#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ৬
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
ডাইনিং টেবিলের নিকটে দাঁড়িয়ে হুরিজিয়ান নকশি পিঠায় নকশা করছে। হায়াত সেইগুলোকে ভাপে দিচ্ছে। হঠাৎ মেহমেদের কান্ডে হুরিজিয়ান বোকা বনে গেলো। তার লম্বা ঘন কালো রেশমের মতো চুল গুলো খোপা খুলে ছড়িয়ে পড়েছে,ঘাড় থেকে হাটুর নিচে। ফ্যানের বাতাসে সেই চুল হুরিজিয়ানকে বড্ড জ্বালাচ্ছে। পিঠার ওপর সোনটা রেখে হুরিজিয়ান পা বাড়ালো হাত ধুতে।হাত ধোয়া শেষে আবারোও নিজ মনে করতে শুরু করলো হুরিজিয়ান। কিন্তু না আবারো চুলের কাটা খুলে দিলো মেহমেদ, এবার যেনো হুরিজিয়ানের রাগ আসমান ছুই ছুই হলো, সে চেচিয়ে বলল, আপু তোর দেবরকে মানা কর জ্বালাতন না করতে, নাহলে হাতের এই সোন দিয়ে তার চোক্ষু আমি গেলে দিবো। হায়াত রান্না ঘরে বসেই মেহমেদকে আওয়াজ দিয়ে বলল, ভাই আমার বোনটাকে জ্বালাতন করো নাতো, দেখা গেল সত্যি সত্যিই তোমার চোখ গেলে দিবে!
মেহমেদ ও আওয়াজ দিয়ে জবাব দিলো, আমি এখানে তোমার বোনকেই জ্বালাতে এসেছি ভাবি, একদম টেনশন নিও না। আমি সামলে নিবো। এর পর আবারও হুরিজিয়ান কাটাটা মাথায় লাগাতেই তড়িৎ মেহমেদ আবারো চুলের কাটা খুলে দিলো। এবার হুরিজিয়ান থেমে থাকলো না মেহমেদকে ঠেলে চেয়ারে বসিয়ে চোখের পানে সোনটা ধরে বসলো, আর রাগকে কন্ট্রোল করে নরম গলায় ফিসফিস করেই বলল, বেয়াইমশাই, আমি খুবই মিষ্টি এবং নিরীহ প্রকৃতির মেয়ে, তাই আমি চাই না, আমার মতো একটা মেয়ের হাতে আপনার চোখটা নষ্ট না করতে। তাই দয়াকরে নিজ কক্ষে গিয়ে আমায় নিস্তার দিন।
মেহমেদের কান্ডে হুরিজিয়ান অবাক হলো, মেহমেদের হাত দ্বারা কোমড় জড়িয়ে সে হুরকে কাছে টেনে নিলো, এবং ফিসফিস কণ্ঠে বলল, "আই লাইক ইট "।যাচ্ছি যাচ্ছি। দেখা গেলো আবার কিছুক্ষন পর তুমি নিজেও আমার সাথে দেখা করতে আসলে, তখন কিন্তু আমি আর ছাড়বো না। কথাটা শুনতেই ভ্রু কুচকালো হুরিজিয়ান। কচুপোড়া!
মেহমেদ চলে গেলো, অতঃপর হুরিজিয়ান পিঠা নকশা করতে লাগলো।
_____
রাত ১০ টা।
সন্ধ্যা থেকে পিঠা রান্না বান্নার কাজ সেরে মাত্রই সকলে উঠল। কিন্তু হুরিজিয়ানের খেয়ালই ছিল না তা মোবাইলের কথা।তন্ন তন্ন করে খুজেও পাচ্ছে না। হায়াতকে যে ঢাকবে তাও পারছে না। সারাদিনের কাজে মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। ঘড়ির পানে চেয়ে দেখল ১১টা ছুই ছুই। বিছানায় সে ধপাশ করে বসল। কি একটা অবস্থা, হঠাৎই তার মনে পড়লো, তার মোবাইল সব শেষ মেহমেদের হাতে দেখে ছিল, তার মানে মেহমেদ ফোনটা নিয়েছে। কি করবে হুরিজিয়ান। বসা থেকে উঠে দাড়ালো, পাইচারি করতে লাগলো অবিরাম। দ্যামড়া ব্যাটা, কত বড় সাহস। আমার ফোন নিয়েছে। তার একদিন আমার যে কদিন লাগে, দেখে নিব।যেই কথা সেই কাজ। অত্যাধিক হারে তাকে লোকটা জ্বালাচ্ছে।
পিট পিট করে পা বাড়ালো হুরিজিয়ান।মেহমেদের কক্ষের পানে যেতেই দেখতে পেলো ড্রিম লাইট জ্বলছে, এভাবে কি করে একজনের কক্ষে ঢোকা যায়। কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই হাতে টান অনুভব হলো হুরিজিয়ানের। তবে, কর্নে তার আদো আদো কন্ঠে শুনতে পেলো, বলেছিলাম না, তুমি নিজেই আসবে।
হুরিজিয়ান আবছা আলোয় মেহমেদকে ধাক্কা দিয়ে শুধালো, মোবাইলটা দিন বেয়াই মশাই। নাহলে কিন্তু ব্যাপারটা ভালো হবে না। মেহমেদ হুরিজিয়ানের নিকট আগাতে আগাতেই জবাব দিলো, তাই নাকি।
হুরিজিয়ান দিক বুঝতে না পেরে পেছাতে লাগলো এবং বলল, একদম কাছে আসবেন না, মোবাইলটা দিন! আমি যাব।
মেহমেদ হুরিজিয়ানকে সেই দেয়ালেই আবদ্ধ করলো। মাথা নিচু করে আবারও বলে উঠল, একটা শর্ত মানলে মোবাইলটা দিয়ে দিবো, একদম কথা দিচ্ছি।
হুরিজিয়ান তাড়াহুড়ো করে জবাব দিলো, বলুন বলুন কি শর্ত?
~আমায় তুমি সবসময় নাম ধরে ডাকো, তাহলে মোবাইলটা দিয়ে দিবো।
~কচুপোড়া। বয়েই গেছে! মোবাইল টা দিন তো।
এই বলে মেহমেদের হাত থেকে মোবাইলটা ছো মেরে নিয়ে নিলো হুর। ছুটে বের হলো মেহমেদের কক্ষ থেকে। তবে হুরিজিয়ান বের হতেই মেহমেদ বলে উঠল, ১ মিনিট পর আবার আসবেন, ধন্যবাদ।
মেহমেদের কথাটা গুরুত্ব দিলো না, হুর মোবাইলের পাওয়ার বাটনে ক্লিক করতেই ভেসে উঠলো পাসওয়ার্ড অপশন। এবার হুরিজিয়ানের বুঝতে বাকি রইল না মেহমেদ কেন ১ মিনিট পর যাওয়ার জন্য আবারও ওয়েলকাম করেছিল!
খিটখিটে মেজাজ নিয়ে আবারো ঢুকলো মেহমেদের কক্ষে, ঢুকতেই হুরিজিয়ান মেহমেদকে দেখতে পেলো না, আশ্চর্য লোকটা কোথায় গেলো, সেই আবারো হুরিজিয়ান হাতে টান অনুভব করলো।
মেহমেদ তার সামনে দাঁড়িয়ে খিলখিল করে হেসে বলল, ওয়েলকাম।
হুরিজিয়ান নিজেকে রিলেক্স করে উঠল মেহমেদের চোখের পানে তাকিয়ে, পাসওয়ার্ডটা বলুন?
মেহমেদ হেসেই বলল,"বলবো না "
হুরিজিয়ান ফের বলে উঠল, বলুন পাসওয়ার্ড কি?
মেহমেদ আবার জবাব দিল,বললাম তো, বলবো না।
এভাবেই চলতে লাগলো পাসওয়ার্ড নিয়ে চুলাচলি। অতঃপর হুরিজিয়ান বাধ্য হয়েই মেহমেদের কক্ষ ত্যাগ করলো। নিজ কক্ষে এসে ফোনটা আচাড় মারতে গিয়েও থেমে গেলো সে।
অতঃপর.....
~চলবে।
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও। মেহমেদ আর হুরিজিয়ানকে এই পর্বে কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাও)
0 Comments:
Post a Comment