গল্প তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল পর্ব ২১

 তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল

পর্ব_২১

সারিকা_হোসাইন


দেয়ালে থাকা এসিটা এই তীব্র তাপদাহের মধ্যেও ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া দিয়ে যাচ্ছে যার কারনে বাইরের আগ্নেয়গিরির লাভার মতো উত্তাপ গায়ে লাগছে না।জানালার দামি ভারী পর্দা গুলো মাঝে মাঝে বাতাসে দোলে উঠছে।চারপাশে ফিনাইলের উটকো গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে  পুরো কেবিন জুড়ে।


সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার পর স্ট্রেচারে করে এনে মুহিত কে কেবিনে শিফট করা হলো।চাইলেই মুহিত বাসায় যেতে পারবে।কিন্তু মুহিত ই যেতে চাচ্ছে না।


একজন নার্স সহ একজন এসিস্ট্যান্ট ডক্টর নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলেন প্রফেসর সারোয়ার জাহান।হাতে মুহিতের সকল রিপোর্টস।


মুহিত কে উদ্দেশ্য করে প্রফেসর বলতে শুরু করলেন


―মেজর মুহিত ভয়ের কিছুই নেই,আপনাকে যেই গুলি টি করা হয়েছিলো তা খুব কম রেঞ্জের হওয়ার কারনে পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে গেছে।আল্লাহ সহায় জন্য আপনি বেঁচে গেছেন।গুলি ভেতরে থাকলে এতোদিনে ইনফেকশন হয়ে আপনি মারা যেতেন।আর হাতে পায়ের যেই হাড় গুলো ভেঙেছে তা অনেকটাই রিকভার করেছে।

আমি জানিনা কে এগুলো ঠিক পজিশনে বসিয়েছে?

তবে যিনি বসিয়েছেন তার হাতে জাদু আছে বলতে হবে।

এরকম ফ্রাকচার আর ভাঙা হাড় জোড়া লাগতে অনেক সময়ের ব্যাপার।

আপাতত ব্রেচ পরিয়ে কয়েকদিন গলায় স্লিং ঝুলালেই আপনার হাত ঠিক হয়ে যাবে।

প্রফেসর সারোয়ার জাহান এর কথা শেষ হতে না হতেই ঝড়ের বেগে দৌড়ে কেবিনে প্রবেশ করলো স্বর্গ।


স্বর্গকে দেখে প্রফেসর অবাকের স্বরে জিজ্ঞেস করলো

―আরে স্বর্গ মামনি তুমি এই সময়ে ?

স্যার মেজর মুহিত ইজ মাই উডবি!

ওর ড্রেসিং গুলো আমি করাতে চাই।


প্রফেসর হাসি মুখে বললেন 

―সিউর,হুয়াই নট?


মুহিত স্বর্গের এহেন স্বাভাবিক আচরণ দেখে নবম আশ্চর্যে উপনীত  হলো।সে ভেবেছিলো কোথায় স্বর্গ তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদবে,অভিযোগ, অনুযোগ জানাবে।কিন্তু মেয়ে দেখি পুরো স্টিল হয়ে বসে আছে।

ফিরে এসে ভুল করলো নাকি মুহিত?


নাকি ঝড়ের পূর্বাভাস?


খালি গায়ে বেডে বসে আছে মুহিত।স্বর্গ ভালোভাবে হাত ধুয়ে ষ্টেরাইল গ্লাভস পরে নিলো।এর পর একজন নার্স এসে ট্রলিতে করে  ষ্টেরালাইজড যন্ত্রপাতি ব্যান্ডেজ, রিবোন গজ, আরটারি ফরসেপ্স, টুথ ফরসেপ্স, সিজোর, পোভিসেপ, হেক্সিসল, স্পিরিট,  দিয়ে গেলো।

বড় রিবন গজ পভিসেপে চুবিয়ে মুহিতের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে  ক্ষততে ঢুকিয়ে দিলো।সাথেই সাথেই মুহিত চিৎকার করে উঠলো।

স্বর্গ নির্বিকার কঠিন হয়ে তার কাজ চালালো।


মুহিতের এই মুহূর্তে স্বর্গকে কঠিন হৃদয়ের মানবী মনে হচ্ছে।মুহিতের আর্তনাদে নার্স আর সহকারী ডক্টর শিউরে উঠলো।


স্বর্গ মুহিত কে উদ্দেশ্য করে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো―


―মেজর মুহিত প্লিজ দাঁত চেপে সহ্য করুন,আমি এভাবে ড্রেসিং না করলে ভেতরের ময়লা পরিষ্কার হবে না।যতো জোরে প্রেস করবো ততো গজ টা ময়লা চুষে নেবে।

প্লিজ আরেকটু সহ্য করুন।


টুথ ফোর্সেপ্স দিয়ে প্রথম রিবন গজ বের করে আনলো স্বর্গ।মুহিত যেনো দ্বিতীয়বার বেঁচে ফিরলো।এর পর আবার একটি মেডিকেটেড গজ রেডি করলো স্বর্গ।

ক্ষততে দেবার আগেই মুহিত স্বর্গের হাত চেপে ধরলো।


স্বর্গ চোখের ইশারায় নার্স আর এসিস্ট্যান্ট ডক্টর কে চলে যেতে বললো।

তারা চলে যেতেই স্বর্গ মুখের মাস্ক খুলে মুহিতের ঠোঁটে উষ্ণ চুমু দিয়ে  বলে উঠলো

―এটাই শেষ আর কষ্ট দিবোনা।


গজ ঢুকিয়ে চিপে চিপে ক্লিনিং প্রসেস চালাতেই মুহিত বহু কষ্টে গলায় স্বর এনে বলে উঠলো

―অনেক কষ্ট হচ্ছে বউ।


মরে যাচ্ছি।


একটু তো রহম করো প্লিজ।


মুহিতের আর্তনাদে স্বর্গের বুক ভেঙে কান্না পেলো।

কিন্তু সে একজন ডাক্তার।কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার দের হতে হয় কঠোর মনের অধিকারী।

নিজ নিজ অবস্থানে থেকে পরিস্থিতি যতোই খারাপ হোক দায়িত্ব পালন করতেই হবে।


―আরেকটু সহ্য করো প্লিজ মুহিত।


মুহিত দাঁত চেপে বসে থাকলো ।

বিশ মিনিট পর স্বর্গের ড্রেসিং শেষ হলে মেডিসিন দিয়ে গজ দিয়ে মুহিতের বুক পিঠ পেঁচিয়ে দিলো।


নার্স কে ডাকতেই তারা এসে মুহিত কে  পিঠের নিচে বালিশ দিয়ে আধ শোয়া করে দিলো।


হাতে  পায়ে প্লাস্টার করে ব্ৰেচ পরিয়ে বেডে শুইয়ে দেয়া হলো মুহিত কে।

শরীরের জখম গুলো অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে।


মুহিতকে কেবিনে রেখে স্বর্গ বাইরে চলে আসলো চেঞ্জ করতে।

ডাস্টবিনে গ্লাভস গুলো ফেলে বেসিনের সামনে দাঁড়ালো হাত ধুতে।

নিমিষেই মন আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা হলো।

টুপটুপ করে অবিরত গড়িয়ে পড়লো কপোল বেয়ে।

মুহিতের এমন অবস্থা সহ্য করতে অনেক কষ্ট হয়েছে তার।তবুও হিংস্রের ন্যায় মুহিতকে কষ্ট দিয়েই গেছে সে।

মুহিতকে এতোটা অসহায় আর কখনো লাগেনি।

মুহিত তার কাছে বেচে ফিরেছে এই অনেক।স্বর্গের মাথায় স্বাভাবিক জ্ঞান থাকতে মুহিতকে কোনো দিন কষ্ট পেতে দিবেনা আর।

দরকার পড়লে বুকের ভেতর আগলে রাখবে সে ।


চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো স্বর্গ।


সুখ আর তনুজা মুহিতের প্রিয় ইলিশ পোলাও নিয়ে কেবিনের সামনে বসে আছে।

স্বর্গের কঠিন নির্দেশ

কেউ দুই মিনিটের বেশি ওর রুমে থাকতে পারবে না।

প্রথমে সুখ গেলো।


―হ্যালো ব্রো

তুমি আমার বোনকে এতো কষ্ট দিলে এটার জন্য বিশেষ শাস্তির ব্যাবস্থা আছে তোমার জন্য।

তুমি সুস্থ হলে আমি তোমার বিষয় টা হ্যান্ডেল করবো।


তোমার বোন যদি আমাকে পানিশমেন্ট দিতে দেয় তাহলে আমি ঘাড় পেতে নিবো সালা বাবু।


 বলেই ফিচেল হাসলো মুহিত।

সুখ আরো কিছু কথা বলে বেরিয়ে গেলো।


তনুজা নীরবে কেঁদেই যাচ্ছে মুহিতের পাশে বসে।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলেন

আমার মেয়েটা তোমাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে  বাবা।

এতোদিন আমরা কেমন জীবন কাটিয়েছি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

দ্রুত সুস্থ হলেই তোমাদের চার হাত এক করে দেব।

সময় করে তোমার মাকে একটা কল করো।।

উনি চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন তোমাকে ফোনে না পেয়ে।

মুহিত ঘাড় কাত করে বাধ্য ছেলের মতো সায় জানালো।


তনুজা চলে যেতেই টিফিন ক্যারিয়ার সমেত কেবিনে প্রবেশ করলো স্বর্গ।

প্লেটে খাবার গুলো ঢেলে ইলিশ মাছের কাঁটা বেছে মুহিতের সামনে লোকমা তুললো।


এই হৃদয়হীনা একটু আগে তাকে চরম কষ্ট দিয়েছে। মুহিত কিছুতেই খাবেনা তার হাতের খাবার।

মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকলো মুহিত।


স্বর্গের কাছে মুহিতের মতিগতি সুবিধার ঠেকলো না।যেখানে তার অভিমান করার কথা সেখানে সে ভাব ধরে বসে আছে?


মুহিতের দুই চোয়ালে হাত দিয়ে চেপে ধরে পোলাও পুড়ে দিলো।

মুহিতকে উদ্দেশ্য করে স্বর্গ তেজি কন্ঠে বলে উঠলো

―ঢং কম করে করো।খাবার পুরোটা খেয়ে মেডিসিন খেতে হবে।ঢং করলে তোমার ই লস।

বলেই আরেক লোকমা ঠুসে দিলো।

খাবার চিবুতে চিবুতে মুহিত বলে উঠলো


― জল্লাদি একটা।


―――――

মিসেস তনুজার ল্যান্ড লাইনে সমান তালে রিং বেজে যাচ্ছে।তনুজা দৌড়ে এসে ফোন কানে তুলতেই মিসেস তারিনের আওয়াজ পাওয়া গেলো


কি গো তনু কি খবর তোমাদের?

―জি আপা ভালো রেখেছে উপর ওয়ালা।

নামিরা আর বাবু কেমন আছে?


মিসেস তারিন প্রাণহীন উত্তর দিলেন।মুহিতের জন্য কদিন ধরে মনটা খচ খচ করছে।আজ প্রায় এক মাসের বেশি হয়ে গেলো ছেলেটার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই।ইদানিং  ঘুমালেই বিভিন্ন আজেবাজে স্বপ্ন এসে হানা দেয়।

মনের সন্দেহের ভিত্তিতে তনুজা কে মিসেস তারিন বলেই ফেললো


―আমার ছেলেটা বেঁচে আছে তো তনু?


মিসেস তারিনের এহেন প্রশ্নে চমকে উঠলো তনুজা।

নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠলেন

ছি ছি এসব কি বলেন আপা?


মুহিত আজ ফোন করেছিলো আপনাকে ফোন করার কথা বলেছে আপনার ভাই।

আজ কালকের ভেতরই মুহিতের ফোন পাবেন ইনশাআল্লাহ।


আরো কিছু কথা বলে লাইন কেটে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলেন তনুজা।

এই প্রশ্ন টা মিসেস তারিন যদি আরো আগে করতো তাহলে তনুজা কিভাবে সামলাতেন সব কিছু?


―――――

ক্যাপ্টেন সৌম্য আর নাফিজ মাহমুদ দাঁড়িয়ে আছে মুহিতের সামনে।নিজের ভাগ্নের এমন সূচনীয় অবস্থা সহ্য না করতে পেরে কেঁদে দিলেন নাফিজ মাহমুদ।এতো সুন্দর ছেলেটা ব্যান্ডেজ এর চোটে মমিতে পরিণত হয়েছে।এসব কি মানা যায়?


সৌম্য হঠাৎ ই মুহিতের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়লো 

―স্যার আমার পরবর্তী কাজ কি?


―প্রেস কনফারেন্স এর আয়োজন করো ক্যাপ্টেন সৌম্য শাহরিয়ার।

বলেই বাঁকা হাসি হাসলো মুহিত।


*******

ছেলেটাকে দেখে আসার পর থেকে কিছুই ভালো লাগছে না আশরাফ চৌধুরীর।সবকিছু একঘেয়ে লাগছে।একটু দেশ বিদেশের খবর দেখা দরকার।টিভি অন করে নিউজের চ্যানেল চাপতে চাপতে এক জায়গায় এসে থমকে যান আশরাফ চৌধুরী।দৃষ্টি বিস্ফারিত হয়ে যায় তার।এ কিভাবে সম্ভব?নিমিষেই মাথা ঘুরে উঠলো তার।


সাংবাদিক রা একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে মুহিত কে আর সেগুলোই বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এ টেলিকাস্ট করা হচ্ছে।


―মেজর মুহিত কে বা কারা আপনাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলো?

আপনি কি তাদের চেহারা দেখতে পেয়েছিলেন?


―না আমি তার চেহারা দেখতে পাইনি, আমাকে পিছন থেকে শ্যুট করা হয়েছে।লোকটি কালো পোশাকে আবৃত ছিলো।


সাংবাদিক আবার প্রশ্ন ছুঁড়লো


―এই ছোট ছেলেটির সাথে আপনার কিভাবে পরিচয়?আমরা শুনেছি সে একজন ট্রাক ড্রাইভার।


পাশে থাকা ছেলেটি লাইট ক্যামেরা দেখে ভয়ে গুটিসুটি মেরে মুহিতের কাছ ঘেষে রইলো।মুহিত মুখের ভাব স্বাভাবিক রেখে বলে উঠলো


আসলে ছেলেটি ওখানকার স্থানীয়।আমি ওর সাহায্য নিয়ে পাহাড়ে উঠেছি।আমাকে যখন কেউ গুলি করে ও তা দেখে ফেলে এজন্য আগন্তুক এই ছেলেটিকেও গুলি করে দেয়।


মেজর মুহিতের এসব বানোয়াট ইন্টারভিউ দেখে আশরাফ চৌধুরীর মাথা ঘুরে যাচ্ছে।


এতোটা স্বভাভিক কিভাবে রয়েছে  এই মেজর?আহমেদ কসাই এর হাত থেকে আজ পর্যন্ত কেউ বেঁচে ফিরতে পারেনি।তাহলে এরা কিভাবে পারলো?


আর সত্য না বলে এসব বলে কি করতে চাইছে সে?আশরাফ চৌধুরী নিজেই মুখ খুলে তাকে চেহারা দেখিয়েছে।


দাবার চাল কি নিমিষেই উল্টে যাবে?


――――

আমার মেয়ে হয়ে আমার ই ঘরের খবর তুই ওই আর্মি ক্যাপ্টেন এর কাছে পৌঁছে দিস?কি ভেবেছিস,আমি এতোই বোকা?আমার পিঠ পিছে চাকু বসাবি আমি কিচ্ছুটি টের পাবো না?


তোর মা ও এই একই ধৃষ্টতা দেখিয়েছিলো।

কি করেছি তার সাথে জানিস?


বলেই নাসের হায়দার পিউ এর চুলের মুঠি ধরে জানালার পাশে এনে দাঁড় করালো।


এর পর আঙ্গুলি নির্দেশ করে বললো ঐ যে বকুল গাছ টা দেখছিস ঐখানে পুতে দিয়েছি তোর মাকে।

বাবার মুখে এমন নৃশংস কথা শুনে কেঁপে উঠলো পিউ।


তার মা তাহলে অন্য মানুষের সাথে পালিয়ে যায়নি?

তার বাবা তার মাকে মেরে ফেলেছে?

মায়ের পুরোনো স্মৃতি মনে করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো পিউ।

রাগী দৃষ্টি  নিক্ষেপ করে নাসের হায়দার এর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো


―আমাকেও পুতে দাও বাবা

নাহলে আমি কাল সাপ হয়ে ছোবল মারবো তোমাকে।


মেয়ের এমন সাহস দেখে রাগে বোধ শক্তি হারিয়ে ফেললো নাসের হায়দার।

গায়ের সমস্ত শক্তি খাটিয়ে পিউকে এক থাপ্পড় কষিয়ে দিলো।

থাপ্পড়ের তাল সামলাতে না পেরে পিউ ডাইনিং টেবিলের চেয়ার এর সাথে বাড়ি খেয়ে পড়ে গেলো মেঝেতে।

কপালের কোনা কেটে গড়িয়ে পড়লো রক্ত।


পিউ আবার বলে উঠলো

আমাকে মেরে ফেলা বাবা,না হলে তুমি আমার হাতে খুন হবে।


নাসের হায়দার বাজ পাখির মতো পিউকে থাবা মেরে ধরে টেনে হিচড়ে তার গোপন কক্ষে নিয়ে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিলো।


তুই এখানেই বন্দী থাকবি হারামজাদী।

বলেই বাইরে থেকে দরজা লক করে চলে গেলো।


হাটু মুড়ে বসে হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো পিউ।

পৃথিবীতে এমন খারাপ বাবাও আছে?


মায়ের হাসি মাখা মুখটা মনে পড়তেই বুকে চিনচিনে ব্যাথার অনুভূতি হলো তার।


――――

মুহিত সোহাগের নম্বরে কল করেছে

ওপাশ থেকে সোহাগ হ্যালো বলতেই মুহিত সোহাগের সাথে কুশল বিনিময় করলো।

এর পর সোহাগ স্টোর রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করলো


―মুহিত তুমি বেঁচে আছো?

টিভিতে তোমার নিউজ দেখে আমি বাসায় সকল লাইন কেটে দিয়েছি যাতে নামিরা বা মা কেউ এই বিষয়ে না জানতে পারে।

মামা কে অনেক বার ফোন করে তোমার খবর জেনেছি।কোনো ভাবেই নাকি তোমাকে উদ্ধার করা যায়নি।

তাহলে কিভাবে বেঁচে ফিরলে?


মুহিত স্মিত হাসলো।সোহাগ কে উদ্দেশ্য করে নরম কন্ঠে বললো

―সময় করে সব বলবো সোহাগ ভাই।আগে প্রয়োজনীয় কিছু কথা বলে নেই।


মা বড্ড অবুজঝ।মাকে আপনার একটু আগলে রাখতে হবে সোহাগ ভাই।

প্রথমে মা কে বলবেন আমি ছয় মাসের জন্য মিশনে এসেছি।আমি ফিরলে মা বাংলাদেশে আসবে ।

যেভাবেই হোক সোহাগ ভাই মাকে ছয় মাস আপনি ধরে বেঁধে রেখে দিবেন।

এখানে আমার কিছু জরুরি  কাজ পেন্ডিং আছে।ওগুলো কমপ্লিট করেই আমি আপনাদের সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।

আমরা আবার একসাথে হাসি খুশি ভাবে বাঁচবো সোহাগ ভাই।


******

সৌম্য বসে আছে মুহিতের সামনে।মুহিত তাকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে কিভাবে কখন কি করতে হবে।


―খলিল কে একটু ধরে আনার ব্যাবস্থা করো সৌম্য

জামাই আদর টা খলিল কে দিয়েই শুরু করবো।


কোথায় ধরে আনবো স্যার?


আহা ক্যাপ্টেন দুধের বাচ্চার মতো সব বুঝিয়ে দিতে হয় তোমাকে।


―যেখানে গেলে ওকে চারশত চল্লিশ ভোল্টে শক দেয়া যাবে সেখানে।


চোখ বড় হলো সৌম্যের, ঠোঁট প্রশস্ত হলো মুহিতের।


চলবে।

0 Comments:

Post a Comment