গল্প Crazy_for_you পর্ব ৯

 #Crazy_for_you🦋

#পর্বঃ৯

#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)


এই লোক হুরকে লজ্জার উপর লজ্জা দিচ্ছে। হুর নিজেকে আর সামলাতে পারলো না, মেহমেদের ঝাকড়া ককড়ানো চুল গুলো খাবলে ধরলো অতঃপর এর মাঝেই হায়াত আর ইমতিয়াজ হাজির হলো, হুরিজিয়ান এখনও মেহমেদের চুল ধরে আছে আর মেহমেদ দাত কেলিয়ে হাসছে। হুরিজিয়ান আর মেহমেদের চুল টানাটানি দেখে হায়াত হেসে দিলো।

হাসির শব্দ পেয়েই হুরিজিয়ান ফিরে তাকালো, হুরিজিয়ান তাকাতেই ইমতিয়াজ বলে উঠল, আরে আরে! শালিকা। আমার ভাইটার সব চুল উঠে গিয়ে টাকলা হয়ে যাবে! ছাড়ো এবার!

হুরিজিয়ান ও চেচিয়ে বলল, আপনার ভাইকে বারণ করেন দুলাভাই, আমায় যেনো জ্বালাতন না করে, নাহলে আমি সত্যি সত্যিই তাকে চুল ছিড়ে টাকলা করে দেবো। হুরিজিয়ান কথা শেষ করেই কক্ষ ত্যাগ করল,অতঃপর হায়াত মেহমেদকে হেসেই বলল,ভালোই তো আমার বোনের পেছনে লেগেছ, দুজনকে দেখে একাবারে মনে হয়েছে বিড়াল ভার্সন। 

তা এই কর্ম করতেই বুঝি আমাদের বাসায় এসেছ দেবরজান?

মেহমেদ কোনো উত্তর দিতে পারলো না, হাসতে হাসতেই কক্ষ ত্যাগ করলো। 

তারপর হায়াত ইমতিয়াজকে নরম গলায় বলল, দেখেছেন ওদের দুজনকে পাশাপাশি কত সুন্দর মানায়? 

ইমতিয়াজ হায়াতের কথার পিটে জবাব দিলো, ওদের বিয়ে হলে কেমন হয় হায়াত?

অতঃপর হায়াত ইমতিয়াজের বাহুতে চাপড় মেরেই বলল,দেখা যাক পানি কতদূর গড়ায়। চল এবার খাবার খেতে যাওয়া যাক। ইমতিয়াজ মুচকি হাসে, সে বলে ওঠে, চল।

.

.

খাবার টেবিলে দুপুরের খাবার সাজাচ্ছেন আয়শা বেগম। কিছুক্ষন আগের কবীর চৌধুরী  বাসায় ফিরেছেন। এলাকার নিজস্ব বাড়ির মালিক হলেও, ব্যবসায় থেকে সময় কাটান। বাহিরের ব্যস্ততা এক পাশে রেখে বাসায় ফিরেছেন সে। মেয়ে-জামাই এসেছে বলে কথা। বাসায় এসে মেহমেদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে খাবার টেবিলেই। খুটি-নাটি বাক-বিনিময় হল তাদের মাঝে। অতঃপর খাবার শেষ করেই নিজ কক্ষে গেলেন কবির চৌধুরী। ওদিকে খাবার টেবিলে সামনাসামনি বসেছে মেহমেদ আর হুরিজিয়ান। তার পাশেই ইমতিয়াজ আর হায়াত বসে খাবার খাচ্ছেন। আয়শা বেগম খুব যত্ন করেই মেহমেদকে পরিবেশন করছেন। এর মাঝেই হুরিজিয়ান খেতে খেতেই দুষ্ট বুদ্ধি আটলো, খুব মেহমেদ জ্বালিয়েছে তাকে , এবার খেলা দেখাবে হুরিজিয়ান। 

মেহমেদের বার বার তাকানোকেই হুরিজিয়ান ঢাল হিসেবে কাজে লাগালো।

চোখে টিপুনি কাটলো হুরিজিয়ান মেহমেদকে।

চোখ টিপুনি কাটার ধরুন তড়িৎ ভিষম খেলো মেহমেদ। সাথে সাথেই হুরিজিয়ান পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, এই নিন বেয়াই মশাই পানি খান। ভালো লাগবে। তারপর ২ মিনিট যেতে না যেতেই হুরিজিয়ান মেহমেদের পায়ে পা ছোয়ালো, তাতে যেনো আবারো ভিষম খেলো মেহমেদ । এবার হায়াত উঠে গিয়ে মেহমেদের মাথায় পিঠে চাপড় মেরে বলল, ভাই ঠিক আছো তো! 

মেহমেদ নিজেকে সামলে হুরিজিয়ানের পানে চেয়ে বলল, এক দম ঠিক আছি ভাবি। খালি খাবার টা শেষ করতে দাও। তারপর আরো একটু রেস্ট নিলে ভালো লাগবে। মেহমেদের চোখের চাহুনি দেখে হুরিজিয়ান শুকনো ঢোক গিললেও, মুখে হাসি বজায় রাখল। মেহমেদের ওই চোখে তাকানো যায় না, হুরিজিয়ান যে তার সর্বনাশ দেখতে পায়। সে মেহমেদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। তারপর হায়াত ফের গিয়ে বসল নিজ আসনে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার কক্ষে চলে গেলো। পরক্ষণেই হুরিজিয়ান বেনি পাকালো নিজ চুলে। চুলে বেধেই সে মনে মনেই বিরবির করল , এবার কিভাবে চুল খুলবেন বেয়াই মশাই, খুব বুদ্ধি এটেছেন আমাকে জ্বালানো, আমিও কম যাই কিসে। অতঃপর লম্বা বেনিটাকে পিঠে ছুড়ে মারলো হুরিজিয়ান।

_____

সূর্য হেলিয়ে পড়েছে পশ্চিমে। সূর্যের আলোরা যেনো বলছে, যাই যাই। সেই যাই যাই বেলাতেই বৈঠক ঘরে লুডু খেলার হাড্ডাহাড্ডির লড়াই চলছে। ইমতিয়াজ আর হুরিজিয়ান এক দলে, অন্য দলে মেহমেদ ও হায়াত। এই তো ইতোমধ্যে মেহমেদ হুরিজিয়ানের গুটি কাটলো কয়েকবার। তারপর আবার ছক্কা চালান দিতেই হুরিজিয়ানের গুটি আবার কাটলো  মেহমেদ। হুরিজিয়ানের লাস্ট গুটি কাটতেই রাগে দুঃখে কোট উল্টালো হুরিজিয়ান । অতঃপর হন্তদন্ত হয়েই দাড়ালো, চেচিয়েই বাচ্চাদের মতো বলল, আমি খেলবো না। ইমতিয়াজ কান্না করার ভান করে হুরিজিয়ানের হাত পাকড়ে বলে উঠল, শালিকা তুমিই তো আমার ভরসা, তুমি গেলে আমায় জিতাবে কে?হুরিজিয়ান আর ইমতিয়াজের বাক্য বিনিময় দেখে মেহমেদ আর হায়াত খিল খিল করে হেসে দিল।এবং মেহমেদ হাসতে হাসতে বলল,তোমার শালি ভয় পাইছে ভাই, আবার যদি গুটি খেয়ে নেই। হুরিজিয়ান মেহমেদের কথায় ভেংচি কাটলো। তারপর আবার বসল হুরিজিয়ান খেলতে। অতঃপর হুরিজিয়ান এক প্রকার হুমকিই দিলো মেহমেদকে, ওয়েট বেয়াই। একটু সুযোগ পাই, আমিও হুর, আপনাকে খেয়ে দিবো। মাইন্ড ইট! 

তারপর খেলা শুরু হলো, মেহমেদের পরাপর গুটি কাটতেই বিশ্ব জয়ের হাসি হাসলো হুরিজিয়ান। টানা ১ঘন্টা পর খেলা শেষ হলো, জিতেছে ইমতিয়াজ আর হুরিজিয়ান। ইতোমধ্যে ইমতিয়াজ আর হায়াত উঠে সরে গেলো।তারপর  কোটের গুটি গোছাতে গোছাতেই হুরিজিয়ান ফিসফিস করে বলে উঠল মেহমেদকে , বলেছিলাম না সুযোগে তার সৎ ব্যবহার করবো, আমি মোটেও আপনাকে ভয় পাই না। মেহমেদও হুরিজিয়ানের হাত পাকড়ে ফিসফিস করে  জবাব দিলো, তাহলে কে ভয় পেয়ে আমার বুকে জ্ঞান হারিয়ে ছিল! ভাগ্যিস অন্ধকার ছিল,নাহলে হাতে নাতে প্রমাণ দিয়ে দিতাম। আমার মতো ইনোসেন্ট একটা ছেলেকে কি কায়দাটা করেই না ফাসালে বলো। 

হুরিজিয়ান চরম অবাক হয়েই বলল, তারপর কি হয়েছিল? বলুন না। একদম হাসবেন না। 

অতঃপর মেহমেদ জোড়ে হেসে দিলো হুরিজিয়ানের অবয়ব দেখে। কোনোরকম হাসি থামিয়েই বলল,দেখেছো তুমি ভয় পেয়েছ।আরে কিছু করি নি। চিন্তা করো না, আমার ভার্জিনিটি তোমাকে স্বজ্ঞানেই হরণ করতে হবে। তাই ওইসব চিন্তা মাথায় মোটেও এনো না। 

তারপর হুরিজিয়ান দাঁতে দাঁত চেপেই মেহমেদকে বলল,"ছ্যাচড়া ব্যাটার শখ কত। আসছে ওনার ভার্জিনিটি হরণ করবো। সে আশায় গুড়ে বালি। "

অতঃপর হুরিজিয়ান ভেংচি কেটে চলে গেলো নিজ কক্ষে। আর মেহমেদ হুরিজিয়ানের কথা শুনে বসে বসে হাসতে রইল এবং বলল, "মেয়েটাকে ভয় পেলে সত্যিই খুব কিউট লাগে। আই লাইক ইট। "


~চলবে।


(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই কমেন্ট কর। রেসপন্স করো সবাই। সুন্দর মন্তব্য আশা করছি)

0 Comments:

Post a Comment