গল্প Crazy_for_you পর্ব ১

 ❝৩০মিনিট সময় দিচ্ছি!❞

এর মধ্যে যদি তোমায় বাগানবাড়ি রেস্টুডেন্টে না দেখতে পাই হুর, তাহলে তুমি ভালো করেই জানো আমি কি করতে পারি। 

-টাইম স্টার্ট নাউ!

গম্ভির গলায় মোবাইলের ওপাশ থেকে কথাটা  হুরিজিয়ানকে বলল,মেহমেদ। 

হুরিজিয়ান পালটা উত্তর দেওয়ার আগেই কলটা কেটে গেলো অন্য প্রান্ত থেকে। 

ঘড়ির পানে চাইলো হুরিজিয়ান, ঠিক ৪টা বেজেছে। 

ওড়না জড়িয়ে, হাতে পার্স নিলো হুরিজিয়ান। আয়শা বেগমের হাতে ফোন খানা ধরিয়ে হুরিজিয়ান বলে উঠল, মা,এই তোমার মোবাইল। আমার এক বান্ধবি কল দিয়েছিল একটু ওদের বাসায় যাবো, আসতে সন্ধ্যা হবে।

মিসেস আয়শা কিছু বলার আগেই, পাদুকাজোড়া পড়ে সিড়ি দিয়ে ছুটে নামলো হুড়িজিয়ান। হাত ঘড়িতে আবার সময় দেখে নিলো, ৪ টা ৫ বেজেছে। 

রিকশা থামিয়ে উঠল, হুরিজিয়ান। 

এই মেহমেদ নামক লোকটা, হয়তো হুরিজিয়ান ম'রে গেলেও পিছু ছাড়বে না। 

অস্থিরতা কাজ করছে হুরিজিয়ানের মাঝে। যেকোনো ভাবেই হোক ৪:৩০ এর আগে সেখানে পৌছাতে হবে তাকে। 

দ্রুত শ্বাস ফেলার কারনে গলা কাট হয়ে গেছে হুরিজিয়ানের। পানি পান করে গলা ভেজানো দরকার। কিছুক্ষন বাদেই কাক্ষিত জায়গায় এসে থামল রিকশা। রিকশাওয়ালা মামা হুরিজিয়ানকে শুধালো,

আফা! আইয়া পড়ছি, রিকশা গনে নামেন!

হুরিজিয়ান খেয়ালই করে নি, এসে পড়েছে সে। 

ইতোমধ্যে রিকশা থেকে নামলো হুরিজিয়ান,

ভাড়া চুকিয়ে প্রবেশ করল রেস্টুরেন্টে। 

ওয়েটার কে বলে এক বোতল পানি নিয়ে নিলো সে।  পানির টাকাটা দিয়ে  বসে পড়ল কর্নারের কাক্ষিত জায়গায়। গলা ভিজিয়ে ঘড়ির পানে আবার চাইলো হুরিজিয়ান, ৪:২৫ বেঝেছে। 

কি হবে আজ কিছুই জানে না। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত তার আসাটা যে ভয়ংকর বিষয়। 

এইতো কয়েক মাস হলো তার সাথে পরিচয় হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে যে এতো কিছু হবে, হুরিজিয়ান তা কল্পনাও করতে পারে নি। জীবনটা তো খুব ভালোই চলছিলো। হুরিজিয়ানের বোনের বিয়ে হওয়ার পর থেকেই হুরের জীবনের রুটিন ওলোট পালোট হয়ে গেছে। 

হুরিজিয়ান টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে  ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেলো। 

অতঃপর 

হুরিজিয়ানের ভাবনার ঘোর কাটলো, পুরুষালী হাতের ছোয়ায়। চোখ তুলে চেয়ে দেখলো, তার সামনের সিটে মেহমেদ বসা। হাত চেপে ধরার কারনে পীরায় আতকে উঠল, হুরিজিয়ান। 

দাতে দাত চেপে রাগন্বীত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে  মেহমেদ বলল,মোবাইল কোথায় তোমার হুর? 

হুরিজিয়ানের হাত টা ছেড়ে দিয়ে টেবিলে ঘুষি  মারলো মেহমেদ,গম্ভির গলায় বলে উঠল, 

 সে সামথিং, হুর !

হুরিজিয়ান কান্নারত কন্ঠে জবাব দিলো, মোবাইলে পানি পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সারাতে দিয়েছি। 

মেহমেদ সিট থেকে উঠে হুরিজিয়ানের নিকট মাথা নিচু করে গাল আকড়ে ধরলো,

২দিন হয়েছে, আমি তোমায় ফোন দিতে দিতে মরিয়া হয়ে পড়েছি। বাসায় কি আর কোনো ফোন নেই, আমায় কি কল করা যেত না!

 আমি বহু কৌশলে তোমার আম্মার ফোন নাম্বার পেয়েছি। আমায় কেনো তুমি এভাবে শাস্তি দিচ্ছো, বলো হুর। 

 মেহমেদের হাত খানা গাল থেকে সরিয়ে চোখের অশ্রু মুছলো হুরিজিয়ান। 

 স্বর গাঢ় করে জবাব দিলো, আপনি পাগল হয়ে গেছেন, পাগল না হলে কেউ সামান্য এই কারনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসে না। 

মেহমেদ রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না, দেয়ালে চেপে ধরলো হুরিজিয়ানকে, চোখের পানে চেয়ে বলল,

 হ্যা, আমি পাগল, আর এই পাগল আমি ছিলাম না । পাগল করেছ তুমি!

তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে, না পাড়ছি ঘুমতে, না পারছি আমি পড়তে। ৩ বেলা তোমার কন্ঠ না শুনতে পেলে আমি পাগল হয়ে যাই।

 আমার যে তুমি নামক অসুখ হয়েছে, সেই অসুখের প্রিসক্রেপশনে যে তুমি ৩ বেলা।শুধু আর কয়েক মাস হুর। শুধু ক্যাডার পদটা পাই, তারপর সারাজীবনের ওষুধ হিসেবে তোমায় বিয়ে করে নিয়ে যাবো। 


হুরিজিয়ান স্তব্ধ মেহমেদের কথা শুনে। 

মেহমেদ ছেড়ে দিলো হুরিজিয়ান কে। এসে বসে পড়লো সোফায়। কলেজ ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে রাখলো টেবিলে।

হুরিজিয়ান বসলো মেহমেদের সামনে। 

মেহমেদ ১মিনিট চুপ থেকে বলে উঠল, হুর তোমার জন্য এনেছিলাম, খুলে দেখো!

হুর কাপা কাপা হাতে বক্সটা কাছে টেনে নিলো।  কিন্তু বক্স খুললো না। মৃদু গলায় বলল, আমায় বাসায় যেতে হবে। মেহমেদ হুরের কথা গ্রাহ্য করলো না, উলটো জিজ্ঞাসা করে বসল, ফোন সারিয়ে কবে দেওয়ার কথা বলেছে? 

হুরিজিয়ান অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, আজ, আজকে দেওয়ার কথা বলেছে। 

মেহমেদ এখনও তার শ্রেয়সীর পানে চেয়ে আছে, কিন্তু হুর মাথা নিচু করে আছে, 

মেহমেদ ওয়েটার কে ডাকলো, নিজের মতো অর্ডার করে দিলো ডিশ।

অতঃপর কিছুক্ষন বাদেই চলে আসলো খাবার। হুরিজিয়ান টু শব্দও করলো না, চুপ চাপ আহার করলো, খাবার টুকু। খাওয়া শেষে হুরকে মেহমেদ বলল,চল!

হুর মাথা তুলে চাইলো, নিচু স্বরে বলল, কোথায় যাবো? 

মেহমেদ ফিচেল হেসে জবাব দিলো, বিয়ে করতে। 

মেহমেদের হঠাৎ এমন কথা শুনে, সবটা মাথার উপর দিয়ে গেলো বোধ হয়। 

হুরিজিয়ান কিছু বলতে পারলো না, মেহমেদ হাত খানা খাবলে ধরে টেনে নিয়ে গেলো, রিসিভশনে। বিল পে করে, বাইরে বেড়িয়ে রিকশা দার করালো মেহমেদ। ছুটলো মোবাইলের দোকানে, যেখানে হুরিজিয়ান মোবাইল সারাতে দিয়েছে। ১০ মিনিট বাদেই সেখানে গিয়ে পৌছায় তারা৷ মোবাইলটা নিয়ে হুরকে রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে, মেহমেদ পা বাড়ায় তার নানুবাড়ির উদ্দেশ্যে। 

_____

৫ মাস আগে.... 


ইতোমধ্যে  ওয়াশরুমের দরজায় নক দিয়েছেন আয়শা বেগম কয়েক বার। ওয়াশরুমের ভেতরে হুরিজিয়ান শাওয়ার নিচ্ছে, তার দুলাভাই তাকে তাদের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে। কিন্তু হুরিজিয়ানের শাওয়ার আর শেষ হচ্ছে না। সে যে বাথরুম সিংগার। তার গোসলে অনেক সময় লাগে। এর মধ্যে আয়শা বেগম এসে আবার চেচিয়ে ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে শুধালো, ছেলেটা কত ক্ষন হয়েছে এসেছে, তোকে ছাড়া খেতে ও চাচ্ছে না, তুই কি বের হবি?

হুরিজিয়ান খিল খিল করে হেসে জবাব দিলো আর ৫ মিনিট আম্মু। 

এবার যেনো তেতে উঠলেন আয়শা বেগম , তুই বাথরুমের মধ্যেই থাক, ইমতিয়াজকে বলে তোর যত খাতা বালিস আছে, সব ওয়াশ রুমে ডুকানোর ব্যবস্থা করছি। 

হুরিজিয়ান এবার দরজা খুলে উকি মারলো তার মায়ের পানে, দুষ্ট হেসে জবাব দিলো, আহ, খালামনি রাগ করে না। এই তো বের হয়েছি। 

আয়শা বেগম দীর্ঘ শ্বাস টানলো, এই বজ্জাত মেয়ে কোনো দিন শুধরবে না। আয়শা বেগম বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হুরিজিয়ান ও বের হলো। জামা-কাপড় শুকাতে দিয়ে সেও খাবার টেবিলে গিয়ে দেখলো তার দুলাভাই ইমতিয়াজ বসে আছে। 

হুরিজিয়ান দুষ্টমি হাসি দিয়ে সালাম জানাল তাকে, তারপর খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। 

দুপুরের খাওয়া শেষ হওয়া মাত্রই নিজ কক্ষে গিয়ে হুরিজিয়ানের ব্যাগ প্যাকিং করেছে ইতোমধ্যে।  বিকেল ৪টা নাগাদ যাওয়ার  উদ্দেশ্যে বের হলো তারা। সদ্য বিবাহিত হুরিজিয়ানের বোন হায়াত।হায়াতের বিয়ে হয়েছে একমাস হলো।তাদের বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হয়েছে অনুষ্ঠান তেমন হয় নি। হায়াতের মন খারাপ দেখেই ইমতিয়াজ এসেছে, তার দুষ্ট শালিকাকে নিয়ে যেতে। তাতে যদি তার বউয়ের মন ভালো হয়।

কিছুক্ষন বাদেই হুরিজিয়ান এসে তার বোনের শশুড় বাড়ি প্রবেশ করে। বোনকে চমকে দিতেই বলে ওঠে, টুকি। 

হায়াত চমকায়। হুরিজিয়ানকে দেখে মিটি মিটি হাসে। হুরিজিয়ানকে জড়িয়ে ধরে তার পিঠে চাটি দেয় কয়েক বার হায়াত। মুখ থেকে হায়াতের অনায়াসে বের হয়, দুষ্টু একটা। 


#Crazy_for_you🍁

#সূচনা_পর্ব

#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)


(আসসালামু আলাইকুম। অনেকদিন পরে লেখার চেষ্টা,  ভুল ভ্রান্তি হলে ধরিয়ে দিবেন, সংশোধন করে নিবো। তার জন্য আগে থেকেই ক্ষমাপ্রার্থী।  রেসপন্স করবেন প্লিজ।)

0 Comments:

Post a Comment