হাসলো, সেও প্রতিউত্তরে বলে উঠল," আই লাইক ইট। আমিও চাইছি তুমি লজ্জা পাও, আমিও চাইছি তুমি তোমার সর্বনাশ আমার চোখেই দেখতে পাও। "
অতঃপর হুরিজিয়ানের দুগালে মেহমেদ হাত বুলিয়ে চেপে ধরে আবারো ও বলল,"আই সে লুক অ্যাট মি, জান!"
হুরিজিয়ান ও মেহমেদের হাত আকড়ে ধরে চোখ মেলে তাকালো। হুরিজিয়ান তাকাতেই মেহমেদ ঠোঁট পাউঞ্চ করে চুমুর ইঙ্গিত করলো হুরিজিয়ানকে।তারপর সে নেশাক্ত কন্ঠ বজায় রেখে বলে উঠল, "আমিই তোমার প্রথম, আমিই তোমার শেষ। নিরবে নিভৃতে হব নেশাক্ত তোমাতে, অন্তিমে হব নিঃশেষ।"
হুরিজিয়ান লজ্জায় আবার চোখ বন্ধ করল।বন্ধ চোখেই জবাব দিলো, আমার খুব ভয় করছে, যদি ফ্যামিলির কেউ না মানে তখন?
আমি যে এই একটা কারনেই সব সময় এগুলো থেকে দূরে থেকেছি।
মেহমেদ হুরিজিয়ানের গাল ছেড়ে দিয়ে, হুরের হাত আকড়ে ধরলো নিজের হাতের মুঠোয়, আমরসেই মেহমেদ চুমু খেল হুরিজিয়ানের হাতের উল্টো পিঠে। মেহমেদের আলতো ছোয়ায় হুরিজিয়ানের শরীরে বয়ে গেলো যেনো শীতল স্রোত। পরক্ষণেই মেহমেদ হুরিজিয়ানকে শুধালো, আমায় শুধু তুমি ভালবাসো, বাকি সব আমি দেখবো।
অতঃপর হুরিজিয়ান কিছু বলবে এরই মাঝে খাবার নিয়ে হাজির হলো ওয়েটার।
ওয়েটার খাবার রেখে যেতেই, হুরিজিয়ান আবারও কিছু বলবার জন্য বাক ফিরতেই মেহমেদ তাকে চুপ করিয়ে দিল,আঙুল ঠেকিয়ে। "চুপ! আর একটা কথা নয়। খাও, নাহলে তোমায় আমি খেয়ে নিবো "
হুরিজিয়ানের কর্ণে কথাটা পৌছাতেই যে লজ্জায় ঝা ঝা করে উঠল।
ছিহঃ,কিসব বাঝে কথা।লোকটা সিরিয়াস মোমেন্টও তাকে জ্বালাচ্ছে। হুরিজিয়ান হাত বাড়ালো মেহমেদের চুল খাবলে ধরতে। কিন্তু মেহমেদ ধরে ফেলল হুরিজিয়ানের হাত। তারপর হুরিজিয়ানের কর্ণে মেহমেদ ফিসফিস করে বলল,"আই লাইক ইট, তোমার দেখি ধৈর্য্যশক্তি একদমই কম। আমার মতো একটা ভালো ছেলেকে কন্ট্রোলেস হওয়ার অফার করছ?
হুরিজিয়ান ও ফিসফিস করে জবাব দিলো, নির্লজ্জ ছ্যাচড়া ব্যাটা, মুখে লাগাম দিন, নাহলে প্রেম করার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে!
মেহমেদ একটা চিকেন ফ্রাইতে কামড় বসিয়ে বলল, প্রেম তো আমি করবই, বিয়েও আমি তোমাকেই করবো, তারপর দুজনে মিলে বাচ্চা পয়দাও করবো। কিন্তু আমি বদলাবো না, তোমায় এভাবেই আমাকে সহ্য করতে হবে।
হুরিজিয়ান আর কথা বাড়ালো না। এই মেহমেদের যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছে, তার উপর আবার যদি হুরিজিয়ান আবার পালটা উত্তর দেয় তাহলে, হুরিজিয়ান মাটি ছিড়ে ভেতরে ডুকে যাবে। অতঃপর সব কিছু বাদ দিয়ে সে ও খেতে লাগলো চিকেন ফ্রাই।
তারপর চলে গেলো বেশ কিছুক্ষন, খাওয়া শেষ করেই মেহমেদ হাত ঘড়িতে চোখ বোলালো আড়াইটা বেজেছে।মেহমেদ বাক ফিরে চাইলো হুরিজিয়ানের অবয়বে। মন ভার করেই দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে বলল,আমার যাওয়ার সময় হয়েছে! তুমি সাবধানে থেকো। হাস্যরসাত্মক ভাবে সব উড়িয়ে দিও না, আমার আমানত তুমি নিজে, তাই নিজের দিকে খেয়াল রেখো।
হঠাৎ মেহমেদের ভার কন্ঠে কথাগুলো শুনে হুরিজিয়ানের মন অশান্ত হয়ে উঠল।মাঝে দুদিনের ঘটনা যেনো তার মনে বাসা বেধেছে।হুরিজিয়ান ও কি তাহলে এই সুদর্শন
❝ মেহমেদ জাহীন চৌধুরীর ❞প্রেমে পড়েছে।তবে এই সুদর্শন যুবকের প্রেমে পড়লে ভূল কিছু দেখছে না হুরিজিয়ান। সে তো তার কাছে ভালোবাসাই চেয়েছে। হুরিজিয়ান মেহমেদের চুলে হাত বুলিয়ে ব্রাশ করল তারপর মিষ্টি হেসে বলল,সাবধানে যাবেন কিন্তু!
তারপর মেহমেদের অবয়ব জুড়ে দেখা গেলো হাস্যউজ্জ্বল হাসি। মেহমেদ হুরিজিয়ানের হাত ধরেই রিসিভশনের নিকট এগিয়ে গেলো। বিল চুকিয়ে ক্যাফে থেকে বের হলো দুজন। মেহমেদ তার শ্রেয়সীকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠল। অতঃপর মেহমেদ হুরিজিয়ানকে কল করল যেতে যেতেই। তাদের মাঝে হল বহু কথা। ওদিকে বাসার কাছাকাছি আসতেই হুরিজিয়ান কল কাটলো। মেহমেদ ও প্লার্টফ্রমে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো ট্রেনের।
~চলবে।
No comments