#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ১০
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
কিছুক্ষন আগেই হুরিজিয়ান চা বানিয়েছে। তাই সকলকেই একে একে করে চা দিয়ে আসছেন। হুরিজিয়ানের বাবা -মা বাসায় না থাকার কারণে সন্ধ্যার নাশতা তাকেই বানাতে হয়েছে। মাঝে হায়াত ও এসে হেল্প করেছে, তবে ইমতিয়াজ ডাকতেই আবার চলে গিয়েছে। এইতো মাত্র চা নাশতা দিয়ে আসলো বোন এবং বোন জামাইকে। গেস্ট রুমে মেহমেদকে না খুজে পেয়ে বসার ঘরে যেতেই দেখতে পেলো, সে টিভি দেখছে। অতঃপর এগিয়ে গিয়ে চা দিলো মেহমেদের হাতে। মেহমেদ হাত থেকে চা টা টেবিলে রেখে, হুরিজিয়ানের বেনুনি পাকড়ে ধরলো। আকস্মিক চুলের টানে দাঁড়িয়ে পড়লো হুরিজিয়ান। বাক ফিরে চেয়ে চোখ নাক কুচকিয়ে হালকা গলায় বলে উঠল, কি সমস্যা?
মেহমেদ বাকা হাসলো, কিন্তু কিচ্ছু বলল না, সে তার হাত দ্বারা বেনিটাকে মাপতে শুরু করলো, তার হাতের আড়াই হাত বেনী। অতঃপর বেনিটাকে হাতে পেচাতে পেচাতে হুরিজিয়ানের নিকট দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলল,চুল খুলে দিবো তাই বেনী করলে!উফ এখন তো দেখছি তোমায় কাছে টেনে আনতে খুব সুবিধা হবে।
হুরিজিয়ান ও দুষ্টু হাসে, সে বলে ওঠে, আপনি কাছে টেনে আনতে পারলে আমার কাছেও যে এ থেকে বাচার উপায় আছে, দেখতে চান নাকি!
মেহমেদ উচ্ছ্বাস কণ্ঠে শুধালো, হু হু দেখতে চাই, কিচ্ছু বাদ রাখবো না।
অতঃপর হুরিজিয়ান ও মেহমেদের চুল খাবলে ধরে চেচিয়ে ইমতিয়াজকে ডাকলো। তখনোও মেহমেদ এক হাত দিয়ে চা খাচ্ছে, আর অন্য হাত দিয়ে হুরিজিয়ানের বেনী ধরে আছে। ইতোমধ্যে ইমতিয়াজ আর হায়াত ছুটে আসলো। মেহমেদ আর হুরিজিয়ান অবস্থা দেখে হায়াত আকস্মিক হেসে দিলো। ইমতিয়াজ মেহমেদ আর হুরিজিয়ানকে আলাদা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেহমেদকে শুধালো, এই মেহমেদ! আমার শালির পেছনে এতো লাগছিস কেনো, আমার শালি তোর কোন কুটা চালে মই দিয়েছে বল তো?
"দিয়েছে ভাই অনেক কিছুতেই মই। কিন্তু হিসাব মিলাতে পারছি না। তাই তোমার শালিকে বলেছিলাম চলো হিসাব মিলাতে একটা বিজনেস করি।" চুলের ব্যবসা "।তখন তোমার শালি নাক কুচকে বললো, না সম্ভব না বেয়াই সাহেব। তারপর তার বেনী ধরে মাপঝপ ও করলাম, তবুও তোমার শালি রাজি হলো না। তার নাকি ৭০% লাভ লাগবে। এই রকম হলে কি ব্যবসা হয় বলো ভাই। দেখো তোমার বেকার শালিকে একটা পজিশনে আনার কত চিন্তা করে আমার ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার চিন্তাকেও এক পাশে রেখেছি। তবুও সে আমার চুল খাবলে ধরেছে। এটাকি ঠিক হয়েছে ভাই। আমি তো শুধু তোমার শালির পার্ট টাইমার চুলের দালাল হতে চেয়েছিলাম। "
হুরিজিয়ান প্রতিবাদ জানালো, দুলাভাই আপনার ভাইকে বলুন আমাকে না জ্বালাতন করতে! আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই তার চুল ছিড়ে ওয়েলমেট বানাবো বলে দিলাম।
হুরিজিয়ান কথা শেষ করেই ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেলো।
অতঃপর হায়াত মেহমেদকে হেসেই বলল, আল্লাহ তোমার মনের আশা পুরন করুক বৎসো।তুমি চির যুগ যুগ করে আমার বোনের চুলের দালাল হও এই দোয়া করি।
মেহমেদ ও হেসে জবাব দিলো, যদি থাকে ভাবি পাশে, আমাকে কে আটকে রাখে।
ইমতিয়াজ মেহমেদের পিটে চাটি মেরেই শুধালো, ফুফু কিছু জানে?
মেহমেদের সরল জবাব, না, তবে জানাবো গিয়ে, মা তোমার ছেলে কুরবানী হয়েছে, বউকে অতি আব্যশক ভাবে প্রয়োজন।সে আমি আম্মুকে বুঝাতে পারবো। খালি বুঝাতে পারলাম না তোমার শালিকে। হায় আফসোস!
ইমতিয়াজ আর হায়াত মেহমেদকে শুধালো , বোনকে যদি রাজি করাতে পারো আমরা কিন্তু একটা চেষ্টা করতেই পারি ভাই। এখন সব তোমার উপর ডিপেন্ড করে। আচ্ছা থাকো, এখন আসি।
মেহমেদ চা খেতে খেতেই মাথা দুলালো, যার মানে ঠিক আছে।
______
ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভাঙলো হুরিজিয়ানের। মোবাইল সাইলেন্স মুডে ছিল। পাওয়ার বাটনে চাপ দিতেই দেখতে পেলো ৭ টা ভেজেছে। ভার্সিটির ক্লাস ৯ টায়। হুরিজিয়ান তড়িৎ উঠে বসলো। সে এক প্রকার আশ্চর্য হলো, তাকে মেহমেদ একটা কল বা মেসেজ দেয় নি। সে ভেবেছিল ফোন বা মেসেজ দিবে তাই মোবাইল সাইলেন্স মুডে রেখেছিল।
অতঃপর মেহমেদের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ওয়াশরুম থেকে রেডি হয়ে বের হলো হুরিজিয়ান। গেস্টরুমের পানে চাইতেই দেখলো সব গোছানো, আশ্চর্য মেহমেদ চলে গিয়েছে। হুরিজিয়াকে একবার বললও না, সে চলে গেছে। হুরিজিয়ানের কেনো জানি মনটা খারাপ হলো। সে খাবার টেবিলে গিয়ে বসতেই সবার কথা বলা শুনেই জানতে পারল মেহমেদ আজই চলে গিয়েছে চট্টগ্রাম।
হঠাৎ অশান্ত হলো হুরিজিয়ানের মন। লোকটা তাকে ২ দিন যাবত কত না জ্বালিয়েছে। হুরিজিয়ান যে তাকে খুব মিস করছে, মেহমেদের প্রতি সেই প্রথম দিন থেকেই একটা ভালোলাগা কাজ করে হুরিজিয়ানের। তবে সে আদৌ ভালোবাসা নাকি ভালোলাগা, সে বিষয়ে হুরিজিয়ান এখনও অবগত নয়। খাওয়া শেষ করেই হুরিজিয়ান বের হলো। সারা বাসে হুরিজিয়ান এই দুদিনের ঘটে যাওয়া সব কথা তানজিলাকে শুধাল।তানজিলা তো শুনে হা হয়ে গেলো। অতঃপর ভার্সিটি গিয়েই ক্লাসে এটেন্ট করলো দুজনে।
_______
ধামরাই ইউনিভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে আছে মেহমেদ। গেট থেকে ডুকেই সে প্রশাসন ভবনের পানে পা বাড়ালো, সিড়ি ভেঙে সে ৩ তলায় উঠে, প্রিন্সিপালের কেবিনের সামনে দাড়ালো, অতঃপর দরজায় টোকা দিয়েই শুধালো, কাকা আসবো?
মেহমেদের অবয়ব দেখে প্রিন্সিপাল তাহমিদ সিদ্দিকী হেসেই বলল, আরে মেহমেদ আব্বু আসো আসো, কত দিন পর। তোমার বাবা কেমন আছে? তন্ময়ের সাথে দেখা করেছ?ও তো ভার্সিটিতেই আছে।
চেয়ারে বসতে বসতেই মেহমেদ জবাব দিলো, আব্বু ভালো আছে। এইতো দুদিন হলো এসেছি আজই যাব চট্টগ্রাম। তন্ময়ের সাথে যাওয়ার আগে দেখা করে যাবো।
তাহমিদ সিদ্দিকী ঘন্টায় চাপ দিয়ে দুধ চায়ের অর্ডার দিলো, তারপর আবার মেহমেদকে জিজ্ঞেস করলো, ঢাকায় আসতাছ কবে। এই কাকাকে তো তোমার মনেই পড়ে না। এই ভার্সিটি থেকে ইন্টার কমপ্লিট করে যে পালিয়েছ, আর আসলেই না। তোমাদের ব্যাচটা খুব মিস করি। তন্ময়কে এতো বোঝালাম কিচ্ছু বুঝলো না।
তাহমিদ সিদ্দিকীর কথা শেষ হতেই মেহমেদ জবাব দিলো, তুমি ভালো করেই জানো কাকা, আমরা সাভার থেকে কেন গিয়েছি। বাবাকে টান্সফার করে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলো, ভাগ্যের কি পরিহাস দেখো জাবিতে, ঢাবিতে, চান্স না হয়ে সেই চবিতেই হলো। তাই মাই তো সিদ্ধান্ত নিলো যে কয় বছরের আমার পড়া শেষ না হচ্ছে ওখান থেকে আসবে না। মুরাদের ৪র্থ বর্ষের এক্সাম শেষ হলেই ঢাবিতে মাস্টার্স করবে। আমার তো কিছুদিন আগেই এক্সাম শেষ হলো মাস্টার্সের। এখন বিসিএস পিপারেশন নিচ্ছি। আবার বাড়ির কাজ ও প্রায় শেষের দিকে। বাড়ি কমপ্লিট হলেই চলে আসবো আমরা। বাবা টান্সফারের নোটিশ জমা দিয়েছে, রেল মন্ত্রণালয় থেকে এপ্রুপ হলেই হবে।
এভাবেই তাদের মাঝে কথা হল কিছুসময় । তারপর তাহমিদ সিদ্দিকী হাসির ছলেই মেহমেদকে শুধালো, তা বাবা বিয়ে সাধি কি করবে তাহলে মেয়ে দেখি বয়স তো কম হলো না। আমার তন্ময়ের জন্য ও ভাবছি মেয়ে দেখব তুমি কি বলো?
মেহমেদ চা খেতে খেতেই জবাব দিলো মেয়েতো ঠিক করেছি, সে তো তোমাদের কলেজের পলিটিক্স ডিপার্টমেন্ট এ ৩য় বর্ষে পড়ে একবার না হয় চোখেই দেখে আসবে। নাম রওনাক হুরিজিয়ান। আরেকটা সিক্রেট শুনবে?
তাহমিদ সিদ্দিকী অবাক হয়ে বলল, হু বলো বলো।
তোমার ছেলেও প্রেম করছে ওই একই ডিপার্টমেন্টর তানজিলা নওরিনের সাথে। যাও যাও দুই পুত্র বধুকে একসাথে দেখে আসো।
তাহমিদ সিদ্দিকী অবাক হলো, এর জন্যই তার ছেলে বিয়ের কথা শুনলে এতো নাটক করে। তবে তো তাদের দেখতে হয়।
তাহমিদ সিদ্দিকী মেহমেদ কে শুধালো, চল এখনই বউ মাদের দেখে আসি!
মেহমেদ বলল, তুমি একা যাও। সেটাই বরং ভালো হয়।
অতঃপর মেহমেদকে রেখেই তাহমিদ সিদ্দিকী হেটে চললেন, পলিটিক্স ডিপার্টমেন্টে ৩ তলায় গিয়ে কক্ষে ডুকতেই সকলে তাকে সালাম জানালো। তারপর ক্ষন সময় অতিবাহিত করে তাহমিদ সিদ্দিকী বলে উঠল, রওনাক হুরিজিয়ান আর তানজিলা নওরিন কি আজ এসেছে।
নাম দুটো শুনেই যেন কাপনি শুরু হলো হুরিজিয়ান আর তানজিলার। তারপর তারা দাঁড়িয়ে জবাব দিলো জ্বি স্যার। তাহমিদ সিদ্দিকী এক বার অবলোকন করে একটা হাসি দিয়েই বলল, আচ্ছা বস।
তারপর চলে গেলো নিজ কক্ষে তাহমিদ সিদ্দিকী।
মেহমেদকে তাহমিদ সিদ্দিকী কক্ষে ডুকই বলে উঠল, মাশাল্লাহ। আমার ছেলের এতো সুন্দর চয়েজ।
মেহমেদ হাসলো, তা আমার বউকে কেমন লাগলো তোমার?
তাহমিদ সিদ্দিকী জবাব দিলো, সেও মাশাল্লাহ। তবে তুমি তার সাথে পরিচিত হলে কিভাবে?
মেহমেদ কাধে ব্যাগ তুলতে তুলতেই জবাব দিলো মামতো ভাইয়ের শালি। কাকা তবে আসি। আমি বিকালেই চলে যাচ্ছি। ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই, তাই আসা।
অতঃপর তাকে বিদায় জানিয়ে মেহমেদ বের হলো তন্ময়ের সাথে দেখা করেই, ফের হেটে পলিটিক্স ডিপার্টমেন্টের সেমিনারে গিয়ে বসল, মেহমেদ। সেমিনারের কর্মরত আব্বাস কাকাকে সে শুধালো, হুরিজিয়ানকে ডেকে আনতে।
তারপর আব্বাস কাকা এসে ক্লাসে ঢুকেই বলতে লাগলো, হুরিজিয়ান কে আছো, তোমার হাসবেন্ড এসেছে। তোমায় নিয়ে যেতে?
কথাটা শুনেই তাজ্জব বনে গেলো হুর। তার তো বিয়েই হয় নি স্বামী আসবে কিভাবে? এখন না গিয়েও তো কোনো উপায় নেই, মান ইজ্জত বাচানো ফরজ। সে এক প্রকার তানজিলাকে রেখেই বের হলো ক্লাস থেকে। সেমিনারে গিয়ে মেহমেদকে দেখে ৮ম আশ্চর্য দেখার মতো মুখ খানি হলো হুরিজিয়ানের। কিন্তু হুরিজিয়ানকে কিছু বলতে দিলো না মেহমেদ। হাত পাকড়ে টেনে নিয়ে বের হলো ভার্সিটি থেকে৷ অটো থামিয়ে উঠে বসল দুজন। কিন্তু হুরিজিয়ান বলেই চলেছে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায় ছাড়ুন।
মেহমেদ শুধু একটা কথাই শুধালো, গেলেই দেখতে পাবে। আবার যদি প্রশ্ন করতে শুনেছি তবে, এত ফল ভাল হবে না বলে দিচ্ছি হুর।
আমি জানি, আমি কি করছি।
হুরিজিয়ান আর একটা কথাও উচ্চারণ করলো না, তবে তার সাথে কি হতে চলেছে তাই ভেবেই সে অস্থিরতা কাটাতে পারছে না।
~চলবে।
(কেমন হয়েছে আজকের পর্ব। সবাই কমেন্ট করে জানাও। সুন্দর মন্তব্য আশা করছি।)
0 Comments:
Post a Comment